post

আল কুরআনে বর্ণিত জাহান্নামের বর্ণনা

আবু হুসাইন

০১ আগস্ট ২০১৬
সংজ্ঞা : আল কুরআনে জাহান্নাম ও জাহান্নামের বিভিন্ন বিষয়কে অনেকভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। যেমনÑ নিকৃষ্টতম আবাস (২:২০৬), সবচেয়ে খারাপ আবাস (৩:১৬২), সবচেয়ে খারাপ স্থান (৩:১৯৭), লাঞ্ছনা ও অপমানজনক শাস্তি (৪:১৪), কঠিন শাস্তি (৪:৯৩), বড়ই খারাপ জায়গা (৪:৯৭), নিকৃষ্টতম আবাস (৪:১১৫), লাঞ্ছনার ব্যাপার (৯:৬৩), বড়ই নিকৃষ্ট আবাস (১৩:১৮), বড়ই খারাপ আবাস (১৩:২৫), সাতটি দরজাবিশিষ্ট (১৫:৪৪), কয়েদখানা (১৭:৮), যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি (১৭:১০), লাঞ্ছনাকর শাস্তি (২২:৫৭), আগুন (২২:৭২), বড়ই খারাপ আবাস (২২:৭২), জ্বলন্ত আগুন (২৫:১১, আজাব (৩০:১৬), লাঞ্ছনাকর আজাব (৩১:৬), যন্ত্রণাদায়ক আজাবের (৩১:৭), চিরন্তন আজাবের (৩২:১৪), যন্ত্রণাদায়ক আজাব (৩৩:৮), উৎক্ষিপ্ত আগুন (৩৩:৬৪), নিকৃষ্ট আবাস (৩৮:৬০), লাঞ্ছনাকর আজাব (৩৯:৪০), চিরস্থায়ী আজাব (৩৯:৪০), অতীব জঘন্য জায়গা (৪০:৭৬), কষ্টদায়ক আজাব (৪৫:৮), লাঞ্ছনাকর শাস্তি (৪৫:৯), কঠিন জ্বালাদায়ক আজাব (৪৫:১১), কষ্টদায়ক আজাব (৪৬:৩১), অত্যন্ত জঘন্য জায়গা (৪৮:৬), দাউ দাউ করে জ্বলা অগ্নিকুন্ডলী (৪৮:১৩), কঠিন পীড়াদায়ক শাস্তি (৪৮:১৬), অত্যন্ত নিকৃষ্ট স্থান (৬৪:১০), অত্যন্ত মন্দ ঠিকানা (৬৬:৯), আগুন (৬৬:১০), খারাপ জায়গা (৬৭:৬), কঠিন আজাব (৭২:১৭), একটি ফাঁদ (৭৮:২১), বিদ্রোহীদের আবাস (৭৮:২২), জ্বলন্ত আগুন (৮৪:১২), জ্বলন্ত আগুন (৯২:১৪)। শাস্তি : এদের মধ্যে যারা কুফরি করেছে তাদের জন্য আগুনের পোশাক কাটা হয়ে গেছে, তাদের মাথায় ফুটন্ত পানি ঢেলে দেয়া হবে, যার ফলে শুধু তাদের চামড়াই নয়, পেটের ভেতরের অংশও গলে যাবে। আর তাদের শাস্তি দেয়ার জন্য থাকবে লোহার মুগুর। যখনই তারা কাতর হয়ে জাহান্নাম থেকে বের হবার চেষ্টা করবে তখনই আবার তার মধ্যে তাদেরকে ঠেলে দেয়া হবে, বলা হবে, এবার দহন জ্বালার স্বাদ নাও। (২২:১৯-২২) আগুন তাদের মুখের চামড়া জ্বালিয়ে দেবে এবং তাদের চোয়াল বাইরে বের হয়ে আসবে। (২৩:১০৪) আর যারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তাদের জন্য তো জাহান্নামের প্রজ্বলিত আগুনই যথেষ্ট। যারা আমার আয়াতগুলো মেনে নিতে অস্বীকার করেছে তাদেরকে আমি নিশ্চিতভাবেই আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করবো। আর যখন তাদের চামড়া পুড়ে গলে যাবে তখন তার জায়গায় আমি অন্য চামড়া তৈরি করে দেবো, যাতে তারা খুব ভালোভাবে আজাবের স্বাদ গ্রহণ করতে পারে। আল্লাহ বিপুল ক্ষমতার অধিকারী এবং তিনি নিজের ফয়সালাগুলো বাস্তবায়নের কৌশল খুব ভালোভাবেই জানেন। (৪:৫৬) বাঁ দিকের লোক। বাঁ দিকের লোকদের দুর্ভাগ্যের কথা আর কি বলা যাবে! তারা লু হাওয়ার হলকা, ফুটন্ত পানি এবং কালো ধোঁয়ার ছায়ার নিচে থাকবে। তা না হবে ঠান্ডা না হবে আরামদায়ক। (৫৬:৪১-৪৪) কখনো নয়, তা তো হবে জ্বলন্ত আগুনের লেলিহান শিখা যা শরীরের গোশত ও চামড়া ঝলসিয়ে নিঃশেষ করে দেবে। তাদেরকে সে অগ্নিশিখা উচ্চস্বরে নিজের কাছে ডাকবে, যারা সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল, পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছিল (৭০:১৫-১৭) তারা ঐ জাহান্নাম ও ফুটন্ত টগবগে পানির উৎসের মধ্যে যাতায়াত করতে থাকবে। (৫৫:৪৪) তুমি সে ব্যক্তির দুর্দশা কি করে উপলব্ধি করবে যে কিয়ামতের দিন আল্লাহর আজাবের কঠোর আঘাত তার মুখমন্ডলের ওপর নেবে? এসব জালেমদের বলে দেয়া হবে। এখন সেসব উপার্জনের ফল ভোগ করা যা তোমরা উপার্জন করেছিলে। (৩৯:২৪) তাদের যখন সেখানে নিক্ষেপ করা হবে তখন তারা তার ভয়ানক গর্জনের শব্দ শুনতে পাবে এবং তা টগবগ করে ফুটতে থাকবে। অত্যধিক রোষে তা ফেটে পড়ার উপক্রম হবে। যখনই তার মধ্যে কোন দলকে নিক্ষেপ করা হবে তখনই তার ব্যবস্থাপকরা জিজ্ঞেস করবে, তোমাদের কাছে কি কোন সাবধানকারী আসেনি? (৬৭:৭-৮) তারা দোয়া করতে থাকে- হে আমাদের রব! জাহান্নামের আজাব থেকে আমাদের বাঁচাও, তার আজাব তো সর্বনাশা। আশ্রয়স্থল ও আবাস হিসেবে তা বড়ই নিকৃষ্ট জায়গা। (২৫:৬৫-৬৬) তাদের জন্য জাহান্নামই যথেষ্ট। তারা তাতেই দগ্ধ হবে। তাদের পরিণাম অত্যন্ত শোচনীয়। (৫৮:৮) যারা মু’মিন পুরুষ ও নারীদের ওপর জুলুম-নিপীড়ন চালিয়েছে, তারপর তা থেকে তওবা করেনি, নিশ্চিতভাবেই তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আজাব এবং জ্বালা-পোড়ার শাস্তি। (৮৬:১০) পানীয় : নিজেদের সত্য অস্বীকৃতির বিনিময়ে তারা পান করার জন্য পাবে ফুটন্ত পানি আর ভোগ করবে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (৬:৭০) এবং যারা কুফরির পথ অবলম্বন করে তারা পান করবে ফুটন্ত পানি এবং ভোগ করবে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি নিজেদের সত্য অস্বীকৃতির প্রতিফল হিসেবে (১০:৪) সেখানে তাকে পান করতে দেয়া হবে গলিত পুঁজের মতো পানি। যা সে জবরদস্তি গলা দিয়ে নামাবার চেষ্টা করবে এবং বড় কষ্টে নামাতে পারবে। মৃত্যু সকল দিক দিয়ে তার ওপর ছেয়ে থাকবে কিন্তু তার মৃত্যু হবে না এবং সামনের দিকে একটি কঠোর শাস্তি তাকে ভোগ করতে হবে। (১৪:১৬-১৭) আমি (অস্বীকারকারী) জালেমদের জন্য একটি আগুন তৈরি করে রেখেছি যার শিখাগুলো তাদেরকে ঘেরাও করে ফেলেছে। সেখানে তারা পানি চাইলে এমন পানি দিয়ে তাদের আপ্যায়ন করা হবে, যা হবে তেলের তলানির মতো। এবং যা তাদের চেহারা দগ্ধ করে দেবে। কত নিকৃষ্ট পানীয় এবং কি জঘন্য আবাস! (১৮:২৯) তারপর পান করার জন্য তারা পাবে ফুটন্ত পানি। আর এরপর তাদের প্রত্যাবর্তন হবে। এ অগ্নিময় দোজখের দিকে। (৩৭:৬৭-৬৮) জাহান্নাম, যেখানে তারা দগ্ধ হবে, সেটি বড়ই খারাপ আবাস। এ হচ্ছে তাদের জন্য, কাজেই তারা স্বাদ আস্বাদন করুক ফুটন্ত পানির, পুঁজের ও এ ধরনের অন্যান্য তিক্ততার। (৩৮:৫৬-৫৮) (যে ব্যক্তি এ জান্নাত লাভ করবে সেকি) ঐ ব্যক্তির মত হতে পারে যে চিরদিন জাহান্নামে থাকবে, যাদের এমন গরম পানি পান করানো হবে যা তাদের নাড়িভুঁড়ি ছিন্ন ভিন্ন করে দেবে? (৪৭:১৫) তাহলে তার সমাদরের জন্য রয়েছে ফুটন্ত গরম পানি এবং জাহান্নামের ঠেলে দেয়ার ব্যবস্থা। (৫৬:৯৩-৯৪) সেখানে তারা যুগের পর যুগ পরে থাকবে। সেখানে তারা পানযোগ্য কোন রকম ঠান্ডা জিনিসের স্বাদই পাবে না। গরম পানি ও ক্ষতঝরা ছাড়া। (৭৮:২৩-২৫) খাদ্য : বলো, এ ভোজ ভালো, না যাক্কুম গাছ। আমি এ গাছটিকে জালেমদের জন্য ফিতনায় পরিণত করে দিয়েছি। সেটি একটি গাছ, যা বের হয় জাহান্নামের তলদেশ থেকে। তার ফুলের কলিগুলো যেন শয়তানদের মুন্ডু। জাহান্নামের অধিবাসীরা তা খাবে এবং তা নিয়ে পেট ভরবে। (৩৭:৬২-৬৬) যাক্কুম গাছ হবে গোনাহগারদের খাদ্য। তেলের তলানির মতো। পেটের মধ্যে এমনভাবে উথলাতে থাকবে যেমন ফুটন্ত পানি উথলায়। পাকড়াও করো একে এবং টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাও জাহান্নামের মধ্যখানে। তারপর ঢেলে দাও তার মাথার ওপর ফুটন্ত পানির আজাব। এখন এর মজা চাখো। তুমি বড় সম্মানী ব্যক্তি কি না, তাই। (৪৪:৪৩-৪৯) তোমাদেরকে যাক্কুম বৃক্ষজাত খাদ্য খেতে হবে। তোমরা ঐ খাদ্য দিয়েই পেট পূর্ণ করবে এবং তার পরই পিপাসার্ত উটের মত ফুটন্ত পানি পান করবে। (৫৬:৫২-৫৫) আর কোন খাদ্যও নেই ক্ষত নিঃসৃত পুঁজ-রক্ত ছাড়া। (৬৯:৩৬) জ্বলন্ত আগুনে ঝলসে যেতে থাকবে। ফুটন্ত ঝরনার পানি তাদেরকে দেয়া হবে পান করার জন্য। তাদের জন্য কাঁটাওয়ালা শুকনো ঘাস ছাড়া আর কোন খাদ্য থাকবে না। তা তাদেরকে পুষ্ট করবে না এবং ক্ষুধাও মেটাবে না। (৮৮:৪-৭) বন্ধনী : সেদিন তোমরা অপরাধীদের দেখবে, শিকলে তাদের হাত-পা বাঁধা, আলকাতরার পোশাক পরে থাকবে এবং আগুনের শিখায় তাদের চেহারা ঝলসে যাবে। (১৪:৪৯-৫০) যখন তাদের গলায় থাকবে গ্রীবা, বন্ধনী ও শৃঙ্খলÑ এসব ধরে টানতে টানতে তাদেরকে ফুটন্ত পানির দিকে নিয়ে যাওয়া হবে এবং দোজখের আগুনে নিক্ষেপ করা হবে। (৪০:৭১-৭২) (আদেশ দেয়া হবে) পাকড়াও করো ওকে আর ওর গলায় বেড়ি পরিয়ে দাও। তারপর জাহান্নামে নিক্ষেপ করো। এবং সত্তর হাত লম্বা শিকল দিয়ে বেঁধে ফেলো। (৬৯:৩০-৩২) আমার কাছে (এদের জন্য) আছে শক্ত বেড়ি, জ্বলন্ত আগুন, গলায় আটকে যাওয়া খাবার এবং যন্ত্রণাদায়ক আজাব। (৭৩:১২-১৩) আমি কাফেরদের জন্য শিকল, বেড়ি এবং জ্বলন্ত আগুন প্রস্তুত করে রেখেছি। (৭৬:৪) আগুন : হে লোকজন যারা ঈমান এনেছো, তোমরা নিজেদেরকে এবং নিজেদের পরিবার ও সন্তান-সন্ততিকে সেই আগুন থেকে রক্ষা করো মানুষ এবং পাথর হবে যার জ্বালানি। সেখানে রুঢ় স্বভাব ও কঠোর হৃদয় ফেরেশতারা নিয়োজিত থাকবে যারা কখনো আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে না এবং তাদেরকে যে নির্দেশ দেয়া হয় তাই পালন করে। (৬৬:৬) কিন্তু যদি তোমরা এমনটি না করো আর নিঃসন্দেহে কখনই তোমরা এটা করতে পারবে না, তাহলে ভয় করো সেই আগুনকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যা তৈরি করা হয়েছে সত্য অস্বীকারকারীদের জন্য। (২:২৪) তাদেরকে বলে দাও, জাহান্নামের আগুন এর চেয়েও বেশি গরম, হায়! যদি তাদের সেই চেতনা থাকতো! (৯:৮১) অর্থাৎ জাহান্নাম, যার মধ্যে তাদরেকে ঝলসানো হবে এবং তা নিকৃষ্টতম আবাস। (১৪:২৯) তারপর তার ভাগে জাহান্নাম লিখে দেই, যার উত্তাপ সে ভুগবে নিন্দিত ও ধিকৃত হয়ে। (১৭:১৮) এ লোকগুলোকে আমি কিয়ামতের দিন উপুড় করে টেনে আনবো অন্ধ, বোবা ও বধির করে। এদের আবাস জাহান্নাম। যখনই তার আগুন স্তিমিত হতে থাকবে আমি তাকে আরো জোরে জ্বালিয়ে দেবো। (১৭:৯৭) তাদেরকে মাথার ওপর থেকে এবং নিচে থেকে আগুনের স্তর আচ্ছাদিত করে রাখবে। এ পরিণাম সম্পর্কেই আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ভীতি প্রদর্শন করেন, হে আমার বান্দারা, আমার গজব থেকে নিজেদের রক্ষা করো। (৩৯:১৬) যেদিন তাদের ধাক্কা দিতে দিতে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। সেদিন তাদের বলা হবে এতো সেই আগুন যা তোমরা মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে। এখন বলো, এটা কি জাদু না এখনো তোমরা উপলব্ধি করতে পারছো না? যাও, এখন এর মধ্যে ঢুকে দগ্ধ হতে থাকো। তোমরা ধৈর্য ধর আর না ধর, এখন উভয়টিই তোমাদের জন্য সমান। তোমরা যেমন কাজ করে এসেছো ঠিক তেমন প্রতিদানই তোমাদের দেয়া হচ্ছে। (৫২:১৩-১৬) সে আগুন প্রাসাদের মত বড় বড় স্ফুলিঙ্গ নিক্ষেপ করবে। উৎক্ষেপণের সময় যা দেখে মনে হবে তা যেন হলুদ বর্ণের উট। (৭৭:৩২-৩৩) এদের ওপর আগুন ছেয়ে থাকবে। (৯০:২০) তার আবাস হবে গভীর খাদ। আর তুমি কি জানো সেটি কি? (সেটি) জ্বলন্ত আগুন। (১০১:৯-১১) জাহান্নামিদের অবস্থা : আর যেসব লোক দুনিয়ায় তাদের অনুসারী ছিল তারা বলতে থাকবে, হায়! যদি আমাদের আর একবার সুযোগ দেয়া হতো, তাহলে আজ এরা যেমন আমাদের সাথে সম্পর্কহীনতা প্রকাশ করছে তেমনি আমরাও এদের সাথে সম্পর্কহীন হয়ে দেখিয়ে দিতাম। এভাবেই দুনিয়ায় এরা যে সমস্ত কাজ করছে সেগুলো আল্লাহ তাদের সামনে এমনভাবে উপস্থিত করবেন যাতে তারা কেবল দুঃখ ও আক্ষেপই করতে থাকবে কিন্তু জাহান্নামের আগুন থেকে বের হওয়ার কোনো পথই খুঁজে পাবে না। (২:১৬৭) তাদের জন্য বিছানাও হবে জাহান্নামের এবং ওপরের আচ্ছাদনও হবে জাহান্নামের। এ প্রতিফল আমি জালেমদেরকে দিয়ে থাকি। (৭:৪১) আর জাহান্নামবাসীরা জান্নাতবাসীদেরকে ডেকে বলবে, ‘সামান্য একটু পানি আমাদের ওপর ঢেলে দাও না। অথবা আল্লাহ তোমাদের যে রিজিক দান করেছেন তা থেকেই কিছু ফেলে দাও না’। তারা জবাবে বলবে, ‘আল্লাহ এ দু’টি জিনিসই সত্য অস্বীকারকারীদের জন্য হারাম করেছেন’। (৭:৫০) একদিন আসবে যখন এ সোনা ও রূপাকে জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে, অতঃপর তারই সাহায্যে তাদের কপালে, পার্শ্বদেশে ও পিঠে দাগ দেয়া হবেÑ এ সেই সম্পদ যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা করেছিলে। নাও, এখন তোমাদের জমা করা সম্পদের স্বাদ গ্রহণ কর। (৯:৩৫) সমস্ত অপরাধী সেদিন আগুন দেখবে এবং বুঝতে পারবে যে, এখন তাদের এর মধ্যে পড়তে হবে এবং এর হাত থেকে বাঁচার জন্য তারা কোনো আশ্রয়স্থল পাবে না। (১৮:৫৩) এবং অপরাধীদেরকে পিপাসার্ত পশুর মতো জাহান্নামের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাবো। (১৯:৮৬) যাদেরকে উপুড় করে জাহান্নামের দিকে ঠেলে দেয়া হবে তাদের অবস্থান বড়ই খারাপ এবং তাদের পথ সীমাহীন ভ্রান্তিতে পরিপূর্ণ। (২৫:৩৪) আর যারা অসৎ কাজ নিয়ে আসবে, তাদের সবাইকে অধোমুখে আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করা হবে। তোমরা কি ‘যেমন কর্ম তেমন ফল’ ছাড়া অন্য কোন প্রতিদান পেতে পার? (২৭:৯০) যারা কুফরি করেছিলো সেসব লোককে দলে দলে জাহান্নাম অভিমুখে হাঁকিয়ে নেয়া হবে। তারা যখন সেখানে পৌঁছবে তখন দোজখের দরজাসমূহ খোলা হবে এবং তার ব্যবস্থাপক তাদেরকে বলবে, তোমাদের কাছে কি তোমাদের নিজেদের মধ্যে থেকে রাসূলগণ আসেননি যারা তোমাদেরকে তোমাদের রবের আয়াতসমূহ শুনিয়েছেন এবং এ বিষয়ে সাবধান করে দিয়েছেন যে, একদিন তোমাদেরকে এ দিনটির সম্মুখীন হতে হবে? তারা বলবে, হ্যাঁ, এসেছিলো। কিন্তু আজাবের সিদ্ধান্ত কাফেরদের জন্য অবধারিত হয়ে গিয়েছে। বলা হবে, জাহান্নামের দরজার মধ্যে প্রবেশ করো, তোমাদেরকে চিরকাল এখানেই থাকতে হবে। অহঙ্কারীদের জন্য এটা অত্যন্ত জঘন্য ঠিকানা। (৩৯:৭১-৭২) দোজখে নিক্ষিপ্ত এসব লোক জাহান্নামের কর্মকর্তাদের বলবে, ‘তোমাদের রবের কাছে দোয়া করো তিনি যেন একদিনের জন্য আমাদের আজাব হ্রাস করেন’। তারা বলবে, ‘তোমাদের রাসূলগণ কি তোমাদের কাছে স্পষ্ট নিদর্শনাবলি নিয়ে আসেননি’? ‘তারা বলবে হ্যাঁ, জাহান্নামের কর্মকর্তারা বলবে, ‘তাহলে তোমরাই দোয়া করো। তবে কাফেরদের দোয়া ব্যর্থই হয়ে থাকে। (৪০:৪৯-৫০) যেদিন এদেরকে উপুড় করে আগুনের মধ্যে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হবে, সেদিন এদের বলা হবে, এখন জাহান্নামের স্বাদ আস্বাদন করো। (৫৪:৪৮) চিরস্থায়ী : যে ব্যক্তিই পাপ করবে এবং পাপের জালে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়বে সে-ই জাহান্নামি হবে এবং জাহান্নামের আগুনে পুড়তে থাকবে চিরকাল। (২:৮১) এই অবস্থায় তারা চিরদিন থাকবে। তাদের শাস্তি লঘু করা হবে না এবং তাদের বিরামও দেয়া হবে না। (৩:৮৮) এবং তাদেরকে জাহান্নামের পথ ছাড়া আর কোন পথ দেখাবেন না, যেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে। আল্লাহর জন্য এটা কোন কঠিন কাজ নয়। (৪:১৬৯) এখন যাও, জাহান্নামের দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ো, ওখানেই তোমাদের থাকতে হবে চিরকাল। সত্য বলতে কী! অহঙ্কারীদের এ ঠিকানা বড়ই নিকৃষ্ট। (১৬:২৯) কিয়ামতের দিন তাকে উপর্যুপরি শাস্তি দেয়া হবে এবং সেখানেই সে পড়ে থাকবে চিরকাল লাঞ্ছিত অবস্থায়। (২৫:৬৯) যার মধ্যে তারা থাকবে চিরকাল, কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাবে না। যেদিন তাদের চেহারা আগুনে ওলট-পালট করা হবে তখন তারা বলবে, ‘হায়! যদি আমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করতাম’। (৩৩:৬৫-৬৬) তুমি দেখতে পাবে এদের জাহান্নামের সামনে আনা হলে অপমানে নত হতে থাকবে এবং দৃষ্টির আড়ালে বাঁকা চোখে তাকে দেখতে থাকবে। যারা ঈমান এনেছিলো সেই সময় তারা বলবে, প্রকৃতপক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত তারাই যারা আজ কিয়ামতের দিন নিজেরাই নিজেদের এবং নিজেদের সংশ্লিষ্টদেরকে ক্ষতির মধ্যে নিক্ষেপ করেছে। সাবধান! জালেমরা চিরস্থায়ী আজাব ভোগ করতে থাকবে এবং তাদের কোন সহযোগী ও অভিভাবক থাকবে না, যারা আল্লাহর মোকাবেলায় তাদের সাহায্য করবে। আল্লাহ নিজেই যাকে গোমরাহির মধ্যে নিক্ষেপ করেন তার বাঁচার কোনো পথ নেই। (৪২:৪৫-৪৬) মৃত্যু নেই : প্রকৃতপক্ষে যে ব্যক্তি অপরাধী হয়ে নিজের রবের সামনে হাজির হবে তার জন্য আছে জাহান্নাম, যার মধ্যে সে না জীবিত থাকবে, না মরবে। (২০:৭৪) আগুন যখন দূর থেকে এদের দেখবে তখন এরা তার ক্রদ্ধ ও উত্তেজিত চিৎকার শুনতে পাবে। আর যখন এরা শৃঙ্খলিত অবস্থায় তার মধ্যে একটি সঙ্কীর্ণ স্থানে নিক্ষিপ্ত হবে তখন নিজেদের মৃত্যুকে ডাকতে থাকবে। (তখন তাদের বলা হবে) আজ একটি মৃত্যুকে নয় বরং বহু মৃত্যুকে ডাকো (২৫:১২-১৪) এ অবস্থায় তারা ধৈর্য ধারণ করুক (বা না করুক) আগুনই হবে তাদের ঠিকানা। তারা যদি প্রত্যাবর্তনের সুযোগ চায় তাহলে কোন সুযোগ দেয়া হবে না। (৪১:২৪) তুমি কি জানো, সে দোজখ কী? যা জীবিতও রাখবে না আবার একেবারে মৃত করেও ছাড়বে না। গায়ের চামড়া ঝলসিয়ে দেবে। (৭৪:২৭-২৯) যে বৃহৎ আগুনে প্রবেশ করবে, তারপর সেখানে মরবেও না, বাঁচবেও না। (৮৭:১২-১৩) তাদের আজাব কখনো কম করা হবে না এবং তারা সেখানে নিরাশ অবস্থায় পড়ে থাকবে। (৪৩:৭৫) এসব লোকের আবাস হচ্ছে জাহান্নাম। সেখান থেকে নিষ্কৃতির কোন পথ তারা পাবে না। (৪:১২১) নিশ্চিত জেনো, মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে চলে যাবে এবং তোমরা কাউকে তাদের সাহায্যকারী হিসেবে পাবে না। (৪:১৪৫) তারা জাহান্নামের আগুন থেকে বের হয়ে আসতে চাইবে কিন্তু তা তারা পারবে না। তাদেরকে স্থায়ী শাস্তি দেয়া হবে। (৫:৩৭) যারা কুফরির নীতি অবলম্বন করেছে এবং কুফরি অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে, তাদের ওপর আল্লাহর ফেরেশতাদের ও সমগ্র মানবতার লানত। এই লানত বিদ্ধ অবস্থায় তারা চিরকাল অবস্থান করবে, তাদের শাস্তি হ্রাস পাবে না এবং তাদের অন্য কোন অবকাশও দেয়া হবে না। (২:১৬১-১৬২) কারা জাহান্নামের অধিবাসী হবে: হে নবী! পূর্ণ শক্তি দিয়ে কাফের ও মুনাফিক উভয়ের মোকাবেলা করো এবং তাদের প্রতি কঠোর হও। শেষ পর্যন্ত তাদের আবাস হবে জাহান্নাম এবং তা অত্যন্ত নিকৃষ্ট অবস্থান স্থল। (৯:৭৩) নিশ্চিতভাবেই এ মুনাফিকরাই ফাসেক। এ মুনাফিক পুরুষ ও নারী এবং কাফেরদের জন্য আল্লাহ জাহান্নামের আগুনের ওয়াদা করেছেন। তার মধ্যে তারা চিরকাল থাকবে। সেটিই তাদের জন্য উপযুক্ত। আল্লাহর অভিশাপ তাদের ওপর এবং তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী আজাব। (৯:৬৩) যারা নিজেরাই কুফরির পথ অবলম্বন করেছে এবং অন্যদেরকে আল্লাহর পথ থেকে ফিরিয়েছে তাদেরকে আমি আজাবের পর আজাব দেবো, দুনিয়ায় তারা যে বিপর্যয় সৃষ্টি করতো তার বদলায়। (১৬:৮৮) এভাবেই আমি সীমালংঘনকারী এবং নিজের রবের আয়াত অমান্যকারীকে (দুনিয়ায়) প্রতিফল দিয়ে থাকি এবং আখেরাতের আজাব বেশি কঠিন এবং বেশিক্ষণ স্থায়ী। (২০:১২৭) হায়! যদি এ কাফেরদের সেই সময়ের কিছু জ্ঞান থাকতো যখন এরা নিজেদের মুখ ও পিঠ আগুন থেকে বাঁচাতে পারবে না এবং এদেরকে কোথাও থেকে সাহায্যও করা হবে না। সে আপদ তাদের ওপর আকস্মিকভাবে এসে পড়বে এবং তাদেরকে হঠাৎ এমনভাবে চেপে ধরবে যে, তারা তার প্রতিরোধও করতে পারবে না। এবং মুহূর্তকালের অবকাশও লাভ করতে সক্ষম হবে না। (২১:৩৯-৪০) অবশ্যই তোমরা এবং তোমাদের যেসব মাবুদকে তোমরা পূজা করো, সবাই জাহান্নামের ইন্ধন, সেখানেই তোমাদের যেতে হবে। তারা সত্যিই আল্লাহ হতো, তাহলে সেখানে যেতো না। এখন সবাইকে চিরদিন তারই মধ্যে থাকতে হবে। সেখানে তারা হাঁসফাঁস করতে থাকবে এবং তাদের অবস্থা এমন হবে যে, তারা কোন কথা শুনতে পাবে না। (২১:৯৮-১০০) এরা তোমার কাছে আজাব দ্রুত আনার দাবি করছে অথচ জাহান্নাম এ কাফেরদেরকে ঘেরাও করে নিয়েছে। (এবং এরা জানতে পারবে) সেদিন যখন আজাব এদেরকে ওপর থেকে ঢেকে ফেলবে এবং পায়ের নিচে থেকেও বলবে, যেসব কাজ তোমরা করতে এবার তার মজা বোঝো। (২৯:৫৪-৫৫) আর যারা কুফরি করেছে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন; না তাদের অস্তিত্ব খতম করে দেয়া হবে যাতে তারা মরে যাবে এবং না তাদের জন্য জাহান্নামের আজাব কিছু কমানো হবে। এভাবে আমি প্রত্যেক কুফরিকারীকে প্রতিফল দিয়ে থাকি। (৩৫:৩৬) তাদের সামনে রয়েছে জাহান্নাম। তারা পৃথিবীতে যা কিছু অর্জন করেছে তার কোন জিনিসই তাদের কাজে আসবে না। আবার আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে তারা অভিভাবক বানিয়ে রেখেছেন তারাও তাদের জন্য কিছু করতে পারবে না। তাদের জন্য রয়েছে বড় শাস্তি। (৪৫:১০)

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির