post

একজন লতিফ সিদ্দিকী ও আওয়ামী লীগের ইসলামবিদ্বেষী চেতনা

২৭ অক্টোবর ২০১৪

 মুহাম্মদ আবদুল জব্বার

Lotifদুনিয়াব্যাপী ইসলামবিদ্বেষী চক্র নানা অপকৌশলে ইসলামের অগ্রযাত্রাকে রুদ্ধ করে দেয়ার জন্য কূটকৌশল অবলম্বন করে চলছে। কূটকৌশলে লিপ্তরা অধিকাংশই তাদের ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য এ ধরনের ঘৃণ্য অপকর্মে লিপ্ত হয়। এদের ভয় ইসলামের সাম্য, ন্যায়-নীতি যদি সমাজে বাস্তবায়ন হয় তাহলে তারা সমাজ ও রাষ্ট্রের ক্ষমতা হারাবে। তাই নানা ছুতোয় ইসলামকে প্রশ্নবিদ্ধ করাই তাদের অন্যতম কাজ। আমাদের ৯০% মুসলমানের দেশে কেন সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা হবে? স্বাভাবিকভাবে একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে ওঠে সে রাষ্ট্রের মানুষের চিন্তা-চেতনা, কৃষ্টি-কালচারের ওপর ভিত্তি করে। দেশকে যারা স্বাধীনতার পর থেকে শাসন করে আসছে তারা এ দেশের মানুষের জীবনবোধের ঠিক বিপরীত মেরুতে অবস্থান নিয়েছে। কোন এক প্রেতাত্মা শাসকগোষ্ঠী দেশকে উল্টো পথে শাসিত করতে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে। তাই স্বভাবজাত আচরণের বিপরীতে এক অচেনা অজানা চোরাগলিতে দেশ হাঁটছে। তাইতো এখানে তৈরি হয়েছে দাউদ হায়দার, তসলিমা নাসরিন ও লতিফ সিদ্দিকীরা। তৈরি হয়েছে সমাজে কীট উৎপাদনের শাহবাগী আস্তানা ও তার পৃষ্ঠপোষক। সে শুরু থেকে অদ্যাবধি যারা এসব লালন করেছে তারাই ধর্মনিরপেক্ষতার দোহায় দিয়ে ধর্মকে অপব্যবহার করেছে, কথিত স্বাধীনতার কথা বলে ধর্মের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধিয়েছে। আওয়ামী লীগ ধর্মের অপব্যবহার ও ধর্মকে আঘাত করে দেশে বারবার যে সংঘাত তৈরি করেছে তা মুসলিম মানসপটের জীবন, কৃষ্টিকে ভিন্ন ধাঁচে গঠন করতে চায়; যা আমাদের অস্তিত্বের হুমকি। ক্ষমতান্ধরা ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ বলতে দুনিয়াতে যে মতবাদের সৃষ্টি হয়েছে তা মূলত ক্ষমতান্ধ ও দুর্নীতিপরায়ণ শাসকদের গদি রক্ষার জন্য। তারা তাদের বক্তব্যে রাষ্ট্রব্যবস্থায় ধর্মের প্রভাব থাকতে পারবে না বলে দাবি করে থাকে। এখানে ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার বলা নেহাত বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়। কারণ ধর্ম মানুষের মৌলিক বিশ্বাস, আর আমাদের সমাজব্যবস্থা দাঁড়িয়ে আছে সেই বিশ্বাসের ওপর। আসলে তারা ধর্মে-কর্মে যারা বিশ্বাসী তাদেরকে ধর্ম ব্যবসায়ী বললেও মূলত তারা নিজেরাই ধর্মের অপব্যবহার করে থাকে। ধর্ম সম্পর্কে না জেনেও জানার ভান ধরে নিজের মত ধর্মের ব্যাখ্যা করে। মূলত ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা। সমাজবিজ্ঞানের ভাষায় মানুষের জীবনে ধর্মের প্রভাব অস্বীকার করার কোনো জো নেই। কেউ কেউ না জেনে বলে থাকেন ইসলামে রাজনীতি নেই, ইসলাম অন্যান্য ধর্মের মতো শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতার ফ্রেমে বাঁধা একটি ধর্ম। প্রকৃতপক্ষে তাদের জেনে রাখা ভালো যে ইসলাম এমন কোন অকেজো মানবরচিত ধর্মের নাম নয় যে এটি কারো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে বরং এটি এমন একটি যুগশ্রেষ্ঠ, আধুনিক জীবনব্যবস্থা যার মাধ্যমে সব পরিচালিত হবে। তাই ইসলামকে কোন ব্যক্তি বা সমাজ নিজেদের মত করে নিয়ন্ত্রণ করবে ঠিক এমন হবার নয় বরং ইসলাম সব কিছুর নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করবে। কারণ এটি মহান পরওয়ারদিগার আল্লাহ তায়ালার নির্ভুল কিতাব ও তার প্রেরিত বার্তাবাহকের নির্দেশনায় পরিচালিত। কুরআনে কারিমে ইসলামে রাজনীতি প্রসঙ্গে বলা হয়েছেÑ “নিশ্চয়ই আমি তোমাদের প্রতি পূর্ণ কুরআন শরিফ পরম সততার সাথে এ জন্যই নাজিল করেছি যে, তুমি সে অনুযায়ী মানুষের ওপর আল্লাহর প্রদর্শিত পন্থায় রাষ্ট্র পরিচালনা করবে এবং বিচার ফয়সালা করবে। (কুরআনকে যারা এ কাজে ব্যবহার করতে চায়নি তারা এ মহান আমানতের খিয়ানত করে) তুমি এ খিয়ানতকারীদের সাহায্য ও পক্ষ সমর্থনকারী হয়ো না।” (সূরা নিসা-১০৫) “আল্লাহর বিধান অনুযায়ী মানুষের মধ্যে ফয়সালা কর, তাদের মনের খেয়াল খুশি ও ধারণা-বাসনা অনুসরণ করো না।” (সূরা মায়েদা ৪৯) “সাবধান! সৃষ্টি তারই, এর ওপর প্রভুত্ব চালানোর, একে শাসন করার অধিকারও একমাত্র তারই।” (সূরা আরাফ ১৪) “তোমাদের মধ্যে যেসব বিষয়ে মতভেদ হোক না কেন তার চূড়ান্ত মীমাংসা আল্লাহর ওপরই ন্যস্ত।” (সূরা আশশুরা ১০) “তারা বলে (শাসনতন্ত্রে) আমাদের এখতিয়ারে কিছু আছে কি? বল ইখতিয়ার সবটুকুই আল্লাহর।” (আলে ইমরান ১৫৪) আকাশ থেকে জমিন পর্যন্ত সকল কিছুর ব্যবস্থাপনা-পরিচালনা একমাত্র তিনিই করেন।” (সূরা আস-সিজদাহ ৫) উপরোক্ত আয়াতগুলোতে মূলত আল্লাহর প্রতিনিধি কর্তৃক তার নির্দেশনামাফিক সমাজ বা রাষ্ট্রব্যবস্থা পরিচালনার কথা বলা হয়েছে। সুতরাং এমন সত্যকে অস্বীকার করে কেউ যখন বলে ইসলামে রাজনীতি নেই তখন বলতে হয় তার চেয়ে মূর্খ আর কে হতে পারে? লতিফ সিদ্দিকীর ইসলামবিদ্বেষী বক্তব্য : ২৯ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের একটি হোটেলে নিউ ইয়র্কস্থ টাঙ্গাইলবাসীদের সাথে এক মতবিনিময়কালে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি জামায়াতে ইসলামীর বিরোধী, তার চেয়েও বেশি বিরোধী হজ ও তাবলিগ জামাতের।’ তিনি বলেন, ‘এ হজে যে কত ম্যানপাওয়ার নষ্ট হয়। হজের জন্য ২০ লাখ লোক আজ সৌদি আরবে গিয়েছে। এদের কোন কাম নাই। এদের কোনো প্রোডাকশন নাই। শুধু রিডাকশন দিচ্ছে। শুধু খাচ্ছে আর দেশের টাকা দিয়ে আসছে। মন্ত্রী বলেন, এভারেজে যদি বাংলাদেশ থেকে এক লাখ লোক হজে যায় প্রত্যেকের ৫ লাখ টাকা করে ৫০০ কোটি টাকা খরচ হয়।’ তিনি হজের শুরু প্রসঙ্গে বলেন, ‘আবদুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ চিন্তা করল এ জাজিরাতুল আরবের লোকেরা কিভাবে চলবে। তারা তো ছিল ডাকাত। তখন একটা ব্যবস্থা করলো যে আমার অনুসারীরা প্রতি বছর একবার একসাথে মিলিত হবে। এর মধ্য দিয়ে একটা আয়-ইনকামের ব্যবস্থা হবে। যারা টক শোতে যায়, তারা টক মারানি। নিজেদের কোনো কাজ না থাকায় ক্যামেরার সামনে গিয়ে তারা বিড় বিড় করে। ‘চুদির ভাইদের’ আর কোনো কাজ নেই।’ (২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪, নিউ ইয়র্ক)। এর আগেও তিনি ইসলামবিদ্বেষী বক্তব্য দিয়ে নিজের আওয়ামী অবস্থানে টিকে ছিলেন। (২০০৯) পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেছিলেন, ‘ধর্ম তামাক ও মদের মতো একটি নেশা।’ ২০১৩ সালে বিরোধী দলের হরতাল চলাকালে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদেরকে যারা হরতাল আহবানকারী তাদের ঘরে প্রবেশ করে হত্যা করার আহবান জানান। তার এসব বক্তব্যের মধ্যে সবচেয়ে সাংঘাতিক বক্তব্য হলো হজ ও নবী মুহাম্মদ (সা)-কে নিয়ে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসের নিউ ইয়র্কে প্রদত্ত বক্তব্যটি। এই বক্তব্যের পর সারা দেশে আওয়ামী লীগের সমালোচনায় মুখর হয় বাংলাদেশসহ সকল মুসলিম বিবেক। সরকার জনরোষ থেকে বাঁচার লক্ষ্যে লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে কিছু লোক দেখানো সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়। তাকে মন্ত্রিত্ব থেকে অপসারণ করা, আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা ইত্যাদি ইত্যাদি। যদিও বা তিনি এখনও সংসদ সদস্য হিসেবে বহাল আছেন, ব্যক্তি হিসেবে তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। আদৌ তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে কিনা তা দেখার বিষয়। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতির ইতিহাসে যে কাউকে তাদের রাজনীতির বলি করতে দ্বিধা করেনি। যেমন তারা তাদের দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য লতিফ সিদ্দিকীকে করেনি। খোন্দকার মোস্তাককেও তারা রাজাকারের দোসর বলতে দ্বিধা করেনি। মুক্তিযুদ্ধের উপ-অধিনায়ক এ কে খোন্দকারকেও তার শেষ অপমান করে ছেড়েছে। কারণ তারা আসল সত্য কথা বলেছেন। লতিফ সিদ্দিকী আওয়ামী ইসলামবিদ্বেষী চরিত্র তার বক্তব্যের মাধ্যমে উপস্থাপন করে মুখোশ উন্মোচন করেছেন। আর খোন্দকার মোস্তাক ও এ কে খোন্দকারের মতো অনেকে নিজেদের অজান্তে সত্য কথা বলায় দলে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। তবে লতিফ সিদ্দিকীর বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর! কারণ নিউ ইয়র্কের বক্তব্য প্রদানের পরে যখন সর্বত্র সমালোচনার ঝড় ওঠে তখনও তিনি অকপটে বিবিসি বাংলা ও কয়েকটি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমি যা বলেছি জেনে বুঝে বলেছি, দায়িত্ব নিয়ে বলেছি। বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করার প্রশ্নই ওঠে না।’ উল্লেখ্য, ঠিক যে সময়ে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী দেশে জঙ্গিবাদের উত্থানের ব্যাপারে ও ইসলামী রাজনীতির ব্যাপারে কঠোর সমালোচনা করেছেন। তাই রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন যে শেখ হাসিনার জাতিসংঘের বক্তব্য ও লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্য একই সূত্রে গাঁথা। কারণ লতিফ সিদ্দিকীর এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন বক্তব্যের পরে স্বভাবত সারা দেশ ফুঁসে ওঠার কথা। আর এই ফুঁসে ওঠাটাকেই দেশে জঙ্গিবাদ বা মৌলবাদের চাক্ষুষ নমুনা দেশে বিরাজমান সে বিষয়টি বিশ্ব নেতাদের সামনে উপস্থাপন করার মোক্ষম সুযোগ হিসেবে আওয়ামী লীগ নিয়েছিল। আবার কেউ কেউ মনে করেন যে সরকারের অবস্থান যখন টালমাটাল এমন সময় লতিফ সিদ্দিকীকে বলির পাঁঠা করে তার ব্যাপারে ত্বরিত কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশবাসীকে সরকার দেখাতে চায় যে ইসলাম ধর্ম আওয়ামী লীগের কাছে নিরাপদ! কারণ দেশের মানুষের বিশ্বাস যে আওয়ামী লীগের কাছে ইসলাম নিরাপদ নয়। শুধু লতিফ সিদ্দিকী নয়, আওয়ামী লীগের অনেকেই ইসলামের বিরুদ্ধে কেবল বক্তব্য রেখেছেন শুধু তাই নয় বরং তাদের নানা কর্মকাণ্ডেও ইসলামী চেতনা বিলুপ্ত করে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে সমগ্র জাতিকে ধর্মহীন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন, যা ইসলামপ্রিয় সচেতন সকল মানুষের কাছে দিবালোকের মত স্পষ্ট। নি¤েœ বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী নেতাদের প্রদত্ত বক্তব্য, কর্মকাণ্ড ও শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলামবিদ্বেষী চেতনাবোধের যৎসামান্য তুলে ধরা হলো। বিভিন্ন সময়ে নেতাদের বিদ্বেষমূলক বক্তব্যÑ ১. এবার আমাদের দেবী এসেছেন গজে চড়ে। গজে এলে এই পৃথিবী ধন-ধান্যে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। তা আমরা দেখতেই পাচ্ছি। এবার ফসল ভালো হয়েছে। মানুষ সুখে-শান্তিতে আছে। দেশের জিডিপি বৃদ্ধি পেয়েছে সাত ভাগ। ৫ অক্টোবর ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পূজামণ্ডপ পরিদর্শনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। (বৃহস্পতিবার, ৬ অক্টোবর ২০১১, ২১ আশ্বিন ১৪১৮ দৈনিক জনকণ্ঠ) ২. ‘মাদরাসার ছাত্র কমানোর আন্দোলন শুরু করেছি’Ñ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র জয় (১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ইনকিলাব) ৩. এক অনুষ্ঠানে নিজে ধর্মনিরপেক্ষ সাজতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফÑ ‘আমি হিন্দুও নই, মুসলমানও নই’ বলে দাবি করেন। (১৩ জুলাই ২০১১) ৪. আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, কৃষিমন্ত্রী ও সাবেক ছাত্র ইউনিযন নেত্রী মতিয়া চৌধুরী নতুন উম্মতের সন্ধান দিয়েছেন। বিএনপি-জামায়াতকে উদ্দেশ করে তিনি বলেছেন, তারা রাসূলে পাক (সা)-এর ইসলামে বিশ্বাস করে না। বিএনপি হচ্ছে জিয়াউর রহমানের উম্মত, তাদের দোসর জামায়াত হচ্ছে নিজামীর উম্মত, আর আমরা যারা আওয়ামী লীগ করি তারা মহানবী (সা)-এর উম্মত?(আমার দেশ, ২১ মার্চ, ২০১০) ৫. ‘সংবিধান থেকে ধর্মের কালো ছায়াও একদিন মুছে ফেলবো’Ñ জাতীয় সংসদ উপনেতা ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। (প্রথম আলো, ০৪-১১-২০১১), (আমার দেশ, ২ নভেম্বর, ২০১১) ৬. বিসমিল্লাহ বলে বলির খাসির মাংস খাওয়া জায়েজ- সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। (সুনামগঞ্জের আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত কর্মিসভা ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে এই কথা বলেন দফরবিহীনমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ৭ আগস্ট, ২০১২) ৭. রাসূল (সা) হিন্দুদের পূজার জন্য মসজিদের অর্ধেক জায়গা ছেড়ে দিয়েছিলেনÑ আওয়ামী ধর্ম প্রতিমন্ত্রী, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শাহজাহান মিয়া। (আমার দেশ, ১১ ডিসেম্বর, ২০১১) ৮. গোলমাল করাই ইসলামী দলগুলোর কাজ। (২৫ অক্টোবর ২০১৪ শীর্ষ নিউজ ডট কম)। শ্রীকৃষ্ণের আদর্শ অনুসরণ করে সত্য ও ন্যায়ের পথ অনুসরণ করতে হবে। (আমার দেশ, ১০, আগস্ট, ২০১২) অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। ৯. মুসলমান নয়, আগে প্রথম পরিচয় বাঙালিÑ (আওয়ামী) স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন মুজিবুর রহমান ফকির (শীর্ষ নিউজ ডট কম, ২৪ এপ্রিল, ২০১১)। ১০. বাংলাদেশের সংবিধান সমকামীদের অধিকারের পক্ষে- পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপুমনি (এপ্রিল ২০১৩ মাসে জেনেভায় অনুষ্ঠিত ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউতে তিনি এ তথ্য জানান)। ১১. ‘আল্লাহ যদি লাখ লাখ কোটি কোটি বছর পর মানুষের বিচার করতে পারেন তাহলে আমরা কেন ৪০ বছর পর বিচার করতে পারব না?’ সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী ও বর্তমান অবৈধ সরকারের খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম (২০ মার্চ ২০১০)? ১২. শেখ হাসিনার নির্দেশ মানা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের জন্য ইবাদত’Ñ বলেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এ বি তাজুল ইসলাম! (নয়া দিগন্ত, মে ৬, ২০১০) ১৩. ২০০৯ সালের ১ এপ্রিল একটি অনুষ্ঠানে প্রদত্ত বক্তব্যে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছিলেন, ‘কওমি মাদরাসাগুলো এখন জঙ্গিদের প্রজননকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। কওমি মাদরাসাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ বিস্তার লাভ করেছে। এসব কওমি মাদরাসায় যে শিক্ষা দেয়া হয়, তা কূপমণ্ডূকতার সৃষ্টি করছে। ’৭৫-পরবর্তী সামরিক শাসনামলে বিভিন্ন সংশোধনী এনে ’৭২-এর সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনাকে নস্যাৎ করার ফলেই এবং ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণার পর ধর্মের নামে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়েছে।’ (১ এপ্রিল ২০০৯) ১৪. ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি শামীম আফজাল (কাদিয়ানী হিসেবে পরিচিত এবং আওয়ামী লীগ কর্তৃক নিয়োগকৃত) ২০০৯ সালের ২৮ মার্চ এক গোলটেবিল আলোচনায় বলেন, ‘পৃথিবীতে যত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রয়েছে, তার সবই ইসলাম ও মুসলমানদের মধ্যে। হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানদের মধ্যে কোনো সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নেই। হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানরা সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত নয়।’ ১৭ মার্চ ২০১০ শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ইফার ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন কাঙালিনী সুফিয়া। কাঙালিনীর সাথে করমর্দনও করেন ডিজি শামীম মোহাম্মদ আফজল। কাঙালিনী সুফিয়ার একতারা ও শরীর দুলিয়ে নাচগানে বিব্রত অবস্থায় পড়েন উপস্থিত ইমামরা। ২৭ নভেম্বর ২০১১ আগারগাঁওয়ে ইফার ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিদর্শনে আসে একটি মার্কিন প্রতিনিধিদল। এদের সম্মানে আয়োজিত অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে ডিজি শামীম আফজালের অনুরোধে ইমামদের সামনে মার্কিন তরুণ-তরুণীরা পরিবেশন করে অশ্লীল ব্যালে ড্যান্স। পরে ইফা কর্তৃপক্ষ জানায় ব্যালে ড্যান্স নয়, ৩৫ সেকেন্ডের সুইং ড্যান্স পরিবেশ করা হয়। ১৫. বাংলাদেশ জাতীয় মুফতি ঐক্য পরিষদ (বামুপ) থেকে ফতোয়ায় বলা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বিরোধিতা করা তথা আওয়ামী লীগের সমর্থন না করা কুফরি।’ অতএব, আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করলে সে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে, সে যত বড় আলেমই হোক না কেন। (নয়া দিগন্ত, নভেম্বর ৩১, ২০০৯) ১৬. আওয়ামী সিনিয়র বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দীন চৌধুরী : এক মুসলিম ডাক্তারকে লক্ষ্য করে বললেন, এটা সর্বোচ্চ আদালত। টুপি খুলুন, কোর্টের সম্মান করুন। (আমার দেশ, ২৬ আগস্ট, ২০১১) আওয়ামী লীগ সংগঠনটি তাদের বক্তব্যে ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে শুধু তাই নয়। তারা বিভিন্ন সময়ে তাদের কাজের মাধ্যমেও প্রমাণ করেছে তারা চরম ইসলামবিদ্বেষী। বিভিন্ন সংঘটিত ইসলামবিদ্বেষী কর্মকাণ্ডের একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র: ১. সংবিধান থেকে ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ ও ‘আল্লাহর ওপর আস্থা’কে অপসারণ করা। ২. কুরআনবিরোধী নারী নীতিমালা প্রণয়ন করা। ৩. স্কুলে মাধ্যমিক শাখায় ‘ইসলাম ধর্ম শিক্ষা’-কে ঐচ্ছিক করা। ৪. নাস্তিক বাম কর্তৃক শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা। (শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, তিনি এক সময় ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি ছিলেন, তার সারাটি জীবন কথিত ধর্মনিরপেক্ষতার ধাঁচে পরিচালিত হয়েছে)। যিনি স্কুল ও মাদ্রাসা শিক্ষায় গোড়া কর্তনে কিছু নাস্তিকের সমন্বয়ে ইতোমধ্যে নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। ৫. নাস্তিকতার বিরুদ্ধে আন্দোলনের মিছিলে ওলামা ও সাধারণ মুসল্লিদের পুলিশি হামলায় নির্বিচারের গণহত্যা পরিচালনা। ৬. বারবার বোরকা পরিহিতা মুসলিম নারীদেরকে কথিত নাশকতার অভিযোগে (জামায়াত ও ছাত্রীসংস্থার কর্মী) দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করা ও কোর্টে বোরকা খুলতে বাধ্য করা, যা সরাসরি ইসলামের ফরজ বিধানের বিরুদ্ধে অবস্থান ছাড়া আর কিছু নয়। ৭. ১৯৫৫ সালে ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ শব্দ থেকে মুসলিম বাদ দিয়ে শুধু আওয়ামী লীগ নাম ধারণ করে। ৮. শেখ মুজিবুর রহমান তার শাসনকালে ধর্মনিরপেক্ষতার অজুহাত তুলে সংবিধান থেকে প্রথম বিসমিল্লাহ কথাটিকেই বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালান। ৯. সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রখ্যাত আলেম ৯৩ বছর বয়স্ক আল্লামা শফিকে নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত মিথ্যাচার ও তাকে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ‘তেঁতুল হুজুর’ আখ্যা দেয়া। ১০. রাজধানীর উদয়ন উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভাইস প্রিন্সিপাল ও শ্রমমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর স্ত্রী মাহবুবা খানম কল্পনা অর্ধশতাধিক ছাত্রীর জামার ফুলহাতার অর্ধেকটা কেটে দিয়েছেন। (মে, ২০১৩) (যার ব্যাপারে কোন আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়নি)। ১১. আওয়ামী সরকারের আমলেই ‘কবি নজরুল ইসলাম কলেজ’ থেকে ইসলাম বাদ দিয়ে কবি নজরুল কলেজ করা হয়। অপবাদ দেন ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির। ১২. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সলিমুল্লাহ মুসলিম হল’ থেকে মুসলিম শব্দ বাদ দিয়ে সলিমুল্লøাহ হল করা হয়, যা এখনও বিদ্যমান। অপবাদ ইসলাম ধর্মের। অথচ ভারতের মত কট্টর হিন্দুয়ানি দেশে ২০০ বছরের পুরনো বিদ্যাপীঠ আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালেয় নামের সাথে মুসলিম শব্দ আজও টিকে আছে। ১৩. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আল্লামা ইকবাল হলের নাম পরিবর্তন করে সূর্যসেন হল করা হয়। (ইকবাল মুসলিম জাগরণের কবি, তাঁর কবিতা মুসলিম সাহিত্য, মাদ্রাসা, হাজারো আলেমের হৃদয়ে গুঞ্জরণ হয় আজো। মুসলিম জাতিকে গড়ে তুলতে ২৫ হাজার পঙ্তির শুধু কবিতাই লিখেছেন। তিনিই প্রথমে ব্রিটিশ থেকে স্বাধীন করে আলাদা একটি মুসলিম ভূখণ্ডের কথা বলেছিলেন, ফলে তাকে পাকিস্তানের স্বপ্নদ্রষ্টা বলা হয়। তিনি মৃত্যুবরণ করেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মানে পাকিস্তানের জন্মেরও বহু আগে। ইকবালের নাম না হয় তুলে দেয়া হলো, কিন্তু যার নাম তার জায়গায় দেয়া হলো তিনি হলেন বিপ্লবী নেতা সূর্যসেন। সূর্যসেন চরম মুসলিমবিদ্বেষী, তার দলে মুসলিম তো দূরের কথা, ব্রাহ্মণ ব্যতীত কোন সাধারণ হিন্দুকেও সদস্যও করা হতো না। তিনি ব্রিটিশের বিরুদ্ধে বিপ্লবের কথা বলে যত ব্যক্তি হত্যা করেছেন, তার ৮০% ছিলেন মুসলিম) ১৪. সারা দেশে ইসলামবিদ্বেষীদের পৃষ্ঠপোষকতা এবং তাদের সকল অপকর্ম ক্ষমা করে দেওয়া। (হাইকোর্টের নির্দেশ মতে ইসলামের সুনির্দিষ্ট অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করা এবং ওয়েবসাইড, ব্লগ ও সামাজিক মাধ্যমে ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ও কুৎসা রটনা করলেও সেগুলো বন্ধের কোনো আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করে উল্টো ইসলামপন্থী ওয়েবসাইড, ব্লগ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, পত্রিকা ও টেলিভিশন বন্ধ করে দেয়া হয়)। ১৫. মসজিদের মাইক্রোফোনে সেহরির সময় ডাকাডাকি করায় ইমামকে প্রাণ দিতে হলো একদল হিন্দু যুবকের হাতে। যার এখনো কোন বিচার হয়নি। (গত ২১.০৭.২০১৩ তারিখে উত্তরখান থানার সামুরখানে ভোর রাতে ইমাম সাহেবকে ডেকে নিয়ে অনিল, মিখিলসহ আরও ৭-৮ জন নির্মম প্রহার করে। ইমাম সাহেবের অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে পরদিন ২২.০৭.২০১৩ তারিখে, স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাপের মুখে মসজিদ কমিটির সভাপতি ইমাম সাহেবকে তার গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দেন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে কিশোরগঞ্জ জেলার জহুরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে, গত ৩১.০৭.২০১৩ তারিখ সন্ধ্যায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। নিহতের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর থানার অন্তর্গত এলাচী গ্রামে। নাম মাওলানা মোহাম্মদ আখের আলী। তিনি ময়নারট্যাক গিয়াস উদ্দীন সরকার বাড়ি মসজিদের ইমাম ছিলেন) ১৩. আওয়ামী লীগ কর্তৃক যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে বিজাতীয় সংস্কৃতির প্রচারণা ও শাহবাগীদের প্রশ্রয় প্রদান। যেমন, রাজাকারের ড্রেস বোঝানোর নামে টুপি, দাড়ির ভয়ানক অবমাননা, মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বলন এবং মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন, মহিলা-পুরুষ মিলে সূর্য ডুবে যাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে জানাজার নামাজ পড়া। এগুলো কি ইসলামের ওপর সূক্ষ্ম আঘাত ছাড়া আর কিছু হতে পারে? ১৪. বায়তুল মোকাররম মসজিদের ভেতরে ঢুকে মুসল্লিদের ওপর গুলি, টিয়ার শেল নিক্ষেপ এবং বেধড়ক পিটুনি দেয় আওয়ামী পুলিশ। (ইউটিউবে ভিডিও ও ইন্টারনেট ইমেজে এসব নির্মম নির্যাতনের অসংখ্য ছবি দেখতে পাওয়া যায়) ১৫. সারাদেশে দাড়ি-টুপি পরিধানকারী মানুষের প্রতি হয়রানি, নির্যাতন, দাড়ি ধরে টানাটানি করা (পত্রিকায় প্রকাশিত ছবি), মিথ্যা মামলায় জড়ানো এগুলো এই সরকারের ইসলামবিদ্বেষী আওয়ামী লীগ ও নিয়োগকরা দলীয় মদদপুষ্ট পুলিশগুলোই করেছে। ১৬. জামায়াতের গঠনতন্ত্রে ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ কথাটা আছে বলে তা বর্তমান পরিবর্তিত সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক আখ্যা দিয়ে এদের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। ১৭. প্রকৃতপক্ষে রাজাকার না হওয়া সত্ত্বেও মিথ্যা অভিযোগ ও অপপ্রচারের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে জামায়াতের নেতাদের শুধুমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ফাঁসি দেয়ার নিরন্তর চেষ্টা (কারণ জামায়াত ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের পরিবর্তে ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র কায়েম করতে চায়) অব্যাহত রাখা। ১৮. রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ আমীর আলী হলের দোতলা (২৩১ নম্বর কক্ষ) থেকে নর্দমায় কুরআন শরিফ ছুড়ে ফেলে ছাত্রলীগ নেতা সূর্য কুমার রায়। সরকার তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। (২২ নভেম্বর, ২০১২, দৈনিক নয়া দিগন্ত) ইসলামী চেতনাবিবর্জিত শিক্ষানীতি চালুর চক্রান্ত সকল মুসলমানকে ভাবিয়ে তুলেছে, যা আমাদের সরাসরি ঈমানের সাথে সাংঘর্ষিক। নিম্নে এর সংক্ষিপ্ত একটি চিত্র তুলে ধরা হলো : ১. স্কুলে মাধ্যমিকে ‘ইসলাম ধর্ম শিক্ষা’-কে ঐচ্ছিক করা। ২. প্রথম শ্রেণীর বাংলা বই থেকে ‘মহানবী (সা)-এর ভালবাসা’ গল্পটি বাদ হয়েছে। ৩. দ্বিতীয় শ্রেণীর বই থেকে ‘সবাই মিলে করি কাজ’ (খন্দক যুদ্ধের ঘটনা) গল্পটি বাদ দেয়া হয়েছে। ৩. তৃতীয় শ্রেণীর বই থেকে ‘তুলি দুই হাত করি মোনাজাত’ ও ‘হযরত আবুবকর’ কবিতা ও প্রবন্ধটি নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে। ৪. চতুর্থ শ্রেণীর বই থেকে ‘হযরত উমর (রা)’ জীবনী সংক্রান্ত প্রবন্ধটি বাদ দেয়া হয়েছে। ৫. পঞ্চম শ্রেণীর বই থেকে ‘বিদায় হজ্ব’ প্রবন্ধটি বাদ দেয়া হয়েছে। ৬. মাদ্রাসা বোর্ডের নবম-দশম শ্রেণীর বইয়ে আল্লাহর সন্তান আছে বলে উল্লেখ করা হয়। (বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দাখিল নবম-দশম শ্রেণীর ‘বাংলা সাহিত্যের’ ১৯ নম্বর গদ্যাংশের ৯৪ নম্বর পৃষ্ঠায় মোহাম্মদ আকরম খাঁ রচিত ‘বিদায় হজ্ব অধ্যায়ে’ ‘অসাম্যের প্রতিবাদ’ প্যারার ৯৬ পৃষ্ঠার দ্বিতীয় লাইনে ‘আল্লাহর সকল সন্তানকে’ (নাউজুবিল্লাহ) লেখা হয়েছে ‘কুলপতি হজরত এব্রাহিম এই সহানুভূতি শিক্ষা ও সাম্যের শিক্ষাদানের জন্যই ‘ইতর-ভদ্র’ নির্বিশেষে ‘আল্লাহর সকল সন্তানকে’ আরাফাত ময়দানে সমবেত হইবার জন্য আহ্বান করিয়াছিলেন।’ আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করা সম্পূর্ণ শিরক। পবিত্র আল কুরআনে শিরক (আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করা) কবিরা গুনাহ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।) ৭. নবম-দশম শ্রেণীর ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ বইতে দেব-দেবীকে আল্লাহর সমকক্ষ করা এবং দেবদেবীর নামে পশু উৎসর্গ করা পরোক্ষভাবে জায়েজ আখ্যায়িত করা হয়েছে। (শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রণীত ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ বইয়ের মাধ্যমে ভয়াবহ শিরক শিক্ষা দেয়া হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। ২০১৩ সাল থেকে নবম-দশম শ্রেণীর জন্য পাঠ্য ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ের পাঠ ২৪-এর একটি বিষয় হলো ‘শরিয়তের আহকাম সংক্রান্ত পরিভাষা’। পরিভাষার অধীনে একটি বিষয় হলো ‘হালাল-হারামের সংখ্যা’। হারাম-হালালের সংখ্যা বিষয়ে ৮২ পৃষ্ঠায় ১৭ ধরনের হারাম বস্তুর তালিকা দেয়া হয়েছে। তালিকার ৫ নম্বর ক্রমিকে লেখা হয়েছে ‘দেব-দেবীর বা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে উৎসর্গকৃত পশুর গোশত খাওয়া হারাম’। এখানে দেব-দেবীর নামে পশু উৎসর্গ করা না হলে সে পশুর গোশত খাওয়া হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। এর মানে হলো দেব-দেবীর নামে কোনো পশু উৎসর্গ করা হলে তার গোশত খাওয়া হালাল! একই সাথে এখানে দেব-দেবীকে আল্লাহর সমকক্ষ করা হয়েছে! (পবিত্র কুরআনে পশুর গোশত হারাম হওয়া বিষয়ে যে সুস্পষ্ট আয়াত রয়েছে, তারও সরাসরি বিপরীত পাঠ্যপুস্তকের এ বিষয়টি)। উল্লেখিত প্রমাণাদি যৎসামান্য উপস্থাপন করেছি। আওয়ামী লীগের আরো নানাবিধ ইসলামবিদ্বেষী কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি একত্রিত করলে বেশ কয়েকটি বইয়ে সঙ্কলন করতে হবে। আমি শুধু উল্লেখযোগ্য সামান্য কিছু তথ্যাদি উপস্থান করেছি মাত্র তা আমার সংগ্রহে ছিল। কারণ তারা প্রতিনিয়ত এত বেশি ইসলাম ও মানবতার বিরুদ্ধে কর্মকাণ্ড পরিচালিত করছে তার হিসাব বিস্তর লম্বা। যুগে যুগে অনেক লতিফ সিদ্দিকী ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল সবাই ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছিল। সালমান রুশদি, দাউদ হায়দার ও তসলিমা নাসরিনরা স্বদেশে পরবাসী। যারা নির্ভুল ইসলামকে ভুল বলে প্রচার করে শেষ পর্যন্ত তারা নিজেরাই ভুল প্রমাণিত হয়, সর্বত্র হয় ঘৃণিত। আর আড়ালে আবডালে তাদের পৃষ্ঠপোষণ করে ইসলামবিদ্বেষী চক্র যে ফায়দা লুটতে চায় সময়ের পরিক্রমায় তাদের সে পরিকল্পনা বোমেরাং হয়। আল্লাহ সত্য, আল্লাহর কিতাবও সত্য। যারা ক্ষমতার দাপটে সত্য-মিথ্যার সংমিশ্রণ ঘটিয়ে যে কোন মূল্যে ক্ষমতা ধরে রাখতে চায় তারা মূলত নিজেদের অজান্তে নিজেদের ক্ষতি করে বসে, যারা ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে মূলত তারা নিজেরা নিজেদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তাই আওয়ামী লীগসহ যারা ইসলামবিদ্বেষীদের পৃষ্ঠপোষকতা করে আবার নিজেদের মুসলমান হিসেবে দাবি করে তারা নিজেদের কৃত কর্মকাণ্ড নিয়ে পর্যালোচনা করা উচিত। সকল ভ্রান্ত চিন্তা থেকে ফিরে আসা উচিত। কারণ জীবন তো একটাই আর সে জীবন ক্ষণস্থায়ী। আমরা আল্লাহর, আমাদেরকে আল্লাহর কাছেই ফিরে যেতে হবে। আল্লাহ সবাইকে সঠিক জ্ঞান দান করুন। লেখক : কেন্দ্রীয় সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির