post

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে গণতন্ত্র কত দূর? । শাহ মোহাম্মদ মাহফুজুল হক

০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে গণতন্ত্র কত দূরনির্বাচন হলো সিদ্ধান্ত গ্রহণের এমন একটি আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে জনগণ রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য একজন প্রতিনিধিকে বেছে নেয়। সপ্তদশ শতক থেকে আধুনিক প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রে নির্বাচন একটি আবশ্যিক প্রক্রিয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের নামকরণ করা হয়েছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। অর্থাৎ এই রাষ্ট্রটি কোন বিশেষ শ্রেণী, পেশা বা পরিবারের বাংলাদেশ নয় বরং এই দেশটি হবে দেশের সকল জনগণের। তাইতো সংবিধানের ভূমিকায় দৃঢ়ভাবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের লক্ষ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে- ‘আমরা আরও অঙ্গীকার করিতেছি যে, আমাদের রাষ্ট্রের অন্যতম মূল লক্ষ্য হইবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা; যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হইবে।’ আমাদের সংবিধানের ৭ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- ৭(১) প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ; এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হইবে? (২) জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোন আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসামঞ্জস্য হয়, তাহা হইলে সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইবে? সংবিধান প্রদত্ত জনগণের এই মালিকানা বা অধিকার যদি কেউ কেড়ে নেয় বা নেওয়ার চেষ্টা করে তবে তা হবে রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধ যার সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডকে নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সংবিধানে বলা হয়েছে- ৮ [৭ক। (১) কোন ব্যক্তি শক্তি প্রদর্শন বা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বা অন্য কোন অসাংবিধানিক পন্থায়- (ক) এই সংবিধান বা ইহার কোন অনুচ্ছেদ রদ, রহিত বা বাতিল বা স্থগিত করিলে কিংবা উহা করিবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করিলে; কিংবা (খ) এই সংবিধান বা ইহার কোন বিধানের প্রতি নাগরিকের আস্থা, বিশ্বাস বা প্রত্যয় পরাহত করিলে কিংবা উহা করিবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করিলে- তাহার এই কার্য রাষ্ট্রদ্রোহিতা হইবে এবং ঐ ব্যক্তি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে দোষী হইবে। (২) কোন ব্যক্তি (১) দফায় বর্ণিত- (ক) কোন কার্য করিতে সহযোগিতা বা উস্কানি প্রদান করিলে; কিংবা (খ) কার্য অনুমোদন, মার্জনা, সমর্থন বা অনুসমর্থন করিলে-তাহার এইরূপ কার্যও একই অপরাধ হইবে। এখানেই শেষ নয় সংবিধানের ১১ নং ধারায় বলা হয়েছে- প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইবে। প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায় হচ্ছে আইন পরিষদ তথা জাতীয় সংসদ। আর এই সংসদ সদস্যদের প্রত্যক্ষ নির্বাচনের বিষয়ে সংবিধানের বলা হয়েছে- ৬৫(২) একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকাসমূহ হইতে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে আইনানুযায়ী নির্বাচিত তিন শত সদস্য লইয়া এবং এই অনুচ্ছেদের (৩) দফার কার্যকরতাকালে উক্ত দফায় বর্ণিত সদস্যদিগকে লইয়া সংসদ গঠিত হইবে; সদস্যগণ সংসদ-সদস্য বলিয়া অভিহিত হইবেন। উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা সহজেই বুঝতে পারছি যে আমাদের দেশের শাসনতন্ত্রে কার্যকর গণতন্ত্রকে কতবেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সংবিধান প্রদত্ত জনগণের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক এই অধিকার নিশ্চিত করার অন্যতম পূর্বশর্তই হচ্ছে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।

’অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বলতে এমন একটা নির্বাচনকে বুঝয় যেখানে নির্বাচনের আগে, নির্বাচনকালীন সময় ও নির্বাচন পরবর্তী সময়ে শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বিরাজমান থাকে। ভোটের মাধ্যমে জনগণের মতের প্রতিফলন হয়। বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ডায়মন্ড, জনসিংহসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কিছু অত্যাবশ্যকীয় বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন। নিম্নে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো : ⇒ একটি কার্যকর আইনগত কাঠামো (An effective legal framework) ⇒ সকল প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের জন্য সমান ভোটাধিকার নিশ্চিত করা (To ensure equal voting rights of adult franchise) ⇒ প্রত্যক্ষ ও গোপন নির্বাচন পদ্ধতি (Election commission would be independent;) ⇒ স্বাধীন নির্বাচন কমিশন (Security of voters must be ensured before and after election) ⇒ ভোটের আগে, ভোটের সময় ও ভোটের পরে ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা (The fair play of election administration) ⇒ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা (Competitive election among all parties;) ⇒ সকল দলের মাঝে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন (Competitive election among all parties;) ⇒ মিডিয়া ও নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের নির্বাচনপদ্ধতিতে স্বাধীনভাবে অংশগ্রহণ (Access to media and election observers in election process) ⇒ ভোটকে যথাযথভাবে গণনা ও ফলাফল প্রকাশ (Counting votes accurately;) ⇒ বিদ্যমান সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা (Impartiality of acting government.)

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে গণতন্ত্র কত দূরস্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মানদন্ড: বাংলাদেশের বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়ার আগে পাঠকদের জন্য একনজরে এ নির্বাচনের তথ্যগুলো তুলে ধরা হলো: ১. মোট আসন : ৩০০ ২. প্রতীক : ৬৪ ৩. নির্বাচন কমিশনের মোট ব্যয় : ৭০২ কোটি টাকা ৪. নিবন্ধিত দল : ৩৯ ৫. মোট প্রার্থী : ১৮৪১ ৬. দলীয় প্রার্থী : ১৭৪৫ ৭. স্বতন্ত্র প্রার্থী : ৯৬ ৮. মনোনীত নারী ক. আওয়ামী লীগ : ২০ খ. বিএনপি : ১৫ ৯. প্রার্থীদের সর্বোচ্চ ব্যয় : ২৫ লক্ষ (ভোটারপ্রতি-১০/১০০ টাকা) ১০. মোট ভোটার : ১০ কোটি ৪১ লক্ষ ৯০ হাজার ৪৮০ (নারী ৪৯.৬% এবং পুরুষ ৫০.৪%) ১১. প্রথমবারের মতো ভোটার ছিল : আড়াই কোটি ১২. ভোটকেন্দ্র : ৪০ হাজার ১৮৩ ১৩. মোট বুথ সংখ্যা : ১ লক্ষ ৯৫ হাজার ৩১৬টি ১৪. ঊঠগ থাকবে: ৬টি এলাকায়-ঢাকা ৬; ১৩, চট্টগ্রাম ৯, রংপুর ৩, খুলনা ২, সাতক্ষীরা ২।

অবশ্যই গণতন্ত্র বিশেষ করে মানুষের ভোটাধিকারের প্রতি এই অত্যধিক গুরুত্ব দেয়ার পেছনে একটা কারণও রয়েছে। দীর্ঘ সংগ্রাম ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত পাকিস্তান রাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ নামক স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রগঠনের পেছনে শোষণ বৈষম্যসহ অনেক কারণ থাকলেও সবচেয়ে বড় কারণ ছিল পাকিস্তানের সামরিক শাসকদের জনগণের রায় তথা ভোটকে মূল্যায়ন না করা। আরও স্পষ্টভাবে বললে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করা। তাই স্বাধীনতাযুদ্ধের ঘোষণাপত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হিসেবে যে ৩টি বিষয়ের কথা বলা হয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল গণতন্ত্র। অনিবার্য কারণবশতই জনপ্রত্যাশার প্রতি সম্মান দেখিয়েই স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নেও বিষয়টিকে বারবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম ও অসংখ্য শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৩ সালের ৭ই মার্চ। উক্ত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৯৩টি আসন লাভ করে। এই নির্বাচনে এগারো জাতীয় সংসদ সদস্য অবাধে ভোটবিহীনভাবে জয় লাভ করে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে অনুষ্ঠিত প্রথম নির্বাচনেই ব্যাপক কারচুপি ও ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের মাধ্যমে জনগণের মতামতের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করার অভিযোগে অভিযুক্ত হন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন সংগ্রাম করে আসা স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান নিজেই। যিনি পরবর্তী ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি একদলীয় বাকশাল কায়েম করে গণতন্ত্রের কফিনে চূড়ান্ত পেরেকটি মেরে দিয়েছিলেন। যার পরিণতি শেখ মুজিবুর রহমান ও তার দলের জন্য সুখকর হয়নি। কিন্তু ইতিহাসের সবচয়ে বড় শিক্ষা হচ্ছে ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এক নির্মম সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন একদলীয় বাকশাল সরকারের পতনের পর দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৯ সালে। এই নির্বাচনে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে নবগঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল জয়লাভ করে; তারা জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২০৭টি আসন লাভ করে। মোট ভোট সংগৃহীত হয়েছিল ৫১.৩%। সামরিক বাহিনীর উর্দি খুলে রাজনীতিতে আসা মেজর জিয়াউর রহমান বাকশাল বাতিল করে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালুসহ কিছু কিছু কাজের মাধ্যমে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হলেও নির্বাচনী কারচুপির ঊর্ধ্বে উঠতে পারেননি। তৃতীয় ও চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় স্বৈরশাসক এরশাদের শাসনামলে যথাক্রমে ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে। সামরিক সরকার নিয়ন্ত্রিত এই দু’টি নির্বাচনে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অধিকাংশই অংশগ্রহণ করেনি এবং ব্যাপক কারচুপি ও ভোট জালিয়াতির কারণে দেশে বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি যার কারণে দুই টার্মে কোন টার্মে সরকার মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি। এই সময় স্বৈরাচর সরকারের পদত্যাগ ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অভিন্ন দাবিতে বিরোধী দলগুলোর সম্মিলিত আন্দোলনের ফলে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতন হয়। পরবর্তীতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহাম্মেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয় ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ক্ষমতায় আসে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। অতীতের সকল নির্বাচনের তুলনায় গ্রহণযোগ্যতার বিচারে এই নির্বাচনটি সকলের নিকট অনেক বেশি সমাদৃত হয়েছিল। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো দীর্ঘ ৯ বছরে সংগ্রাম সাধনা এবং ডা: মিলন ও নূর হোসেনসহ অনেক মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারব্যবস্থাকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত না করে ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করে বিএনপি। যার বাস্তব দৃষ্টান্ত হচ্ছে বর্তমান ক্ষমতাসীন লীগ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাবার ন্যায় সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রাম করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার আদায়ের কৃতিত্বের দাবিদার শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ক্ষমতায় এসেই আজীবন ক্ষমতায় থাকার দুরভিসন্ধি নিয়ে ১ কাঁধে বন্দুক রেখে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। কেড়ে নেয় জনগণের ভোটাধিকার। ধ্বংস করে দিয়েছে বিচারব্যবস্থাসহ রাষ্ট্রের মৌলিক প্রতিষ্ঠানিক কাঠামো। উন্নয়নের গণতন্ত্রের নামে আইয়ুব খান ও ইয়াহিয়া খানের মতো বন্দুকের নলের জোরে জনগণের কণ্ঠ স্তব্ধ করে রাখতে চায়। উন্নত আদর্শ ও কর্মসূচি দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী দলসমূহের মোকাবেলা না করে ভিন্নমত দমনে বেছে নেয় নির্বিচারে হত্যা, গুম, খুন ও দমনপীড়নের অপকৌশল। ফলে সমাজে তৈরি হয় এক ধরনের অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা ও ভীতিকর পরিবেশ। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির প্রার্থীবিহীন ও ভোটারবিহীন একপক্ষীয় নির্বাচনের মাধ্যমে অনেক ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে তিলে তিলে গড়ে ওঠা সংসদীয় গণতান্ত্রিক ধারাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয় আওয়ামী লীগ। বিনা ভোটে নির্বাচিত ১৫৪ জন সংসদ সদস্য ও গৃহপালিত বিরোধী দল মিলে জাতীয় সংসদটাকে একটা পুতুল নাচের আসরে পরিণত করে। দেশে-বিদেশে অনেক সমালোচনার পরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয় লাঠিয়াল বাহিনীর মতো ব্যবহার ও কূটকৌশল ব্যবহার করে বিরোধী দলের আন্দোলনকে দমন করে টালবাহানা করে পাঁচ বছর কাটিয়ে দেয়।


বাংলাদেশের সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনকে জালিয়াতি বলে উল্লেখ করেছেন জার্মানির প্রাক্তন পরিবেশমন্ত্রী নোবার্ট রজেন। তিনি টুইটারে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে নির্বাচনী জালিয়াতি দেখে আমি আহত বোধ করছি। দেশটি সত্যিকার অর্থেই একদলীয় দেশে পরিণত হয়েছে। ইউরোপীয় দেশগুলোর উচিত সরকারিভাবে এই নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানানো। সেই সাথে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকেও ইউরোপের সমর্থন দেয়া উচিত।’


অবশেষে ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর ঘোষিত হয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল। স্বাভাবিকভাবেই দেশের ১৭ কোটি জনগণ ও বিশ্ববাসীর প্রত্যাশা ছিল বিগত নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার দেশে-বিদেশে অস্বস্তিতে থাকায় এবার হয়তোবা তারা তুলনামূলক হলেও একটা ভালো নির্বাচন দিবে। যদিও বিরোধী দলগুলে প্রথম থেকেই বলে আসছিল যে দলীয় সরকারের অধীনে বিশেষ করে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তবুও ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে না যাওয়াই মিডিয়া, আন্তর্জাতিক বিশ্ব ও দেশের সুশীলসমাজের একটি অংশ কর্তৃক বিরোধী জোট ২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কট করে ভুল করেছে মর্মে নেতিবাচক প্রচারণার জবাব দেয়া এবং প্রশাসনের কঠোর অবস্থার কারণে সরকার বিরোধী মাঠের আন্দোলন সফল করতে না পারায় নির্বাচনে যাওয়া বিরোধী জোটের অন্যকোন বিকল্পও না থাকায় ঐক্যফ্রন্ট ও বিশ দলীয় জোটভুক্ত দলগুলোসহ অন্যান্য দলগুলো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা দেয়। দেশবাসী আশান্বিত হয়, প্রত্যাশায় বুক বাঁধেন যে এবার নিশ্চয়ই তারা ভোট দিতে পারবেন, গঠিত হবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত জবাবদিহিতামূলক একটি সরকার। বিশেষ করে আড়াই কোটি নতুন ভোটার যারা এবারই প্রথম ভোটার হয়েছেন তারা ভেবেছিলেন তাদের জীবনের প্রথম ভোটটি তারা নিজ হাতে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে দিতে পারবেন। আনন্দে মেতে উঠবেন নিজের ভোট দেয়া প্রার্থীর বিজয়ে। কিন্তু পূরণ হলো না নতুন ভোটারসহ প্রায় সাড়ে ১০ কোটি ভোটারের সেই প্রত্যাশা। ৩০ ডিসেম্বরের প্রহসনের নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট কিন্তু স্থায়ীভাবে চুরি হয়ে গেছে জনগণের ভোটাধিকার ও রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশগ্রহণ করার সাংবিধানিক অধিকার। নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার পর থেকে নুরুল হুদা কমিশনের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ, রিটার্নিং অফিসারগণ কর্তৃক ঠুনকু অভিযোগে একতরফাভাবে বিরোধী দলের প্রার্থীদের প্রার্থিতা বাতিল, সরকারি দল কর্তৃক রাষ্ট্রীয় সকল সুযোগ সুবিধা ব্যবহার করে ব্যাপক প্রচারণা চালানোর বিপরীতে বিরোধী দলের প্রার্থীদের পোস্টার, ব্যানার, মাইকিংসহ সকল ধরনের প্রচার প্রচারণায় সরকারি দল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক বাধা প্রদান, বিরোধী দলের প্রার্থীদের ওপর সরকারি দলের লোকদের সশস্ত্র হামলা, ভোটের আগে নতুন নতুন গায়েবি মামলা দিয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার ও বাড়ি বাড়ি সাঁড়াশি অভিযান ভোটের আগেই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের সম্পূর্ণ বিপরীত একটা পরিবেশ তৈরি করে ফেলেছিল। তবুও জনগণের মনে একটা ক্ষীণ আশা ছিল সেনাবাহিনী নিয়োগ ও ৩০ ডিসেম্বর ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতি ভোটচোরদের সকল পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দিবে। ভোটের ৩/৪ দিন আগ থেকে ভোটদানের উদ্দেশ্যে শহর থেকে গ্রাম অভিমুখে ভোটারদের ঢল, সোস্যাল মিডিয়াতে তরুণ ও নতুন ভোটারদের ভিডিওবার্তা ও পোস্ট দিয়ে পরিবর্তনের পক্ষে উচ্ছ্বাস, কুমিল্লার দাউদকান্দি, লক্ষ্মীপুর, পটুয়াখালীসহ দেশের যে ২-৪টি জায়গায় বিরোধী দল প্রচারণার সুযোগ পেয়েছিল সে সকল জায়গায় জনগণের বাঁধ ভাঙা জোয়ার জনগণের অন্তরে লুক্কায়িত স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে নীরব ভোট বিপ্লবের বাসনাকে আরও বেশি শাণিত করেছিল। কিন্তু আধিপত্যবাদী শক্তি ও তাদের এদেশীয় সেবাদাস ক্ষমতাসীন সরকার ১০ বছর যাবৎ তাদের দুর্নীতি আর দুঃশাসনের কারণে ৩০ ডিসেম্বর তাদের বিরুদ্ধে গণ রায় ও নীরব ভোট বিপ্লবের ভয়ে ভীত হয়ে ওঠে। ৫০% সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলেও শাসক দলের পরাজয় হবে মর্মে ভারতীয়সহ বিভিন্ন পত্রিকায় নিউজ ও সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার নিকট থেকে প্রাপ্ত পূর্বাভাস বুঝতে পেরে বিচলিত হয়ে ওঠে আওয়ামী লীগ। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ভোটডাকাতির একটি সুনিপুণ মাস্টার প্ল্যান করে আওয়ামী লীগ। একদিকে চলছিল ভোটের দিন ভোট বিপ্লবের প্রস্তুতি অন্য দিকে কুচক্রীমহল পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, জনপ্রশাসন ও সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের যোগসজশে ভোটের পূর্বরাতেই ভোটডাকাতির উৎসবে মেতে ওঠে। রাতের আঁধারে প্রিজাইডিং অফিসারকে লোভ লালসা, প্রাণনাশের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে ৪০-৫০% ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করে ভোট শুরুর আগেই প্রায় প্রতিটি আসনে মহাজোটের প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করে আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা। এতেও ক্ষান্ত হয়নি সম্পূর্ণ জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী ভোট চোরচক্র। ভোটের দিন সকালে বিরোধী জোটের প্রার্থীদের এজেন্টরা ভোটকেন্দ্রে গেলে অধিকাংশ জায়গায় তাদেরকে ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হয়নি। অনেক বাধা প্রতিবন্ধকতা মাড়িয়ে যেসকল ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে সক্ষম হয়েছে সেখানে দেখা গেছে সকাল ১০টার আগেই তাদেরকে মারধর করে বের করে দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম-১৫ সাতকানিয়া -লোহাগাড়া আসনে সাতকানিয়া পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডে শামিয়ারপাড়া কেন্দ্রে বারবার বলার পরও বের না হওয়ায় ধানের শীষের একজন এজেন্টকে পায়ে গুলি করে দেয় পুলিশ। আবার অনেক জায়গায় দেখা গেছে রাতে ভোট কেটে নেয়ার কারণে সকালে ভোট শুরু হওয়ার মধ্যেই ভোটকেন্দ্রে ব্যালট শেষ হয়ে যায়। তাই অনেক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে ভোটকেন্দ্রে আসা ভোটারদেরকে লাটি চার্জ করে তাড়িয়ে দেয় পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা। যদিও জনগণের ট্যাক্সের টাকা খরচ করে তাদেরকে নিয়োগ করা হয়েছিল জনগণের ভোটদানের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য। কিন্তু নিয়মনীতির কোন তোয়াক্কা না করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। জাতির সাথে এর চেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতকতা আর কী হতে পারে! অনেক জায়গায় দেখা গেছে ভোটকেন্দ্রের বাইরে লম্বা লাইন ধরে ভোটাররা দাঁড়িয়ে আছেন অথচ নাস্তা বা লাঞ্চের বিরতির কথা বলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দরজা বন্ধ করে ভেতরে নৌকা মার্কায় সিল মেরেছে স্বয়ং প্রিজাইডিং অফিসার, পুলিশ অফিসার ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। অধিকাংশ জায়গায় দেখা গেছে ভোটাররা ভোট দিতে গেলে তাদেরকে বলা হয়েছে আপনার ভোট দেয়া হয়ে গেছে। আবার কোথাও কোথাও বলা হয়েছে ভোট দিতে হলে প্রকাশ্যে নৌকায় সিল দিতে হবে। কোন কোন জায়গায় ভোটাররা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভোট দিলেও গণনার সময় দেখা গেছে বিরোধী দলের এজেন্ট না থাকার সুযোগ নিয়ে সরকার বিরোধী প্রার্থীর ভোটগুলো পুকুর বা ডোবায় ফেলে দেয়া হয়েছে। কিংবা উপরে নিচে নৌকার কিছু ভোট দিয়ে নৌকার ভোটের বান্ডিল হিসেবে গণনা করা হয়েছে। মূলত ৩০ ডিসেম্বর প্রহসনের এই নির্বাচনে হেন কোন জালিয়াতি নেই যা করা হয়নি। যার ফলে দিন শেষে যখন ফলাফল আসা শুরু হয় তখন দেখা যাচ্ছিল প্রায় ৩০০ আসনেই আওয়ামী লীগ কিংবা মহাজোটের প্রার্থীরা বিজয়ী হতে চলেছেন। অনেক জায়গায় দেখা যায় ভোট কাস্টিং প্রায় শতভাগ যদিও ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার পর কিছু লোকের মারা যাওয়া কিংবা বিদেশে অবস্থানের কারণে তা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। এমনকি খুলনা-১ সহ কিছু কিছু জায়গায় দেখা গেছে ভোট কালেকশন ঐ কেন্দ্রের মোট ভোটারের চেয়ে কয়েক হাজার বেশি। বায়বীয় ও গায়েবি ভোটের কারণে পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে বিরোধী জোটকে যে ৭টি আসন করুণা করে দেয়া হয়েছে সেসকল আসনে নৌকার ভোটকে ধানের শীষের ভোট হিসেবে দেখানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনেক জায়গায় দেখা গেছে সরকার বিরোধীদের প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা ঐ আসনে বিরোধী দলের কমিটির লোকসংখ্যা কিংবা কারাগারে আটক লোকসংখ্যার চেয়েও অনেক কম। যদিও পূর্বের সকল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে ঐ সকল আসনে সরকারি দলের প্রার্থীদের চেয়ে বিরোধী দলের প্রার্থীদের বিজয়ের রেকর্ডই বেশি। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআইবি) কর্তৃক ৫০টি আসনে পরিচালিত এক জরিপে ভোট জালিয়াতির নিম্নোক্ত ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে- ৫০টি আসনের মধ্যে বুথ দখল করে প্রকাশ্যে সিল মেরে জাল ভোট দেয়া হয়েছে ৩০টিতে, পোলিং এজেন্টকে কেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়া ও কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া ২৯ আসনে, ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়া ২৬ আসনে, ভোটারদের জোর করে নির্দিষ্ট মার্কায় ভোট দিতে বাধ্য করা ২৬ আসনে, ব্যালট পেপার শেষ হয়ে যাওয়া ২২ আসনে, আগ্রহী ভোটারদের হুমকি দিয়ে তাড়ানো ২১ আসনে, ব্যালট বাক্স আগে থেকে ভরে রাখা ২০ আসনে, প্রতিপক্ষ দলের প্রার্থীর নেতাকর্মীদের মারধর করা ১১ আসনে, পোলিং এজেন্টকে কেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়া ২৯ আসনে এবং ১০ আসনে কোনও এজেন্ট ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা উইলসন সেন্টারের সিনিয়র স্কলার, রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম ‘নির্বাচনের ফলাফল চুরি, সরকার অবৈধ’ শিরোনামে এক নিবন্ধে বাংলাদেশের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার পর পৃথিবীর গণতান্ত্রিক ইতিহাসের নিকৃষ্ট নির্বাচন বলে আখ্যায়িত করেছেন। বাংলাদেশে সদ্যসমাপ্ত নির্বাচন, ভঙ্গুর গণতন্ত্র, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের ক্রমবর্ধমান স্বৈরাচারিতাসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে লেখা এক বিশেষ নিবন্ধে এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন এই বর্ষীয়ান কূটনীতিক। দ্য ফ্রাইডে টাইমস শুক্রবার তার এ লেখাটি প্রকাশ করেছে। জাস্ট নিউজ পাঠকদের জন্য বাংলায় অনুবাদ করে লেখাটি প্রকাশ করেছে। তিনি বলেন, ‘আসল কথা হলো ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী নির্বাচনের ফলাফল চুরি করেছে, আর যারা নিজেদের সরকার দাবি করছে তারা অবৈধ।’ বিবিসি, আলজাজিরা, ইকোনমিস্ট, সিএনএন, প্রথম আলো, নয়া দিগন্তসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনিয়ম ও জালিয়াতির শতশত প্রমাণ উঠে আসায় জাতিসংঘসহ পুরো পশ্চিমা বিশ্ব এই নির্বাচনকে প্রহসন ও কলঙ্কিত নির্বাচন বলে প্রত্যাখ্যান করলেও নির্লজ্জ সরকার তা কর্ণপাত করছে না। অন্য দিকে বাংলাদেশের সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনকে জালিয়াতি বলে উল্লেখ করেছেন জার্মানির প্রাক্তন পরিবেশমন্ত্রী নোবার্ট রজেন। তিনি টুইটারে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে নির্বাচনী জালিয়াতি দেখে আমি আহত বোধ করছি। দেশটি সত্যিকার অর্থেই একদলীয় দেশে পরিণত হয়েছে। ইউরোপীয় দেশগুলোর উচিত সরকারিভাবে এই নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানানো। সেই সাথে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকেও ইউরোপের সমর্থন দেয়া উচিত।’ জনগণের মতামতকে তোয়াক্কা না করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করায় যে দেশের মানুষ অস্ত্র হাতে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশটিকে স্বাধীন করেছিল, যে দেশটির সাংবিধানিক নাম হচ্ছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ, যে দেশে নেতা-নেত্রীরা কথায় কথায় গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন; সেই দেশে স্বাধীনতার ৪৭ বছর পার হলেও আজ এখনো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি- এর চেয়ে বড় লজ্জা ও ব্যর্থতা আর কী হতে পারে? তাইতো আজ জানতে বড় ইচ্ছে হয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে গণতন্ত্র কত দূর? লেখক : কলামিস্ট

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির