মনীষী বলেছেন, “ছাত্রনং অধ্যয়নং তপ” (অধ্যয়নই ছাত্রদের প্রধান তপস্যা)। শিক্ষাব্যবস্থায় ‘শিক্ষার্র্থী’ এক অনিবার্য উপাদানের নাম। কোন শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষা অধিদফতর বা মন্ত্রণালয় আছে, যথার্থ নীতিমালা ও সুন্দর অবকাঠামোসহ পর্যাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে, সময়োপযোগী সিলেবাস ও প্রশিক্ষিত শিক্ষকমণ্ডলী আছে কিন্তু এতকিছু থাকার পরও যদি শিক্ষার্থী না থাকে তবে সে শিক্ষাব্যবস্থাকে কোনদিন শিক্ষাব্যবস্থা হিসেবে গণ্য করা যাবে না। ঘটনাটি অনেকটা সেরকম- যেখানে বিয়ের সানাই বাজছে। বিশাল বিশাল তোরণ নির্মাণ, বরযাত্রীর দীর্ঘ গাড়ির বহর, উৎকৃষ্ট সব খাবারের আয়োজন, হাজারো মানুষের সমাগমে উৎসব উৎসব রব উঠেছে চারদিকে অথচ যার জন্য এত আয়োজন চূড়ান্ত মুহূর্তে সেই ‘বর’কে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না! তাহলে বিয়েটি কেমন হবে? নিশ্চয়ই সব আয়োজন গুড়ে বালি হতে বাধ্য। ঠিক তেমনি সমৃদ্ধশালী জাতিগঠনের জন্য একটি কাঙ্ক্ষিত মানের শিক্ষাব্যবস্থার আবশ্যকতার পাশাপাশি একটি শিক্ষাব্যবস্থাকে সফলতার স্বর্ণ শিখরে পৌঁছে দিতে হলে এর মূল উপাদান শিক্ষার্থীদের দিকে নজর দিতে হবে। তাদের সফলতাই শিক্ষাব্যবস্থার সফলতা এবং তাদের ব্যর্থতাই শিক্ষাব্যবস্থা তথা গোটা জাতির ব্যর্থতা। তাই কোন জাতিকে উন্নত করার জন্য প্রথম প্রয়োজন হলো সেই দেশে বসবাসরত সকল ছেলেমেয়েকে শিক্ষার আওতাভুক্ত করা। প্রতিটি শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য হচ্ছে- দেশের জন্য সুনাগরিক তৈরি এবং দক্ষ জনশক্তি তৈরির মাধ্যমে দেশকে উন্নতি-অগ্রগতির মণি-মুকুট হাসিলের মাধ্যমে জাতিকে পৃথিবীর মানচিত্রে উচ্চতর আসনে সমাসীন করা। আর এ জন্য প্রতিটি শিক্ষার্থীর দিকেই শিক্ষাব্যবস্থাকে হতে হবে মনোযোগী; দায়িত্ববান। মানসম্মত শিক্ষা হতে হবে সর্বপর্যায়ে এবং সবার জন্য। মন্ত্রী-সচিব থেকে শুরু করে গ্রামের একজন শিক্ষক পর্যন্ত সবাই নিজ নিজ দায়িত্বের ব্যাপারে সদা সচেতন থাকবেন। শিক্ষার্থীদের জন্যই হবে রথী-মহারথীদের সব আয়োজন। দেশ ও সরকারের পক্ষ থেকে সকল আয়োজন সম্পন্ন হওয়ার পর দায়িত্ব বর্তায় স্বয়ং শিক্ষার্থীদের ওপর। শিক্ষার্থীগণ যদি পড়ালেখায় মনোযোগী না হয় তবে সকল আয়োজন নিষ্ফল হতে বাধ্য। টি-টুয়েন্টির একজন ব্যাটসম্যানকে যেমন প্রতিটি বলের মেধা-গুণাগুণ বিচার-বিশ্লেষণ করে প্রতি বল থেকে রান সংগ্রহের দিকে খেয়াল রাখতে হয় তেমনি একজন শিক্ষার্থীকে ক্লাস ও বাসার পড়ার টেবিল-চেয়ারের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। প্রতিটি ক্লাস যেন জীবনের মোড় ঘুরাতে একেকটি চার-ছক্কার ভূমিকা পালন করে শিক্ষার্থীকে সে ব্যাপারে সোচ্চার থাকতে হবে। শিক্ষার্থীর জন্য ক্লাসের চেয়ে বড় কোন বিষয় থাকতে পারে না। খেলাধুলা, সিনেমা, ইন্টারনেট, ঘোরা-ফিরা, আড্ডা ইত্যাদি কখনোই ক্লাস মিস দেয়ার কারণ হতে পারে না। যে খেলা দীর্ঘ সময় নষ্টের কারণ হয় একজন দায়িত্ববান শিক্ষার্থী তা খেলা ও দেখা থেকে সচেতনভাবে বিরত থাকবে। অতিরিক্ত আড্ডাবাজ ও সময় নষ্টকারী বন্ধুর নাম আদর্শ শিক্ষার্থীর বন্ধু তালিকায় থাকা সমীচীন নয়। একমাত্র মুমূর্ষু অবস্থা বা হাসপাতালে ভর্তি ব্যতীত শিক্ষার্থী কখনোই ক্লাস মিস দিতে পারে না। কোচিং সেন্টার কখনোই ক্লাসের বিকল্প হতে পারে না। কোচিং সেন্টার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যের মধ্যেই রয়েছে ব্যবসায়ের চিন্তা। তাই ব্যবসায়িক চিন্তা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত কোচিং কোনদিনই ক্লাসের সমপর্যায়ের নয়। অবাক করা বিষয় হলো- ক্লাসের চেয়ে শিক্ষার্থীরা ইদানীং কোচিংকে বেশি প্রিফার করে। এর কারণ নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। বাণিজ্যিক অভিলাষে প্রতিষ্ঠিত কোচিং সেন্টারগুলোতে সমবেত হয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। অনেক স্কুল-কলেজে বয়েস-গার্লস আলাদা ব্যবস্থা বা সেকশন আছে কিন্তু অধিকাংশ কোচিং সেন্টারে এরকম ব্যবস্থা নাই। তাই সাধারণ অর্থে বলা যায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের একটি মিলনমেলা হচ্ছে কোচিং সেন্টার। অনেক শিক্ষার্থীর মাঝে এরকম আলোচনাও চলে যে- অমুক ছেলে বা মেয়ে অমুক কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়েছে সুতরাং আমাকেও ওখানে ভর্তি হতে হবে। এর ফলে যারা আসলেই পড়ুয়া তারা কিছুটা ভালো করলেও বাকি অধিকাংশই পড়ালেখার আসল পাঠ থেকে দূরেই থেকে যায়। গভীরভাবে চিন্তা ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করলে কোচিং সেন্টার আসক্তি থেকে শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে বাসায় পড়ার টেবিল-চেয়ারের প্রতি আকর্ষণ বাড়ানো সম্ভব। বড়জোর দু’একটি কঠিন বিষয়ে শিক্ষার্থীরা আলাদা প্রাইভেট পড়তে পারে। কিন্তু ঢালাওভাবে কোচিং কোনদিনই ভালো ফল বয়ে আনতে পারে না।
যাদের বয়স ৪০ ঊর্ধ্বে তারা খেয়াল করুন নিজেদের স্কুল-কলেজের সময়গুলোর কথা। বাড়িতে কুপি বাতি জ্বালিয়ে, প্রচণ্ড গরম ও মশার কামড় সহ্য করে তখন পড়ালেখা করতে হয়েছে। এক বাড়িতে একজন পড়লে তার আওয়াজ পাশের বাড়ি থেকেও পাওয়া যেত। সে পড়ালেখায় যে মনোযোগ বসতো মনে মনে পড়ালে সে রকম মনোযোগ বসে না। এখনকার ছেলেমেয়েরা দেখা যায় ক্লাস ফাইভের পর থেকেই মনে মনে পড়ার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
সম্মানিত অভিভাবক মহল একটু খেয়াল করুন। সন্তানদের সুন্দর বিকাশের জন্য আপনাদের চেষ্টা-তদবিরের কোনো অভাব নেই। আপনারা আপনাদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সন্তানদের জন্য টাকার যোগান দেন। নিজেরা কষ্ট করে চলে সন্তানদের চাহিবামাত্র চাহিদা পূরণে সদা সচেষ্ট থাকেন। এক্ষেত্রে আপনাদের অবদান আপনার সন্তানের পাশাপাশি দেশ ও জাতিও ভুলতে পারবে না। কিন্তু এতটুকুতেই দায়িত্ব শেষ হয়ে গিয়েছে বলে মনে করে নিশ্চিন্তে থাকার কোনো সুযোগ আছে বলে মনে করি না। আর্থিক যোগানের পাশাপাশি সেই অর্থের সঠিক ও সর্বোচ্চ ব্যবহারের দিকেও অভিভাবক শ্রেণীর সদা সতর্ক থাকা বাঞ্ছনীয়। সন্তান ক্লাস টাইমে ঠিকমত ক্লাসে যাচ্ছে কি-না তা সচেতনতার সাথে খেয়াল করতে হবে। হাজারো ব্যস্ততার মাঝে সুযোগ করে মাঝে মাঝে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে সরেজমিনে দেখতে হবে, শিক্ষকদের সাথে কথা বলতে হবে। তাহলেই আদরের সন্তানের প্রকৃত রূপ আপনার কাছে পরিষ্কার ধরা পড়বে। এবার আসি বাসায় পড়া-লেখার বিষয়ে। সচেতন গার্ডিয়ানরা সন্তানকে শুধু আদর নয় বরং প্রয়োজনীয় শাসনও করেন। শাসনবিহীন আদর আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক্ষেত্রে সন্তান নষ্টের জন্য সিংহভাগ দায়ী থাকবেন অভিভাবক শ্রেণী। তাই বাসায় আসলে সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। পড়ার সময় সন্তান পড়ার টেবিলে না টিভি রুমে না অপ্রয়োজনীয় কাজে ঘরের বাইরে সে ব্যাপারে বাবা অথবা মাকে পালাক্রমে তদারকির দায়িত্ব পালন করতে হবে। সকাল থেকে ক্লাসের পূর্ব পর্যন্ত এবং সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১০-১১টা পর্যন্ত শিক্ষার্থী যদি বাসায় পড়ার টেবিলে থাকে তাহলে সিলেবাসের বেশির ভাগ অধ্যয়ন হয়ে যাওয়ার কথা। শিক্ষার্থীর এই সময়গুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অভিভাবকদেরকে বিশেষ মনোযোগী হতে হবে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনে কঠোর হওয়া দরকার। সন্তানের ভবিষ্যৎ মঙ্গলের জন্য পিতা-মাতা যথাযথ শাসন করবেন নির্দ্বিধায়। বর্তমানে শিক্ষকগণ শাসন করেন না অভিভাবকদের পাল্টা অভিযোগের ভয়ে। কিন্তু পিতা-মাতা শাসন করলে কারো কাছে কোন জবাবদিহি করতে হয় না। সুতরাং সকালে ও সন্ধ্যার পর সময়ের শতভাগ ও কার্যকর ব্যবহার যদি অভিভাবকগণ নিশ্চিত করতে পারেন তবে শিক্ষার্থীর চূড়ান্ত প্রস্তুতির সিংহভাগ হয়ে যাবে এতে কোন সন্দেহ নেই। আসলে বর্তমান প্রজন্ম যেন পড়ালেখা অর্থাৎ অধ্যয়ন থেকে যোজন যোজন দূরে অবস্থান করছে। অথচ অধ্যয়ন এবং একমাত্র অধ্যয়নই মানুষকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে ও তাকে জগদ্বিখ্যাত হতে সাহায্য করে। এ পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের জন্য অতি পরিচিত দুইজন বিখ্যাত ব্যক্তির উপমা পেশ করছি। আমাদের কবি, সাম্যবাদী কবি, মানবতার কবি, বিদ্রোহী কবি এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। সে সময়ে বর্তমান সিস্টেমের আনুষ্ঠানিক পড়ালেখার সুযোগ কম ছিল। পড়তে হতো নিজের উদ্যোগে-আগ্রহে। দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত কবি নজরুল ইসলামের পরের অনুগ্রহে চলা আনুষ্ঠানিক পড়ালেখা ১৯১৭ সালে দশম শ্রেণীতে অধ্যয়নের পর পরই শেষ হয়ে যায়। এরপর জীবনসংগ্রামের নির্মম বাস্তবতায় কবিকে পেটের ভাত জোগাড় করতে রাস্তায় নামতে হয়। কিন্তু তার রচনাগুলোর দিকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থেকে বুঝার কোনো উপায় নেই যে সেগুলো একজন দশম শ্রেণী পড়ুয়া ছাত্রের কলম থেকে কিভাবে এসেছিলো। নজরুল গবেষকরা মেধার খাটাখাটুনির মাধ্যমে বের করেছেন যে; মূলত কবি নজরুলের ‘পড়ালেখা’ ১৯১৭ সালের আনুষ্ঠানিক পড়ালেখা জীবন শেষ হওয়ার পর থেকেই শুরু হয়। তীব্র কঠিন বাস্তবতার সেই সময়গুলোতে কবি নজরুল গভীর অধ্যয়ন ও লেখালেখিতে মনোযোগী হন। তিনি পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য সব সাহিত্যকর্ম, অধিকাংশ ধর্মীয় গ্রন্থ, সমাজ-রাজনীতি ও ইতিহাসগ্রন্থ, যুদ্ধ-সংঘাত গভীরভাবে অধ্যয়ন করেন। সমসাময়িক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিষয়ে তিনি সচেতনতার সাথে জানতে থাকেন। তার রচনাবলি থেকে এসব বিষয়ে তার জ্ঞানের বিশালতা টের পাওয়া যায়। সুতরাং বলা যায় কবি নজরুল ইসলাম আনুষ্ঠানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়ে ‘ব্যক্তিগত অধ্যয়ন’কে নিত্য সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে কে না চেনেন? বিদ্যাসাগর হওয়ার জন্য তাকে সাগরের মতো বিশাল-বিস্তীর্ণ জ্ঞানার্জন করতে হয়েছে। আর সে জন্য তাকে রাত জেগে জেগে পড়তে হতো। রাতে পড়ার সময় ঘুম তার বিরোধিতা শুরু করে। ঘুমকে তাড়াতে তিনি এক অভিনব পন্থা অবলম্বন করেন। তিনি হারিকেনের তেল চুলে লাগিয়ে নিতেন, এতে তার চোখ জ্বলতো এবং ঘুম অন্য কারো চোখে পালিয়ে যেত। পড়ালেখার প্রতি কী নেশাই না ছিল তার! এভাবে উদাহরণ দিতে গেলে অনেকের নামই বলা যাবে যারা নিজেদের অদম্য স্পৃহা থেকে পড়ালেখা ও অধ্যয়নকে জীবনে ভালোবেসেছিলেন এবং পরম সঙ্গী বানিয়েছিলেন। যাদের বয়স ৪০ ঊর্ধ্বে তারা খেয়াল করুন নিজেদের স্কুল-কলেজের সময়গুলোর কথা। বাড়িতে কুপি বাতি জ্বালিয়ে, প্রচণ্ড গরম ও মশার কামড় সহ্য করে তখন পড়ালেখা করতে হয়েছে। এক বাড়িতে একজন পড়লে তার আওয়াজ পাশের বাড়ি থেকেও পাওয়া যেত। সে পড়ালেখায় যে মনোযোগ বসতো মনে মনে পড়ালে সে রকম মনোযোগ বসে না। এখনকার ছেলেমেয়েরা দেখা যায় ক্লাস ফাইভের পর থেকেই মনে মনে পড়ার দিকে ঝুঁকে পড়ে। এতে তার পড়াশুনা পাশের রুম থেকেও শুনা যায় না। ফলে সে পড়ছে না অন্য কিছু করছে তা দূর থেকে বুঝার উপায় নাই। সন্তানদেরকে আওয়াজ করে পড়ার দিকে উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে। মোবাইল ব্যবহারেও কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করতে হবে। এ বিষয়ে বিল গেটসের দিকে অভিভাবকগণ নজর দিতে পারেন। কিশোর বয়সেই কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শুরু করা বিল গেটস সন্তানদের অন্তত ১৪ বছর না হলে মুঠোফোন ব্যবহার করতে দেননি। তিনি স্কুলে পড়ার সময় ‘টিক-ট্যাক-টো গেমে’র একটি সংস্করণ তৈরি করেন, যেখানে কম্পিউটারের প্রতিপক্ষ হিসেবে খেলা যেত। পরবর্তী সময়ে অন্যতম সেরা প্রযুক্তির প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট দাঁড় করান সহপ্রতিষ্ঠাতা পল অ্যালেনের সঙ্গে। তাঁর ঘরবাড়ির পরতে পরতে প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগে আছে। তাই বিল গেটসের সন্তানেরা যে বিশ্বসেরা প্রযুক্তি নিয়ে বেড়ে উঠবে, এমনটাই হওয়ার কথা ছিল। তবে ব্যাপারটা ঠিক উল্টো। প্রযুক্তিবিষয়ক অনুষঙ্গ ব্যবহারে তিন সন্তানের প্রতি বাবা বিল গেটসের আছে কঠিন বিধিনিষেধ। সম্প্রতি ব্রিটিশ দৈনিক দ্য মিররকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বিল গেটস বলেন, ‘আমাদের খাবার টেবিলে সেলফোন থাকে না। অন্তত ১৪ বছর বয়স না হলে সন্তানদের হাতে সেলফোন তুলেও দিই না।’ ইউরোপ-আমেরিকার ১৪ বছর আমাদের দেশের নিঃসন্দেহে ২০ বছরের সমান। তাই এ ব্যাপারেও সচেতন গার্ডিয়ানদের খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি ইন্টার এবং অনার্স পর্যায়ের ছেলে-মেয়েদের ব্যাপারে আই ফোন বা স্মার্ট ফোন ব্যবহারে অভিভাবকমহল তদারকি করতে পারেন। আদরের সন্তান যেন মোবাইল-ইন্টারনেট আসক্ত হয়ে বিপথগামী হয়ে না পড়ে সে ব্যাপারে সদা সচেতন থাকা বাঞ্ছনীয়। ঘর বা রুমের দরজা বার বার বন্ধ করে রাখা এবং শিক্ষার্থীরা পড়া বা বিশ্রামের সময়ে মোবাইলে ডুবে আছে কি-না সেদিকেও সকলের সজাগ পর্যবেক্ষণ রাখা একান্ত অপরিহার্য। অন্যথায় সময়ের খেয়াল সময়ে না করার খেসারত দিতে আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। সর্বোপরি পড়ালেখা করে মানুষের মতো মানুষ না হওয়া ছেলে-মেয়েদের দিকে এবং তাদের গার্ডিয়ানদের দিকে যদি তাকান তাহলে দেখবেন কী সীমাহীন দুঃখ, কষ্ট, মর্মপীড়ায় তারা আছেন। নীরবে সয়ে যাওয়া সেসব কষ্ট আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যেন হতাশার সাগরে নিক্ষেপ করতে না পারে সেদিকেও খেয়াল রাখবে সরকার, শিক্ষক ও সচেতন অভিভাবক মহল। তবেই সুশিক্ষিত ও স্বশিক্ষিত হয়ে বেরিয়ে আসবে আগামীর দেশ গড়ার মহানায়কেরা। আমরা পাব সোনার স্বপ্নের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। লেখক : কলামিস্ট
আপনার মন্তব্য লিখুন