post

জীবন্ত শহীদ মো: আশফাকুর রহমান খান বিপু

০৮ মে ২০১১

মানবসভ্যতার ইতিহাস থেকে প্রমাণিত হয় যে, যেখানেই অন্ধকার সেখানেই আলোর মশাল নিয়ে হাজির হয়েছেন আল্লাহর প্রেরিত নবী-রাসূল। অন্যায়, অনাচার, পাপাচার, অন্ধকার, অসত্য, আপরাধ, অশ্লীলতা, অধর্ম, অশিক্ষা, দুর্নীতি, দুরাচার, পঙ্কিলতা যখনই কলুষিত করেছে এই সুন্দর পৃথিবীকে, তখনই বিশ্বজাহানের প্রভু মহান আল্লাহ সে জাতিকে হেদায়েতের জন্য নবী-রাসূলদের প্রেরণ করেছেন রহমতস্বরূপ।  শেষ নবী মুহাম্মাদুর রাসুলূল্লাহ (সা)-এর ইন্তেকালের মাধ্যমে শেষ হয়েছে নবুওয়তের  সেই ধারাবাহিকতা। কিন্তু শেষ নবীর উত্তরাধিকার হিসেবে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কতিপয় জিন্দাদিল মর্দে মুজাহিদ। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির তাদের মধ্যে অগ্রগামী একটি কাফেলা। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই কাফেলার ছায়াতলে এসে বদলে গেছেন অনেক তরুণ যুবক। যে ছাত্র অমনোযোগিতার কারণে ভাল ফলাফলে ব্যর্থ হয়ে খারাপ বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে মা-বাবার ঘুম হারাম করার পাঁয়তারায় লিপ্ত ছিল তারাও ছাত্রশিবিরের সংস্পর্শে এসে খাঁটি সোনায় পরিণত হওয়ার নজির অনেক। বিভিন্ন অন্যায় ও গর্হিত কাজে লিপ্ত তরুণ, যুবক ইসলামী ছাত্রশিবিরের পতাকাতলে এসে অভিভাবকসহ এলাকার জনপ্রিয় ছেলে হিসেবে পরিচিত হওয়ার হাজারো উদাহরণ রয়েছে। কিন্তু  আদর্শবিরোধীদের ধ্বজাধারী ক্ষমতাসীন দলের লেজুড়বৃত্তিকারী ছাত্ররাজনীতি ইসলামী আদর্শের পতাকাবাহী ছাত্র সংগঠনের কাজে বাধা না দিলে তো আজাজিলের উত্তরসূরিরা খুশি হয় না। তাই শহীদি কাফেলা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাতিলের হামলা মামলার ঘটনার শেষ নেই। ১৯৮৮ সালে ছাত্রলীগের এমনি এক হামলায় দাঁত হারান কলারোয়া সরকারি কালেজের তৎকালীন ছাত্র আশফাকুর রহমান খান বিপু ভাই। ১৯৭৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরার কলারোয়ায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পিতা মো: আলফার রহমান খান এবং মাতা আনোয়ারা বেগমের ৪ পুত্র ও ৫ কন্যা সন্তানের মধ্যে সর্বজ্যেষ্ঠ বিপু ভাই ছিলেন ছাত্রজীবনে অত্যন্ত মেধাবী। এসএসসি ও এইচএসসি পাস করার পর ভর্তি হন উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৯৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য কর্তৃক হামলায় নাকে গুলিবিদ্ধ হন। ১৯৯৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি কারাবরণ করেন। ১৯৯৫ সালের ২২ জুলাই ছাত্রদলের নেতৃত্বে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের বোমা হামলায় ডান হাত হারান এবং বামপাসহ শরীরের শতাধিক স্থানে ক্ষত সৃষ্টি হয়। ২০১০ সালের ২৯ জুন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর, নায়েবে আমীর ও সেক্রেটারি জেনারেলকে অন্যায়ভাবে পুলিশি গ্রেফতারের প্রতিবাদ করায় গাজী আশফাকুর রহমান ভাইকে সেই রাতে পুলিশ গ্রেফতার করে এবং ৩৪ দিন কারাবরণ করেন। বর্তমানে শারীরিক অবস্থা : সামগ্রিকভাবে চলাফেরা করতে অসুবিধা এবং মাঝে মাঝে আহত স্থানগুলোতে খুব ব্যথা অনুভূত হয়। বিশেষ করে শরীরের ভেতর লুকিয়ে থাকা বোমার স্পি­ন্টারগুলোর কারণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।

ছাত্রশিবিরের প্রতি পরামর্শ জাগতিক কোন শক্তির ওপর নির্ভরশীল না হয়ে আল্লাহর ওপর নির্ভরতা বাড়ানো, মেধাবীদের সংগঠনমুখী করার পৃথক পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার। আগামী দিনে জাতির নেতৃত্ব দেয়ার জন্য  পরিকল্পিতভাবে চাকরির ব্যবস্থা করা, সর্বোপরি ধর্মীয় ও নৈতিকতা বোধসম্পন্ন দেশপ্রেমিক জনগোষ্ঠী তৈরিতে ভূমিকা রাখা। ইসলামী আন্দোলনের পাশাপাশি ইসলামী সাংস্কৃতিক আন্দোলনেও জোরদার ভূমিকা পালনের চেষ্টা করা।

এ ক  ন জ রে মো: আশফাকুর রহমান খান বিপু পিতা : মো: আলফার রহমান খান মাতা : আনোয়ারা বেগম স্থায়ী ঠিকানা - গ্রাম : জালালাবাদ, ডাক : হামিদপুর উপজেলা : কলারোয়া জেলা : সাতক্ষীরা জন্ম তারিখ : ২১.০২.১৯৭৩ শিক্ষাগত যোগ্যতা : বিএসএস (অনার্স), এমএসএস (রাষ্ট্রবিজ্ঞান) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমান কর্মস্থল : অধ্যক্ষ, সোনার বাংলা ডিগ্রি কলেজ, কলারোয়া, সাতক্ষীরা। পারিবারিক অবস্থা : চার ভাই, পাঁচ বোন। (ভাই-বোনের মধ্যে বড়), ৩ পুত্র সন্তানের জনক। সাংগঠনিক অবস্থা : ১৯৮৮ সালে কর্মী, ১৯৯০ সালে সাথী, ১৯৯৪ সালে সদস্য। ছাত্রজীবন শেষ ১৯৯৬ সালে। বর্তমানে জামায়াতের রোকন প্রার্থী ও বাজার শাখার সভাপতি। ছাত্রজীবনে দায়িত্ব পালন : সভাপতি, নবাব আ: লতিফ হল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও পরিচালক, কনটেস্ট কোচিং সেন্টার, রা.বি।

গ্রন্থনায় : এম এম রহমাতুল্লাহ

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির