post

পৃথিবী আসল ঠিকানা নয়। জাফর আহমাদ

১৪ নভেম্বর ২০১৮
আল্লাহ কোমল হৃদয় ও করুণাময়। বান্দাহর প্রতি অত্যধিক দয়ালু ও গভীর শুভাকাঙ্ক্ষী। আল্লাহর যে কয়টি সিফাতি নাম রয়েছে তার অধিকাংশই করুণাময় ও দয়ার স্মারক। তাই বলে এই বিশাল করুণার সুযোগ গ্রহণ করে বেপরোয়া ভাব প্রকাশ করার কোন অবকাশ নেই। যারা মহান আল্লাহর করুণাকে পুঁজি করে বেপরোয়া জীবন যাপন করে, আল্লাহর দ্বীন তথা জীবনব্যবস্থা ইসলামের সাথে শত্রুতা পোষণ করে, মসজিদ-মাদ্রাসা, ইসলামী প্রতিষ্ঠান, আলেম-ওলামা, ইসলামী নেতৃত্ব ও ব্যক্তিত্বকে হেয়প্রতিপন্ন বা অসম্মানিত করে তাদের সম্মুখে আল্লাহ তা’আলার নিম্নোক্ত বাণীটি পেশ করা হলো। “তারপর যারা নিকৃষ্টতম চক্রান্ত করছে তারা কি এ ব্যাপারে নির্ভয় হয়ে গেছে যে, আল্লাহ তাদেরকে ভূগর্ভে প্রোথিত করে দেবেন না অথবা এমন দিক থেকে তাদের ওপর আজাব আসবে না যেদিক থেকে তার আসার ধারণা-কল্পনাও তারা করেনি? অথবা আচম্কা চলাফেরার মধ্যে তাদেরকে পাকড়াও করবেন না? কিংবা এমন অবস্থায় তাদেরকে পাকড়াও করবেন না যখন তারা নিজেরাই আগামী বিপদের জন্য উৎকণ্ঠায় দিন কাটাবে এবং তার হাত থেকে বাঁচার চিন্তায় সতর্ক হবে? তিনি যাই কিছু করতে চান তারা তাঁকে নিষ্ক্রিয় করার ক্ষমতা রাখে না। আসল ব্যাপার হচ্ছে, তোমাদের রব বড়ই কোমল হৃদয় ও করুণাময়। আর তারা কি আল্লাহর সৃষ্ট কোন জিনিসই দেখে না, কিভাবে ছায়া ডাইনে বাঁয়ে ঢলে পড়ে আল্লাহকে সিজদা করছে? সবাই এভাবে দীনতার প্রকাশ করে চলছে। পৃথিবী ও আকাশে যত সৃষ্টি আছে প্রাণসত্তা সম্পন্ন এবং যত ফেরেশতা আছে তাদের সবাই রয়েছে আল্লাহর সামনে সিজদাবনত। তারা কখনো অবাধ্যতা প্রকাশ করে না। ভয় করে নিজেদের রবকে যিনি তাদের ওপরে আছেন এবং যা কিছু হুকুম দেয়া হয় সেই অনুযায়ী কাজ করে।” (সূরা আন নাহল ৪৫-৫০) ইসলামের সাথে শুত্রুতা পোষণ কাফের ও মুশরিকদের জন্য স্বাভাবিক হতে পারে কিন্তু মুসলিম নামধারী কোন ব্যক্তি থেকে এই ধরনের আচরণ অস্বাভাবিক ও আশ্চর্যজনকই বটে। কারণ তারা একদিকে নামাজ রোযা ও হজ করছে আবার অন্যদিকে ইসলাম, ইসলামী প্রতিষ্ঠান ও ইসলামের মৌলিক হুকুমগুলোর সাথে বেপরোয়া আচরণ করে যাচ্ছে। তারা এতটাই বেপরোয়া হয়ে পড়েছে যে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের নামটুকু মুছে ফেলার দুঃসাহস দেখাচ্ছে। দুনিয়ার জীবনের বিভিন্ন শক্তিকে করায়ত্ত করে দোর্দণ্ড প্রতাপ নিয়ে তারা ইসলামের স্পর্শকাতর বিষয়ের ওপর হামলা করে যাচ্ছে। আল্লাহর শাস্তির ব্যাপারে এতটাই নির্ভয় প্রকাশ করছে যে, তৎকালীন মক্কার কাফেরদের মতোই সরাসরি বলছে ‘কই তোমাদের সেই আল্লাহ? পারলে তোমাদের রক্ষা করতে আসুক’। মহান আল্লাহ তায়ালা তাদের সম্পর্কে বলেন, “এমন এক সময় আসা বিচিত্র নয় যখন আজ যারা অস্বীকার করছে, তারা অনুশোচনা করে বলবে, হায়, যদি আমরা আনুগত্যের শির নত করে দিতাম! ছেড়ে দাও এদেরকে, খানাপিনা করুক, আমোদ ফুর্তি করুক এবং মিথ্যা প্রত্যাশা এদেরকে ভুলিয়ে রাখুক। শিগগির এরা জানতে পারবে। ইতঃপূর্বে আমি যে জনবসতিই ধ্বংস করেছি তার জন্য একটি বিশেষ কর্ম-অবকাশ লেখা হয়ে গিয়েছিল। কোন জাতি তার নিজের নির্ধারিত সময়ের পূর্বে ধ্বংস হতে পারে না, তেমনি সময় এসে যাওয়ার পরে অব্যাহতিও পেতে পারে না।” (সূরা হিজর : ২-৫)
ইসলামের সাথে শত্রুতা পোষণ কাফের ও মুশরিকদের জন্য স্বাভাবিক হতে পারে কিন্তু মুসলিম নামধারী কোন ব্যক্তি থেকে এই ধরনের আচরণ অস্বাভাবিক ও আশ্চর্যজনকই বটে। কারণ তারা একদিকে নামাজ রোযা ও হজ করছে আবার অন্যদিকে ইসলাম, ইসলামী প্রতিষ্ঠান ও ইসলামের মৌলিক হুকুমগুলোর সাথে বেপরোয়া আচরণ করে যাচ্ছে
অপরাধ করার সাথে সাথে আল্লাহ কাউকে গ্রেফতার করেন না। আর এই জন্য নির্বোধরা ধারণা করে নিয়েছে যে, ইসলাম, ইসলামী হুকুম-আহকাম ও ইসলামী ব্যক্তিত্বের সাথে অসদাচরণ করা হলেও কিছু হয় না। অথচ আল্লাহর নিয়ম হচ্ছে, প্রত্যেক জাতিকে শুনবার, বুঝবার নিজেকে শুধরে নেয়ার জন্য কি পরিমাণ অবকাশ দেয়া হবে এবং তার যাবতীয় দুষ্কৃতি ও অনাচার সত্ত্বেও পূর্ণ ধৈর্য সহকারে তাকে নিজের ইচ্ছামত কাজ করার কতটুকু সুযোগ দেয়া হবে তা আল্লাহ পূর্বাহ্নেই স্থির করে নেন। যতক্ষণ এ অবকাশ থাকে এবং আল্লাহর নির্ধারিত শেষ সীমা না আসে ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ ঢিল দিতে থাকেন। এই নির্ধারিত সময় সীমা কিয়ামত পর্যন্ত হতে পারে। আবার এমনটিও হতে পারে যে, তাদের কর্মকাণ্ড যদি বিকৃতির চরম পর্যায় ধারণ করে তাহলে তার কর্মের অবকাশ কমিয়ে দেয়া হয় এবং তাকে ধ্বংস করে ফেলা হয়। যার নজির আমাদের সামনে অনেক রয়েছে। ঢিল দেয়া বা ধ্বংস করে দেয়ার অর্থ এই নয় যে, এখানেই সব শেষ। বরং আখিরাতে তাদের কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। আল্লাহ বলেন, যারা নিজেদের রবের দাওয়াত গ্রহণ করেছে তাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে আর যারা তা গ্রহণ করেনি তারা যদি পৃথিবীর সমস্ত সম্পদের মালিক হয়ে যায় এবং এ পরিমাণ আরো সংগ্রহ করে নেয় তাহলেও তারা আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাঁচার জন্য এ সমস্তকে মুক্তিপণ হিসাবে দিয়ে তৈরি হয়ে যাবে। এদের হিসেব নেয়া হবে নিকৃষ্টভাবে এবং এদের আবাস হবে জাহান্নাম, বড়ই নিকৃষ্ট আবাস। (সূরা রাদ :১৮) মানুষ আল্লাহর প্রতিটি হুকুম মানবে কেবলমাত্র নিজের জন্যই। কেউ যদি তাঁকে না মানে তাতে আল্লাহর কিছু যায় আসে না। কারণ তিনি সকল প্রকার দুর্বলতা থেকে পবিত্র (সুবহান আল্লাহ)। আমরা যদি আল্লাহরকে সার্বভৌমত্বের মালিক, রাজাধিরাজ, আইনদাতা, রিজিকদাতা হিসাবে স্বীকৃতি নাও দেই, তাই বলে তাঁর সার্বভৌমত্বের মালিকানায় কোন ত্রুটি দেখা দেয় না বা কেউ তার রাজত্ব ছিনিয়ে নেয়ার ক্ষমতা রাখে না অথবা তাঁর আইন নষ্ট হয়ে যায় না। এমনকি তিনি তাঁর সাথে শুত্রু ভাবাপন্ন হয়ে সাথে সাথে তার রিজিকও বন্ধ করে দেন না। চরম বিরোধিতার মধ্যেও তিনি তাদেরকে আলো, বাতাস, অক্সিজেন, আগুন ও পানি সরবরাহ করে থাকেন। এই বিশাল সাম্রাজ্যের সকল মানুষই যদি তাঁর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে অবাধ্যতা প্রকাশ করে, তথাপি তাঁর সার্বভৌমত্বের সামান্যতম হেরফের হবে না।

লেখক : প্রাবন্ধিক

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির