post

বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি

০৮ জানুয়ারি ২০১৪

ইকবাল কবীর মোহন

Arothoদেশের রাজনীতি এখন খাদের কিনারায় এসে ঠেকেছে। হরতাল, অবরোধ ও দমন-পীড়নের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনে কয়েক মাস ধরে চলছে অবিরাম অস্থিরতা। ফলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও ব্যবসা-বাণিজ্যে চলছে চরম স্থবিরতা। চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এক অজানা বিপর্যয়ের গন্তব্যে ঠেলে দিয়েছে। ফলে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে অনিশ্চয়তা। দেশের জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিগত কয়েক মাস ধরে সরকার ও বিরোধী জোটের মধ্যে যে সঙ্ঘাত ও সহিংসতা চলছে তারই প্রেক্ষাপটে তৈরি হয়েছে ভয়ানক অর্থনৈতিক অস্থিরতা। অব্যাহত রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আমদানি-রফতানি, বিনিয়োগ, ইনস্যুরেন্স, সেবা খাত ও রাজস্ব আদায় সর্বত্র নি¤œমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক অচলাবস্থার শেষ কোথায় তার সদুত্তর কেউ দিতে পারছে না। এর আগেও প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক টানাপড়েন ও অস্থিরতা এ জাতি মোকাবেলা করেছে। তবে এসব রাজনৈতিক সঙ্কটের একটা সীমা-পরিসীমা ছিল। সঙ্কট বাড়ার পাশাপাশি এর সমাধানের জন্য চেষ্টাও তখন ছিল। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খুব দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান হওয়ায় দেশ বড় ধরনের বিপদ থেকে মুক্তিও পেয়েছিল। এর আগে জাতির সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক ক্ষতি হয় ২০০৬ সালে। বিরোধী জোটের সর্বোচ্চ ১৭৩ দিন হরতালের কারণে দেশ ও দেশের অর্থনীতি গভীর সঙ্কটের মধ্যে পড়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে চলা এসব হরতালের সময় দেশের আমদানি ও রফতানি বাণিজ্যের জলপথ চট্টগ্রাম বন্দর দু’মাস কার্যত অচল হয়ে পড়েছিল। তখন ব্যবসা-বাণিজ্যের যে ক্ষতি সাধিত হয় তা পুষিয়ে নিতে কয়েক বছর লেগেছিল। তবে এবারের রাজনৈতিক সঙ্কট আরো গভীর ও সুদূরপ্রসারী বলে মনে করছেন অনেকে। কেননা, আগেকার জাতীয় নির্বাচনের বছরগুলোতে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অচলাবস্থা অনেকটা শহরের মধ্যে সীমাবব্ধ থাকায় স্বল্প পূঁজির মানুষ ও গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা ততটা স্থবির হয়নি। এবারের রাজনৈতিক অচলাবস্থা শহরের গণ্ডি পেরিয়ে উপজেলা থেকে গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করেছে। ফলে সঙ্কটের গভীরতা প্রচণ্ড রূপ ধারণ করেছে। আর অর্থনীতির অবস্থা ভয়ানক পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। হরতাল অবরোধ ও সরকারি দমননীতির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে চলছে মন্দাভাব। এর ফলে ব্যাংকগুলোতে জমছে অলস টাকার পাহাড়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য মতে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অলস টাকার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮২ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকায়। এক বছর আগে এর পরিমাণ ছিল ৪০ হাজার কোটি টাকারও নিচে। রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও মন্দাভাবের কারণে ব্যবসায়ীরা ব্যাংকঋণ নেয়ার উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন। এই কারণেই অলস টাকার পরিমাণ বেড়ে চলছে। দুই. বাংলাদেশ ব্যাংকের এক হিসাব মতে, ২০১১-১২ সালে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণের প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১৬.৭৯ শতাংশ, গত অর্থবছরের জুন শেষে যার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮.৭৯ শতাংশ। অন্য দিকে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন ও দমনের ফলে বন্দরে বন্দরে আটকা পড়েছে আমদানি পণ্য ও কাঁচামাল। এতে প্রয়োজনীয় কাঁচামালের অভাবে ঘুরছে না কল-কারখানার চাকা। ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন ও সরবরাহ। কল-কারখানায় কাঁচামাল সরবরাহে বাধা এবং সার্বিক অবকাঠামোগত অব্যবস্থা ও জোগানের কারণে দেশের আমদানি বাণিজ্যও হ্রাস পেয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১০-১১ অর্থবছরে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি হয়েছে ২৩৩ কোটি ডলার, যা ২০১১-১২ অর্থবছরে কমে দাঁড়ায় ২০০ কোটি ডলার ও ২০১২-১৩ অর্থবছরে আরো কমে দাঁড়ায় ১৮৩ কোটি ডলারে। চলতি বছরের পাঁচ মাসে এটি নেমে এসেছে ১০০ কোটি ডলারের নিচে। আমাদের দেশে শিল্প কাঁচামালের একটি বড় উপাদান তুলা। ২০১০-১১ সালে তুলা আমদানি হয়েছিল ২.০৮ বিলিয়ন ডলার। এটি ২০১২-১৩ সালে নেমে দাঁড়িয়েছে ২.০০ বিলিয়ন ডলারে। বিভিন্ন খাতে আমদানি কমে যাবার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি ১৮ বিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে। এই অবস্থা অর্থনীতির জন্য মোটেও কাম্য নয়। একই কারণে রফতানি বাণিজ্যও সম্প্রতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। ব্যবসায়ীরা নিরাপদে রফতানি পণ্য জাহাজীকরণ করতে না পারায় চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছেন। ফলে রফতানি আদেশ একের পর এক বাতিল হয়ে যাচ্ছে। অন্য দিকে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতার কারণে ব্যবসায়ীরা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধে অক্ষম হয়ে পড়েছেন। ফলে ব্যবসায়ীরা ঋণখেলাপির তালিকায় শরিক হচ্ছেন। আর ব্যাংকগুলোতে বাড়ছে কু-ঋণের ভয়ানক চাপ। এতে ব্যাংকগুলোর মুনাফা তো দূরের কথা, অনেক ব্যাংক লোকসানের ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। রাজনৈতিক সঙ্ঘাত ও অচলাবস্থার কারণে অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার পাশাপাশি অনেকে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তকে এই নি¤œমুখিতার জন্য দায়ী বলে মনে করছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডিসেম্বর পর্যন্ত যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে, তাতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রবাহ কমানো হয়েছে। জুলাই-ডিসেম্বর ২০১৩ এবং জানুয়ারি-জুন ২০১৪ সময়ের জন্য বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় যথাক্রমে ১৫.৬ শতাংশ ও ১৬.৫ শতাংশ। এর বিপরীতে চলতি বছরের আগস্টে প্রবৃদ্ধির হার কমে দাঁড়ায় ১১.৩৩ শতাংশে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৯.৯২ শতাংশ। শিল্প ও কৃষি ঋণের প্রবৃদ্ধির হারেও প্রভাব ফেলেছে ঋণপ্রবাহের এই নি¤œগতি। প্রাপ্ত তথ্য মতে, শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ ২০১২-১৩ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে (মার্চ-জুন) ছিল ৯,৭২০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এই ঋণ বিতরণ কমে দাঁড়ায় ৮,৮৮০ কোটি টাকায়। কমেছে কৃষিঋণের প্রবৃদ্ধিও। ২০১২ সালের অক্টোবরে কৃষিঋণের প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১৪৩.২ শতাংশ, যা ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঋণাত্মক ৫.৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এবারের রাজনৈতিক অস্থিরতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও কৃষকেরা। শহর-বন্দর ছাড়িয়ে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত রাজনৈতিক অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ায় স্বল্পপুঁজির ব্যবসায়ীরা তাদের পুঁজি হারাতে বসেছেন। সরবরাহপথ বন্ধ থাকায় কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত ফসল নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। ফলে নষ্ট হচ্ছে তাদের ফসল। এতে কৃষকেরা হচ্ছেন নিঃস্ব। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে প্রচ- হুমকির মুখে পড়েছে আমাদের দেশের বড় রফতানি খাত তৈরী পোশাক শিল্প। এই শিল্পের ব্যবসায়ীদের মতে, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তারা কেবল পণ্য সরবরাহে চার হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন। রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে তৈরী পোশাক উৎপাদন ১০ শতাংশ কমে গেছে বলে তারা দাবি করেছেন। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও কার্যাদেশ বাতিলের ফাঁদে পড়ে বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্প তার গতি হারাতে পারে বলে অনেকেই ধারণা করছেন। এর ফলে দেশের অর্থনীতি ও কর্মসংস্থান পরিস্থিতি কতটা নাজুক অবস্থার মধ্যে পড়বে তা চিন্তা করতেও গা শিউরে ওঠে। অর্থনীতির হালহকিকত লক্ষ্য করতে গেলে আমরা দেশের গড়পরতা বার্ষিক (জিডিপি) জাতীয় প্রবৃদ্ধির দিকটির প্রতি দৃষ্টিপাত করতে পারি। গত দুই দশকে দেশের জিডিপির হার ৬ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যে বর্তমান ছিল। অথচ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এবারে জিডিপির হার ৭.২ শতাংশ নির্ধারণ করা হলেও তা ৬ শতাংশের কতটা নিচে নেমে যাবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকেরা অনেকেই মনে করছেন, রাজনৈতিক সঙ্কট যেভাবে দীর্ঘায়িত হচ্ছে তাতে আর্থিক বছরের শেষ দিকে জিডিপির হার পাঁচ শতাংশের কাছাকাছি এসে ঠেকতে পারে। বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কটের কারণে অভাবিতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের ব্যাংকিং খাত। ব্যাংকগুলোর মধ্যে জমা হচ্ছে অলস টাকার পাহাড়। ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ বা ঋণ গ্রহণের জন্য নানা কারণে আগ্রহী নয় বলে ব্যাংকের ঋণপ্রবাহ কমে যাচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং খাত একভাবে মুনাফা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তিন. অন্য দিকে রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য ব্যবসায়ীরা ব্যাংকঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হবার কারণে ব্যাংকগুলো আরেক দফা বিপদের মধ্যে পড়েছে। ফলে বেড়েছে শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ। আর এ কারণেও ব্যাংকগুলোর মুনাফা আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। এই অবস্থার মধ্যে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি ঋণ শ্রেণীকরণের ক্ষেত্রে নমনীয় নীতিমালা গ্রহণ করেছে। এর ফলে ব্যাংকিং খাতের সামর্থ্য সঙ্কটের মধ্যে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের নমনীয় ঋণ শ্রেণীকরণ ও পুনর্গঠন নীতিমালার প্রভাবে দেশের ব্যাংকিং খাতের বিষয়ে গভীর আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকারগণ। তারা বলছেন, এই শ্রেণীকরণ নীতির কারণে ব্যাংকগুলো শিগরগই তারল্য সঙ্কটের মধ্যে পড়বে। কারণ, ব্যাংকের প্রচুর পরিমাণ অলস টাকার যে তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে তা সঠিক নয় বলে তারা মন্তব্য করেছেন। তারা বলছেন, ব্যাংকগুলোর উল্লিখিত উদ্বৃত্ত অর্থ আসলে কাগুছে টাকা। এই অর্থের বেশির ভাগই সরকারের কোষাগারে রয়েছে। আর সরকার বিল ও বন্ড নামক কাগজ ধরিয়ে দিয়ে তার বিপরীতে ঋণ নিয়েছে। এই অর্থই বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে উদ্বৃত্ত তারল্য হিসাবে ধরা হয়। প্রকৃত অর্থে ব্যাংকগুলোর হাতে নগদ উদ্বৃত্ত তারল্যের পরিমাণ কম। আর শ্রেণীকরণের বর্তমান নীতির কারণে ডাউন পেমেন্টের যে ছাড় ব্যবসায়ীদের দেয়া হয়েছে, এতে নগদ আদায়ের পরিমাণ আরো কমে যাবে। এর ফলে দেখা দেবে প্রবল তারল্য সঙ্কট। বর্তমান নীতিমালার কারণে ব্যাংকগুলো ঋণখেলাপিদের ঋণ হিসাবের মেয়াদ অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। এতে এক দিকে নগদ আদায় কমে গিয়ে তারল্য সঙ্কট বাড়বে, অন্য দিকে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমে যাবার কারণে ব্যাংক প্রয়োজনীয় বা অতিরিক্ত প্রভিশনের হাত থেকে রেহাই পাবে। প্রভিশন কম হবার কারণে ব্যাংকের আয় খাত স্ফীত হবে, অর্থাৎ ব্যাংকগুলোর আয় বেড়ে যাবে। এখানে বড় সমস্যা হলো, অযাচিতভাবে ব্যাংকের আয় বেড়ে যাবার ফলে ব্যাংকগুলো ডিভিডেন্ড হিসেবে বাড়তি মুনাফা শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে। প্রকৃত মুনাফা অর্জন ব্যতিরেকে ব্যাংকগুলো থেকে বাড়তি অর্থ বেরিয়ে গেলে পরিণামে ব্যাংকগুলোর মধ্যে মূলধন ঘাটতি দেখা দেবে। এই বাস্তবতা বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য অশনিসঙ্কেত বলে অনেকেই মনে করছেন। আমদানি-রফতানির ঘাটতি, কৃষি ও শিল্প উৎপাদনে ধীরগতি, ব্যবসায়-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব অর্থনীতির নানা সূচকে ঋণাত্মক প্রভাব ফেলায় সরকারের শুল্ক ও ভ্যাট আদায়ের ক্ষেত্রেও দেখা দিয়েছে বিপর্যয়। আমদানি শুল্ক আদায়ের হার গত অর্থবছরে যেখানে ছিল ৭.৬৯ শতাংশ, চলতি অর্থবছরে একই সময়ে তা হয়েছে মাত্র ৪.৫২ শতাংশ। অন্য দিকে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আদায়ের বেলায়ও ধীরগতি লক্ষ্য করা গেছে। চলতি অর্থবছরের ভ্যাট আদায় ১৬.৩৩ শতাংশের বিপরীতে বিগত অর্থবছরে তা ছিল ১৯.১৩ শতাংশ। বর্তমান এই ধারা অব্যাহত থাকলে এনবিআরের প্রাক্কলন অনুযায়ী রাজস্ব আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮১৮ কোটি টাকা কম অর্জিত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর ফলে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ বেড়ে যাবে। ফলে থেমে যাবে উন্নয়ন প্রকল্প। তা ছাড়া কর্মসংস্থান ও আয়-উপার্জনেও পড়বে নেতিবাচক প্রভাব। ফলে সর্বক্ষেত্রে অর্থনীতির এই দুরবস্থা আগামী সরকারের জন্য হবে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করছেন, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ বিগত বছরগুলোতে উন্নয়নের এক সমন্বিত ধারায় এগিয়ে যাচ্ছিল। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক কলহ ও বিরোধ দেশটিকে ক্রমান্বয়ে অন্ধকারের গলিপথে ধাবিত করছে বলে স্পষ্টত লক্ষ করা যাচ্ছে। দেশের শান্তিকামী মানুষের প্রত্যাশা রাজনৈতিক দলগুলো মিলে চলমান রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবেন। তা না হলে উন্নয়নের গতিপথ হারাবে বাংলাদেশ। জাতি হিসেবে আন্তর্জাতিক দুনিয়ার সামনে আমাদের মর্যাদা আরো ভূলুণ্ঠিত হবে। এর ফলে আমরা যে দীর্ঘ ও গভীর সঙ্কটের মধ্যে পড়ব, তার অভিশাপ থেকে বেরিয়ে আসা হবে প্রায় অসম্ভব। লেখক : প্রাবন্ধিক ও শিশুসাহিত্যিক

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির