post

বাংলাদেশে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে ইসলামপন্থীদের অগ্রণী ভূমিকা

সরদার আবদুর রহমান

২৬ মে ২০২২

(জুন সংখ্যার পর)

স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন

জেনারেল এরশাদের ক্ষমতা গ্রহণের দু’বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই একটি কেয়ারটেকার সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রথম ফর্মুলা উপস্থাপন করে জামায়াতে ইসলামী। ১৯৮৩ সালের ২০ নভেম্বর ঢাকায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্বাস আলী খান এই ফর্মুলা প্রদান করেন। এরপর চলে লাগাতার আন্দোলন। আন্দোলনের প্রতিটি কর্মসূচিতে জামায়াত সর্বত্রই ছিল সক্রিয়। ১৯৮৬ সালের নির্বাচন বিএনপি বয়কট করলেও আওয়ামী লীগ ও জামায়াত একই সিদ্ধান্ত নিয়ে ঠিকই নির্বাচনে গেছে। দেশকে একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তুলে দেয়ার অংশ হিসেবেই জামায়াত ’৮৬ সালের ৭ মে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়। এতে জামায়াতের ১০ জন সদস্য বিজয়ী হন। আন্দোলনের অংশ হিসেবেই এই ১০ জন যথারীতি পদত্যাগও করেন। কিন্তু ১৯৮৮-এর ৩ মার্চ এরশাদ পুনরায় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দিলে জামায়াতসহ প্রধান বিরোধী দলগুলো তা বয়কট করে। ’৮০-এর দশকজুড়ে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতের ভূমিকার কথা বিরোধী বুদ্ধিজীবীরাও উল্লেখ করতে ভোলেননি। কয়েকটি মূল্যায়ন এখানে উপস্থাপন করা হলো। 

তৎকালীন বামপন্থী একতা পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমান (পরে প্রথম আলো সম্পাদক) ‘স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এবং রাজনৈতিক দল’ শীর্ষক এক প্রবন্ধ লেখেন। এতে তাঁর মন্তব্য হুবহু তাঁর ভাষায় উদ্ধৃত করা হলো : “১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে জনগণ ৮ দলীয় জোটের পক্ষে বিপুলভাবে ভোট দিয়েছিল। কিন্তু মিডিয়া ক্যুর মাধ্যমে জনগণের রায়কে বানচাল করে দেওয়া হয়। তা সত্ত্বেও সংসদে গণতান্ত্রিক ও বাম দলগুলোর সংসদে উপস্থিতি ছিল প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। তবে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে চরম প্রতিক্রিয়াশীল জামায়াতে ইসলামীও একটি শক্তি হিসেবে বের হয়ে আসে। তারা ১০টি আসনে বিজয়ী হয়। মুসলিম লীগও কয়েকটি আসন পায়। ১৯৮২ সাল থেকে ১৪ দল ও ৭ দলীয় জোটের যুগপৎ আন্দোলনের সময়ে জামায়াতে ইসলামী স্বতন্ত্রভাবে আন্দোলনে থেকে জনমনে তাদের অবস্থান কিছুটা সংহত করতে পারে। তবে আন্দোলনের মধ্যে দেখা গেছে যে জামায়াতে ইসলামী বিএনপি এবং ৭ দলীয় জোটের সাথে সবসময়ই ঘনিষ্ঠতা বজায় রেখে চলেছে। অন্যদিকে, ১৪ দলীয় জোটের আওয়ামী লীগ এবং অন্যান্য শক্তিও জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিরোধী কোনো ভূমিকা নেয়নি।” (২২, ২৩ পৃষ্ঠা); “স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে ৮,৭ ও ৫ দলীয় জোটের যুগপৎ সংগ্রামের পাশাপাশি থাকার কৌশল নিয়ে প্রতিক্রিয়াশীল জামায়াতে ইসলামী একটি বড় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে বের হয়ে এসেছে। তারা সাংগঠনিকভাবেও নিজেদের শক্তিকে সংহত করতে চেষ্টা করছে। এই শক্তি ভবিষ্যতে ক্ষমতা দখলের লক্ষ্য নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। বিগত আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জামায়াতে ইসলামী রাজনৈতিকভাবে আগের চেয়ে অধিক উদ্যোগী হয়ে উঠেছে।” (উৎস : নব্বই এর অভ্যুত্থান: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, আবুল হাসনাত সম্পাদিত, পৃ-২৮)।

লেখক শাহরিয়ার কবির তার স্বভাবসুলভ চরম বিদ্বেষের ফাঁকেও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সত্য উচ্চারণকে এড়িয়ে যেতে পারেননি। ‘২২ দলের আন্দোলন ও জামায়াতে ইসলামী’ শীর্ষক এক প্রবন্ধাংশে উল্লেখ আছে, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান ভূমিকা গণতন্ত্রে উত্তরণের পথে সহায়তা করছে।’ ৭ দলীয় জোটের শরিক গণতান্ত্রিক পার্টির নেতা সিরাজুল হোসেন খান বলেছেন, ৫ দফার আন্দোলন চলছে। ৭ দলীয় ঐক্যজোট ও ১৫ দল তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে এ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে। এর বাইরেও অনেক রাজনৈতিক দল ৫ দফা দাবি ও আন্দোলনকে সমর্থন দিচ্ছে। বিশেষ করে সামরিক শাসনের অবসান করে সার্বভৌম জাতীয় সংসদ এর নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের ইস্যুটি হচ্ছে ৫ দফার মূল দাবি। দাবির প্রশ্নে আজ একটা অপ্রতিরোধ্য ঐকমত্য (কনসেন্স) গড়ে উঠেছে। এ কনসেন্সাসকে জামায়াতে ইসলাম দৃঢ়ভাবে সমর্থন করছে এবং নিজ অবস্থান থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের এ আন্দোলন আমার মতে ৫ দফা আন্দোলনের সহায়ক।’ 

ইউপিপি নেতা কাজী জাফর আহমদ বলেছেন, ‘৭ দলীয় ঐক্যজোট ও ১৫ দল যুগপৎভাবে জাতীয় দাবি ৫ দফার ভিত্তিতে যে আন্দোলন গড়ে তুলেছে তাতে জামায়াতে ইসলামী সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।’ সৈয়দ আবুল মকসুদ লিখেছেন, “যা হোক শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট, বেগম খালেদা জিয়ার ৭ দলীয় জোট, আব্বাস আলী খানের নেতৃত্বাধীন জামায়াতে ইসলামীসহ দেশের অন্যান্য ছোট বড় জোট ও দল আট বছরের বেশি এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করেছে। এই সময় তাদের আহবানে সফল হরতাল হয়েছে অসংখ্য দিন। যদিও সকল দলের মধ্যে সর্বদা ঐক্য ছিল না।” (গণ আন্দোলন, ১৯৮২-৯০, পৃ-১৬)। সাবেক ডাকসু ভিপি ও আওয়ামী লীগের একদা কেন্দ্রীয় নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না লিখেছেন, “আমার সঙ্গে অনেকেই হয়তো একমত হবেন না, কিন্তু আমার মনে হয়েছে এ আন্দোলনে (এরশাদবিরোধী) বিএনপির বিজয় চমকপ্রদ বটে, কিন্তু দৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত নয়। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জয়লাভ করে ক্ষমতায় যেতে পারেনি সত্য, কিন্তু দলটির খুব একটা বড় কিছু হারায়নি। বামপন্থীরা আন্দোলনকে জোড়া দেওয়ার কাজে যথেষ্ট তৎপরতা দেখিয়েছেন ঠিকই কিন্তু জনগণের সামনে কোনো বিবেচ্য শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারেননি। এ আন্দোলনে দলগতভাবে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে জামায়াতে ইসলামী। ৯ বছরের আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামীর সবচেয়ে সুবিধাজনক পাথেয় ছিল এই যে ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বিতায়, ঐক্য-অনৈক্যের টানাপড়েনে তারা ভাগীদার ছিল না। তাছাড়াও দলটি কোনোদিনই ক্ষমতায় ছিল না। আন্দোলন গঠন করার প্রশ্নে তাদের এমন কোনো ভূমিকা না থাকলেও আন্দোলনের মধ্যে তারা তাদের উপস্থিতি বজায় রেখেছিল প্রায় সর্বদায়। কোনো জেহাদী মনোভাব তাদের ছিল না। অর্থাৎ বিষয়টি ততখানি নীতিগত ছিল না যতখানি ছিল কৌশলগত। সাংগঠনিক অবস্থানগত বিবেচনায় তাদের এ কৌশল ছিল যথাযথ এবং তারা তাতে ফল পেয়েছে। জামায়াতের আছে ধৈর্য যা ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বী অপরাপর দলগুলোর মধ্যে তুলনামূলক কম। ফলে তাদের বিকাশ হঠাৎ করে স্তব্ধ হয়ে যাবে না।” (সাম্প্রদায়িকতা ও জামায়াত, পৃ-২০)। ‘বাংলাদেশ সরকার ও রাজনীতি’ শীর্ষক গ্রন্থে গবেষক এফ. জামান উল্লেখ করেছেন, ‘জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় আসিলে ১৯৮৩ সাল হইতে ১৫ ও ৭ দলীয় জোটের ন্যায় জামায়াতে ইসলামীও এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। এহেন আন্দোলনের মাধ্যমে এরশাদের স্বৈরশাসনের পতন ঘটাইয়া গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে জামায়াতে ইসলামীর অবদান খাটো করিয়া দেখিবার কোনো অবকাশ নাই। ইহার ফলে দলটি বর্তমানে বাংলাদেশের জনগণের নিকট আগের তুলনায় অনেক বেশি আবেদন সৃষ্টি করিতে পারিয়াছে বলিয়া মনে হয়।’ (পৃষ্ঠা-৫৭০);

আওয়ামী লীগ সমর্থক গবেষক-লেখক ড. মোহাম্মদ হান্নান তাঁর ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস, ১৯৯০-১৯৯৯’ গ্রন্থে সে সময়ের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের যে চিত্র দিয়েছেন তার প্রাসঙ্গিক অংশ উল্লেখ করা যেতে পারে। ‘এরশাদবিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলন ১০ অক্টোবর (১৯৯০) একটি মোড় পরিবর্তনের সূচনা করে। এ দিন আটদল, সাতদল, পাঁচদল, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, জামায়াতে ইসলামী, ঐক্য প্রক্রিয়া, ছাত্রদল প্রমুখ রাজনৈতিক সংগঠন সচিবালয় ঘেরাও করার কর্মসূচি নেয়। সকাল থেকেই একদিকে পুলিশ-বিডিআর, অন্যদিকে রাজনৈতিক কর্মীরা মুখোমুখি সমবেত হতে থাকে। ১৯৮৭ সালের পর জেনারেল এরশাদকে হটানোর আন্দোলনে এই প্রথম আবার এতবেশি প্রাণচাঞ্চল্য ও উত্তেজনা লক্ষ করা যায়।’ (পৃষ্ঠা-২০); ড. হান্নান ৩১-১০-১৯৯০ তারিখের কথা তুলে ধরে বলেন, “বাবরী মসজিদ ইস্যুতে সর্বনাশা এই ঘটনায় কিন্তু বাংলাদেশের প্রধান প্রধান মৌলবাদী ও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো যোগ দিল না। তারা সরকারবিরোধী আন্দোলনে তিন জোটের সঙ্গে ছিল। জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিশসহ বিভিন্ন মসজিদের হক্কানী আলেমগণ সরকারের ষড়যন্ত্র উপলব্ধি করতে সক্ষম হন এবং শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষায় বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যোগ দেয়। অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল সংবাদপত্র ‘সংবাদ’-এর মতোই ভূমিকা পালন করে জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র ‘দৈনিক সংগ্রাম’।” (পৃষ্ঠা-২৭); তিনি আরো উল্লেখ করেন, ২০ নভেম্বর ঢাকায় বিভিন্ন জোট পৃথক পৃথক সমাবেশে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করে। জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করা হয় (পৃষ্ঠা-২৮)। 

এরশাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জামায়াতের অবস্থান এবং অন্যান্য দলের সঙ্গে সম্পর্কের একটি মূল্যায়ন করে বহুল প্রচারিত সাপ্তাহিক রোববার। রোববার লেখে : “বিরোধী দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে আর একটি বিষয় এই সময়ে আলোচিত হচ্ছে। আর তা হলো জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা। জামায়াতে ইসলামী ৮, ৭, ও ৫ দলের সঙ্গে যুগপৎ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। বিএনপি-আওয়ামী লীগসহ বামপন্থী দলগুলোর সঙ্গে ঐ সময়ে সে একটা সুসম্পর্ক বজায় রাখতে সক্ষম হয়। আন্দোলন চলাকালীন সময়ে সখ্যতার নিদর্শন হিসেবে জামায়াত প্রধান আব্বাস আলী খান শেখ হাসিনাকে কুরআন শরীফ ও জায়নামাজ উপহার দেন। এসবের ছবিও খবরের কাগজে প্রকাশিত হয়। লিয়াজোঁ কমিটির নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক ও যোগাযোগের বিষয়টিও কোনো গোপন ব্যাপার ছিল না। কিন্তু ’৮৬-র সংসদ থেকে আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্বে জামায়াত সদস্যদের পদত্যাগের পর জামায়াত-আ’লীগের সম্পর্কে ফাটল ধরে এবং বিশেষ করে শেখ হাসিনা জামায়াতের বিরুদ্ধে জেহাদে অবতীর্ণ হন।” (রোববার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ১৯৯০)। 

সাপ্তাহিক রোববারের আরো দু’টি রিপোর্ট প্রাসঙ্গিক হবার কারণে উদ্ধৃত করা হলো। বাবরী মসজিদ ভাঙার প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে রোববারের রিপোর্ট : ‘জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্বাস আলী খান গত ২ নভেম্বর (১৯৯০) বাদ জুময়া হাঙ্গামা উপদ্রুতদের অবস্থা পরিদর্শনে জয়কালী মন্দিরসহ পুরনো ঢাকায় যান। পরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, রাজনৈতিক স্বার্থে দেশকে নৈরাজ্য ও বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, গত কয়েক দিনের ঘটনাবলীর জন্য সরকারের দায়িত্বহীনতাই দায়ী। জামায়াত নেতৃবৃন্দ বলেন, জাতীয় মর্যাদা ক্ষুণœ করার জন্য দায়ী এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। শান্তি সম্প্রীতি রক্ষার আহ্বান জানিয়ে জামায়াত নেতা বলেন, ভারতে সংঘটিত কোনো ঘটনার জন্যই বাংলাদেশের কোনো হিন্দু ভাই দায়ী হতে পারে না। লুটপাটের হোতারা স্বার্থান্বেষীদের ক্রীড়ানক। একজন মানুষের জীবন অন্যের কাছে একটা পবিত্র আমানত।’ (৪ নভেম্বর, ১৯৯০); ‘৮ দল, ৭ দল, ৫ দল ও জামায়াতে ইসলামী ৩১ অক্টোবর শেখ হাসিনার সভানেতৃত্বে ধানমন্ডি বঙ্গবন্ধু ভবনে এক জরুরি সভায় দেশবাসীর পক্ষ থেকে ‘সর্বোচ্চ ভাষায়’ বাবরী মসজিদে ভারতের সাম্প্রদায়িক শক্তির অশুভ ও হিং¯্র তৎপরতার নিন্দা করে বলেছেন, কোনো সভ্য মানুষই মসজিদ-মন্দিরসহ পবিত্র স্থানে হামলা সমর্থন করতে পারে না।’ (৪ নভেম্বর, ১৯৯০);

১৯৯০ সালের ৫ ডিসেম্বর ১৫ দল,৭ দল, ৫ দল ও জামায়াতে ইসলামীর বৈঠকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান হিসেবে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে মনোনীত করা হয়। ভাইস প্রেসিডেন্ট মওদুদ আহমদ পদত্যাগ করলে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট পদে সমাসীন হন এবং জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করেন। ৬ ডিসেম্বর পতন ঘটে স্বৈরাচারী এরশাদের দীর্ঘ ৯ বছরের শাসনকালের। জামায়াতে ইসলামীর দাবিকৃত নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি আয়োজিত সংসদ নির্বাচনে জামায়াতসহ সবক’টি সক্রিয় রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। এদের মধ্যে ছিল বামপন্থী, ধর্মনিরপেক্ষবাদী, জাতীয়তাবাদী, ইসলামপন্থী, উদারপন্থী- বিভিন্ন চরিত্রের। ২৯৮টি আসনে (২ জন প্রার্থীর মৃত্যু হয়) ৭৬টি দলের ২,৭৪৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। জামায়াতে ইসলামী ২২০ জন প্রার্থী দিয়ে ১৮টিতে জয়লাভ করে। বিএনপি পায় ১৪০টি। ৩০টি সংরক্ষিত আসনের মধ্যে ২টি পায় জামায়াতে ইসলামী। ফলে আসন দাঁড়ায় ২০টি। বেশি আসন পেলেও বিএনপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল না। ফলে বিএনপি নেত্রী বেগম জিয়া অধ্যাপক গোলাম আযমের সাথে সাক্ষাৎ করে সরকার গঠনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা কামনা করলে জামায়াত তা অনুমোদন করে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ পায় ৮৮টি আসন এবং জাতীয় পার্টি পায় ৩৫টি। জামায়াতের ১৮টি, জাপার ৩৫টি এবং স্বতন্ত্রসহ অন্যান্য দলের আসন মিলে দেড় শতাধিক আসনের একটি সম্মিলিত সমঝোতার সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আওয়ামী লীগ বেজায় দৌড়ঝাঁপ করে। তারা জামায়াতের কাছে ধরনা দেয়। কিন্তু জামায়াত তাতে রাজি না হওয়ায় ভীষণ ক্ষিপ্ত হয় আ’লীগ। প্রতিশোধ নিতে গঠন করে আইনবহির্ভূত কুখ্যাত গণআদালত নামক প্রহসনমঞ্চ।


কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে

কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের কথাতো সব প্রজন্মের লোকের সামনেই আছে। ৯২-৯৬-এ দেশে কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শুধু আওয়ামী লীগ কেন অন্যান্য বামপন্থী দলকেও জামায়াতের সঙ্গে কি সংসদে আর কি রাজপথে গলায় গলায় মিলে এক হয়ে লড়াই করতে দেখা গেছে। সংসদ ভবনের বারান্দায় মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ইমামতিতে আব্দুস সামাদ আজাদসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের নামাজ পড়তে এবং আন্দোলনের সাফল্য কামনা করে নিজামীর মুনাজাতের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে আমিন আমিন করতে দেখা গেছে। আন্দোলন নিয়ে শেখ হাসিনা ও মাওলানা নিজামীসহ দু’দলের নেতারা কত সংখ্যক প্রকাশ্য ও গোপন বৈঠক করেছেন তারও ইতিহাস পুরনো হয়ে যায়নি। শেখ হাসিনার সভানেত্রীত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মাওলানা নিজামীর গায়ে গা লাগিয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে বসে থাকতে দেখা গেছে সংবাদপত্রে প্রকাশিত ছবিতে। তারও আগে ৮ অক্টোবরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরীর পক্ষে সমর্থন আদায়ের জন্য খোদ অধ্যাপক গোলাম আযমের আশীর্বাদ নিতে যাবার ঘটনাও কোনো গোপন ব্যাপার হয়ে থাকেনি। দেশে কেয়ারটেকার সরকার ফর্মুলা উপস্থাপনের দাবিদার জামায়াতের সঙ্গে এই ইস্যুতে বিএনপির বিরুদ্ধে প্রবল গণআন্দোলন গড়ে তুলতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ধর্মনিরপেক্ষবাদী ও বামপন্থী জোটের কোনোই সমস্যা দেখা যায়নি। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য শুনুন : চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে আ’লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন রাজাকার-স্বৈরাচার নয়, বিএনপিকে সরাতে হবে।’ ৩০ জুলাই ১৯৯৪ বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আওয়ামী লীগ নেতা আবদুস সামাদ আজাদ বলেন, আওয়ামী লীগ অতীতে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সহযোগিতা করেছেন, ভবিষ্যতেও করবেন।’ (সাপ্তাহিক রোববার, ৭ আগস্ট, ১৯৯৪);

১৯৯১ সালের ৬ আগস্ট বাংলাদেশের সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী বিল পাসের মাধ্যমে দেশে ১৬ বছর পর সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তিত হয়। এ সময় জামায়াতে ইসলামী কেয়ারটেকার সরকারের সাংবিধানিক আয়োজন দ্বাদশ সংশোধনীতে যুক্ত করার দাবি তোলে। (প্রবন্ধ : সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গ : তারেক ফজল); ১৯৯৪ সালের বাজেট অধিবেশনে তিন প্রধান বিরোধী দল জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, আ’লীগের পক্ষে এমএ রহিম ও জাপার পক্ষে মনিরুল হক চৌধুরী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখাসহ তিনটি বিল জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে জমা দেন। সরকারি দলের অনীহার কারণে বিল তিনটি সংসদের আলোচ্যসূচিতে আসতে পারেনি। কেয়ারটেকার সরকারপদ্ধতির উত্থাপক জামায়াতে ইসলামী নেতা মাওলানা নিজামী বলেন, ‘ষাটের দশকের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা থেকে আশির দশকের স্বৈরাচারী এরশাদের শাসনের বিরুদ্ধে জামায়াত গঠনমূলক, দায়িত্বশীল ও দিক-নির্দেশকের ভূমিকা পালন করেছে। জামায়াতের দিকনির্দেশনার ভিত্তিতে ৯০-এর রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও ’৯১ সালের কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছে। এখন কেয়ারটেকার সরকারের দাবি না মানা পর্যন্ত জামায়াত রাজপথ ছাড়বে না।’ (সাপ্তাহিক পূর্ণিমা, ১৯৯৪)। ১০ সেপ্টেম্বর ’৯৪ বিরোধী দলের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি আলোচনা করতে ৪ সেপ্টেম্বর বিএনপির পক্ষে ডা: বদরুদ্দোজা চৌধুরী জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বৈঠক করেন। (পূর্ণিমা,৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৪); উল্লেখ্য, সে সময় ক্ষমতাসীন বিএনপি কেয়ারটেকার সরকারের দাবি উপেক্ষা করে প্রধান বিরোধী দলসমূহের অংশগ্রহণ ছাড়াই একতরফা সংসদ নির্বাচন করে। ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সালে বিএনপির একতরফা এই নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সবচেয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিল জামায়াতে ইসলামী। সেই আন্দোলনে জামায়াতের ৪ দফা দাবি ছিল :

- ১৫ ফেব্রুয়ারির প্রহসনের নির্বাচন অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। স্থগিত আসনের উপ-নির্বাচনের প্রহসন বন্ধ করতে হবে।

- প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে।

- কেয়ারটেকার সরকার গঠন করতে হবে।

- মে, ১৯৯৬ এর মধ্যে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে।

১০ মার্চ ১৯৯৬ প্রেসিডেন্ট আব্দুর রহমান বিশ্বাসের সাথে বৈঠককালে শেখ হাসিনা তার দাবি উত্থাপন করেন। প্রেসিডেন্ট এই দিন জাতীয় পার্টির মিজানুর রহমান চৌধুরী, জামায়াতের মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, বামফ্রন্টের রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, গণফোরামের ড. কামাল হোসেন প্রমুখের সঙ্গেও বৈঠক করেন। সকল দলই ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন বাতিল, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি উত্থাপন করে। ২৬ মার্চ সকাল ৬টায় জাতীয় সংসদে কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থা বিল পাস হয়। ২৮ মার্চ প্রেসিডেন্ট আব্দুর রহমান বিশ্বাস তাতে সম্মতিসূচক স্বাক্ষর করেন। ৩০ মার্চ প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া পদত্যাগ করেন এবং সাবেক প্রধান বিচারপতি হাবিবুর রহমান প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ‘ঐ দিন রাতে সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে জামায়াতের মতিউর রহমান নিজামী, জাপার মিজানুর রহমান চৌধুরী ও আ’লীগের শেখ হাসিনা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা তাদের আন্দোলনের সাফল্যের প্রথম স্তর।’ (প্রবন্ধ : সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গ : তারেক ফজল)

নির্বাচনসমূহে জামায়াত

দেখা যাচ্ছে, জামায়াতসহ ইসলামপন্থী দলগুলো সেই ৬০-এর দশক থেকে ২০০৬ পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এসেছে। এর মধ্যে যেমন আছে পার্লামেন্ট নির্বাচন, আছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। এছাড়াও, দেশের অসংখ্য ট্রেড ইউনিয়ন, পেশাজীবী সংগঠন, ক্লাব-সমিতি এবং জাতীয় ও স্থানীয় সামাজিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানসমূহের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে আসছে। প্রায় প্রতিটি নির্বাচনেই বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী কোন না কোন সংখ্যায় নির্বাচিত হয়েছে। সেই ৬০-এর দশক থেকেই অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনসমূহে সরাসরি প্রার্থী না দিলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সমমনা প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছে। এভাবে, শুধু আন্দোলন-সংগ্রামের ঐতিহ্যেই নয়, গণতন্ত্রের মূল প্রক্রিয়া হিসেবে স্বীকৃত উন্মুক্ত নির্বাচন কর্মকাণ্ডেও ছিল সমান অংশীদার। সুস্থ গণতন্ত্র চর্চার প্রাসাদসৌধ জাতীয় সংসদে তারা সর্বদা বিচরণশীল থেকেছে। দেশ-জাতি-স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব-গণতন্ত্র-উন্নয়ন তথা দেশের জন্য কল্যাণকর যাবতীয় বিষয়ে ইতিবাচক ও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করে এসেছে- এ কথা বিদ্বিষ্ট ও প্রতিহিংসাপরায়ণরা ছাড়া আর কে অস্বীকার করতে পারে?

স্বাধীনতার পর ১৯৭৯ সাল, ১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতিটিতে জামায়াত অংশ নিয়েছে। ১৯৭৯ সালের সংসদে আইডিএল-এর ব্যানারে জামায়াতের ৬ জন সদস্য অংশ নেন। সরাসরি জামায়াতের নামে নির্বাচিত ১০ জন সদস্যের বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে প্রথম অভিষেক ঘটে ১৯৮৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। ২০০১ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে জামায়াতের ২০ জন সদস্য সংসদে আসীন হন এবং ২ জন মন্ত্রী পদ লাভ করেন। ২০০৮-এর নির্বাচনেও জামায়াত ছিল অন্যতম অংশীদার। এতে দু’জন এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালের ১৪ মার্চ থেকে ১৮ মার্চ পর্যন্ত দেশের ১৯০টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হয়। এতে জাপা ৬১টি, আ’লীগ ৫৩টি এবং জামায়াত ১১টিতে বিজয়ী হয়। বর্তমানেও দেশের বেশ কিছু সংখ্যক উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদে জামায়াতের নির্বাচিত চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মেয়র ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরগণ সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। এভাবে প্রতিটি স্থানীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে জামায়াত সামাজিক পর্যায়ের গণতন্ত্রায়নেও শরিক হয়ে আসছে।

ইতিহাসের উপরোক্ত তথ্য-বিবরণী একথা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে, জামায়াত বরাবরই একটি গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বাংলাদেশের ভূমিতে সুপ্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। অন্যদিকে, শ্রেণিশত্রু খতম করো-শ্রমিক রাজ কায়েম করো, বন্দুকের নলই সকল ক্ষমতার উৎস, বাংলা হবে ভিয়েতনাম কিংবা আফগান স্টাইলে বিপ্লব করা হবে- এসব স্লোগান অথবা সশস্ত্র গোপন সংঘাত, চরমপন্থী রাজনীতি কিংবা গলাকাটা নৃশংসতার অভিজ্ঞতার সঙ্গেও পরিচিত নয় ইসলামপন্থী রাজনীতি। ‘মুক্তিযুদ্ধ হলো দুই কুকুরের লড়াই’, ‘সংসদ হলো শুয়োরের খোঁয়াড়’, ‘ভোটের বাক্সে লাথি মারো অস্ত্র হাতে তুলে ধরো’, ‘হারামজাদা জনগণ থাকলো তোদের নির্বাচন আমরা চললাম সুন্দরবন’- এ জাতীয় স্লোগানও কখনো উচ্চারণ করেনি ইসলামপন্থীরা- ইতিহাস তার সাক্ষী। 

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গ্রন্থকার

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির