post

বাজেটের লাগামহীন ঘোড়া এবং ঈদ উৎসব

০৪ জুলাই ২০১৫
২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে সর্বকালের বৃহত্তম বিলাসী বাজেট পাস করেছে সরকার। বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ২,৯৫,১০০ কোটি টাকা। বাজেটে রফতানি খাত ও শিক্ষা খাতে কর বৃদ্ধি করে এসব খাতকে পঙ্গু করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। এ বিশাল বাজেটের আয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ২৪৩ কোটি টাকা। সুতরাং ঘাটতি বাজেট দাঁড়ায় ৮৬ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা। সরকারের মন্ত্রী ও আমলাদের ক্রমবর্ধমান দুর্নীতির কারণে দাতারা আসছে না। ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও বিনিয়োগের ব্যাপারে বাজেটে সুস্পষ্ট কোনো লক্ষ্যমাত্রা নেই। বাজেটে সাধারণ মানুষের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে অতিরিক্ত করের বোঝা। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজে ৭.৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়- মেডিক্যাল কলেজগুলোতে সীমিত আসনসংখ্যার কারণে বর্তমানে কেবল উচ্চবিত্তের সন্তানরাই নয়, মধ্যবিত্ত সাধারণ ঘরের ছেলেমেয়েরাও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়-মেডিক্যাল কলেজে পড়াশোনা করছে। বাজেটে এদের ওপর ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত মধ্যবিত্ত-সাধারণ ঘরের ছেলেমেয়েদের এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষালাভের পথে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে। এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর করারোপ করা হলেও তা আদায় করা হবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেই। চলতি বাজেটে কৃষিতে ভর্তুকির পরিমাণ বাড়ানো হয়নি। দেশের জনগোষ্ঠীর পঞ্চাশ ভাগ এখনও কৃষিনির্ভর অথচ সাম্প্রতিক সময়ে কৃষিতে ভর্তুকি কমছে যার সুদূরপ্রসারী প্রতিক্রিয়ায় খাদ্যনিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হতে পারে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বাজেটে কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে জনগণের ভাগ্যের চাকা কতটুকু পরিবর্তন হবে ঘোষিত বাজেটে এর কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই। অর্থমন্ত্রীর ঘোষণায় উঠে এসেছে- ‘বাজেট বাস্তবায়ন করতে হলে দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরির কোনো বিকল্প নেই। গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি হলে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের পথ সম্প্রসারিত হবে।’ সংসদে কার্যকর কোনো বিরোধী দল না থাকায় বাজেট প্রস্তাবের বিরুদ্ধে কেউ সোচ্চার হননি। কথা বলেননি। মূলত সরকারের নির্যাতন ও চরম দুঃশাসনের কারণে মানুষ নিষ্পেষিত হয়ে পড়েছে। এই বাজেটও সেই দুঃশাসনেরই আরেক নজির। এ থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসা ব্যতিরেকে মানুষের ভাগ্যের চাকা সচল হবে না। এ জন্য শিগগির নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। এসেছে ঈদ। ঈদুল ফিতর। মুসলমানদের জীবনে সবচেয়ে আনন্দের উৎসব। বাঙালি মুসলমানও এ আনন্দের বাইরে নয়। জাতীয় কবির ভাষায়- ‘‘জীবনে যাদের হররোজ রোজা ক্ষুধায় আসেনা নিদ/ মুমূর্ষু সেই কৃষকের ঘরে এসেছে কি আজ ঈদ? একটি বিন্দু দুধ নাহি পেয়ে যে খোকা মরিল তার/ উঠেছে ঈদের চাঁদ হয়ে কি সে শিশু-পাঁজরের হাড়?’’ (কৃষকের ঈদ) লাগামহীন সেই বাজেট কৃষক, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য এ বাজেট কতটুকু সুফল বয়ে আনবে সেটাই আজ প্রশ্ন। অতিরিক্ত করের বোঝা আর শিক্ষা খাতে বাড়তি খরচের আশঙ্কায় ঈদের আনন্দ ছাত্রছাত্রী আর অভিভাবকদের মন থেকে উবে গেছে। করিডোর ও বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ভারত বাংলাদেশের কাছে যা চায় সহজেই পায়। কিন্তু বাংলাদেশ ভারতের কাছে যা চায় তা কি পায়? ভারত তাই করিডোর পেল, কিন্তু বাংলাদেশ কী পেলো। তিস্তা নদীর ন্যায্য হিস্যা দাবি করে আসছে। জুটেনি পদ্মার পানিও। পানির অভাবে বাংলাদেশ আজ মরুভূমি হতে চলেছে। অথচ কলকাতার হুগলি নদীতে ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে পদ্মার পানি তুলে নেয়াতে বার মাস পাড় উপচানো জোয়ার। পদ্মায় নৌকা চলে না, কিন্তু হুগলী নদীতে সমুদ্রগামী জাহাজ চলে। বাংলাদেশ থেকে কিছু সহজে আদায় করে নেয়ার সবচেয়ে মোক্ষম সময়টিই বেছে নিয়েছে ভারত। এ সরকার জনগণের ভোট নিয়ে ক্ষমতায় আসেনি। শতকরা ৫ ভাগ মানুষ ভোটকেন্দ্রে যায়নি। ফলে ক্ষমতায় থাকার জন্য বর্তমান সরকার বিদেশীদের ওপর প্রচন্ড নির্ভরশীল। এ সুযোগটিই কাজে লাগিয়েছে ভারত। তাই বাংলাদেশের বুক চিরে করিডোর নিতে ভারতীয় মন্ত্রীদের কোন দেনদরবার করতে হয়নি। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারত করিডোর নিলো যেমন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রয়োজনে, তেমনি সামরিক প্রয়োজনেও। ২৩ বছরের পাকিস্তান আমলে যে দাবিগুলো ভারতীয় নেতারা মুখে আনতে সাহস পাননি সেগুলো মুজিব আমলে আদায় করে ছেড়েছে। পাকিস্তান আমলে তারা বেরুবাড়ীর দাবি করেনি, কিন্তু একাত্তরে শুধু দাবিই করেনি, ছিনিয়েও নিয়েছে। প্রতিদানে কথা ছিল তিনবিঘা করিডোর বাংলাদেশকে দেবে। কিন্তু সেটি দিতে ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে টালবাহানা করেছে। এখন বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে করিডোর আদায় করে নিলো। ষাটের দশকে পাকিস্তান সরকার তার পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানের সাথে যোগাযোগের স্বার্থে করিডোর চেয়েছিল। সেটিকে তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ‘একটি অদ্ভুত দেশের অদ্ভুত আবদার’ বলে মশকারা করেছিলেন। প্রতিবেশী নেপাল ও ভুটানের সাথে বাণিজ্য চলাচল সহজতর করার জন্য ১৭ কিলোমিটারের ট্রানজিট চেয়েছিল বাংলাদেশ। নেপাল চেয়েছিল মংলা বন্দর ব্যবহারের লক্ষ্যে ভারতের ওপর দিয়ে মালবাহী ট্রাক চলাচলের ট্রানজিট। ভারত সে দাবি মানেনি। অথচ সে ভারতই নিলো বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রায় ছয় শত মাইলের করিডোর। বাংলাদেশের জন্য ১৭ কিলোমিটারের ট্রানজিট যদি ভারতের জন্য নিরাপত্তাসঙ্কট সৃষ্টি করে তবে সে যুক্তি তো বাংলাদেশের জন্যও খাটে। পারস্পরিক সহযোগিতা বলতে ভারত যেটি বুঝে সেটি হলো যে কোনো প্রকারে নিজের সুবিধা আদায়। প্রতিবেশীর সুবিধাদান নয়।

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির