post

ভূতগ্রস্ত সম্প্রচার নীতিমালা

১৫ আগস্ট ২০১৪

ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী

Mediaপৃথিবীর যেসব দেশে গণতন্ত্র আছে, ব্যক্তিস্বাধীনতা আছে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আছে, সেসব দেশ কেবলই সামনের দিকে এগিয়ে গেছে এবং এগিয়ে যাচ্ছে। আর পৃথিবীর যেখানে ফ্যাসিবাদ, যেখানে স্বৈরশাসন, যেখানে গণতন্ত্র নেই, মানুষের মৌলিক অধিকার নেই, ব্যক্তিস্বাধীনতা অপহৃত, সেসব দেশ কেবলই পিছিয়ে পড়েছে। ভূতের পায়ের মতো এরা কেবলই পেছনে হেঁটেছে। হেঁটে হেঁটে এক একটি আলোকিত সমাজকে অনন্ত অন্ধকারের দিকে নিয়ে গেছে। বাংলাদেশে বর্তমান সরকার জনপ্রতিনিধিত্বহীন অগণতান্ত্রিক, ফ্যাসিবাদী, ব্যক্তিস্বাধীনতা হরণকারী ও সর্বশেষ মিডিয়ার স্বাধীনতা গ্রাসকারী। প্রয়োজনের নিরিখে দেখলে একটি ফ্যাসিবাদী সরকারের জন্য মিডিয়ার স্বাধীনতা হরণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল। কারণ, এ ধরনের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সরকারের নিপীড়নে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো কেবলই দৌড়ের ওপর থাকে। ফলে তাদের পক্ষে সুসংহত আন্দোলন করা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না। উৎপীড়ক সরকার পীড়নের মাত্রা বাড়াতে থাকে। এখন বাংলাদেশে কার্যত বিরোধী দল বলে কিছুই নেই। সংসদের ভেতরে যারা বিরোধী দলের দাবিদার, তারা আসলে সরকারেরই অংশ। এক দিকে মন্ত্রী, উপদেষ্টা, বিশেষ দূত, অপর দিকে বিরোধী দলের হাঁক। এমন হাস্যকর কৌতুকপ্রদ ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে খুব কমই ঘটেছে। অনির্বাচিত সংসদে এরশাদের জাতীয় পার্টি বিরোধী দলের দাবিদার। সেটি প্রমাণ করার জন্য এরশাদ যাই বলেন, তাতেই সমাজের ভেতরে হাসির রোল ওঠে। আবার এই জাতীয় পার্টি নিয়ন্ত্রণক কে? এরশাদ না রওশন, সেটিও নিশ্চিত নয়। আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রীদের কেউ কেউ মাঝে মধ্যে বলেন, সরকারের মন্ত্রী থেকে বিরোধী দল হওয়া যায় না। এরশাদকে বিরোধী দল হতে হলে, মন্ত্রিসভায় তাদের থাকা উচিত নয়। কেউ কেউ টীকা-টিপ্পনিও কাটেন। বিশ্ববেহায়া এরশাদ এগুলো গা করেন না। বিরোধী দল সাজার জন্য মাঝে মাঝে কুঁই কুঁই করেন। এর বাইরে বিরোধী দল আছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট, বাম মোর্চা প্রভৃতি দল। সরকারের হিংস্রতায় এরা কার্যত রাজপথে দাঁড়াতেই পারছে না। এসব দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারাসহ হাজার হাজার নেতাকর্মী কারাগারে অন্তরীণ। প্রতিদিন আরো শত শত গ্রেফতার করা হচ্ছে। এরাও সত্য প্রকাশে ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দৃঢ়পায়ে রাজপথে দাঁড়াতেই পারছেন না। এই পরাভূক কখন প্রবল স্রোতের মতো শক্তিশালী হয়ে উঠবে, কখন জলোচ্ছ্বাসের ঢেউয়ের মতো এই ফ্যাসিবাদকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে, সেটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। কারণ জনজোয়ার প্রতিদিন সৃষ্টি হয় না। যখন হয়, তখন ফ্যাসিবাদ আর স্বৈরশাসনের আবর্জনা প্রবল তোড়ে মূলোৎপাটন করে ফেলে। বাংলাদেশের এরকম দুঃসময়ে সত্য প্রকাশের ব্রত নিয়ে মিডিয়া সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। সরকারের অন্যায়, উৎপীড়ন, অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করছিল। ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় এর ভিডিও ফুটেজ প্রকাশিত হচ্ছিল। সংবাদপত্রগুলোতেও ছবি ও খবর প্রকাশিত হয়। যে ছবি কথা বলে। যে ছবি জানান দেয়, সত্য কোথায় নিহিত আছে। কিন্তু পৃথিবীর কোনো ফ্যাসিবাদী শক্তি আজ পর্যন্ত মিডিয়ার এই সত্য প্রকাশ বরদাশত করতে চায়নি। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। এ কথা সত্য, এই ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারই অধিকসংখ্যক ইলেকট্রনিক মিডিয়ার অনুমোদন দিয়েছে। আর তার সবই দিয়েছে নিজেদের একান্ত অনুগত, অনুরক্তদের। এর কারণ ছিল, সরকার যত অন্যায়, অত্যাচার, অবিচারই করুক না কেন, এসব ইলেকট্রনিক মিডিয়া সরকারের সেই জুলুম সমর্থন করে যাবে; কিন্তু এত সংখ্যক বেসকারি বেতার-টিভি লাইসেন্স পাওয়ায় একটা প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়েছে। নিজ নিজ অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই তাদের কিছু কিছু সংবাদ প্রচার করতে হচ্ছে। কিছু কিছু ভিডিও ফুটেজ দেখাতে হচ্ছে। সারা দিন বিএনপিকে গালি দিয়ে, ‘যুদ্ধাপরাধ, যুদ্ধাপরাধ’ বলে চিৎকার করলে কিংবা চ্যানেলে দিনভর নৃত্যগীত প্রচার করলে সাধারণ দর্শকেরা ভুলেও এসব চ্যানেল টিউন করবে না। ফলে টিভির ব্যবসা লাটে উঠবে। যে দু’টি মাত্র টিভি চ্যানেল সরকারি লোকদের নিয়ন্ত্রণে ছিল না, ঠুনকো অজুহাতে সরকার গত বছর সে দু’টিকে বন্ধ করে দিয়েছে। চ্যানেল দু’টি হলো দিগন্ত টেলিভিশন ও ইসলামিক টেলিভিশন। এখন তো ময়দান সুমসাম। কিলবিলে সরকারি লোক। সবকিছু সরকারি স্তাবকদের হাতে। ফ্যাসিবাদী সরকারের ক্ষেত্রে যা হয়, এখন তাই হচ্ছে। আপন লোকদেরও বিশ্বাস করা যাচ্ছে না। তারা ভিডিও ফুটেজ দেখায়, সাত খুনের ঘটনা দেখায়, র‌্যাবের অস্ত্র উদ্ধার নাটক দেখায়, পুলিশের বর্বরতার ফুটেজ দেখায়। টকশোতে এমন লোকদের ডেকে আনে যারা সরকারের স্তাবকতার বদলে বিভিন্ন পদক্ষেপের সমালোচনা করে। এও কি সহ্য হয়? ফলে সরকারের জন্য সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি হয়ে দেখা দিলো। সত্য কিছুতেই প্রকাশ করা যাবে না। এই সরকারের শিক্ষা-দীক্ষা ঘাটতি, ইতিহাস সচেতনতার অভাব আকাশচুম্বী। সরকারে কোথায়ও কোনো লেখাপড়া জানা লোক আছে কি না, এটা নিয়ে সংশয়ের উদ্রেক হয়। তারা এই সত্য উপলব্ধি করতে চায় না যে, মিডিয়া এবং সরকারের মধ্যে যদি সঙ্ঘাত বাধে, তাহলে আধুনিক বিশ্বে সরকার আশু বিজয় লাভ করে। তবে শেষ পর্যন্ত মিডিয়াই বিজয় লাভ করে; কিন্তু এরই মধ্যে যে সময় নষ্ট হয়ে যায়, তাতে জাতি বহুলাংশে পিছিয়ে পড়ে। সরকারের আশু বিজয় ঘটে এ কারণে যে, তাদের কাছে আছে রাষ্ট্রযন্ত্রের সব শক্তি। তারা ঘুষ দিতে পারে। তারা ভয় দেখাতে পারে। তারা মানুষকে আটক করে নির্যাতন করতে পারে; কিন্তু শেষ পর্যন্ত মিডিয়ার জয় কেন হয়, তার কারণ একসময় জনগণ মিডিয়ার পেছনে এসে সমবেত হয়। এই অনির্বাচিত স্বৈরাচারী সরকার সে সত্য উপলব্ধি করার ক্ষমতা রাখে না। এরা আরো জানে না যে, মিডিয়া বা বাক-ব্যক্তির স্বাধীনতা কিভাবে একটি দেশের দ্রুত সমৃদ্ধি ঘটাতে পারে। আর যদি এই স্বাধীনতা হরণ করে নেয়া হয়, তাহলে রাষ্ট্র সব দিক থেকেই পিছিয়ে পড়ে। আমরা দেখছি, আফ্রিকার যেসব দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, মিডিয়ার স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়েছে, সেসব দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়েছে। এমনকি চীনে মিডিয়ার স্বাধীনতা অনেকখানি নিশ্চিত করা হয়েছে বলেই তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা, প্রবৃদ্ধির হার সারা বিশ্বে সর্বোচ্চ। আগে যা কল্পনাও করা যেত না, এখন তা বাস্তব সত্য। চীনের মিডিয়া সরকার নিয়ন্ত্রিত; কিন্তু দুর্নীতিসংক্রান্ত বিষয়ে তারা কমিউনিস্ট পার্টির বড় বড় চাঁইদের বিরুদ্ধে নির্বিঘেœ রিপোর্ট তুলে ধরতে পারছে। এসব চাঁইদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে। সোভিয়েত স্টাইলের নীতিতে মিডিয়ার স্বাধীনতা ছিল না বলেই সোভিয়েত ইউনিয়ন ব্যর্থ হয়েছে। এরকম একটি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে জারি করা হয়েছে সম্প্রচার নীতিমালা। অত্যন্ত দ্রুততার সাথে মন্ত্রিপরিষদে খসড়া নীতিমালা অনুমোদন করে প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছে। সম্প্রচার নীতিমালা নিয়ে কেন এই তাড়াহুড়ো : এই নীতিমালা জারির আগে বাংলাদেশে অনেক ঘটনাই ঘটে গেছে। খুব সাম্প্রতিক ঘটনা হলো, মাওয়ায় লঞ্চডুবিতে শতাধিক মানুষের প্রাণহানি। খাদ্যে বিষাক্ত কার্বাইড বা ফরমালিন দেয়া। ওষুধ কোম্পানির অতিরিক্ত মুনাফার লোভে (বিষাক্ত প্যারাসিটামল) ১০ বছরে প্রায় দুই হাজার শিশুর মৃত্যু। সড়ক দুর্ঘটনায় বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা। সব নদীর পানি দূষণে বিষাক্ত হওয়া, অব্যাহত নদী দখল চলা, ট্যানারিসহ শিল্পবর্জ্য নদীতে ফেলা, সমুদ্র বিজয় প্রতারণাÑ সবকিছু সমানতালে চলছে। সরকার নিশ্চুপ। এসব অপকর্মের পেছনে সরকারি লোকেরাই জড়িত; কিন্তু সরকার চায় না, এসব খবর মিডিয়ায় প্রকাশিত হোক, চায় না যে, সরকারি লোকদের এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রকাশিত হয়ে পড়–ক। কখনো কখনো লোক দেখানোর জন্য কিছু কিছু ব্যবস্থা নেয়া হয়; কিন্তু সাধারণ মানুষও বোঝে এর সবই আই-ওয়াশ। ফলে এসব খবর যেন একেবারেই প্রকাশিত হতে না পারে তার জন্যই সরকার এ ব্যবস্থা নিয়েছে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস এই যে, সরকারের লোকেরা ‘খারাপ’ খবর একদম শুনতে চায় না। আর তারা নানাভাবে সরকারকে প্রতারণা করে। এই প্রতারণার মাধ্যমে সরকারের ধ্বংসের পথ প্রশস্ত হয়। সে কারণেই দরকার সম্প্রচার নীতিমালা বা মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ আইন। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘিœত করতে পারে এমন সামরিক, বেসামরিক ও সরকারি তথ্য প্রচার করা যাবে না : সম্প্রচার নীতিমালার এটি একটি ধারা। একজন খ্যাতিমান সম্পাদক লিখেছেন, সরকারি তথ্য অর্থই হলো, এটি প্রকাশিত এবং সবার জানা হয়ে গেছে। তা হলে কেন ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় তা প্রচার করা যাবে না? আর যা কিছু সরকারি তথ্য তা কিভাবে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে? এ ছাড়া সেনাবাহিনী সম্পর্কে মিডিয়া সবসময় বিশেষ নজর দিয়ে থাকে এবং সামরিক নিরাপত্তা বিষয়ে তারা খুবই সচেতন। তারপরেও সরকারকে এ কথা কেন বলতে হলো? সামরিক বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং অপরাধের জন্য শাস্তি দেয়ার ক্ষমতার অধিকারী ব্যক্তিদের বিষয়ে কোনো কিছু প্রচার করা যাবে না : এও এক অদ্ভুত আবদার। এই আবদার যদি মেনে নিতে হয়, তাহলে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা Ñ এ বিষয়ে কোনো কিছু ছাপা যাবে না। কারণ এর সাথে এনএসআই, ডিজিএফআই, সিআইডি, আইজিপি, অনেকেই জড়িত আছেন বলে সরকারের দাবি। একই সাথে মিডিয়া পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর খবর প্রকাশ করতে পারবে না। মিলিটারি, র‌্যাব, ডিজিএফআই, গোয়েন্দা সংস্থা, তারা হত্যা করুক, গুম করুক, খুন করুক, সে বিষয়ে কেউ কিছু বলতে পারবে না। এই আইন যদি আগে চালু থাকত, তাহলে নারায়ণগঞ্জের সাত খুন হত্যা মামলার খবর মিডিয়া প্রকাশ করতে পারত না। কারণ এই হত্যাকাণ্ডের সাথে র‌্যাবের কর্মকর্তারা জড়িত ছিলেন। একইভাবে মিরপুর থানায় ঝুট ব্যবসায়ী সুজনকে যে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে, সে কথাও প্রকাশ করা যেত না। এই নীতিমালা অনুমোদনের পর আর প্রকাশ করা যাবেও না। এখন থেকে আর প্রকাশ করা যাবে না ক্রসফায়ার এবং পুলিশি নির্যাতনের খবর। স্কুলছাত্র লিমনকে যে র‌্যাব অকারণে গুলি করে পঙ্গু করে দিলো, সে ধরনের খবরও প্রকাশ এখন থেকে নিষিদ্ধ। সেনাবিদ্রোহ, গোলযোগ ও সঙ্ঘাতের খবর প্রকাশ করা যাবে না : এও এক আজব নীতিমালা। ২০০৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহ হয়েছিল। তাতে ৫৭ জন চৌকস সামরিক অফিসারকে খুন করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে মিডিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এখন থেকে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে আর তা প্রচার করা যাবে না। যেন কিছুই ঘটেনি; কিন্তু গোলযোগ বা সঙ্ঘাত বলতে আমরা কী বুঝব? নীতি অনুযায়ী গোলযোগ ও সঙ্ঘাতের খবর আমরা প্রচার করতে পারব না। তাহলে কী প্রচার করব? যখন সরকারি নাশকতাকারীরা রেললাইন উপড়ে ফেলবে, ফিসপ্লেট তুলে ফেলবে, তখন আমরা আমাদের সম্প্রচার মাধ্যমগুলোতে কেবলই নাচ-গানের অনুষ্ঠান চালাতে থাকব। সেই সাথে ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ গানটি গাইতে হবে কি না সে ব্যাপারে অবশ্য সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। আমাদের কাছে এই নীতির অর্থ দাঁড়ায় এই যে, পুলিশ বিরোধী মতাবলম্বীদের যেভাবেই দমন, নির্মূল বা নিশ্চিহ্ন করুক না কেন, সেটি মিডিয়া প্রচার করতে পারবে না। তোবা গার্মেন্টে পুলিশ দরিদ্র, নিরীহ, সাধারণ গার্মেন্ট কর্মীদের ওপর যে হামলা চালাল, সে ধরনের ঘটনাও এখন থেকে আর প্রকাশ করা যাবে না। বিদেশী রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্বমূলক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন কিছু প্রচার করা যাবে না : দারুণ। ভারত যে তিস্তায় পানি দেবে না, বিনা শুল্কে নৌ ও সড়কপথ ব্যবহার করে করিডোর নেবে, প্রতিদিন সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যা করবে, এ বিষয়ে কোনো সংবাদ প্রকাশ করা যাবে না। একইভাবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যেখানে বাংলাদেশী শ্রমিকেরা কর্মরত, সেখানে তারা নির্যাতনের শিকার হলেও সে কথা প্রকাশ করা যাবে না। কারণ তাতে ওইসব দেশের সাথে আমাদের বন্ধুত্বমূলক সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবে। তাহলে দাঁড়ালাম কোথায়? সমাজ, রাষ্ট্র, জনগণ, অত্যাচার, উৎপীড়ন, নিপীড়ন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু, বিডিআর বিদ্রোহের মতো ঘটনা, র‌্যাব-পুলিশ-বিজিবির চাঁদাবাজি, আটক বাণিজ্য অবাধে চলবে। নাগরিক টুঁ শব্দও করতে পারবে না। এটি একটি দেশের আইন হতে পারে? পারে কি না পারে সে প্রশ্ন ভিন্ন। বর্তমান গণপ্রতিনিধিত্বহীন সরকার সেটি চালু করতে চাইছে; কিন্তু এরা বুঝতেই চাইছে না যে, ‘আপনি রচা কারাগারে তারা আপনি মরিবে ভুগে।’

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির