মধ্যপ্রাচ্য পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। এই পরিবর্তনের মাধ্যমে একটি নতুন শক্তির অভ্যুদয় এবং একটি নতুন যুগের সূচনা হতে যাচ্ছে। এই পরিবর্তন একতার, আশার এবং সম্ভাবনার। এই পরিবর্তন শান্তি, সমৃদ্ধি এবং প্রগতির। এই পরিবর্তনের অভিযাত্রা বিশ্বকে শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেবে আরো বহুদূর। পুরো বিশ্বের শান্তি এবং স্থিতিশীলতার স্বার্থেই মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর মাঝে একতা এবং সম্প্রীতি অপরিহার্য। বৃহৎ শক্তিসমূহ বিভক্ত হলে, তখন ছোট ছোট দেশসমূহও কিন্তু বৃহৎ শক্তির পক্ষে বিপক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ফলে সমস্যা বাড়ে, অশান্তি বাড়ে। অপরদিকে বৃহৎ শক্তিসমূহ ঐক্যবদ্ধ থাকলে ছোট ছোট দেশ সমূহও ঐক্যবদ্ধ হয়। ফলে সমস্যা কমে, অশান্তিও কমে। মূলত বিগত দিনের বিভেদ, দ্বন্দ্ব এবং সঙ্ঘাত ভুলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মাঝে আজ যে ঐক্যের সূচনা হয়েছে, তার মাধ্যমে পুরো মধ্যপ্রাচ্যের চেহারা বদলে যাবে এবং এর মাধ্যমে একটি নতুন সভ্যতার সূচনা হতে যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের বিশাল এলাকা জুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা হলে, তা পুরো বিশ্বেই শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিরাট এক ভূমিকা রাখবে।
মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর মাঝে দীর্ঘ দিন ধরেই কোনো ঐক্য নেই। তারা বহুধা বিভক্ত। একটি দেশ আরেকটি দেশের সাথে যুদ্ধ করেছে। ফলে মুসলিম দেশসমূহের মাঝে ঐক্যের পরিবর্তে অনৈক্য, শান্তির পরিবর্তে অশান্তি এবং সৃষ্টির পরিবর্তে ধ্বংস সাধিত হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দুই শক্তিশালী দেশ ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যকার দ্বন্দ্ব পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে ক্ষত-বিক্ষত করেছে। অবশেষে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশের নেতাদের মনে শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে এবং এর ফলাফল হিসেবে একে অন্যের সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রথমেই সৌদি আরব এবং ইরানের মধ্যে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়। গত ১০ মার্চ মুসলিম বিশ্বের দুই শক্তিশালী দেশ সৌদি আরব এবং ইরানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার খবর বের হয়। চীন এতে মধ্যস্থতা করে। এ ঘোষণা বিশ্ব রাজনীতিতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে দেশ দুটির মধ্যে ধারাবাহিকভাবে একাধিক বৈঠক হয় এবং ইতোমধ্যেই তাদের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এভাবে দীর্ঘ সাত বছর পর দেশ দুটির মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সম্পর্ক পুনঃ প্রতিষ্ঠা হওয়ায় দেশ দুটির মধ্যে সার্বিক যোগাযোগ এবং ব্যবসা বাণিজ্য শুরু হয়েছে। সৌদি আরব এবং ইরানের মধ্যকার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা ইতোমধ্যেই মুসলিম দেশসমূহের মাঝে ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা করেছে। সৌদি আরব এবং আরব আমিরাত ২০১২ সালে সিরিয়ার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল এবং সেই বছর সিরিয়াকে আরব লিগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। সৌদি আরব-ইরান সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর সৌদি আরব-সিরিয়া সম্পর্কও পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়েছে এবং সিরিয়াকে আবারো আরব লিগে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। গত ১৯-২০ মে সৌদি আরবের জেদ্দায় অনুষ্ঠিত আরব লিগের শীর্ষ সম্মেলনে সিরিয়া যোগ দিয়েছে এবং সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ এতে অংশগ্রহণও করেছেন। সিরিয়ার সাথে আরব আমিরাতের সম্পর্ক আগেই পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়েছে। ফিলিস্তিনের হামাসের সাথে সৌদি আরবের স¤পর্ক ও পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়েছে। ফলে দীর্ঘদিন পর হামাসের শীর্ষ নেতারা সৌদি আরব সফর করেছেন এবং সৌদি আরব তার কারাগারে বন্দি হামাসপন্থী অনেক নেতাকে মুক্তি দিয়েছে। এর মধ্যে কাতারের সাথে আরব আমিরাতের স¤পর্কও পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দীর্ঘ ছয় বছর পর দেশ দুটির মধ্যে এ স¤পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। ইয়েমেনে বিদ্যমান গৃহযুদ্ধ অবসানেও সৌদি আরব সম্মত হয়েছে। এ লক্ষ্যে সৌদি আরবের একটি প্রতিনিধিদল ইয়েমেন সফর করেছে এবং সেখানেও শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ ১০ বছর পর তুরস্ক এবং মিসরের মধ্য কূটনৈতিক স¤পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং এরই অংশ হিসেবে গত ৪ঠা জুলাই দেশ দুটি পর¯পরের দেশে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দেয়। ২০১৩ সালে মিসরে মুসলিম ব্রাদারহুডের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ড. মুরসি ও তাঁর সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করলে তুরস্ক এর প্রতিবাদ করে। তুরস্ক মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে, তাদের প্রতি দমন নিপীড়নের নিন্দা করে এবং এজন্য মিসরের ক্ষমতাসীন আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি সরকারের সমালোচনা করে। এর প্রেক্ষাপটে দেশ দুটির মধ্যে কূটনৈতিক স¤পর্ক ছিন্ন হয়ে যায় যা দীর্ঘ ১০ বছর পর আজ আবার জোড়া লেগেছে। এভাবে পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন শুরু হয়েছে।
এদিকে তুরস্কের নির্বাচনে এরদোগান আবারো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন এবং তার দল আবারো ক্ষমতায় এসেছে। ফলে তুরস্কের ক্ষমতায় কোনো পরিবর্তন হয়নি এবং তুরস্কে স্থিতিশীলতা বিরাজ করবে। তুরস্কের ক্ষমতায় এরদোগানের টিকে থাকায় মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর মাঝে সৃষ্টি হওয়া ঐক্যকে আরো জোরদার করবে। এখন এরদোগানের প্রধান কাজ হবে প্রতিবেশী সিরিয়ার সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা। তুরস্ক বরাবরই সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে আসাদের বিরোধী পক্ষকে সহযোগিতা করেছে এবং আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে কাজ করেছে। যেই আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সৌদি আরব, আরব আমিরাত, তুরস্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব লড়াই করেছে- সেই আসাদের কিন্তু পতন হয়নি। অথচ এই যুদ্ধে সিরিয়ার প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ মারা গেছে, ৫০ লাখেরও বেশি মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে এবং সিরিয়ার সামগ্রিক অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। আসাদ এখনো ক্ষমতায় বহাল আছেন এবং ক্ষমতাকে শক্তিশালী করেছেন। সৌদি আরব, আরব আমিরাত এবং আরব লিগ আসাদকে আবার বরণ করে নিয়েছে। আর এটি হচ্ছে বাস্তবতা। সুতরাং এই বাস্তবতাকে মানতেই হবে। তুরস্কের উচিত হবে সিরিয়ার ক্ষমতায় আসাদের অস্তিত্বকে মেনে নিয়ে সিরিয়ার সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা। সিরিয়ার সাথে তুরস্কের বিদ্যমান বৈরী সম্পর্কের অবসান করতে হবে। সিরিয়ার বিরাট এলাকা তুরস্ক দখল করে রেখেছে যা এই সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় বিরাট বাধা। সুতরাং তুরস্কের উচিত হবে আলোচনার মাধ্যমে সিরিয়া থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করা। পাশাপাশি তুরস্কে বসবাসরত সিরিয়ার বিরাট সংখ্যক মানুষকে সিরিয়ায় তাদের নিজ নিজ বসতভিটায় চলে যাবার ব্যবস্থা করতে হবে। তুরস্ক কর্তৃক সিরিয়ার এলাকা দখলে রাখা কোনো যুক্তিতেই সঠিক নয় এবং এর পেছনে গ্রহণযোগ্য ও যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ নেই। সুতরাং সিরিয়ার ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষা করতে হবে এবং সিরিয়ার পুনঃগঠনে কাজ করতে হবে। সিরিয়ায় রাজনৈতিক সমঝোতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং সিরিয়ার ভূখণ্ড বিদেশী দখলদারিত্ব মুক্ত করতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যে গড়ে ওঠা নতুন এই ঐক্য সিরিয়া সঙ্কট সমাধানে বিরাট ভূমিকা রাখবে এবং সিরিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সিরিয়া পুনঃগঠনে অত্যন্ত সহায়ক হবে।
চলমান এই পরিবর্তন মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে বিদ্যমান অনৈক্য দূর করে একটি ঐক্যবদ্ধ মধ্যপ্রাচ্য গড়তে ভূমিকা রাখবে। দুটি দেশ রাজনৈতিকভাবে ভালো সম্পর্কে থাকলে তাদের মধ্যে ব্যবসা বাণিজ্যও চাঙ্গা হয়। ফলে দেশ দুটি রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী হবার সাথে সাথে অর্থনৈতিকভাবেও লাভবান হয়। সুতরাং মুসলিম দেশসমূহকে আজ একে অপরের প্রতিপক্ষ না হয়ে, একে অপরের সহযোগী হতে হবে। একের কল্যাণে অপরকে এগিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে ঐক্যেই শক্তি এবং ঐক্যেই শান্তি ও সমৃদ্ধি। বিভেদে কখনো মুক্তি মিলে না বরং সব দিকে ধ্বংস ডেকে আনে এবং বিদেশী রাষ্ট্রের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ সৃষ্টি করে। সুতরাং ঐক্য না হলে মুসলিম দেশেগুলোয় চলমান গৃহযুদ্ধ চলতেই থাকবে। মুসলমানরা প্রতিনিয়ত ধ্বংস হতেই থাকবে, যা কারো কাম্য নয়। আশা করবো মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে যে নতুন ঐক্য গড়ে উঠছে তা দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং এর ফলে ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান হবে। এই ঐক্যের প্রভাবে দীর্ঘদিন ধরে চলা সিরিয়া, লিবিয়া এবং ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধ বন্ধ হবে এবং রোহিঙ্গা সমস্যারও সমাধান হবে। রাজনৈতিকভাবেই সিরিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেন এবং ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান করতে হবে, যা একটি ঐক্যবদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের পক্ষেই কেবল সম্ভব। লিবিয়ায় একপক্ষকে তুরস্ক এবং অন্যপক্ষকে মিসর সহায়তা করেছে। ফলে লিবিয়ায় রাজনৈতিক সংঘাত বেড়েছে। তুরস্ক এবং মিসরের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক লিবিয়ার রাজনৈতিক সংঘাত বন্ধে সহায়তা করবে। মধ্যপ্রাচ্য এক হলে বিভক্ত ফিলিস্তিনিরাও এক হবে, যা তাদের দীর্ঘ দিনের সমস্যাকে সমাধান করবে। সুদানে চলমান গৃহযুদ্ধ এবং রাজনৈতিক সংঘাত নিরসনেও ঐক্যবদ্ধ মধ্যপ্রাচ্য বিরাট ভূমিকা পালন করবে। এভাবে ঐক্যবদ্ধ মধ্যপ্রাচ্য মুসলিম বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি মুসলিম দেশসমূহকে উন্নতি, সংহতি এবং সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। একইভাবে তা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং অগ্রগতিতেও ভূমিকা পালন করবে। মিয়ানমারের শাসকদের নির্যাতন হতে বাঁচতে আরাকানের ১০ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম ঘরবাড়ি ছেড়ে বাংলাদেশে এসে দীর্ঘদিন ধরে শরণার্থী হিসেবে বসবাস করছে। মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান এবং তাদেরকে নিজ দেশের নিজ বসতভিটায় ফিরে যেতেও সাহায্য করবে।
সৌদি আরব-ইরান সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সৌদি আরব-সিরিয়া সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সৌদি আরব-হামাস পুনঃপ্রতিষ্ঠা, আরব আমিরাত-সিরিয়া স¤পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা, কাতার-আমিরাত সম্পর্ক পুনঃ প্রতিষ্ঠা, তুরস্ক-মিসর সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা, ইয়েমেনে যুদ্ধ বন্ধের প্রয়াস এবং আরব লিগে সিরিয়ার প্রত্যাবর্তন মূলতপক্ষে ঐক্যবদ্ধ মধ্যপ্রাচ্য গঠনেরই প্রক্রিয়া। আর এসব যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ভীষণ বিব্রতকর বিষয়। এটি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে বিরাট একটি বিপর্যয় এবং এর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব দিন দিন কমবে। অপরদিকে এসবই ইসরাইলের জন্য একটি বিপর্যয়। সৌদি আরবের সাথে ইরানের ঐক্য ইসরাইলের জন্য রাজনৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। একই সাথে ঐক্যবদ্ধ মধ্যপ্রাচ্য ইসরাইলের ওপর সৃষ্টি করবে বিরাট একটি চাপ। আর ইসরাইলের রাজনৈতিক বিপর্যয় মানে ফিলিস্তিনিদের জন্য নতুন একটি সম্ভাবনার সৃষ্টি। সুতরাং ইসরাইলের উচিত হবে ফিলিস্তিনিদের ওপর চলমান দমন-নিপীড়ন বন্ধ করা, দখলদারিত্বের অবসান করা এবং ফিলিস্তিনিদের কাছে তাদের ভূমি ফেরত দেওয়া। মূলতপক্ষে ফিলিস্তিনিদের ওপর বছরের পর বছর ধরে ইসরাইলের বর্বর নির্যাতন, ইসরাইলের প্রতি পশ্চিমাদের অন্ধ সমর্থন এবং ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান না করা- আজ ইসরাইল ও পশ্চিমাদের জন্য বুমেরাং হয়ে ফিরে এসেছে। ইসরাইল এবং পশ্চিমাদেরকে আজ এই বাস্তবতাকে মানতেই হবে। এদিকে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে চীনের প্রভাব বাড়বে। ইরান এবং সিরিয়ার সাথে আগে থেকেই চীনের ভালো স¤পর্ক রয়েছে। এখন সৌদি আরবের সাথে চীনের নতুন স¤পর্ক গড়ে উঠেছে। ফলে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে চীনের ভূমিকা এবং প্রভাব দিন দিন বাড়ছে। ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে চীন একটি শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ভবিষ্যতে সৌদি আরব, ইরান, সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে চীনের ব্যবসা বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়বে। এ অঞ্চলে চীনের বিনিয়োগও বাড়বে। এভাবে নতুন এক মধ্যপ্রাচ্যের সূচনা হতে যাচ্ছে যা আগামী দিনের বিশ্ব রাজনীতি এবং অর্থনীতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করবে। মোট কথা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন একটি শক্তির অভ্যুদয় হতে যাচ্ছে, যা বিশ্ব রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করবে, প্রভাবিত করবে এবং নেতৃত্ব দেবে।
দ্বন্দ্ব, সংঘাত এবং যুদ্ধ কোনো সমাধান নয়। হিংসা, হানাহানি, জেদাজেদিতে কোনো কল্যাণ নেই বরং সব সময় কেবল ধ্বংসই ডেকে আনে। তাই মুসলিম দেশসমূহের মাঝে বিদ্যমান দ্বন্দ্ব নিজেদেরকেই দূর করতে হবে। মুসলিম দেশসমূহকে একে অন্যের প্রতিপক্ষ না হয়ে পর¯পরের সহযোগী হতে হবে। মুসলিম দেশসমূহ যদি একে অন্যের বিরুদ্ধে রাজনীতি না করে তাহলেই কিন্তু বিরাট এক ঐক্য এবং শক্তি গড়ে ওঠবে। এই ঐক্য তাদেরকে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ভাবে অনেক শক্তিশালী করবে।
প্রকৃতপক্ষে মুসলিম দেশসমূহের সমস্যার সমাধান মুসলিম দেশসমূহকেই করতে হবে। ক্ষুদ্র স্বার্থ বাদ দিয়ে বৃহত্তর স্বার্থের জন্য মুসলমানদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কমন ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যে কোনো মূল্যে সব সময় ঐক্যকে টিকিয়ে রাখতে হবে। মুসলিম দেশসমূহের মাঝে যে দূরত্ব রয়েছে তা আলোচনায় বসলে অবশ্যই দূর হবে। কারণ ধর্মীয় এবং ঐতিহ্যগতভাবে দেশগুলোর মধ্যে হাজারো মিল রয়েছে।
মুসলিম বিশে^র পণ্ডিত ব্যক্তিগণকে আজ মুসলিম দেশগুলোর ঐক্যের জন্য উদ্যোগ নিতে হবে এবং কাজ করতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যে চলমান ঐক্যকে সম্প্রসারণ করতে হবে এবং এই ঐক্যকে দিন দিন আরো টেকসই এবং মজবুত করতে হবে। আর এই ঐক্য নতুন এক মধ্যপ্রাচ্যের সূচনা করেছে, যা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন শক্তির সৃষ্টির মাধ্যমে পুরো বিশ্ব রাজনীতি এবং অর্থনীতিকে প্রভাবিত করবে। এর মাধ্যমে নতুন এক বিশ্বব্যবস্থার জন্ম হতে যাচ্ছে, যেখানে কারো একক আধিপত্য থাকবে না। আর বিশ্বশান্তির জন্য এটাই প্রয়োজন এবং অপরিহার্য।
লেখক : প্রকৌশলী এবং উন্নয়ন গবেষক
আপনার মন্তব্য লিখুন