post

মানসিক চাপ স্বাভাবিক জীবনযাত্রার অন্তরায়

২৮ জানুয়ারি ২০১৪

মোস্তাফিজুর রহমান আশু

MasosicStress বা মানসিক চাপ প্রাত্যহিক জীবনের একটি সাধারণ ঘটনা। প্রতিনিয়ত আমরা এ ধরনের ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছি। অনেকেই মানিয়ে নিতে পারছি, আবার মানসিক চাপ অনেকের জীবনকেই দুর্বিষহ করে তুলছে। আমরা প্রতেকেই কিছু না কিছু অস্বাভাবিক আচরণ করে থাকি। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে আমরা প্রত্যেকেই মানসিক রোগী। মানসিক জ্ঞানের ভাষায় ‘কোন মানুষের আচরণ যদি পার্শ্ববর্তী এক বা একাধিক মানুষে স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে তুলে বা বাধাগ্রস্ত করে তাকে মানসিক রোগী বলে।’ অর্থাৎ মানসিক চাপ যদি পাশাপাশি বসবাসকারী মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করে তা হলে তাকে মানসিক রোগ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। কারণ তা এমনই মানসিক সমস্যা স্থায়ী মানসিক রোগ সৃষ্টি করতে পারে। তাই লজ্জা না করে বা হীনম্মন্যতায় না ভুগে মানসিক সমস্যা দূর করার প্রায়োজনীয় চিকিৎসা করা দরকার। ক্লিনিকেও এ ধরনের চিকিৎসাসেবা পাওয়া যায়। মহান আল্লাহ মানুষের শরীরটা অসম্ভব ম্যাকানিজম দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, শরীরে প্রত্যেকটি সূক্ষ্ম পরিবর্তন বিভিন্ন Hormone  দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়। মানুষের হাসি, কান্না, খাদ্য হজম, বৃদ্ধি বয়ঃসন্ধিকাল, সন্তান জন্মদান ইত্যাদি সব কিছুই বিশেষ Hormone এর সূক্ষ্ম কারিশমেটিক কাজের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। ঠিক একইভাবে শরীরের জরুরি মুহূর্তগুলোর ব্যবস্থাপনা Adrenal ও Cootisol hormone নিয়ন্ত্রণ করে। এর মাত্রাতিরিক্ত কারণ স্থায়ী মানসিক সমস্যা তৈরি করতে পারে। ইসলামী আন্দোলনের প্রত্যেক কর্মী তাদের পিতা-মাতা, ভাই-বোন আত্মীয়স্বজনসহ দেশের সচেতন সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ সকলেই সমানভাবে তীব্র মানসিক চাপে ভুগছেন। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বা Social Haggant এর জন্য দায়ী। মূলত এই মানসিক চাপকে সহনীয় করার কিছু কৌশল জানানোই আজকের আলোচ্য বিষয়ের মূল লক্ষ্য। এই আন্দোলনে একজন কর্মীরও যদি লেখাটি পড়ে মানসিক চাপ কিছুটা লাঘব হয় ও আন্দোলনে মনোযোগী হয় আমার পরিশ্রমের সবটুকুই সফল হবে। ইনশাআল্লাহ। আসুন মানসিক চাপের লক্ষণগুলো কী কী তা জেনে নেই মানসিক চাপের লক্ষণ: শারীরিক লক্ষণ- * মাথা ব্যথা * হৃদরোগ * বুক ধরফড় করা * উচ্চরক্তচাপ * হজমে সমস্যা * ঘুমে সমস্যা * শরীর হঠাৎ ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া * শরীরের পেছনে (যেমন পিঠ, কোমর) ব্যথা * কাঁধে ব্যথা * রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া * শরীরের তাপমাত্রা হাঠাৎ বেড়ে যাওয়া * বার বার টয়লেটে যাওয়া। চিন্তা-চেতনায় প্রকাশিত লক্ষণ- #দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়া # বিশ্রাম নিতে না পারা # ভীত হওয়া # চিন্তাগ্রস্ত হওয়া # অস্বস্তিবোধ হওয়া # বিষণ্ণতা # দুঃখবোধ হওয়া # নিরাপত্তার অভাব বোধ করা # কাজে মনোনিবেশ করতে না পারা # ভুলে যাওয়া। আচরণের লক্ষণ- * বেশি বেশি খাওয়া বা কম খাওয়া * হঠাৎ ক্ষেপে যাওয়া *অস্বাভাবিক ওষুধ সেবন (যেমন- ঘুমের ওষুধ) * ধূমপান বেড়ে যাওয়া হ সামাজিকতা এড়িয়ে চলা * একা একা থাকতে চাওয়া * অপরের সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটা * কাজে মনোযোগ দিতে না পারা। কিভাবে মানসিক চাপ দূর করা যায় মানসিক চাপ দূর করার জন্য প্রথমেই চাপের কারণটি খুঁজে বের করতে হবে। তারপর তা দূর করার জন্য বা কমানোর জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাই সবার আগে মানসিক চাপের কারণটি খুঁজতে হবে। তারপর নিচের বিষয়গুলো মেনে চলার চেষ্টা করুন- গভীরভাবে স্বাস নিন- গভীর শ্বাসের সাথে আপনার শরীরে প্রচুর পরিমাণ অক্সিজেন প্রবেশ করবে, ফলে আপনার দেহে প্রশান্তির একটা ভাব আসবে। এবার এক মুহূর্তের জন্য মানসিক চাপের পেছনের কারণটা ভাবুন, তারপর এগিয়ে জান সামনের পথে যেখানে আপনার প্রচেষ্টার আড়ালেই লুকিয়ে আছে সফলতা। সাথে নিচের বিষয়গুলো অনুসরণ করার চেষ্টা করুনÑ ১.    এক থেকে দশ পর্যন্ত বা দশ থেকে এক পর্যন্ত গুনুন। পারলে বেশিও গুনতে পারেন। ২.    উঠে দাঁড়ান, পায়চারি করুন, রিলাক্স ভাব আনুন মনের মাঝে। মনে রাখবেন রিলাক্স ভাব মানসিক চাপের ঠিক বিপরীত। ৩.    মুচকি হাসুন অতীতের কোনো সুখকর স্মৃতি ভেবে, অন্তত চেষ্টা করুন। অনেক স্বস্তি অনুভব করবেন। ৪.    একটু হাঁটুন, অফিস বা বাসায় থাকলে বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ আয় করুন। ঘাড়ের পেছনে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিন, সাথে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিতে পারেন। মোট কথা যে কাজ করছিলেন বা যে চিন্তার কোনো কূলকিনারা ছিল না তার থেকে ভিন্ন কিছু করুন। আপনি যখন আবার সেই সমস্যার কাছে আসবেন তখন ভিন্ন একটি পরিস্থিতি অনুভব করবেন। সমাধানটা অনেক বেশি সহজ হবে। মানসিক চাপ কমবে। ৫.    যে কাজটির জন্য আপনি মানসিক চাপ অনুভব করছিলেন তা আপাতত ফেলে রাখুন পরে সেটা নিয়ে চেষ্টা করুন। * নিজের সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করতে চেষ্টা করুন : মানসিক চাপ কমানোর অন্যতম অত্যাবশ্যক উপায় হলো নিজের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখা। ১.    ‘না’ বলতে শিখুন। সময়মতো ‘না’ বলতে না পারলে অনেক সময় পস্তাতে হয়। তাই না আমি পারব ‘না’ ‘পরে’ কথাগুলো বলতে শিখুন এবং সময় মতো ব্যবহার করতে শিখুন। তবে অভ্যাসে পরিণত না হয় বা পরিবেশ পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে ব্যবহারের চেষ্টা করুন। ২.    জীবনে অনেক কিছুই অনাকাক্সিক্ষত ঘটতে পারে এ ঘটনাগুলোর জন্য হয়তো বা আপনার কোনো দোষ নেই, তাই অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার জন্য নিজেকে দোষ দেবে না। আল্লাহর ওপর ভরসা করে ধৈর্য ধরুন। ৩.    প্রয়োজনের সময় অন্যকে সাহায্য করুন। সব সময় একা একা সব কিছু করা সম্ভব নাও হতে পারে, পরিবারের সদস্য, সহকর্মী, বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে সাহায্য গ্রহণ হয়তো আপনাকে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে দ্রুত পৌঁছাতে সাহায্য করতে পারে। দূর করতে পারে আপনার মানসিক চাপটুকু। আরো কিছু পন্থা : ১.    রাতে পরিপূর্ণ ঘুমাতে চেষ্টা করুন (পারলে ঘুমানোর আগে ১ গ্লাস গরম দুধ খেতে পারেন) ২.    শরীরে জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু খাবার গ্রহণ করবেন। অতি ভোজন নিয়ন্ত্রণ করুন ৩.    প্রিয় কোনো গান শুনুন (ইসলামী/রুচিশীল ধীরলয়ের) ৪.    ব্যায়াম করুন বা আনন্দ খুঁজে পান এমন কোনো কাজ করুন (সমাজসেবামূলক কাজ, বাগান করা, টবে গাছ লাগান।) ৫.    সব সময় সৎ চিন্তা করুন, অন্যের উপকার করতে না পারলেও ক্ষতি করবেন না। সিদ্ধান্ত নিন। ৬.    মিথ্যা বলা, গিবত করা, বা লোক দেখান, উদ্দেশ্যমূলক কাজ থেকে বিরত থাকেন। ৭.    নিজের সমস্যা নির্ভরযোগ্য কারো কাছে শেয়ার করুন। সমস্যা কখনই নিজের মাঝে সীমাবদ্ধ বা জিয়ে রাখবেন না। ৮.    হালকা গরম পানিতে গোসল করলে শরীর ঝরঝরে রুচিশীল মনে হবে। ৯.    বই পড়–ন, কুরআন পড়–ন, ঘুরতে যান, আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে জান, মন খুলে কথা বলুন, তবে অতিকথন নয়। এ ছাড়াও আপনার নিজের কাছে মনে হয় এমন কোনো কাজ করতে পারেন যা আপনার মানসিক চাপ মুক্তিতে সাহায্য করতে পারে। আল্লাহর রাসূল (সা) ও সাহাবীরা কোনো বিপদ মুসিবতে মানসিক চাপ বোধ করলে নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন ও আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতেন। মানসিক চাপ মুক্তির সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হচ্ছে, কোনো বিষয়কে সহজ, স্বাভাবিক ও পজেটিভভাবে গ্রহণ করা ও তকদিরের ওপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখা। আল্লাহ আমাদের সকল মানসিক চাপ থেকে মুক্ত হয়ে সফল ও সুন্দর জীবনযাপনের তৌফিক দিন আমিন। লেখক : কেন্দ্রীয় সমাজসেবা সম্পাদক বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির