post

মুক্তচিন্তা ও বাকস্বাধীনতার নামে ধর্মকে অবজ্ঞা চরম ধৃষ্টতা

২৩ মে ২০১৩
মুক্তচিন্তা ও বাকস্বাধীনতার নামে ধর্মকে অবজ্ঞা চরম ধৃষ্টতা জালাল উদ্দিন ওমর কিছু ব্যক্তি কর্তৃক ব্লগে ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করে কটূক্তির কারণে বাংলাদেশে এখন ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ক্ষোভ আর প্রতিবাদ চলছে। এই সব ব্যক্তি নিজেদেরকে নাস্তিক বলে ঘোষণা দিয়েছে এবং মুক্তচিন্তা ও বাকস্বাধীনতার কথা বলে ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করেছে। তারা নিয়মিতই ব্লগে ইসলামকে অবমাননা করে লেখালেখি করে। তারা এই মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা, পরিপালনকর্তা এবং নিয়ন্ত্রণকর্তা আল্লাহ এবং তার প্রেরিত মানবতার মুক্তিদূত, সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল হজরত মুহাম্মদ (সা)কে কটাক্ষ, অবজ্ঞা এবং অপমানিত করেছেন। একই সাথে তারা পবিত্র কুরআন-হাদিস এবং ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য মন্তব্য করেছেন। এই সব ব্লগারদের ইসলাম অবমাননার কারণে বাংলাদেশে এখন চলছে ক্ষোভ আর প্রতিবাদের ঝড়। মুসলমানদের এই প্রতিবাদের ঢেউয়ে পুরো দেশই আজ প্রকম্পিত। প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানের হৃদয় আজ ক্ষতবিক্ষত। আল্লাহ, মহানবী (সা) এবং কুরআন-হাদিসসহ ইসলামকে অবজ্ঞার ঘটনায় তাদের হৃদয়ে চলছে রক্তক্ষরণ। একজন মুসলিম হিসাবে আমার প্রিয় আল্লাহ, মহানবী (সা) এবং কুরআন-হাদিসকে অপমানের ঘটনায় আমিও আজ অত্যন্ত ব্যথিত এবং মর্মাহত। আমি নিজেও এই প্রতিবাদী মিছিলের একজন অংশগ্রহণকারী। সুতরাং আমি এই ধরনের অন্যায়, বর্বরতা, দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজের তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একই সাথে এর জন্য দায়ী এবং এর সাথে জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য গণতন্ত্র, সভ্যতা ও মানবাধিকারের প্রবক্তা বলে দাবিদার দেশের একটি জনগোষ্ঠী ব্লগারদের এই অপকর্মকে মুক্তচিন্তা এবং বাকস্বাধীনতা হিসেবে অভিহিত করেছে এবং তাদেরকে সমর্থন করছে। তারা বাকস্বাধীনতা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে এই অপকর্মের পক্ষে সাফাই গাইছে। একইভাবে তারা বাকস্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপের ধুয়া তুলে এই ব্লগারদের পক্ষে কথা বলছেন। এই সব ব্লগার এবং তাদের সমর্থনকারীদের উদ্দেশে বলতে চাইÑ অপরের ধর্ম, ধর্মবিশ্বাস এবং ধর্মের প্রবক্তা এবং এর সম্মানিত ব্যক্তিদের অপমান ও অবজ্ঞা করাটা কখনো বাকস্বাধীনতা হতে পারে না। আর এটা কখনো মুক্তচিন্তা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হতে পারে না। বরং এটা হচ্ছে চরম অন্যায়, অভদ্রতা এবং অসভ্যতা। আর এ ধরনের গর্হিত কাজ কখনো সুফল বয়ে আনে না। মনে রাখা দরকার যে কোন ব্যক্তির যে কোন ধর্মকে মানার বা অস্বীকার করার অধিকার রয়েছে। স্বয়ং স্রষ্টাও মানুষকে সে অধিকার দিয়েছেন। কিন্তু অপরের ধর্মকে অবজ্ঞা করার অধিকার কারো নেই। বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় সাত শ’ কোটি মানুষের বাস। এর প্রায় ৯৯.৯৯ ভাগ মানুষই কোন না কোন ধর্মের অনুসারী। অর্থাৎ প্রায় সব মানুষই ধর্মে বিশ্বাসী। হয়তো কারো মাঝে ধর্মের প্রভাব কম আর কারো মাঝে ধর্মের প্রভাব বেশি। কিন্তু এক কথায় তারা ধর্মে বিশ্বাসী। আর এই ধারাবাহিকতাই আদিকাল থেকে চলে আসছে, বর্তমানেও চলছে এবং ভবিষ্যতেও চলবে। এই ধর্মই নিয়ন্ত্রণ করছে মানুষের সভ্যতা, সংস্কৃতি এবং জীবনধারা। এই ধর্মই গঠন করেছে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র এবং দেশ। আসলে একজন মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সবকিছুই ধর্ম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কেউ যদি না মানে সেটা হচ্ছে ধর্ম থেকে বিচ্যুতি। তাই একজন ব্যক্তি সেক্যুলার হলেও তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ধর্মীয় রীতিতেই সম্পন্ন হয়। সমাজের যা কিছু সত্য, সুন্দর এবং মহৎ, তার সবকিছুই ধর্ম হতে উৎপন্ন। আর ভিন্ন ধর্মের রীতিনীতি ভিন্ন হলেও সবাই বিশ্বাস করে এই সৃষ্টিজগতের একজন স্রষ্টা আছেন। তিনিই সবকিছুর সৃষ্টিকারী, লালনকারী এবং পালনকারী। সবাই আবার এ কথাাও বিশ্বাস করে যে মৃত্যুর পর সবাই তার কৃতকর্মের জন্য স্রষ্টার কাছে বিচারের মুখোমুখি হবে এবং কৃতকর্মের ফলাফলের ওপর কেউ চিরসুখের জান্নাত আবার কেউ চিরদুঃখের জাহান্নামে স্থান লাভ করবে। প্রত্যেক ধর্মেরই একজন প্রধান ব্যক্তি রয়েছেন যারা এই ধর্মকে ধারণ করেছেন, অনুসরণ করেছেন এবং প্রচার করেছেন। এই সব ব্যক্তি নিজ নিজ ধর্মের অনুসারীদের কাছে অত্যন্ত সম্মানিত এবং পবিত্র। তাই এই সব ব্যক্তিকে অপমান তাদের অনুসারীদের কেউই সহ্য করতে পারে না। হজরত ঈসা (আ) যেমন খ্রিষ্টানদের কাছে অত্যন্ত সম্মানিত, গৌতম বুদ্ধ যেমন বৌদ্ধদের কাছে অত্যন্ত সম্মানিত, শ্রীকৃষ্ণ যেমন হিন্দুদের কাছে অত্যন্ত সম্মানিত, ঠিক তেমনি হজরত মুহাম্মদ (সা)ও মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত সম্মানিত। আর হজরত ঈসা (আ) এর অপমান যেমন কোন খ্রিষ্টান সহ্য করতে পারে না, গৌতম বুদ্ধের অপমান যেমন কোনো বৌদ্ধ সহ্য করতে পারে না, শ্রীকৃষ্ণের অপমান যেমন কোন হিন্দু সহ্য করতে পারে না, ঠিক তেমনি হজরত মুহাম্মদ (সা)-এর অপমানও কোন মুসলমান সহ্য করতে পারে না। সুতরাং প্রত্যেক মানুষের উচিত তার নিজ ধর্ম এবং নিজ ধর্মের সম্মানিত ব্যক্তিদের সম্মান করার পাশাপাশি অপরের ধর্ম এবং অপরের ধর্মের সম্মানিত ব্যক্তিদেরও সম্মান করা। আর সম্মান না করলেও কখনোই এবং কিছুতেই অসম্মান করা যাবে না। কারণ এতে সমাজের শান্তি, সম্প্রীতি এবং ভালোবাসা নষ্ট হয়। সৃষ্টি হয় অশান্তি, অরাজকতা এবং হিংস্রতা ও বর্বরতা। যার আগুনে পুড়ে সর্বনাশ হয় সমাজ, ধ্বংস হয় সভ্যতা। সুতরাং এই ধ্রুব সত্যটুকু জাতি -ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবারই অনুসরণ করা উচিত এবং করতে হবে। বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় দেড় শ’ কোটি মুসলমানের বাস। সুতরাং ইসলাম এবং মুসলমানরা বিশ্বশক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি এবং তারা বর্তমান বিশ্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ। অথচ কিছু ব্যক্তি মুসলমানদের বিশ্বাস, রীতিনীতি এবং এর প্রধান ব্যক্তি হজরত মুহাম্মদ (সা) কে অবজ্ঞা এবং হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য আজ মাঠে নেমেছে। বাংলাদেশে মুসলিম নামধারী কিছু তরুণ কর্তৃক মহান আল্লাহ, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) এবং পবিত্র কুরআন-হাদিসকে অবজ্ঞা ও অপমান করে ব্লগে লেখালেখি তার সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ। আর ইসলামকে অবমাননার ঘটনা এবারই নতুন নয় এবং তা ব্লগেই কেবল সীমাবদ্ধ নয়। কয়েক মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত ‘ইনোসেন্স অব মুসলিম’ নামক একটি চলচ্ছিত্রে নাকুলা বাসিলে অত্যন্ত কৌশলে মানবতার মুক্তিদূত, সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল হজরত মুহাম্মদ (সা) কে অপমানিত করেছেন। এই চলচ্ছিত্রকার সিনেমার মাধ্যমে কৌশলে ইসলামের প্রবক্তা এবং মুসলিম জাতির নবীকে হেয়প্রতিপন্ন করেছেন। পশ্চিমাবিশ্ব তখনো বাকস্বাধীনতা কথা বলে নাকুলা বাসিলেকে সমর্থন করেছিল। এর প্রতিবাদে সারা বিশ্বে মুসলমানদের প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছিল এবং ক্ষুব্ধ মুসলমানদের হামলায় লিবিয়ার বেনগাজিতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিহত হয়েছিলেন। এর কয়েকদিন পরই ফ্রান্সের একটি ম্যাগাজিন হজরত মুহাম্মদ (সা)কে ব্যঙ্গ করে কার্টুন প্রকাশ করেছে। আর আজ থেকে দুই যুগ আগে একইভাবে হজরত মুহাম্মদ (সা) কে অবমাননা করে সালমান রুশদী লিখেছিল স্যাটানিক ভার্সেস নামক উপন্যাস। তখনো পশ্চিমাবিশ্ব মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলে সালমান রুশদীর পাশে দাঁড়িয়েছিল এবং বইটির পক্ষে কথা বলেছিল। শুধু তাই নয়, ব্রিটিশ সরকার সালমান রুশদীকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করেছিল। সুতরাং মনে হচ্ছে মুসলমানদেরকে আঘাত করার জন্য এবং হজরত মুহাম্মদ (সা)কে অবজ্ঞা করার জন্য এসব হচ্ছে একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, যা ধারাবাহিকভাবেই ঘটে চলেছে। আর এটাই যুক্তিসঙ্গত। কিন্তু যে সব ব্যক্তি আজ মহান আল্লাহ, ইসলাম এবং নবী হজরত মুহাম্মদ (সা) কে হেয়প্রতিপন্ন করছে আর যারা আজ আল্লাহ, ইসলাম ধর্ম এবং তার নবীকে অপমান করাটাকে মুক্তচিন্তা এবং বাকস্বাধীনতা বলে সমর্থন করছে, তাদের জানা উচিত এই বাকস্বাধীনতা তাদের কারো জন্য কোন ধরনের কল্যাণ বয়ে আনবে না। বরং এটা কেবল তাদের জন্য ক্ষতিই নিয়ে আসবে। কোন ব্যক্তি যদি মহান আল্লাহকে অস্বীকার করে বা কটাক্ষ করে, তাহলে তাতে মহান আল্লাহর মান সম্মান এবং ক্ষমতা কিছুই কমবে না। কারণ মহান আল্লাহ হচ্ছেন এই মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা, লালনকর্তা এবং পালনকর্তা। তিনি একক, অদ্বিতীয় এবং চিরঞ্জীব। তিনি সর্বময় ক্ষমতার মালিক। তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন বরং সবাই তার মুখাপেক্ষী। একইভাবে হজরত মুহাম্মদ (সা)কে কটাক্ষ করার কারণে তাহার মান সম্মান যেমন কমবে না ঠিক তেমনি ইসলামকে কটাক্ষ করায় ইসলামেরও কোন ক্ষতি হবে না। কারণ মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) হচ্ছে স্বমহিমায় উদ্ভাসিত একজন ব্যক্তি যার খ্যাতি, সুনাম এবং প্রভাব শত শত বছর ধরে পৃথিবীকে যেমন আলোড়িত, আলোচিত এবং প্রভাবিত করছে, ঠিক তেমনি কেয়ামত পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে। যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা অধ্যাপক এবং বুদ্ধিজীবী মাইকেল এইচ হার্ট বছরের পর বছর ধরে গবেষণা করে পৃথিবীর শুরু থেকে বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত শ্রেষ্ঠ একশত জন মানুষ নিয়ে লিখেছেন আলোড়ন সৃষ্টিকারী ‘দি হান্ড্রেড’ নামক বই যেখানে তিনি হজরত মুহাম্মদ (সা) কে এক নম্বর পজিশনে স্থান দিয়েছেন। অথচ মাইকেল এইচ হার্ট একজন খ্রিষ্টান। আর অপরকে অসম্মান করে নিজেকে কখনো যেমন সম্মানিত করা যায় না, ঠিক তেমনি অপরকে ছোট করে নিজেকে কখনো বড় করা যায় না। সবারই মনে রাখা উচিত ইসলাম হচ্ছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীবনদর্শন এবং একমাত্র সত্য ধর্ম। এটা তার আপন মহিমায় মহিমান্বিত। সুতরাং ইসলামকে অবমাননা করলে ইসলামের কোন ক্ষতি হয় না। অপর দিকে আল্লাহ, ইসলাম এবং মহানবীকে কটাক্ষ করে এই সব ব্যক্তি মুসলমানদের নয় বরং নিজেদের পতনকে ত্বরান্বিত করছে। মুসলমানদের আজ যে প্রতিবাদ বিক্ষোভ এবং জাগরণ তা কিন্তু নাস্তিক, ব্লগার এবং তাদের সহযোগীদের প্রত্যাখ্যানের বহিঃপ্রকাশ। তার মানে মুসলমানরা জেগে উঠছে। রাজনীতির গতিধারা কিন্তু সেদিকেই প্রভাবিত হচ্ছে। সুতরাং আল্লাহ, ইসলাম এবং মহানবীকে হেয়প্রতিপন্ন করার ঘটনা নাস্তিক, ব্লগার এবং তাদের সহযোগী ধর্মনিরপেক্ষ এবং ধর্মহীনদের জন্য বুমেরাং হবে। আর অমুসলিমরা মুসলমানদের স্রষ্টা, ধর্ম ইসলাম এবং নবী হজরত মুহাম্মদ (সা) কে অপমান এবং অবজ্ঞা করলেও মুসলমানরা কখনো অন্য ধর্ম এবং তাদের প্রধান ব্যক্তিদেরকে কটাক্ষ করবে না। কারণ আল্লাহ মুসলমানদেরকে ইসলামকে অনুসরণ এবং মহানবীকে সম্মান করার পাশাপাশি অমুসলিমদের ধর্ম এবং তাদের দেবতা এমনকি সম্মানিত ব্যক্তিদেরকেও সম্মান করার নির্দেশ দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন, “আল্লাহকে ছেড়ে তারা যাকে ডাকে, তাদেরকে তোমরা গালি দিও না, কেননা তারা সীমালঙ্ঘন করে অজ্ঞানবশত আল্লাহকেও গালি দেবে।” (সূরা আনয়াম, আয়াত-১০৮) সুতরাং অমুসলিমরা, তাদের ধর্ম, তাদের দেবতা এবং তাদের ধর্মের সম্মানিত ব্যক্তি সবই মুসলমানদের কাছে নিরাপদ। আজ পর্যন্ত কোন মুসলমান অন্য ধর্মকে এবং ধর্মের প্রধান ব্যক্তিদেরকে অবমাননা করেছে তার একটি প্রমাণও পাওয়া যাবে না। আর কোন ক্ষেত্রে যদি মুসলমানরা প্রতিবাদী হয়ে সহিংস আচরণ করে থাকে সেটা হচ্ছে ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া। অর্থাৎ ইসলাম এবং মহানবীকে অপমানিত করার প্রতিক্রিয়ায় মুসলমানরা প্রতিবাদী হিসেবে এসব করেছে। আর এটা ইতিহাসের প্রমাণিত সত্য। এদিকে ইসলাম এবং মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা)কে অবমাননার কারণে মুসলমানদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হলেও, তাদেরকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে এবং কখনো সহিংস হওয়া যাবে না। মুসলমানদেরকে হতে হবে ধৈর্যশীল, সহনশীল এবং ক্ষমাশীল। আবেগের বশবর্তী হয়ে কখনো ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত হওয়া যাবে না। আমরা এর জন্য শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বিক্ষোভ করব কিন্তু কখনো আইনকে নিজের হাতে তুলে নেবো না। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, কিছু মুসলিম এ সময় অধৈর্য হয়ে পড়ে এবং প্রতিবাদী হয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়। প্রকৃতপক্ষে এটা ঠিক নয়। মুসলমানদের পাশে অন্যে ধর্মের লোকেরা সংখ্যালঘু হওয়া সত্ত্বেও শত শত বছর ধরে শান্তিতে বসবাস করেছে। ফিলিস্তিন, বসনিয়া, কাশ্মির এবং মিন্দানাওসহ বিভিন্ন অঞ্চলে অমুসলিম কর্তৃক বছরের পর বছর ধরে মুসলমানরা নির্যাতিত হলেও মুসলমানরা কখনো এর প্রতিশোধ হিসাবে অমুসলিমদের ওপর নির্যাতন করেনি। আর মুসলমানদের উদ্দেশ্যে বলব মন্দের প্রতিবাদ কখনো মন্দ দিয়ে হয় না। ভালো কাজ দিয়েই আমরা মন্দ কাজের প্রতিবাদ করব। আর ইসলাম আমাদেরকে সেটাই শিক্ষা দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, “মন্দের মোকাবেলা কর যা উত্তম তা দ্বারা।” (সূরা মুমিনুন, আয়াত-৯৬) সুতরাং যে কোন মূল্যে আমাদেরকে ধৈর্যশীল হতে হবে। মনে রাখতে হবে এভাবে ধর্ম এবং ধর্মের সম্মানিত ব্যক্তিদেরকে অবমাননা করে একটি গোষ্ঠী সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে চাচ্ছে। এ অবস্থায় মুসলমানদেরকে কৌশলী হতে হবে এবং ষড়যন্ত্রকারীদের পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করা যাবে না। আর ইসলাম কখনো সাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করে না এবং তা সমর্থনও করে না। পরিশেষে সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলব, অনুগ্রহ করে মুক্তচিন্তা ও বাকস্বাধীনতার নামে কারো ধর্মবিশ্বাসকে অবজ্ঞা করবেন না। একইভাবে আল্লাহ, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) এবং ইসলামকেও আর অবমাননা করবেন না। কারণ এতে ইসলামের কোন ক্ষতি হবে না এবং আপনাদেরও কোন উপকার হবে না। বরং এতে ইসলাম আরো বিকশিত এবং গতিশীল হবে, আর ধর্মদ্রোহী নাস্তিকরা ধ্বংস হবে। এটা দিবালোকের মতই সত্য এবং অনিবার্য। পরিশেষে নাস্তিকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলব, এখনো সময় আছে অতীত ভুল এবং অন্যায় কর্মকাণ্ডের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান এবং তওবা করে ইসলামের পথে ফিরে আসুন। তা না হলে আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছে অনন্তকালের জন্য অনিবার্য এক ভয়ানক শাস্তি, যেখান থেকে কেউই আপনাদের রক্ষা করতে পারবে না। কারণ আল্লাহ যে কোন ব্যক্তিকে আল্লাহকে না মানার অধিকার দিলেও পরকালীন কঠিন শাস্তি থেকে কাউকেই রেহাই দেননি। আর আল্লাহর দেয়া শাস্তি থেকে রেহাই পাবার ক্ষমতা কারোই নেই।

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির