post

মূল্যবোধের চরম বিপর্যয়! দেশের ভবিষ্যৎ কী?

মুহাম্মদ ইয়াছিন আরাফাত

১৬ মার্চ ২০১৬
প্রতিনিয়ত পত্রিকার পাতা আর টিভির স্ক্রিনে যে খবর দেখছি তাতে অন্যসব নাগরিকের মতো আমারও দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। আশান্বিত হওয়ার মতো কোনো খবর নজরে পড়ে না। চারদিকে শুধু দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত, খুন, রাহাজানি আর নৈরাজ্যকর বিপর্যস্ত এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি। এ অবস্থায় দেশের ভবিষ্যৎ কী? কোন দিকে যাচ্ছে দেশ? এসব ভেবে পরিস্থিতির দিকে তাকালে মনের ভেতর প্রশ্ন জাগে এক অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকেই কি এগিয়ে যাচ্ছে আমার প্রিয় বাংলাদেশ? এ প্রশ্নের উত্তর হয়তো সময়ই বলে দেবে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের কিছু চিত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায় মূল্যবোধের এক চরম বিপর্যয়ের মধ্যে নিমজ্জিত দেশ। মূল্যবোধের এই বিপর্যয় যে কত ভয়াবহ তা ছোট্ট কয়েকটি পরিসংখ্যান থেকেই সহজে বোঝা যায়। এ প্রসঙ্গে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি দৈনিক প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠায় ‘মূল্যবোধের এত বিপর্যয় কেন?’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সম্প্রতি হবিগঞ্জের বাহুবলে চার শিশুকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যার আলোচিত জঘন্যতম ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই সংবাদপত্রটি এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শিশুহত্যা ও নির্যাতন এবং তাদের অধিকারের বিষয়গুলোর তথ্য সংগ্রহ করে বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম (২৬৭টি বেসরকারি সংস্থার জোট) ১০টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে করা তাদের পরিসংখ্যানে বলছে, এ বছরের জানুয়ারিতে সারা দেশে ২৯টি শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। আর গত চার বছরে দেশে হত্যা করা হয় ১ হাজার ৮৫ জন শিশুকে। প্রথম আলোর প্রতিবেদনে শিশুহত্যার এই পরিসংখ্যান তুলে ধরে বিশিষ্টজনদের উদ্ধৃতি দিয়ে এটিকে মূল্যবোধের বিপর্যয় হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ের একের পর এক শিশুহত্যার ঘটনা মিডিয়ায় আসার পর থেকে আলোচনা-সমালোচনা, বিশ্লেষণ চলছে ব্যাপকভাবে। কোমলমতি নিষ্পাপ নিরপরাধ শিশুরা কেন এভাবে আক্রমণের শিকার হচ্ছে তার পর্যালোচনায় মূল্যবোধের চরম বিপর্যয়কে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বর্ণনা করেছেন। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দৈনিক নয়া দিগন্তে ‘অবক্ষয়ের বলি অসহায় শিশুরা : উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ’ শিরোনামে মূল্যবোধের ভয়াবহ বিপর্যয়ের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমাজের সব ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়া নৈরাজ্য, অবক্ষয় এবং বিশৃঙ্খলার বলি হচ্ছে অসহায় শিশুরা। প্রতিদিন নিত্যনতুন মাত্রায় উন্মোচিত হচ্ছে সমাজের বিকৃত ভয়ঙ্কর চেহারা। সেই সাথে বেরিয়ে পড়ছে সমাজ, রাষ্ট্র এবং মানবিকতা ও মূল্যবোধের অধঃপতনের ভয়াবহ চিত্র। গাছের সাথে বেঁধে দলবেঁধে পিটিয়ে হত্যা, পুড়িয়ে হত্যা, শ্বাস রোধ করে হত্যা, হাত-পা বেঁধে পানিতে ফেলে শিশুহত্যার ঘটনা ঘটছে অহরহ দেশের আনাচে কানাচে। নিখোঁজ এবং অপহরণের কয়েক দিন পর কখনো পানিতে ভাসমান, কখনো জঙ্গলে আবার কখনো বা বালুচাপা লাশ মিলছে অসহায় শিশুদের। শুধু শিশুহত্যার মতো ঘটনার পরিমাপ করেই কি মূল্যবোধের অবস্থার মূল্যায়ন করা সম্ভব? না এটি মূল্যবোধের বিপর্যয়ের একটি চিত্র মাত্র। দেশের ভেতর যা হচ্ছে বা ঘটছে তার বিচার বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে মূল্যবোধের বিপর্যয়ের কারণও কিন্তু প্রকাশ্য। বিপর্যয়ের এ দায় রাষ্ট্রের। কারণ রাষ্ট্র মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় যেমন ব্যর্থ হয়েছে তেমনি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়ই চলছে মূল্যবোধ ধ্বংসের কার্যক্রম। রাষ্ট্র যেখানে মূল্যবোধের তোয়াক্কা করে না, সেখানে রাষ্ট্রে বসবাস করা জনগণকে দোষ দিয়ে লাভ কী! রাষ্ট্র যা করছে জনগণতো তা থেকেই শিখছে। রাষ্ট্র মূল্যবোধের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে নিরীহ জনগণের ওপর চালাচ্ছে নির্যাতনের স্টিম রোলার। ন্যূনতম মানবাধিকার থেকে জনগণ বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। জেল-জুলুম আর নির্যাতনের জাঁতাকলে পিষ্ট জনগণকে প্রতিনিয়তই বিভীষিকাময় পরিস্থিতির শিকার হতে হচ্ছে। শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে নিজ দেশে পরবাসীর মতো বসবাস করছে হাজার হাজার মানুষ। অন্যায় অপকর্ম আর মিথ্যাচারের বেসাতিতে চলছে রাষ্ট্রের পথচলা। শুধুমাত্র ভিন্নমতের হওয়ার কারণে প্রকাশ্য দিবালোকে পরিবার পরিজনের কাছ থেকে রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিবারের প্রিয় সদস্যকে ধরে নিয়ে যাওয়ার কিছুদিন বা কিছু সময় পর যদি রাষ্ট্রের পক্ষ থেকেই বলা হয়Ñ ধরে নিয়ে যাওয়া ব্যক্তিটি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে। তার কাছ থেকে গুলি, বোমা, ককটেল পাওয়া গেছে। তাহলেতো ঐ ব্যক্তির পরিবার পরিজন কিংবা তার প্রতি সহানুভূতিশীল মানুষজন রাষ্ট্রের কাছ থেকেই মিথ্যাচারের মূল্যবোধ শিখলো। রাষ্ট্রের শেখানো এই মূল্যবোধের বহিঃপ্রকাশই তো আজকের মূল্যবোধের বিপর্যয়ের মূল কারণ। মানুষ মূল্যবোধ শিখে ধর্মীয় শিক্ষা থেকে অথচ সরকার ধর্মীয় শিক্ষাকে শুধু সঙ্কুচিতই করেনি বরং সেক্যুলার শিক্ষানীতি করে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাদ দেয়ার ব্যবস্থা করেছে। অন্য দিকে ধর্মীয় আলোচনার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কোথাও কোথাও তাফসির মাহফিলে জারি করেছে ১৪৪ ধারা। সম্প্রতি আরবি সাহিত্য পরিষদের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৬ মাসে (সেপ্টেস্বর ’১৫- ফেব্রুয়ারি ’১৬) সারাদেশে ছোট বড় মিলিয়ে ১২৭৪টি তাফসিরুল কুরআন মাহফিল সরকার বিভিন্ন কায়দায় বন্ধ করে দিয়েছে। জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা, ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে মাহফিলের প্যান্ডেল। অথচ একই সময়ে সারাদেশে কোথাও কোনো কনসার্ট বা নাচ-গানের আসরে ১৪৪ ধারা জারির নজির নেই। রাষ্ট্র যখন কুরআনের তাফসির মাহফিলের ওপর এমন বিধিনিষেধ আরোপ করে তখন সমাজের তরুণ যুবারা মূল্যবোধ শিখবে কোথা থেকে? প্রতিটি জুমাবার মসজিদে মসজিদে যে খুতবা দেয়া হয় সরকার তারও নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছে। প্রতিটি মসজিদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে সরকারের বিশেষ বাহিনীকে। তালিকা করা হয়েছে ইমাম-মুয়াজ্জিন এবং মসজিদ কমিটির সদস্যদের নাম। কোথাও কোথাও খুতবায় কী আলোচনা হবে তা-ও ঠিক করে দেয়া হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। শহরের মসজিদগুলোতে বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার প্রতিটি মসজিদে নজরদারির জন্য সিসি ক্যামেরা বসানোর ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সরকারদলীয় মেয়র সাঈদ খোকন। ধর্মীয় আলোচনার ওপর যদি এত বিধিনিষেধ আরোপ করা হয় তাহলে মূল্যবোধের স্বাভাবিক চর্চার আর সুযোগ থাকে কোথায়! মানুষ সংস্কৃতি, কৃষ্টি-কালচার থেকে মূল্যবোধ শিখে। অথচ সরকার অপসংস্কৃতির সকল পথ উন্মোচিত রেখেছে। বিজাতীয় সংস্কৃতি আমদানির ব্যবস্থা করেছে। সরকার একদিকে ভারতীয় সকল চ্যানেল উন্মুক্ত করে দিয়ে পারিবারিক বন্ধন আর সামাজিক মূল্যবোধের মূলে আঘাত হেনেছে, অন্য দিকে ওপেন কনসার্টের নামে ভারতীয় নায়ক-নায়িকাদের এ দেশে অবাধে প্রবেশের সুযোগ দিয়ে মূল্যবোধকে চরম বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে গেছে। মূল্যবোধের এহেন বিপর্যয়ের ফলে দেশে একের পর এক ঘটে চলছে লোমহর্ষক অবিশ্বাস্য ঘটনা। মা খুন করছেন নাড়িছেঁড়া ধন তারই সন্তানকে, সন্তানরা খুন করছে পিতা-মাতাকে, ভাই খুন করছে তারই আপন ভাইকে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একে অন্যকে খুন করছে। সম্প্রতি রাজধানীর রামপুরায় মা কর্তৃক তার দুই শিশুসন্তানকে হত্যার অভিযোগের ঘটনা এ সবেরই প্রতিচ্ছবি মাত্র। দেশের সার্বিক চিত্র দেখলে মনে হয় আমরা যেন সেই আইয়ামে জাহিলিয়াতের যুগে ফিরে গিয়েছি, যেই যুগে মূল্যবোধের কোন বালাই ছিল না। মূলনীতিই ছিল খুনের বদলা খুন, প্রতিহিংসাই ছিল সেই যুগের মূলমন্ত্র। বর্তমানে সমাজের একটি অংশের মাঝে প্রতিহিংসা প্রবণতার এই মনোভাব তৈরি হওয়ার পেছনে রাষ্ট্রেরও দায় আছে। কারণ রাষ্ট্রইতো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার পরিবর্তে প্রতিহিংসা শেখাচ্ছে। রাজনৈতিক স্বার্থে পরমত সহিষ্ণুতাকে কবর দিয়েছে। ২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আইয়ামে জাহিলিয়াতের মূলমন্ত্র প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে ফাঁসির কথিত জিকির ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছে। যে দেশে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় তার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ঐক্যবদ্ধ করার পরিবর্তে প্রতিহিংসা শেখানো হয় সে দেশের মূল্যবোধতো সেই প্রতিহিংসার ওপরই প্রতিষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তারা জনগণের বন্ধু হওয়ার কথা ছিল। নিরাপত্তার রক্ষাকবচ হওয়ার কথা ছিল। অথচ রক্ষক না হয়ে তারা ভক্ষকের ভূমিকা পালন করছে। চাঁদা না পেয়ে প্রকাশ্যে পুড়িয়ে ফেলতেও তারা দ্বিধা করছে না জনগণকে। আইনের অপব্যবহার তারাই করছে। বিচারহীনতার মূল্যবোধ তারাই চর্চা করছে। তাইতো পুলিশের ওপর আস্থা না থাকায় জনগণই এখন আইন হাতে তুলে নিচ্ছে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় ‘আইন হাতে তুলে নিচ্ছে মানুষ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, বেশ কয়েক মাস ধরে সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গণপিটুনিতে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। জনগণ হাতে তুলে নিচ্ছে আইন। চলতি মাসে চুরি-ডাকাতির অন্তত ১০টি ঘটনায়ই আইন হাতে তুলে নিয়েছে মানুষ। গত বছরও সারা দেশে শুধু গণপিটুনিতেই নিহত হয়েছেন ১৪০ জন। এর মধ্যে ঢাকায়ই নিহত হয়েছেন ২৯ জন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ঘটনা বিশ্লেষণ করে, পুলিশ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের দেয়া তথ্য থেকে পাওয়া গেছে এমন চিত্র। সমাজবিজ্ঞানী ও অপরাধ-বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, পুলিশের ওপর আস্থা কমে যাওয়া এবং দেশে আইনের শাসন, মানবাধিকার ও নিরাপত্তাসঙ্কট এবং নৈতিকতা ও মূল্যবোধের বিপর্যয়ের কারণে মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর দৈনিক সংগ্রামে ‘পুলিশের ওপর আস্থা কমে যাওয়ায় আইন হাতে তুলে নিচ্ছে মানুষ : গণপিটুনিতে ১১ মাসে নিহত ১৩৩ জন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে ২০১৫ সালে আইন হাতে তুলে নেয়ার একটি চিত্র তুলে ধরা হয়। মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ এর উদ্ধৃতি দিয়ে ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সাড়ে ছয় বছরে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে ৯১২ জন। ২০০৯ সালে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে ১২৭ জন। ২০১০ সালে প্রাণ হারিয়েছে ১৭৪ জন। ২০১১ সালে নিহত হয়েছে ১৬১ জন। ২০১২ সালে নিহত হয়েছে ১৩২ জন। ২০১৩ সালে নিহত হয়েছে ১২৫ জন। ২০১৪ সালে ১১৬ জন। আর ২০১৫ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে ৭৭ জন। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ১২ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৭ জন, মার্চে ৮ জন, এপ্রিলে ১৫ জন, মে মাসে ১৫ জন, জুনে ১১ জন এবং জুলাইয়ে ৯ জন। দেশের জনগণের যেখানে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার কথা ছিল সেখানে প্রতিনিয়ত আইন হাতে তুলে নেয়ার কারণ একটাই হতে পারে, আর তা হলো বিচার না পাওয়া। বরং বিচারের নামে অবিচার হওয়া। অপরাধীরা ছাড়া পায় আর নিরপরাধীরা জেলখানায় যায়। এক দিকে অপরাধীরা অপরাধ করে দলীয় বিবেচনায় রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পান। অন্য দিকে বিচারপ্রার্থীরা শিকার হন পুলিশের হয়রানির। ২০০৪ সালে নাটোরের বিএনপি নেতা গামা হত্যাকারীদের ২০ জনই ফাঁসির দণ্ডাদেশ থেকে ২০১০ সালে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পান। (সূত্র : প্রথম আলো) মূল্যবোধ চর্চার গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার আদর্শিক শক্তি। আদর্শের লড়াইয়ে যারা পরাজিত তাদের মূল্যবোধ যখন গুম খুনের ওপর প্রতিষ্ঠিত, তখন গুম, খুন, নির্যাতন আর নিপীড়নই তাদের একমাত্র হাতিয়ারে পরিণত হয়। কিন্তু যখন দেখা যায় রাষ্ট্রে সরকারই আদর্শের লড়াইয়ের পরিবর্তে গুম, খুনকে দমন-নিপীড়নের হাতিয়ার হিসাবে বেছে নিচ্ছে তখন সেই সরকার পরিচালিত রাষ্ট্রে মূল্যবোধ মুখ থুবড়ে পড়বে এটাই স্বাভাবিক। শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যেই সরকার আদর্শের লড়াইয়ে না গিয়ে গুম, খুন করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। সরকার একদিকে চালাচ্ছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, অন্যদিকে সরকার দলীয়দের অপরাধমূলক কর্মকান্ডের প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত। ফলে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের পাশাপাশি সমানতালে চলছে অপরাধমূলক হত্যাকান্ড। ২০১৫ সালে মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র জানিয়েছে, ওই বছর বাংলাদেশে ১৮৩ জন ব্যক্তি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। এই সংখ্যা আগের বছরের চেয়ে ৫৫ জন বেশি। পুলিশ ওয়েবসাইটের হিসাব দেখায়, ২০১৫ সালে থানায় নথিবদ্ধ হওয়া খুনের সংখ্যা ৪ হাজার ১৫। বাস্তবে সব ঘটনা থানায় নথিবদ্ধ হয় না, সব খবর পত্রিকায়ও স্থান পায় না। তারপরও এ পরিসংখ্যান অকাট্যভাবে প্রমাণ করে, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও অপরাধমূলক হত্যা একসঙ্গেই বাড়ছে বাংলাদেশে। মূল্যবোধের এই বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে সামান্য কয়েকটি চিত্র মাত্র ওপরে তুলে ধরা হয়েছে। দেশের সামগ্রিক বিষয় আরো পর্যালোচনা করলে এর ভয়াবহ চিত্র বেরিয়ে আসবে। মূল্যবোধের চরম এ বিপর্যয়কর অবস্থা থেকে দেশ এবং দেশের মানুষকে রক্ষা করে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে মিথ্যাচার, প্রতিহিংসা আর নির্যাতন-নিপীড়নের পথ থেকে সরে এসে রাষ্ট্রকেই সবার আগে মূল্যবোধের চর্চা করতে হবে। লেখক : সম্পাদক

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির