post

শ্রমিকের শ্রম: স্মরণ নয় শুধু, সচেষ্ট হোন

২৪ এপ্রিল ২০১৪
CS-May-2014ঐতিহাসিক মে দিবস- সমগ্র বিশ্বে কোটি কোটি শ্রমজীবী মানুষের সংহতি জানানোর দিন। জীবনের তাগিদে জীবিকার ন্যূনতম দাবি আদায়ের আন্দোলনে প্রাণ দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের কয়েকজন শ্রমিক। ১৮৮৬ সালের মে মাসের সেই ঘটনা শ্রমজীবী আন্দোলনের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে। মে দিবস প্রতি বছর আসে; আবার চলে যায়। সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের ও রাজনৈতিক নেতাদের বাণী, নির্ধারিত কিছু সরকারি অনুষ্ঠান, শ্রমিক সংগঠনগুলোর সমাবেশ-মিছিল, পত্রিকায় এক পৃষ্ঠার ক্রোড়পত্র প্রভৃতির মধ্য দিয়ে দিনটি অতিবাহিত হয়। এর সাথে সবাই ভোগ করেন এক দিনের ছুটি। কিন্তু বছরের পর বছর এই গতানুগতিকতা মে দিবসের লক্ষ্য অর্জনে তেমন সহায়ক হচ্ছে না। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও সুচিকিৎসার মৌলিক প্রয়োজন পূরণের স্বার্থে উপযুক্ত কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা মানুষের মৌলিক অধিকারের অন্তর্ভুক্ত। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় দরিদ্র বা নিম্নবিত্ত মেহনতি মানুষ, তথা শ্রমিক শ্রেণীর কথা। তাদের ওপর নির্যাতন, শোষণ, বৈষম্যের পরিপ্রেক্ষিতে মে দিবস জন্ম নিয়েছিল। আজ থেকে শতাধিক বর্ষ আগের পৃথিবী অনেক বদলে গেলেও শ্রমিকদের দুর্দশা ও বঞ্চনা অনেকাংশেই রয়ে গেছে। অথচ তারা আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি সংগঠিত। আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থা এবং বিভিন্ন দেশের গণতান্ত্রিক সংবিধান ও আইনকানুনের সুবাদে শ্রমজীবীদের অধিকার আগের চেয়ে বেশি সুরক্ষিত। অপর দিকে শ্রমশোষণের নতুন নতুুন পথ তৈরি হয়েছে। দায়ে পড়ে পুঁজিবাদ নিজের চেহারা বদলিয়ে হলেও শোষণমূলক চরিত্র বজায় রেখেছে। দেশে দেশে প্রাকৃতিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক দুর্যোগের বড় শিকার হচ্ছে শ্রমিক শ্রেণীসহ নিম্নবিত্ত জনগোষ্ঠী। যুক্তরাষ্ট্রে যে মহামন্দা চলছে, বিশ্বব্যাপী তার প্রভাব পড়ছে। এতে লাখ লাখ শ্রমজীবী বেকার হয়ে পড়েছেন। আরো বহু লোকের কাজ হারানোর শঙ্কা জেগেছে। এ অবস্থায় মে দিবস নতুন প্রাসঙ্গিকতা অর্জন করেছে। আজ শপথ নিতে হবে শ্রমজীবীসহ সব মানুষের ন্যায্য অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার। সবাইকে উপলব্ধি করতে হবে জাতীয় উন্নয়নের পূর্বশর্ত শ্রমিক-মালিক সুস¤পর্ক। ১১ মে ঐতিহাসিক কুরআন দিবস। ১৯৮৫ সালের এই দিনে চাঁপাইনবাবগঞ্জে কুরআনের মিছিলে শাহাদত বরণ করেন ছাত্রশিবিরের ৫ জন নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষও। ভারতের হাইকোর্টে কুরআনকে অবমাননা করে একটি মামলা করা হয়। কিন্তু কুরআনপ্রেমী মানুষ বাতিলের এই অন্যায়কে মাথা পেতে নেয়নি। সারাবিশ্বের মুসলমানরা প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। বাংলাদেশের কুরআনপাগল তৌহিদী জনতা ভারতের এই জঘন্য অপতৎপরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। ফলশ্রæতিতে এদেশীয় কুরআনের দুশমনের হাতে সেদিন জীবন দিতে হয়েছিল কিশোরসহ শ্রমিক ভাইদেরও। কুরআনের বিরুদ্ধে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র এখনও থেমে নেই। কিন্তু প্রকৃত মুসলমান এর বিরুদ্ধে বরাবরের ন্যায় সোচ্চার ভ‚মিকা রাখছেন এবং কেয়ামত পর্যন্ত রেখে যাবেন। দেশের সার্বিক পরিস্থিতিও আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে। পদে পদে লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবতা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি পূর্বের যেকোনো সময়ের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সমস্যা তীব্রতর হচ্ছে। সেদিকে সরকারের সুদৃষ্টি খুব একটা লক্ষ্যণীয় নয়। বরং বিরোধী দল ও মতকে শায়েস্তা করতে বেশ তৎপর তারা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ হারিয়ে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। সরকারি দলের ছাত্র নামধারী গুণ্ডাদের হাতে প্রতিনিয়ত ঘটেই চলেছে অনৈতিক যত কার্মকাণ্ড। প্রতিপক্ষের ছাত্ররা অত্যাচার ও হত্যার শিকার হচ্ছে। এ থেকে রেহাই পাচ্ছে না নিজ দলের কর্মীরাও। সম্মানীয় শিক্ষকরা হচ্ছেন লাঞ্ছিত, শ্লীলতাহানী ঘটছে ছাত্রী বোনদের। চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি তো আছেই। গোটা দেশের জনগণের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে তাদের এহেন বিশৃঙ্খল কর্মকাণ্ড বন্ধে সরকারের আশূ পদক্ষেপের। মানুষের মাঝে নৈতিকতার আজ খুব বেশি অভাব। মূলত সমাজের যাবতীয় অসঙ্গতির মূলে এই একটিমাত্র বিষয়ের অনুপস্থিতি এখন স্বীকৃত। তাই প্রয়োজন একদল লোক- যারা হবেন যাবতীয় সৎগুণে গুণান্বিত, দেশ ও দেশের জনগণের ভাগ্যে যারা নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দিতে এতটুকু কুণ্ঠিত হবেন না। সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক তেমনি একদল মানুষের অপেক্ষায় জাতি আজ অধীর আগ্রহে প্রহর গুনছে। আর আমরা জানি বরং একান্তভাবেই বিশ্বাস করতে চাই, আগামী দিনের অযুত সম্ভাবনার একটি সোনালি বাংলাদেশ গড়তে ছাত্রসমাজের নেতৃত্বদানকারী সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির কাজ করে যাচ্ছে। কাফেলার যাত্রা উত্তরোত্তর সামনে এগিয়ে যাক এবং সকল বাঁধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে কাক্সিক্ষত মঞ্জিলে পৌঁছে যাকÑ আজকের দিনে সেটাই আমরা একান্তভাবে কামনা করছি।

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির