post

সংগ্রাম

মো. মঞ্জুরুল ইসলাম

০১ জুন ২০২২

মহান আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন বিধান, নিয়ম বা করণীয়। নবী-রাসূলগণ সেই নির্ধারিত বিধিবিধান অনুযায়ী প্রত্যেকের জীবন পরিচালনা করার জন্য সার্বক্ষণিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলেন। মানুষের জবাবদিহিতার অনুভূতি জাগ্রত ও সত্য উপলব্ধির প্রচেষ্টায় ছিলেন সব সময় ব্যতিব্যস্ত। রবের একটি সাধারণ ঘোষণা,لِيَعْبُدُونِ .وَمَا خَلَقْتُ ٱلْجِنَّ وَٱلْإِنسَ إِلَّا ‘আমি জিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি আমার ইবাদতের জন্য।” (সূরা আল জারিয়াত : ৫৬) এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে আবদ এবং মাবুদের মাঝে। কাজেই বান্দা ইচ্ছায় ও অনিচ্ছায় রবের দাসত্ব করবে এটাই মহান আল্লাহ তায়ালার চাওয়া। যদি সে তার রবের চাওয়ার বিপরীত পথে চলে তবে সে গণ্য হবে সীমালংঘনকারী, জুলুমকারী ও হেদায়াত থেকে দূরে অবস্থানকারী হিসেবে এবং নিজের পক্ষে কোন দলিল উপস্থাপন করতে পারবে না। কারণ আল্লাহ তায়ালা আগে থেকে তিনি যে সকলের রব সেটার স্বীকারোক্তি নিয়ে রেখেছেন। পবিত্র কুরআনের ভাষায়, أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْۖ قَالُوا۟ بَلَىٰۛ شَهِدْنَآۛ أَن تَقُولُوا۟ يَوْمَ ٱلْقِيَٰمَةِ إِنَّا كُنَّا عَنْ هَٰذَا غَٰفِلِينَ. “আমি কি তোমাদের রব নই, তারা সমস্বরে উত্তর দিল হ্যাঁ, আমরা সাক্ষী থাকলাম। যাতে তোমরা কিয়ামত দিবসে বলতে না পারো আমরা এ বিষয়ে সম্পূর্ণ অনবহিত ছিলাম।” (সূরা আল আরাফ : ১৭২) কাজেই রবের নির্দেশ মত সকলের চলা এবং যে কাজ তিনি পছন্দ করেন না সে সকল কাজ থেকে বিরত থাকা বাঞ্ছনীয়। অপছন্দনীয় বা ঘৃণিত কাজের পাশাপাশি এটাও জানা অতীব জরুরি যে, আল্লাহ তায়ালা কোন কাজকে ভালোবাসেন বা পছন্দ করেন। এ কথা আমরা সকলে জানি যে, মহান আল্লাহ নির্ধারিত সকল বিধিবিধান মেনে চলার মাধ্যমে তার প্রিয়ভাজন হওয়া যায়। তারপরেও এমন কিছু কাজ রয়েছে, যেগুলো আল্লাহর কাছে পছন্দনীয়। কুরআনের ভাষায়,الَّذِينَ يُنْفِقُونَ فِي السَّرَّاءِ وَالضَّرَّاءِ وَالْكَاظِمِينَ الْغَيْظَ وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ ۗ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِين “যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় ব্যয় করে, ক্রোধ সংবরণ করে ও লোকদের ক্ষমা করে, আল্লাহ মুহসিনদের ভালোবাসেন।” (সূরা আলে ইমরান : ১৩৪) আবার “পবিত্রতা অর্জনকারী ও তাওবাকারীদেরকে আল্লাহ ভালোবাসেন।” (সূরা আল বাকারা : ২২২) কুরআন ও হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনার মাধ্যমে একথা জানা যায় যে, আল্লাহর আদেশ ও নির্দেশের মধ্যে তাঁর নিকট তুলনামূলক বেশি পছন্দনীয় অনেক কাজই রয়েছে। যা পালন করলে আল্লাহর ভালোবাসার পাত্র হওয়া যায়। তবে কেন যেন মুসলিম উম্মাহ একটি কাজকে অনেক ক্ষেত্রেই উপেক্ষা করে চলেছে। কিন্তু সেই উপেক্ষিত কাজ আল্লাহর কাছে সবচেয়ে পছন্দের। যার মাঝে মুক্তি নিহিত রয়েছে। রয়েছে সুসংবাদ। এ জন্যেই রাসূল (সা.) এর ওপর অহি অবতীর্ণ হওয়ার পর যারা প্রথম এই কাজটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে করেছেন তাঁরা হলেন রাসূল (সা.) এর সাহাবীরা। মহান আল্লাহ তায়ালার পছন্দের সেই মহত্ত্বপূর্ণ ও মানবতার মুক্তি নিহিত কাজটি হলো জিহাদ। আল্লাহর পথে জিহাদ। ইসলামী পরিভাষায়, জিহাদ হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য বাতিলের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো। যেমন হাদিসে এসেছে, সর্বোত্তম জিহাদ হচ্ছে, জালিম শাসকের সামনে হক কথা বলা। রাসূল (সা.) এর সাহাবীরা সেই কাজটি করার মাধ্যমে মহান আল্লাহ তায়ালার নিকটে হয়েছেন সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত। কুরআনের ভাষায়, رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ ۚ ذَٰلِكَ لِمَنْ خَشِيَ رَبَّهُ“আল্লাহ তাদের ওপর সন্তুষ্ট, তারাও আল্লাহ তায়ালার ওপর সন্তুষ্ট।” (সূরা আল বায়্যিনাহ : ৮) হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, “সর্বোত্তম সৃষ্ট জীবকে এ সংবাদ কী আমি দিবো না? সাহাবীগণ বললেন হে রাসূলুল্লাহ অবশ্যই আপনি আমাদের সেই খবর দিন। রাসূল (সা.) বললেন, আল্লাহর সৃষ্ট মানুষের মধ্যে ঐ মানুষ সবচেয়ে উত্তম যে, জিহাদের ডাক শুনার জন্য ঘোড়ার লাগাম ধরে থাকে এবং ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় শত্রু দলে প্রবেশ করে বীরত্বের পরিচয় দেয়। আমি কি তোমাদের সর্বোত্তম সৃষ্টির সংবাদ দিব? সাহাবীগণ বললেন, অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল। তিনি বললেন, যে ব্যক্তি নিজের বকরির পালের মধ্যে অবস্থান করা সত্ত্বেও সালাত আদায় করে এবং যাকাত প্রদান করে। এবার আমি কি তোমাদের এক নিকৃষ্ট সৃষ্টির সংবাদ দিব? সে হলো ঐ ব্যক্তি যার কাছে কোন অভাবগ্রস্ত আল্লাহর নামে কোন কিছু চাওয়ার পর কিছু না দিয়ে ফিরিয়ে দেয়।” (মুসনাদে আহমদ, ইবনে কাসিরের বর্ণনা, সূরা বায়্যিনাহ) বান্দা হিসেবে আল্লাহর নিকট উত্তম হতে চাইলে, আল্লাহর পথে জিহাদ ব্যতীত অন্য কোন সহজ পথ নেই। হয়ত সকলের নিকট এই সহজ পথ, পছন্দের নাও হতে পারে। মানুষের দৃষ্টি সাময়িক ও অস্থায়ী কল্যাণের দিকে নিবিষ্ট আর এই কারণে মানুষ শুধু সাময়িক কল্যাণ খোঁজে, সাময়িকভাবে কল্যাণকর মনে হলেও যে তাতে ক্ষতি থাকতে পারে, এ ব্যাপারে মানুষ খুব বেশি চিন্তাশীল নয়। পবিত্র কুরআনের ভাষায়,كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ وَهُوَ كُرْهٌ لَكُمْ ۖ وَعَسَىٰ أَنْ تَكْرَهُوا شَيْئًا وَهُوَ خَيْرٌ لَكُمْ ۖ وَعَسَىٰ أَنْ تُحِبُّوا شَيْئًا وَهُوَ شَرٌّ لَكُمْ ۗ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ “তোমাদের জন্য জিহাদকে আবশ্যকীয় করা হয়েছে এবং এটি তোমাদের কাছে অপছন্দনীয়। এমনও হতে পারে কোন জিনিস তোমাদের নিকট অপছন্দের কিন্তু তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আবার হতে পারে কোন জিনিস তোমরা পছন্দ করো অথচ তা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর। আল্লাহ জানেন তোমরা জানো না।” (সূরা আল বাকারা : ২১৬) অপছন্দের ও কঠিন কাজ বলে জিহাদ থেকে পালিয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। জিহাদের ময়দান থেকে পালিয়ে যাওয়া সবচেয়ে বড় গুনাহ। কৌশল বা হিকমাতের নামে দুনিয়াবি স্বার্থ অর্জন বা নিজের মতকে গুরুত্ব দিয়ে, কঠিন পরিস্থিতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়াও অপরাধ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, .يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا لَقِيتُمُ الَّذِينَ كَفَرُوا زَحْفًا فَلَا تُوَلُّوهُمُ الْأَدْبَارَ وَمَنْ يُوَلِّهِمْ يَوْمَئِذٍ دُبُرَهُ إِلَّا مُتَحَرِّفًا لِقِتَالٍ أَوْ مُتَحَيِّزًا إِلَىٰ فِئَةٍ فَقَدْ بَاءَ بِغَضَبٍ مِنَ اللَّهِ وَمَأْوَاهُ جَهَنَّمُ ۖ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ “হে ঈমানদারগণ তোমরা যখন একটি সেনাবাহিনীর আকারে কাফেরদের মুখোমুখি হও তখন তাদের মোকাবেলায় পৃষ্ঠদেশ প্রদর্শন করো না। যে ব্যক্তি এ অবস্থা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে সে আল্লাহর ক্রোধে ঘেরাও হয়ে যাবে। তার আবাস হবে জাহান্নামে এবং ফিরে যাওয়ার জন্য তা বড়ই খারাপ জায়গা। তবে হ্যাঁ, যুদ্ধের কৌশল হিসেবে এমনটি করে থাকলে অথবা অন্য কোন সেনাদলের সাথে যোগ দেয়ার জন্য করে থাকলে তা ভিন্ন কথা।” (সূরা আনফাল : ১৫-১৬) কৌশল হিসেবে জিহাদের ময়দান থেকে পিছনে ফেরা জায়েজ হলেও ব্যক্তি নিজে কোন কৌশল অবলম্বন করতে পারবে না যদি না তাকে সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। কাপুরুষোচিত কাজ বলেই যে একে এতবড় গুনাহ বলা হয়েছে বিষয়টা তা নয়। বরং এর কারণে একজনের ছুটাছুটি, দৌড়াদৌড়ি এবং ছত্রভঙ্গ হয়ে বেরিয়ে যাওয়া অনেক সময় পুরো একটি বাহিনীকে ভীতসন্ত্রস্ত ও দিশেহারা করে দেয় এবং পালাতে উদ্বুদ্ধ করে। “হযরত আবু সাইদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জিজ্ঞাসা করা হলো হে রাসূল (সা.) মানুষের মাঝে উত্তম কে? রাসূল (সা.) বললেন, সেই মুমিন যে নিজ জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে। সাহাবীগণ বললেন, অতঃপর কে? তিনি বললেন, সেই মুমিন আল্লাহর ভয়ে যে পাহাড়ের কোন গুহায় আশ্রয় নেয় এবং স্বীয় অনিষ্ট থেকে লোকদের নিরাপদে রাখে।” (বুখারি ও মুসলিম, কিতাবুল জিহাদ : ২৭৮৬) উত্তম বান্দায় পরিণত হতে হলে একজন মুমিনকে জিহাদ ফি-সাবিলিল্লাহ্র সঠিক পথ অবলম্বন করা উচিত। কৌশল করে জিহাদ পরিত্যাগ করা উচিত নয়, বরং পরিকল্পিতভাবে জীবনের সকল সময় এ কাজের জন্য নির্ধারণ করা। কারণ মুমিনের জীবনের সর্বোত্তম সময় যদি নির্ধারণ করা হয় তাহলে তা হবে জিহাদের জন্য ব্যয় করা সময়ই। হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা) হতে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, “আল্লাহর রাস্তায় একটি সকাল অথবা একটি বিকাল অতিবাহিত করা দুনিয়া ও তার মাঝে যা আছে তার থেকেও উত্তম।” (বুখারি ও মুসলিম, জিহাদ অধ্যায়: ২৭৯২) রাসূল (সা.) এর কাছে সাহাবিরা জানতে চেয়েছিলেন হে আল্লাহর রাসূল (সা) “কোন আমল আল্লাহ তায়ালার নিকট সবচেয়ে প্রিয়? যদি জানতাম আমরা সেই কাজ করতাম।” (ইবনে কাসির: সূরা আসসফ এর ৪ নং আয়াতের তাফসির) তারা জেনেছিলেন আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় কাজ হলো জিহাদ। আল-কুরআনের বর্ণনা,إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلَّذِينَ يُقَٰتِلُونَ فِى سَبِيلِهِۦ صَفًّا كَأَنَّهُم بُنْيَٰنٌ مَّرْصُوصٌ “যারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে সারিবদ্ধভাবে সুদৃঢ় প্রাচীরের মত, আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন।” (সূরা আস সফ: ৪) সুশৃঙ্খলভাবে জিহাদের ময়দানে টিকে থাকার মাধ্যমে আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়া যায়। বিশৃঙ্খলা বা জিহাদের শর্ত ভঙ্গ করে অন্যায় পথ অবলম্বন করলে, সেটা জিহাদ বলে পরিগণিত হয় না, বরং সীমালংঘনকারী হতে হয়। যে সকল মুজাহিদগণ জিহাদ ফি-সাবিলিল্লাহর কাজে নিয়োজিত আমরা তাদেরকে নির্দ্বিধায় সেনাদল বলতে পারি, তাঁরা আল্লাহর সৈনিক। সেই সুশৃঙ্খল সেনাদলকে ৩টি গুণের অধিকারী হতে হয়। এক. তারা বুঝে শুনে ভালোভাবে চিন্তাভাবনা করে আল্লাহর পথে লড়াই করবে এবং এমন কোন পথে লড়াই করবে না যা ফি সাবিলিল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর পথের সংজ্ঞায় পড়ে না। দুই. তারা বিচ্ছিন্নতা ও শৃঙ্খলাহীনতার শিকার হবে না, বরং মজবুত সংগঠনে সুসংহত অবস্থায় কাতারবন্দী বা সুশৃঙ্খল হয়ে লড়াই করবে। তিন. শত্রুর বিরুদ্ধে তার অবস্থান হবে সুদৃঢ় দেয়ালের মত।” (তাফহীমুল কুরআন- সূরা আস সফ: ৪ নং আয়াতের তাফসির) ভালোবাসা পাওয়ার জন্য প্রয়োজন রবের সঠিক পথ চেনা। সুশৃঙ্খল, মজবুত ও সংগঠিত হওয়া এবং সেই সংগঠিত দেয়াল হবে সীসাঢালা প্রাচীরের মত দুর্ভেদ্য। কুরআনের ভাষায়,يَٰأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلَىٰ تِجَٰرَةٍ تُنجِيكُم مِّنْ عَذَابٍ أَلِيم. تُؤْمِنُونَ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَتُجَٰهِدُونَ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ بِأَمْوَٰلِكُمْ وَأَنفُسِكُمْۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُون. يَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَيُدْخِلْكُمْ جَنَّتٍ تَجْرِى مِن تَحْتِهَا ٱلْأَنْهَٰرُ وَمَسَٰكِنَ طَيِّبَةً فِى جَنَّتِ عَدْنٍۚ ذَٰلِكَ ٱلْفَوْزُٱلْعَظِيمُ. “হে মুমিনগণ, আমি কি তোমাদের এমন একটি ব্যবসার সন্ধান দিবো? যা তোমাদেরকে কঠিন আজাব থেকে মুক্তি দিবে। তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি ঈমান আনো এবং আল্লাহর পথে জান-মাল দিয়ে জিহাদ করো। এটা তোমাদের জন্য অতীব কল্যাণকর যদি তোমরা তা জানো। আল্লাহ তোমাদের গুনাহ মাফ করে দিবেন এবং তোমাদের এমন এক বাগানে প্রবেশ করাবেন যার নিচ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত। আর চিরস্থায়ী বসবাসের জায়গা জান্নাতের মধ্যে তোমাদের সর্বোত্তম ঘর দান করবেন। এটাই বড় সফলতা।” (সূরা আস-সফ : ১০, ১১, ১২) মুমিন তার জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে এবং চিন্তা চেতনায় তাগুতের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে। শয়তানি সমাজব্যবস্থা ও সংস্কৃতির সাথে মুমিনের সংঘাত আবশ্যকীয়। এতে মুমিন হতাশ হয় না বা পিছনে ফিরে আসে না। সর্ব ত্যাগের নজরানা শাহাদাতকে আলিঙ্গন করে। কোন নবী রাসূল যেহেতু বাতিলের সাথে আপস করেননি, মুমিনও আপস করতে পারে না। নির্যাতনের বীভৎস চিত্র সামনে দেখেও পিছপা হয় না, শুধুমাত্র রবের নিকট থেকে উত্তম প্রতিদান পাওয়ার জন্য। হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, “আল্লাহর কোন বান্দা যদি এমতাবস্থায় মারা যায় যে, আল্লাহর কাছে তার সাওয়ার রয়েছে, তাকে দুনিয়ার সব কিছু দিলেও সে দুনিয়ায় ফিরে আসতে আগ্রহী হবে না। একমাত্র শহীদ ব্যতীত। যে শাহাদাতের ফজিলত দেখার কারণে আবার দুনিয়ায় ফিরে এসে আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হবার প্রতি আগ্রহী হবে।” (বুখারি ও মুসলিম, বুখারি জিহাদ : ২৭৯৫) “আল্লাহর পথে বান্দা যখন ধুলায় পা মলিন করে তখন তার জন্য জাহান্নাম হারাম হয়ে যায়।” (বুখারি) “কিয়ামতে শহীদগণ তাজা রক্ত মাখা মিশকের সুগন্ধিসহ উঠবেন।” (বুখারি) এ জন্যই তো যারা জিহাদের সঠিক মর্মকে উপলব্ধি করেছেন, কেবল তারাই জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েও জালিম বা বাতিলের নিকট আপস করেননি। বরং কঠিনতম পথকে গ্রহণ করেছেন, তবুও নতজানু হননি। জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ্র পথে নবীগণ নির্যাতিত হয়েছেন, শহীদ হয়েছেন কিন্তু মহান রবের সঠিক পথের সংগ্রাম থেকে পিছু হটে আসেননি। মহানবী (সা.) কোন এক যুদ্ধে তার একটি আঙ্গুলে আঘাত পান এবং রক্তাক্ত হোন। সেই আঙ্গুলকে উদ্দেশ্য করে তখন নবী (সা.) বলেছিলেন, “তুমি একটি আঙ্গুল ছাড়া কিছু নও, তুমি রক্তাক্ত হয়েছ আল্লাহর পথে।” (বুখারি ও মুসলিম, বুখারি জিহাদ : ২৮০২) আল্লাহর পথে যারা সংগ্রামরত তাদের কোনো ব্যর্থতা নেই, সে অবশ্যই আল্লাহর কাছে প্রতিদান পাবে। মহাগ্রন্থ আল কুরআনের ভাষায়, فَلْيُقَٰتِلْ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِٱلَّذِينَ يَشْرُونَ ٱلْحَيَوٰةَٱلدُّنْيَا بِٱلْءَاخِرَةِۚ وَمَن يُقَٰتِلْ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ فَيُقْتَلْ أَوْ يَغْلِبْ فَسَوْفَ نُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًا. “আল্লাহর পথে তাদের লড়াই করা উচিত যারা আখিরাতের বিনিময়ে দুনিয়ার জীবন বিলিয়ে দেয়। তারপর যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে লড়ে এবং মারা যাবে অথবা বিজয়ী হবে তাকে নিশ্চয়ই আমি মহা পুরস্কার দান করব।” (সূরা আন-নিসা : ৭৪) দুনিয়াবাসীকে জালিমের হাত থেকে রক্ষার জন্য জিহাদ ফি-সাবিলিল্লাহের কাজকে সর্বপ্রথম গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা দরকার। আমরা যদি মুক্তির এই সংগ্রাম থেকে বিরত থাকি তাহলে আমাদের ওপর চেপে বসবে অন্যশক্তি, সভ্যতা ও সংস্কৃতি। কিন্তু জিহাদ বলবৎ থাকবে কিয়ামত পর্যন্ত। ইমরান ইবনে হুসাইন (রা) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, “আমার উম্মাতের মধ্যে সর্বদা একটি দল সত্যের ওপর অটল-অবিচল থেকে শত্রুর মোকাবিলায় সংগ্রাম করতে থাকবে এবং তাদের বিরুদ্ধবাদীদের ওপর বিজয়ী হবে। এমনিভাবে উম্মাতের শেষ দল মাসীহ দাজ্জালের (সত্য-মিথ্যার আন্দোলনে) সাথেও লড়াই-সংগ্রাম করতে থাকবে।” (আবু দাউদ) (সহীহ : আবু দাউদ ২৪৮৪, মুসনাদ আহমাদ ১৯৮৫১)। জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা) বলেছেন, “নিশ্চয় এ দ্বীন (ইসলামী জীবনবিধান) সর্বদা সুপ্রতিষ্ঠিত থাকবে এবং একদল মুসলিম কিয়ামত দিবস পর্যন্ত এই দ্বীনের জন্য সংগ্রাম করতে থাকবে।” (সহীহ মুসলিম ১৯২২) কেউ যদি এই সংগ্রামে অংশগ্রহণ না করে বা কোন জাতি সামগ্রিকভাবে এটাকে অস্বীকার করে এতে আল্লাহ তাআলার কোন ক্ষতি নেই বরং যারা বিরত থাকবে তাদের স্থলে অবশ্যই অন্য কোন নতুন দলকে দিয়ে আল্লাহ তাঁর দ্বীনের খেদমত করিয়ে নিবেন। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, إِلَّا تَنفِرُوا۟ يُعَذِّبْكُمْ عَذَابًا أَلِيمًا وَيَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ وَلَا تَضُرُّوهُ شَيْـًٔاۗ وَٱللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ. “যদি তোমরা বের না হও তাহলে আল্লাহ তোমাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দিবেন এবং তোমাদের জায়গায় আরেকটি দলকে উঠাবেন আর তোমরা আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবে না। তিনি সকল জিনিসের উপর শক্তিশালী।” (সূরা আত-তাওবাহ : ৩৯) জিহাদ ফি-সাবিলিল্লাহ্র কাজ বর্তমান সময়েও সকল মুমিনের জন্য ফরজ। আর সেই ফরজ জিহাদকে অন্যান্য ফরজের চেয়ে সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিয়ে যদি পালন করা যায়, তাহলে দ্বীনের বিজয় অবশ্যম্ভাবী। সেই সাথে জিহাদের সঠিক ব্যাখ্যা ও বুঝ সকলের নিকট তুলে ধরাও কম গুরুত্বের কাজ নয়। কারণ কিছু মহল জিহাদকে কিতালের সাথে মিশ্রিত করে বিশ্বব্যাপী যে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করেছে তা পৃথিবীর সকল মুমিনগণ না বুঝতে পারলেও, সচেতন ও জ্ঞানবান মুমিনগণের ঠিকই সঠিক বুঝ জাগ্রত রয়েছে। জিহাদ আর কিতালের মাঝে অনেক পার্থক্য রয়েছে যদিও সমার্থক অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। জিহাদ শান্তি ও যুদ্ধ উভয় অর্থে ব্যবহৃত হয় আর কিতাল শুধু যুদ্ধ অর্থে ব্যবহৃত হয়। জিহাদের চূড়ান্ত রূপ হলো কিতাল। এই কিতাল রাষ্ট্রব্যবস্থার সাথে সম্পৃক্ত। কোন ব্যক্তি নিজে কিতালের আহবান করতে পারবে না। বিভ্রান্তিকর বক্তব্য, চিন্তা ও কর্মের ক্ষেত্র হলো উগ্রবাদ যা ইসলাম কখনো অনুমতি দেয় না। জিহাদের মত এই মহান মুক্তির বিধানের কথা যখন লেখনী, বক্তব্য ও পত্রপত্রিকাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় তখন সঠিক উপলব্ধির প্রসার ঘটে। কিন্তু যদি নিজেই নিজের বক্তব্যের বিধান মেনে চলার ক্ষেত্রে কেউ উদাসীন হয়, তখন সে অপছন্দনীয় ব্যক্তিতে পরিণত হয় এবং সে একজন ঘৃণ্য অপরাধী বলে বিবেচিত হয়। এ কথা বুঝা যায় কুরআনের দিকে গভীরভাবে নজর দিলে। কুরআনের ভাষায়, يَٰأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لِمَ تَقُولُونَ مَا لَا تَفْعَلُون. كَبُرَ مَقْتًا عِندَ ٱللَّهِ أَن تَقُولُوا۟ مَا لَا تَفْعَلُونَ. “হে ঈমানদারগণ তোমরা যা কর না, তা কেন বলো? তোমরা যা কর না তা বলা আল্লাহর দৃষ্টিতে অতিশয় অসন্তোষজনক।” (সূরা আস সফ : ২-৩) রাসূল (সা.) এর সময় জিহাদ ফরজ হওয়ার কিছু আগে, মানুষেরা জিহাদের মত সর্বোত্তম বিধান কেন ফরজ হচ্ছে না সে বিষয়ে প্রশ্ন করতেন কিন্তু যখন জিহাদ ফরজ হয়ে গেলো তখন কেউ কেউ এ ব্যাপারে গড়িমসি শুরু করে দিল। কুরআনের ভাষায়, وَقَالُوا۟ رَبَّنَا لِمَ كَتَبْتَ عَلَيْنَا ٱلْقِتَالَ لَوْلَآ أَخَّرْتَنَآ إِلَىٰٓ أَجَلٍ قَرِيبٍۗ “তখন তারা বলেছিল, হে আমাদের রব কেন এখন জিহাদ ফরজ করেছো, যদি আরো কিছুকাল আমাদেরকে সময় দিতে।” (সূরা আস নিসা : ৭৭) বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের এ চরম দুরবস্থার অন্যতম কারণ জাতির অধিকাংশ আলেমশ্রেণী বা দায়ী খ্যাত ব্যক্তিবর্গের কথা ও কাজের গরমিল। আমানতদারিতার অভাব, আদর্শের বিপরীত শক্তির প্ররোচনায় বা অন্য কোন মাধ্যমে প্রভাবিত এবং অনেক ক্ষেত্রে আলেমসমাজের তোষামোদি আচরণ, যা রাসূল (সা.) এর সময়ের কিছু জ্ঞানী মুনাফিক শ্রেণীর আলেমের আচরণের মত। তোষামোদি আলেমরা, সাধারণ মানুষদের সত্য গোপন করে মিথ্যা ও অন্যায়ের পথ প্রদর্শন করতেন। খুবই অল্পের বিনিময়ে বিক্রি হয়ে যেতেন। বর্তমান সময়ের সমাজব্যবস্থার দিকে যদি একটু ভালোভাবে দৃষ্টি দেয়া যায় তবে তা সহজেই উপলব্ধি করা যায়। আল-কুরাআনের ভাষ্যমতে, وَءَامِنُوا۟ بِمَآ أَنزَلْتُ مُصَدِّقًا لِّمَا مَعَكُمْ وَلَا تَكُونُوٓا۟ أَوَّلَ كَافِرٍۭ بِهِۦۖ وَلَا تَشْتَرُوا۟ بِـَٔايَٰتِى ثَمَنًا قَلِيلًا وَإِيَّىَ فَٱتَّقُونِ. وَلَا تَلْبِسُوا۟ ٱلْحَقَّ بِٱلْبَٰطِلِ وَتَكْتُمُوا۟ ٱلْحَقَّ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ. “আর তোমাদের সাথে যা আছে তার সত্যায়নকারীস্বরূপ আমি যা নাযিল করেছি তার প্রতি তোমরা ঈমান আন এবং তোমরা তা প্রথম অস্বীকারকারী হয়ো না এবং আমার আয়াতের পরিবর্তে সামান্য মূল্য গ্রহণ করো না এবং তোমরা আমাকে ভয় করো এবং তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে শুনে সত্য গোপন করো না।” (সূরা আল-বাকারা : ৪১-৪২ ) এ কথাই সকলের অন্তকরণে বদ্ধমূল হওয়া উচিত দুনিয়াতে সত্যের কোনো বিনিময় হতে পারে না। অল্প বা সামান্য বিনিময়ে একটি জাতিকে মিথ্যা অন্ধকারাচ্ছন্ন পথে কেউ নিয়ে যেতে পারে না। যদি সিরাতে নবী (সা.) দেখি তাহলে একথা পরিষ্কার যে তিনি ছিলেন আদর্শের বাস্তব প্রতিচ্ছবি। আর যদি হাদিস বা সুন্নাতে রাসূল (সা.)কে খুঁজি তাহলে যেটা খুব সহজেই বুঝা যায় তাহল তিনি ছিলেন কুরআনের বাস্তব ও জীবন্ত মডেল। তিনি এমন কোন কথা বলতেন না যা তিনি করতেন না। হযরত আয়শা (রা.)কে রাসূল (সা.) এর আখলাক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘তুমি কি কুরআন পাঠ কর না? আল্লাহর নবী (সা.)এর চরিত্র তো ছিল আল কুরআনই।’ (সহিহ মুসলিম : ১৬২৪) আমাদের কথা ও কাজের মধ্যে মিল হওয়া বাঞ্ছনীয় যদিও তা কষ্টসাধ্য বিষয়। আল কুরআনের ভাষায়, أَتَأْمُرُونٱلنَّاسَ بِٱلْبِرِّ وَتَنسَوْنَ أَنفُسَكُمْ وَأَنتُمْ تَتْلُونَ ٱلْكِتَٰبَۚ أَفَلَا تَعْقِلُونَ “তোমরা সত্য কাজের আদেশ করছো অথচ তোমরা নিজেদের ব্যাপারে ভুলে যাচ্ছ। অথচ তোমরা কিতাব পাঠ করছো। তাহলে কী তোমরা হৃদয়ঙ্গম করছো না?” (সূরা আল-বাকারা : ৪৪) ভালো কাজের নির্দেশ প্রদানের জন্য আহলে কিতাবদের তিরস্কার করা হয়নি বরং নিজেরা পালন না করার জন্য তিরস্কার করা হয়েছে। (ইবনে কাছির, সূরা আল বাকারার ৪৪ নং আয়াতের তাফসির) বর্তমান সময়ে মানুষদের ভালো নির্দেশনা প্রদান বা নসিহত করা যেন পেশায় পরিণত হয়েছে যার কারণে চারিদিকে অসুস্থ প্রতিযোগিতা দেখা যাচ্ছে এবং নির্দেশনা বা উপদেশ যেন শুধু অন্যর জন্যই নিজের জন্য নয়, এমনটা পরিলক্ষিত হচ্ছে প্রায় সর্বমহলে। হাদিসে এসেছে হযরত আনাস (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, “মিরাজের রাতে আমি বহু লোককে দেখেছি যে, তাদের ঠোঁট আগুনের কাঁচি দ্বারা কাটা হচ্ছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এরা কারা? তখন আমাকে বলা হলো, এরা আপনার উম্মতের বক্তা, উপদেশদাতা ও আলেম। এরা মানুষকে ভালো কথা শিক্ষা দিত কিন্তু নিজে আমল করত না। জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও বুঝত না।” আরেক হাদিসে বলা হয়েছে, তাদের জিহ্বা ও ওষ্ঠ উভয় কাটা হচ্ছিল। (মিশকাত-শিষ্টাচার অধ্যায়, শু‘আবুল ঈমান-৪৯৬৫, মুসনাদে আহমাদ : ১৩৪২১, সিলসিলাতুস সহীহাহ : ২৯১)

সকলের পছন্দনীয় ও অধিক প্রজ্ঞাবান বা উত্তম বাগ্মী হলেও তাকে আদেশ ও নিষেধ মেনে চলার ক্ষেত্রে ইসলাম কোন প্রকার শিথিলতা প্রদর্শনের অনুমতি দেয়নি। বরং এই শ্রেণীর ব্যক্তিবর্গের আরো বেশি সতর্ক হওয়া দরকার। কারণ উপদেশতো জ্ঞানী প্রজ্ঞাবান বা উত্তম বাগ্মী ব্যক্তিবর্গই প্রদান করে থাকেন। হাদিসে নবী (সা.) বলেছেন, “একটি লোককে আনা হবে যাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। তার নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে আসবে এবং সে তার চারিদিকে ঘুরতে থাকবে। অন্যান্য জাহান্নামিরা তাকে জিজ্ঞাসা করবে, আপনি তো আমাদেরকে ভালো কাজের আদেশ দিতেন এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করতেন তাহলে আপনার এ অবস্থা কেন? সে বলবে আফসোস আমি তোমাদের বলতাম কিন্তু নিজে আমল করতাম না। আমি তোমাদের বিরত রাখতাম নিজে নিবৃত্ত থাকতাম না।” (সহিহ মুসলিম : ৭৩৭৩) আমাদের দীর্ঘ বক্তব্য পরিহার করা যেমন দরকার, তেমনি বক্তব্যের সাথে নিজেদের জীবনকে মিলিয়ে নেয়াও অপরিহার্য। সকল কাজের ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে হওয়া উচিত আরো সতর্ক। নফস, শয়তান, কাফির, তাগুত ও মুনাফিকদের ব্যাপারে জিহাদের কঠিন ও সময়োপযোগী আহ্বান করার সাথে সাথে নিজেকেও প্রস্তুত রাখা। ইসলামের সার্বিক ও কল্যাণকর বিধানকে নিজের জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে নেয়া। মানব জীবনের সকল দিক যে ইসলামের মাঝে আছে, তা তুলে ধরার মাধ্যমে ইসলামী জীবনব্যবস্থার সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে, আদর্শের বাস্তব প্রতিচ্ছবি হওয়া। ইসলামের মূলনীতি অনুসরণের মধ্য দিয়ে মর্যাদার সর্বোচ্চ আসনে আসীন হওয়া যায়, সেটা মহান আল্লাহর পছন্দের বান্দাদের দিকে গভীর দৃষ্টি দিলে বুঝা যায়। আবার অনুসরণ না করার কারণে মর্যাদাহানি হয় সেটাও বুঝা যায়। কিন্তু ইসলাম ও তার মূলনীতি একই অপরিবর্তনীয় থেকে যায়। তাই জিহাদ ফি-সাবিলিল্লাহ এর মত বিধানকে জীবনের সর্বোচ্চ ত্যাগের মাধ্যমে জারি রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা মুমিনের অবশ্যকীয় কর্তব্য। আর উত্তম নসিহত যেন হয়, আগে নিজের জন্য, নিজের মুক্তির জন্য। রবের পছন্দের বান্দাদের মর্যাদার সারি যেন হয়, আমাদের সকলের সারি।

লেখক : গবেষক ও প্রাবন্ধিক

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির