post

সঙ্কটময় বাংলাদেশ প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস

০৯ জুন ২০১৫
মাহাদী হাসান সানি# দীর্ঘদিন ধরে দেশের রাজনীতিতে যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে তাতে করে রাষ্ট্রের কল্যাণের চেয়ে অকল্যাণের পথই বেশি উন্মুক্ত হচ্ছে। হুমকির মুখে পড়ছে দেশের সকল সম্পদ ও সম্ভাবনাগুলো। কোন দেশের সার্বিক উন্নয়নে প্রয়োজন একটি জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার। সেই সাথে প্রয়োজন সৎ, দক্ষ ও নিরপেক্ষ জনপ্রশাসন। তিক্ত সত্য কথা এই যে বর্তমানে বাংলাদেশে এর কোনোটিই বিদ্যমান নেই। প্রতিটি জায়গায় স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও অপশাসন, আর খামখা সাধারণ মানুষ হচ্ছে বৈষম্যের শিকার। যার সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ সদ্যসমাপ্ত তিনটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এ নির্বাচনে বিরোধী দল ও প্রার্থী সমর্থকদের প্রতি যে অন্যায় আচরণ করা হয়েছে তা ইতিহাসের পাতায় এক কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে উল্লিখিত থাকবে। পেশিশক্তি ব্যবহার করে বিরোধী মত দমিয়ে একক রাজত্ব প্রতিষ্ঠার যে অপতৎপরতা এই অবৈধ সরকার চালিয়ে যাচ্ছে তার কুফল দীর্ঘকাল পর্যন্ত এ জাতিকে ভোগ করতে হবে। আসলে ‘অপশাসন’ শব্দটির সাথে আমরা বহু বছর আগে থেকেই পরিচিত। ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে পাকিস্তান আমল, এমনকি রেহায় পায়নি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিটি সরকারের আমলও। স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত যারাই এ দেশের শাসনভার হাতে নিয়েছে তারা সকলেই আগের শাসকদের শোষণ করার নীতিটি পুরোপরি রপ্ত করে নিয়েছে। ফলে শাসনের নামে চলেছে শুধু শোষণ আর নিপীড়ন। অসহায়-মজলুমের কান্না, চিৎকার আর আর্তনাদে ক্ষণে ক্ষণেই কেঁপে উঠেছে বাংলার আকাশ বাতাস। জমিন অসংখ্যবার ¯œান করেছে রক্তের ফোয়ারায়। তাতেও শাসকদের রক্তপিপাসার তৃষ্ণা মেটেনি। উন্নত বিশ্বের শাসকরা যেখানে রাষ্ট্রীয় সমস্যাগুলো দূর করে সকল সম্ভাবনাগুলোকে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজে লাগানোর চিন্তায় মগ্ন তখন আমাদের দেশের শাসকেরা আরামকেদারায় বসে বসে নিজের উদর পূর্ণকরণে ব্যস্ত। দার্শনিক প্লেটো বলেছিলেন, ‘শাসক যদি হয় ন্যায়পরায়ণ তাহলে আইন অনাবশ্যক আর শাসক যদি হয় দুর্নীতিপরায়ণ তাহলে আইন নিরর্থক’। ফলশ্রæতিতে শাসকশ্রেণীর লোকেরা আজ রথী-মহারথী বনে গেছেন আর প্রজাদের রক্ত মিশ্রিত ঘাম নিঃশ্বেষ হয়ে গেছে শুধুমাত্র নুন আর পান্তা জোগাড় করতেই। রাষ্ট্রীয় সম্পদ আর সম্ভাবনাগুলো আজ হারিয়ে যাচ্ছে শুধুমাত্র শাসকশ্রেণীর অবজ্ঞা আর একগুঁয়েমির ফলে। ধান, গম, পাট, চা, চিনি আর চিংড়ি রফতানি আজ লৌকিকতা হারিয়ে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে। পোশাকশিল্প আর প্রবাসে শ্রমিক প্রেরণ এখন গভীর সঙ্কটের মুখে। অন্য দিকে মেধাবী ছাত্ররা কোন রকমে বিদেশ পৌঁছতে পারলেই তারা যেন হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে। নাব্যতা হারিয়ে দেশের নদীগুলো আজ অস্তিত্বের সঙ্কটে। ভূমিদস্যু আর অব্যবস্থাপনায় গড়ে ওঠা মিল-কারখানায় বিপর্যস্ত হচ্ছে আমাদের উদ্ভিদ ও প্রাণিকুল, ভারসাম্য হারাচ্ছে পরিবেশ। অথচ এসব ব্যাপারে কারো কোন ভ্রæক্ষেপই নেই। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন এমন এক সত্যানুসারী দল যারা কথায় নয়, কাজে প্রমাণ দিয়ে বাংলাদেশকে বর্তমান গভীর সঙ্কটময় অবস্থা থেকে উত্তরণের ব্যবস্থা করবে। আমরা জানি সত্য ও মিথ্যার যুদ্ধে সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী। সে সমাজকে করে সুন্দর, নির্মল ও প্রাণচঞ্চল। প্রবহমান নদীর মতো জীবনে প্রবাহিত করে শান্ত নীরব বায়ুধারা। গঠনমুখী ও কল্যাণমুখী চিন্তা প্রতিটি জীবনকে গড়ে তুলে মহৎ ও মহীয়ানরূপে। প্রীতি ও প্রেমে সিক্ত হয়ে তখন স্বর্গের সুখ ধূলির ধরায় নেমে আসে। অন্য দিকে মিথ্যা সমাজকে করে কলুষিত, জীবনকে করে আগ্রাসী আর মরণকে করে বীভৎস। যে সমাজে সে সয়লাব হয় সেখানে মানবতা হয় নিষ্পেষিত, বিবেক হয় বিকৃত। ফলে মানুষ তার মনুষ্যত্ববোধ হারিয়ে নেমে আসে পশুর স্তরে। সে তখন প্রদর্শন করে মানবিকতার পরিবর্তে হিংস্রতা, কোমলতার পরিবর্তে কঠোরতা আর উষ্ণতার পরিবর্তে উন্মাত্ততা। চাকচিক্য আর তাক লাগানো রঙিন আভিজাত্যে সে আবৃত করে পুরো সমাজকে যার সবটাই থাকে অন্তঃসারশূন্য। অর্থহীন কাজ সমাদৃত হয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে আর মৌলিক চাহিদা উপেক্ষিত হয় করুণ আর্তনাদে। আর যখন মিথ্যার মোকাবেলায় সত্যের আগমন ঘটতে থাকে তখন মিথ্যা তার চূড়ান্ত রূপের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে থাকে। সে সত্যকে পরাজিত করতে হীন সব কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়। সচ্চরিত্র নারীকে অপবাদ দেয় কলঙ্কের, দেশপ্রেমিককে বানায় দেশদ্রোহী এবং গুরুদন্ডের রশিতে ঝুলায় নির্দোষ বনি আদমকে। কিন্তু আঁধার যত তীব্র হয় তত নিকটবর্তী হতে থাকে তার বিদায়ের সময়। মিথ্যার সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে ফুটে উঠতে থাকে সত্যের সোনালি আভা। সে হয় মজলুমের সহায়ক, বিধবার অবলম্বন আর এতিমের অভিভাবক। সমাজের প্রতিটি স্তরকে সে নতুন করে ঢেলে সাজায় ফলে সমাজে নেমে আসে স্বস্তি, শান্তি ও সর্বোত্তম নিরাপত্তা। আজ বাংলাদেশে সত্য ও মিথ্যার যে যুদ্ধ চলছে তাতে এক সময় সত্যেরই জয় হবে, এটিই স্বাভাবিক। হয়তোবা এ পথের পথিকদেরকে আরো কিছুটা সময় ধৈর্য ও ত্যাগের নজরানা পেশ করতে হবে। এহেন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের দোয়া মহান আল্লাহপাক নিজেই বলে দিয়েছেন, “বলো, হে আমাদের রব, আমাদেরকে যেখানে নিয়ে যাও সত্যের সাথে নিয়ে যাও, যেখান থেকে বের করে নাও সত্যের সাথে বের করে নাও এবং আমাদেরকে সাহায্যকারীরূপে রাষ্ট্রক্ষমতা প্রদান কর।” (সূরা বনি ইসরাইল : ৮০) সাথে সাথে তার পরের আয়াতেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন, “সত্য যখন সমাগত মিথ্যা তখন বিলুপ্ত, আর মিথ্যাকে অবশ্যই বিলুপ্ত হতে হবে।” এ ঘোষণায় কোনো ত্রুটি নেই, কোনো বিচ্যুতিও নেই। এটিই শাশ্বত ও চির অহবান। শিক্ষার্থী : ঢাকা কলেজ

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির