post

সম্পাদকীয়

২৮ অক্টোবর ২০১৫

সময় এমন একটা সৃষ্টি যা কারো জন্য অপেক্ষা করে না; যা অবিরত চলছেই; যার শেষ গন্তব্য আমাদের জানা নেই। কিন্তু প্রত্যেক সৃষ্টির জন্য নির্দিষ্ট সময় আছে যা শেষ হয়ে যাবে। সময় আমাদেরকে প্রতিনিয়ত ডেকে ডেকে বলছে, আমি বরফের মতো গলে গলে শেষ হয়ে যাচ্ছি; তোমরা আমার সদ্ব্যবহার করো। সময়মতো কাজ করার জন্য মহান আল্লাহ আমাদের অনেক তাগিদ দিয়েছেন। কারণ আল্লাহর নিকট প্রত্যেকটি মুহূর্তের হিসাব দিতে হবে। সময়ের অপচয়কারীদের জন্য রয়েছে কঠিন হুঁশিয়ারি। সূরা মুমিনুনের ১১২-১১৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, “তোমরা পৃথিবীতে বছরের গণনায় কতদিন অবস্থান করেছিলে? তারা বলবে আমরা একদিন অথবা দিনের কিছু অংশ অবস্থান করেছি; অতএব আপনি গণনাকারীদেরকে জিজ্ঞেস করুন। অতঃপর আল্লাহ বলবেন, তোমরা তাতে অল্পদিনই অবস্থান করেছ, যদি তোমরা জানতে।” এই পৃথিবীর সামান্য সময়টুকু যারা সৎভাবে পরিচালিত না হয়ে অসৎ পথে চলে; মহান আল্লাহর ঐশী বিধানের বিরোধিতা করে জুলুম নির্যাতনের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকতে মরিয়া হয় তাদের জন্য আফসোস ছাড়া আর কিছু নেই। তাই আমাদের সময়গুলো যেন এক মুহূর্তও নষ্ট না করি এবং তা যেন আল্লাহর দেখানো পথেই ব্যয় করতে পারি সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা দরকার।

নেপোলিয়ান বলেছিলেন, “ইসলামের রুহানি শক্তি এমনই প্রখর যে, কোন সাহসী ব্যক্তি যদি দৃঢ়ভাবে কুরআন শরিফের মূলনীতি অনুসরণ করে তবে বিস্ময়কর জয়লাভ করতে পারে।” আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার প্রত্যয়ে যারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, তাদের পথচলা নিঃসন্দেহে অনেক কঠিন। অনেক সময় প্রবল ধৈর্য ও কষ্টের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে মহান আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের বাছাই করে নেন। কিছু কিছু মানুষের জীবনকে কবুল করেন এবং তাদের মাধ্যমে তিনি একটি আদর্শের বুনিয়াদ দুনিয়ার মানুষের জন্য তৈরি করে দেন। এই আদর্শই ময়দানে টিকে থাকে সত্যের সাক্ষ্য হয়ে। শহীদের স্মৃতি প্রতিনিয়তই আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে। ইসলামী আন্দোলনের চলার পথে নানান রকম মোহ, ভয়-ভীতি ও আশঙ্কা আমাদের অন্তরায় হতে চাইলে শহীদের স্মৃতি আমাদেরকে আন্দোলিত করে।

১৭ জুন ২০১৯ তারিখে মিসরের স্বৈরশাসক আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির কাঠগড়ায় শাহাদাত বরণ করলেন মধ্যপ্রাচ্যের সিংহপুরুষ হাফেজ ড. মুহাম্মদ মুরসি। তিনি ছিলেন মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অন্যতম ও গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত মিসরের প্রথম রাষ্ট্রপতি। যার অসাধারণ মেধা, অতুলনীয় প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা, অমায়িক ব্যবহার আর আল্লাহভীরু মানসিকতা বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের প্রেরণার উৎস। প্রভুর প্রেমে পাগল দ্বীনের পথের এ মুজাহিদ দুনিয়ার ক্ষুদ্র স্বার্থে নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে ছিলেন অনেক দূরে। এ জন্য শহীদ মুরসি একটি প্রেরণার নাম; একটি আন্দোলনের নাম; একটি বিপ্লবের নাম। নির্মম নির্যাতন সয়ে সয়ে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি অটল ছিলেন; ছিলেন দৃঢ়; কাউকে পরোয়া করেননি; হতাশও হননি; বিচলিত হননি একটুও। তাঁর সাহসী এসব গুণাবলি ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদেরকে সারাক্ষণ অনুপ্রাণিত করে চলবে ইনশাআল্লাহ।

পাশ্চাত্য দুনিয়ার মুসলিমবিদ্বেষীরা ইসলামী আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে নানান রকম ষড়যন্ত্রের জাল বুনেই চলেছে। তারা ইসলামের রাজনৈতিক দর্শন প্রতিষ্ঠার শক্তি হিসেবে এমন কিছু চরিত্র ইতোমধ্যেই বিশ্বের নাট্যমঞ্চে উপস্থাপন করেছে যার সাথে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন ও ইসলামী রাজনৈতিক দর্শনের কোনো সম্পর্ক নেই। অতি সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যে আতঙ্ক সৃষ্টিকারী ইসলামিক স্টেট ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া বা আইএসআইএস। নির্যাতিত মুসলিম বিশ্বের সংবেদনশীল তরুণদের বিভ্রান্ত করে ইসলামের ভাবমর্যাদা ধ্বংস ও মুসলিম বিশ্বের মাঝে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কাজে ব্যবহার করেছে। এর মোকাবেলায় মুসলিম স্বৈরশাসকরা পাশ্চাত্যের ক্রীড়নক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে সঙ্কটকে আরো জটিল করে তুলছে। ইসলামবিরোধী কার্যক্রম সমাজে প্রতিষ্ঠা করে মুসলিম নামধারী শাসকগুলো ক্ষমতার মসনদকে শক্তিশালী করতে চায়। ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে সত্যকে সত্য বলতে যারা নারাজ তাদের মনে রাখা দরকার নমরুদ ফেরাউনের শাস্তি যিনি নিশ্চিত করেছেন তিনি সর্বময় ক্ষমতার মালিক আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। তিনি তাঁর সিদ্ধান্ত সময়মতোই নিয়ে থাকেন।

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির