post

স্থানীয় নির্বাচনেও একেপির জয়

২১ এপ্রিল ২০১৪
ucreneমোহাম্মদ আবু জাফর গত কয়েক বছরে এরদোগানের নেতৃত্বে তুরস্ক মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক রাজনীতি ও ক‚টনীতিতে প্রভাব অনেক বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। এমনকি ইসরাইলের সাথে দীর্ঘকালীন সুসম্পর্কে সাময়িক ছেদ পড়লেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। অপর দিকে অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে এরদোগান একের পর এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছেন রাজনৈতিক প্রতিদ্ব›দ্বীদের কাছ থেকে। তারা প্রপাগান্ডা ও উসকানির ক‚টকৌশল গ্রহণ করেছে। রজব তাইয়েব এরদোগানের দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি) কট্টর সেকুলার ‘কামালবাদী’দের বিপরীতে অনেক উদার ও নমনীয় ধর্মের ব্যাপারে। তাই ইসলামি রাষ্ট্র গড়ার ঘোষণা না দিলেও একেপি পরিচিত ‘ইসলামপন্থী’ হিসেবে। এ কারণে দেশের ভেতরে বামপন্থী ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী এবং বাইরে তাদের মুরব্বি দেশগুলো এরদোগান সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে। তুরস্কে মোস্তফা কামালের উগ্র সেকুলার মতাদর্শের প্রভাব এখনো মিডিয়া, ভার্সিটি, বিচারালয়, বুদ্ধিজীবী, সংস্কৃতিসেবী প্রভৃতি মহলে অনেকটা রয়ে গেছে। সামনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ইতোমধ্যে কয়েকজন মন্ত্রী ও তাদের আপনজনদের দুর্নীতির অভিযোগে সরকার বিব্রত হয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে। একেপি ‘আদর্শিক গুরু’ বলে অভিহিত, প্রবাসী ব্যক্তিত্ব ফতহুল্লাহ গুলেন এবং তার শিক্ষা ও মিডিয়া নেটওয়ার্কের সাথে ক্ষমতাসীন মহলের বিরোধের খবর প্রকাশ পেয়েছে। বিরোধী দল পরিস্থিতির সুযোগে একেপি ও এরদোগানের ইমেজ ক্ষুণœ করার কোনো প্রয়াসই বাদ দিচ্ছে না। বিশেষত সামাজিক গণমাধ্যমে জোর প্রচার চলছে, এরদোগান অসহিষ্ণু হয়ে অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ নিচ্ছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে নির্দয় আচরণ করছেন, তার সরকার স্বৈরাচারী ও দুর্নীতিগ্রস্ত ইত্যাদি ইত্যাদি। এমনতরো প্রেক্ষাপটে এবার স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়ে গেল। যদিও এটা জাতীয় নয় স্থানীয়, তবুও এর রাজনৈতিক তাৎপর্য সবাই উপলব্ধি করেন বৈকি। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক উপজেলা পরিষদ নির্বাচন যে মূলত ক্ষমতাসীন দল ও প্রধান বিরোধী দল বা জোটের লড়াই, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তুরস্কে দৃশ্যত যতটা প্রতিক‚ল অবস্থা দেখা গেছে, তাতে মনে হচ্ছিলÑ একেপি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বেশি সাফল্য পাবে না। বাস্তবে আগের সফলতা ধরে রাখায় বিরোধী দলই শুধু নয়, হয়তোবা একেপি নিজেও অবাক হচ্ছে। দেশের রাজধানী আঙ্কারা এবং বৃহত্তম নগরী ইস্তাম্বুলে (এরদোগানের এলাকা) একেপির অটুট ভিত্তি আবার নির্বাচনে প্রমাণিত হলো। তবে তৃতীয় ucrene.jpg-01বৃহৎ নগর ইজমির কামালবাদীদের আখড়া হয়ে আছে। ৩০ মার্চ তুরস্কের স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়। এতে জাতীয়ভাবে গড়ে ৪৩-৪৫ শতাংশ ভোট বাগিয়ে নিয়েছে ক্ষমতাসীন একেপি। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি এবং বিগত নির্বাচনী সাফল্যের প্রেক্ষাপটে এটাকে বড় রকমের কৃতিত্ব বলে দলটি মনে করছে। মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে গোঁড়া ও উগ্র সেকুলার দেশ হিসেবে পৌনে এক শতাব্দী পরিচিত তুরস্কে একেপির মতো লিবারেল দল একটানা এক যুগ আঙ্কারায় ক্ষমতাসীন থাকা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনেকের কাছে বিস্ময়কর হতে পারে। তবে এবার স্থানীয় নির্বাচনের ফল সাক্ষ্য দিচ্ছে, ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল দলটি শুধু আদর্শের বুলি না কপচিয়ে কাজ করেছে মানুষের জন্য। নিষ্ঠা, দক্ষতা, পরিশ্রমের বলে উন্নয়ন ও সুশাসনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে সরকার। স্থানীয় নির্বাচনে দেখা যায় দেশের প্রশাসনিক রাজধানী আঙ্কারা আর অর্থনৈতিক রাজধানী ইস্তাম্বুল মহানগর দু’টিতেই দল হিসেবে একেপি তার প্রথম অবস্থান অটুট রেখেছে। সারা দেশের হিসেবে, প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) ১৫ শতাংশ কম ভোট পেয়েছে একেপির চেয়ে। ক্রমবর্ধমান সমালোচনার মুখোমুখি একেপি এবং এর নেতা এরদোগান। বাম- সেকুলার বিরাট গোষ্ঠীর অব্যাহত বিরোধিতার সাথে সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ কিছু সঙ্কট এবং বিশেষ করে দুর্নীতির কিঞ্চিৎ অভিযোগ হয়েছে। তা সত্তে¡ও নির্বাচনে একেপির জনপ্রিয়তা মোটামুটি অক্ষুণœ থাকাকে এরদোগান মনে করছেন, গণতন্ত্রের বিজয় এবং লক্ষ্যহীন ও অনৈতিক রাজনীতির গালে চপেটাঘাত। তুরস্ক শুধু জাতীয় পর্যায়ে নয়, আঞ্চলিক ক্ষেত্রেও বিরাট সমস্যার মোকাবেলা করছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ পাওয়া নিয়ে পাশ্চাত্যের আরোপিত অতিরিক্ত বাধ্যবাধকতার চাপ আছে অনেক আগে থেকেই। সেই সাথে এখন রয়েছে প্রতিবেশী সিরিয়ার তিন বছর চলা ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের ‘প্রচণ্ড তাপ’। সে দেশের কয়েক লাখ শরণার্থীর বোঝাই শুধু নয়, সীমান্ত উত্তেজনাসমেত আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা নিয়ন্ত্রণের বড় দায়ও তুরস্কের ঘাড়ে চেপেছে। এ দিকে আকাশসীমা লঙ্ঘনকারী সিরীয় যুদ্ধবিমান ভ‚পাতিত করার মতো কঠোর পদক্ষেপও তুরস্ককে নিতে হলো এবার। ucrene.jpg-03স্থানীয় নির্বাচনে একেপি ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও তারা যে এখনো বৃহত্তম দল এবং বিরোধীরা সবাই একজোট হয়েও তাদের হারানো যে সহজ নয়, সেটা এখন স্পষ্ট। সুশাসন ও উন্নয়নই একেপির জনপ্রিয়তার ভিত্তি। এর আগে পরপর একাধিকবার দলটি জাতীয় নির্বাচনে গণরায় পেয়ে দেশ পরিচালনায় যোগ্যতার পরিচয় দেয়া ছাড়াও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুরস্কের প্রভাব বাড়িয়েছে। এবার নির্বাচনী সাফল্য সামনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হলে এরদোগানের বিজয়ের ইঙ্গিতবাহী। তবে সরকারকে সুশাসন ও সুবিচার কায়েমে পুরোপুরি সৎ ও সতর্ক থাকতে হবে, যেন দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ আর না ওঠে। আর গণতান্ত্রিক সরকার হিসেবে শান্তি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে গিয়ে লক্ষ রাখা চাই, যাতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রবণতা সৃষ্টি না হয়। ইউক্রেন : সঙ্কট আরো ব্যাপক ও গভীর ইউক্রেন সঙ্কট আরো ব্যাপক, গভীর ও স্থায়ী হতে চলেছে। রাশিয়ার প্রত্যক্ষ আগ্রাসী মনোভাবের বিপরীতে আমেরিকার পরোক্ষ প্রতিরোধের প্রেক্ষাপটে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ হারানোর পর ইউক্রেন তার রুশভাষী পূর্বাঞ্চলও হারিয়ে ফেলার বিরাট আশঙ্কা জেগেছে। আধিপত্য বিস্তারের এই অভাবনীয় রুশ কৌশল দেখে এখন পাশ্চাত্য আবার শঙ্কিত হয়ে ভাবছে, ‘ভলগা তীরের ভালুক’টি এত দিনের আধমরা অবস্থা থেকে উঠে আবার তার হামলায় মেতে উঠেছে। তবে এবারে গায়ের জোরের সাথে দুষ্টবুদ্ধি কাজে লাগিয়ে মস্কো দেখাতে চায়, ভালুককে বোকা মনে করা ঠিক নয়। গত বছরের শেষ দিক থেকে চলে আসা ইউক্রেন সঙ্কট সরকার পতনের সাথে সাথে ক্রিমিয়ার বিচ্ছিন্নতা এবং রাশিয়ায় যোগদানের মধ্য দিয়ে জটিলতর হয়ে উঠেছে। রুশ আগ্রাসন ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করে স্নায়ুযুদ্ধকালীন উত্তেজনা ফিরিয়ে এনেছে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে। এই সঙ্ঘাতে ইউরোপ সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রকে। অপর দিকে চীনের সহানুভ‚তি রাশিয়ার জন্য। ক্রিমিয়া ইস্যুতে জাতিসঙ্ঘের ভোটাভুটিতে বাংলাদেশসহ অনেক রাষ্ট্র নিজ নিজ স্বার্থে ‘নিরপেক্ষ’ থাকার কৌশলী ভ‚মিকা নিয়েছে। এতে মার্কিন ক্ষোভের বিপরীতে রুশ প্রশংসা মিলেছে স্বাভাবিকভাবেই।ucrene.jpg-04 দুর্ভাগা ইউক্রেনের বেলায় আমরা দেখছি, শত্রæ যখন একের পর এক চক্রান্ত এঁটে বেপরোয়া পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন মিত্ররা কার্যত নিষ্ক্রিয় থেকে বৈঠক ও বিবৃতির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখছে নিজেদের। হামলার মোকাবেলা নিছক হুঙ্কার নয়। শুধু কথা বলে প্রতিপক্ষের কাজকে ঠেকানো যায় না। অথচ রাশিয়ার ‘কুছ পরোয়া নেহি’ ভাবগতিকে মার্কিন নেতৃত্বে পাশ্চাত্য যেন তাদের সত্যিই পরোয়া করছে। মস্কো সময় ‘নষ্ট’ না করে ইউক্রেনকে আরো দুর্বল করা, তথা ইউরোপকে আরো চাপে ফেলার পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। রুশভাষীদের বিচ্ছিন্নতার উন্মাদনা ইউক্রেন ছাড়িয়ে আরেক রাষ্ট্র মালদোভার স্বাধীনতাকেও কাঁপিয়ে তুলছে। রাশিয়ার মনোভাবে এটা স্পষ্ট, জারের সাম্রাজ্যবাদী প্রবণতা ভিন্নরূপে ক্রেমলিনে ফিরে এসেছে। যেখানে সমাজতন্ত্রী বিপ্লবীদের সোভিয়েত আমলেই মস্কোর মনোবৃত্তি ছিল এটাই, সেখানে ধনতন্ত্রী বর্তমান রাশিয়ার আধিপত্য-স্বপ্ন থাকাই স্বাভাবিক। অবশ্য এটাকে কিছুতেই সঙ্গত বলা চলে না। কারণ তা হলে কোনো রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন থাকবে না এবং তার অখণ্ডতা নির্ভর করবে বিগ ব্রাদারের খেয়াল খুশির ওপর। ইউক্রেনের ইস্যুতে রাশিয়া সুপরিকল্পিত ও সমন্বিতভাবে ক্রিমিয়া দখলে নেয়ার পরও সুদূরপ্রসারী লক্ষ্যে অগ্রসর হচ্ছে। এখন মস্কোর চক্রান্তে ইউক্রেনের মূল ভ‚খণ্ডই আর অখণ্ড থাকবে না মনে হয়। অথচ ওয়াশিংটন এখনো বলছে, রাশিয়া ইউক্রেনের ব্যাপারে ‘আরো অগ্রসর হলে’ পরিস্থিতি মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ এবং আন্তর্জাতিক অন্যান্য অংশীদার নতুন অবরোধের ওপর গুরুত্ব দেবেন প্রেসিডেন্ট ওবামা। ১১ এপ্রিল জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেলকে ফোনে ওবামা এটা বলেছেন। রাশিয়া ‘আরো অগ্রসর হলে- এই শর্ত দেখে সে গল্প মনে পড়ে যায়। চোর ঘরে ঢুকে সব নিয়ে যাচ্ছে। গৃহকর্তা ভয়ে স্ত্রীকে নিয়ে লুকিয়ে থেকে তা দেখছেন আর কাঁপছেন। স্ত্রী তাকে বারবার বলছেন চোর ধরার জন্য। আর অথর্ব স্বামী বারবার জবাব দিচ্ছে, ‘দেখা যাক না কি হয়।’ প্রতিরক্ষা ও রণকৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ক্রিমিয়া উপদ্বীপ কুক্ষিগত করে মস্কো ঘোষণা দিয়েছিল, ইউক্রেনের মূল ভ‚খণ্ডে হামলা কিংবা ইউক্রেনের কোনো অংশ বিচ্ছিন্ন করার চিন্তা রাশিয়ার নেই। কিন্তু এখন পূর্ব ইউক্রেনে রুশভাষী বাসিন্দাদের সশস্ত্র তৎপরতা, তথা ইউক্রেন সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ প্রমাণ করছে, রাশিয়ার উল্লিখিত আশ্বাস প্রতিপক্ষকে বিভ্রান্ত করে অপ্রস্তুত রাখার সুচতুর প্রয়াস। ইউক্রেনের ¯øাভইয়ানস্ক শহরে রুশপন্থীরা থানা দখল করেছে। এমনকি দেশটির পূর্বাঞ্চলের রাজধানী দোনেতস্ক শহরে গুরুত্বপূর্ণ দফতরে হামলার চেষ্টা হয়েছে। উদ্বেগজনক এসব ঘটনা ঠিক তখন ঘটছে, যে সময়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউক্রেন ইস্যুর সুরাহার জন্য জেনেভায় রাশিয়া ও ইউক্রেনের সাথে বৈঠকে মিলিত হয়েছে। এ দিকে ইউক্রেন রাশিয়াকে তার সরবরাহ করা গ্যাসের দাম দেয়া স্থগিত করেছে। এতে পরিস্থিতি আরো জটিল হতে পারে। শুধু ইউক্রেন নয়, ইইউভুক্ত দেশগুলো প্রধানত রাশিয়ার প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। জার্মানির মতো বিরাট অর্থনৈতিক শক্তিও ব্যাপক ক্ষতির শিকার হবে যদি মস্কো গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র প্রধানত রাজনৈতিক এবং ইউরোপ অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। জার্মান অর্থমন্ত্রী ভলফগ্যাং শিউবল বলেছেন, ‘এখন ইইউ এবং যুক্তরাষ্ট্র এক হয়ে কাজ করার সুযোগ এসেছে। এ শতাব্দীর বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমাদের উভয়ের স্বার্থ অভিন্ন।’ এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহের শেষ দিকে রুশভাষী ও মস্কোপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী ইউক্রেনের পূর্বাংশে বহু সরকারি ভবন জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছে। ১০ এপ্রিল ইউক্রেন ঘোষণা দেয়, পর দিন সকালের মধ্যে অস্ত্রত্যাগ করলে সাধারণ ক্ষমা পাবে। তবে মস্কোর মদদে রুশ জাতি গোষ্ঠীর ওই সব লোক কিয়েভ প্রশাসনের কোনো হুমকি-হুঁশিয়ারির পরোয়া করছে না। একই দিন ১০ এপ্রিল ন্যাটো অনেক ছবি প্রকাশ করেছে উপগ্রহ থেকে পেয়ে। এতে যুদ্ধবিমান ও ট্যাংকসহ রুশ রণসরঞ্জাম দেখা যায়। ন্যাটো জানায়, ইউক্রেন সীমান্তে ৪০ হাজার রুশ সেনা মোতায়েনের অংশ হিসেবে এসব জড়ো করা হচ্ছে। এভাবে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করার প্রস্তুতি সত্তে¡ও রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, ক্রমবর্ধমান রুশবিরোধী মনোভাব ইউরোপের স্থিতিশীলতার প্রতি হুমকি। ইউক্রেন নিয়ে সর্বশেষ খবর হচ্ছে, পূর্বাঞ্চলের ¯øাভিয়ানস্ক শহরে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। শহরটি দখলমুক্ত করার অভিযানে নেমে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী রুশপন্থী বন্দুকধারীদের জোর প্রতিরোধের মুখে পড়েছে। এতে ইউক্রেন বাহিনীর সদস্যসহ ১১ জন হতাহত হলো ১৩ এপ্রিল। কিয়েভ বলেছে, এটা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অভিযান। সর্বাত্মক এই হামলায় সহায়তার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনগণকে অনুরোধ জানালেও বাস্তবে তার সম্ভাবনা কম। কেননা অঞ্চলটি রুশভাষী মানুষ অধ্যুষিত। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের শক্তির উৎস হচ্ছে সীমান্তে অবস্থানরত রুশ বাহিনী। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেছেন, তাদের সরিয়ে না নিলে মস্কোর জন্য ‘আরো কঠিন পরিণতি’ অপেক্ষা করছে। আর জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব বান কি মুন আহবান জানালেন সংলাপের। ucrene.jpg-05আফগানিস্তান : প্রেসিডেন্ট কে হচ্ছেন? দীর্ঘ চার দশক ধরে যুদ্ধবিধ্বস্ত দরিদ্র দেশ আফগানিস্তানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়ে গেল ৫ এপ্রিল। এতে অংশ নিয়েছেন তালেবানবিরোধীদের পাশাপাশি তালেবানের প্রতি নমনীয় অনেকেই। ভোটার উপস্থিতি আগের নির্বাচনগুলোর চেয়ে বেশি ছিল বলে মিডিয়ার খবর। অবশ্য এসব ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠেছে যে বিষয়, তা হলোÑ এ নির্বাচনে কি এমন কেউ জিতবেন যিনি আফগানিস্তানে অনির্দিষ্টকাল মার্কিন বা ন্যাটো সেনা রাখতে সম্মতি দেবেন? এখানে উল্লেখ্য, প্রথম দফায় কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশ ভোটও না পাওয়ায় পরের দফায় প্রতিযোগিতায় নামছেন দুই প্রার্থী আশরাফ গনি ও আবদুল্লাহ। কর্তৃপক্ষের দাবি, এবার ৭০ লাখের অধিক ভোটার ভোট দিয়েছেন। যা হোক, সংবিধানমাফিক এবার আর প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ না থাকায় দুই মেয়াদ শেষে কারজাই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হননি। প্রার্থী ছিলেন আটজন যাদের অনেকেই পরিচিত মুখ। তাদের মধ্যে প্রধান তিনজন ছিলেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ, সর্বশেষ বাদশাহ জহির শাহের ঘনিষ্ঠ জালমাই রসুল ও সাবেক অর্থমন্ত্রী আশরাফ গনি। কৌত‚হলের বিষয় হলো, সুদর্শন আবদুল্লাহর নামটি পরপর দু’বার বলতে হবে অবশ্যই। ভারতের প্রিয়ভাজন আবদুল্লাহ ২০০৯ সালের বিগত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কারজাইর নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী ছিলেন। ৩০ শতাংশের বেশি ভোট পেলেও কারচুপির শঙ্কায় নির্বাচনী দৌড় থেকে সটকে পড়েছিলেন সেবার। আশরাফ গনি গতবার নির্বাচনে চতুর্থ হয়েছিলেন। আহমদজাই গোত্রের এই ব্যক্তি মনে করেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য মোচনের জন্য বিদেশের সাহায্য নয়, বিনিয়োগ চাই। এ দিকে জালমাই রসুলকে কারজাইর সর্বাধিক পছন্দনীয় বলে মনে করা হয়েছে। কারো কারো মতে, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে কারজাই নেপথ্য থেকে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ পেতেন। সে সুযোগ আপাতত মিলছে না। প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের রানিং মেট বা ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থীও ছিলেন। যেমন জালমাই রসুলের সাথে নেমেছিলেন বামিয়ান প্রদেশের সাবেক মহিলা গভর্নর মিসেস সারোবি। এই সুবক্তা নারী সাড়া জাগালেন জালমাই রসুলের নির্জীব প্রচারণা অভিযানে। এখনো দেশের বেশ কিছু অংশে সশস্ত্র পন্থায় তৎপর তালেবান প্রেসিডেন্ট নির্বাচনবিরোধী হুমকি দিয়ে আসছিল। তবে বিগত কিছু দিনে তাদের হামলা সার্বিকভাবে কমে আসার পাশাপাশি মানুষ মনে করছে, যুদ্ধ নয় আর, নির্বাচন বা সমঝোতার পথে দেশে শান্তি ফিরে আসুক। মাঝে মধ্যে তালেবানের দুঃসাহসী সহিংসতা এবং এর ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও মার্কিন কর্তৃত্ব ও কার্যকলাপের প্রতি বিদায়ী প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইর ক্রমবর্ধমান উষ্মা সবার নজর কেড়েছে। সোভিয়েত তাঁবেদার প্রেসিডেন্ট বাবরাক কারমাল সম্পর্কে চুটকি ছিল : ‘বাবরাক কার মাল? রাশিয়ার।’ কারজাই ‘মার্কিন মাল’ হতে চান না। তালেবানরা মতাদর্শের দিক দিয়ে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে লড়াই করা মুজাহিদীনের প্রায় একই ধরনের। তবে বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টিকারী সেই মুজাহিদ নেতাদের অনেকে নানা কারণে তালেবান থেকে দূরে রয়েছেন, এমনকি কেউ কেউ তালেবানের বিরোধীও। প্রবীণ মুজাহিদ নেতা প্রফেসর বুরহানুদ্দীন রব্বানী তালেবানের হাতে নিহত হয়েছেন। গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার তালেবান আমলে দেশ ছেড়েছেন। আর এবার তালেবানের হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে দাঁড়িয়েছিলেন দুর্ধর্ষ মুজাহিদ কমান্ডার আবদুর রব রসুল সাইয়াক। ১৪ এপ্রিল জানা যায়, আফগান প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পয়লা দফায় আবদুল্লাহ প্রায় ৪২ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী আশরাফ গনি পেলেন ৩৭ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট। ২৬ প্রদেশের পাঁচ লাখ ভোট গোনার পর এ ফলাফল জানা যায়। তবে ৩৪ প্রদেশের মোট ৭০ লাখ ভোট গণনার পর প্রথম স্থানে আবদুল্লাহ না-ও থাকতে পারেন। পুরো ফলাফল পেতে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষা করার কথা। দ্বিতীয় দফা নির্বাচন এড়ানো না গেলে তা মে মাসে অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীতে বিভক্ত দেশটিতে ঘটনাক্রমে দ্বিতীয় দফায়ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থ হওয়া অসম্ভব নয়। উল্লেখ করা প্রয়োজন, তালেবানরা প্রধানত যে নৃতাত্তি¡ক গোষ্ঠীর, সেই পশতুনরা আফগানিস্তানের সর্বপ্রধান গোষ্ঠী হলেও তারা মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশের মতো। এরপরই প্রভাবশালী হচ্ছে তাজিকরা যারা জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ। উজবেকরাও সংখ্যায় একেবারে কম নয়। সাবেক প্রেসিডেন্ট বুরহানুদ্দীন রব্বানী ও দুর্ধর্ষ মুজাহিদ নেতা আহমদ শাহ মাসুদ এবং এবারে ইন্তেকাল করেছেন যে ভাইস প্রেসিডেন্ট সেই জেনারেল কাসিম ফাহিম তাজিক জনগোষ্ঠীর লোক। প্রেসিডেন্ট কারজাই পশতুন গোষ্ঠীভুক্ত। আর যুদ্ধবাজ জেনারেল আবদুর রশিদ দোস্তাম একজন উজবেক। তা ছাড়া আছেন শিয়া মতাবলম্বী হাজারা জনগোষ্ঠী। আফগান জাতীয় রাজনীতিতে প্রধানত পশতুন ও তাজিকদের মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতা বিদ্যমান। তালেবানরা আগের চেয়ে তৎপরতা কমিয়ে দিলেও মাঝে মাঝে তাদের দুঃসাহসী অপারেশন রাজধানীর সুরক্ষিত এলাকাতেও আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। এক দিকে গোপন সংলাপের প্রক্রিয়া চললেও অন্য দিকে মাঝে মাঝে বেপরোয়া সহিংসতার মাধ্যমে তালেবান কাবুল প্রশাসনকে চাপে রাখতে চায়। তালেবান ভবিষ্যতে ক্ষমতায় যাওয়া অনিশ্চিত হলেও এটা নিশ্চিত, তাদের নির্মূল করা অসম্ভব। রাজধানী কাবুল, গুরুত্বপূর্ণ জালালাবাদ শহরসহ দেশের পূর্বাঞ্চলে তালেবানের বিভীষিকা হয়তো আরো বহু দিন থাকবে। এই প্রেক্ষাপটে হামিদ কারজাই চেয়েছেন, আগের ঘোষণা মোতাবেক মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনী চলতি বছরই এ দেশ ছেড়ে চলে যাক। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র বরাবর তাকে চাপ দিয়েছে এমন এক চুক্তিতে সই করতে, যার মাধ্যমে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বিদেশী সেনা অনির্ধারিতকাল যাবৎ থেকে যাবে আফগান ভ‚খণ্ডে। নির্বাচনে অংশ নেয়া নেতাদের অনেকেই চুক্তিটি স্বাক্ষর করতে আগ্রহী। প্রসঙ্গক্রমে বলতে হয়, সম্প্রতি কাবুলের সর্বাধিক সুরক্ষিত একটি অত্যাধুনিক হোটেলে তালেবানের ভয়াবহ হামলায় আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থার একজন আফগান সাংবাদিক, তার স্ত্রী ও সন্তান, বিদেশী দাতা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনা তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। এই হামলায় জাতিসঙ্ঘের সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আলীমুজ্জামান নিহত হয়েছেন যিনি বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান।

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির