post

হতে চাই আরোগ্যশিল্পী

১৩ জুন ২০১২
ডা. মুহিব্বুর রহমান রাফে সাত বছরের ছোট্ট শান্তুনু মায়ের সাথে এসেছে কনসালটেশন সেন্টারে। বেচারা চার দিন ধরে ভুগছে জ্বর, সর্দি আর কাশি নিয়ে। ছোট্ট বুকটাতে সাদা পোশাক পরা ব্যক্তিটি স্টেথোস্কোপ লাগিয়ে জোরে শ্বাস নিতে বলতেই সে স্টেথোটি কোমল হাতে ধরে জিজ্ঞাসা করে কাকু এটা কী?’ তিনি বলেন, এটি স্টেথোস্কোপ। পুনরায় প্রশ্ন করে, ‘কাকু, আপনি সাদা জামা পরেছেন কেন?’ তিনি জবাব দেন, ডাক্তার হলে এই জামা পরতে হয়। তাহলে আমিও ডাক্তার হবো, এই জামা পরব। হয়ত এটি ছোট্ট শান্তুনুর না বোঝা অভিব্যক্তি, কিন্তু ছোট্ট বেলায় আমরা অনেকেই ‘এইম ইন লাইফ’ রচনায় চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে কত রচনা লিখেছি, এই কথাটিও তো সত্য। মেডিক্যাল কলেজে পরীক্ষার স্বপ্ন দেখার পাশাপাশি এক ধরনের আশঙ্কাও কাজ করে যে আমি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে পারব কি না? প্রশ্নটির সরাসরি উত্তর দেয়া কঠিন। তবে এসএসসি ও এইচএসসিতে যাদের ভালো ফল রয়েছে, পরীক্ষা-পরবর্তী সময়টাতে যদি সত্যিকার প্রস্তুতি নেয়া যায়, তবে নিঃসন্দেহে এটি সফলতার জন্য বড় নিয়ামক হবে। মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দেয়াটা কঠিন কোনো ব্যাপার না, বরং প্রস্তুতির সময়টুকুকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো খুব গুরুত্ব্পূর্ণ। একথাগুলোই যেসব কথার শেষ কথা, তা নয়; নানা মুনির নানা মত থাকতেই পারে। গাইড বইগুলোতেও বিভিন্ন পরামর্শ বা উপদেশ লেখা থাকে। কিন্তু তারপরও এমন কিছু কথা থেকে যায়, যেগুলো আগে থেকে জেনে নিলে পরীক্ষার প্রিপারেশনটা পূর্ণতা পায়। গর্বিত ডাক্তার হওয়ার চির আরাধ্য স্বপ্ন যাদের সর্বদা আলোড়িত করে, সেই সব মেডিক্যাল কলেজ ভর্তিচ্ছু মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু বিশেষ পরামর্শ দেয়ার প্রয়াস পাচ্ছি। হয়তবা এটি কাজে লাগতে পারে। বিগত দশ বছরে বাংলাদেশে মেডিক্যাল শিক্ষা ও চিকিৎসাব্যবস্থায় প্রভূত অগ্রগতি হয়েছে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চাহিদা। কিন্তু বাংলাদেশে বিপুল জনসংখ্যার প্রতি তিন হাজারের জন্য রয়েছে মাত্র একজন চিকিৎসক আর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কথা বলাই বাহুল্য। মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ করে কাতার, ওমান, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশী চিকিৎসকদের জন্য রয়েছে বিপুল সুযোগ। সময়ের এই চাহিদাকে সামনে রেখে বাংলাদেশেও মেডিক্যাল কলেজসংখ্যা ও সিট বাড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশে এখন সরকারি মেডিক্যাল সংখ্যা প্রায় ২৩টি এবং সিট সংখ্যা বর্তমানে ২২৫০। এর সাথে রয়েছে প্রায় ৪৬টি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ, যাতে সিট সংখ্যা প্রায় ২৫০০। সুতরাং মেডিক্যাল কলেজে পড়ার স্বপ্ন থাকলে, এই সময়ের একটু অক্লান্ত চেষ্টা সারা জীবনের জন্য একটি মাইলফলক হয়ে থাকতে পারে। তবে জেনে রাখা দরকার, বেসরকারি মেডিক্যাল ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন নিয়মে বিগত বছরগুলোতে সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যালে একযোগে এক প্রশ্নে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ফলে ভালো বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোতে ভর্তি হওয়াটাও এখন প্রতিযোগিতামূলক। বিদেশে বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান, চীন, রাশিয়াতেও এমবিবিএস ডিগ্রি করা যায় কিন্তু তার আগে নিশ্চিত হতে হবে, সেটি বিএমডিসি (বাংলাদেশ মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কাউন্সিল) অনুমোদিত কি না? তা নাহলে সব চেষ্টা বিফলে চলে যেতে পারে। বাংলাদেশে যারা সরকারি মেডিক্যালে ভর্তি হতে ইচ্ছুক, তাদের জন্য কয়েকটি তথ্য দেয়ার চেষ্টা করছি। ভর্তির ন্যূনতম যোগ্যতা ষ    এসএসসি ও এইচএসসি মিলে ন্যূনতম জিপিএ-৪ (চতুর্থ বিষয়সহ) ষ    প্রতিটি পরীক্ষায় জিপিএ কমপক্ষে ৩.৫০ ষ    জীববিজ্ঞান আবশ্যক (ন্যূনতম জিপিএ ৩.৫০) পরীক্ষা পদ্ধতি ষ    মোট নম্বর = ২০০ ষ    এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল থেকে স্কোর যোগ হবে = ১০০ নম্বর ষ    (এসএসসি জিপিএ-৫ গুণ ৮ = ৪০ ও এইচএসসি জিপিএ-৫ গুণ ১২ = ৬০) ২. এমসিকিউ পদ্ধতিতে লিখিত পরীক্ষা ১০০ নম্বর- (জীববিজ্ঞান-৩০, পদার্থবিজ্ঞান-২০, রসায়ন-২৫, ইংরেজি-১৫, সাধারণ জ্ঞান-১০) এভাবে হিসাব করে মোট ৩৩৪০ জনের চূড়ান্ত মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়। একই সাথে ৪০০ জনের অপেক্ষমাণ তালিকা প্রকাশ করা হয়। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ৪০টি আসন বরাদ্দ থাকে। এক্ষেত্রে পিতা বা মাতা মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার প্রমাণপত্র দরখাস্তের সাথে জমা দিতে হয়। ভর্তি পরীক্ষার জন্য টিপস ১. মনে রাখতে হবে, সময় সংক্ষেপ : ভর্তি পরীক্ষার আগে পূর্ণ প্রস্তুতি নেয়াটা খুব জরুরি। সময় খুবই কম, কিন্তু সিলেবাস পাহাড়সম। বিশেষ করে পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞানের মোট ৬টি বইয়ের খুঁটিনাটি মাথায় রাখাটা আবশ্যক। খুব কঠিন একটা সত্যি কথা হলো, ভর্তি পরীক্ষার আগে প্রস্তুতি নেবার এই সময়টুকু একবার নষ্ট করে ফেললে কোন কিছুর বিনিময়েই আর তা ফিরে আসবে না। সত্যিই যদি ভালো প্রিপারেশন নিতে হয়, দৈনিক কমপক্ষে ১৫ ঘণ্টা শ্রম দিয়ে সিলেবাস শেষ করতে হবে এবং যত বেশি সম্ভব রিভিশন দিতে হবে। ২. মেডিক্যাল ভর্তি কোচিং : পরীক্ষার আগে কোচিং সেন্টারে ভর্তি হওয়া সবার জন্য জরুরি নয়, তবে যখন মনে হবে যে বন্ধু-বান্ধবেরা সবাই ভর্তি হয়েছে, তখন ভর্তি না হলে কনফিডেন্স কমে যেতে পারে। সেটি এড়াতে স্বনামধন্য যে কোন কোচিংয়ে ভর্তি হওয়া যেতে পারে। তবে কখনই দুটো কোচিং একসাথে নয়, এটি হবে চরমতম বোকামি। শুধু পড়াশোনা করাই মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়। পড়তে হবে কনসেপ্ট ক্লিয়ার করে। কারণ অনেক সময় প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হয় ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে। ‘অমুক ভাইয়ের পারসোনাল ব্যাচ’ কিংবা কোচিং সেন্টারগুলোর ল্যাপটপের প্রলোভনে পড়াটা যুক্তিহীন। মনে রাখতে হবে, প্রথম টার্গেট হচ্ছে মেডিক্যালে ভর্তি হওয়া, মেধাস্থান নয়। তাছাড়া তারা যেসব কথা বলবেন বা লেকচার শিট দেবেন বা পরীক্ষাগুলো নেবেন, সেগুলো এখন গাইড বইগুলোতেই সহজলভ্য এবং এখন নীলক্ষেতে কিনতে পাওয়া যায়। ৩. সঠিক নিয়মে পড়া : মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় ভাল করার জন্য প্রথমে এইচএসসি-র টেক্সট বইগুলো ভালোভাবে লাল নীল দাগ দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বারবার পড়তে হবে। কনফিউজিং বিষয়গুলোর প্রতি বারবার লক্ষ্য রাখতে হবে। মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় খুব বড়জোর দুই থেকে চারটি প্রশ্নে ব্ল্যাঙ্ক অ্যানসার, মাল্টি অ্যানসার থাকে। একজন স্টুডেন্টের উচিত হবে, ব্ল্যাঙ্ক অ্যানসার, মাল্টি অ্যানসার না খুঁজে স্বাভাবিকভাবে সামনের দিকে এগোনো, কারণ এতে পরীক্ষার গড় স্পিড ভালো থাকে ও পরীক্ষা ভালো হয়। ৪. বারবার আত্ম যাচাই : মেডিক্যাল ভর্তির জন্য যে কোন এমসিকিউ পরীক্ষা দেবার পর সেটার ফিডব্যাক নেয়া এবং সঠিক উত্তরটি বই থেকে দেখে নেয়াটা জরুরি। পরীক্ষার আগের মাসে যে কোন ১/২ টি কোচিং সেন্টারের মডেল টেস্টগুলো দেয়াটা জরুরি। ভর্তি পরীক্ষার আগ পর্যন্ত চলা এসব মডেল টেস্টগুলোর প্রশ্নপত্র টাকা দিলেই কিনে নেয়া যায় কোচিংগুলো থেকে। তারপর বাসায় বসে ফটোকপি করা ওএমআর শিটের মধ্যে পরীক্ষাগুলো দেয়াটা জরুরি। ৫. বই নির্বাচন : মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার জন্য বই নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিগত ৫ থেকে ৭ বছরের প্রশ্নপত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রাণিবিজ্ঞানে আজমল ও নাসিম বানু ম্যাডামের বই, উদ্ভিদ বিজ্ঞানে অধ্যাপক আবুল হাসানের বই, পদার্থবিজ্ঞানে অধ্যাপক শাজাহান তপন, রসায়ন বিজ্ঞানে ড. হাজারী ও নাগ থেকে প্রশ্ন হয়ে থাকে। ইংরেজির জন্য বোর্ড বই ও বাজারের যে কোন ইংরেজি গ্রামার বই এবং সাধারণ জ্ঞানের জন্য বাজারের যে কোন সাধারণ জ্ঞানের বই ও বিসিএস গাইড থেকে সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন পড়া যেতে পারে। কোন একটি সাবজেক্টের জন্য একাধিক লেখকের বই রয়েছে, কোন বই থেকে কখন কিভাবে প্রশ্ন হবে তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। এতে বিচলিত না হয়ে যে কোন একজন লেখকের বই ফলো করাটাই যথেষ্ট। এক্ষেত্রে ওই বিষয়ের অন্যান্য লেখকের লিখিত তথ্যগুলো কেনা গাইডগুলোতেই সুন্দর করে সাজানো থাকে। এ ছাড়া গাইড বই হিসেবে ১. রেটিনা গাইড (প্রশ্নব্যাংকসহ) ২. রয়েল গাইড, ৩. ইংরেজির জন্য অ্যাপেক্স ৪. সাধারণ জ্ঞানের জন্য- এমপি থ্রি ৫. জীববৈচিত্র্য (প্রাণিবিজ্ঞান এবং উদ্ভিদবিজ্ঞানের জন্য নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন সংবলিত বই) ফলো করা যেতে পারে এবং বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির জন্য বিগত বছরের প্রশ্নগুলোও সলভ এবং শুধুমাত্র পদার্থ, গণিত রসায়নের গাণিতিক সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে। ৬. বিষয়ভিত্তিক পড়ার কিছু টেকনিক : ষ    পদার্থ এবং রসায়নের গাণিতিক সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য বিগত দশ বছরে আসা নিয়মগুলো অনুযায়ী ও উদাহরণের গাণিতিক সমস্যাগুলোর নিয়ম ভালো করে রপ্ত করতে হবে। ষ    জীববিজ্ঞান, পদার্থ বিজ্ঞান ও রসায়ন বিজ্ঞানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ চার্ট রয়েছে, যেগুলো থেকে মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন থাকে। এ ছাড়া জীববিজ্ঞানে কিছু ফ্লোচার্ট রয়েছে, যেগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ষ    সাধারণ জ্ঞান বই থেকে বাংলাদেশ বিষয়াবলি এবং আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে। এই বইটিতে বিভিন্ন পরীক্ষার যত প্রশ্ন আছে, সব আত্মস্থ করে ফেলতে হবে। নিয়মিত পত্রিকা পড়াটাও জরুরি। ষ    বিগত বছরগুলোর মেডিক্যাল ও ডেন্টাল প্রশ্নপত্রে যেসব বিষয়ের ওপর ইংরেজি প্রশ্নগুলো এসেছে, সেগুলো সলভ করার পাশাপাশি ভালো কোন গ্রামার বই থেকে ওই বিষয়গুলো আরও বিস্তারিত পড়তে হবে। ষ    পরীক্ষার আগ পর্যন্ত যত দিন আছে সেটিকে ভাগ করে নিয়ে বারবার রিভিশন দেবার চেষ্টা করতে হবে। প্রথমবার বা দ্বিতীয়বার সিলেবাস শেষ করে অনেকে হতাশায় ভোগে, কেননা বেশির ভাগ তথ্যই মাথায় থাকে না। এখানে হতাশ হলে চলবে না, এটি স্বাভাবিক। ধৈর্য ধরে বারবার সিলেবাস রিভিশন দিতে হবে এবং যত বেশি সম্ভব এমসিকিউ সল্ভ করে নিজেকে যাচাই করতে হবে। প্রতিদিনের পড়া কতটুকু হলো, তা লিখে রাখতে হবে। এতে করে পড়া কতটুকু শেষ হলো, সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। ষ    পড়ার সময় একটি বিষয়ের ওপর সমতথ্য সংগ্রহ করে নিজস্ব নোট করে পড়তে পারলে ভালো হয়। পরীক্ষার আগ মুহূর্তে সেটি টনিকের কাজ দেবে। বিগত দশ বছরের মেডিক্যাল এবং ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নোত্তর আত্মস্থ করতে হবে। পাশাপাশি প্রতিদিন ইংরেজি এবং সাধারণ জ্ঞান পড়তে হবে। ৭. প্রশ্নের ধরন বুঝে পড়া : মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় চার ধরনের প্রশ্ন হয়ে থাকে- তথ্যভিত্তিক : এ ধরনের প্রশ্নপত্র সাধারণত একটি তথ্যের ওপর ভিত্তি করে থাকে। বর্ণনামূলক : এ ধরনের প্রশ্ন ১/২/৩/৪টি অনুশীলনী থেকে লাইন এনে একটি প্রশ্নে রূপান্তরিত হয়। মিলকরণ : মিলকরণ থেকে প্রতি বছর ৮ থেকে ১০টি প্রশ্ন হয়। গাণিতিক সমস্যামূলক : গত দুই তিন বছর ধরে ভর্তি পরীক্ষায় কিছু গাণিতিক সমস্যামূলক প্রশ্ন করা হচ্ছে। পার্থক্য বিষয়ক প্রশ্ন : মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় ১৮ থেকে ২০টি প্রশ্ন পার্থক্য অংশ থেকে এসে থাকে। সে জন্য পার্থক্যগুলো ভালোভাবে পড়া উচিত। অনেক সময় দেখা যায়, ভর্তি পরীক্ষায় কোন বছর যে বিষয় থেকে প্রশ্ন আসে তার দুই এক বছর পর একই বিষয় থেকে অন্য প্রশ্ন আসে। উদাহরণস্বরূপ ২০০২-০৩ সালে এসেছে- বরফ তৈরি এবং পচনশীল দ্রব্য সংরক্ষণে নিচের কোনটি ব্যবহার করা হয়। (ক) তরল অ্যামোনিয়া (খ) তরল কার্বন (গ) তরল সালফার (ঘ) তরল নাইট্রেট। উত্তর : (ক) তরল অ্যামোনিয়া। ঠিক তার দুই বছর পরই (২০০৪-০৫) - তরল অ্যামোনিয়া সর্বনিম্ন কত তাপমাত্রা সৃষ্টি করতে পারে। বরফ তৈরিতে ও পচনশীল দ্রব্য সংরক্ষণে ব্যবহার করা হয়। (ক) -২০ ডিগ্রি সে: (খ) -৩৩ ডিগ্রি সে: (গ) -৩৫ ডিগ্রি সে: (ঘ) -২৫ ডিগ্রি সে:। উত্তর : (খ) -৩৩ ডিগ্রি সে:। অতএব যে কোন বিষয় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়া উচিত। ৮. পরীক্ষার আগে জানার বিষয় : ষ    অনেক পরীক্ষার্থী পরীক্ষার আগে নার্ভাস ফিল করে থাকে। ফলে তারা পরীক্ষায় খারাপ করে ও ভর্তির সুযোগ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। তাই পরীক্ষার আগে নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মূল পরীক্ষার কমপক্ষে ২ দিন আগে প্রিপারেশন শেষ করুন। রিলাক্স মুডে থাকুন। নিজের সিট কোথায় পড়লো, সেটা একবার দেখে আসাটা বুদ্ধিমানের কাজ। ষ    মূল পরীক্ষার ঠিক আগে আগে প্রায় প্রতিবার খবর বের হয় যে, মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র আউট হয়েছে। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাইনাল পরীক্ষার আগের রাতে আউট হয়েছে, অমুক জায়গায় এত লাখ টাকায় প্রশ্নপত্র পাওয়া যাচ্ছে, অমুক মেডিক্যাল কলেজের ভাইয়ার কাছে কঠিন সাজেশন আছেÑ এসব খবর থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকতে হবে। ঠিক মতো প্রস্তুতি নেয়া থাকলে আপনিও পারবেন যুদ্ধের ময়দানে মেধাযুদ্ধে অন্যকে হারাতে, এখানে টাকা দিয়ে প্রশ্নপত্র কিনে পরীক্ষা দেয়াতে ক্রেডিটের কিছু নেই। মনে রাখবেন, বোনাস খুঁজতে গিয়ে আসলটাই যেন না হারিয়ে যায়। ষ    প্রশ্নপত্র পাওয়ার পর সাবধানে নির্ধারিত ঘরগুলো পূরণ করুন। কোন অবস্থাতেই যেন ওএমআর ফরমের নির্ধারিত ঘরগুলো পূরণে ভুল না হয়। ষ    প্রথম ৩০ মিনিটে ৫৮-৬০টি এমসিকিউ প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ফেলতে হবে। পরের ২০ মিনিটে বাকি ৪০টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। কোন একটি প্রশ্ন না পারলে সেটির পেছনে অযথা সময় নষ্ট করা যাবে না। শেষ ৮-১০ মিনিট রিভিশন এবং উত্তর না দেয়া প্রশ্নগুলো সল্ভ করার চেষ্টা করতে হবে। ষ    পরীক্ষার প্রথম দিকে গাণিতিক সমস্যার কাজ করা উচিত নয়। কারণ অঙ্কের উত্তর না মিললে মাথা গরম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলে পরীক্ষা খারাপ হয়। পরীক্ষার মাঝামাঝি সময়ে গাণিতিক সমস্যার কাজ করা উচিত। শেষ কথা : মেডিক্যাল কলেজে পড়ার ক্ষেত্রে একইসাথে বোঝা ও মুখস্থ করার যোগ্যতা দুটোই খুব প্রয়োজন। আর এমবিবিএস পাস করার পর অন্তত আরও বেশ কয়েক বছর পড়াশোনার প্রয়োজন হবে, নিজেকে বিশেষজ্ঞ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য। সুতরাং এ বিষয়টি মাথায় রেখেই সাবজেক্ট চয়েস করা প্রয়োজন। না বুঝে, ঝোঁকের বশে, পরিবারের চাপে পড়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হলে, পরে তা ভুল প্রমাণিত হতে পারে। তাই প্রয়োজনে কাছের সিনিয়রদের সাথে আলাপ করা যেতে পারে। তবে এটি মেধাবীদের অঙ্গন, কোন সন্দেহ নেই। যিনি সুন্দর করে সুচারুভাবে তার কাজটি করেন, তিনিই শিল্পী। তেমনি চিকিৎসকও হতে পারে একজন শিল্পী; আরোগ্য শিল্পী। জনসংখ্যার তুলনায় ষোল কোটি মানুষের এই দেশে সংখ্যা ও মানের বিচারে চিকিৎসক বা আরোগ্যশিল্পীর যথেষ্ট অভাব রয়েছে। তার চেয়েও বেশি অভাব সত্যিকারের দেশপ্রেমিক, দরদি মনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মতো যাদের মন রয়েছে, পীড়িতের শয্যাপাশে দাঁড়ানোর জন্য যাদের মন কাঁদে, দেশের জন্য, মানুষের জন্য সত্যিকার অর্থেই যাদের কিছু করতে ইচ্ছা করে, মানবতাকে যারা আর্থিক লাভালাভের চাইতে বেশি প্রাধান্য দেয়, সেই সব মেধাবীর অবশ্যই নিজেকে এ পথে গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে। শুধু একজন চিকিৎসক নয়, বরং একজন আরোগ্যশিল্পী হওয়ার মানসিকতা নিয়ে। সবার জন্য শুভকামনা। লেখক : এমডি অধ্যয়নরত, ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগ, বিএসএমএমইউসাত বছরের ছোট্ট শান্তুনু মায়ের সাথে এসেছে কনসালটেশন সেন্টারে। বেচারা চার দিন ধরে ভুগছে জ্বর, সর্দি আর কাশি নিয়ে। ছোট্ট বুকটাতে সাদা পোশাক পরা ব্যক্তিটি স্টেথোস্কোপ লাগিয়ে জোরে শ্বাস নিতে বলতেই সে স্টেথোটি কোমল হাতে ধরে জিজ্ঞাসা করে কাকু এটা কী?’ তিনি বলেন, এটি স্টেথোস্কোপ। পুনরায় প্রশ্ন করে, ‘কাকু, আপনি সাদা জামা পরেছেন কেন?’ তিনি জবাব দেন, ডাক্তার হলে এই জামা পরতে হয়। তাহলে আমিও ডাক্তার হবো, এই জামা পরব। হয়ত এটি ছোট্ট শান্তুনুর না বোঝা অভিব্যক্তি, কিন্তু ছোট্ট বেলায় আমরা অনেকেই ‘এইম ইন লাইফ’ রচনায় চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে কত রচনা লিখেছি, এই কথাটিও তো সত্য। মেডিক্যাল কলেজে পরীক্ষার স্বপ্ন দেখার পাশাপাশি এক ধরনের আশঙ্কাও কাজ করে যে আমি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে পারব কি না? প্রশ্নটির সরাসরি উত্তর দেয়া কঠিন। তবে এসএসসি ও এইচএসসিতে যাদের ভালো ফল রয়েছে, পরীক্ষা-পরবর্তী সময়টাতে যদি সত্যিকার প্রস্তুতি নেয়া যায়, তবে নিঃসন্দেহে এটি সফলতার জন্য বড় নিয়ামক হবে। মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দেয়াটা কঠিন কোনো ব্যাপার না, বরং প্রস্তুতির সময়টুকুকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো খুব গুরুত্ব্পূর্ণ। একথাগুলোই যেসব কথার শেষ কথা, তা নয়; নানা মুনির নানা মত থাকতেই পারে। গাইড বইগুলোতেও বিভিন্ন পরামর্শ বা উপদেশ লেখা থাকে। কিন্তু তারপরও এমন কিছু কথা থেকে যায়, যেগুলো আগে থেকে জেনে নিলে পরীক্ষার প্রিপারেশনটা পূর্ণতা পায়। গর্বিত ডাক্তার হওয়ার চির আরাধ্য স্বপ্ন যাদের সর্বদা আলোড়িত করে, সেই সব মেডিক্যাল কলেজ ভর্তিচ্ছু মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু বিশেষ পরামর্শ দেয়ার প্রয়াস পাচ্ছি। হয়তবা এটি কাজে লাগতে পারে। বিগত দশ বছরে বাংলাদেশে মেডিক্যাল শিক্ষা ও চিকিৎসাব্যবস্থায় প্রভূত অগ্রগতি হয়েছে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চাহিদা। কিন্তু বাংলাদেশে বিপুল জনসংখ্যার প্রতি তিন হাজারের জন্য রয়েছে মাত্র একজন চিকিৎসক আর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কথা বলাই বাহুল্য। মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ করে কাতার, ওমান, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশী চিকিৎসকদের জন্য রয়েছে বিপুল সুযোগ। সময়ের এই চাহিদাকে সামনে রেখে বাংলাদেশেও মেডিক্যাল কলেজসংখ্যা ও সিট বাড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশে এখন সরকারি মেডিক্যাল সংখ্যা প্রায় ২৩টি এবং সিট সংখ্যা বর্তমানে ২২৫০। এর সাথে রয়েছে প্রায় ৪৬টি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ, যাতে সিট সংখ্যা প্রায় ২৫০০। সুতরাং মেডিক্যাল কলেজে পড়ার স্বপ্ন থাকলে, এই সময়ের একটু অক্লান্ত চেষ্টা সারা জীবনের জন্য একটি মাইলফলক হয়ে থাকতে পারে। তবে জেনে রাখা দরকার, বেসরকারি মেডিক্যাল ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন নিয়মে বিগত বছরগুলোতে সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যালে একযোগে এক প্রশ্নে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ফলে ভালো বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোতে ভর্তি হওয়াটাও এখন প্রতিযোগিতামূলক। বিদেশে বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান, চীন, রাশিয়াতেও এমবিবিএস ডিগ্রি করা যায় কিন্তু তার আগে নিশ্চিত হতে হবে, সেটি বিএমডিসি (বাংলাদেশ মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কাউন্সিল) অনুমোদিত কি না? তা নাহলে সব চেষ্টা বিফলে চলে যেতে পারে। বাংলাদেশে যারা সরকারি মেডিক্যালে ভর্তি হতে ইচ্ছুক, তাদের জন্য কয়েকটি তথ্য দেয়ার চেষ্টা করছি। ভর্তির ন্যূনতম যোগ্যতা ষ    এসএসসি ও এইচএসসি মিলে ন্যূনতম জিপিএ-৪ (চতুর্থ বিষয়সহ) ষ    প্রতিটি পরীক্ষায় জিপিএ কমপক্ষে ৩.৫০ ষ    জীববিজ্ঞান আবশ্যক (ন্যূনতম জিপিএ ৩.৫০) পরীক্ষা পদ্ধতি ষ    মোট নম্বর = ২০০ ষ    এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল থেকে স্কোর যোগ হবে = ১০০ নম্বর ষ    (এসএসসি জিপিএ-৫ গুণ ৮ = ৪০ ও এইচএসসি জিপিএ-৫ গুণ ১২ = ৬০) ২. এমসিকিউ পদ্ধতিতে লিখিত পরীক্ষা ১০০ নম্বর- (জীববিজ্ঞান-৩০, পদার্থবিজ্ঞান-২০, রসায়ন-২৫, ইংরেজি-১৫, সাধারণ জ্ঞান-১০) এভাবে হিসাব করে মোট ৩৩৪০ জনের চূড়ান্ত মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়। একই সাথে ৪০০ জনের অপেক্ষমাণ তালিকা প্রকাশ করা হয়। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ৪০টি আসন বরাদ্দ থাকে। এক্ষেত্রে পিতা বা মাতা মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার প্রমাণপত্র দরখাস্তের সাথে জমা দিতে হয়। ভর্তি পরীক্ষার জন্য টিপস ১. মনে রাখতে হবে, সময় সংক্ষেপ : ভর্তি পরীক্ষার আগে পূর্ণ প্রস্তুতি নেয়াটা খুব জরুরি। সময় খুবই কম, কিন্তু সিলেবাস পাহাড়সম। বিশেষ করে পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞানের মোট ৬টি বইয়ের খুঁটিনাটি মাথায় রাখাটা আবশ্যক। খুব কঠিন একটা সত্যি কথা হলো, ভর্তি পরীক্ষার আগে প্রস্তুতি নেবার এই সময়টুকু একবার নষ্ট করে ফেললে কোন কিছুর বিনিময়েই আর তা ফিরে আসবে না। সত্যিই যদি ভালো প্রিপারেশন নিতে হয়, দৈনিক কমপক্ষে ১৫ ঘণ্টা শ্রম দিয়ে সিলেবাস শেষ করতে হবে এবং যত বেশি সম্ভব রিভিশন দিতে হবে। ২. মেডিক্যাল ভর্তি কোচিং : পরীক্ষার আগে কোচিং সেন্টারে ভর্তি হওয়া সবার জন্য জরুরি নয়, তবে যখন মনে হবে যে বন্ধু-বান্ধবেরা সবাই ভর্তি হয়েছে, তখন ভর্তি না হলে কনফিডেন্স কমে যেতে পারে। সেটি এড়াতে স্বনামধন্য যে কোন কোচিংয়ে ভর্তি হওয়া যেতে পারে। তবে কখনই দুটো কোচিং একসাথে নয়, এটি হবে চরমতম বোকামি। শুধু পড়াশোনা করাই মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়। পড়তে হবে কনসেপ্ট ক্লিয়ার করে। কারণ অনেক সময় প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হয় ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে। ‘অমুক ভাইয়ের পারসোনাল ব্যাচ’ কিংবা কোচিং সেন্টারগুলোর ল্যাপটপের প্রলোভনে পড়াটা যুক্তিহীন। মনে রাখতে হবে, প্রথম টার্গেট হচ্ছে মেডিক্যালে ভর্তি হওয়া, মেধাস্থান নয়। তাছাড়া তারা যেসব কথা বলবেন বা লেকচার শিট দেবেন বা পরীক্ষাগুলো নেবেন, সেগুলো এখন গাইড বইগুলোতেই সহজলভ্য এবং এখন নীলক্ষেতে কিনতে পাওয়া যায়। ৩. সঠিক নিয়মে পড়া : মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় ভাল করার জন্য প্রথমে এইচএসসি-র টেক্সট বইগুলো ভালোভাবে লাল নীল দাগ দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বারবার পড়তে হবে। কনফিউজিং বিষয়গুলোর প্রতি বারবার লক্ষ্য রাখতে হবে। মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় খুব বড়জোর দুই থেকে চারটি প্রশ্নে ব্ল্যাঙ্ক অ্যানসার, মাল্টি অ্যানসার থাকে। একজন স্টুডেন্টের উচিত হবে, ব্ল্যাঙ্ক অ্যানসার, মাল্টি অ্যানসার না খুঁজে স্বাভাবিকভাবে সামনের দিকে এগোনো, কারণ এতে পরীক্ষার গড় স্পিড ভালো থাকে ও পরীক্ষা ভালো হয়। ৪. বারবার আত্ম যাচাই : মেডিক্যাল ভর্তির জন্য যে কোন এমসিকিউ পরীক্ষা দেবার পর সেটার ফিডব্যাক নেয়া এবং সঠিক উত্তরটি বই থেকে দেখে নেয়াটা জরুরি। পরীক্ষার আগের মাসে যে কোন ১/২ টি কোচিং সেন্টারের মডেল টেস্টগুলো দেয়াটা জরুরি। ভর্তি পরীক্ষার আগ পর্যন্ত চলা এসব মডেল টেস্টগুলোর প্রশ্নপত্র টাকা দিলেই কিনে নেয়া যায় কোচিংগুলো থেকে। তারপর বাসায় বসে ফটোকপি করা ওএমআর শিটের মধ্যে পরীক্ষাগুলো দেয়াটা জরুরি। ৫. বই নির্বাচন : মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার জন্য বই নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিগত ৫ থেকে ৭ বছরের প্রশ্নপত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রাণিবিজ্ঞানে আজমল ও নাসিম বানু ম্যাডামের বই, উদ্ভিদ বিজ্ঞানে অধ্যাপক আবুল হাসানের বই, পদার্থবিজ্ঞানে অধ্যাপক শাজাহান তপন, রসায়ন বিজ্ঞানে ড. হাজারী ও নাগ থেকে প্রশ্ন হয়ে থাকে। ইংরেজির জন্য বোর্ড বই ও বাজারের যে কোন ইংরেজি গ্রামার বই এবং সাধারণ জ্ঞানের জন্য বাজারের যে কোন সাধারণ জ্ঞানের বই ও বিসিএস গাইড থেকে সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন পড়া যেতে পারে। কোন একটি সাবজেক্টের জন্য একাধিক লেখকের বই রয়েছে, কোন বই থেকে কখন কিভাবে প্রশ্ন হবে তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। এতে বিচলিত না হয়ে যে কোন একজন লেখকের বই ফলো করাটাই যথেষ্ট। এক্ষেত্রে ওই বিষয়ের অন্যান্য লেখকের লিখিত তথ্যগুলো কেনা গাইডগুলোতেই সুন্দর করে সাজানো থাকে। এ ছাড়া গাইড বই হিসেবে ১. রেটিনা গাইড (প্রশ্নব্যাংকসহ) ২. রয়েল গাইড, ৩. ইংরেজির জন্য অ্যাপেক্স ৪. সাধারণ জ্ঞানের জন্য- এমপি থ্রি ৫. জীববৈচিত্র্য (প্রাণিবিজ্ঞান এবং উদ্ভিদবিজ্ঞানের জন্য নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন সংবলিত বই) ফলো করা যেতে পারে এবং বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির জন্য বিগত বছরের প্রশ্নগুলোও সলভ এবং শুধুমাত্র পদার্থ, গণিত রসায়নের গাণিতিক সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে। ৬. বিষয়ভিত্তিক পড়ার কিছু টেকনিক : পদার্থ এবং রসায়নের গাণিতিক সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য বিগত দশ বছরে আসা নিয়মগুলো অনুযায়ী ও উদাহরণের গাণিতিক সমস্যাগুলোর নিয়ম ভালো করে রপ্ত করতে হবে। জীববিজ্ঞান, পদার্থ বিজ্ঞান ও রসায়ন বিজ্ঞানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ চার্ট রয়েছে, যেগুলো থেকে মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন থাকে। এ ছাড়া জীববিজ্ঞানে কিছু ফ্লোচার্ট রয়েছে, যেগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ জ্ঞান বই থেকে বাংলাদেশ বিষয়াবলি এবং আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে। এই বইটিতে বিভিন্ন পরীক্ষার যত প্রশ্ন আছে, সব আত্মস্থ করে ফেলতে হবে। নিয়মিত পত্রিকা পড়াটাও জরুরি। বিগত বছরগুলোর মেডিক্যাল ও ডেন্টাল প্রশ্নপত্রে যেসব বিষয়ের ওপর ইংরেজি প্রশ্নগুলো এসেছে, সেগুলো সলভ করার পাশাপাশি ভালো কোন গ্রামার বই থেকে ওই বিষয়গুলো আরও বিস্তারিত পড়তে হবে। পরীক্ষার আগ পর্যন্ত যত দিন আছে সেটিকে ভাগ করে নিয়ে বারবার রিভিশন দেবার চেষ্টা করতে হবে। প্রথমবার বা দ্বিতীয়বার সিলেবাস শেষ করে অনেকে হতাশায় ভোগে, কেননা বেশির ভাগ তথ্যই মাথায় থাকে না। এখানে হতাশ হলে চলবে না, এটি স্বাভাবিক। ধৈর্য ধরে বারবার সিলেবাস রিভিশন দিতে হবে এবং যত বেশি সম্ভব এমসিকিউ সল্ভ করে নিজেকে যাচাই করতে হবে। প্রতিদিনের পড়া কতটুকু হলো, তা লিখে রাখতে হবে। এতে করে পড়া কতটুকু শেষ হলো, সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। পড়ার সময় একটি বিষয়ের ওপর সমতথ্য সংগ্রহ করে নিজস্ব নোট করে পড়তে পারলে ভালো হয়। পরীক্ষার আগ মুহূর্তে সেটি টনিকের কাজ দেবে। বিগত দশ বছরের মেডিক্যাল এবং ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নোত্তর আত্মস্থ করতে হবে। পাশাপাশি প্রতিদিন ইংরেজি এবং সাধারণ জ্ঞান পড়তে হবে। ৭. প্রশ্নের ধরন বুঝে পড়া : মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় চার ধরনের প্রশ্ন হয়ে থাকে- তথ্যভিত্তিক : এ ধরনের প্রশ্নপত্র সাধারণত একটি তথ্যের ওপর ভিত্তি করে থাকে। বর্ণনামূলক : এ ধরনের প্রশ্ন ১/২/৩/৪টি অনুশীলনী থেকে লাইন এনে একটি প্রশ্নে রূপান্তরিত হয়। মিলকরণ : মিলকরণ থেকে প্রতি বছর ৮ থেকে ১০টি প্রশ্ন হয়। গাণিতিক সমস্যামূলক : গত দুই তিন বছর ধরে ভর্তি পরীক্ষায় কিছু গাণিতিক সমস্যামূলক প্রশ্ন করা হচ্ছে। পার্থক্য বিষয়ক প্রশ্ন : মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় ১৮ থেকে ২০টি প্রশ্ন পার্থক্য অংশ থেকে এসে থাকে। সে জন্য পার্থক্যগুলো ভালোভাবে পড়া উচিত। অনেক সময় দেখা যায়, ভর্তি পরীক্ষায় কোন বছর যে বিষয় থেকে প্রশ্ন আসে তার দুই এক বছর পর একই বিষয় থেকে অন্য প্রশ্ন আসে। উদাহরণস্বরূপ ২০০২-০৩ সালে এসেছে- বরফ তৈরি এবং পচনশীল দ্রব্য সংরক্ষণে নিচের কোনটি ব্যবহার করা হয়। (ক) তরল অ্যামোনিয়া (খ) তরল কার্বন (গ) তরল সালফার (ঘ) তরল নাইট্রেট। উত্তর : (ক) তরল অ্যামোনিয়া। ঠিক তার দুই বছর পরই (২০০৪-০৫) - তরল অ্যামোনিয়া সর্বনিম্ন কত তাপমাত্রা সৃষ্টি করতে পারে। বরফ তৈরিতে ও পচনশীল দ্রব্য সংরক্ষণে ব্যবহার করা হয়। (ক) -২০ ডিগ্রি সে: (খ) -৩৩ ডিগ্রি সে: (গ) -৩৫ ডিগ্রি সে: (ঘ) -২৫ ডিগ্রি সে:। উত্তর : (খ) -৩৩ ডিগ্রি সে:। অতএব যে কোন বিষয় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়া উচিত। ৮. পরীক্ষার আগে জানার বিষয় : অনেক পরীক্ষার্থী পরীক্ষার আগে নার্ভাস ফিল করে থাকে। ফলে তারা পরীক্ষায় খারাপ করে ও ভর্তির সুযোগ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। তাই পরীক্ষার আগে নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মূল পরীক্ষার কমপক্ষে ২ দিন আগে প্রিপারেশন শেষ করুন। রিলাক্স মুডে থাকুন। নিজের সিট কোথায় পড়লো, সেটা একবার দেখে আসাটা বুদ্ধিমানের কাজ। মূল পরীক্ষার ঠিক আগে আগে প্রায় প্রতিবার খবর বের হয় যে, মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র আউট হয়েছে। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাইনাল পরীক্ষার আগের রাতে আউট হয়েছে, অমুক জায়গায় এত লাখ টাকায় প্রশ্নপত্র পাওয়া যাচ্ছে, অমুক মেডিক্যাল কলেজের ভাইয়ার কাছে কঠিন সাজেশন আছেÑ এসব খবর থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকতে হবে। ঠিক মতো প্রস্তুতি নেয়া থাকলে আপনিও পারবেন যুদ্ধের ময়দানে মেধাযুদ্ধে অন্যকে হারাতে, এখানে টাকা দিয়ে প্রশ্নপত্র কিনে পরীক্ষা দেয়াতে ক্রেডিটের কিছু নেই। মনে রাখবেন, বোনাস খুঁজতে গিয়ে আসলটাই যেন না হারিয়ে যায়। প্রশ্নপত্র পাওয়ার পর সাবধানে নির্ধারিত ঘরগুলো পূরণ করুন। কোন অবস্থাতেই যেন ওএমআর ফরমের নির্ধারিত ঘরগুলো পূরণে ভুল না হয়। প্রথম ৩০ মিনিটে ৫৮-৬০টি এমসিকিউ প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ফেলতে হবে। পরের ২০ মিনিটে বাকি ৪০টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। কোন একটি প্রশ্ন না পারলে সেটির পেছনে অযথা সময় নষ্ট করা যাবে না। শেষ ৮-১০ মিনিট রিভিশন এবং উত্তর না দেয়া প্রশ্নগুলো সল্ভ করার চেষ্টা করতে হবে। পরীক্ষার প্রথম দিকে গাণিতিক সমস্যার কাজ করা উচিত নয়। কারণ অঙ্কের উত্তর না মিললে মাথা গরম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলে পরীক্ষা খারাপ হয়। পরীক্ষার মাঝামাঝি সময়ে গাণিতিক সমস্যার কাজ করা উচিত। শেষ কথা : মেডিক্যাল কলেজে পড়ার ক্ষেত্রে একইসাথে বোঝা ও মুখস্থ করার যোগ্যতা দুটোই খুব প্রয়োজন। আর এমবিবিএস পাস করার পর অন্তত আরও বেশ কয়েক বছর পড়াশোনার প্রয়োজন হবে, নিজেকে বিশেষজ্ঞ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য। সুতরাং এ বিষয়টি মাথায় রেখেই সাবজেক্ট চয়েস করা প্রয়োজন। না বুঝে, ঝোঁকের বশে, পরিবারের চাপে পড়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হলে, পরে তা ভুল প্রমাণিত হতে পারে। তাই প্রয়োজনে কাছের সিনিয়রদের সাথে আলাপ করা যেতে পারে। তবে এটি মেধাবীদের অঙ্গন, কোন সন্দেহ নেই। যিনি সুন্দর করে সুচারুভাবে তার কাজটি করেন, তিনিই শিল্পী। তেমনি চিকিৎসকও হতে পারে একজন শিল্পী; আরোগ্য শিল্পী। জনসংখ্যার তুলনায় ষোল কোটি মানুষের এই দেশে সংখ্যা ও মানের বিচারে চিকিৎসক বা আরোগ্যশিল্পীর যথেষ্ট অভাব রয়েছে। তার চেয়েও বেশি অভাব সত্যিকারের দেশপ্রেমিক, দরদি মনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মতো যাদের মন রয়েছে, পীড়িতের শয্যাপাশে দাঁড়ানোর জন্য যাদের মন কাঁদে, দেশের জন্য, মানুষের জন্য সত্যিকার অর্থেই যাদের কিছু করতে ইচ্ছা করে, মানবতাকে যারা আর্থিক লাভালাভের চাইতে বেশি প্রাধান্য দেয়, সেই সব মেধাবীর অবশ্যই নিজেকে এ পথে গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে। শুধু একজন চিকিৎসক নয়, বরং একজন আরোগ্যশিল্পী হওয়ার মানসিকতা নিয়ে। সবার জন্য শুভকামনা। লেখক : এমডি অধ্যয়নরত, ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগ, বিএসএমএমইউ

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির