post

রাষ্ট্রের কাছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করি

ইউনুছ আব্দুদ্দাইয়ান

২৯ মে ২০২২
সংবাদ ডেস্ক ‘আমার স্বামী জনাব আলী আহসান মো: মুজাহিদ দেশবাসীকে সালাম জানিয়েছেন এবং সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন। আল্লাহর রহমতে তিনি শারীরিকভাবে ভালো ও সুস্থ আছেন। মানসিকভাবে অবিচল ও দৃঢ় রয়েছেন। তিনি আল্লাহকে হাজির নাজির জেনে বলেছেন, তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। তিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ, নির্দোষ এবং নির্দোষ।’ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মো: মুজাহিদের সাথে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে দেখা করে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তার স্ত্রী তামান্না-ই-জাহান। তাঁর তিন ছেলে এবং এক মেয়েও এ সময় উপস্থিত ছিলেন। জনাব মুজাহিদের স্ত্রী তামান্না-ই-জাহান আরো বলেন, ‘স্ত্রী হিসেবে আমিও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ। আমার স্বামী ঘরে-বাইরে, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে আল্লাহর রহমতে অত্যন্ত স্বচ্ছ ও সৎ জীবন যাপন করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যেই তিনি আইনজীবীদের মাধ্যমে রিভিউ আবেদন করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছেন। আমি আশা করি, মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মাননীয় প্রধান বিচারপতিসহ সকল দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখবেন। আমরা বিশ্বাস করি, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হলে তার রিভিউ আবেদন মঞ্জুর হবে এবং তিনি বেকসুর খালাস পাবেন ইনশাআল্লাহ। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।’ আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক সুপরিচিত নাম। গণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এবং কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল ঐতিহাসিক। তিনি বাংলাদেশের জোটকেন্দ্রিক রাজনীতির প্রসারে ব্যাপক প্রচেষ্টা চালান এবং জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী চেতনার জনগোষ্ঠীকে একটি একক প্লাটফর্মের আওতায় আনার লক্ষ্যে চারদলীয় জোট গঠনে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেন। ২০০১ সালে চারদলীয় জোটের নিরঙ্কুশ সফলতা প্রাপ্তির পেছনে তার পরিশ্রম ও প্রচেষ্টা ছিলো অতুলনীয়। ২০০৬ সালে ওয়ান-ইলেভেন সরকার দেশের ক্ষমতায় এসে দেশকে বিরাজনীতিকরণের প্রক্রিয়া শুরু করলে জনাব মুজাহিদ দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। জনাব আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তারও আগে তিনি দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও ঢাকা মহানগরীর আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বড় দল। সাধারণ মানুষের মধ্যে জামায়াতের ব্যাপারে আগ্রহ ও সমর্থন ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। জামায়াতকে আজকের এই অবস্থানে নিয়ে আসার পেছনে জনাব মুজাহিদের ভূমিকা অপরিসীম। জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করার যে মহাপরিকল্পনা নিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে তা বাস্তবায়নের জন্যই কি জনাব আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে তারা হত্যা করতে চায়? ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত জনাব আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। দক্ষতা, যোগ্যতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে জনাব মুজাহিদ এ মন্ত্রণালয়কে আলোচিত মন্ত্রণালয়ে পরিণত করেছিলেন। সমাজের দুস্থ ও পিছিয়ে পড়া অবহেলিত সম্প্রদায়কে এগিয়ে নিয়ে আসার জন্য তিনি ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। বাংলাদেশ দুর্নীতির জন্য ব্যাপকভাবে সমালোচিত হলেও জনাব মুজাহিদ প্রমাণ করে গিয়েছেন যে দুর্নীতি না করেও কিভাবে মন্ত্রণালয়ের কাজ করা যায়। আর এই কারণেই ওয়ান-ইলেভেন সরকার দুর্নীতির দায়ে অনেক রাঘববোয়ালকে আটক করলেও ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়েও জনাব আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দায়ের করতে পারেনি। এ রকম একজন দুর্নীতিমুক্ত মানুষকে কেন হত্যা করতে চায় আওয়ামী সরকার? রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য সরকার এই দেশপ্রেমিক, সৎ নেতাকে মিথ্যা মামলায় বিচারের মুখোমুখি করছে। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগটি হলো- ১৯৭১ সালে তিনি আর্মি অফিসারদের সাথে বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড সংঘটনের জন্য ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা করেছেন। এ জন্য তাকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা হয়েছে। দেশের জনগণ জানতে চায়- ১.    জনাব মুজাহিদ কবে, কখন, কোন আর্মি অফিসারের সাথে বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা করেছিলেন? ২.    এই কথিত ষড়যন্ত্রের ফলে কে কাকে কোথায় কখন কিভাবে হত্যা করেছে? ৩.    রাষ্ট্রপক্ষের আনীত ১ নং অভিযোগে সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হোসেনকে হত্যার কথা উল্লেখ থাকলেও মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট এই অভিযোগ থেকে জনাব মুজাহিদকে বেকসুর খালাস প্রদান করেছেন এবং ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে আখ্যায়িত করে তাকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেছেন। এতে কি জনাব মুজাহিদ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হননি? ৪.    রাষ্ট্রপক্ষ এই অভিযোগের সমর্থনে দুইজন সাক্ষী হাজির করে। যথাÑ রুস্তম আলী মোল্লা ও জহির উদ্দিন জালাল। ১৯৭১ সালে রুস্তম আলী মোল্লার বয়স ছিল ১৪ বছর এবং জহির উদ্দিন জালালের বয়স ছিল ১৩ বছর। রুস্তম আলী মোল্লা এই ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী এবং জহির উদ্দিন জালাল শোনা সাক্ষী। ৫.    রুস্তম আলী মোল্লা জনাব মুজাহিদকে আর্মি অফিসারের সাথে ষড়যন্ত্র এবং পরিকল্পনা করতে দেখেনি। সে দাবি করেছে, যে, স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হওয়ার ৩-৪ মাস পর জনাব মুজাহিদকে ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের গেটে দেখেছে। সে স্বীকার করেছে যে, জনাব মুজাহিদকে পূর্ব থেকে চিনতো না। গেটে প্রহরারত ব্যক্তিরা বলাবলি করছিল যে, জনাব গোলাম আযম, নিজামী ও মুজাহিদ কলেজে এসেছেন এবং তখন সে মুজাহিদ সাহেবকে চিনতে পারে। রুস্তম আলী মোল্লার সাক্ষ্যে এটি প্রতীয়মান হয় যে, সে পূর্ব থেকে এই তিনজনের কাউকেই চিনতো না। কেউ তাকে সুনির্দিষ্টভাবে মুজাহিদ সাহেবকে চিনিয়েও দেয়নি। তাহলে প্রশ্ন জাগে, পূর্ব থেকে না চেনা সত্ত্বেও কিভাবে সে নিজেই কলেজের গেটে মুজাহিদ সাহেবকে চিহ্নিত করল? তর্কের খাতিরে রুস্তম আলী মোল্লার কথা সত্য বলে ধরে নিলেও এর দ্বারা কি আদৌ এটি প্রমাণিত হয় যে, তিনি আর্মি অফিসারের সাথে বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা করেছেন? ৬.    জনাব মুজাহিদকে আলবদরের কমান্ডার হিসেবে সাজা দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে জাতির বিবেকের প্রশ্ন : ক.    জেরায় তদন্তকারী কর্মকর্তা নির্দ্বিধায় স্বীকার করেছেন যে, তার তদন্তকালে রাজাকার, আলবদর, আস-শামস বা শান্তি কমিটির সংশ্লিষ্ট কোনো তালিকায় আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের নাম ছিল মর্মে তিনি কোনো প্রমাণ পাননি। তাহলে কিসের ভিত্তিতে তাকে আলবদরের কমান্ডার সাব্যস্ত করা হলো? খ.    স্বাধীনতার পরবর্তীকালে (১৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত) তদানীন্তন জাতীয় গণমাধ্যমে আলবদরের কর্মকান্ড নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ ছাপা হয়েছে। এমনকি ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে তাদেরকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে। অথচ ঐসব সংবাদ ও বিজ্ঞপ্তিতে জনাব মুজাহিদের নাম কেউ উল্লেখ করেনি। সত্যিই যদি তিনি আলবদরের সারা দেশের কমান্ডার হতেন তাহলে স্বাধীনতার অব্যবহিত পরবর্তী সময়ে তার নাম উল্লেখ করা হয়নি কেন? গ.    বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড নিয়ে ১৯৭২ সালে দালাল আইনে ৪২টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এর একটিতেও জনাব মুজাহিদকে আসামি করা হয়নি। রাষ্ট্রপক্ষ এই মামলাগুলোর নথি আদালতে উপস্থাপন করেনি। অথচ ৪২ বছর পর কিভাবে এই হত্যাকান্ডের সকল দায়দায়িত্ব জনাব মুজাহিদের ওপর চাপানো হলো? ঘ.    জনাব মুনতাসির মামুন সম্পাদিত ‘দি ভ্যাঙ্কুইশড জেনারেলস’ বইয়ে রাও ফরমান আলী এবং জেনারেল এ এ কে নিয়াজি স্বীকার করেছেন যে, আলবদর বাহিনী সরাসরি আর্মির কমান্ড এবং কন্ট্রোলে পরিচালিত হতো। প্রশ্ন হলো- জনাব মুজাহিদ একজন ছাত্রনেতা হয়ে কিভাবে এই বাহিনীর কমান্ডার হলেন? ঙ.    ২৯ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের তদন্তের জন্য জনাব জহির রায়হানকে আহবায়ক করে সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল। রাষ্ট্রপক্ষ এই কমিটি কর্তৃক প্রস্তুতকৃত তদন্ত রিপোর্ট ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়নি। কেন রাষ্ট্রপক্ষ এই তদন্ত রিপোর্ট জাতির সামনে প্রকাশ করেনি? এসব বিষয়ের আলোচনা-বিশ্লেষণই প্রমাণ করে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ আসলেই আওয়ামী লীগ সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার।

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির