post

সাংবাদিকতা পেশায় কেন আসতে হবে?

আযাদ আলাউদ্দীন

০৬ জুন ২০২১

তথ্যসন্ত্রাসের নেতিবাচক সংবাদের সবচেয়ে বেশি শিকার হচ্ছে- ইসলাম বা ইসলামী আন্দোলন। এটি নতুন কোনো ঘটনা নয়। সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্ব চিরন্তন। আমরা সত্য বিষয়টিকে যতটা না গণমানুষের কাছে তুলে ধরতে পারছি, তার বিপরীতে অনেক মিডিয়া মিথ্যাকে নান্দনিকভাবে রঙঢঙ মিশিয়ে জনগণকে অহরহ বিভ্রান্ত করছে। এসবের মোকাবেলায় আমাদের করণীয় কী? ইসলামী আন্দোলনের অনেক ভাইকে দেখেছি মিডিয়া নিয়ে বিষোদগার করতে। অনেকে বলছেন- মিডিয়াগুলো খারাপ ইত্যাদি ইত্যাদি। এমন ভাইদের কাছে আমার প্রশ্ন- মিডিয়াকে খারাপ বলার আগে- আপনি ভালো মানুষটি মিডিয়া জগতে আসছেন না কেন? যতদিন পর্যন্ত মিডিয়ায় ভালো লোকের (ইসলামী আন্দোলনের) আগমন না ঘটবে, ততদিন খারাপ লোকরাই অধিকাংশ মিডিয়া জগতে রাজত্ব করবে এটাই স্বাভাবিক। ইসলামী আন্দোলনের লোকেরা মিডিয়ায় কেন তুলনামূলক কম আসছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে আমার বিশ বছরের সাংবাদিকতা অভিজ্ঞতায় মনে হয়েছে- ‘ক্যারিয়ার স্যাক্রিফাইস করতে না পারা’। ১৯৯৮ সালে আমি যখন ছাত্রসংগঠনের ‘সাথী’ ছিলাম তখন কেন্দ্রীয় মিডিয়া বিভাগে লোক তৈরির কাজ করতো ‘ঢাকা সাংবাদিক ফোরাম’। তখন ঢাকা সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি ছিলেন আবুল কালাম আজাদ এবং সেক্রেটারি ছিলেন খাদিমুল ইসলাম হৃদয়। হৃদয় ভাই তখন দৈনিক সংগ্রামের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি। এই ফোরামের উদ্যোগে সাংবাদিক তৈরির জন্য ঢাকার আল ফালাহ মিলনায়তনে একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। আমি যেহেতু আগে থেকেই লেখালেখির সাথে যুক্ত, তাই আমাকে পাঠানো হলো তিন দিনের ওই প্রশিক্ষণ কর্মশালায়। এই কর্মশালায় আমি ট্রেইনার হিসেবে পাই- বেশ কয়েকজন পেশাদার সিনিয়র সাংবাদিক। তাদের মধ্যে ছিলেন দৈনিক সংগ্রামের তৎকালীন চিফ রিপোর্টার, বর্তমানে দৈনিক নয়া দিগন্তের ভারপ্রাপ্ত বার্তা সম্পাদক সালাহউদ্দিন বাবর, দৈনিক ইনকিলাব ও নয়া দিগন্তের সাবেক বার্তা সম্পাদক আযম মীর, দৈনিক নয়া দিগন্তের বর্তমান বার্তা সম্পাদক মাসুমুর রহমান খলিলী প্রমুখ। তাঁরা প্রত্যেকেই তখন মাঠের ডাকসাইটে সাংবাদিক। প্রত্যেকেই সাংবাদিকতার নানা বিষয়ে অভিজ্ঞতালব্ধ আলোচনার ফাঁকে একটি কথা বলতেন, তাহলো- সাংবাদিকতা পেশায় সৎভাবে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে- বাড়ি-গাড়ি হয়তো হবে না, কিন্তু মানুষের আন্তরিক ভালোবাসা ও দোয়া পাওয়া যাবে। বেশ কিছু উদাহরণ তখন তারা নিজেদের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে তুলে ধরেন। আমার কাছে তখন মনে হয়েছে- বাড়ি-গাড়ির চেয়ে মানুষের আন্তরিক দোয়া ও ভালোবাসা-ই বেশি প্রয়োজন। সেদিন সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে যে ‘ক্যারিয়ার স্যাক্রিফাইস’ আমি করেছিলাম, আমার মনে হয় আমি ভুল করিনি। এই বিশ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়তো হইনি, কিন্তু হাজারো মানুষের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা ও দোয়া আমি পেয়েছি বা পাচ্ছি, তাতে আমি সন্তুষ্ট এবং আল্লাহর কাছে হাজারো শুকরিয়া আদায় করছি। এই বিশ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে নিউজের মাধ্যমে শত শত প্রান্তিক ও দরিদ্র মানুষের যে নিঃস্বার্থ ‘উপকার’ করেছি তা আমার জন্য সদকায়ে জারিয়াহ হিসেবে প্রবহমান থাকবে বলেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আমার চেয়ে কম যোগ্যতাসম্পন্ন সমসাময়িক অনেক বন্ধুই এখন বাড়ি-গাড়ির মালিক। তাতে আমি একটুও হতাশ নই, কারণ- আমার ‘ক্যারিয়ার স্যাক্রিফাইস’ হয়তো আমার নাজাতের উছিলা হতে পারে। ১৯৯৮ সালে ঢাকা সাংবাদিক ফোরামের সেই কর্মশালা থেকে সিদ্ধান্ত নেই পেশা হিসেবে ‘সাংবাদিকতা’কেই বেছে নেবো। সে অনুযায়ী বরিশালে এসে পরবর্তীতে স্থানীয় একটি পত্রিকায় (দৈনিক দক্ষিণাঞ্চল) স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যোগদান করি। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে ওই পত্রিকার বার্তাসম্পাদক হিসেবে পদোন্নতি পাই। একটি পত্রিকায় বার্তাসম্পাদকের অনেক কাজের চাপ থাকে। তখন সন্ধ্যায় পত্রিকা অফিসে ঢুকতাম আর রাত একটা-দুইটায় বের হতাম। পুরো পত্রিকার গেটআপ-মেকআপ সাজিয়ে দিয়ে প্রেসে পাঠানোর পর অফিস ত্যাগ করতে হতো। তখনো যেহেতু ছাত্র ছিলাম তাই একইসাথে সাংবাদিকতা, পড়ালেখা এবং সাংগঠনিক কাজ সামলানো কঠিন হলেও আমি তা যথার্থভাবে করার চেষ্টা করেছি। বার্তাসম্পাদক থাকা অবস্থায়ই সংগঠনের ‘সদস্য’ হয়েছি। ২০০২ সালে বরিশালে আগত কেন্দ্রীয় সভাপতির (সিপি) কাছে সদস্য শপথ নেয়ার জন্য পত্রিকা অফিস থেকে একদিনের ছুটি নিয়েছিলাম। ২০০৫ সালে চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে সদস্য সম্মেলনের মাধ্যমে ছাত্রজীবনের সমাপ্তি ঘটাই। এরপর কর্মজীবনে এসেও মূল ফোরামের ‘সদস্য’ হই, এখনো দ্বীনের পথে অবিচল থেকে সাংবাদিকতা পেশায় টিকে থাকার প্রচেষ্টা করছি। অনেক ভাইকেই দেখেছি ছাত্রজীবনে বেশ ‘সক্রিয়’ থাকলেও কর্মজীবনে এসে ‘নিষ্ক্রিয়’ হয়ে যান এবং নিজেরা মান উন্নয়ন না করে মূল ফোরামের সমালোচনায় মুখর থাকেন। তাদের প্রতি আমার অনুরোধ হচ্ছে- আপনি নিজে মানোন্নয়ন করার পর- যে বিষয়ে সমালোচনা করছেন তা সমাধানে সচেষ্ট থাকুন। পিছনে সমালোচনা না করে ফ্রন্ট লাইনে এগিয়ে আসুন। আমার কাছে বাংলাদেশে বর্তমান ইসলামী আন্দোলনের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় দিক হচ্ছে- সাবেক ছাত্রনেতারা এখন মূল ফোরামের নেতৃত্বে অনেক এগিয়ে এসেছেন, এই ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলন আরো অনেক এগিয়ে যাবে। আমার এই লেখাটি যারা পড়ছেন- তাদের প্রতি অনুরোধ, আপনারা হয়তো প্রতিনিয়তই ইসলামী আন্দোলনের জন্য নানাভাবে ‘ক্যারিয়ার স্যাক্রিফাইস’ করে যাচ্ছেন এবং যাবেন। অতীতেও অনেক ভাই সংগঠনের স্বার্থে বা ইসলামী আন্দোলনের স্বার্থে ক্যারিয়ার স্যাক্রিফাইস করেছেন। এমন বহু দৃষ্টান্ত আমাদের সামনে রয়েছে। এবার আসুন যাদের সুযোগ আছে, তারা সাংবাদিকতা পেশায় ক্যারিয়ার গড়ে ‘তথ্যসন্ত্রাস’ থেকে ইসলাম তথা ইসলামী আন্দোলনকে কিছুটা হলেও রক্ষা করি। কারণ- তাকওয়াবান খাঁটি মানুষগুলো সাংবাদিকতার মতো মহান পেশায় না এলে সঙ্কট উত্তরণ করা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। লেখক : বরিশাল ব্যুরো চিফ, দৈনিক নয়া দিগন্ত

আপনার মন্তব্য লিখুন

আব্দুল্লাহ আল নোমান

- 1 year ago

ভাল লিখেছেন। আপনার সাথে একমত। তবে সাংবাদিকতায় আসা যায় কীভাবে? সংবাদপত্রে চাকরীর সার্কুলার তেমন চোখে পড়েই না। বিভিন্ন ধরনের পত্রিকার কলাম পড়া আমার একটা শখ। নতুন কিছু পড়তে ভাল লাগে। সারাদিন একটা না একটা কিছু পড়তেই থাকি। দুইবার দুইটা লেখা দৈনিক সংগ্রাম, দৈনিক যুগান্তরে ছাপানো হয়েছিল। ভালই লেগেছিল। কয়েকবার কয়েকটা পত্রিকায় এপ্লাই করেছি। তবে সাংবাদিকতায় স্নাতক পড়াশোনা নেই বলে সম্ভবত ঢাকা হয়না। টেক্সটাইল, ফার্মাসিউটিক্যালস এ চাকরি করেছি। বর্তমানে একটি বেসরকারি এয়ারলাইনস এ কর্মরত আছি। কিন্তু এখনো কোন একটা লেখালেখি কাজের সাথে যোগ হতে ইচ্ছে করে। কীভাবে কেন একটা ইসলামিক ভাবধারার পত্রিকার সাথে প্রফেশনালী যুক্ত হওয়া যায়? কোন পরামর্শ থাকলে বলবেন।

আব্দুল্লাহ আল নোমান

- 1 year ago

ভাল লিখেছেন। আপনার সাথে একমত। তবে সাংবাদিকতায় আসা যায় কীভাবে? সংবাদপত্রে চাকরীর সার্কুলার তেমন চোখে পড়েই না। বিভিন্ন ধরনের পত্রিকার কলাম পড়া আমার একটা শখ। নতুন কিছু পড়তে ভাল লাগে। সারাদিন একটা না একটা কিছু পড়তেই থাকি। দুইবার দুইটা লেখা দৈনিক সংগ্রাম, দৈনিক যুগান্তরে ছাপানো হয়েছিল। ভালই লেগেছিল। কয়েকবার কয়েকটা পত্রিকায় এপ্লাই করেছি। তবে সাংবাদিকতায় স্নাতক পড়াশোনা নেই বলে সম্ভবত ডাকা হয়না। টেক্সটাইল, ফার্মাসিউটিক্যালস এ চাকরি করেছি। বর্তমানে একটি বেসরকারি এয়ারলাইনস এ কর্মরত আছি। কিন্তু এখনো কোন একটা লেখালেখি কাজের সাথে যোগ হতে ইচ্ছে করে। কীভাবে কেন একটা ইসলামিক ভাবধারার পত্রিকার সাথে প্রফেশনালী যুক্ত হওয়া যায়? কোন পরামর্শ থাকলে বলবেন।

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির