post

অধ্যাপক গোলাম আযম : একটি আন্দোলন একটি ইতিহাস

২৪ অক্টোবর ২০১৪

CS-May-2014-300x199 বিশ্ব মুসলিম উম্মাহকে কাঁদিয়ে বিদায় নিয়েছেন বিশ্ববরেণ্য ইসলামী চিন্তাবিদ ও বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃত অধ্যাপক গোলাম আযম। তাঁর মৃত্যু নিছক একটি মৃত্যু নয় বরং ইসলামী আন্দোলনকে নতুন রূপে বেগবান করার সূচনা মাত্র। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা কখনো মরে না, তারা যুগ যুগ ধরে মানুষের মাঝে চেতনার দ্বীপ জ্বালিয়ে অমর হয়ে থাকেন। অধ্যাপক গোলাম আজম সেই অমরত্বেরই একজন। তাঁর জীবন বর্ণাঢ্যময়, বৈচিত্র্যপূর্ণ, সংগ্রামময়। সব কিছু ছাপিয়ে তিনি এখন ইতিহাস। অধ্যাপক গোলাম আজমকে বহু বিশেষণে বিশেষায়িত করা যায়। তিনি একাধারে বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম প্রাণপুরুষ, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ইসলামী চিন্তাবিদ, জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর, ভাষা সৈনিক ও তত্বাবধায়ক সরকারের রূপকার, মজলুম মানবতার বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। তিনি একজন সৎ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, খ্যাতিমান অহিংস রাজনৈতিক নেতা, যিনি আন্তর্জাতিকভাবে শ্রদ্ধেয় প-িত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। তিনি মুসলিম উম্মাহর একজন অভিভাবক। তথাকথিত যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচারের নামে ৯০ বছর বয়স্ক এ প্রবীণ রাজনীতিবীদকে আমৃত্যু সাজা প্রদান করে আইনের শাসন, মানবাধিকার ও গোটা ট্রাইবুনালের বিচার কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে দেশে-বিদেশে। তার জানাযায় লক্ষ-লক্ষ মানুষের উপস্থিতি, দেশে-বিদেশে অসংখ্য গায়েবানা জানাযা, ভক্ত-অনুরক্তদের আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদÑ সবমিলে গোলাম আযমকে নিয়ে গেছে এক অনন্য মহিমায়। বিশ্বের দরবারে তিনি আবির্ভূত হয়েছেন শক্তিশালী এক লড়াকু হিসেবে। তিনি একজন সফল রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সংগঠক। তিনি নিজে অনেক উত্থান পতনের স্বাক্ষী। বিশ্বের অসংখ্য দেশে তাঁর ফর্মূলা সমাদৃত। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, সমাজব্যবস্থা, পরিবারব্যবস্থা, রাষ্ট্রব্যবস্থা তথা সামগ্রিক জীবনব্যবস্থাকে ইসলামী শরীয়া ভিত্তিক মোতাবেক শান্তি ও নিরাপত্তা মূলকভাবে পরিচালনা করার যে প্রত্যয় তিনি লালন করতেন তাই তাকে কিংবদন্তিতে রূপায়িত করেছে। তাঁর সুদীর্ঘ কর্মময় জীবন ও দর্শন যুগে যুগে মানুষের চিন্তার খোরাক জোগাবে। ঈমান ও আকিদাকে ঠিক রেখে জীবন পরিচালনা করা যে কতো মহৎ, কতো সুশৃঙ্খল, কতো সুন্দর তা তাঁর কর্মময় জীবন পর্যালোচনা করলেই বোঝা যায়। ইসলামের সুমহান বাণী প্রচারের লক্ষ্যে ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক কল্যাণমূলক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার জন্যে যুগে-যুগে, কালে-কালে অনেককেই শহীদি মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। শ্রদ্ধাচিত্তে স্বরণ করতে হয়- সাইয়্যেদ কুতুব শহীদ, শহীদ হাসান আল বান্না, শহীদ আব্দুল মালেক, শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লাসহ আরো অনেককে। কারা প্রকোষ্টে মিথ্যা মামলায় মৃত্যুবরণ করে অধ্যাপক গোলাম আযম শহীদের মর্যাদায় ভূষিত হবেন সেই প্রার্থনা মহান আল্লাহর দরবারে । আমিন। আওয়ামীলীগের ইসলাম বিদ্বেষ আওয়ামীলীগ বরাবরই ইসলামের বিরোধিতা করে এসেছে। এই বিরোধিতা হচ্ছে আওয়ামীলীগের দলীয় পৃষ্ঠপোষকতায়। এটা ইসলামের সুমহান বাণীকে ধূলিস্যাত করার অপচেষ্টা, ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য এধরনের ঘৃণ্য অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে তারা জেনে বুঝেই। এদের ভয়, ইসলামের সাম্য, ন্যায়-নীতি যদি সমাজে বাস্তবায়ন হয় তাহলে তারা সমাজ ও রাষ্ট্রের ক্ষমতা হারাবে। তাই নানা ছুঁেতায় ইসলামকে প্রশ্নবিদ্ধ করাই তাদের অন্যতম কাজ। এই বিরোধিতার সর্বশেষ সংযোজন আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা, সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী। আওয়ামীলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় কথিত শাহবাগ আন্দোলন এবং এর মাধ্যমে ধর্মীয় অনুশাসনের বিরোধিতা, খোদ প্রধান মন্ত্রীর গজে চড়ে মা দুর্গার আগমনের ফলে ফসলে উন্নতির মনোভাব, কার্টুনে দাড়ি-টুপি পড়িয়ে ব্যঙ্গাত্মক উক্তি, আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ এর “আমি হিন্দুও নই, মুসলমানও নই” বলে দাবী, সংবিধান থেকে ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ ও ‘আল্লাহর উপর আস্থা’কে বাতিল, স্কুলে মাধ্যমিক শাখা ‘ইসলাম ধর্ম শিক্ষা’ কে ঐচ্ছিক করা, উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভাইস প্রিন্সিপল ও শ্রমমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর স্ত্রী মাহবুবা খানম কল্পনা কর্তৃক অর্ধশতাধিক ছাত্রীর জামার ফুলহাতার অর্ধেকটা কেটে দেয়াসহ ইত্যাদি নানা বিষয় আওয়ামীলীগের ইসলাম বিরোধী মনোভাবেরই বহিপ্রকাশ। আওয়ামীলীগ ধর্মের অপব্যবহার  ও ধর্মকে আঘাত করে দেশে বারবার যে সংঘাত তৈরী করেছে তা মুসলিম মানসপটের জীবন, কৃষ্টিকে ভিন্ন ধাঁচে গঠন করতে চায়; যা আমাদের অস্তিত্বের হুমকি। ধর্ম মানুষের মৌলিক বিশ্বাস, আর আমাদের  সমাজব্যবস্থা দাঁড়িয়ে আছে সেই বিশ্বাসের উপর। যারা ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে মূলতঃ তারা নিজেরা নিজেদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তাই, আওয়ামীলীগসহ যারা ইসলাম বিদ্বেষীদের পৃষ্ঠপোষকতা করে আবার নিজেদের মুসলমান হিসেবে দাবী করে তারা নিজেদের কৃত কর্মকা- নিয়ে পর্যালোচনা করা উচিত।

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির