post

অস্থির শিক্ষাঙ্গন দিকহারা ছাত্রসমাজ

১৩ জুন ২০১২
ছাত্র সংবাদ ডেস্ক দেশ ও জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে ছাত্রসমাজকে সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। এর জন্য সুষ্ঠু পরিবেশের প্রয়োজন। অথচ বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আজ ছাত্রলীগের খুন, সন্ত্রাসসর্বস্ব রাজনীতির কারণে অচল হয়ে পড়েছে। মূলত শিক্ষাঙ্গনের চিত্র এ সরকারই পাল্টে দিয়েছে। তাদের পোষ্য ছাত্রলীগকে দিয়ে তারা শিক্ষাঙ্গনকে সন্ত্রাসের ক্ষেত্রে পরিণত করেছে। আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগকে দিয়ে পুলিশি সহায়তায় শিক্ষাঙ্গন থেকে বিরোধী মতকে বিতাড়ন করতে চায়। এভাবে চলতে থাকলে একসময় ক্যাম্পাসই অচল হয়ে পড়বে। তাই শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের জন্যই শিবিরসহ প্রতিটি ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান প্রয়োজন। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের বিগত প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিরাজ করছে চরম অস্থিরতা। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের রাত থেকেই মূলত সারাদেশে শুরু হয় ছাত্রলীগের তাণ্ডব। সংগঠনটির লাগামহীন সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, লুটপাট, আধিপত্য বিস্তার, নিয়োগ ও ভর্তিবাণিজ্য এবং নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি আওয়ামীপন্থী শিক্ষক ও কর্তাব্যক্তিদের নগ্ন দলবাজির কারণে বর্তমানে দেশের প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ বলতে কিছু নেই। বর্তমান সরকারের গত ৪১ মাসে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংঘটিত বিভিন্ন সংঘর্ষ ও হামলায় নিহত হয়েছেন ২২ মেধাবী শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরেরই ৯ নেতাকর্মী রয়েছেন। আহত হয়েছেন ৫ সহস্রাধিক শিক্ষার্থী। ঘটেছে শিক্ষক, সাংবাদিক ও ছাত্রী লাঞ্ছনার বহু ঘটনা। সংঘাত-সংঘর্ষ আর বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন সংগ্রামের কারণে মাসের পর মাস অনির্ধারিত ছুটিতে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষাকার্যক্রম। ভয়াবহ সেশনজটের কবলে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়াতো দূরের কথা উল্টো নিরীহ শিক্ষার্থীরাই হয়রানি-নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এতে সন্ত্রাসীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে আগ্নেয়াস্ত্রসহ রামদা, চাপাতি ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ছাত্রলীগের অব্যাহত সশস্ত্র সংঘর্ষ ও মহড়া শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে রীতিমতো আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। কবি আল মাহমুদ ইতঃপূর্বে আক্ষেপ করে লিখেছিলেন ‘‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি ডাকাতদের গ্রাম?’ অন্য আরেকজন কলামিস্ট কিছুদিন পূর্বে লিখেছিলেন যে, ঊফঁপধঃরড়হ ড়ভ ইধহমষধফবংয যধৎসড়হরড়ঁং ফবাবষড়ঢ়সবহঃ ড়ভ সঁংপষব, ধৎসং ধহফ ারড়ষবহপব. সংঘর্ষ-হামলায় উত্তপ্ত ক্যাম্পাস পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যমতে, মহাজোট সরকারের ৪১ মাসে সারাদেশে ছাত্রলীগ এবং প্রতিপক্ষ সংগঠনের মধ্যে অন্তত ৫০০ ছোট-বড় সংঘর্ষ হয়েছে। এসব সংঘর্ষের অধিকাংশ হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। বড় বড় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বারবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে প্রাণ দিতে হয়েছে অনেককে। বড় আকারের সংঘর্ষ হয়েছে এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- ঢাকা, জগন্নাথ, জাহাঙ্গীনগর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা প্রকৌশল, কুষ্টিয়া ইসলামী, বাংলাদেশ প্রকৌশল (বুয়েট), কবি নজরুল, শেরে-ই-বাংলা কৃষি, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, রাজশাহী প্রকৌশল এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ছোট-বড় এবং রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ যেখানে ঘটেছে, তার মধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ, তিতুমীর কলেজ, বাঙলা কলেজ, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ, চট্টগ্রাম সিটি কলেজ, এমইএস কলেজ, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি কলেজ, চট্টগ্রাম পলিটেকনিক কলেজ, রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ, খুলনা বিএল কলেজ, মেহেরপুর কলেজ, সিলেট এমসি কলেজ, বরিশাল বিএম কলেজ, শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ, বরিশাল পলিটেকনিক কলেজ, সিলেট মেডিক্যাল কলেজ, সিলেট সরকারি কলেজ, সিলেট পলিটেকনিক কলেজ উল্লেখযোগ্য। সাড়ে তিন বছরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের নিজেদের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটেছে অন্তত ২০০টি। এর মধ্যে বড় ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয় শতাধিক। এসব সংঘর্ষ ও হামলা হয়েছে আধিপত্য বিস্তার, অন্তর্কোন্দল, দলে পদ না পাওয়া, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, প্রতিষ্ঠান, আবাসিক হল ও রুম দখল, খাবার লুট এবং প্রেম ও ধর্ষণকে কেন্দ্র করে। এতে ছাত্রলীগ, সাংবাদিক, পুলিশ, সাধারণ ছাত্র, অভিভাবকসহ সাড়ে তিন হাজার আহত ও পঙ্গু হয়েছেন। প্রাণ দিতে হয়েছে নিজ সংগঠনের বেশ ক’জন নেতাকর্মীকে। এছাড়া ছাত্রলীগের সঙ্গে প্রতিপক্ষ ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির, বাম ছাত্র সংগঠন ও সাধারণ ছাত্রদের মধ্যে ছোট-বড় ২০০টি সংঘর্ষ ও হামলা হয়েছে। এতে প্রতিপক্ষ সংগঠনগুলোর দেড় হাজার নেতাকর্মী আহত ও পঙ্গু হয়েছেন। খুন হয়েছেন ছাত্রশিবির, ছাত্রদল, বাম ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী ও সাধারণ ছাত্র। এসব সংগঠনের অন্তত ২০ হাজার নেতাকর্মীকে ক্যাম্পাস ও আবাসিক হলছাড়া করা হয়েছে। গ্রেফতার ও নির্যাতন করা হয়েছে ছাত্রশিবিরসহ বিরোধী ছাত্রসংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে। চাঞ্চল্যকর সব হত্যাকাণ্ড গত তিন বছরে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও মেডিক্যাল কলেজে অন্তত ৩০০ বার সংঘর্ষে জড়িয়েছে ছাত্রলীগ। এছাড়া সংঘর্ষে আহত হয়েছেন হাজারখানেক নেতাকর্মী। বন্ধ হচ্ছে একের পর এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাড়ছে অ্যাকাডেমিক সেশনজট। উচ্চ শিক্ষাঙ্গন অস্থিতিশীল হওয়ায় অ্যাকাডেমিক শিক্ষাজীবন বিপন্ন হয়ে পড়ছে। দিন বদলের শ্লোগানধারী মহাজোট সরকারের ৪১ মাসে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২২ মেধাবী ছাত্র হত্যার শিকার হয়েছেন। প্রায় সব ক’টি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেই ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা জড়িত। আর সবচেয়ে বেশি হত্যার শিকার হয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাধিক ৫ জন; রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ে ৩; ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ১; জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১; ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ১; চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে ১; রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ১ জন উল্লেখযোগ্য। প্রতিপক্ষ ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীর পাশাপাশি সাধারণ ছাত্ররাও হত্যার শিকার হয়েছেন। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এসব হত্যাকাণ্ডের একটিরও দৃষ্টান্তমূলক বিচার হয়নি। সরকার ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে তদন্ত ও মামলার বিচারকার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। বিচার না হওয়ায় অব্যাহতভাবে চলছে একের পর এক হত্যাকাণ্ড। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ও শিবিরের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে দুই শিবিরকর্মী প্রাণিবিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মুজাহিদ এবং ইংরেজি শেষ বর্ষের ছাত্র মাসুদ নিহত হন। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে নিহতদের পরিবার মামলা করতে গেলেও থানা পুলিশ তা গ্রহণ করেনি। উল্টো শিবির নেতাদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের মামলা গ্রহণ করে গ্রেফতার করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতিসহ ৪৩ নেতাকর্মীকে। এর আগে ২০১০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মহিউদ্দীনকে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ২০১০ সালের ২৮ মার্চ রাতে শাটল ট্রেনে করে চট্টগ্রাম শহর থেকে ক্যাম্পাসে ফেরার পথে বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র হারুন অর রশীদ কায়সারকে জবাই করে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। একই বছরের ১৫ এপ্রিল চবি ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন জোবরা গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে হিসাববিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আসাদুজ্জামান নিহত হন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরেই ছাত্র হত্যাকাণ্ড ঘটেছে সর্বাধিক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিবিরের ওপর ছাত্রলীগের হামলা এবং ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে এ সরকারের মেয়াদে নিহত হয়েছেন ৩ জন ছাত্র। ২০০৯ সালের ১৩ মার্চ ছাত্রলীগের পৈশাচিকতায় নিহত হন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান নোমানী। ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিহত হন ছাত্রলীগ কর্মী (ছাত্রলীগের দাবি) ফারুক হোসেন। একই বছর ১৫ আগস্ট শোক দিবসের টোকেন ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে শাহ মখদুম হলের দোতলার ছাদ থেকে ছাত্রলীগ কর্মী নাসিমকে ফেলে দেয় ছাত্রলীগ সভাপতি গ্রুপের কর্মীরা। ৯ দিন মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর ২৩ আগস্ট তার মৃত্যু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগ-পুলিশের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে নির্মমভাবে খুন হন নিরীহ ও মেধাবী ছাত্র আবু বকর। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ গত ৮ জানুয়ারি তাদের দলীয় কর্মী ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের আহমেদকে হত্যা করে। সেদিন দুপুরে জুবায়ের পরীক্ষা শেষে হলে ফেরার পথে ছাত্রলীগ কর্মীরা ক্যাম্পাস থেকে তাকে ধরে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। ৯ জানুয়ারি ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জুবায়ের মারা যান। ২০০৯ সালের ৩১ মার্চ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত হন ওই কলজের ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ ওরফে রাজীব। ২০১০ সালের ১২ জুলাই সিলেট এমসি কলেজে ছাত্রলীগের এক পক্ষের হামলায় অপর পক্ষের কর্মী পলাশ খুন হন। ২০১১ সালের ২০ অক্টোবর ছাত্রলীগের নির্যাতনে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রদল নেতা চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আবিদুর রহমান নিহত হন। ২০১০ সালের ৭ জানুয়ারি রাজশাহী পলিটেকনিক ইসস্টিটিউিটে ছাত্রমৈত্রীর সহসভাপতি রেজানুল ইসলাম চৌধুরীকে খুন করে ছাত্রলীগ। গত ২১ জানুয়ারি পাবনা টেক্সটাইল কলেজের ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী মোস্তফা কামাল শান্তকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে যুবলীগ। তেজগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে আহত হয়ে দীর্ঘ ৬ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ২০ সেপ্টেম্বর ২০১১ নিহত হন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাইসুল ইসলাম রাহিদ। সর্বশেষ গত ১২ মার্চ অভ্যন্তরীণ কোন্দলে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মী ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আব্দুল আজিজ খান সজিব প্রতিপক্ষ গ্র“পের কর্মীদের হামলায় গুরুতর আহত হয়ে ১৫ মার্চ মারা যান। ১৩ দিন বন্ধ ঘোষণা করা হয় রুয়েট। তিন বছরে ছাত্রলীগ-ছাত্রলীগ এবং ছাত্রলীগ-প্রতিপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ৬০টি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্ধারিতভাবে বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষক ও সাংবাদিক নির্যাতন গত সাড়ে তিন বছরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের হাতে অন্তত ৮০ জন শিক্ষক লাঞ্ছিত ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। ছাত্রলীগের হাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও আবাসিক হলে অন্তত ২০ শিক্ষক লাঞ্ছিত ও হামলার শিকার হয়েছেন। লাঞ্ছনার শিকার হয়ে বেশ কয়েকটি হলের প্রভোস্ট পদত্যাগ করতে পর্যন্ত বাধ্য হন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হাতে হামলা ও লাঞ্ছনার শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ জন শিক্ষক। এ ছাড়া ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও ১০ জন শিক্ষক বিভিন্ন সময় লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন। গত বছর ৮ আগস্ট ময়মনসিংহের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ওপর ছাত্রলীগের হামলায় ২০ জন শিক্ষক আহত হন। খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ২ জন শিক্ষককে মারধর করে ছাত্রলীগ। ঢাকা কলেজে ভর্তিবাণিজ্যকে কেন্দ্র করে কয়েকজন শিক্ষক লাঞ্ছিত হন। বরিশাল বিএম কলেজে ঘটে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনা। এ ছাড়া আরও বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অনেক শিক্ষক ছাত্রলীগের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন। বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের হাতে দেড় শতাধিক সাংবাদিক লাঞ্ছনাও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিস্তার একজন মানুষের চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণার উন্নয়নকল্পে অন্যতম একটি উপাদান হলো- শিক্ষা। শিক্ষার প্রভাবে একটি সমাজে আসতে পারে আমূল পরিবর্তন। মানুষের অজ্ঞানতার আঁধার দূরীকরণে শিক্ষকদের ভূমিকা এক্ষত্রে অপরিহার্য। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি- মহান এ পেশা ‘শিক্ষকতা’য় আজ নানা ধরনের পঙ্কিলতা দানা বেঁধেছে। জ্ঞানের উন্মেষ ঘটাতে অগ্রণী ভূমিকা পালনের পরিবর্তে অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায় ‘শিক্ষক’ পরিচয়টিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে কিছু শিক্ষক ফায়দা লোটার সুযোগ সন্ধানে ব্যস্ত থাকেন সর্বদা, যার মধ্যে যৌন হয়রানিমূলক আচরণ অন্যতম। আওয়ামী লীগ সরকারের অতীতের ধারাবাহিকতায় এবারও সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিস্তার ঘটেছে ভয়াবহভাবে। প্রশাসনের ছত্রছায়ায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে ছাত্রী ও নারী লাঞ্ছনা, ধর্ষণ, নির্যাতনসহ অনৈতিক কর্মকাণ্ডের নানা ঘটনা এখন আলোচিত বিষয়। অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ভয়াবহতার প্রেক্ষিতে সরকার একদিকে ইভটিজিং বিরোধী আইন করেছে অপরদিকে সরকারিভাবে বোরকাবিরোধী পরিপত্রজারিসহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে বোরকা, দাড়ি, টুপিধারীদের নানাভাবে লাঞ্ছিত ও হয়রানি করা হচ্ছে। চলতি বছর ৪ জানুয়ারি সাতক্ষীরায় ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে রাতে নৃত্যশিল্পী কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ করে ছাত্রলীগ নেতারা। এ ঘটনায় ওই জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা হয়। এ ছাড়া গত তিন বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্থানে শতাধিক নারী ও ছাত্রী উত্ত্যক্ত, লাঞ্ছনা ও ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১০ সালে বৈশাখী অনুষ্ঠান ও থার্টিফাস্ট নাইটের অনুষ্ঠানে অন্তত ২০ জন নারী ও ছাত্রী লাঞ্ছিত হন ছাত্রলীগের হাতে। এবারও একই ধরনের ঘটনা ঘটে। সাম্প্রতিক সময়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন বিষয়ক দুটি ঘটনার প্রথমটির সাথে অভিযুক্ত হিসেবে জড়িত ছিল নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ছানোয়ার হোসেন সানীর নাম। একই বিভাগের চারজন ছাত্রী ৩ মে, ২০০৮ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর উক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের লিখিত অভিযোগ জানান। ১৭ জুলাই ২০১০ শিক্ষক ছানোয়ার হোসেন সানীকে সহযোগী অধ্যাপক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদাবনতি প্রদান করা হয়। সাথে তাকে দুই বছরের বাধ্যতামূলক ছুটি প্রদান করা হয়। দ্বিতীয় ঘটনাটিতে অভিযোগকারী এবং অভিযুক্ত দু’জনই উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক; কিন্তু সেখানে একজন অবতীর্ণ হয়েছেন নিপীড়কের ভূমিকায় এবং অন্যজন হয়েছেন নিপীড়িত। এই ঘটনাটিতে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এক শিক্ষিকা ১৫ এপ্রিল ২০১০ একই বিভাগের শিক্ষক আব্দুল্লাহ হেল কাফীর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এরপর ৫ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের আরেকটি জরুরি সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে আব্দুল্লাহ হেল কাফীকে সহযোগী অধ্যাপক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদাবনতি প্রদান করা হয় এবং সেই সঙ্গে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো পদে বহাল না রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অন্যদিকে অভিযোগকারী শিক্ষিকাকেও তার আচরণ সংযত করার পরামর্শ দেয়া হয় সিন্ডিকেটের সভা থেকে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে একই বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণীর এক ছাত্রী ২১ অক্টোবর ২০০৯ যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন। অপর একটি ঘটনায় নৈতিক স্খলনের অভিযোগ এনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রভাষক ফয়েজ আহম্মেদকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এছাড়াও এক ছাত্রীর সাথে অশোভন আচরণের দায়ে সতর্ক করে দেয়া হয় একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক শাহ আলমকে (বিডি নিউজ ২৪; ৯ আগস্ট, ২০১০)। এছাড়াও সম্প্রতি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আশিকুর রহমানের বিরুদ্ধে অশোভন আচরণের অভিযোগ উঠেছে। উদ্বেগের বিষয় হলো এই যে, পত্রিকান্তরে জানা যায়, উক্ত অভিযুক্ত শিক্ষক তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে নিতে অভিযোগকারী ছাত্রী এবং তার পরিবারকে নানা ধরনের চাপ ও হুমকি প্রদর্শন করছেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র এবং শিক্ষক কর্তৃক প্রায়ই ছাত্রী হয়রানির কথা শোনা যায়। সর্বশেষ বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের এক ছাত্রীর কাছ থেকে একই বিভাগের এক সহকারী অধ্যাপকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের লিখিত অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। ৭ আগস্ট, ২০১০-এর দৈনিক প্রথম আলো থেকে জানা যায়, জুলাইয়ের মাঝামাঝি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠিত যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ কমিটির সামনে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ও শিক্ষিকারা বেশ কিছু হয়রানিমূলক আচরণের অভিযোগ উত্থাপন করেন। বিভিন্ন বিভাগের চারজন শিক্ষিকা তাঁদের পুরুষ সহকর্মীদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানিমূলক আচরণের লিখিত অভিযোগও করেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, সঙ্গীত ও বাংলা বিভাগের একজন করে শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় ছাত্রীরাও মৌখিকভাবে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছেন, যেগুলো বর্তমানে তদন্তাধীন। বরিশাল বিএম কলেজের এক ছাত্রলীগ কর্মী একজন ছাত্রীর নগ্ন দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করায় ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন। ২০১০ সালের ২৬ এপ্রিল দিনে-দুপুরে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে এক ছাত্রীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে ছাত্রলীগ কর্মীরা। একই বছরের ২ অক্টোবর বরিশালের মুলাদীতে ছাত্রলীগ কর্মীরা ধর্ষণ করেছে দুই বোনকে। দেহব্যবসার সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা-নেত্রীদের জড়িত থাকার অভিযোগও ছিল গত তিন বছরের আলোচিত ঘটনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ছাত্রী হল, ইডেন সরকারি মহিলা কলেজ, বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগ নেত্রীদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ ওঠে। এছাড়া সংগঠনটির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাও ওই ব্যবসায় জড়িত থাকার খবর প্রকাশিত হয় পত্রপত্রিকায়। নিত্যদিন ঘটে যাওয়া অসংখ্য যৌন নিপীড়নের ঘটনার অল্প কয়টিই তুলে ধরা হয়েছে এখানে। এসব ঘটনায় ক্যাম্পাসে ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে অভিভাবকরা রীতিমত উদ্বিগ্ন। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে প্রশাসনের নীরব ভূমিকা নিয়েও। টেন্ডার, চাঁদাবাজি ও লুটপাট দেশের অধিকাংশ বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই অব্যাহতভাবে চলছে ছাত্রলীগের টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজি। তবে এবার তারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের আবাসিক হলে লুটপাটের ঘটনাও ঘটিয়েছে। এসব টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ও লুটপাটের সম্পদ ভাগাভাগি নিয়ে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষও হয়েছে বহু। চাঁদা দিতে দেরি বা অপারগতা প্রকাশ করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন জেলা শহরের বড় বাজেটের উন্নয়ন কাজ বন্ধ রাখা হয়। এছাড়া বিগত কয়েক বছরে দখলের নামে রাজশাহী, চট্টগ্রাম, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আবাসিক হলগুলোতে আকস্মিক হামলা চালিয়ে সাধারণ ছাত্রদের মূল্যবান সম্পদ লুট করে নেয় ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা। এসব অপকর্মের ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। ভর্তি ও নিয়োগ বাণিজ্য তিন বছর ধরে বিভিন্ন মেডিক্যাল, বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ভর্তি এবং নিয়োগ বাণিজ্য যেন ছাত্রলীগের অন্যতম কর্মসূচি ছিলো। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে মেডিক্যালে ভর্তি এবং চাকরি দেয়ার নামে শত কোটি টাকা কামিয়েছে সংগঠনটি। একেকজন প্রার্থীর কাছ থেকে ১ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত নেয়া হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনার্স ভর্তিতে বড় বড় অনার্স কলেজে প্রশাসনকে জিম্মি করে ছাত্রলীগ কোটার নামে হাজার হাজার ছাত্র ভর্তি করা হয়। ৩০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়। মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে দেশের কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষক নিয়োগে মেধাবীদের আর কোনো জায়গা নেই। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু দলীয় বিবেচনায় অযোগ্য শিক্ষকদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এমনকি পদ না থাকলেও ছাত্রলীগ কর্মীদের চাকরি দেয়ার উৎসাহে দ্বিগুণ শিক্ষক নিয়োগ দিতেও সরকারের বাধছে না। গত আড়াই বছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০টি বিভাগের বিজ্ঞাপিত ১১৭টি পদের বিপরীতে সম্পূর্ণ দলীয় বিবেচনায় ২০৭ জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আরও শ’খানেক শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু পরিষদ সভাপতি এবং ভিসি আবদুস সোবহান। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণ-রসায়ন বিভাগে ৪২ জন প্রার্থীর মধ্যে যোগ্যতায় সর্বনিম্ন দুটি স্থান অধিকারী অর্থাৎ ৪১ ও ৪২ নম্বরের আবদুর রাকিব ও রওশানুল হাবিবকে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ফার্মেসি বিভাগে ১৪ জন আবেদনকারীর মধ্যে ১১তম অবস্থানে থাকা আবদুল মুহিত চাকরি পেয়েছেন। ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যায় চাকরি পেয়েছেন একই বিভাগের আওয়ামীপন্থী প্রভাবশালী শিক্ষক জহুরুল ইসলামের প্রাইমারি স্কুল শিক্ষিকা স্ত্রী জেবুননেছা ইসলাম। শ্রেণীকক্ষে শিক্ষা প্রদানে তার অযোগ্যতার গল্প বিশ্ববিদ্যালয়ে হাসির খোরাক জোগাচ্ছে। এছাড়া একই বিভাগে দ্বিতীয় বিভাগধারী মনোজ কুমারকে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এই চরম অনিয়মের বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্সে যথাক্রমে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম এবং প্রথম শ্রেণীতে দ্বিতীয় স্থান লাভকারী শারমীন লীনা ইউনিভার্সিটি গ্র্যান্টস কমিশনে (ইউজিসি) লিখিত অভিযোগ করলেও আজ পর্যন্ত তদন্তের কোনো অগ্রগতি হয়নি। রসায়ন, মনোবিজ্ঞান, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, আইন ও বিচার, ফোকলোর, সমাজবিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, অর্থনীতি, মার্কেটিং এবং পদার্থ বিজ্ঞানসহ অন্যান্য বিভাগেও শিক্ষক নিয়োগে একইভাবে প্রথম শ্রেণীতে উচ্চস্থান অধিকারীদের বঞ্চিত করে দলীয় বিবেচনায় মেধাতালিকার তলানিতে অবস্থানকারী চূড়ান্ত অযোগ্যদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মানের ভয়াবহ অবনতি ঘটেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর এম আবদুস সোবহান, প্রোভিসি প্রফেসর মুহাম্মদ নুরুল্লাহ ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এম এ বারীসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন ৯ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছে। গত ১৫ মে নাজমুল হক নামে এক নিয়োগপ্রার্থী রাজশাহী মহানগর সহকারী সিনিয়র জজ কোর্টে ওই মামলা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীরচর্চা বিভাগের শিক্ষক পদে নিয়োগের সাক্ষাৎকারের ফলাফল প্রকাশ না করে নতুন করে একই পদে আবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সাক্ষাৎকারের তারিখ ঘোষণা করায় তিনি এ মামলা করেন। নিয়োগপ্রার্থী নাজমুল হক এ বিষয়ে বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীরচর্চা বিভাগের শিক্ষক পদে নিয়োগের ২০০৫ সালে তৎকালীন প্রশাসন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ওই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী তিনিসহ অন্যসব প্রার্থী আবেদন করলে ২০০৬ সালে প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু সাক্ষাৎকারের ফল প্রকাশ না করে বা ওই সাক্ষাৎকার বাতিল ঘোষণা না করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আবার ২০১১ সালে একই পদের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। আগের বিজ্ঞপ্তি ও সাক্ষাৎকার বাতিলের কোনো নির্দেশনা না দিয়েই নতুন করে আবেদন করা প্রার্থীদের সাক্ষাৎকারের তারিখ ঘোষণা করায় সাক্ষাৎকার বোর্ডে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রোভিসি, রেজিস্ট্রারসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ওই নিয়োগপ্রার্থী। অপর আসামিরা হলেনÑ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তার, শরীরচর্চা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর শরীফ হাসান, তৎকালীন সিন্ডিকেট সদস্য শামসুদ্দিন ইলিয়াস, এ এস এম কামরুজ্জামান ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার এম এ সিদ্দিক। অবশ্য শিক্ষক নিয়োগে এই অনিয়ম যে কেবল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে করা হয়েছে, তা নয়। বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে দেশের প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সব বিশ্ববিদ্যালয়ের কাহিনী বর্ণনা করতে গেলে লেখার কলেবর বৃদ্ধি পেয়ে পাঠকের বিরক্তি উৎপাদন করবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি উদাহরণ টেনেই শিক্ষক নিয়োগ বিষয়ে আলোচনার সমাপ্তি টানব। চারুকলা বিভাগে সব পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীপ্রাপ্তকে বঞ্চিত করে নিয়োগ দেয়া হয়েছে এসএসসি ও এইচএসসিতে দ্বিতীয় বিভাগপ্রাপ্ত এবং পাসকোর্সে ডিগ্রি ও প্রিলিমিনারি মাস্টার্স পাস নাসিমুল কবির ও নাসিমা হককে। ড্রয়িং ও পেইন্টিং বিভাগে তালিকার ১ থেকে ৬ পর্যন্ত সব পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীপ্রাপ্তদের পরিবর্তে শিক্ষক হয়েছেন তিনটি দ্বিতীয় শ্রেণীপ্রাপ্ত ছাত্রলীগের সাবেক অনুষদ সভাপতি দুলাল চন্দ্র গাইন। দুলাল বাবু সিলেকশন কমিটির তালিকার ৩৫ জনের মধ্যে ৩৩ নম্বর প্রার্থী ছিলেন। ইসলামের ইতিহাস বিভাগে প্রথম শ্রেণীপ্রাপ্তদের বাদ দিয়ে চাকরি দেয়া হয়েছে অনার্সে দ্বিতীয় শ্রেণীতে ৩২তম স্থান পাওয়া আবদুল রহীমকে, পালি ও বুদ্ধিস্ট স্টাডিজে নিয়োগ পেয়েছেন অনার্সে মাত্র ৪৬ শতাংশ নম্বর পাওয়া নীরু বড়–য়া। অবশ্য তার প্রধান যোগ্যতা হলো তিনি একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বিমান চন্দ্র বড়–য়ার স্ত্রী। পদার্থ বিজ্ঞানে বিজ্ঞাপনের শর্ত লঙ্ঘন করে সহযোগী অধ্যাপক পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে স্বপন কুমার ঘোষকে। শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে প্রথম শ্রেণীপ্রাপ্তদের হটিয়ে চাকরি পেয়েছেন অনার্সে দ্বিতীয় শ্রেণীপ্রাপ্ত তাপস কুমার বিশ্বাস ও দেবদাস হালদার। এই ইনস্টিটিউটে ১১ জনকেই দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ দেয়া হয়েছে। গোপালগঞ্জের আশরাফ সাদেক, কুমিল্লার এক কলেজের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শাহরিয়ার হায়দার, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির দায়ে ইনস্টিটিউট থেকে একদা বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা মাহবুব রহমান এবং প্রয়াত অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের আত্মীয় পরিচয়ে সুমেরা আহসান পুরোপুরি দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ পেয়েছেন। এছাড়া প্রায় প্রতিটি বিভাগে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম এবং দ্বিতীয় স্থান অধিকারীদের নির্লজ্জভাবে বঞ্চিত রেখে দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ দেয়া হয়েছে মেধা তালিকায় অনেক নিচের স্থান অধিকারীদের। এসব নিয়োগের ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন বিবেকসম্পন্ন সিনিয়র অধ্যাপক আপত্তি জানিয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিলেও সেগুলোকে উপেক্ষা করা হয়েছে। অবশ্য যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিজেই প্রায় সব পরীক্ষায় দ্বিতীয় শ্রেণীপ্রাপ্ত, তার মেধাবীদের প্রতি এক প্রকার ঈর্ষাপ্রসূত বিদ্বেষ থাকাটাই স্বাভাবিক। ছাত্র গুমজনিত অস্থিরতা বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে সর্বত্র দীর্ঘদিন থেকে অশিক্ষা ও কুশিক্ষাসুলভ ঘটনা ঘটে আসছে। শুরুতেই বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আনার যথোপযুক্ত চেষ্টা না হওয়াতে শিক্ষা পরিবেশ যেখানে জ্ঞানচর্চা, জ্ঞানের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম স্তর নিয়ে চিন্তা-গবেষণার কেন্দ্র হিসাবে নিরুপদ্রব বিশেষণে বিশেষিত থাকার কথা ছিল, সে মর্যাদা থেকে শিক্ষাঙ্গন অনেক আগে থেকেই বঞ্চিত। যদ্দরুন সমাজের বিভিন্ন মনীষীর অনেকে এই অবস্থাকেই দেশের শিক্ষার নিম্নমানের জন্য দায়ী করে আসছেন আর অনেকে মন্তব্য করেছিলেন যে, পৃথিবীর অপর কোনো দেশের উচ্চ শিক্ষাঙ্গনের কোথাও যেখানে অশিক্ষা ও কুশিক্ষক-সুলভ এরূপ পরিবেশ বিদ্যমান নেই, সে ক্ষেত্রে আমাদের দেশে বিভিন্ন নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ডসহ এ কর্মটি হওয়ার পেছনে গভীর ষড়যন্ত্রই কাজ করছে। সেটি হলো, বাংলাদেশে ভবিষ্যতে মেধাবী নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত করে দেশটির সর্বনাশ সাধন করা এবং ক্রমে একে পরনির্ভরশীল দেশে পরিণত করে এর অকার্যকারিতাকে প্রকট করে তোলা। কিন্তু দেশের দূরদর্শী জ্ঞানীগুণী বুদ্ধিজীবীদের এসব সতর্ক বাণী শুনে যেখানে সমস্যার সমাধান করে উচ্চ শিক্ষাঙ্গন পরিবেশকে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর অনুরূপ মানে আনার চেষ্টা করা দরকার ছিল, সেক্ষেত্রে তা তো নয়ই বরং এখন অবস্থার চূড়ান্ত অবনতিই ঘটেছে বলা ছাড়া উপায় কি? বিশেষ করে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার শাসন কর্তৃত্বে বসার পর দলীয়করণপ্রবণতা অকল্পনীয়ভাবে বেড়ে যাওয়ায় এবং অভিন্ন কারণে অপরাধীদের প্রতি প্রশ্রয় দান নীতি অনুসৃত হওয়ায় এখন বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা, মারামারি, হানাহানি, গুম, হত্যার রণাঙ্গনে পরিণত হয়েছে এবং পরিণত হয়েছে নানান অনৈতিক আচরণের আড্ডাখানায়। সরকারি উপদল হিসাবে কথিত ছাত্র সংগঠন তথা ছাত্রলীগ বিভিন্ন উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রভর্তি বাণিজ্য, দলীয় শ্রেষ্ঠত্ব বহাল, নানান ছুতানাতায় ভিন্ন দল ও ভিন্ন সংগঠনের ছাত্রদের হোস্টেল থেকে চলে যেতে বাধ্য করা, সাধারণ তুচ্ছ কথাবার্তায় তাদের সঙ্গে বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে সংঘাত-সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়া এবং এসব কারণে এক বা একাধিক ছাত্র হত্যা কিংবা গুম ও নিরুদ্দেশ করা অতি সাধারণ ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই মেধাবী ছাত্রের অপহরণ ও তাদের আজও সন্ধান না পাওয়ার ঘটনা সকলকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। নিখোঁজ আল মুকাদ্দাস ও মো: ওয়ালিউল্লাহর অভিভাবকরা নিজেদের স্নেহের সম্ভাবনাপূর্ণ সন্তানদের চিন্তায় বিনিদ্র রজনী যাপন করছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের তাণ্ডবতার খণ্ডচিত্র বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার মুহূর্ত থেকেই সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শুরু হয় ছাত্রলীগ কর্তৃক ক্যাম্পাস দখলের মহোৎসব। ফলে বিরোধী দল ও মত দমনে হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসী ও গুণ্ডাবাহিনী। সবগুলো প্রতিষ্ঠানের বর্ণনা দিতে গেলে কলেবর বৃদ্ধি পাবে বিধায় এখানে শুধুমাত্র চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাসমূহ বর্ণনা করা হলো। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১১। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবিরের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে ও সোহরাওয়ার্দী হলে তল্লাশি চালিয়ে ৭টি লোহার রড উদ্ধার ও ৮ শিক্ষার্থীকে ৫৪-ধারায় গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা সকলে শিবিরকর্মী। পরদিন ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে। লোকপ্রশাসন বিভাগের সাইফুল আলম নামের এক ছাত্রকে পিটিয়ে আহত করে ছাত্রলীগ কর্মীরা। অর্থনীতি ২য় বর্ষের ছাত্র তপুসহ ৪/৫ জন ছাত্রলীগ কর্মী তার মাথা ফাটিয়ে দেয়। সাইফুল আলম বিশ্ববিদ্যালয় এ এফ রহমান হলের ৩১৪ নম্বর রুমের আবাসিক ছাত্র। কিন্তু আবাসিক না হয়েও ওই রুম তপু দখল করে থাকায় সে উঠতে পারছিল না। সম্প্রতি সাইফুল তার রুম থেকে তপুকে চলে যেতে বলে। এ নিয়েই ঘটনার সূত্রপাত। ২৩ অক্টোবর ২০১১। পূর্ব শত্র“তার জের ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিষ্কৃত ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী শহিদুল ইসলামকে রড দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে হাত-পা ভেঙে দেয় দলের প্রতিপক্ষ গ্র“পের ৭/৮জন কর্মী। উল্লেখ্য, শহিদুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২ বছরের জন্য বহিষ্কৃত হয়। ২৬ অক্টোবর ২০১১। ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীরা ছাত্রশিবিরের ওপর হামলা চালায়। রাত সাড়ে ১১টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটে। রাত ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত শাহজালাল হল তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ শিবির নেতা-কর্মীসহ ৪২ শিক্ষার্থীকে আটক করে। ২৮ জনকে মারামারি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। বাকি ১৪ জনের পরীক্ষা থাকায় তাদের হাটহাজারী থানায় আটক রাখা হয়। ছাত্রলীগ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলিও ছোড়ে। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ছাত্রলীগ ধারালো অস্ত্র, হকিস্টিক, রড, লাঠিসোটা নিয়ে হলের সামনে অবস্থান নেয়। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাফায়েত বিল্লাহ ২৫ শিবির নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে একটি ভাঙচুরের মামলা দায়ের করেন। পরদিন আবারও ছাত্রলীগ শিবিরের ওপর হামলা চালায়। দৈনিক নয়া দিগন্তের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ছাত্র মাহবুব তামিমকে পিটিয়ে আহত করে। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, নগর আওয়ামী লীগ নেতা আ জ ম নাছির সমর্থিত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী তানজিম হোসেনের অনুসারী নূর মোহাম্মদ নাজমুলের নেতৃত্বে ১৫-২০ জন ছাত্রলীগ কর্মী দা-কিরিচ নিয়ে তামিমের ওপর হামলা চালায়। এসময় সেখানে দায়িত্ব পালনরত পুলিশ সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে। ২৮ অক্টোবর ২০১১। গ্রেফতারকৃত ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের মুক্তিসহ ৫ দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবির। চবি ছাত্র মহিউদ্দিন মাসুম ও হারুন-অর-রশিদ কায়সারের খুনিদের বিচার, অন্যায়ভাবে গ্রেফতারকৃত নিরপরাধ সকল ছাত্রকে অবিলম্বে মুক্তি দান, সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান, হলে লুটপাটকৃত মালামালের ক্ষতিপূরণ এবং আবাসিক হলে উপস্থিত ছাত্রদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা বিষয়ে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষের ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৪৭৬তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় ২টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষের ঘটনায় শাহজালাল হল প্রভোস্টকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে ৭ দিনের মধ্যে রিপোর্ট প্রদান, হলসমূহে সার্বক্ষণিক তদারকি করার জন্য ২টি ভিজিলেন্স টিম গঠন, কয়েকদিন আগে কলা অনুষদের ঝুপড়িতে গণিত ৪র্থ বর্ষের ছাত্র শহিদুল ইসলামের উপর হামলাকারীদের সনাক্ত করে রিপোর্ট প্রদানের জন্য ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মাহবুবুল হককে প্রধান করে ৩ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়া সভায় মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. খান তৌহিদ ওসমানের নেতৃত্বে ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠনকে অনুমোদন এবং ১৫ পনের দিনের মধ্যে রিপোর্ট প্রদান। ৩১ অক্টোবর ২০১১। অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ছাত্রলীগের দু’কর্মী আহত হয়। এ ঘটনায় শাকিলকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করে চবি ছাত্রলীগ। ১৩ নভেম্বর ২০১১। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষপাতিত্বের কারণে হলে উঠতে পারছে না বৈধ আবাসিক ছাত্ররা এমন অভিযোগ ওঠে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে, ছাত্রলীগের অনাবাসিক কর্মীরা দিব্বি হলে অবস্থান করছে। কিন্তু ঈদের ছুটির পর শিক্ষার্থীরা হলে উঠতে চাইলে প্রশাসন তাদের উঠতে দেয়নি অফিস বন্ধের অজুহাতে। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় এসব শিক্ষার্থীদের। অনেক আবাসিক ছাত্রের রুমে ছাত্রলীগ তালা ঝুলিয়ে দিলেও প্রশাসন সেগুলো খুলে দেবার কোনো ব্যাবস্থা না নেয়ায় প্রশাসনের পক্ষপাতিত্বমূলক ভূমিকা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। ১৬ নভেম্বর ২০১১। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ঘোষিত কমিটিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্য না রাখার প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি করে ছাত্রলীগ। এসময় ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটে তালা লাগিয়ে দেয় ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডি ও পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এদিকে ছাত্রলীগ কর্মীরা ক্যাম্পাসে বেসরকারি বাস সার্ভিস তরীগুলোকে স্টেশন থেকে বের করে দেয়। এছাড়া শাটলট্রেন চালককে ট্রেন থেকে নামিয়ে দেয়। ফলে ক্যাম্পাস থেকে বাসায় ফেরা নিয়ে দুর্ভোগে পড়েন সহস্রাধিক শিক্ষার্থী। শাহজালাল হলের প্রভোস্ট এসএম সালামত উল্যাহ ভূঁইয়া পদত্যাগ করেন। ঈদের ছুটি শেষে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার দিন সকালে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে তিনি পদত্যাগ করেন। ঈদের পর শিবিরকর্মীরা হলে উঠতে গেলে ছাত্রলীগের বাধার কারণে প্রশাসন তাদের হলে উঠতে দেয়নি। পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষার্থীরাও তখন হলে উঠতে বাধার সম্মুখীন হন। ১৮ নভেম্বর ২০১১। পদার্থবিদ্যা বিভাগের মাস্টার্সের এক ছাত্রকে ছাত্রলীগ কর্মীরা মারধর করে। ছ্ত্রালীগের ২০-২৫ জন নেতাকর্মী ঐ শিক্ষার্থীর ওপর অতর্কিত হামলা চালায় এবং তাকে রুম থেকে বের করে দেয়। আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে চবি মেডিক্যাল সেন্টারে ভর্তি করা হয়। ছাত্রলীগ কর্মীরা তার রুমের সকল বই পুস্তক ফেলে দেয় এবং তার সার্টিফিকেট ছিনিয়ে নেয়। পরদিন শাহজালাল হলে ওঠাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দুই দিনের আল্টিমেটাম দেয় ছাত্রশিবির। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্রলীগের বাধার কারণে শাহজালাল হলে উঠতে না পারা শিবির কর্মীসহ ২৬ জন আবাসিক শিক্ষার্থী প্রক্টরিয়াল বডির সাথে বৈঠকে বসে। কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দুই সপ্তাহ সময় চায়। কিন্তু তারা ২ দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে প্রক্টর অফিস থেকে বের হয়ে আসে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদেরকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের (র‌্যাগ দেয়ার) মাধম্যে বরণ করে নেয়ার প্রবণতা আশঙ্কাজনকহারে বেড়েছে। অতীতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে র‌্যাগিংয়ের কোনো প্রথা চালু না থাকলেও ২৬ নভেম্বর ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর থেকে বখাটে শিক্ষার্থীদের হাতে র‌্যাগের শিকার হয়েছেন শতাধিক ভর্তিচ্ছু। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মাধম্যে ভর্তিচ্ছুদের বরণ করে নেয়ার এ অপসংস্কৃতি হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। ২৯ ডিসেম্বর ২০১১। এদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইমরান হোসেন নামে এক সাধারণ শিক্ষার্থীকে পেটায় ছাত্রলীগ কর্মীরা। পরের দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে দু’ছাত্রলীগ কর্মীকে রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করে প্রতিপক্ষে গ্র“পের কর্মীরা। ২ জানুয়ারি ২০১২। পূর্ব শত্র“তার জের ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্র“পের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ৩ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে একজনকে আশংকাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রশাসনিক ভবনের সবগুলো গেইটে তালা লাগিয়ে দেয় ছাত্রলীগ কর্মীরা। এতে ভবনের ভেতরের সকলে প্রায় আধঘণ্টা অবরুদ্ধ হয়ে থাকে। ৫ জানুয়ারি হলের সিটে থাকাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এক কর্মীকে পিটিয়ে আহত করে প্রতিপক্ষ গ্র“পের কর্মীরা। আহতের নাম মোহাম্মদ সোহেল। সে ইংরেজি ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তাকে চবি মেডিক্যাল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। ৯ জানুয়ারি ২০১২। রোডমার্চ উপলক্ষে শিবির-ছাত্রদলবিহীন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জের ধরে ছাত্রলীগের এক গ্র“পের হামলায় আহত হয় অপর গ্র“পের দুই কর্মী। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে ছাত্রলীগের নৃশংস হামলায় বিশ্ববিদ্যালয় সোহরাওয়ার্দী হল শিবিরের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ বিন হাবিব এবং শিবিরের জীববিজ্ঞান অনুষদ প্রচার সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম নিহত হন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড. নাসিম হাসনসহ অর্ধশাধিক আহত হন। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকসহ ১৫ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সকল ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া সন্ধ্যা ৭টা মধ্যে ছাত্রদের এবং সকাল ১১টার মধ্যে ছাত্রীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় বিশ্ববিদ্যায়ল কর্তৃপক্ষ। কলা অনুষদের ৪র্থ তলায় ইসলামের ইতিহাস বিভাগ ২য় বর্ষের ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী শাহীন হামলা করে শিবির কর্মী আল আমিনের উপর। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের কর্মীরা একত্রিত হয়ে ঐ বর্ষের শিক্ষার্থীদের উপর হামলা ও ক্লাস রুমে ব্যাপক ভাঙ্চুর চালায়। এ সময় প্রতিবাদ করতে গেলে কলা অনুষদ শিবির সভাপতি আবুল কালাম আজাদকে ছাত্রলীগ কর্মীরা ধাওয়া করে এবং বিজ্ঞান অনুষদের পুকুরে ফেলে দিয়ে ইট ও লাঠি দিয়ে উপর্যুপরি পিটিয়ে আহত করে। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে আসেন। এ সময় ছাত্রলীগ কর্মীরা ১নং গেইটের দিকে মিছিল সহকারে চলে যায়। দুপুর দেড়টায় ছাত্রলীগ কর্মীরা জড় হয়ে গোলচত্বরে অবস্থান নেয়। বেলা ২টায় ছাত্রলীগ গুণ্ডারা শিবির কর্মীদের ধাওয়া দিলে তারাও পাল্টা ধাওয়া দেয়। থেমে থেমে আধাঘণ্টা ধরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটানা ঘটে। এসময় পুলিশকে দর্শকের ভূমিকায় অবস্থান করতে দেখা গেছে। এক পর্যায়ে শিবির নেতা ও প্রাণিবদ্যা ২য় বর্ষের ছাত্র মুজাহিদ দৌড় দিতে গিয়ে পড়ে যায়। এ সময় ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের সামনে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তার মাথা থেকে মগজ বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। চমেক হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। একই সময়ে ছাত্রলীগ কর্মীরা শাহজালাল হলসংলগ্ন পাহাড়ের ওপর সোহরাওয়ার্দী হল শিবিরের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ বিন হাবিবকে ধারলো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। এ সময় তারও মাথা থেকে মগজ বিচ্ছিন্ন করে ফেলে নরপশুরা। রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে পাঠানো হলে বিকেল ৪টার দিকে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে সব দায় শিবিরের ওপর চাপিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিবির সাধারণ সম্পাদক ইমরুল হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমানসহ শিবিরের ১৫ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে হাটহাজারী থানা পুলিশ। পরদিন নগরীতে অর্ধদিবস হরতাল ডাকে ছাত্রশিবির। স্বতঃস্ফূর্তভাবে সে হরতাল পালিত হয়। ছাত্রলীগ-শিবিরের মধ্যে সংঘর্ষের দিন বুধবার গভীর রাতে হাটহাজারী থানা পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ৩০০-৪০০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে (মামলা নং ১৭)। বিশ্ববিদ্যালয় ১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ বাড়ানো হয়। ৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবির সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে জীব বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নুরল আনোয়ারকে আহ্বায়ক করে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ১৪ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য কমিটিকে নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়া ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের সাথে আলোচনা করার জন্য অধ্যাপক ড. খান তৌহিদ ওসমানকে আহ্বায়ক করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি লিয়াজোঁ কমিটিও গঠন করা হয়। ১১ ফেব্রুয়ারি তারিখে ৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের পৈশাচিক হামলায় শাহাদাত বরণকারী ২ শিক্ষার্থীর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এবং দোষীদের বিচারের দাবিতে ক্যাম্পাসে মৌন মিছিল, মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকসমাজ (সাদা দল)। এ সময় শিক্ষক নেতৃবৃন্দ ২ ছাত্র হত্যার পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটি এবং লিয়াজোঁ কমিটি প্রত্যাখ্যান করেন। পাশাপাশি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানান। নিহত ও আহত শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে অনুদান এবং চিকিৎসা ব্যয় বহনেরও আহ্বান জানানো হয়। তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দলীয় সঙ্কীর্ণতার ঊর্ধ্বে ওঠে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভাষা বুঝে চলার আহ্বান জানান। ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১২। ৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের হাতে দুই শিবির নেতা নিহত হওয়ার ঘটনায় একে অপরকে দোষারোপ করে চবি ছাত্রলীগের বিভক্তি প্রকাশ্য রূপ নেয়। ছাত্রলীগের একাংশ বর্তমান সভাপতি মামুনুল হকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে তাকে নিজ পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বলে অভিযোগ করে প্রতিপক্ষ গ্রুপ। এরই অংশ হিসেবে রাতে একদল মুখোশধারী কর্মী তার ওপর হামলা চালিয়ে তাকে মারাত্মকভাবে জখম করে। এ সময় সভাপতির পদ থেকে তাকে জোরপূর্বক পদত্যাগ করতে চাপ প্রয়োগ করা হয় বলে ছাত্রলীগের একাংশ জানায়। জানা যায়, গত ৮ ফেব্রুয়ারির ঘটনায় যাদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তারাই যাচ্ছেতাইভাবে দলীয় প্রভাব কাজে লাগাতেই সভাপতির পেছনে লেগেছে। ছাত্রলীগের একাংশের এই গ্রুপটি দীর্ঘদিন যাবত যে কোনো মূল্যে ক্যাম্পাসে নিজেদের একক আধিপত্য সৃষ্টির পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই সভাপতিকে সরিয়ে দেয়ার ফন্দি এঁটেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ২৮ এপ্রিল ২০১২। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শাটল ট্রেনের বগিতে আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব ঘটনার জের ধরে ছাত্রলীগের দু’গ্র“পের মধ্যে সংঘর্ষে ৬ কর্মী আহত হয়। এ সময় অস্ত্র, গুলি ও রামদাসহ ছাত্রলীগের তিন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। হাটহাজারী থানা পুলিশ এ ঘটনায় চবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক স¤পাদক মাহমুদুল হাসান তুষার ও পরিবেশ বিষয়ক স¤পাদক মজিবুর রহমান মামুনকে আসামি করে অস্ত্র আইনে একটি মামলা দায়ের করে। অপরজন ছাত্রলীগের কর্মী মো: ইমতিয়াজ অভিকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার করে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের ১০ দিনের মাথায় এ ঘটনা ঘটে। তুষার ৮ ফেব্র“য়ারি দুই শিবির নেতা হত্যার মামলার আসামি। পুলিশ দিয়ে চলছে বিশ্ববিদ্যালয় উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। এখন নানা সমস্যায় জর্জরিত। ৫৮ বছরের পথচলায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে হাজারো গৌরব, অর্জন আর স্বীকৃতি। মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের রয়েছে অসামান্য অবদান- যা আজও দেশে শ্রদ্ধাভরে স্বীকৃত। কিন্তু সেই বিশ্ববিদ্যালয়ই এখন নানা সমস্যার মুখোমুখি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ছয়টি প্রবেশপথেই বসে থাকে পুলিশ। ক্যাম্পাসের প্রতিটি চত্বরে তাদের অবস্থান। মিছিল-মিটিং নিষিদ্ধ থাকার কারণে বিভিন্ন রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর টেন্টও পুলিশের দখলে। শুধু তাই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টি ছাত্র হলের প্রত্যেকটিতে দুটি করে রুম বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে পুলিশকে। এরকমটি শুধু রাবির বেলায় না, অন্যান্য প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একই অবস্থা। ফুঁসে উঠেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বিগত ২০০৬ সালে তৎকালীন সামরিক শাসনের কদর্য চেহারায় সুন্দর সুষম মেকআপ স্বরূপ বাংলাদেশ শাসনরত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে শিক্ষাব্যবস্থা বিষয়ক একখানা প্রকল্পের ফর্দ ধরিয়ে দিয়েছিলেন বর্তমান দুনিয়ার পুঁজিতান্ত্রিক ঔপনিবেশিক মোড়ল বিশ্বব্যাংক। ব্রিটিশ আমলে ম্যাকলে প্রমুখ লাট সাহেবদের প্রদানকৃত শিক্ষাব্যবস্থা বিষয়ক ফর্দ গ্রহণ করার অভ্যাস বাংলাদেশের গণতন্ত্রী অথবা স্বৈরতন্ত্রী, কোনো শ্রেণীর শাসক গোষ্ঠীই ছাড়তে পারেননি। তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ সকল প্রকার বাস্তবতা এবং জাতীয় স্বার্থবিরোধী এই প্রকল্প তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যেমন সাদরে গ্রহণ করা হয়েছিল বর্তমানের সরকারও তা বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। আর তারই ফলাফল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি সরকারের নিদারুণ অবহেলা এবং কর্তৃপক্ষের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত এবং এর বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের উত্তাল বিক্ষোভ। বিশ্বব্যাংকের ওই ফর্দ ২০২৬ সাল নাগাদ বাংলাদেশের সবগুলা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে আস্তে আস্তে বেসরকারীকরণের প্রকল্প হাতে নেয়ার নির্দেশ দেয়। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই গত ৫ বছরে বাংলাদেশের প্রায় সবগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই বেতন অথবা ভর্তি ফি, রেজিস্ট্রেশন, ক্যান্টিনের খরচ ইত্যাদির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করছে। সরকারি ভর্তুকি ব্যতীত এত দ্রুতগতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন কিভাবে সম্ভব তারও নানান তরিকা বাতলিয়ে দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। তবে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন যে সহজ নয়, এটা বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠীর অজানা নয়। আর এই কারণেই পুরনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বদলে প্রকল্পের মডেল হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে। এই কারণেই পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার সময়ই তাকে ক্রম বেসরকারীকরণের প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতিজ্ঞা করতে হয়েছিল। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের সবচেয়ে সুবিধাবঞ্চিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অন্যতম। তাদের না আছে পরিপূর্ণ আবাসন, না আছে যানবাহন, না আছে উচ্চমানের শিক্ষার সুযোগ, এর মাঝে যুক্ত হয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নের মডেল বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার মড়ার উপরে খাঁড়ার ঘা। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে। ব্যস, আওয়ামী সরকারের মদদে নয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী পেটোয়া পুলিশবাহিনী আর সদা উচ্ছৃঙ্খল সংগঠন ছাত্রলীগের হাতে লাঞ্ছিত, অপমানিত, অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হতে হয়। প্রতি বছর বলা হয় শিক্ষা খাতে বরাদ্দ সবচেয়ে বেশি, তারপরে দেখা যায় সেই বাজেটের একটা বড় অংশই যায় সামরিক এবং অন্যান্য খাতে। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী ২০১০ সালে যে বরাদ্দ পেয়েছে তা ৩০৬টা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটের সমান। সামরিক খাতে মাত্র ১ শতাংশ খরচ কমালে তা দিয়ে ৩টা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা সম্ভব। বাংলাদেশে যেখানে আরো বেশি বেশি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া দরকার, যেখানে গবেষণা এবং অন্যান্য খাতে এইসব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি বৃদ্ধি করা দরকার সেখানে সরকারের এই ধরনের আচরণ আর যাই হোক জনস্বার্থের পক্ষে যায় না। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ২৭/৪ ধারা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীরা সর্বব্যাপী আন্দোলন শুরু করে। ২৭/৪ ধারানুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়কে সম্পূর্ণ নিজের অর্থায়নে চলতে হবে। যার অর্থ দাঁড়ায় প্রধানত শিক্ষার্থীদের বেতন-ফির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়কে সচল থাকতে হবে। কিন্তু সমাজের যে কোনো আয়ের, যে কোনো স্তরের নাগরিকের জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দুয়ার উন্মোচিত থাকার কথা। সমাজের সর্বনিম্ন আয়ের মানুষকে চিন্তা করেই এসব প্রতিষ্ঠানের সব বেতন-ফি নির্ধারণ করা উচিত। বেতন-ফি বৃদ্ধির মাধ্যমে শিক্ষার এমন বাণিজ্যিকীকরণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণার স্ববিরোধী। পাবলিক শব্দটির অর্থ জনগণ। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃষ্ঠপোষক সরকার হলেও সাধারণ জনগণই এর মূল সুবিধাভোগী। জনগণের করের টাকা এবং অনুৎপাদনশীল খাত থেকে বাজেট বরাদ্দ সামান্য কমিয়ে সরকার অনায়াসে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তুকি দিতে পারে। বিশ্বব্যাংক, এডিবির অর্থায়নে ও পরামর্শে বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা সংস্কারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বিশ সনা (২০০৬-২০২৬) একটি কৌশলপত্র প্রণয়ন করে। এরই বাস্তবায়ন চুপিসারে চলছে পুরো দেশজুড়ে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের দেশে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কিছু সংখ্যক ধনী বা সচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দিয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় বলতে যা বুঝায় এগুলোকে তা বলা চলে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। কারণ এগুলোতে অতি সীমিত সংখ্যক বিষয় পড়ানো হয়। দুই একটি ব্যতিক্রম ছাড়া এগুলো একটু বড়সড় কোচিং সেন্টার। এগুলোর মূল লক্ষ্য মুনাফা। অথচ দুনিয়ার সবদেশে বিশ্ববিদ্যালয়কে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনেও তা লেখা থাকে। কিন্তু আমাদের দেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আইনে তা লেখা নেই। এর সুযোগ নিয়েছে এসব বিশ্ববিদ্যালয়। শুধু মুনাফা করা নয়, সার্টিফিকেট বিক্রির অভিযোগও উঠেছে কোনো কোনোটির বিরুদ্ধে। এখানে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের বর্তমান অবস্থার কিছুটা আভাস দেয়া হলো : অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়েই কমিশনের অনুমোদন ব্যতিরেকে নতুন কোর্স, বিভাগ, এমনকি অনুষদও চালু করা হয়ে থাকে। এমনকি, কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি নিয়ে আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে অনৈতিকভাবে এইচএসসি পরক্ষার্থীদের ভর্তির জন্য প্রচারণা চালায়। প্রায় সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ভাড়া-করা বাড়ি/ভবনে বা বাণিজ্যিক ভবনের ২/১টি ফ্লোরে স্থাপিত- ফলে ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস করা কঠিন। ফলে বিজ্ঞান বিষয়ক শিক্ষার্থীরা যথাযথ ব্যবহারিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। উল্লেখ্য যে, অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়-ব্যয় হিসাব ঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হয় না। বিশ্ববিদ্যালয় অবাধ, মুক্তবৃদ্ধি এবং নিরপেক্ষ জ্ঞানচর্চার কেন্দ্রস্থল। কিন্তু দুঃখের বিষয় দেশের উচ্চ শিক্ষার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সঙ্কটময় পরিস্থিতি বিরাজ করছে। নিয়মানুযায়ী পর্যাপ্ত সংখ্যক যোগ্য ও অভিজ্ঞ পূর্ণকালীন ও খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ না করে অধিক সংখ্যক সবে মাত্র পাস করা জুনিয়র শিক্ষক নিয়োগ করে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করছে। ছাত্র বেতন/টিউশন ফি প্রতি ক্রেডিট সর্বনিম্ন ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ৭৫০০/-টাকা পর্যন্ত আছে। যে শিক্ষক দ্বারা পাঠদান করা হয় সেই শিক্ষকই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করেন এবং উত্তরপত্রের মূল্যায়ন করে থাকেন। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত সিলেবাসের সম্পূর্ণ অংশ শেষ না করে পরীক্ষা নিয়ে থাকে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ণকালীন শিক্ষকের পরিবর্তে খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ করে নির্ধারিত ক্রেডিটের স্থলে ক্রেডিট আওয়ার কমিয়ে নামমাত্র পরীক্ষা নিয়ে কোর্স শেষ করে থাকে। ছাত্র-ছাত্রীর ভর্তি ও পরীক্ষার গ্রেডিং প্রদানে স্বচ্ছতা নেই। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিক নম্বর দিচ্ছে বলে পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলাফলে বৈষম্য দেখা যাচ্ছে, ফলে নানা জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের প্রকৃত জ্ঞান আহরণ ও জ্ঞানের উন্মেষ সাধন ব্যাহত হচ্ছে। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্যোক্তারাই প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁরা নিজেদের আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে সবকিছু সীমাবদ্ধ রেখে অনেক জটিলতার সৃষ্টি করেছেন। মাদ্রাসা দেশের শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা কোনো সময়েই খারাপ অবস্থানে ছিল না এবং এখনও নেই। কিন্তু সব সময়ই এই মাধ্যমটির প্রতি সরকারের উদাসীনতা লক্ষ্য করা গেছে। গত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ফাজিল-কামিলকে ডিগ্রির সমমান দেয়া হয়। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংসের যাবতীয় পদক্ষেপ সম্পন্ন করেছে। দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে সাংঘর্ষিক সেক্যুলার শিক্ষানীতি চালু করে শিক্ষাব্যবস্থাটিকে অনেকটাই সঙ্কুচিত করা হয়েছে। আলেম তৈরির কারখানা মাদ্রাসাকে এই সরকার বড় ভয় পায়। তাইতো নানান অজুহাতে পুরো ব্যবস্থাটিকেই কলুষিত করার পাঁয়তারা করছে। সেশনজটের যাঁতাকলে পিষ্ট শিক্ষার্থীরা এই অবস্থা এখন প্রায় প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই দেখা যাচ্ছে। এমনও দেখা যাচ্ছে, ২০০৯ সালে যে ব্যাচ পাস করে বেরোনোর কথা ছিল তা বের হয়েছে এই ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিক্ষকদের শিক্ষাছুটি, লিয়েনে এবং প্রেষণে থাকার কারণে এবং সর্বোপরি শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতার কারণেই এমনটি ঘটছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বহীনতা দেশের বিরাজমান শিক্ষাপরিস্থিতি যে কতোটা নিচের দিকে নেমেছে, তার প্রমাণ পাওয়া যায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও অ্যাকাডেমিক অবস্থা বিবেচনায় নিলে। যেহেতু এই প্রতিষ্ঠানটি রাষ্ট্রের প্রায় আশি ভাগ উচ্চশিক্ষা তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ করে, তাই এর চলা-না-চলার ওপর দেশের সার্বিক শিক্ষার উন্নয়ন বা অবনতি অনেকটাই নির্ভর করে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অযোগ্যতা এবং নির্লজ্জ ও ধারাবাহিক দায়িত্বহীনতার কারণে পুরো জাতির ঘাড়ে আজ চেপে বসেছে যন্ত্রণার ভার। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিদারুণ উদাসীনতার ওপর ভর করে বাড়ছে যাবতীয় জ্বালার বহর। অসহায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক তথা দেশবাসী যেন আজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাকাক্সিক্ষত অচলাবস্থার অসহায় শিকার! ২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া হাজার হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি বাতিল সংক্রান্ত সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত এবং ২০১১-২০১২ শিক্ষাবর্ষে চলমান ভর্তি জটিলতা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে ধ্বংসের কাছাকাছি পৌঁছে দিয়েছে। ভর্তির এক বছর পর যখন প্রথমবর্ষ অনার্স পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি চলছে, তখন হাজার হাজার শিক্ষার্থী জানতে পারলো যে তাদের ভর্তি বাতিল হয়েছে। কী নিঠুর সিদ্ধান্ত! কোনো বিবেচনা ছাড়া এমন সিদ্ধান্ত কে নিতে পারে? এতটুকু লজ্জা করলো না কারো। কোনো অপরাধ বোধও তাদের মনে স্থান পেল না? কারা এর ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন? তারা কি শিক্ষক না প্রশাসক? আবার ২০১১ সালের ডিসেম্বরে শুরু করে গত প্রায় পাঁচ মাসেও শেষ করতে পারেনি ২০১১-২০১১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি কার্যক্রম। বারবার ফলাফল সংশোধন এবং বিষয় পরিবর্তনের ফলে শিক্ষার্থীরা পড়েছে মারাত্মক ভোগান্তিতে। ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব স্নাতকপূর্ব শিক্ষাবিষয়ক স্কুলের ডিনের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের দায়িত্ব দেয়ায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ও বাইরে সৃষ্টি হয়েছে বিরূপ সমালোচনা ও ক্ষোভ। এতে নাকি প্রায় এক কোটি টাকা বাড়তি ব্যয় হয়েছে। জনগণের টাকার এই অপচয়ের ভার কে নেবে? সিলেবাস-কারিকুলামের অস্পষ্টতা ও জটিলতা আর ভর্তির প্রক্রিয়ার সংকটের কারণে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি আতঙ্কের জগতে পরিণত হয়েছে। আর অ্যাকাডেমিক মনিটরিং না হওয়ায় দিন দিন পড়ে যাচ্ছে লেখাপড়ার মান। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে বিব্রত হতে হচ্ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জনকারী শিক্ষার্থীদেরকে। মর্যাদার প্রশ্নে তারা অবহেলার শিকার হচ্ছে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের অব্যবস্থাপনার কারণে। কী দুর্ভাগ্য আমাদের! ভুল করবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, মনিটরিং-এ দায়িত্বহীনতার পরিচয় দেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আর তার খেসারত দেবে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবার! এমনটি কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসর ও মান নিশ্চিত ও প্রসারণের পরিবর্তে তারা শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করতে ব্যস্ত রয়েছেন। অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী একাধিক প্রোভিসি থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন মাত্র একজন। প্রায় পাঁচ বছর ধরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট অকার্যকর হয়ে রয়েছে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছর এবং মহাজোট সরকারের প্রায় সাড়ে তিন বছর পার হলেও কর্তৃপক্ষ কোনো সিনেট সভা আহ্বান করতে পারেনি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে স্থবিরতা বিরাজ করছে। দেশের সবচেয়ে বড় ও অখণ্ড জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় চলছে ঢাকা সিটি করপোরেশনের মতো প্রশাসক দিয়ে। এখানে ভিসি নিয়োগে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি নির্ধারণ ও অনুসরণ করা উচিত। সারাদেশের প্রায় ২২শত উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ন্যস্ত, তার কাজ তো আর দুই-তিনজন প্রশাসক দিয়ে যেনতেনভাবে চালানো যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসিদের রামরাজত্ব : দলীয়করণের বিষফল সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উন্নতি কেন হচ্ছে না সেটা সেখানকার পরিস্থিতিই দেখিয়ে দেয়। দলবাজি, কোন্দল, বিশৃঙ্খলা, সন্ত্রাস ক্যাম্পাসের পরিবেশকে এতটাই বিষাক্ত করেছে যে, শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অর্জন ও বিদ্যাচর্চার ন্যূনতম সুযোগ নেই বললেই চলে। এমন অস্বাভাবিক পরিস্থিতির কারণ গোপন কিছু নয়। প্রচলিত নিয়ম-রীতি উপেক্ষা করে দলীয় বিবেচনায় সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) ও প্রশাসনই এ জন্য দায়ী। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশে ভিসিদের একক ক্ষমতার অধিকারী করা হয়েছে। তারা একাধারে প্রশাসনিক ও অ্যাকাডেমিক প্রধান এবং সিনেট, সিন্ডিকেট ও অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে সর্বেসর্বা। সবক্ষেত্রেই নির্বাচনের বিধান রেখে যোগ্য ব্যক্তিদের দায়িত্ব পালনকেও নিশ্চিত করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান সরকার ভিসিসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে পছন্দের লোক নিয়োগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দলবাজির আখড়ায় পরিণত করেছে। তিন বছরেও এসব পদে নির্বাচনের ব্যবস্থা না করায় এখন ক্ষমতাসীনদের আনুগত্য রক্ষা ও সঙ্কীর্ণ স্বার্থ রক্ষার কোন্দল সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে। বুয়েটের কথাই আসা যাক। সেখানে শেখ হাসিনার বর্তমান মেয়াদের আগে কখনও রাজনীতির অনুপ্রবেশ ঘটেনি। সেই পাকিস্তানি আমল থেকে সেখানে ভিসি নিয়োগ সর্বদাই যোগ্যতা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে হওয়াটাই প্রথা ছিল। ড. রশীদ, ড. নাসের, ড. মোশাররফ হোসেন, ড. মতিন পাটওয়ারী, ড. ইকবাল মাহমুদ, ড. মো. শাহজাহান এবং সর্বশেষ ড. সফিউল্লাহর মতো অসাধারণ বিদ্বান শিক্ষকেরা যে চেয়ারে বসেছেন, সেখানে শেখ হাসিনা কেবল দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ দিয়েছেন ড. নজরুল ইসলামকে। এই ভদ্রলোক দীর্ঘদিন ধরে সরাসরি আওয়ামী রাজনীতিতে সম্পৃক্ত এবং তিনি সরকারপন্থী পেশাজীবী সংগঠনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট। এই সংগঠনটির সভাপতি পদে আছেন সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী। একজন বেসরকারি নাগরিক এবং বুয়েটের ভিসির অবস্থান ও সম্মান কোনোক্রমেই তুলনীয় নয়। তাকে অবশ্যই দলীয় চিন্তা-চেতনার ঊর্ধ্বে থেকে বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকের মহান দায়িত্ব পালন করতে হবে। সে কারণেই প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকবৃন্দ দেশের সচেতন নাগরিকরা আশা করেছিলেন যে, ভিসি নিযুক্ত হওয়ার পর অন্তত ড. নজরুল ইসলাম সরকারদলীয় পেশাজীবী সংগঠন থেকে পদত্যাগ করবেন। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, বুয়েটের মতো প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা রক্ষার চেয়ে বর্তমান ভিসি দলীয় লেজুড়বৃত্তি ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছেন। আওয়ামীপন্থী বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের পদ রক্ষা করে তিনি কেবল দলীয় সভায় উপস্থিত থাকেননি- উপরন্তু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে মঞ্চে আসন গ্রহণ করেছেন। বুয়েটের ইতিহাসে কোনো ভিসির এ ধরনের দলীয় সভায় অংশগ্রহণের নজির নেই। এহেন ভিসির আমলে ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বুয়েটের যে হাল হওয়ার কথা ছিল, তাই হয়েছে। তিনি কয়েক ডজন সিনিয়র শিক্ষককে ডিঙিয়ে নজিরবিহীনভাবে বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সভাপতি ড. হাবিবুর রহমানকে বুয়েটের প্রো-ভিসি পদে নিয়োগ দিয়েছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কেনাকাটা ও নিয়োগে ছাত্রলীগের একচ্ছত্র টেন্ডারবাজি কায়েম করেছেন। এমন দুর্ভাগ্যজনক অভিযোগও শোনা যাচ্ছে- শিক্ষক নিয়োগ ও পরীক্ষায় নম্বর দেয়া নিয়েও নাকি রাজনৈতিক বিবেচনা প্রাধান্য পাচ্ছে। ঢাকার অদূরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আর একজন দলবাজ উপাচার্য ড. শরীফ এনামুল কবির ছাত্রলীগের পাণ্ডাদের একাংশকে ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে এমনই ধ্বংসাত্মক অবস্থার সৃষ্টি করেছেন যে, অন্যান্য ছাত্র-শিক্ষক তো বটেই এমনকি আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের এক বিরাট অংশ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে যেতে বাধ্য হয়েছেন। সেখানকার আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সাংস্কৃতিক কর্মীদের অনশন ভাঙিয়ে এসেছেন আওয়ামী লীগের ফতুল্লা আসনের সংসদ সদস্য, এ দেশের চলচ্চিত্রে এক সময়ের নায়িকা কবরী। এই প্রবীণ অভিনেত্রীর লেখাপড়া কতদূর এবং তিনি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন, এই তথ্য আমাদের জানা নেই। লোকমুখে শোনা, তিনি নাকি স্কুলের গণ্ডিও পার হননি। কেবল নায়িকা হওয়ার সুবাদে দেশের অন্যতম শীর্ষ বিদ্যাপীঠে তার আগমন যথেষ্ট কৌতুকের সৃষ্টি করেছে। অতীতে সেখানে ছাত্রলীগ নেতার শততম ধর্ষণের কথা জানাজানি হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বর্তমান ভিসির আমলে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধেও কিছু করা হয়নি। পরিস্থিতির চাপে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড স্থগিত ঘোষণা করা হলেও দলবাজ ভিসির পেটোয়া বাহিনীর দাপট থামেনি। তাদের হাতে ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় সাধারণ ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়লেও কারও টনক নড়েনি। এসবের প্রতিবাদে শিক্ষক সমাবেশে সরকারদলীয় শিক্ষকদের মারামারি এবং প্রক্টরের হাতে শিক্ষক সমিতির সভাপতির লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা এককথায় নজিরবিহীন। এটা গুণ্ডামির নিকৃষ্ট নজির সৃষ্টি করেছে। এমন শিক্ষকদের কাছে ছাত্ররা কী শিক্ষা পাবে সেটা অনুমান করা কঠিন নয়। সৃষ্ট অবস্থা দেখে মনে হয়, শিক্ষামন্ত্রী কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি দেখেও দেখেন না। তিনি স্কুল নিয়েই ব্যস্ত। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যাপারে তার কোনো এখতিয়ার নেই। বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ইউজিসিও দলীয়করণের বাইরে নেই। ফলে ভিসিদের পোয়াবারো দেখতে হচ্ছে সবাইকে। চ্যান্সেলর হিসেবে যারা আছেন তারা কনভোকেশনের অনুষ্ঠান ছাড়া আর কিছুর খবর রাখার প্রয়োজন বোধ করেন বলে মনে হয় না। খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি দলবাজিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদ্বয়ের সঙ্গে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়েছেন। সেখানকার শিক্ষক সমিতির সভাপতি মন্তব্য করেছেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা বুয়েট এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়েও খারাপ। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক আন্দোলনে সেখানে কর্মবিরতি চললেও ভিসি ড. মুহাম্মদ আলমগীর বহাল তবিয়তে আছেন। কুয়েটে শিক্ষক-ছাত্ররা একবাক্যে বলেছেন যে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে আগে কখনও রাজনীতি না থাকলেও ড. আলমগীর সঙ্কীর্ণ দলীয় রাজনীতি আমদানি করে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতিকে কলুষিত করেছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বঙ্গবন্ধু পরিষদ সভাপতি প্রফেসর এম আবদুস সোবহান। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তিনি ভিসি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে বিগত প্রায় সাড়ে তিন বছরে স্বৈরতান্ত্রিক কায়দায় বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে। ছাত্রলীগের বেপরোয়া চাঁদাবাজি, ছাত্রহত্যা, গণগ্রেফতার, নিয়োগবাণিজ্য, ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষক লাঞ্ছনা, সাংবাদিক নির্যাতন, ভিন্নমত হয়রানিসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা এই সময়ের মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটেনি। বাংলাদেশের অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও একই প্রকার নোংরা রাজনীতিকরণের মাধ্যমে শিক্ষার পরিবেশকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। আদালতকে ব্যবহার করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮২১ জন শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করে ক্ষমতাসীনরা আক্রোশ মিটিয়েছে। একই রকম দলীয়করণের মহোৎসব চলছে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানেও যে কোনো মুহূর্তে শিক্ষক আন্দোলন বেগবান হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিন্নমত দমনে ফ্যাসিবাদী কায়দায় প্রশাসন চালানো হচ্ছে। শিক্ষক সঙ্কটে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের অভাবে ক্লাস পরিচালনা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশের প্রায় সকল সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সরকারের আর্থিক সঙ্কটের কারণে গত এক বছরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চাহিদার মাত্র এক-চতুর্থাংশ পদ নতুন করে অনুমোদন দিয়েছে। নতুন পদের অনুমোদন না হওয়ায় নতুন খোলা বিভাগগুলোতে শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারছে না সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ পরিস্থিতিতে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনেক বিভাগ চলছে কোনো পূর্ণ অধ্যাপক ছাড়াই। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সূত্র মতে, বর্তমানে দেশের ৩৪টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। সদ্য প্রতিষ্ঠিত ও নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ সঙ্কট আরো তীব্র। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে গত ১ বছরে বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সাড়ে ৩ শ’ শিক্ষক উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ গিয়ে আর ফেরত আসেননি। পরবর্তীতে ইস্তফা দিয়েছেন এদের অনেকেই। তাছাড়া অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ শিক্ষকদের অবসরের পর তাদের ‘সুপার নিউমারারি’ অথবা ‘প্রফেসর ইমেরিটাস’ হিসেবেও পুনর্নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। মূলত আর্থিক সঙ্কটের কারণেই ইউজিসি গত এক বছরে এ ধরনের কোনো নিয়োগ দিতে পারেনি। কারণ চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে যে টাকা চাওয়া হয়েছিল তা পাওয়া যায়নি। জানা যায়, বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে ৭০টি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৫টি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৫টি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০টি, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০টি, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬০টি, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬০টি, বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৫টি, মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০টি, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০টি, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৫টি, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬০টি, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০টি, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০টি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০টি, কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০টি, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬০টি, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০টি, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬০টি, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৫টি, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০টি, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০টি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬০টি, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০টি, বঙ্গবন্ধু শেষ মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬০টি এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২টি। এই হত্যা, সন্ত্রাস ও নির্যাতনের দায় কার? যে প্রশাসনের ছত্রছায়ায় টেন্ডারবাজি, হল দখল, ভর্তি ও সিট বাণিজ্য, ছাত্র হত্যা ও নির্যাতন; শিক্ষক নির্যাতন চলে, যেই প্রক্টর আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের নামে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের মোটর সাইকেলের পেছনে বসে ক্যাম্পাসে মহড়া দেয়, ছাত্রলীগের অন্তর্কোন্দল নিয়ন্ত্রণের ভার নিজ হাতে না নিয়ে পুলিশ লেলিয়ে ছাত্র হত্যা ও নির্যাতনের পথ করে দেয়, ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সন্ত্রাসী সংঘর্ষের পর মেরুদণ্ডহীন বক্তব্য দেয়- ‘আমি নির্দেশ দিয়েছিলাম কিন্তু পুলিশ গ্রেফতার করেনি’, সেই প্রশাসন স্পষ্টতই সন্ত্রাস ও ছাত্রহত্যার জন্য দায়ী। অন্যদিকে যে সরকার সাধারণ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা পূর্বের সরকারগুলোর মতো নিশ্চিত করতে ব্যর্থ, সেই সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পুলিশ কর্তৃক ছাত্র হত্যার ঘটনায় বলেন- ‘এরকম ঘটনা ঘটতেই পারে’, ‘এটা ব্যাপার না’ বা ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ তখন সরকারসহ শাসক শ্রেণীর অবস্থানও অস্পষ্ট থাকে না। আজগুবি ফলাফল! দেশের তাবৎ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অযোগ্যদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে আমাদের আগামী প্রজন্মকে শিক্ষায় দুর্বল করে সক্ষমতায় পিছিয়ে দেয়ার সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের দায়ভার বর্তমান সরকার বিশেষ করে শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদকেই বহন করতে হবে। শিক্ষামন্ত্রী কেবল উচ্চ শিক্ষাতেই নৈরাজ্য সৃষ্টি করছেন না, বিগত তিন বছরে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাতেও আজগুবি ফলাফল বানিয়ে দেশের সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থাকেই মহাবিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। এদিকে এসএসসি ও এইচএসসিতে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষার বাগাড়ম্বরে জিপিএ-৫ ও পাসের হারের উত্তরোত্তর যে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটানো হচ্ছে, তাতে মেধার প্রকৃত মূল্যায়ন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এই সরকারের আমলে এ পর্যন্ত এসএসসির চারটি এবং এইচএসসির তিনটি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। এই ফলাফলগুলো পর্যালোচনা করলেই যে কোনো সচেতন নাগরিক বুঝতে পারবেন আমাদের দেশপ্রেমবিবর্জিত বর্তমান সরকার জাতির জন্য কী ভয়ঙ্কর মরণ খেলায় অবতীর্ণ হয়েছে। এসএসসি পরীক্ষার সর্বশেষ ফলাফলে মন্ত্রীর নিজ বিভাগ সিলেটে ৯১ শতাংশ পাস করার যে রেকর্ড তৈরি করা হয়েছে, তার সত্যতা নিয়ে জনমনে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। পরীক্ষায় নম্বর দেয়ার ক্ষেত্রে যে ডিজিটাল কারচুপির গুজব চারদিকে উত্থাপিত হচ্ছে, তাতে জনগণ অবস্থাদৃষ্টে বিশ্বাস করতে আরম্ভ করেছেন। ১৯৬৯ সালের এসএসসিতে যারা ৭০ শতাংশ নম্বর পেয়েছিল, তারাই ঢাকা কলেজে ভর্তি হতে পেরেছিল। আজকে জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের বিপুল সংখ্যা বিচার করলে তাদের মধ্যে কতজন এখনকার ভালো কলেজগুলোতে ভর্তি হতে পারবেন সে প্রশ্ন এসেই যায়। জিপিএ-৫ প্রাপ্তরাও যদি তাদের পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে না পারেন, তাহলে আর এই বিপুল নম্বর প্রাপ্তির সফলতা কোথায় রইল? নূরুল ইসলাম নাহিদের আমলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাজকর্মে মনে হচ্ছে বর্তমান সরকারের মেয়াদের মধ্যেই তারা এসএসসিতে শতভাগ পাসের রেকর্ড গড়ে দেশবাসীকে তাক লাগিয়ে দিতে চান! এসএসসিতে পাসের হার এবং জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সংখ্যা প্রতি বছর অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে নূরুল ইসলাম নাহিদ এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির জন্ম দিচ্ছেন। এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা কার স্বার্থে, সেটা শিক্ষামন্ত্রীই ভালো জানেন। তথাকথিত সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতি যে প্রজন্মের জন্ম দিচ্ছে, তারা তীব্র প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে আন্তর্জাতিক সক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে কিনা, সেই আলোচনা আজ সর্বত্র। শিক্ষামন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ধ্বংসের পাশাপাশি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে যে ভারসাম্যহীন পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছেন, সেটাকে বিপর্যয়কর হিসেবেই বিবেচনা করা চলে। আমাদের সঙ্কট কি জনগণের সঙ্কট থেকে বিচ্ছিন্ন? আমরা দেখেছি শাসক শ্রেণীর দলগুলো জনগণের স্বার্থকে তোয়াক্কা না করে সাম্রাজ্যবাদ, ভারতসহ বৈদেশিক শক্তির স্বার্থে দেশের জাতীয় সম্পদ-বন্দর-সাগর বিক্রি করে, সাম্রাজ্যবাদী মুনাফার স্বার্থে শ্রমিক হত্যা করে, গোপনে গণবিরোধী চুক্তি সম্পাদন করে, জনগণের উচ্চশিক্ষার অধিকার হরণ করতে বিদেশীদের পরামর্শে কৌশলপত্র বাস্তবায়ন করে। আর এসবের বিরুদ্ধে যে কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দমন করার জন্য কাজ করছে শাসক শ্রেণীর এজেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সন্ত্রাসী ছাত্রসংগঠনগুলো। তাই, শ্রমিক কৃষকসহ ব্যাপক নিপীড়িত বঞ্চিত জনগণের সংকট থেকে আমাদের সংকট বিচ্ছিন্ন নয়। শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের কতিপয় কারণ ১.    শিক্ষাব্যবস্থায় আদর্শিক মূল্যবোধের অভাব। বর্তমান প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় একজন শিক্ষার্থীর মনে আল্লাহর ভয় ও আখিরাতের জবাবদিহিতা এবং ভ্রাতৃত্ব-ভালোবাসার অনুভূতি সৃষ্টি হচ্ছে না। তাই একজন ছাত্র আরেকজন ছাত্রকে খুন করতে দ্বিধা করছে না। প্রতিটি কৃতকর্মের জন্য আখিরাতে জবাবদিহি করতে হবে এবং এর ভিত্তিতে জান্নাত বা জাহান্নাম হবে শেষ ঠিকানা এই ধরনের অনুভূতি কারো মনে সদা জাগ্রত থাকলে তারা কখনও একে অপরকে খুনতো দূরের কথা মুখে কটু কথাও বলতে পারে না। ২.    রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতা দখলের সিঁড়ি হিসেবে ছাত্রদেরকে ব্যবহার করছে। ক্ষমতারোহণ বা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য প্রতিপক্ষের ওপর সশস্ত্র হামলার জন্য অনেক সময় রাজনৈতিক নেতারাই ইন্ধন জোগান। ৩.    আদর্শ প্রচারের তুলনায় পেশিশক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে দলীয় প্রভাব সৃষ্টি করার মানসিকতা কখনও কখনও দেখা যায়। ৪.    হলে অবৈধ সিট দখলের প্রবণতা। হরহামেশাই এখন এটা হতে দেখা যায়। ৫.    ছাত্রদের পারস্পরিক তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে সংঘাতের সৃষ্টি হয়। আঞ্চলিকতা ও মেয়েদের সাথে প্রেমজনিত কারণেও কখনও সংঘাত হয়। ৬.    দেয়াল লিখন, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, উত্তেজেনাকর শ্লোগান, সমাবেশে হামলা ইত্যাদি সংঘাতের কারণ। ৭.    প্রশাসন কর্তৃক সন্ত্রাসীদের বিচার না হবার কারণে রাজনৈতিক আশ্রয়ে কিছু সন্ত্রাসী সন্ত্রাস করছে। ৮.    বিদেশী শক্তির ইন্ধন। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ইন্ডিয়াসহ বিদেশী শক্তি চায় না বাংলাদেশে পড়াশোন

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির