post

ইসলামী আন্দোলনে হীনম্মন্যতাবোধের সুযোগ নেই

০৩ অক্টোবর ২০১৩

আবু নকীব

ইসলামী আন্দোলন নিছক রাজনৈতিক আন্দোলন নয়। নয় নিছক ক্ষমতার রাজনীতি। কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে ক্ষমতায় পাঠানোর আন্দোলনও নয় এটি বরং আল্লাহর দ্বীন বা ইসলামী আদর্শকে পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান হিসেবে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সকল দিক ও বিভাগে বিজয়ী আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠাই ইসলামী আন্দোলনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। ক্ষমতা লাভের পথ দীর্ঘ মনে হওয়ার কারণে অথবা বিপদসঙ্কুল ও বাধা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হওয়ার কারণে ইসলামী আদর্শ তথা সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার কাজ আপাতত বাদ দিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্ষমতার রাজনীতির নিয়ামক শক্তি সমূহের কাছে গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের কৌশল অবলম্বনের পথ বেছে নেয়ার যুক্তি বাস্তবে কতটা টেকসই হতে পারে গভীরভাবে তা তলিয়ে দেখার প্রয়োজন আছে। অবশ্য ইসলামী আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্টদের একটা পথ বন্ধ হলে দশটা পথ খোলার মত যোগ্যতা দক্ষতা অবশ্যই থাকতে হবে। তবে বস্তবে পথ বন্ধ হওয়ার আগে কৃত্রিমভাবে নিজের পক্ষ থেকে পথ বন্ধ করে কোনো কৌশল অবলম্বনের চিন্তা ভাবনা হীনম্মন্যতারই পরিচয় বহন করে এতে কোনো সন্দেহ সংশয়ের অবকাশ নেই। সম্প্রতি বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে চতুর্মুখী চক্রান্ত যড়যন্ত্র চলছে। তথ্য সন্ত্রাস, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস থেকে বিচারিক সন্ত্রাসের আয়োজন চলছে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চিন্তার ঐক্য, পারস্পরিক আস্থা সুদৃঢ় থাকা অপরিহার্য। তার চেয়েও বেশি অপরিহার্য হলো আল্লাহ ওপর পূর্ণ তাওয়াক্কুলের ভিত্তিতে প্রতিকূলতার মোকাবেলায় অসীম ধৈর্য ও ছবিতে কদমীর সাথে ময়দানে সুদৃঢ় অবস্থান নিয়ে অকুতোভয়ে টিকে থাকার, বরং সামনে অগ্রসর হওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা। পক্ষান্তরে ইসলামী আন্দোলনের প্রতিপক্ষের এ সময়ের কৌশল হয়ে থাকে নানা কাল্পনিক, তাত্ত্বিক বিভ্রান্তির গুজব ছড়িয়ে চিন্তার ঐক্যে ফাটল ধরানোর জন্য তথ্য সন্ত্রাস জোরদার করা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে কখনও কোন ব্যক্তি বিশেষের অপরিণামদর্শী কথা বা কার্যক্রমকে এরা সূত্র বা তথ্য উপাত্ত হিসেবে ব্যবহার করে এ ধরনের সুযোগ নিয়ে থাকে। সম্প্রতি বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে মহলবিশেষের পক্ষ থেকে এ ধরনের প্রচারণা বেশ সুকৌশলে চালানো হ"েছ। এ ব্যাপারে তারা কতিপয় ব্যক্তির একটি অপরিণামদর্শী ও অপরিপক্ব পদক্ষেপজনিত একটি বৈঠকে এবং পত্রিকায় প্রকাশিত একটি নিবন্ধকে তথ্য উপাত্ত হিসেবে ব্যবহার করছে। যদিও তাদের সকল জল্পনাকল্পনাকে ভুল প্রমাণ করে তাদের পরিকল্পিত প্রচারণার মুখে ছাই দিয়ে ইসলামী আন্দোলনের যুবক ও ছাত্রকর্মী তথা নতুন প্রজন্মই রাজপথে শক্ত অবস্থান নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের ওপর সরকার পরিচালিত রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের প্রতিবাদ করে যাচ্ছে। অকুতোভয়ে জীবন দিতে কুণ্ঠা বোধ করছে না। এরপরও মহলবিশেষের পক্ষ থেকে ইসলামী আন্দোলনের মধ্যে চিন্তার বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপপ্রয়াস চালানা হচ্ছে অব্যাহতভাবে। ইসলামী আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্ট নবীন ও প্রবীণ সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীর সামনে বর্তমানে মিসরের ইসলামী সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের ওপর যে গণহত্যা চালানো হচ্ছে তা থেকে দুটো বিষয় পরিষ্কার হয়ে যায়। এক, তথাকথিত দেশী-বিদেশী সোস্যাল এলিটদের সমর্থন পাওয়ার জন্য বা তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবার জন্য দলের ইসলামী পরিচিতি বর্জন করেও কোন লাভ হয় না, দুই, ইসলামের সংগঠিত শক্তি হওয়াটইি মূল অপরাধ। মিসরের ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে তো স্বাধীনতা বিরোধিতার কোনো অভিযোগ আনার সুযোগ নেই। ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে বরং তাদেরই ছিল সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা। তারপরও তাদের দেশের প্রথমবারের মতো গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে কেন ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। ইতঃপূর্বে ১৯৯১ সালে আলজেরিয়ায় ইসলামী সালভেশন ফ্রন্ট প্রথমবারের মতো নির্বাচনে ক্ষমতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছতেই সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলকে গণতন্ত্রের প্রবক্তা বিশ্ব মোড়লেরা অকুণ্ঠ সমর্থন দেয় নিছক ইসলাম ঠেকানোর জন্য। তাদের বিরুদ্ধেও আলজেরিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামে বিরোধিতার কোনো অভিযোগের সুযোগ ছিল না। ইসলামের পক্ষের সংগঠিত শক্তি হওয়াই তাদের অপরাধ। অতএব বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের অবস্থান যে নিছক ইসলামী আদর্শের পক্ষের শক্তির ক্রমবর্ধমান অগ্রগতি রোধ করার জন্যই এতে কোনো বিবেকবান ব্যক্তির মনেই সন্দেহ সংশয়ের অবকাশ থাকতে পারে না। কেউ কেউ বলার চেষ্টা করে মুসলিম ব্রাদারহুড তার নাম পরিচয় পালটিয়ে অন্য নামে ইসলামী পরিচিতি বাদ দিয়ে সংসদ ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সাফল্য অর্জন করেছে, এতে বাংলাদেশের ইসলামী কোনো বিবেকবান ব্যক্তির মনেই সন্দেহ সংশয়ের অবকাশ থাকতে পারে না। কেউ কেউ বলার চেষ্টা করে মুসলিম ব্রাদারহুড তার নাম পরিচয় পালটিয়ে অন্য নামে ইসলামী পরিচিতি বাদ দিয়ে সংসদ ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সাফল্য অর্জন করেছে, বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের কবে শুভ মুক্তির উদয় হবে। আসলে কি মুসলিম ব্রাদারহুড তাদের নাম পরিবর্তন করেছে নাকি নির্বাচনী কৌশল হিসেবে একটা ফ্রন্ট করেছে। ব্রাদারহুড নিষিদ্ধ থাকা অবস্থায় এর আগেও তারা ওয়াদ পার্টির হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। এবারেও তাদের একই কৌশল আমরা দেখতে পাই একটু ভিন্ন আঙ্গিকে। কিš' আজকের পরিস্থিতির মোকাবেলা তাদের করতে হচ্ছে মুসলিম ব্রাদারহুডের পক্ষ থেকেই। ভিন্ন নামে নির্বাচনের পরও তাদের ক্ষমতায় টিকতে দেয়া হয়নি। এর প্রতিবাদে মুসলিম ব্রাদাহুডের নেতৃত্বে তাদের সংগঠনের সুনামেই ইনশাআল্লাহ আগামীতে মিসরে একই সাথে ইসলাম ও গণতন্ত্রের বিজয় হবে একটি সফল ও ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের মধ্যমে। সম্প্রতি একটি পত্রিকায় জামায়াতে ইসলামীর মধ্য চিন্তার বিভ্রান্তি ছড়ানোর কৌশল হিসেবে একটা গোপন বৈঠক ও একই প্রবন্ধকে ব্যবহার করা হয়েছে। উক্ত প্রবন্ধে নাকি এ-ও বলা হয়েছে যে, ভারতের জামায়াতে ইসলামী তাদের অতীতের ভুল শুধরিয়ে দলের নাম পরিবর্তন করে একটা প্লাটফরম করেছে যাতে নেতৃত্বের পর্যায়ে একজন হিন্দু, একজন খ্রিষ্টানও আছে। আসলে জামায়াতে ইসলামী হিন্দু তার নাম পরিবর্তন করেনি। তারা অতীতে নির্বাচনে কোন ভূমিকাই রাখতো না। ভোটও দিত না। তারা মূলত একটা সামাজিক সাংস্কৃতিক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবেই কাজ করে আসছিল। মুসলিম পার্সনাল ল এর সংরক্ষণের ব্যাপারে তারা সকল ইসলামী সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের সাথে মিলে কাজ করেছে। এর পর নির্বাচনী রাজনীতিতে ভূমিকা রাখার জন্য একটা প্লাটফরম দাঁড় করিয়েছে। এটা তাদের কার্যক্রমের একটা নতুন অগ্রগতি বলতে পারি। কিš' অতীতের ভুল ধরে তারা নাম পরিবর্তন করেছে, এমন কথা যদি কেউ বলে থাকেন বা লিখে থাকেন তা হলে তিনি তথ্য বিচ্যুতির আশ্রয় নিয়েছেন। এই তো সেদিনও জামায়াতে ইসলামী হিন্দের আমির বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিলের ব্যাপারে সরকারের উদ্দেশ্যে উচ্চ আদালতের রায়ের প্রতিবাদ করে বিবৃতি দিয়েছেন। তার বিবৃতি বিবিসিতেও প্রচারিত হয়েছে। এটা ঐতিহাসিক বাস্তব ঘটনা যে ’৭১ সালে পাকিস্তানের অখণ্ডের পক্ষে শুধু জামায়াতে ইসলামই অবস্থান নেয়নি। বরং সকল ইসলামী ও মুসলিম সংগঠন, প্রতিষ্ঠান এবং সুপরিচিত সব ইসলামী ব্যক্তিত্ব পাকিস্তানের অখণ্ডের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল, সেই কারণেই মুসলিম লীগের সকল গ্রুপসহ পিডিপি, কৃষক শ্রমিক প্রজাপার্টি, নেমাজে ইসলাম পার্টি জামায়াতে ইসলমীকে একযোগেই নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। বর্তমানে জামায়াতে ইসলামী ছাড়া ঐসব দলের আর কোনোটাই সংগঠিত শক্তি হিসেবে রাজনীতিতে সক্রিয় নেই বলেই তাদের নিয়ে বর্তমান সরকারের কোনো মাথা ব্যথা নেই। তা ছাড়া জামায়াতে ইসলামী বর্তমান প্রেক্ষাপটে ক্ষমতার রাজনীতিতে ফ্যাক্টর হওয়াও একটা বড় কারণ। সেই সাথে প্রতিবেশী দেশের আগ্রাসী, আদিপত্যবাদী ও সম্প্রসারণবাদী ভূমিকার ক্ষেত্রে জামায়াতই প্রধান প্রতিবাদী শক্তি হওয়ার ফলেই আজ সরকারের কোপানলের শিকার হতে হ"েছ। ১৯৯১ সালে এবং ২০০১ সালে জামায়াতের কারণে বিএনপি ক্ষমতায় আসা এবং আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসতে না পারাটাই জামায়াতের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের ক্ষোভের প্রথম ও প্রধান কারণ। না হলে ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পুনর্গঠিত হওয়ার পর থেকে ’৯১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে বর্তমানে যে অভিযোগ এনেছে, সে অভিযোগ কোন দিনই আনেনি। ’৯২ সালে ঘাদানিকের মাধ্যমে জামায়াতের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক অভিযান পরিচালনার মূল কারণ ছিল, জামায়াত কেন সরকার গঠনে বিএনপিকে সমর্থন দিলো? কিন্তু পরবর্তীতে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে জামায়তকে সাথে পেয়ে বা সাথে নিয়ে তাদের কোনো আপত্তি তো ছিলই না, বরং অনেক তোয়াজ করে জামায়তকে সাথে রাখার চেষ্টা করতে তাদের কোনো কুণ্ঠা ছিল না। জামায়াতকে সাথে নিয়ে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী প্রেস ব্রিফিং দিতে তখন কোনো সংকোচ বোধ করেননি। তাই আজ এ কথা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলা যায়, দেশের রাজনীতিতে জামায়াতের ফ্যাক্টর হওয়া এবং ভারতীয় এজেন্ডা ও ডিজাইন বাস্তবায়নের পথে প্রধান অন্তরায় হওয়াই জামায়াতের একমাত্র অপরাধ। জামায়াতের এই ভূমিকা আওয়ামী ঘরানা ও বাম ঘরানার কাছে যতই অগ্রহণযোগ্য হোক কেন দেশবাসী এটাকে ইতিবাচকভাবেই মূল্যায়ন করবে সেদিন বেশি দূরে নয়। অতএব কোন মহলের প্রচারণায় বা বিভ্রান্তি ছড়ানোর কারণে ইসলামী আন্দোলনের নেতা ও কর্মীদের মনে হীনম্মন্যতাবোধের বা চিন্তার বিভ্রান্তির শিকার হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ইসলামী আন্দোলনের মূল পথিকৃৎ শেষ নবী মুহাম্মদ (সা) তাঁকেও আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং বিভিন্ন সময় তাঁর পূর্বের নবী রাসূলের ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিয়ে তার সাথী সঙ্গীদের সবর ও ইন্তেকামাতের সাথে ময়দানে সুদৃঢ় অবস্থান নিয়ে সামনে অগ্রসর হবার তাকিদ দিয়েছেন। বর্তমান আল্লাহর পক্ষ থেকে নতুন করে ওহির মাধ্যমে কোনো পথনির্দেশ আসার সুযোগ নেই। তবে মযদানের বাস্তবতাকে সামনে রেখে কুরআন ও সিরাতে রাসূল অধ্যয়ন করলে মনের সকল দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও হতাশা কাটিয়ে ওঠে পূর্ণ আস্থা নিয়ে ময়দানে ঠিকে থাকার এবং সামনে এগোবার প্রেরণা পাওয়া অবশ্যই সম্ভব। অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের ইসলামবিরোধী শক্তির নাস্তিক্যবাদী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমে দ্বীন হাজার হাজার আলেমে দ্বীনের ওস্তাদ হযরত আল্লামা আহমদ শফীর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা হেফাজতে ইসলামের রাজপথ কাঁপানো প্রতিবাদী ভূমিকা গ্রহণের পর থেকে সরকার এবং সরকারের দোসর ধর্মহীন রাজনীতির প্রবক্তা ও বাম ঘরানার রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের নানামুখী প্রচারণা ও জুলুম নির্যাতন আমাদের সকলের জন্য একটি জীবন্ত নজির। হযরত আল্লামা আহমদ শফী এবং তার সহকর্মীদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা-উত্তর ৪২ বছরে আওয়ামী ঘরানার বাম ঘরানা বা পক্ষ থেকে এমন কোন অভিযোগ বা অপবাদ শোনা যায়নি যা বর্তমানে শোনা যা"েছ। কারণ একটাই এখন তারা সরকারের এবং সরকারের দোসরদের ন্যক্কারজনক ইসলামবিরোধী ভূমিকায় মাঠে ময়দানে সবর এবং সক্রিয় আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। ইসলামের বিরুদ্ধে ইসলামী আন্দোলন সংগ্রামের বিরুদ্ধে ঐ মহল বিশেষের আক্রোশ ও বিদ্বেষ মজ্জাগত। ইসলামের পক্ষে যারাই ইতিবাচক, সক্রিয় এবং শক্ত ভূমিকা রাখবে তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের তুফান স্থায়ী করা অত্যাচার, জুলুম, নিপীড়ন, নির্যাতনের স্টিমরোলার চালানোই তাদের ইতিহাস। কাজেই এসব দেখে ইসলামের পক্ষের লোকদের আত্মবিশ্বাস এবং আস্থা আরো বৃদ্ধি পাওয়াটাই স্বাভাবিক। এটা ইসলামী আন্দোলনের মূল ধারার যথার্থতার ও সঠিক পথে থাকার মহাসনদ বা স্বয়ং আল্লাহ সুবহান আহু তায়ালা কর্তৃক সত্যায়িত বা অনুমোদিত। সম্প্রতি মিসরের ঘটনার প্রতি গোটা বিশ্বের দৃষ্টি নিবন্ধ হয়ে আছে। মুসলিম ব্রাদারহুডকে নিষিদ্ধ করার পাঁয়তারা চলছে। এটা হবে নাকি সেখানে ব্লামি রাজনীতি বা তাদের ভাষায়, রাজনৈতিক ইসলাম শেষ হয়ে যাবে, এই মর্মে বাংলাদেশের একটি জাতীয় দৈনিকের উপসম্পাদকীয় নিবন্ধে মন্তব্য করা হয়েছে। মন্তব্যকালীন এই নিবন্ধ লেখার সময় মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুডকে বিগত প্রায় ৬০ বছর নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও ইসলামী আন্দোলন যা তাদের ভাষায় রাজনৈতিক ইসলাম শেষ হয়ে যায়নি। মিসরের জনগণও ভোটাধিকার প্রয়োগের প্রথম সুযোগেই মুসলিম ব্রাদারহুড মনোনীত প্রার্থীদের সংসদে বিজয়ী করেছে, প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকেও বিজয়ী করেছে, একই সাথে গণতন্ত্র ও ইসলামী আদর্শের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছে। এরপর যারা মনে করে গণতন্ত্র থাকলে ইসলামের জয় সুনিশ্চিত, তারাই চক্রান্ত যড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে কুদাতার মাধ্যমে প্রথম বারের মতো জনগণের ভোটে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে, গ্রেফতারও করেছে। এ প্রসঙ্গে তুরস্কের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রজব তায়েব এরদোগান স্পষ্টই উল্লেখ করেছেন। মিসরের সামরিক হুকুমদাতার পেছনে ইসরাইলদের হাত থাকার ব্যাপারে তাদের কাছে প্রমাণ আছে। এতে প্রমাণিত হয়ে কুরআনে ঘোষিত ইসলাম ও মুসমানদের কট্টরতম দুশমন জায়নবাদী গোষ্ঠীই তাদের পৃষ্ঠপোষকদের মাধ্যমে দেশে দেশে ইসলামের অগ্রযাত্রা রুখে দেয়ার অপচেষ্টা করে যাচ্ছে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির