post

‘ক্রসফায়ার’ থেকে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ পাল্টেছে নাম পাল্টে গেছে টার্গেট

০৫ মার্চ ২০১৫

সাদমান সাদী#

[দ্বিতীয় পর্ব] CrosFireগত মার্চ ২০১৫ সংখ্যায় ৫ জানুয়ারি ২০১৫ হতে  ফেব্রুয়ারির ২০ তারিখ পর্যন্ত বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ৫৪ জনের একটি তালিকা দিয়েছিলাম। যদিও এর বাইরে আরো হত্যা সংঘটিত হয়েছে। একজন সমাজকর্মী হিশেবে ভোক্তভোগী অনেকের সাথে কথা বলার সুযোগ হয়েছে। দেখেছি এদের দু:খ দুর্দশা এবং দেশের আইনশৃংখলাবাহিনীর প্রতি প্রচণ্ড ঘৃণা। আমার জানা ছিলো না এই এভাবে আরো বাড়তে থাকবে। এখন নতুন করে বাড়ছে নিখোজের সংখ্যা। যারা নিহত হলেন, যেভাবেই হোক তাদের লাশটাতো অন্তত পাওয়া যাচ্ছে কিšুÍ দিনের পর দিন, মাসের পর মাস খোজ নেই, খবর নেই। একটি জ্বলজ্যান্ত মানুষ একবারে হাওয়া। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অভিযোগের তীরটা আইনশৃংখলা বাহিনীর দিকেই। স্বাভাবিক মৃত্যূর গ্যারান্টিও যেন নেই। গত ৫ মার্চ পল্লবী থেকে নিখোঁজ হন মিরপুরের পোশাক শ্রমিক ও জাতীয় গার্মেন্টস কল্যাণ ফেডারেশনের নেতা আমিনুল ইসলাম। তার স্ত্রী মিনা আমিন অভিযোগ করে বলেন, ৫মার্চ সকালে বাসা থেকে বের হন তার স্বামী। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ। এভাবে নিখোজের তালিকায় রয়েছেন- ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান খোকন, আইনজীবী সোহেল রানা, যুবদলের নূর আলম, ফকিরাপুলের ব্যবসায়ী মাজেদুর রশীদ ও তিতুমীর কলেজের মেহেদী হাসান রুয়েল, কাফরুল থানা জামায়াতের নেতা একে এম তৌফিকুল হক, কুষ্টিয়ার বিএনপি কর্মী হাফিজুর রহমান ও সাগর আলী, ঢাকা কলেজের ছাত্র আতাউর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র যুবায়ের আনসারী, মুজাহিদ হোসেন অপু ও মাইনুল ইসলাম। বিরোধী রাজনৈতিক জোটের শীর্ষ নেতাদের গুম করা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে। ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ওয়ালি উল্লাহ, মুকাদ্দাস, রাজনৈতিক নেতা চৌধুরী আলম, ইলিয়াস আলীর গুমের রহস্য উদঘাটন হয় নি আজও। গত ১০ র্মাচ রাতে নিখোজ হন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ। এখানে ফেব্রুয়ারি শেষ থেকে মার্চ ২০১৫ পর্যন্ত পুলিশ, র?্যাব, যৌথ বাহিনী এবং আওয়ামী লীগের অস্ত্রের আঘাতে নিহত ৭৬ জনের তালিকা প্রদত্ত হলো। ১-৫৪ পর্যন্ত মার্চ সংখ্যায় প্রকাশিত হওয়ায় এখানে ৫৫ থেকে শুরু হলো- ৫৫. দেলোয়ার হোসেন দুলাল ৫৬. গোলাম আজম পলাশ গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ঝিনাইদহে গুলি করে হত্যা করা হয় ঝিনাইদহ পৌরসভার কমিশনার ও চরখাজুরা গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে গোলাম আজম পলাশ (৩০) ও একই গ্রামের নিছম বিশ্বাসের ছেলে দেলোয়ার হোসেন ওরফে দুলাল (২৮)। নিহত পলাশের বাবা গোলাম মোস্তফা জানান, ‘তার ছেলের বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল না। ডিবি পুলিশ তাকে আটকের পাঁচদিন পর গত ২৩ ফেব্রুয়ারি সকালে ডেফলবাড়ি গ্রামের মাঠে তাদের গুলীবিদ্ধ লাশ পাওয়া গেল। ডিবি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা বলে যে তাকে তারা গ্রেফতার করেনি।’ নিহত দেলোয়ার হোসেন ওরফে দুলালের জমজ ভাই আলম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ‘১৯ ফেব্রুয়ারি সাদা পোষাকে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা বাড়ি থেকে নিহতদের ধরে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে তারা সদর থানায় একটি সাধারন ডায়রি করেন এবং জীবিত ফেরত পাওয়ার জন্য আইন শৃংখলাবাহিনীর সদস্যদের কাছে অনুরোধ জানান। ৫৭. আবদুল ওদুদ ব্যাপারী গত ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাতে মিরপুরের টেকনিক্যাল ব্রিজের নিচে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন আব্দুল ওয়াদুদ বেপারী (৩০)। ওয়াদুদ মিরপুর ১০ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক দলের সভাপতি। তিনি চাঁদপুরের মতলব উপজেলার সরদারকান্দি গ্রামের মোহাম্মদ আলী বেপারির ছেলে। ঢামেক হাসপাতালে আসা চাচা চাঁন মিয়া বেপারি তার (ওয়াদুদ) লাশ শনাক্ত করে জানান, ওয়াদুদ তার বাবা-মায়ের সঙ্গে মিরপুর-১ এর টোলারবাগের ৯/৪ নম্বর বাসায় থাকতো। ওয়াদুদ ঝুটের ব্যবসা করতো। সে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না। তিনি বলেন, ‘গত রোববার রাত ৯টার দিকে মোটরসাইকেল নিয়ে বাসা থেকে বের হয় ওয়াদুদ। এর পর আর সে বাসায় ফিরে আসে নি। রাতে পরিচিত কয়েকজন এসে জানায়, তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। গতকাল সোমবার সকালে তার লাশ পেলাম।’ ৫৮. রবিন ৫৯. সুমন ৬০. জুয়েল ২২ ফেব্রুয়ারি রাত দেড়টার দিকে তিন তরুণের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় মিরপুর থানার পুলিশ। বাইশবাড়ী এলাকায় রোববার রাত পৌনে ১০টা থেকে ১০টার মধ্যে তাঁদের গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনজনের বয়স ২০ থেকে ২২ বছর। কাজীপাড়ার সুরতহাল প্রতিবেদনে এসআই মাসুদ পারভেজ উল্লেখ করেন, তিনজনের দেহে ২২, ১৭ এবং ১৫টি  করে গুলির ক্ষত (মোট ৫৪টি) রয়েছে। তাঁদের মধ্যে একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী বলেও সুরতহালে উল্লেখ করা হয়। মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দীন খান বলেন, শেওড়াপাড়া এলাকা থেকে ওই তিনজনকে তিনটি ককটেল, চার লিটার পেট্রলসহ ধরে জনতা। এরপর তাঁদের মিরপুর থানাধীন বাইশবাড়ী এলাকায় নেওয়া হয়। সেখানে বিক্ষুব্ধ জনতা তাঁদের পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। তবে ময়না তদন্তে তাঁদের শরীরে মারধরের চিহ্ন পাওয়া যায় নি। ঘটনাস্থলের আশপাশের লোকজন জানিয়েছেন, রোববার রাতে এখানে কোনো গণপিটুনির ঘটনা ঘটে নি। রাত পৌনে ১০টার দিকে অপরিচিত ১০-১২ জন লোক ওই তিন তরুণকে বেঁধে অন্ধকার গলিতে ঢোকে। কিছুক্ষণ পর গলি থেকে একসঙ্গে প্রচুর গুলির শব্দ আসে। প্রায় এক ঘণ্টা পর লোকগুলো তিন তরুণের লাশ ফেলে চলে যায়। পরে গভীর রাতে  পোশাকধারী পুলিশ এসে গাড়ী করে লাশগুলো নিয়ে যায়। ৬১. শাহীন ২৪ ফেব্রুয়ারি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে পুলিশের গুলিতে শাহীন (২৮)  নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। পুলিশ জানায়, শাহীন রৌদ্রপাড়া গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে। শ্রীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশ রৌদ্রপাড়ার সরলখানের বাড়ি এলাকায় অভিযানে চালালে পুলিশের গুলিতে শাহীন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। শাহীনের বিরুদ্ধে শ্রীনগর থানায় ২টি মামলা রয়েছে বলে তিনি জানান। ৬২.  ডলার ২৫ ফেব্রুয়ারিযশোর শহরের আশ্রম রোডের একটি বাড়ি থেকে ডলার (২৭) নামে এক  যুবককে ধরে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। ডলার মৃত মোসলেমউদ্দিন (ওরফে মাথামোটা মোসলেম) এর ছেলে। পুলিশের দাবি, ডাকাতির প্রাক্কালে গণপিটুনিতে ওই যুবক মারা যান। ডলারের মা সখিনা বেগম সাংবাদিকদের জানান, রাত দেড়টার দিকে শংকরপুরের বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা, জাকির, ফারুকসহ কয়েকজন তাদের বাড়িতে এসে ডলারকে ধরে নিয়ে যায়। এর ঘণ্টাখানেক পর তিনি জানতে পারেন তার ছেলে হাসপাতালে মারা গেছে। ৬৩. রেজওয়ানুল ইসলাম ২৭ ফেব্রুয়ারিদিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার পুনট্রি ইউপির তুলশীপুর গ্রামে ২৬ ফেব্রুয়ারি দুপুরে পুলিশের গুলিতে স্থানীয় বিএনপি নেতার ছেলে ও যুবদল নেতা রেজওয়ানুল নিহত হয়। জানা যায়, পুলিশ স্থানীয় বিএনপির সভাপতি হবিবর রহমানকে আটক করে। এ সময় হবিবরের স্ত্রী আম্বিয়া বেগম তার স্বামীকে ছাড়িয়ে নিতে পুলিশকে অনুরোধ করে কান্নাকাটি করলে পুলিশ  হাবিবরের স্ত্রীকে লাঞ্ছিত করে। হাবিবরের ছেলে রেজওয়ানুল ইসলাম (২৩) পুলিশ কর্তৃক মাকে লাঞ্ছিতের ঘটনা দেখে পুলিশের ওপর ক্ষুব্ধ হলে লাঠিসোঁটা নিয়ে গ্রামবাসী রেজওয়ানুলের সাথে একাত্ম হয়ে পুলিশকে ঘিরে ধরে। এ সময় পুলিশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই রেজওয়ানুল ইসলাম নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হন রেজওয়ানুলের মা আম্বিয়া বেগম ও ছোট ভাই হায়দার আলী। এ সময় পুলিশ স্থানীয় নারীদের লাঞ্ছিত করেছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। ৬৪. সোহেল রানা ৭ মার্চ ২০১৫ লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের বালাইশপুর এলাকায় সন্ত্রাসীরা বিএনপির এক কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। ৭মার্চ ভোররাতে এ ঘটনা ঘটে। নিহতের নাম সোহেল রানা (৩০) নিহত সোহেল রানা একই উপজেলার পার্বতীনগর ইউনিয়নের মধ্য মকরধছ গ্রামের মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে।  নিহতের স্বজনরা জানান, ৬মার্চ রাতে সোহেল রানা বাড়ির থেকে রাতের খাবার খেয়ে বের হয়ে যায়। এরপর সে বাড়ি ফেরে নি। শনিবার ভোরে বশিকপুর ইউনিয়নের বালাইশপুর এলাকায় রাস্তার ওপরে তার লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয়রা। ৬৫.নাজমুল হুদা লাভলু ৯ মার্চরংপুর মিঠাপুকুরের বলদিপুকুরে রাত সাড়ে ৩ টায় পুলিশের সাথে কথিত ‘সংঘর্ষে’ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী সংগঠন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের নেতা নাজমুল হুদা লাভলু (৩০) নিহত হয়েছেন। তবে নিহতের পরিবার অভিযোগ করে বলেছে, পুলিশ লাভলুকে ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যার পর সংঘর্ষের নাটক সাজিয়েছে। অন্য দিকে জামায়াত ও শিবির নেতৃবৃন্দ এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও দোষীদের বিচার ও জাতিসঙ্ঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপ দাবি করে বিবৃতি দিয়েছে। নিহতের বড় দুলাভাই মাসুদ নয়া দিগন্তকে জানান, গত রোববার (৮মার্চ) সন্ধ্যা ৭টায় পীরগঞ্জ উপজেলার শানেরহাটের কালানুর শাহপুর গ্রামে আমার বাড়ি থেকে সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নাজমুল হুদা লাভলুকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যায়। আমরা তাদের পরিচয় চাইলে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোক বলে জানান। পরের দিন দুপুরে পুলিশ আমাদের খবর দেয় লাভলুর লাশ নিয়ে যাওয়ার জন্য। ৬৬.রিফাত ৯ মার্চ কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার চৌয়ারা ইউনিয়নের ধনপুর গ্রামের রাস্তার পাশের একটি খাল থেকে রিফাত (২৫) নামের এক যুবকের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত রিফাত উপজেলার জোড়কানুন পশ্চিম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মৃত মিজানুর রহমানের ছেলে। ৯ মার্চ সকাল সাড়ে ১০ টায় লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। স্থানীয় সূত্র থেকে জানা যায়, শুক্রবার জুম্মার নামাযের পর একটি নতুন মোটর সাইকেল নিয়ে রিফাত বাড়ি থেকে বের হয়ে সে আর বাড়ি ফিরে আসে নি। ৯মার্চ সকালে ধনপুর গ্রামের রাস্তার পাশের একটি খালে মস্তকবিহীন লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে পুলিশ এসে ৪০ গজ দূর থেকে মাথাটি উদ্ধার করে। ৬৭. আরিফ হোসেন ১১মার্চ লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে পুলিশের গুলিতে আহত যুবদল কর্মী আরিফ হোসেন (৩০) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১১মার্চ ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে মারা গেছেন। উপজেলার চরজাঙ্গালিয়া এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে। আরিফের মামা মো: সেরাজুল হক জানান, পুলিশ হেফাজতে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরিফের অবস্থার অবনতি ঘটলে ৮মার্চ তাকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১১মার্চ সকালে তিনি মারা যান। পারিবারিক সূত্র জানায়, নিহত আরিফ হোসেন চরজাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের কর্মী ছিলেন। গত ২ মার্চ দুপুরে পুলিশ উপজেলার সামনে থেকে আরিফ হোসেনসহ দুইজনকে আটক করে। ৬৮. ফরিদ আহামেদ গাজীপুরে পুলিশের গুলিতে আহত ছাত্রশিবির নেতা ফরিদ আহামেদ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। ১১মার্চ বিকেলে রাজধানীর একটি হাসপাতালে তিনি মারা যান। নিহত ছাত্রশিবির নেতা ফরিদ আহমেদ আজিমউদ্দিন কলেজের এইচএসসি ১ম বর্ষের ছাত্র। ছাত্রশিবির জানায়, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখ সন্ধ্যায় ফরিদ আহমেদের বাড়িতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সহযোগিতায় জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) নেতৃত্বে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখানে মা-বাবার সামনেই কাছে থেকে তার ওপর গুলিবর্ষণ করে পুলিশ। এতে ফরিদ আহমেদ আহত হন। সেখানে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যায় পুলিশ। দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ১১মার্চ বিকেলে রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা যান তিনি । ৬৯.মো. ইসরাফিলকে ১২ মার্চ লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয?ন যুবদলের নেতা মো. ইসরাফিলকে (৩২) কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পরে নোয়াখালীর চাটখিল থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ১২ মার্চ রাতে ইসরাফিলকে অপহরণ করা হয়। ওই সময় পুলিশের সঙ্গে গুলিবিনিময়ের ঘটনায় পাঁচজন আহত হন। ইসরাফিলের বাবা মুকবুল আহমদ ও চাচাতো ভাই আবদুস শহিদ জানান, বিএনপির রাজনীতি করার কারণে ইসরাফিলকে হত্যা করা  হয়েছে। ১২মার্চ সকালে লোকমুখে চাটখিলে লাশ পড়ে থাকার খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন তাঁরা। বশিকপুর ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক তোফায়েল আহমদ জানান, ইসরাফিল ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ৯ নম্বর ওয়াার্ড যুবদলের সভাপতি। ৭০.আরিফুল ইসলাম ১২ মার্চ সকাল ৯টায় কলেজে যাওয়া পথে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফুঁলকুড়ি ইসলামিক একাডেমি এলাকায় সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে নৃশংস ভাবে হত্যা করেছে শিবির কর্মী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সিটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর মেধাবী ছাত্র, স্থানীয় রেহাইচর হঠাৎপাড়া গ্রামের রমজান আলীর ছেলে আরিফুল ইসলামকে। অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি গোলাম মর্তুজা কোন তদন্ত বা সাক্ষী প্রমাণ ছাড়াই অভ্যন্তরীন কোন্দলে খুন হয়েছে বলে বক্তব্য দিয়েছেন। ৭১. আবু সাঈদ ১১ মার্চ ২০১৫ স্কুলছাত্রকে অপহরণের পর ওই ছাত্রেরই বাড়ি গিয়ে স্বজনদের সান্ত¡না দেওয়া, ছাত্রের পরিবারকে মুক্তিপণ দিতে রাজি করানো, পরে হত্যা ও লাশ গুমের চেষ্টা- সিলেট মহানগর পুলিশের বিমানবন্দর থানার কনস্টেবল এবাদুর রহমান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে অপহরণ ও হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। হত্যার শিকার হয়েছেন সিলেট নগরের রায়নগর এলাকার বাসিন্দা মতিন মিয়ার ছেলে আবু সাঈদ (৯)। সে রায়নগরের হাজি শাহমীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত। ১১মার্চ বুধবার দুপুরে স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে সে অপহৃত হয়। ১৪মার্চ শনিবার রাত ১১টার দিকে নগরের কুমারপাড়ার ঝেরঝেরিপাড়ায় কনস্টেবল এবাদুরের বাসা থেকেই সাঈদের বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করা হয়। ৭২.জালাল উদ্দিন ১৭ মার্চ ২০১৫ মৌলভীবাজারের বড়লেখায় এক জামায়াত কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। ১৭ মার্চ  মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭ টায় বড়লেখা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়নের লক্ষীছড়া বাজারে এই হত্যাকান্ডটি ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বোনের বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে ফেরার পথে তাকে কুপিয়ে আহত করে রাস্তায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। নিহত জালাল উদ্দিন (২১) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বড়লেখা উপজেলার ৮নং কাঠালতলী ইউনিয়ন শাখার সক্রিয় কর্মী। নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, জালাল উদ্দিন ভাগিনাকে সাথে নিয়ে সন্ধ্যায় নিজ বাড়ি কেছরিগুল যাচ্ছিলেন, লক্ষীছড়া বাজারের পাশে আসা মাত্র হঠাৎ করে বড়লেখা আওয়ামীলীগের শীর্ষ সন্ত্রাসী এনাম উদ্দিনের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন সন্ত্রাসী ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি হামলা চালায়। সাথে থাকা ভাগনার চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন জালাল উদ্দিনকে আহত অবস্থায় উদ্বার করে বড়লেখা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসার পর আশঙ্কাজনক অবস্থায় কুলাউড়া সদর হাসপাতালে নিয়ে আসার পথে জুড়িতেই জালাল উদ্দিনের মৃত্যু ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী এবং পরিবার সূত্রে জানা যায়, জালাল উদ্দিন আহত অবস্থায় তাকে আক্রমণকারী কয়েকজনের নাম বলে গেছেন, তারা হল- এনাম উদ্দিন, কবির, আব্দুল কাইয়ুম, দেলোয়ার, জাকির, রফিক উদ্দিন, ফয়ছল আহমদ, নাজিম উদ্দিন, নুর উদ্দিন, হারুন আহমদ, সেলিম উদ্দিন, আব্দুল আজিজ, আব্দুল করিম সহ আরও কয়েকজন। ৭৩. মেজবাহউদ্দিন চন্টু ১৯ মার্চ জেলার সদর উপজেলার মানিকদিহি গ্রামের রেললাইনের পাশ থেকে যুবদল নেতা ও ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মেজবাহউদ্দিন চন্টুর (৪০) লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত যুবদল নেতার ভাই রুহুল কুদ্দুস মন্টু দাবি করেন, মৃত্যুর দু’দিন আগ থেকে তার ভাই পুলিশের হেফাজতে ছিলেন। পুলিশ পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করে চলন্ত ট্রেনের নিচে ফেলে দিয়েছে। নিহত চন্টু মনিরামপুর উপজেলার কাশিপুর গ্রামের রাশেদ বিশ্বাসের ছেলে। তিনি উপজেলার খেদাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত মেম্বার ও ওই ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি ছিলেন। যশোর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, ‘চন্টুকে হত্যা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। চন্টু শুধু রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না, ছিলেন একজন জনপ্রতিনিধিও। এভাবে একের পর এক রাজনৈতিক কর্মী ও জনপ্রতিনিধি খুন করে পুলিশ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। ৭৪. মোবারক উল্লাহ মন্টি ২৩ মার্চ ২০১৫রাজধানী ঢাকার  শাহজাহানপুরে র‌্যাবের সঙ্গে  বন্দুকযুদ্ধে এক যুবক নিহত হয়েছে। তার নাম মোবারক উল্লাহ মন্টি (২৭)। রোববার ভোররাতে এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। র‌্যাব দাবি করেছে, মন্টি সম্প্রতি ফকিরাপুলে এক তরুণীর সাত টুকরো লাশ উদ্ধারের ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামি। র‌্যাব-৩ এর অপারেশন অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম জানান, সহযোগীদের নিয়ে মন্টি টিটিপাড়ায় অবস্থান নিয়েছে বলে খবর পেয়ে ভোররাতের দিকে র‌্যাবের একটি দল সেখানে অভিযানে যায়। দুর্বৃত্তরা র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে র‌্যাবও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এক পর্যায়ে অন্যরা পালিয়ে গেলে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মন্টিকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাকে উদ্ধার করে ভোররাত ৪টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ৭৫. লোকমান ৭৬. সবুজ ২৯ মার্চ রংপুর সদর উপজেলার ৯নং সদ্যপুস্করিনী ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ভোট গণনা নিয়ে সংঘর্ষেও সময় পুলিশের গুলিতে দুজন নিহত হয়েছে। এছাড়া পাঁচজন গুলিবিদ্ধসহ আরো ৩০জন আহত হয়েছেন। ২৯ মার্চ রবিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ভোট গণনা নিয়ে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে যায় পুলিশ। এ সময় তাদের ওপর হামলা হলে গুলি চালায় পুলিশ। পুলিশের গুলিতে নিহত দুজনের নাম লোকমান ও সবুজ বলে জানা গেছে। তারা বিএনপির কর্মী বলে জানান, চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল মতিন। গত ৩১ শে মার্চ ২০১৫, আইন ও সালিশ কেন্দ্র’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে ও ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ৬৪ জন নিহত হয়েছেন। একটি শীর্ষস্থানীয় দৈনিকের তথ্যমতে জানুয়ারি থেকে ২৫ র্মাচ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৮৭। অন্যদিকে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের তথ্য অনুযায়ী নিহতের সংখ্যা ১১৪। আর গুম-খুনের যেসব ঘটনা গণমাধ্যমে আসে নি সেগুলোর হিসেব নিলে এই চিত্র হবে আরও ভয়াবহ। জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৫৫৬টি রাজনৈতিক সংঘাতের তথ্য দিয়েছে আসক (আইন ও সালিশ কেন্দ্র)। এসব সংঘাতে ১২২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ-পুলিশের সাথে বিএনপি-জামায়াত এর সংঘাতে আহত হয়েছে ৩ হাজার ৫১ জন। দেশের র্শীষস্থানীয় একটি ইংরেজি দৈনিকের  রিপোর্ট অনুযায়ী গত ৩ জানুয়ারি থেকে ৯ র্মাচ পর্যন্ত শুধুমাত্র পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন দুই শতাধিক গুলিবিদ্ধ মানুষ। অন্যদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় অর্ধ শতাধিক । সমাজকল্যাণের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী বিরোধী নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্য প্রকাশ্য জনসভায় বলেছেন, আদালতের দরকার নেই পাড়ায় মহল্লায় এদের বিচার করা হবে। স্বাস্থমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বিরোধী দলীয় নেতৃবৃন্দকে আখ্যায়িত করেছেন খুনি হিশেবে। আওয়ামীলীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সেলিম বিরোধ দলের নেতা কর্মীদের হাত-পা কেটে দেয়ার ঘোষণা এবং সরকারি কর্মকর্তা হয়েও পুলিশের আইজি, বিজিবি মহাপরিচালক, র‌্যাবের মহাপরিচালক, ডিএমপি কমিশনারের মত আইনের কর্তা ব্যাক্তি বর্গের প্রতিহিংসাপরায়ন রাজনৈতিক নেতার ভাষায় কথা বলাÑ কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইনের শাসনের সুবার্তা নিয়ে আসে না। সামরিক ডিক্টেটরের শাসনের মতই প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঝুলছে তালা। মাসের পর মাস পুলিশ দিয়ে অবরুদ্ধ রাখা হয়েছে বিএনপি জামায়াতের রাজনৈতিক কার্যালয়গুলো। এভাবে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়া কতটুকু সম্ভব তা প্রশ্ন থেকে যায়। লেখক : মানবাধিকারকর্মী

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির