post

জামায়াত দমনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি মি. জয়ের আবদার রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব ছাড়া আর কিছু নয়

মতিউর রহমান আকন্দ

২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫
সারা দুনিয়ার মানুষের নিকট এ কথা দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে, বাংলাদেশে নাগরিক অধিকার বলতে কিছু নেই। প্রত্যেক দেশের রাষ্ট্র এবং যারা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন তারা জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ করেন। জনগণের নিকট জবাবদিহির একটি অনুভূতি তাদের অন্তরে বিদ্যমান থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের প্রতি সরকারের না আছে কোনো জবাবদিহিতা, আর না আছে কোনো কল্যাণকামিতা। জনগণের কণ্ঠ রোধ করে ক্ষমতায় থাকার জন্য হেন পন্থা নেই যা গ্রহণ করা হচ্ছে না। এ সরকার জনগণের কল্যাণের জন্য কিছুই করতে পারেনি। জনগণ যেন তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজপথে কথা বলতে না পারে সে জন্য সরকার জনগণের সভা-সমাবেশ করার অধিকার পর্যন্ত কেড়ে নিয়েছে। গণমাধ্যমের ওপর নানান ধরনের বিধি আরোপ করে জনগণের বাকস্বাধীনতা রুদ্ধ করা হয়েছে। এটা কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের চরিত্র হতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র বলতে কিছু নেই। এখানকার জাতীয় সংসদে বিরোধী দল সরকারি দলেও আছে, বিরোধী দলেও আছে। এক কথায় অনুগত, গৃহপালিত বিরোধী দলের মাধ্যমে সরকার সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কবর রচনা করেছে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের গণতান্ত্রিক চরিত্রসমূহ সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সরকারের লাঠিয়াল বাহিনীতে পরিণত করা হয়েছে। স্বয়ং পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি রাজনীতির ভাষায় কথা বলতে শুরু করেছে। পেশাদারিত্বের পরিবর্তে দলীয় রাজনৈতিক আনুগত্য প্রাধান্য পাওয়ায় পুলিশ প্রশাসন নিজেরাই নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। পুরুষ পুলিশ কর্তৃক নারী পুলিশ ধর্ষিতা হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। প্রধানমন্ত্রী বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ওপর চরম, জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে এবং মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক রাজনৈতিক মামলা দিয়ে প্রকৃতপক্ষে বিরোধী রাজনীতিকে গৃহবন্দী করে ফেলেছেন। মাঠপর্যায়ের সক্রিয় নেতাকর্মীদেরকে বেছে বেছে হত্যা করা হয়েছে এবং তারা বন্দুকযুদ্ধে নিহত বলে প্রচার করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেকে অসম শক্তির অধিকারী বলে মনে করেন। মাঝে মাঝে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সদম্ভে ঘোষণা করেন, বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জনগণ গ্রহণ করবে। কিন্তু দেশবাসী বিস্মিত হলো যখন তার সুযোগ্য পুত্র মি. সজীব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্রের চরম রক্ষণশীল একটি পত্রিকায় একটি নিবন্ধ লিখে জামায়াতে ইসলামীর কড়া সমালোচনা এবং বাংলাদেশে ইসলামী মৌলবাদ দমনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা কামনা করলেন। ‘ওয়াশিংটন টাইমস্’ নামে পত্রিকাটিতে জয়ের এ নিবন্ধটি ছাপা হয়। ‘আনমাস্কিং টেররিস্টস্ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক নিবন্ধে তিনি বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদের প্রাথমিক পৃষ্ঠপোষক হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে চিহ্নিত করার অপচেষ্টা চালিয়েছেন। তার লেখায় অতিসম্প্রতি পুলিশের হাতে গ্রেফতারকৃত জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি জনাব মোহাম্মদ গোলাম পরওয়ারের গ্রেফতার ও তাদের কাছে অবিস্ফোরিত ২০টি বিস্ফোরক ডিভাইস, ২৫টি বাঁশের লাঠি উদ্ধারের এক রহস্যজনক নাটকের কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে। জনাব জয় ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের সদস্যরা পাকিস্তানি সৈন্যদের ৩০ লাখ মানুষ হত্যা, ২ লাখ নারীধর্ষণ এবং লাখ লাখ মানুষকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করার কাহিনী বর্ণনা করেছেন। তিনি আইসিটির রায়ের প্রতিবাদে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের কথাও উল্লেখ করেছেন। জনাব জয়ের এই বক্তব্য বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। সেই সাথে সামাজিক গণমাধ্যমে তার এ বক্তব্যের সমালোচনা, অযৌক্তিকতা, অসারতা ও রাজনৈতিক চাতুর্যের বিষয়ে কড়া ভাষায় লেখালেখি হয়েছে। আবার অনেকে বিশ্রী ভাষায় এমন মন্তব্য করেছেন যা কলমে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। জনাব জয় জামায়াতকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করার যে বক্তব্য রেখেছেন এটা তাদের অনেক পুরনো বক্তব্য। বাংলাদেশের কোথাও কিছু ঘটলেই তা জামায়াতের ওপর চাপানোর এক বদ অভ্যাসে পরিণত হয়েছে আওয়ামী লীগের। এমনকি তাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাভারের আশুলিয়ায় বিল্ডিং ধসে পড়ার সময় সে বিল্ডিংয়ের খুঁটি ধরে জামায়াত ঝাঁকুনি দিয়েছে বলেও আজগুবি ও হাস্যকর বক্তব্য রেখে নিজেদের রাজনৈতিক সুস্থতার ব্যাপারে প্রশ্নের সৃষ্টি করেছেন। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য আওয়ামী লীগ বোমা হামলা চালিয়ে তা উল্টো জামায়াত-শিবিরের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করেছে। জামায়াতের পক্ষ থেকে প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে দোষীদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানানো হয়েছে। এমনকি জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে প্রতিটি সন্ত্রাসী ঘটনা নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন এবং এ ধরনের কমিটি গঠন করা হলে জামায়াতের পক্ষ থেকে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করা হবে মর্মেও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন। এ বিবৃতি বিভিন্ন পত্রিকায় প্রচারিত হয়েছে। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল দ্ব্যর্থহীনভাষায় আরো ঘোষণা করেছেন, নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে জামায়াতের কোনো কর্মী বা সমর্থকের কোনো ধরনের সন্ত্রাসী ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেলে জামায়াত তার বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও তাকে প্রচলিত আইনের হাতে সোপর্দ করতেও প্রস্তুত রয়েছে। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেলের এই বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে সরকার জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে কোনো তদন্ত কমিটি গঠনের ন্যূনতম সাহস দেখাতে পারেনি। বরং রাজনৈতিক সুবিধা অর্জনের লক্ষ্যে জামায়াতকে দোষারোপ করে ঢালাওভাবে বক্তৃতা করা হচ্ছে। জনাব জয় জামায়াতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের সে অভিযোগ এনেছেন তা তার নিজের দলের জন্যই প্রযোজ্য। বাংলাদেশে হত্যা, সন্ত্রাস, খুন, গুম ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী ঘটনার সাথে আওয়ামী ক্যাডাররা সরাসরি সম্পৃক্ত। এমনকি এসব অপকীর্তি করতে গিয়ে তারা ঘটনাস্থলে হাতেনাতে ধরা পড়েছে। জাতীয় দৈনিকে ধৃত ব্যক্তির ছবিসহ সংবাদ প্রচারিত হয়েছে। হঠাৎ করে জয়ের এ বক্তব্য এবং তার মায়ের বক্তব্য মিডিয়ায় আসার কারণে জনগণের মাঝে নানা ধরনের প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে জামায়াতের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান নতুন কোনো ঘটনা না হলেও মি. জয়ের মুখে তার প্রকাশ খুব তাৎপর্য বহন করে। এরপর একই সুরে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে তা প্রচার হওয়ায় এর একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে বলে পরিষ্কারভাবে মনে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বা সজীব ওয়াজেদ জয়ের এ বক্তব্যের পেছনে রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি কাজ করলেও জনগণের মধ্যে এই বক্তব্যের কোনো গুরুত্ব আছে বলে মনে হয় না। বাংলাদেশ সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের দেশ। এ দেশের মানুষ নির্ধারণ করবে কোন দলের রাজনীতিকে তারা গ্রহণ বা বর্জন করবে। এ ক্ষেত্রে বহিঃশক্তির প্রতি আহ্বান নিজেদের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব ছাড়া আর কিছু নয়। ২০০৮ সালে ডিজিটাল কারচুপির মাধ্যমে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে জামায়াত উৎখাতের অভিযান শুরু হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে পুনরায় ক্ষমতা দখল করে তারা তাদের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। জামায়াত নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মীমাংসিত যুদ্ধাপরাধ ইস্যুটি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে দীর্ঘদিন কারাগারে আটক রেখে সরকার জামায়াতকে নেতৃত্বশূন্য করার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়েছে। মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করে, দলীয় লোকদের দ্বারা সাজানো সাক্ষ্য দিয়ে সরকার জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা ও শহীদ কামারুজ্জামানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছে। ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয়, মহানগরী, জেলা শাখাসহ থানা পর্যায়ের অধিকাংশ অফিস বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। রিমান্ডে নিয়ে জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের প্রায় ১০ হাজার নেতাকর্মীকে চিরতরে পঙ্গু করে দিয়েছে। অনেকের গায়ে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করা হয়েছে। কারো চোখ তুলে ফেলা হয়েছে। কারো পা কেটে ফেলা হয়েছে। বেছে বেছে জামায়াত নেতৃবৃন্দকে ঘর থেকে ধরে এনে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। সাতক্ষীরা জেলায় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের বাড়িঘর যেভাবে ভাঙচুর ও ধ্বংস করা হয়েছে তা কোনো যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকাকেও হার মানায়। জামায়াত নেতার বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। মিডিয়ায় জামায়াতের বিরুদ্ধে একতরফা অপপ্রচার চলানো হয়েছে। জামায়াত নেতৃবৃন্দকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে জামায়াতকে জনগণের নিকট ঘৃণার পাত্রে পরিণত করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। এত কিছুর পরও ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকার তাদের প্রতিহিংসার রাজনীতি চরিতার্থ করতে না পেরে এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়েছে জামায়াতকে মোকাবেলা করার জন্য। এর মাধ্যমে মি. সজীব ওয়াজেদ জয় এবং তার রাজনৈতিক দল প্রকারান্তরে জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের প্রতি তাদের পরাজয়ের কথাই ঘোষণা করেছেন। প্রকৃতপক্ষে জনগণ আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে ঘৃণা করছে। আওয়ামী লীগ এখন একটি পুলিশনির্ভর রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। জনগণের জন্য এবং জনগণের কল্যাণের উদ্দেশ্যে এখন তাদের কোনো তৎপরতা নেই। তাদের তৎপরতা হলো নিজেদের আখের গোছানোয়। এইভাবে আর যাই হোক একটি রাজনৈতিক দল চলতে পারে না। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো শক্তি বন্দুক ও লাঠির জোরে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে না। সারা পৃথিবীতে এর অসংখ্য নজির রয়েছে। বাংলাদেশেও তার অনেক নজির বিদ্যমান। কিন্তু কথায় বলে ‘বাঙালি দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বোঝে না’। আওয়ামী লীগের অবস্থা হচ্ছে ঠিক সে রকম। আওয়ামী লীগ এখন সবচাইতে বেশি ভয় পায় নির্বাচনকে এবং এ দেশের ভোটারদেরকে। যখন কোনো রাজনৈতিক দল জনগণকে ভয় পাওয়া শুরু করে তখন সে দলের পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র। আওয়ামী লীগ সে অনিবার্য পতনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগের অধীনে সাম্প্রতিক কালের নির্বাচন খোদ আওয়ামী মহলেই এক তীব্র সমালোচনার পরিবেশ তৈরি করেছে। মানুষের ন্যায্য ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে লাঠির জোরে ক্ষমতায় যাবার প্রবণতা অতীতে যেমন কোনো রাজনৈতিক দলের জন্যই সুখকর প্রমাণিত হয়নি, বর্তমানেও আওয়ামী লীগের জন্য তা সুখকর হতে পারে না। আওয়ামী লীগ এখন অন্তর্জ্বালায় জ্বলছে। কারণ যাদেরকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য এত বিশাল রাষ্ট্রীয় আয়োজন করা হলো, বিগত উপজেলা নির্বাচনে সেই দলের সমর্থিত প্রার্থীগণ আওয়ামী লীগ প্রার্থীদেরকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে উপজেলা পরিষদে জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল জনাব মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করার পর তার এলাকায় মানুষ প্রতিদিন তার কবর জিয়ারত করছেন। তার জন্য দোয়া করছেন ও কান্নাকাটি করছেন। আর আওয়ামী লীগের প্রতিহিংসার রাজনীতিকে ধিক্কার ও নিন্দা জানাচ্ছেন। এই মুহূর্তে পরীক্ষামূলকভাবে আওয়ামী লীগকে অনুরোধ করি, জামায়াত নেতা মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, জনাব মাওলানা আব্দুস সোবহান, আলী-আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, জনাব এ.টি.এম আজহারুল ইসলাম, জনাব মীর কাসেম আলীসহ আটক নেতৃবৃন্দকে মুক্তি দিয়ে নির্বাচনের আয়োজন করে দেখুন, আপনারা যাদেরকে যুদ্ধাপরাধী বানাতে চেয়েছেন জনগণ কিভাবে ভোটের মাধ্যমে তাদেরকে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করে নেয়। আপনাদের কোনো প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। কাজেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করবো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ধরনা না দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি ধরনা দিন। বাংলাদেশের মানুষ চাইলে আপনাদের রাজনৈতিক বিপর্যয় ঠেকাতে পারে। অন্য কেউ পারবে না। প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় জামায়াতের রাজনীতি ঠেকানোর জন্য ও জামায়াতকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে সহযোগিতা চেয়েছেন তা তাদের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব ছাড়া আর কিছু নয়। জামায়াতের কোনো নেতার বিরুদ্ধে হত্যা, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের অভিযোগ কেউ প্রমাণ করতে পারবে না ইনশাআল্লাহ্। কিন্তু আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা, সন্ত্রাস, খুন, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ধর্ষণ, অপহরণসহ হাজারো অপরাধের অভিযোগ দাঁড় করানো যাবে। বর্তমান পুলিশ প্রশাসন সরকারের সরাসরি নির্দেশে পরিচালিত। এরপরও মাঝে মাঝে আওয়ামী ক্যাডারদের অপরাধ করতে গিয়ে ধরা পড়ার ঘটনা পত্রিকায় খবর আকারে প্রচারিত হয়। দেশবাসীর জানা আছে সাতক্ষীরায় মন্দির ভাঙতে গিয়ে ধরা পড়েছিল যুবলীগ ক্যাডাররা, ফেনীতে সেনাবাহিনীর গাড়িতে বোমা বর্ষণ করতে গিয়ে ধরা পড়েছে যুবলীগ ক্যাডার, বিচারপতির বাড়িতে বোমা নিক্ষেপ করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েছে আওয়ামী লীগ ক্যাডার। কাজেই মি. জয়কে বলবো নিজের দলের সন্ত্রাসীদের সামাল দিন। দেশ ও দেশের মানুষকে শান্তিতে থাকতে দিন। উৎখাত এবং নির্মূলের রাজনীতি থেকে বিরত হোন। ইতিহাস সাক্ষী, যারা অপরকে উৎখাত করতে চান, তারা নিজেরাই উৎখাত হন। আওয়ামী লীগকে সত্য মেনে নিতে হবে। মিথ্যার রাজনীতি সবসময় পরাজিত হয়। আওয়ামী লীগ মিথ্যাচারের যে পন্থা অবলম্বন করেছে তা পরিহার করে বাংলাদেশের বাস্তবতা মেনে নিয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশে ফিরে আসতে হবে। এর মাঝে নিজেদেরও কল্যাণ, দেশ, জনগণ এবং রাষ্ট্রেরও কল্যাণ। লেখক : সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির