post

তথ্য সন্ত্রাসের শিকার ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলন

০৭ নভেম্বর ২০১৩

মুহাম্মদ আবদুল জব্বার|

গত সংখ্যার পর

হয়রত মুয়া’জ ইবনে জাবাল (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল (সা) বলেছেন, আমি কি তোমাদেরকে দ্বীনের মূল সূত্র, তার খুঁটি এবং সর্বোচ্চ চূড়ার সন্ধান দেবো না? রাসূল (সা) বললেন- দ্বীনের মূল হলো ইসলাম, সুতরাং যে ইসলাম গ্রহণ করবে সে নিরাপত্তা লাভ করবে, খুঁটি হলো সালাত এবং তার সর্বোচ্চ চূড়া হলো আল্লাহর পথে জিহাদ। (মুসনাদে আহমদ, হাদীসু মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা)-২১০৫৪)। হয়রত আবু হুরায়রাহ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলে আকরাম (সা) বলেছেন, যে ব্যক্তি মারা গেল অথচ সে জিহাদ করেনি এবং জিহাদ করা মানসিকতাও রাখেনি সে যেন মুনাফিকের মৃত্যু বরণ করল। (মুসলিম : বাবু যাম্মি মান মাতা ওয়ালাম ইয়াগযু : ৩০৪৫) হয়রত আনাস ইবনে মালেক (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা) বলেছেন, আল্লাহর পথে একটি সকাল ও একটি রাত ব্যয় করা দুনিয়া ও এর সমস্ত সম্পদ থেকে উত্তম। (বুখারী, বাবুল গাদওয়াতি ওয়ার রাওহাতি ফি সাবিল্লিাহ : ২৫৮৩)। জিহাদের উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে কুরআন-হাদিসে নি¤œরূপ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে : “তোমরা বের হও, হালকা অবস্থাই হোক আর ভারী অবস্থাই হোক এবং তোমাদের জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ কর। তোমরা যদি জান তাহলে এটিই তোমাদের জন্য ভালো।” (সূরা তাওবা : ৪১) হয়রত তারেক ইবনে শিহাব (রা) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল (সা) ঘোড়ার জিনে পা রাখার সময় এক ব্যক্তি তাকে প্রশ্ন করল, উত্তম জিহাদ কোনটি? তিনি বললেন অত্যাচারী শাসকের নিকট সত্য কথা বলা (নাসায়ী বাবু ফাদালী মান তাকাল্লামা বিল হাক্কি ইনদা ইমানিন জায়িরিন)। হয়রত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেছেন, তোমরা তোমাদের সম্পদ, হাত ও মুখ দিয়ে মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ কর (নাসায়ী : বাবু উযু বিল জিহাদি-৩০৪৫)। উল্লেখিত আয়াত-হাদিসগুলো থেকে স্পষ্ট যে ইসলামের অনুসারীরা কখনো জালিম হতে পাওে না বরং যুগে যুগে তারা মজলুম হয়েছে। শুধুমাত্র শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হওয়া ছাড়া কারো ওপর আক্রমণের কোন সুযোগ নেই। রাসূল (সা) সময়ে প্রতিপক্ষের বিনা আক্রমণে রাসূল (সা) সাহাবীরা শত্রুবাহিনীকে আক্রমণ করেননি। জিহাদের সাথে জঙ্গিবাদের কোনো সম্পর্ক নেই। সন্ত্রাসবাদকে যারা জিহাদের সাথে তুলনা করে তারা অজ্ঞতা বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এটি করে। আমাদের দেশেও ইসলামপন্থীরা যখন কোনো কর্মসূচি পালন করে তখন সরকারের নির্দেশে পুলিশবাহিনী আক্রমণ করে তাদের কর্মসূচি পণ্ড করে দেয়। কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা আক্রমণ থেকে বাঁচার চেষ্টাকেও মিডিয়া বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে ঘটনার দায়ভার নিরপরাধ আগত ব্যক্তিদের ওপর চাপিয়ে দেয়। জিহাদ মানবতাকে অশান্তির দাবানল থেকে বাঁচানোর অন্যতম মাধ্যম। যারা এর বিরোধিতা করে তারা সাম্রাজ্যবাদের দোসর। তারা সন্ত্রাসকে লেলিয়ে দিয়ে নিজেদের গড়া মানবাধিকার সংস্থা, সুশীলসমাজ, জাতিসংঘ আদলে গড়া সংগঠনকে অপব্যবহার করে সন্ত্রাসী আক্রমণকে ও আগ্রাসনকে বৈধ করে নেয়। নিজেদের আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠা করতে প্রচেষ্টা চালায়। ৯/১১ ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে এক চরম মিথ্যাচার : ৯/১১ ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ আজো প্রমাণিত না হলেও কিছু প্রশ্ন ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ অনেকটা চিন্তাশীল মানুষের কাছে স্পষ্ট হতে আর বাকি নেই। এক দিন ঘটনার নেপথ্য নায়কদের চেহারা বিশ্ববাসীর কাছে উন্মোচিত হবে। সত্যকে কেউ ধামা চাপা দিয়ে ঢেকে রাখতে পাওে না। লক্ষণীয় বিষয় হলো ১১ সেপ্টেম্বর ২০০১ সালে ঘটনার সাথে মুসলমানদের জড়িত থাকার বিষয়টি অন্ধভাবে বৃহৎ বিশ্বমিডিয়া এজেন্সিগুলোতে প্রচার করতে থাকে। মুসলমানদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ার আগে জড়িত আছে বলে জোরেশোরে প্রচার করা একটা ধর্ম, জনগোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বৈ কী বলা চলে? এতে মনে হয় যেন এ ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত। অনেকে মনে করেন নিজেদের অন্দরমহলে ভয়াবহ তাণ্ডব সিনেমা নির্মাণ করে মুসলমানদেরকে বলির পাঁঠা বানানোর ন্যক্কারজনক ক্র্যাকডাউন। সারা বিশ্বে হইচই শুরু হলো, ইসলামী জঙ্গি, তালেবান, আল-কায়দা ঘটনার সাথে জড়িত; মুসলমানরা সন্ত্রাসী ইত্যাদি...। এ ঘটনার পর পশ্চিমা বিশ্বে মুসলমানরা তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালিত করতে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছিল। তাদের মসজিদ, ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসা, সফর ও শিক্ষার সাথে জড়িতদের ওপর নজরদারির নামে রীতিমত অপধস্ত করা হচ্ছিল। মুসলমানদের দিকে ইহুদি-খ্রিষ্টানরা আড়চোখে তাকাতে থাকল, এক কথায় মুসলমানদেরকে সন্ত্রাসী হিসাবে ভাবতে শুরু করল। টুইন টাওয়ার হামলা, পেন্টাগনে (আমেরিকার প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রধান কার্যালয়) ব্যর্থ হামলা! উইকিপিডিয়ার তথ্যানুযায়ী প্রায় ৩০০০ লোক নিহত হয়। এতে বেসামরিক ২২৭ জন, ১৯ জন হাইজ্যাকার (যারা ঘটনার সাথে জড়িত) নিহত ও বাকিরা সেখানে কর্মরত ছিলেন। আমেরিকান ফ্লাইট নং ১১, ইউনাইটেড এয়ার লাইন ফ্লাইট নং৭৭ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আক্রমণ করে, ইউনাইটেড এয়ার লাইন ফ্লাইট ৯৩ নং পেন্টাগন এ হামলা করে ব্যর্থ হয়। এ ষড়যন্ত্রের বেশ কয়েকটি প্রশ্নের জবাব এখনও ইউএসএ বিশ্বের কাছে পরিষ্কার করতে পারেনি। প্রশ্নগুলো হলোÑ -    সে দিন টুইন টাওয়ারে কর্মরত কোন ইহুদি ছিল না কেন? - কেন মিডিয়াগুলোতে প্রমাণ ব্যতীত একযোগে আল কায়দা বা ইসলামী জঙ্গিরা জড়িত আছে প্রচার করা হলো? -    কেন এ ঘটনার পর পর আফগানিস্তানে মার্কিনি হামলা হলো? -     কেন এ ঘটনার কিছু দিন পর ইরাকে মার্কিনি হামলা করে দেশ দু’টিকে ক্ষত বিক্ষত করা হলো? -     হামলার সাথে সাথে পুরো টুইন টাওয়ারের মতো দৃশ্যত মজবুত স্থাপনা কিভাবে খড়কুটোর ছাইয়ের মত ধসে পড়ল? -    টুইন টাওয়ারে হামলা সফল হলো কিন্তু কেন পেন্টাগন হামলা ব্যর্থ হলো? এসব প্রশ্নের যে সকল উত্তর বিশ্ববাসীর কাছে পরিষ্কার- এটি ছিল ইহুদিদের দীর্ঘ দিনের পরিকল্পনার অংশ, সে কারণে তারা এ ঘটনার দিন একযোগে কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত ছিল না এবং মিডিয়াগুলোতে এ ঘটনার সাথে মুসলমানদেরকে জড়িত করে দেদার অপপ্রচার সেই পরিকল্পনার অংশ। এ ঘটনার দায়ভার আল-কায়েদা, তালেবান মুসলমান ও ইসরাইলবিরোধী রাইজিং মুসলিম দেশগুলোর ওপর চাপিয়ে দিয়ে আফগানিস্তান ও ইরাকে মার্কিনি হামলা জায়েজ করল। টুইন টাওয়ারের মতো মজবুত স্থাপনা মুহূর্তের বিমান হামলায় ছাই হয়ে গেল! এই নির্মাণ কারুতার সাথেও কি কোনো ষড়যন্ত্র ছিল না বলা চলে? আর মার্কিনি বিমান নিয়ে মার্কিনি স্থাপনায় হামলাতে সরকারের মূল কর্মকর্তারা জড়িত না থাকলে এটি কোনভাবে সম্ভবপর নয়। পেন্টাগনে হামলা হলে অনেক ইহুদি কর্মকর্তা মারা যেত এবং ইউএসএর সামরিক ক্ষতি সাধন হলে মুসলমান দেশগুলোতে পরবর্তীতে সামরিক অভিযান চালানো সম্ভব হবে না। তাই তারা পেন্টাগনে হামলার নাটক করেনি তো? আর আমেরিকাতে খ্রিষ্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও প্রতিরক্ষা হতে শুরু করে অধিকাংশ সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকতারা ইহুদি। তাহলে বলতে নিশ্চয় দ্বিধা নেই যে এ গভীর ষড়যন্ত্রের সাথে ইহুদিরা জড়িত। আর আমেরিকার নেতৃবৃন্দ জেনেও না জানার ভান করে মুসলমানদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দিচ্ছেন, কারণ এতে তাদের প্রশাসনের দুর্বলতা বিশ্ববাসীর কাছে ফাঁস হয়ে যাবে এবং এতে বিশ্বব্যাপী আমেরিকা আর মোড়ল গিরি করতে পারবে না। অন্য দিকে জড়িতেদের শায়েস্তা করতে গেলে তাদের প্রশাসনিক কাঠামো ভেঙে যেতে পারে এবং দেশান্তরে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করেন। অনেক চিন্তাশীল মনে করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ইহুদিরা সময়ের ব্যবধানে গিলে খাবে!

সম্প্রদায়িক দাঙ্গায় মুসলমানদের দায়ী করে পরিকল্পিত মিথ্যাচার : বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের ওপর নির্যাতন এখন নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাতে মুসলমানরা নেতৃত্বে কর্তৃত্বে এগিয়ে আসতে না পারে। তাই তাদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে নির্যাতনের উল্টো অভিযোগ তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। যা চরম মিথ্যাচার। এসব নির্লিপ্ত মিথ্যাচার সভ্যসমাজ ব্যবস্থা কর্তৃক মিথ্যার বেসাতির পাহাড়সম প্রাসাদ খান খান করে দেয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত ক্ষণিক সময়ের জন্য হলেও সমাজকে দ্বিধাদ্বন্দ্বের দোলাচলে নিক্ষিপ্ত করছে। চিন্তাহীন মানুষের জন্য সাময়িকভাবে সত্যকে বাছাই করে নেয়া অত্যন্ত দুরূহ হয়ে যাচ্ছে। মিথ্যা নামক কাল বিষবাষ্পে মানবতা ধুঁকে ধুঁকে মরছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে কথিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হচ্ছে। মিয়ানমার, ভারত ও চীনের উঁইঘুর মুসলমানদের ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন সারা বিশ্ব মুসলমানদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ করছে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বলতে বুঝায় যেখানে দুই ধরনের মতাদর্শ বা ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে ধর্মীয় বা সামাজিক স্বার্থ নিয়ে বিরোধ হয়। যেখানে একপক্ষ আরেক পক্ষকে আক্রমণের চেষ্টা করে ও উভয়পক্ষের ক্ষয়ক্ষতি হয়। কিন্তু উল্লেখিত এলাকাগুলোতে মুসলমানদের ওপর হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের যে অকথ্য নির্যাতন ও আক্রমণ তা কোনভাবেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মধ্যে পড়ে না। কারণ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হলে উভয় পক্ষের ইনভলমেন্ট থাকতে হয়। একপক্ষের অসংখ্য লোকের জীবন সংহার ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হল আর অন্যপক্ষের কিছুই হলো না তাহলে কী করে একে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বলা যায়? বরং এটিকে কোন ধর্মীয় সম্প্রদায় বা জাতি নিধনের সাঁড়াশি পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ বা অভিযান ছাড়া কী বলা চলে? মুসলমানরা এ ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সংজ্ঞার মারপেঁচে পড়ে তাদের মর্যাদা নিয়ে উল্লেখিত এলাকাগুলোতে বসবাস করতে পারছে না। বাস্তব অবস্থাকে তুলে না ধরে অসত্য তথ্য দিয়ে এ পর্যন্ত বিশ্বমিডিয়াগুলো মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলে দিচ্ছে। মিয়ানমারে হাজার হাজার মুসলমানকে নির্বিচারে হত্যা করল বৌদ্ধরা, বলা হলো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠতে পারে মুসলমানদের এত লোককে হত্যা করা হলো অথচ বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কোনো ব্যক্তি নিহত বা আহত হলেন না কেন এর কারণ? উত্তর অতি সহজ এখানে একপক্ষের আক্রমণ হয়েছে। ১৯৯১ সালে অযোদ্ধার বাবরি মসজিদকে মন্দির বানানোর প্রচেষ্টাকে কেন্দ্র করে ভারতজুড়ে মুসলমানদের ওপর চলে এক লোহমর্ষক হত্যাযজ্ঞ। শিখরা এ হত্যাযজ্ঞে অংশগ্রহণ করে। ভারতসহ সারা বিশ্বমিডিয়া জুড়ে গরম গরম খবর সম্প্রচার করা হল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হচ্ছে। সেখানে কতজন শিখ মারা গেছে এর তথ্য কি কেউ দিতে পেরেছে? জাতিসংঘসহ বর্তমান বিশ্বের কর্তৃত্বশীল সংগঠনগুলো শুধু বক্তব্য বিবৃতিতে সীমাবদ্ধ রেখেছে এ বলে যে- ‘সাম্প্রদায়িক বন্ধ হওয়া উচিত, উভয় পক্ষের সংযত হওয়া উচিত’। তাদের বক্তব্যে নির্যাতিতদের পক্ষাবলম্বন করতে দেখা যায়নি। একইভাবে মিয়ানমার ও চীনের উঁইঘুর মুসলমানরা নির্বিচারে হত্যার শিকার হলো, কিন্তু কথিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় কতজন বৌদ্ধ নিহত হয় তার প্রমাণ মিডিয়াগুলো মিলাতে পারেনি। আর মিডিয়াগুলোর মিথ্যাচারের আরেকটা বড় নজির হলো তারা অধিকাংশ সময় একপক্ষের সংবাদ পরিবেশন করে। এর ফলে নির্যাতিত গোষ্ঠী ক্ষিপ্ত হয়ে নতুন দাঙ্গার সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। একইভাবে আমাদের দেশেও অনেক আগে থেকে একটা বেড কালচার হয়ে এসেছে- সেকুলারিস্টরা কৌশলে অন্য ধর্ম-বর্ণের ওপর আক্রমণ করে আবার শ্লোগান দেয় ধর্ম যার যার, যার ধর্ম সে স্বাধীনভাবে পালন করতে পারবে। অথচ এ পর্যন্ত বাংলাদেশে যত বারই সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ হয়েছে ততবারই একটি মহল ইসলামপন্থীদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে নিজেরা সাধু সেজে ভোটের রাজনীতি করেছে, এই সুবাদে তাদের জায়গা-জমি দখল করেছে, মালামাল লুট করেছে। মিডিয়া মালিকরা একই মতাদর্শের হওয়ায় এবং পরিকল্পনার অংশীদার হওয়ায় ডামাঢোল বাজিয়ে ইসলামিস্টদের জড়ানোর চেষ্টা করেছে। এ জঘন্যতম মিথ্যাচারে সংখ্যালঘুদের একটা বড় অংশ মুসলমানদেরকে তাদের শত্রু মনে করতে থাকে আর যে অংশ তাদের সমাজে নেতৃত্ব দেয় তারা জেনেও না জানার ভান করে। কক্সবাজারের রামুসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের প্যাগোডা, মন্দির ও গির্জাগুলোতে যে সকল আক্রমণ হয়েছে এ পর্যন্ত জামায়াত ও হেফাজত বা ইসলামী অনুশাসনে বিশ্বাসীদের অভিযুক্ত করা হয়েছে, অথচ যে দল এটি প্রচার করছে পুলিশ প্রশাসন তাদেরকে হাতে নাতে ধরেছে। তাই শান্তিপূর্ণ একটি জনপদকে অশান্ত করতে মিডিয়ার কা-জ্ঞানহীন অপপ্রচার মূল দায়ী নয় কি? ‘এক দোষ করে দশে কষ্ট পায়’ বললে কি খুব বেশি বলা হবে?

ব্যক্তির দায় দিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে ভয়াবহ অপপ্রচার? ইসলাম মানুষকে পরিশুদ্ধ করে দুনিয়ার জীবনে শান্তি ও পরকালে মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য আদেশ দিয়েছে। মানুষ লোভ ও প্রতারণার ফাঁদে পড়ে জাগতিক পাপ পঙ্কিলতায় জড়িয়ে পড়ে এতে সামাজিক বা রাষ্ট্রীয়ভাবে দোষী অভিযুক্ত ব্যক্তির দোষ বা অপরাধকে কোন ধর্ম বা সম্প্রদায়ের নামে চালিয়ে দেয়া মোটেও যুক্তি যুক্ত নয়। মুহাম্মদ (সা) স্পষ্টভাবে বলেছেন কোন ব্যক্তির অপরাধ কোনো সম্প্রদায়, গোত্র বা ধর্মের অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবেনা। সারা বিশ্বব্যাপী যে সকল ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে তার অধিকাংশ ঘটনার সাথে মুসলমানরা জড়িত বলে অভিযোগ করা হয়ে থাকে। অথচ কী কারণে সে সব হামলা হয়েছে বা হামলাকাররিা ইসলামের অনুশাসন পালন করে কি না একবারের জন্যও বিবেচনা করা হয় না। ঘটনার সাথে ব্যক্তির অপরাধকে ইসলামের অপরাধ হিসেবে শনাক্ত করা হয়। আবার দেখা যায় একজনের অপরাধ অন্যজনের অপরাধ হিসেবে চালিয়ে দিয়ে ইসলামের ওপর দায় চাপানোর খামখেয়ালি চেষ্টা করা হয়। এ ক্ষেত্রে সংবাদ প্রচারকারীদের ভূমিকা অত্যন্ত হাস্যকর ও নির্লজ্জ। যৌক্তিকভাবে যদি ধরি একটি পরিবারের কোন সদস্য চুরি অথবা ডাকাতির সাথে জড়িত। তার এ অপরাধের জন্য তাকে শাস্তি পাওয়া আবশ্যক। এখানে কি কেউ বলবেন পরিবারের সকল সদস্যকে শাস্তি পাওয়া উচিত? কারণ সে পরিবারের অভিভাবক নিঃসন্দেহে তার সন্তানকে অপরাধ থেকে আগলে রাখার জন্য মানুষের মতো মানুষ হিসাবে গড়ে তোলার জন্য যারপরনাই চেষ্টা করে থাকেন। দেখা যায় সে সন্তান অবাধ্য হয়ে বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত হয়ে যায়। সুতরাং কৃত অপরাধী ব্যক্তিই শাস্তি পাবে এটাই স্বাভাবিক। অপরাধীর অপরাধ ঐ পরিবারের ওপর চাপিয়ে দেয়া নিতান্ত অপবাদ ও অযৌক্তিক। ইসলাম মানুষকে কল্যাণ ও পরিশুদ্ধমূলক কাজের মাধ্যমে গড়ে তুলে। সুতরাং কোন ব্যক্তি ইসলামের বা অন্য ধর্মের অনুসারী হওয়ায় তা ইসলামের ওপর বা অন্য কোন ধর্ম বা গোত্রের ওপর দায় চাপানো অযৌক্তিক। কোন দোষী নিঃসন্দেহে বিচার হওয়া উচিত আবার কোন নির্দোষ ব্যক্তি মিথ্যচারের মারপ্যাঁচে অপরাধী হিসাবে সাব্যস্ত করে কোন ধর্ম গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের ওপর চাপিয়ে দেয়া ঠিক নয়। ইদানীং আরো একটি মারাত্মক ব্যাধি সমাজে হু হু করে বিস্তার লাভ করছে, বিশেষ করে কুরআন ও হাদীসের বিভিন্ন আয়াত ও হাদিসের খণ্ডিত অংশ বিশেষ উদ্দেশ্যে প্রচার করা। যাতে পাঠকের মধ্যে আল্লাহ ও রাসূল (সা)-এর বক্তব্যকে অবিবেচকের বক্তব্য হিসেবে চিহ্নিত হয় এবং ইসলামের সুমহান আদর্শ সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর ধারণা লাভ করে। আবার কোন ব্যক্তির বক্তব্যের এক অংশ প্রচার করে আরেক অংশ প্রচার না করে ঐব্যক্তি বা দলের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করা হয়। এক শ্রেণীর শ্রোতা বা পাঠক এই অপপ্রচারের সাথে যুক্ত হয়ে তা আরো বেশি পরিমাণে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে এবং আরেকটি অংশ অবুঝ বালকের মত মিথ্যাকে সত্য হিসাবে গ্রহণ করে নেয়। বর্তমানে এ ধরনের প্রচার এত বেশি বেড়েছে যে ব্যক্তির সত্য লিখনি ও বক্তব্যকেও রঙ-ঢঙ সাজানো ও মেকি হিসাবে মনে করে আসল নফল এর মধ্যে তফাত করতে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে। আধুনিকতার নাম করে ইসলামের অনুসাশন পালনকারীদেরকে বলা হয় বেক ডেডেট। কথিত আধুনিকতাবাদীদের মতে যারা দাড়ি রাখে, মাথায় টুপি দেয়, কুরআন-হাদীস পড়ে, এর পক্ষে কথা বলে, নামাজ পড়ে, সুদ-ঘুষ খেতে অভ্যস্ত নয়, নারী, মদ সিগারেটের সাথে সংযোগ নেই তারাই বেক ডেডেট। তাদের ভাষায় যত্র তত্র অবাধে যৌন ভাব আদান প্রদান, নারী পুরুষ অবাধ বিচরণ, স্বল্প বসন পরিধান, সিগারেট মদ, এগুলো জীবনের অংশ; এগুলো ছাড়া স্মার্ট জীবন অচল। আর আমাদের পত্র-পত্রিকা ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াগুলো তাদের বিজ্ঞাপন; নাটক সিনেমায় সেটিকে স্মার্টনেস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে যেন মরিয়া হয়ে উঠেছে। কে বলবে তাদেরকে আধুনিকতা মানে অশ্লীলতা নয়, নয় যৌন নগ্ন প্রদর্শনী। আধুনিকতা মানে মানুষের ভেতর মানুষের জীবনবোধকে জাগ্রত করা, স্বচ্ছ-পরিচ্ছন্ন ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার জন্য অদম্য যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া। যেখানে মানুষ না খেয়ে মরবে না, সম্ভ্রম হারাবে না, বাঁচার চেষ্টা থাকবে তবে অন্যের স্বার্থে আঘাত দিয়ে নয়। সমাজের সকল শয়তানি কর্মের বিরুদ্ধে সত্যপন্থীরা রুখে দাঁড়াবে। এটাই ইসলাম শিক্ষা দেয়, এটাই আধুনিকতা। ইসলামের জীবনবোধই হলো সর্বাধুনিক ও বাস্তবসম্মত। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার উপদেষ্টা ড. ডালিয়া মোজাহিদের হিজাব পরা দেখে সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করলেন আপনি একজন শিক্ষিত অধুনিক নারী হয়েও হিজাব পরলেন কারণ কী? তিনি বললেন হিজাব বা শালীন পোশাক কখনো আধুনিকতার অন্তরায় হতে পাওে না। আর যদি অর্ধনগ্ন পোশাক পরিধানকে আধুনিকতা বলে, তাহলে বলতে হয় আফ্রিকার জঙ্গলে বসবাসকারী উলঙ্গ মানুষ গুলোই সবচেয়ে আধুনিক। সুতরাং আধুনিকতা কোন অনাচারের নাম নয় বরং মানুষের স্বস্তি ও নিরাপত্তাবোধই হলো আধুনিকতা। নেতৃবৃন্দের চরিত্রে কালিমা লিপনের মাধ্যমে অপপ্রচার : কোন আন্দোলন বা মিশনের কেন্দ্রীয় বা প্রধান ব্যক্তিবর্গকে যখন হীন আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়, তখন শুধু ঐ ব্যক্তিকে কষ্ট দেয়াই আসল লক্ষ্য হয় না বরং আসল লক্ষ্য হয়ে থাকে ঐ মতাদর্শকে এবং আন্দোলনকে হেয় করা ও তার ভাবমূর্তিকে ক্ষুণœ করা। যার ক্রমবর্ধমান প্রসারে বিরোধীরা আতঙ্কিত থাকে। কিন্তু যদি নেতৃত্ব উন্নত চরিত্রের অধিকারী হয়, আন্দোলনের কর্মীরা অপপ্রচারের ব্যাপারে সচেতন থাকে তাহলে তার পরিণতি ঠিক সে রকম হয় যেমনি প্রচ- বেগবান একটা ¯্রােতকে বালির বাঁধ দিয়ে ঠেকানো যায় না। সাময়িকভাবে অসুবিধা হলেও সময়ের পরিক্রমায় সত্য দিনের আলোর মত স্পষ্ট হয়ে যায়। সর্ব সাধারণের কাছে এ অপপ্রচারের উদ্দেশ্য পরিষ্কার হয়, অভিযুক্ত নেতা ও আন্দোলনের ব্যাপারে আরো বেশি আস্থা ও বিশ্বাস জন্ম নেয়। নেতার নেতৃত্বে আন্দোলন চলে আপন গতিতে, নির্দিষ্ট মঞ্জিলে; অর্জিত হয় লক্ষ্য। অপপ্রচারের কারণে মানুষের নজরে আসে সে আন্দোলন ও নেতৃত্ব। এতে আম-জনতার জানার আগ্রহ বারে বহুগুণে। জানতে এসে বহু মানুষ সত্যের সন্ধান লাভ করে। অপপ্রচারের উদ্দেশ্য তারা জানতে পারে, তখন নিজেরাই এক একজন সত্যের বাহক হয়ে যায়। দিন দিন এ আন্দোলনের প্রচার প্রসার বাড়তে থাকে অপ্রতিরোধ্যভাবে। অপপ্রচারকারীদের হীন উদ্দেশ্য হয় বোমেরাং। বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের ওপর আইন আদালত এর জোর খাটিয়ে অথবা হত্যা, গুম, জুলুম-নির্যাতন ও গ্রেফতার করে নিচিহ্ন অভিযান চলছে দেশে-বিদেশে। এসব ব্যক্তিকে সন্ত্রাসী-জঙ্গি ও অপরাধী হিসাবে রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের প্রচারযন্ত্র বক্তব্য বিবৃতি দিয়ে চলছে অহরহ। আবার অভিযুক্ত ব্যক্তি বা দলের বক্তব্য ও কোনভাবে প্রচার করছে না সরকারের তল্পিবাহী মিডিয়াগুলো। অভিযুক্ত ব্যক্তিবর্গ কোন প্রতিবাদ ও করতে পাওে না; পাওে না তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে। তাদের ওপর ভিন্ন ভিন্ন রূপে যখন আক্রমণ হয় তখন ইসলামপন্থীদের বাঁচার চেষ্টা তাও মানুষরূপী হিং¯্র দানবদের কাছে অন্যায়। ইসলামিস্টদের বাঁচার আর্তনাদকে তার সন্ত্রাসী কর্মকা-, জঙ্গিবাদ ইত্যাদি নামে অভিহিত করে চলছে প্রায়সই। তখন ইসলাম ধর্মের দোহাই দিয়ে বলে- ইসলাম হচ্ছে শান্তির ধমর্, এরা অশান্তির সৃষ্টি করে কেন? এরা ইসলাম ইসলামপন্থী হতে পাওে না। অথচ কেন এ অশান্তি সৃষ্টি হলো? কারা এর জন্য দায়ী? অপপ্রচারকারীদের অপপ্রচারের শোরগোলে কোনটি সত্য? কোনটি মিথ্যা? কারা সন্ত্রাসী আর কারা অত্যাচারিত সেটা মানুষ বুঝতে পাওে না। এ ক্ষেত্রে যে সকল মিডিয়া ইসলামপন্থীদের তৎপরতা সহ্য করতে পারে না তাদের অপপ্রচারের ভিন্ন ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে দেখা যায়। যা অন্যায় চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন। কিন্তু এসব বিকৃতি রুচির শ্বেত ভল্লুকদের কাছে ন্যায় অন্যায়ের বুঝার তফাত শক্তি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যেহেতু এই কপট মিশন নিয়েই তাদের অভিযাত্রা। প্রায়সই দেখা যায়- ইসলামী সংগঠন বা সংগঠনের ব্যক্তির ব্যাপারে আজগুবি হেডিং দিয়ে লিড নিউজ করা হয়। সবটা পড়লে দেখা যাবে সেখানে কোন অথেনটিক তথ্য নেই। আবার দেখা যায় নিরেট একটা ডাহা মিথ্যা নিউজ করে দেয়া হয়। এ ধরনের নির্লজ্জ মিথ্যা প্রচারণার কারণ হিসাবে যে বিষয়টি ধরা পড়ে, সেটি হলো- অধিকাংশ নিউজ পাঠকরা নিউজ হেডিং পড়েন; যারা ইসলাম বিরোধী তারা নামী-দামি পত্রিকার নিউজ হেডিং গুলোকে পুঁজি করে অপপ্রচার চালায়, আর যারা সাধারণ পাঠকেরা তারা এসব নিউজ নিয়মিত না পড়লে ও নিয়মিত এ সব নিউজের হেডিং প্রত্যক্ষ করতে করতে ধীরে ধীরে বদ্ধমূল ধারণা জন্মাতে থাকে যে, সে সব নিউজ অবশ্যই সত্য; সত্য না হলে নিশ্চয়ই নিয়মিত প্রকাশিত হতো না। এটিই স্বাভাবিক, সাধারণ পাঠকেরা যা পড়ে তার অধিকাংশ বিশ্বাস করে নেয়। নিরেট ডাহা মিথ্যা নিউজ করার কৌশল হলো- একটা নিউজ প্রিন্টিং অথবা ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়ে গেলে কোটি কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। যাদের বিরুদ্ধে এটি প্রচার করা হয়, তারা প্রচারকারী কর্তৃপক্ষের প্রচারটি অসত্য হিসেবে প্রমাণ করলেও প্রতিবাদবার্তা দেয়া বা কর্তৃপক্ষের ভুল স্বীকার করা না করা সম্পূর্ণ মিডিয়া হাউজের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভরশীল। এর দায় স্বীকার করে প্রতিবাদবার্তা বা কর্তৃপক্ষের ভুল স্বীকারোক্তি প্রকাশ করলেও এমনভাবে প্রচার করে যা দায় সারা গোছের মতোই। এতে অধিকাংশ মানুষ অন্ধকারেই থেকে যায়। অপপ্রচারের আসল উদ্দেশ্য সফল হয়ে যায়। একটা ঘটনার কথা না বললে নয়। একবার দেশের একটি নামকরা জাতীয় পত্রিকায় ছাত্রশিবিরকে জঙ্গি সম্পৃক্ত করে লিড নিউজ করে। তখন কেন্দ্রীয় ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে পত্রিকার সম্পাদকের সাথে দেখা করে অবান্তর নিউজ করার কৈফিয়ত চাইলে সম্পাদক নির্লজ্জের মতো হাসলেন এবং বললেন আমার পত্রিকার পারপাস আমাকেই সার্ভ করতে হবে। তাই আরকি.........। ভুল স্বীকার বা প্রতিবাদলিপি ছাপাবেন বললেও শেষ পর্যন্ত ছাপানোর কোনো খবর আমরা পাইনি। এক অদ্ভুত আচার-আচরণ। মনে হলো দেশটা যেন মগের মুল্লুক- যার যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে অবান্তর অপপ্রচার চালাবে, এসবের নেই যেন কোন আচার-বিচার। হিটলার ইতিহাসে ধিকৃত একজন ব্যক্তি হলেও তার আত্মজীবনীতে যথার্থই বলেছেন- ‘সাংবাদিকতার এ উদারতা আমার চোখে অন্য আলোতে পুরো ব্যাপারটা ধরা দেয়। প্রতিপক্ষকে আক্রমণের জন্য ওরা গম্ভীর্যপূর্ণ স্বর ব্যবহার করে, কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রে ওদের সম্পূর্ণ নীরবতায় আমি স্পষ্ট বুঝতে পারি যে ওরা কত ধূর্ত এবং কী পরিমাণে ঘৃণ্যভাবে পাঠকদের ঠকিয়ে চলছে।” গল্প-কবিতা-উপন্যাসের মাধ্যমে বিভ্রান্তি : রাসূল (সা) এর সময় তাকে তার মিশন থেকে যখন নিভৃত করা যাচ্ছিল না তখন কবিতা, গান দিয়ে তাকে উপহাস করা হতো। গল্পের মাধ্যমে তাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হতো। বাপ-দাদার ধর্মের পরিবর্তে মুহাম্মদের (সা) নব্য ধর্ম ইসলাম গ্রহণকারীদের সমাজের অকল্যাণকারী হিসাবে শনাক্ত করা, ইসলামের বিরুদ্ধে বিষোদগার করা তৎকালীন কবি-সাহিত্যিকদের নিয়মিত কাজে পরিণত হয়েছিল। আজকের এ সময়ে ভাবতে অবাক লাগে যে কথিত প্রগতিবাদী কবিরা ইসলামী সংগঠন, তাহজিব-তমুদ্দুন ও ইসলামপন্থীদেরকে তাদের কবিতা ও লিখনির মাধ্যমে যে বিষোদগার করে তা নবী করিম (সা) সময়ের বিষোদগারের সাথে নিঁখুতভাবে এক মিল। গল্প ও কবিতায় অনুমাননির্ভর অসত্য সাগরে ইসলামের ধারক বাহকদেরকে তলিয়ে দেবার আয়োজন হয়েছে যুগে যুগে। কথিত উন্মাদনা সৃষ্টিকারী কবিদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পদায়ন করা হয়, দেয়া হয় বিশেষ মর্যাদা। আর যারা ইসলামের পক্ষে গান, কবিতা রচনা করেন তাদের মর্যাদা রাষ্ট্রীয়ভাবে দেয়া তো দূরের কথা বরং তাদের কর্মকা-কে অনুৎসাহিত করার জন্য পদে পদে বাধা দেয়া হয়। এ যেন শিষ্টের দমন দুষ্টের লালন। মুসলমানদের লেবাসে মুসলমানদের মাঝে চিন্তাগত পার্থ্যক্যের সন্ত্রাস : ইহুদি-খ্রিষ্টানরা যুগে যুগে তাওহিদকে আস্বীকার করেছে। প্রকাশ্যে তাদের অপতৎপরতা সম্পর্কে মুসলিম উম্মাহ ওয়াকিফহাল। কিন্তু ইসলামের খোলস পরে ইসলামের কথা বলে মুসলমানদেও ভেতরে বড় ধরনের বিভেদ সৃষ্টি করে চলছে একটি অশুভচক্র, অত্যন্ত সুনিপুণভাবে! মানুষের বুঝতে যথেষ্ট অসুবিধা হচ্ছে কোনটা ইসলাম কোনটা ইসলাম নয়। কোনটা ব্যাখ্যা ও কোনটা অপব্যাখ্যা তাও ধরা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। কী ভয়ঙ্কর ব্যাপার! আলেম ওলামা ও ইসলামিস্টদের মধ্যে হট্টগোল বাধানোর জন্য একই ধরনের লেবাস ও একই ধরনের জীবনাচরণ বাহ্যিকভাবে প্রদর্শনের মাধ্যমে চেষ্টা করে চলছে অনবরত অদৃশ্য এক ভয়ানক দানব। সালাহ উদ্দিন আইয়্যুবির শাসনামলে খ্রিষ্টানরা মুসলমানদের নিধনে ক্রুসেড ঘোষণা করেছিল। ইতিহাস থেকে জানা যায় যে সে সময় মুসলমানদের হৃদয় থেকে জিহাদের চেতনা মুছে দেয়ার জন্য খ্রিষ্টানরা মসজিদগুলোতে পরিকল্পিতভাবে আলেমবেশী খ্রিষ্টান ব্যক্তিদের ইমাম হিসেবে নিয়োগের ব্যবস্থা করতেন। তারা জিহাদের অপব্যাখ্যা দিতেন। যাতে মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে খলিফার কথা আমলে নিত না। একটু ভাবলে গা শিউরে ওঠে, মুসলমান না হয়ে মুসলমানের ইমামতি! এ ভাবেই ইসলামের মোড়কে ইসলামের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার চলছে অহরহ। ইসলামকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা দিয়ে ইসলামের অনুসারীদের মধ্যে চিন্তার অনৈক্য সৃষ্টি করা। ফরজ বড়, না ওয়াজিব বড় না সুন্নত বড়? নবীর অনুসরণ করব না আউলিয়ার অনুসরণ করব? মুসলমানদের মনে সৃষ্টি করা হয় চরম দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, নবী নুরের তৈরি না মাটির তৈরী? আল্লাহ রাসূল (সা:) গায়েব জানেন, না গায়েব জানেন না?” যারা দ্বীন নিয়ে চিন্তা ও গবেষণা করেন তারাই কেবল বুঝতে পারেন কোনটা আসল ও কোনটা মেকি। ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্যসন্ত্রাস : বর্তমান সময়ে দ্বীনের বিরুদ্বে অপপ্রচারের অত্যাধুনিক অস্ত্র ইন্টারনেট। এটি পারমাণবিক বোমার চেয়েও ভয়াবহ। একদিকে বিশ্বের জ্ঞান বিজ্ঞান হাতের মুঠোয় পাওয়ার জন্য জ্ঞান পিপাসুদের জন্য ইন্টারনেট অত্যন্ত জরুরি আবার কারো বিরুদ্ধে অপপ্রচার, ব্লেক মেইলং করার জন্য মারাত্মক উপাদান। এ সুযোগকে অপব্যবহার করে ইসলামের স্বরূপ বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে ইসলামের বিরেুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে ইসলামবিদ্বেষীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যাম ফেসবুক, টুইটার, ব্লগ, ইউটিউব, কণ্ঠ স্পাম্প, লেখার আগের অংশ কেটে পরের অংশ প্রচার বা পরের অংশ কেটে আগের অংশ একই কায়দায় ব্যক্তবের আগের অংশ কেটে পরের অংশ অথবা পরের অংশ কেটে বিভ্রান্তিকর প্রচার। একজনের ছবি ফটোশপ করে আরেকজনের নামে মিথ্যাচার। এ সব মিথ্যাচার বিদ্যুৎ বেগে ছড়িয়ে পড়ে। ভুক্তভোগী পক্ষকে এ অপপ্রচারের জবাব দিয়ে আগের অবস্থানে ফিরে আসার জন্য যথেষ্ট কাঠখড় পোড়াতে হয়। সম্প্রতিকালে আমাদের দেশেও ইসলামীবিদ্বেষী চক্র উল্লেখিত মাধ্যমগুলো কাজে লাগিয়ে তরুণ তরুণীদেরকে বিভ্রান্ত করছে। তাদের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে ইসলাম মানে জঙ্গিবাদ, ঋধহধঃরপবং, মৌলবাদ, সন্ত্রাস, পাশ্চাৎপদ, অ-আধুনিক, নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাসী নয়, ইসলাম অনুসরণকারী বা ইসলামী সংগঠনের নেত্বের চরিত্র হনন ইত্যাদি।    (চলবে) লেখক : সেক্রেটারি জেনারেল, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির [email protected]

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির