post

মুসলিম অনৈক্যের ফল সোলাইমানি হত্যাকাণ্ড

হারুন ইবনে শাহাদাত

১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

মুসলমানদের অনৈক্যের কারণে মধ্যপ্রাচ্য জ্বলছে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে। কখনো তুষের আগুনের মতো ধিকিধিকি জ্বলছে। কখনো সেই আগুন অগ্নিগিরি বিস্ফোরিত লাভার মতো ছড়িয়ে পড়ছে। তাই সেখানে নতুন কোন ঘটনা ঘটলে বলা হয়, সাঁতারের ওপর পানি কী? অর্থাৎ যিনি সাঁতার কাটছেন, তাকে পানি বাড়ার (বন্যার) ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। কিন্তু এ নিয়ে কোন বিতর্ক নেই এই অভয় কোনো সমাধান নয়। বরং ঘরে প্রবেশ করে বাইরের শত্রুর কাসেম সোলাইমানির মতো জেনারেলদের হত্যার সাহস বাড়াচ্ছে। অপরদিকে দীর্ঘায়িত করছে মুসলমানদের যুদ্ধের মাঝে বসবাসের অনিশ্চিত জীবন। ইরানের আল কুদস বাহিনীর প্রধান জেনারেল কাসেম সোলাইমানির মার্কিন হামলায় গত ৩ জানুয়ারি নিহত হওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের দামামা বাজবে অনেক বিশ্লেষক এমন ভয় দেখাচ্ছেন। অথচ সেখানে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ চলছে, মধ্যপ্রাচ্যের সমৃদ্ধ দেশ ইরাক জ্বলে ছারখার হয়েছে অনেক আগেই তারপরও আগুন নিভেনি। ফিলিস্তিন, সিরিয়া, ইমেয়েমেন, লিবিয়া, জর্ডান ও লেবানন জ্বলছে। গোটা মধ্যপ্রাচ্যজুড়েই চলছে চরম উত্তেজনা। উল্লিখিত প্রতিটি দেশই শাসন করেছেন, মুসলমান শাসকরা। এসব দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণও মুসলমান। তারপরও হাজার হাজার মাইল দূরের দেশ আমেরিকা ইচ্ছেমতো ঘুঁটির চাল চালছে এবং বাজিমাত করছে। রাষ্ট্রহীন জাতি ইহুদিরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ফিলিস্তিনে সমবেত হয়ে তাদের ‘পবিত্র’ রাষ্ট্র ইসরাইল গড়ার নামে একের পর এক ভূ-খণ্ড দখল করছে, অথচ মুসলিম শাসকরা শত ভাগে বিভক্ত হয়ে একজন আরেক জনের বিরুদ্ধে লেগে আছেন। আমেরিকা শিয়া-সুন্নির দ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার নীতির বাস্তবায়ন করছে। ইরানের ভয় দেখিয়ে সৌদি আরব ও তার মিত্রদের সহযোগিতায় সামরিক ঘাঁটি করে মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া ইসরাইলকে রক্ষা করছে। তারা ভালো করেই জানেন, ইরান সৌদি আরবের দ্বন্দ্ব মিটে গেলে আমেরিকার মধ্যপ্রাচ্য আগ্রাসন বন্ধ হবে। সাথে সাথে আগ্রাসী থাবা বিস্তার বন্ধ করতে বাধ্য হবে ‘জারজ রাষ্ট্র’ ইসরাইল। তাই যারা ভাবছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে জেনারেল কাসেম সোলাইমানি হত্যার কারণে ইরানের সাথে আমেরিকার চূড়ান্ত লড়াই হবে, তারপর এই ইঁদুর-বিড়াল খেলা বন্ধ হবে সে আশায় গুড়ে বালি। কারণ এমন কোনো সম্ভাবনা আপাতত দেখা যাচ্ছে না। ইতোমধ্যেই আমেরিকা বিনা শর্তে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে। ইরান মিসালই হামলা করলেও খুব ভালো অবস্থানে আছে ভাবার কারণ নেই। ইউক্রেনের যাত্রীবাহী বিমান ইরানের মিসাইলের আঘাতে ধ্বংস এবং ১৭৬ জন নিরীহ মানুষের সংহার প্রমাণ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পাগল বললেও ইরানি জেনারেলদের মস্তিষ্কের অবস্থাও খুব একটা উন্নত নয়। কাসেম সোলাইমানির শোকযাত্রা ও নামাজে জানাজায় পদদলিত হয়ে ৫৬ জনের নিহত হওয়ার খবরও কোনো শৃঙ্খলার বার্তা নয়। বাস্তবতাবর্জিত হয়ে শুধু আবেগের বশে যুদ্ধ জয় করা যায় না। সিরিয়ার মতো একটি সমৃদ্ধ দেশ বাশার আল আসাদের স্বৈরাচারী অগণতান্ত্রিক শাসনে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। তার স্বৈরাচারী শাসন থেকে মুক্তির জন্য সে দেশের বিরোধী দল ও সাধারণ মানুষ হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছে। নিরপেক্ষ গণভোট নির্বাসিত। কারণ ইরান জানে সিরিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ সুন্নি, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আসাদের শিয়াপন্থী সরকার টিকবে না। তাই নিরপেক্ষ ভোটের দাবিকে দমিয়ে রাখা হয়েছে জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ক্ষমতা ধরে রাখতে ইরানের সহযোগিতায় আসাদ হাজার হাজার নিরীহ নাগরিককে হত্যা করছেন। কাসেম সোলাইমানির বাহিনীর নাম আল কুদস ফোর্স। ইরানের দাবি এই বাহিনী গঠনের উদ্দেশ্য পবিত্র মসজিদ বায়তুল মোকাদ্দাসকে ইহুদিদের হাত থেকে রক্ষা করা। কিন্তু এই বাহিনীর মিলিশিয়াদের হাতে ইসরাইল কিংবা ইহুদিদের চেয়ে মুসলমানরাই বেশি নিহত হয়েছে। সিরিয়া, ইয়েমেন, জর্ডান, লেবাননের মুসলমানরাই বেশি ঘর-বাড়ি হারিয়ে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। ইরানে বিপ্লব টিকিয়ে রাখার নামে সেখানকার ভিন্নমত প্রকাশকারীদের খুন ও গুমের সাথেও এই বাহিনীর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আছে। তাই বলতেই হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য সঙ্কটের এই অঙ্ক অতি জটিল এবং পুরনো, বলা যায় ধর্মীয় আবরণে জন্ম নেয়া রাজনৈতিক মতবাদ শিয়াইজমের জন্মের পর পরই এই সঙ্কটের সৃষ্টি। তাই এই সঙ্কট সমাধান মুসলমান নেতাদেরকেই করতে হবে। ইসলামের মূল বিশ্বাসের বাইরে ছোটখাটো মতপাথর্ক্য দূষণীয় নয়। কিন্তু এই মতপার্থক্যকে পুঁজি করে যুদ্ধ, সংঘাত, ভাইয়ের রক্তে ভাইয়ের হাত রাঙানো এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্য নষ্ট করা নিঃসন্দেহে অনেক বড় অপরাধ। এই অপরাধের দায় যাদের যত বাড়বে তারা তত বেশি সঙ্কটের জালে আটকাতে থাকবে দায় শোধের প্রতিশোধ চক্রের কারণেই। এমন এক চক্রের বলি হয়েছেন কাসেম সোলাইমানি।

কাসেম সোলাইমানির পরিচয় ও উত্থান গার্ডিয়ান, এএফপির সূত্রে জানায়, জেনারেল কাসেম সুলাইমানি নির্মাণশ্রমিক হিসেবে জীবন শুরু করেছিলেন। তার জন্ম পশ্চিম ইরানের র‌্যাবোর্ড গ্রামে একটি দরিদ্র কৃষক পরিবারে। বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা পাঁচ বছরেই শেষ করেন। এরপর ১০০ ডলারের মতো পারিবারিক কৃষিঋণ শোধ করতে ১৩ বছর বয়সে তিনি কেরমানে চলে যান। সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডে নির্মাণশ্রমিকের চাকরি নেন তিনি। কৃষিকাজও করেছেন বহু দিন। অবসর সময়ে কুলির কাজ করতেন আর ধর্মপ্রচারক হুজ্জাত কামিয়াবের ওয়াজ শুনতেন। ইরানের শীর্ষ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির অনুগ্রহভাজন হুজ্জাতের বক্তৃতাই সোলাইমানিকে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে যোগ দিতে উৎসাহিত করেছে। শাহ শাসনের পতনের পর তিনি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর একটি ইউনিটে যোগ দেন। নতুন সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থান ঠেকাতেই এই বাহিনী গঠন করা হয়েছিল। দুই মাসের একটি ক্যাম্পে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। জীবনের নতুন ভূমিকায় কুর্দিশ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনে তাকে উত্তর পশ্চিমে পাঠানো হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৮০-৮৮ সালের ইরান-ইরাক যুদ্ধে অংশ নেন কাসেমি। এরপর দ্রুতই পদোন্নতি পেয়ে কুদস ফোর্সের কমান্ডার হন সোলাইমানি। ইরানে তিনি ছিলেন একজন সেলিব্রেটির মতো। ইনস্টাগ্রামে তার বিপুল অনুসারী রয়েছে। যুদ্ধের হিসাব ঘনিষ্ঠভাবে জানা ছিল তার। ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময় অধিকাংশ বড় সামরিক অভিযানে তিনি জড়িত ছিলেন। অন্যান্য কমান্ডারের মতোই বহু লোক হারাতে হয়েছে তাকে। লড়াইয়ে নিহত হওয়া সেনা ও তাদের পরিবারের প্রতি তিনি সবসময় মনোযোগী ছিলেন। কিন্তু যুদ্ধের ক্ষেত্রের সাধ কখনো মেটেনি তার। যেটাকে তিনি মানবজাতির হারানো বেহেস্ত (ম্যানকাইন্ডস লস্ট প্যারাডাইস) বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। ইরাক-ইরান যুদ্ধ শেষ হলে মাদক পাচারবিরোধী লড়াইয়ে মনোযোগী হন এই জেনারেল। এতে তার সফলতা ১৯৯০ এর দশকে নতুন পদোন্নতিতে সহায়তা করে তাকে। এরপর আল-কুদস ফোর্সের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় সোলাইমানিকে। জেরুজালেম শহরের নিয়ন্ত্রণ নিতেই এই বাহিনী গঠন করা হয়েছিল। বিদেশে ইরানের প্রভাব বিস্তারে কুদস ফোর্স সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে কাজ করলেও নিজ দেশে তার ব্যাপক প্রভাব ছিল। তার সফলতাই তাকে খামেনির নজরে নিয়ে আসে। থিংকট্যাংক সেঞ্চুরি ফাউন্ডেশনের গবেষক দিনা ইসফান্দিয়ারি বলেন, প্রেসিডেন্টের চেয়েও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন। ইরানের সব দল-উপদলের সঙ্গে তিনি কথা বলতেন। শীর্ষ ধর্মীয় নেতার সঙ্গে তার সরাসরি যোগাযোগ ছিল। আর ইরানের আঞ্চলিক নীতির দায়িত্বে ছিলেন। এরপর নিরাপত্তা বাহিনীর ছায়ার জগৎ থেকে প্রকাশ্য জনপ্রিয় ব্যক্তিতে পরিণত হন সোলাইমানি। তাকে দেশপ্রেমিক ও ধার্মিক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। সম্প্রতি যুদ্ধক্ষেত্রে সেনাদের সঙ্গে সেলফির অনুরাগী হয়ে পড়েছিলেন তিনি। এতে তার প্রেসিডেন্ট হওয়ার উচ্চাভিলাষ আলোচনায় চলে আসে। তবে এমন আকাঙ্ক্ষার কথা সবসময়ই অস্বীকার করে আসছিলেন এই জেনারেল। মানুষের কাছে সোলাইমানি ছিলেন যোদ্ধা, দার্শনিক ও পরম ধার্মিক ব্যক্তি। কিন্তু যুদ্ধের মাঠে ছিলেন চরম বাস্তববাদী। সেই সোলাইমানিকেই কঠিন পরিণতির মুখোমুখি হতে হলো। চলতি সপ্তাহে মার্কিন গুপ্তহত্যায় নিহত হন ইরানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনপ্রিয় ব্যক্তি মেজর জেনারেল কাসেম সোলাইমানি। আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি বিপ্লবী গার্ডস বাহিনীর কমান্ডার ও আল-কুদস ফোর্সের প্রধান ছিলেন। কিন্তু অনানুষ্ঠানিকভাবে তিনি মধ্যপ্রাচ্যের মিত্র রাজনীতিবিদ ও বিশাল ছায়া মিলিশিয়া বাহিনীরও নেতা ছিলেন। ইরাকের বাগদাদ বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে আসার সময় তার ওপর ড্রোন হামলা চালায় মার্কিন বিমান বাহিনী। প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন ক্ষমতাচ্যুত ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার পর ইরাককে তার মতো করে কেউ নতুন আকার দিতে পারেনি। দেশটিতে তিনি সরকার গঠন ও নীতিনির্ধারণ করেছেন। মার্কিন বাহিনীকে দুর্বল করে দিতে কয়েক বছর ধরে হামলার অভিযোগও করা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে। এক দশক আগে ইরাকে সদ্যনিযুক্ত মার্কিন কমান্ডারকে একটি বার্তা পাঠিয়ে বলেছিলেন, প্রিয় জেনারেল (ড্যাভিড) পেট্রাউস, আপনার জানা উচিত যে ইরাক, লেবানন, গাজা ও আফগানিস্তান সংশ্লিষ্ট ইরানের নীতি আমি নিয়ন্ত্রণ করি। তখন সিরিয়া এই তালিকায় ছিল না। কিন্তু কয়েক বছর পরে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে একজন গোয়েন্দা প্রধানের ছায়া থেকে বৈশ্বিক আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসেন তিনি। প্রেসিডেন্ট বাসার আল-আসাদকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে তার ভূমিকার জন্যই এমনটি ঘটেছে। নিঃসন্দেহে তিনি একজন যোগ্য জেনারেল ছিলেন। কিন্তু মুসলিম উম্মাহকে সংগঠিত করে এক বৃত্তে এনে তার প্রতিভাকে কাজে লাগানোর সুযোগ তিনি পাননি। সংকীর্ণ রাজনৈতিক বিভাজন তাকে সেই সুযোগ দেয়নি। শিয়া-সুন্নির রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে পবিত্র আল কুদস মুক্ত করার পথে পা বাড়ানোর চেয়ে তিনি স্বৈরাচারী আসাদ সরকারের মতো স্বৈরশাসকদের রক্ষায় মুসলমানের নিধনেই বেশি ব্যস্ত থেকেছেন। তাদের এই প্রতিক্রিয়াকে পুঁজি করে আমেরিকা এক দল বিভ্রান্তের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে আল কায়েদা, আইএসএসের মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তৈরি করে বিশ্ববাসীর কাছে মুসলমানদেরকে জঙ্গি বলে পরিচিত করে ইসলাম-ফোবিয়া ছড়িয়ে দেয়ার সুযোগ পেয়েছে।

যুদ্ধ হয় সমানে সমানে অতর্কিতে হামলা চালিয়ে কোন কমান্ডারকে গুপ্তহত্যার নাম যুদ্ধ নয়। কিংবা কারো সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা কিংবা বেসামরিক বিমান ভূপাতিত করাও কোনো যুদ্ধ নয়। সমানে সমানে না হলে যুদ্ধ না। যুদ্ধে কোন পক্ষ জিততেও পারে না। শুধু কিছু ক্ষত-সৃষ্টি করতে পারে। আমেরিকা এমন একটি দেশ যারা যুদ্ধ করে শত্রুর ঘরে গিয়ে, কিন্তু সে তার শত্রুকে বাড়ির আশপাশেও ঘেঁষতে দেয় না। তাই তার অস্ত্র ক্ষয় সৈন্য ক্ষয় হলেও পরাজয়ের ক্ষতচিহ্ন কিংবা গ্লানি তাদেরকে স্পর্শ করে না। ইরাকের বাগদাদ বিমানবন্দরে জেনারেল কাসেম সোলাইমানি নিহত হওয়ার পর প্রতিশোধের অংশ হিসেবে ইরাকে অবস্থিত দুইটি মার্কিন বিমান ঘাঁটিতে ১২টির বেশি ব্যালিস্টিক মিসাইল হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দফতর। পেন্টাগন জানিয়েছে, ইরবিল ও আল-আসাদ বিমান ঘাঁটিতে মিসাইল হামলা হয়েছে। ইরান থেকেই মিসাইলগুলো নিক্ষেপ করা হয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলা হয়েছে, দেশটির শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে ড্রোন হামলায় হত্যার জবাব হিসাবে এই হামলা করা হয়েছে। তারা এই অভিযানের নাম দিয়েছে ‘অপারেশন শহীদ সোলাইমানি’। ইরানের স্থানীয় সময় রাত দেড়টার দিকে (বাংলাদেশ সময় ভোর সাড়ে চারটা) এই হামলা শুরু হয়। ইরাকের সেনাবাহিনী বলছে, ইরান থেকে ২২টি মিসাইল ছোড়া হয়েছিল। আল আসাদ ঘাঁটিতে ১৭টি মিসাইল হামলা চালানো হয়। এর মধ্যে দু’টি মিসাইল বিস্ফোরিত হয়নি। তবে ইরবিলে যে পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে তার সবগুলো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে। ইরানের দাবি তাদের আক্রমণ সফল হয়েছে, অন্তত ৮০ জন মার্কিন সেনা নিহত এবং ৩ শ’ জন আহত হয়েছ্।ে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কায় মধ্যপ্রাচ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আর এই উত্তেজনা নিরসনে জরুরি বৈঠক ডেকেছে সৌদি আরব। আগামী ৩০ মে মক্কায় ওই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানে সামরিক শক্তি কোনো ধরনের বিতর্ক ছাড়াই বিশ্বে সামরিক শক্তিতে শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র। জলে, স্থলে, আকাশে মার্কিনিদের টেক্কা দিতে পারার মতো সক্ষমতা এখন পর্যন্ত কোনো দেশেরই নেই। এর কারণও আছে। মার্কিনিরা তাদের সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিশাল এক বাজেট রাখে, যার পরিমাণ ৭১৬ বিলিয়ন ডলার। তবে নিজ দেশ থেকে বহুদূরে গিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের মুখোমুখি হতে হলে দেশটিকে বেশ বেগ পেতে হবে। অন্য দিকে সামরিক শক্তিতে ইরানের অবস্থান ১৪তম। মধ্যপ্রাচ্যে দেশটির অবস্থান খুবই শক্ত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোকে এক হাত নেয়ার ক্ষমতা আছে ইরানের। ইরানের ডিফেন্স বাজেট ৬৩০ কোটি ডলার। সেনাবাহিনী যুক্তরাষ্ট্র : মার্কিন সেনাবাহিনীতে সক্রিয় সেনা সদস্যের সংখ্যা ১২ লাখ ৮১ হাজার ৯০০ জন। এ ছাড়া সংরক্ষিত রয়েছে আরও ৮ লাখ ১১ হাজার জন। সেনাবাহিনীতে ট্যাংক রয়েছে ৬ হাজার ৩৯৩টি। সাঁজোয়া যানের (আর্মরড ফাইটিং ভেহিকল) সংখ্যা ৪১ হাজার ৭৬০টি। সেনাসদস্যের ব্যবহারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কামান রয়েছে ৩ হাজার ২৬৯টি। পাশাপাশি ৯৫০টি স্বয়ংক্রিয় কামান (সেলফ প্রপেলড আর্টিলারি) ও ১ হাজার ১৯৭টি রকেটচালিত কামান (রকেট আর্টিলারি) রয়েছে। ইরান: ইরানের বর্তমান সক্রিয় সেনাসদস্য ৫ লাখ ২৩ হাজার। এ ছাড়া সংরক্ষিত সদস্য রয়েছে ৩ লাখ ৫০ হাজার জন। দেশটির ট্যাংকের সংখ্যা ১ হাজার ৬৩৪টি। সাঁজোয়া যানের (আর্মরড ফাইটিং ভেহিকল) সংখ্যা ২ হাজার ৩৪৫টি। সেনা সদস্যের ব্যবহারের জন্য কামান (টোয়েড আর্টিলারি) রয়েছে ২ হাজার ১২৮টি। পাশাপাশি ৫৭০টি স্বয়ংক্রিয় কামান (সেলফ প্রপেলড আর্টিলারি) ও ১ হাজার ৯০০টি রকেটচালিত কামান (রকেট আর্টিলারি) রয়েছে। বিমানবাহিনী যুক্তরাষ্ট্র : যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীর ক্ষমতা বিশ্বে প্রথম স্থানে। দেশটির বিমানবাহিনীর মোট আকাশযানের সংখ্যা ১৩ হাজার ৩০৪টি। এর মধ্যে রয়েছে-ফাইটার বিমান ২ হাজার ৩৬২টি, অ্যাটাক বিমান ২ হাজার ৮৩১টি, হেলিকপ্টার ৫ হাজার ৭৬০টি ও অ্যাটাক হেলিকপ্টার রয়েছে ৯৭১টি। যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমানগুলোর মধ্যে রয়েছে বিশ্বের সেরা স্টেলথ ফাইটার (রাডারে ধরা না পড়ে আক্রমণ করতে সক্ষম) এফ-২২ ও এফ ৩৬। পাশাপাশি প্রশিক্ষণ ও পরিবহনের জন্য উড়োজাহাজ রয়েছে বাহিনীটির। ইরান: ইরানের বিমানবাহিনীর মোট আকাশযানের সংখ্যা ৫০৯টি। এর মধ্যে রয়েছে-ফাইটার বিমান ১৪২টি, অ্যাটাক বিমান ১৬৫টি, হেলিকপ্টার ১২৬টি ও অ্যাটাক হেলিকপ্টার ১২টি। পাশাপাশি প্রশিক্ষণের জন্য ১০৪টি ও পরিবহনের জন্য ৯৮টি উড়োজাহাজ রয়েছে বাহিনীটির। ইরানের হাতে এখন পর্যন্ত স্বীকৃত কোনো স্টেলথ ফাইটার বিমান নেই। নৌবাহিনী যুক্তরাষ্ট্র : যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীতে মোট যানের সংখ্যা ৪১৫টি। এর মধ্যে এয়ার ক্রাফট ক্যারিয়ার রয়েছে ২৪টি, ফ্রিগেট রয়েছে ২২টি, ডেস্ট্রয়ার রয়েছে ৬৮টি, করভেট রয়েছে ১৫টি ও সাবমেরিন রয়েছে ৬৮টি। এ ছাড়া পেট্রোল বোট ১৩টি ও মাইন ওয়্যাফেয়ার রয়েছে ১১টি। ইরান: ইরানের নৌবাহিনীতে এখন পর্যন্ত যোগ হয়নি কোনো এয়ার ক্রাফট ক্যারিয়ার। বাহিনীটিতে ফ্রিগেট রয়েছে ছয়টি, করভেট রয়েছে তিনটি এবং সাবমেরিন রয়েছে ৩৪টি। নেই কোনো ডেস্ট্রয়ার। তবে ইরানের ৮৮টি পেট্রোলবোট ও তিনটি মাইন ওয়্যাফেয়ার রয়েছে।

পেছন ফিরে দেখা: ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এই যুদ্ধ-যুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি ২০১৫ সালের একটি পারমাণবিক চুক্তিকে কেন্দ্র করে। সে বছর ইরান বিশ্বের ছয়টি পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তিটি করে। ঐ চুক্তির পর ইরান সংবেদনশীল পরমাণু কর্মকাণ্ড সীমিত করতে রাজি হয়। বিনিময়ে দেশটির বিরুদ্ধে আনা অর্থনৈতিক অবরোধ তুলে নেয়ার শর্ত দেওয়া হয়। পাশাপাশি ইরান আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের পরমাণু কর্মকাণ্ড পরিদর্শনে অনুমতি দেয়। তবে ওই চুক্তি লঙ্ঘন করে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে সক্ষম ইরান ইউরেনিয়াম উৎপাদন করছে এমন অভিযোগ এনে গত বছর চুক্তি থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি দেশটির ওপর অর্থনৈতিক বিধিনিষেধ আরোপ করে। চলতি মাসে ইরানও পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। এর পর থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে শুরু হয় যুদ্ধের উত্তেজনা। পারমাণবিক শক্তির তুলনা: যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক ক্ষমতাধর দেশ হলেও এখন পর্যন্ত ইরানের বোমা নেই বলে ধারণা করা হয়। মার্কিনিদের হাতে ৭ হাজার ২০০টি পারমাণবিক বোমা রয়েছে। তাই পারমাণবিক শক্তির দিক দিয়ে বেশ এগিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধ করার ক্ষমতা হ্রাস ইরানের নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতেই বিমান ধ্বংস হয়ে ১৭৬ জন যাত্রীর সবাই প্রাণ হারিয়েছেন। ইরান তিন দিন পরে এ কথা স্বীকার করে এই ঘটনাকে অমার্জনীয় ভুল বলেছে। ইরানের পক্ষ থেকে এই দায় স্বীকার এবং দায়ীদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের ভাবমর্যাদা বাড়িয়েছে। সত্যের মুখামুখি হওয়ার এই সাহসকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। সত্য স্বীকার করার পর পরই ইরানিরা ছাড়াও ছিলেন কানাডা, জার্মানি, আফগানিস্তানসহ অন্যান্য দেশের নাগরিকদের মধ্যে কিছুটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে এ কথা সত্য। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের এই স্বীকারোক্তি এবং সোলাইমানিকে হত্যার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্বেই নিন্দিত হয়েছে বেশী। বৈশ্বিকভাবে ইরানের প্রতি সহানুভূতির মাত্রা বেড়েছে। সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও সিএনএন’র সূত্রে প্রকাশ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধ করার ক্ষমতা হ্রাস সংক্রান্ত বিল পাস করেছে দেশটির প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যরা। ট্রাম্প যাতে ইরানের বিরুদ্ধে নতুন করে আর কোনো সামরিক পদক্ষেপ নিতে না পারেন সেজন্য এই বিল নিয়ে আসা হয়। ৯ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদে এই বিল পাস করে। এ সময় ট্রাম্পের যুদ্ধ-ক্ষমতা কমানোর এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছেন ২২৪ সদস্য, বিপক্ষে পড়েছে ১৯৪টি। তবে ডেমোক্র্যাটিক নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকানরা এই ভোটের বিরোধিতা করেন।

আঞ্চলিক স্থিতিশলতা নষ্টে অর্থ ব্যয় ইরানের জনগণও চায় না ইরান ধর্মীয় আবরণে রাজনৈতিক মতবাদ শিয়াইজমের বিস্তারে মিলিশিয়াদের পিছনে কোটি কোটি অর্থ ব্যয় করছে। দেশের জনগণ সরকারের এই নীতির বিরোধী। তারা চায় না, তাদের সরকারের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাদ দিয়ে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের নামে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নষ্টে নিয়োজিত মিলিশিয়াদের জন্য অর্থ ব্যয় করুক। যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর আলী রীয়াজ মনে করেন,‘ ইরানের অর্থনৈতিক সংকটের একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে ২০১৮ সালের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা। এটি অন্যতম কারণ, কিন্তু একমাত্র কারণ নয়। অন্তত ইরানি নাগরিকদের একাংশ তা মনে করে না। তারা মনে করে, ইরানের অর্থনৈতিক সংকটের পেছনে আছে দুর্নীতি এবং ক্ষমতাসীনদের অব্যবস্থাপনা। যেমন দেশের অর্থনীতির ৬০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে রাজাভি ইকোনমিক ফাউন্ডেশন। আর তার ওপরে নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড বাহিনী এবং গোয়েন্দা মন্ত্রণালয়ের। যেহেতু এই ফাউন্ডেশনের প্রধান হচ্ছেন আলী খামেনি, সেহেতু এই ফাউন্ডেশন কারও কাছে জবাবদিহি করে না, তারা করও দেয় না। ইতোমধ্যে তেলের উৎপাদন কমেছে। ২৮ লাখ ব্যারেল থেকে নেমে এসেছে ৫ লাখ ব্যারেলে। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। ইরানি মুদ্রার দাম কমেছে প্রায় ৬০ শতাংশ। ২০১৮ সালের মাঝামাঝি থেকে ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির কোনো তথ্য প্রকাশ করে না। আইএমএফের হিসাবে অর্থনীতি সঙ্কটে আছে। এমনও শোনা যায় যে অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার বড় শহর থেকে ছোট শহরে বা গ্রামে চলে যাচ্ছে ব্যয় সংকোচনের জন্য। গত বছরের নভেম্বরে আন্দোলনের সময় বিক্ষোভকারীরা বলেছিলেন যে তারা চান না দেশের ভেতরে এই অর্থনৈতিক সঙ্কটের সময়ে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড বাহিনী এই অঞ্চলের অন্য দেশের মিলিশিয়াদের অর্থ জোগাক। এই ধরনের বক্তব্যের কারণেই আন্দোলনের শেষ দিকটাতে রেভল্যুশনারি গার্ডের সদস্যরা, বিশেষ করে বাসজি মিলিশিয়ার সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের ওপরে হামলা চালায় এবং বিক্ষোভকারীদের অনেকেই নিহত হন। তা সত্ত্বেও আন্দোলন ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। কিন্তু সোলাইমানি হত্যাকাণ্ডের পরে অবস্থার বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে যায়। ট্রাম্পের আগ্রাসী ভূমিকা এবং সোলাইমানির হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ইরানের ভেতরে নাগরিকরা আন্দোলন করেছিলেন তাদের নিজস্ব শক্তিতে গড়ে ওঠা সেই আন্দোলন প্রায় পর্যুদস্ত হয়েছিল।’

এই খেলার শেষ হবে কবে ঘটনাপ্রবাহে ইরানে আবারও বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। বিক্ষোভ দমন করতে বিপ্লব রক্ষার নামে দমন-পীড়ন চলবে। নিরীহ মুসলমানদের রক্তে আবারও মুসলমান শাসকদের হাত রঙিন হবে। সেই রক্ত শিয়া না সুন্নির তারচেয়ে বড় কথা মুসলমানের। শুধুই মুসলমানের এই সত্য যত দিন না মধ্যপ্রাচ্যসহ গোটা মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রনায়করা উপলব্ধি করতে পারবেন, তত দিন এই সমস্যার সমাধান হবে না। আমেরিকা কিংবা ইসরাইলের আগ্রাসন থেকেও মুক্তি মিলবে না। লেখক : কথাসাহিত্যিক ও সিনিয়র সাংবাদিক

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির