post

শিশু হত্যার মহোৎসব মানবিক অবক্ষয়ের প্রস্রবণ

মুহাম্মদ আবদুল জব্বার

০৭ এপ্রিল ২০১৬
বিষাদসিন্ধু কাব্যগ্রন্থ লেখক সুসাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন তাঁর কাব্যগ্রন্থে পাষন্ড সীমারের ইমাম হোসেনকে হত্যার উদ্দেশ্য অর্থ লোলুপতার কথা বলে তিনি অর্থকে অনর্থ বলে আখ্যা দিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে শিশুহত্যার মহোৎসব অবলোকন করে মনে হচ্ছে কারও কারও জীবনটাই অনর্থ। যেখানে মানুষের দানবিকতার কাছে মানবিকতাকে হার মানতে হচ্ছে। নাড়িছেঁড়া রক্তের বন্ধনকে মুহূর্তে ছিঁড়ে তছনছ করে দিচ্ছেন মা অথবা জন্মদাতা পিতা। আদরের সন্তান হঠাৎ ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে তৈরি হচ্ছে নাম না জানা অগণিত ঐশী রহমান! লাজ-শরমকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্বাধীনতার নামে মাদকাসক্ততা, পরকীয়া অথবা লিভটুগেদার ক্যান্সার মহামারীর আকার ধারণ করছে সর্বত্র। এই নীরব ঘাতক কুরে কুরে সমাজ সংসারের সৌন্দর্যকে ছিঁড়ে চৌচির করে ফেলছে। যার প্রস্রবণে মাঠে-ঘাটে নদী-নালায় ডাস্টবিনে যত্রতত্র নবজাতকের অর্ধমৃত অথবা মৃত লাশের দেখা মিলছে! হায়রে মানবিকতা, হায়রে বিবেক! শুধু বস্তুবাদের চরম উৎকর্ষতা মানুষকে মানুষ করতে পারে না এসব ঘটমান প্রতিটি ঘটনাই তার জ্বলন্ত নজির। মানুষকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে, বিবেকবোধকে জাগ্রত করতে যত আয়োজন প্রয়োজন এর চেয়ে মানুষকে অমানুষ হিসেবে গড়তেই এখন বেশি আয়োজন প্রস্তুত। তাই মানুষ মনুষ্যত্ব হারিয়ে বিকারগ্রস্ত হয়ে পৃথিবীটাকে বসবাসের অনুপযুক্ত করে তুলছে। মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করার প্রয়াসে সরকার বা সমাজের সুধীজনদের তেমন কোনো প্রয়াসও লক্ষণীয় নয়। এসব ঘটনা সংঘটনের মূল কারণ হচ্ছে নৈতিক অবক্ষয়। মানবতা অবক্ষয়ের অক্টোপাসে নিপতিত হওয়ার অনেক কার্যকারণও রয়েছে, যদি এসব ছিদ্র বন্ধ করা না যায় তাহলে হয়তোবা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য পরিণতি হতে পারে আরো ভয়াবহ। কুরআন ও হাদিসের ভাষ্যানুযায়ী, শিশুদের ক্ষয়ক্ষতি হয় এমন সব পরিস্থিতিতেও শিশুদের প্রতি যতœবান হওয়া জরুরি। যারা শিশুর নিরাপত্তা বিধানে অবহেলা করে তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা’য়ালা কঠোর ভাষায় বলেছেন, ‘যারা নিজেদের সন্তানদের হত্যা করেছে, অবশ্যই তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। (সূরা আনআম : আয়াত ১৪০) মহানবী (সা) ঘোষণা করেছেন, ‘তোমরা শিশুসন্তানদের স্নেহ করো, তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করো এবং সদাচরণ ও শিষ্টাচার শিক্ষা দাও।’ (তিরমিজি)। শিশুদের প্রতি দয়া-মায়া প্রদর্শন সম্পর্কে নবী করীম (সা) বলেছেন, ‘যে শিশুদের প্রতি দয়া করে না, তাকে দয়া করা হয় না।’ (বুখারি, মুসলিম ও তিরমিজি) রাসূল (সা) অন্যত্র ইরশাদ করেছেন, কোনো ব্যক্তির পাপী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার পোষ্যদের ক্ষতি সাধন করে। (আবু দাউদ, রিয়াদুস সালিহিন) দেশে শিশু নির্যাতনের ভয়াবহ খতিখান শিশু অধিকার ফোরামের তথ্যানুযায়ী, গত সাড়ে তিন বছরে বাংলাদেশে ৯৬৮টি শিশুকে নির্যাতন করা হয়েছে। সর্বাধিক উদ্বেগজনক ব্যাপার হলো, ২০১৪ সালে শিশুহত্যার হার আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৬১ শতাংশ বেশি। এ বছর হত্যার পাশাপাশি নৃশংসতাও বেড়েছে। বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে ২৬৭টি সংগঠনের মোর্চা, শিশু অধিকার ফোরামের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১২ সালে ২০৯টি, ২০১৩ সালে ২১৮টি, ২০১৪ সালে ৩৫০ শিশুকে হত্যা করা হয়। চলতি বছরে সাত মাসেই সংখ্যাটি দাঁড়িয়েছে ১৯১ জনে। মানবাধিকার সংগঠন, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের দেয়া তথ্যানুযায়ী, এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে ৬৯ জন শিশু হত্যার শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে গত জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত ১৩ জনকে নৃশংস কায়দায় হত্যা করা হয়েছে। ২০১২ সালে এ ধরনের হত্যাকান্ড ঘটেছে ১২৬টি, ২০১৩ সালে ১২৮টি, ২০১৪ সালে ১২৭টি। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের (বিএসএএফ) তথ্য মতে, ২০১২ সালে হত্যাকান্ডের শিকার হয় ২০৯ জন শিশু। এ সময় হত্যার চেষ্টা করা হয় কয়েকজনকে। আর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত হত্যা করা হয়েছে ১৯১ জন শিশুকে। এ সময় হত্যার চেষ্টা করা হয় আরো পাঁচ শিশুকে। ২০১৩ সালে হত্যা করা হয় ২১৮ জন শিশুকে। হত্যার চেষ্টা করা হয় ১৮ শিশুকে। ২০১৪ সালে দেশে ৩৫০ জন শিশু হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে। এ সময় আরো ১৩ শিশুকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত হত্যা করা হয়েছে ১৯১ জন শিশুকে। এ সময় হত্যার চেষ্টা করা হয় আরো ১১ শিশুকে। শিশু অধিকার ফোরামের তথ্যানুযায়ী, ২০১৩ সালের চেয়ে ২০১৪ সালে এসব ঘটনা বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। ২০১৪ সালে আগের বছরের চেয়ে শিশুমৃত্যু বেড়েছে ৭৭ শতাংশ। শিশু নির্যাতন বেড়েছে ১৪ শতাংশ। চলতি বছরে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিশুর ওপর সহিংসতার ঘটনা দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। ২০১৩ সালে এসব ঘটনা ঘটেছে এক হাজার ৩১৩টি, ২০১৪ সালে ঘটেছে দুই হাজার ১৯৭টি এবং ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঘটেছে চার হাজার ৬৭৭টি। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিশুধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৪০৪টি। ধর্ষণের চেষ্টা হয়েছে ৫০টি। শিশু হত্যাকান্ড হয়েছে ২৪৬টি। ২২ জন শিশুকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়। হত্যাকান্ডের শিকার শিশুদের মধ্যে ২১ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে ৩১ জনকে। সংগঠনটির তথ্যানুযায়ী, ২০১৪ সালে সারা দেশে ৩৬৬ শিশু নানাভাবে হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে। দেশের সর্বত্র শিশু নির্যাতন দিন দিন বেড়েই চলছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিনিয়ত শিশু নির্যাতনের খবর প্রকাশিত হচ্ছে, কোন আইন আদালত দিয়ে এহেন অপরাধের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। এর মধ্যে পরকীয়া, পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর অমিল ও মাদসকাসক্ততার কারণেই অধিকাংশ ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ উঠলেও নৈতিক শিক্ষার অভাবে এমন ঘটনা প্রতিনিয়ত বেড়ে যাচ্ছে বলে আমি মনে করি। কারণ নৈতিক শিক্ষাই কেবলমাত্র পরকীয়া, মাদকাসক্ততা, স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক অধিকার নিশ্চিত, শিশু নিরাপত্তা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের অধিকারকে নিশ্চিত করতে শিক্ষা প্রদান করে এবং এই নীতি ও বিশ্বাসের ওপর একটি সমাজ ও প্রজন্ম গড়ে ওঠে। আর এখন সেই নৈতিক শিক্ষার অভাবে মানুষ হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে নিজের নিষ্পাপ শিশুদেরও নিষ্ঠুরভাবে হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছে, যা বিবেকবান প্রতিটি মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। শিশুরা প্রতিটি ঘরের চাঁদের হাসি, এরা ঠিক নতুন গাছের চাড়ার মত, অতি নিষ্পাপ ও পবিত্র। এরা মা-বাবা ও স্বজনদের পরম ¯েœহে একটি বোধ ও বিশ্বাস নিয়ে বড় হতে থাকে। শিশুরা হাসি কান্নায় পুরো ঘর মাতিয়ে রাখে। দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনে যাদের কোলজুড়ে শিশু আসেনি তারাই কেবল বুঝে শিশুরা দম্পতির জন্য কত আকাক্সক্ষার! প্রকৃত সত্য এই যে, এরাই আমাদের আগামীর আগামী, এরাই আমাদের উত্তরাধিকারী। তাই কথায় বলে ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুদের অন্তরে। তাই তাদের নিরাপত্তা বিধান ও সুশিক্ষা প্রদান করা পিতা-মাতার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। যেখানে সুশিক্ষা নেই সেখানেই মানবিক অবক্ষয়। মানবিক অবক্ষয়ের কারণেই সমাজে অপ্রত্যাশিত ঘটনা প্রতিনিয়ত হু হু করে বেড়েই চলছে। দেশের নাগরিকদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সরকারে যে কর্তব্য, সমাজকে শান্তিনীড় রূপে তৈরি করতে সমাজপতিদের যে দায়িত্ববোধ, সন্তানকে সুসন্তান রূপে গড়ে তুলতে পিতা-মাতার যা করণীয় তা যথাযথভাবে পালন না করার ফলশ্রুতিতে সর্বত্র মানবিক দুর্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে। পিতা-মাতার কাছে সন্তান অনিরাপদ হয়ে উঠছে অথবা সন্তানের কাছে পিতা-মাতা অনিরাপদ! স্বামী-স্ত্রীর কাছে নিরাপদ নয় আবার স্ত্রী কখনো স্বামীর কাছে! কী ভয়ঙ্কর? কেউ কারো কাছে নিরাপদ নয়! এসবই সমাজের এখন নিত্যকার ঘটনাপ্রবাহ। ঘটমান অবক্ষয়কে মানবতার চরম দুর্যোগ বৈ কী বলা চলে? এমন অবক্ষয়ের অতলে দৃষ্টিপাত করলে বোঝা যায় যে ধর্মীয় শিক্ষার অভাবেই মানুষ দানবে রূপান্তরিত হচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকে শুধু সুশিক্ষা বলা যায় না, পারিবারিক শিক্ষাই সুশিক্ষার মূলভিত্তি। আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থায় শুধুমাত্র বৈষয়িক উন্নতি অগ্রগতির শিক্ষণ দেয়া হয়। মানবিক মূল্যবোধ ও বিবেককে বিকশিত করার কোনো পদক্ষেপ এখানে প্রতীয়মান নয়। ধর্মীয় শিক্ষা মানুষের মানবিক মূল্যবোধকে সমুন্নত করে, আর সেই শিক্ষার সূতিকাগার হচ্ছে আমাদের পরিবার। তাই জাগতিক শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয়া জরুরি। ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব দিয়ে বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেছেন,  ÒScience without religion is lame, Religion without science is blind.”” ধর্মীয় শিক্ষা যা মানুষের নৈতিক শিক্ষার মূল উপাদান। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় পাঠ্যবইয়ে ধর্ম বিষয়ে যৎসমান্য পাঠ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল তাও সংকোচিত করা হয়েছে। বিশ^ব্যাপী পুঁজিবাদীরা প্রতিনিয়ত ধর্মীয় শিক্ষাকে জাগতিক উন্নতির জন্য চরম বাধা বলে চিত্রায়িত করছে। ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ এই অবক্ষয়ের দুয়ারকে আরো অবারিত করেছে। চলমান বিশ্বে মানবিক অবক্ষয়ের কবলে কোন গোষ্ঠী গোত্র বা দেশ আক্রান্ত নয় বরং এটি এখন মানবতার মহাসমস্যা। কেবলমাত্র ধর্মীয় শিক্ষার বিকাশের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। সন্তানদের ধর্মীয় শিক্ষা প্রদানকে গুরুত্ব দিয়ে দার্শনিক Stanly Hull বলেছেন, ÒIf you teach your children three R’s (Reading, writing and leave the fourth (i.e. Religion), you will get a fifth R (Rascality)”.. রাজধানীর বনশ্রীতে মায়ের হাতে শিশুকন্যা অরণী ও শিশুপুত্র আলভিকে নির্মমভাবে হত্যা করেছেন জন্মধাত্রী মা জেসমিন! এই ঘটনাটি অভিভাবক মহলে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। সাধারণ মানুষ মাত্রই এই হত্যাকান্ডে সন্তান হত্যাকারী নারীর মানসিক সমস্যার বলে ধারণা করেছেন। তবে র‌্যাবের ভাষ্যমতে শিশুহত্যাকারী জেসমিনকে স্বাভাবিক মনে হচ্ছিল। র‌্যাব ও গণমাধ্যমের মারফতে যতটুকু জানা যায় এই হত্যাকান্ডের পেছনের রহস্য ছিল পরকীয়া। এমন ঘটনা দেশে অহরহ ঘটেই চলছে। স্ত্রীর প্রতি স্বামীর অমানুষিক নির্যাতন ও কর্তব্যহীনতা অথবা স্বামীর প্রতি স্ত্রীর অবহেলা বা কর্তব্যহীনতার বা পারস্পরিক আমানতের খেয়ানতদারিতার কারণে পরকীয়ার সৃষ্টি হয়, যা তিলে তিলে একটি পরিবারকে নিঃশেষ করে ফেলে। এমনকি স্বামী-স্ত্রীর জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে সন্তানদের ভবিষ্যৎ জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে। এ ব্যাপারে পরিবারে অভিভাবকদের আরো বেশি সচেতন হওয়া জরুরি। কারণ পরকীয়া নামক ক্যান্সার সমাজে যত বেশি বিস্তৃত হবে সমাজব্যবস্থা তত বেশি ভেঙে পড়বে। পরকীয়া একটি মারাত্মক কবিরা গুনাহ। রাজধানীসহ সারাদেশে প্রতিনিয়ত মৃত অথবা অর্ধমৃত নবজাতকের লাশের সন্ধান মিলছে। কখনো নালা নর্দমায়, কখনো বা ডোবায় আর কখনো বা ডাস্টবিনে। কুকুর অথবা কাক নবজাতকের শরীরের মাংস ঠুকরে ছিঁড়ে খাচ্ছে! সামাজিক কত বিপর্যয় ঘটলে মানবিকতার এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে! এসব কিসের লক্ষণ? প্রতিনিয়তই শিশুর ওপর সহিংসতা, যৌন নিপীড়নসহ আইন লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। শিশুশ্রম, বিবাহ, পতিতাবৃত্তি, পর্নোগ্রাফি, গৃহশ্রম, যৌন নির্যাতন, পাচার, পথশিশু ভিক্ষাবৃত্তি, বাধ্যতামূলক ভিক্ষাবৃত্তি, প্রতিবন্ধী, রাজনীতিতে শিশুদের ব্যবহারসহ ১২টি ক্যাটাগরিতে শিশুআইন সবসময় লঙ্ঘন করা হচ্ছে। সিলেটের শিশু রাজন হত্যাকান্ড ছাড়াও সাম্প্রতিক কালে বেশ কিছু হত্যাকান্ড ঘটেছে, যেসব নির্যাতনের লোমহর্ষক ঘটনায় মানবতা চরমভাবে ভূলুণ্ঠিত হয়েছে, বিবেকবান ব্যক্তি মাত্রই চরমভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। এহেন পরিস্থিতিতে প্রতিটি নিষ্ঠুর ঘটনার পর নতুন কোনো নিষ্ঠুরতা আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলছে, হাতছানি দিচ্ছে নতুন কোন আশঙ্কার। আমাদের ব্যক্তিজীবনে পুঁজিবাদের কশাঘাত, নিরন্তর ভোগবাদী চিন্তার পিছু ছুটা ও কথিত ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ধর্মহীনতাই ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে সকল অনাচারের মূল। এ জন্য প্রয়োজন ব্যক্তি ও সমাজের জন্য একটি নিরাপত্তা বেষ্টনী। আর তা হচ্ছে বিবেক ও আল্লাহর নিকট জবাবদিহিতা। তা মানুষের মাঝে সৃষ্টি হয় মূল্যবোধ ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে। সেই মূল্যবোধ ও বিশ্বাস মানুষের মাঝে সৃষ্টি হয় অহির নির্ভেজাল জ্ঞান শিক্ষণের মাধ্যমে। মহান পরোয়ারদিগার সেই শিক্ষার কথাই মানুষের প্রতি নবী (সা)-এর মাধ্যমে নির্দেশ করেছেন- “পাঠ কর তোমার প্রভুর নামে, যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন জমাটবাঁধা রক্ত থেকে। (সূরা আলাক : ১-২) পরোয়ারদিগারের কাছে কায়মনোবাক্যে ফরিয়াদ করছি, তিনি যেন অবক্ষয়ের জাঁতাকল থেকে সবাইকে রক্ষা করেন, অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে আমাদের যাত্রাকে সুদৃঢ় করেন; ধরাকে করেন শান্তিময়। লেখক : বিশিষ্ট কলামিস্ট

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির