post

সম্পাদকীয়

৩১ অক্টোবর ২০১৫

পলাশীর প্রান্তরে ইংরেজদের কাছে পরাজিত হয়ে বাংলার স্বাধীনতার সূর্যটি অস্ত যায়। সেই থেকে দীর্ঘ ২০০ বছর ব্রিটিশদের উৎপীড়ন অত্যাচারের শিকার হয়েছি আমরা। তারপর আবার নির্যাতিত হয়েছি পাকিস্তানি শাসকদের দ্বারা। ১৯৪৭ সাল থেকেই শুরু হয় পূর্ব পাকিস্তানের (বাংলাদেশ) প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণমূলক আচরণ। অর্থনৈতিক বৈষম্য, বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ওপর নিপীড়ন, সামরিক বাহিনীতে বাঙালিদের অবহেলা অন্যতম। জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশ পাকিস্তানের বৃহত্তর অংশ হওয়া সত্ত্বেও দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতা পশ্চিম পাকিস্তানের জিম্মায় থেকে যায়। ১৯৭০ সালের ১১ নভেম্বর এক প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় ৫ লক্ষ লোকের মৃত্যু ঘটে। এসময় বাঙালিদের প্রতি পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের অবহেলা চরমভাবে পরিলক্ষিত হয়। পাক সরকারের উদাসীনতা দেখে বাঙালিরা বিদ্রোহী হয়। এই বিদ্রোহের প্রত্যক্ষ ফল সেই বছরের নির্বাচনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তারই ধারাবাহিকতায় বাঙালিরা ঝাঁপিয়ে পড়ে ১৯৭১-এ দীর্ঘ ৯ মাসের মরণপণ যুদ্ধে। লক্ষ জনতার লাশের স্তূপ, স্বজনহারা মানুষের গগনবিদারী চিৎকার, হাজার মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা ফিরে পাই আমাদের প্রতীক্ষিত স্বাধীনতা। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে অন্তরীণ অবস্থায় ইন্তিকাল করেন মরহুম মাওলানা আবদুস সোবহান। ২০১২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার পথে বঙ্গবন্ধু টোল প্লাজার কাছে তাঁকে আটক করা হয়েছিল। কথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাজানো অভিযোগে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ ট্রাইব্যুনালে পাঁচবারের নির্বাচিত এই সংসদ সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। তারপর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তিনি জেলখানাতেই ছিলেন। তিনি ছিলেন প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, জাতীয় নেতা, সমাজসেবক। এলাকাবাসীদের মতে, মাওলানা আবদুস সোবহান সৎ ও জনদরদি ব্যক্তিত্ব হিসেবে পাবনার সর্বস্তরের মানুষের কাছে পরিচিত। তিনি পাবনাবাসীর সুখে-দুঃখে, সুদিনে-দুর্দিনে সব সময় সাথে ছিলেন। পাবনার উন্নয়নে তাঁর অবদান বলে শেষ করা যাবে না। তাঁর বিরুদ্ধে সাজানো অভিযোগ জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে, যার প্রমাণ জানাজায় লক্ষ লক্ষ জনতার অংশগ্রহণ ও আহাজারি। তিনি শুধু পাবনারই নেতা নন, তিনি একজন প্রবীণ জাতীয় নেতা। জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমিরের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বরাবরই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন। ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে দেশে ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের অন্যতম সিপাহসালার ছিলেন তিনি। আমরা মরহুমের জীবনের নেক আমলগুলোকে কবুল ও তাঁকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা প্রদানের জন্য মহান আল্লাহ তা’য়ালার দরবারে আবেদন জানাই।

স্বাধীনতার ৪৯ বছর পরেও আমাদের দেশের মানুষ স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে না। এখনো স্বৈরাচারী সরকারের প্রশাসন ও গুণ্ডাবাহিনীর ভয়ে সত্য কথা মুখ ফুটে বলতে পারে না জনতা। কর্মসংস্থানের অভাবে লক্ষ লক্ষ যুবকের অব্যক্ত কান্নার নোনাজল মিশে যায় বাতাসেই। পক্ষ-বিপক্ষের দ্বন্দ্ব-সংঘাতে বলি হয়ে যায় নিরপরাধী মানুষের জীবন। গায়েবি-আজগুবি মামলার ফাঁদে আটকে পড়ে সাধারণ মানুষ। বিচারিক-নির্বিচারিক হত্যাকাণ্ড; গুম-খুন-বন্দুকযুদ্ধের মহড়ায় কলঙ্কিত আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি। এইভাবে আর কত দিন চলতে পারে? সিদ্ধান্ত নিতে হবে নতুন প্রজন্মকে। এই দেশের স্বাধীনতা, স্বকীয়তা, ভ্রাতৃত্ব ও ঐতিহ্য রক্ষা করতে আজ দিকে দিকে এগিয়ে আসতে হবে একদল সাহসী ও প্রত্যয়দীপ্ত অভিযাত্রীকে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির