post

সময়ের চাহিদা

সালাউদ্দিন আইউবী

০৪ আগস্ট ২০২০

আমি যখন মনে করব আমি ক্লান্ত নই, তখন অবশ্যই ক্লান্তি পালিয়ে যাবে বহুদূরে। আমি যখন মনে করব আমি সুস্থ, অসুস্থতা আমার থেকে দূরে রবে সব সময়। আমি যখন মনে করব আমাকে ঘুম কাবু করতে পারবে না, তখন ঘুম আমার কাছে আসতে পারবে না

পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হযরত মুহাম্মদ সা. নবীর দায়িত্ব পালন শুরু করেন গোপনে। তিন বছরের বেশি সময় ধরে দাওয়াতি কাজ করতে হয় নিজস্ব পরিমণ্ডলে। কিছুদিন পর পরিবর্তন হয় দাওয়াত ও নবুয়তের দায়িত্ব পালন পদ্ধতি। সিদ্ধান্ত হয় প্রকাশ্যে দায়িত্ব পালন ও দাওয়াতি কাজের। আল্লাহর রাসূল সা. মদিনায় হিজরত করার পর শুরু করেন রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দাওয়াত পৌঁছানোর কাজ। তৎকালীন প্রভাবশালী রাষ্ট্রপ্রধানদের নিকট দাওয়াত পৌঁছান নতুন পদ্ধতিতে। এক বা একাধিক সাহাবিকে চিঠি দিয়ে পাঠানো হয় প্রভাবশালী রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছে। রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াসের নিকট দাহিয়াতুল কালবী রা.কে, আলেকজান্দ্রিয়ার সম্রাট মুকাওকিসের নিকট হাতেব ইবনে আবি বালতাআ রা. কে, হাবশিস্তানের বাদশাহ আসহামার নিকট আমর বিন ওমাইয়্যা রা.কে, ইয়ামামার গভর্নর হাওযা বিন আলীর নিকট সালিদ বিন আমর রা.কে, ইয়েমেনের শাসকের নিকট মোহাম্মদ বিল বুদাইল রা.কে, ইরানের সম্রাট খসরু পারভেজের নিকট আবদুল্লাহ বিন হুজাইফা রা.কে, গাচ্ছানের রাজা মনজুর বিন হারিস এর নিকট সুজা বিন ওয়াহাবকে এবং ওয়াহা বিন আবু কাবসা রা.কে চীনের রাজা গুয়াংডংয়ের নিকট দাওয়াতের চিঠি দিয়ে পাঠানো হয়। পরিবর্তন হয়েছে রাসূল সা.-এর যুদ্ধকৌশল। বদর ওহুদ এরপর খন্দক যুদ্ধ ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন কৌশলের। পরবর্তী মিশনগুলো লক্ষ্য করলে তাঁকে সা. অনেক নতুন নতুন কৌশল গ্রহণ করতে দেখা যায়। আসলে সময়ের চাহিদা অনুযায়ী পরিবর্তন হয় ব্যক্তির, শাসকের, দায়িত্বশীলের। নরম কোমল হৃদয়ের অধিকারী রহমদিল ব্যক্তিত্ব আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আমিরুল মুমিনিন হওয়ার পর একটি গোষ্ঠী জাকাত দিতে অস্বীকার করলে আমরা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর যে সাহসী হুঙ্কার দেখতে পাই তা তাঁর স্বাভাবিক আচরণের সম্পূর্ণ বিপরীত ছিল। আবার ওমর রা.-এর মত একজন কঠোর প্রকৃতির মানুষ খিলাফতের দায়িত্বে আসীন হওয়ার পর আমূল পরিবর্তন হয়ে অদ্বিতীয় দয়ার সাগরে পরিণত হন। কোভিড-১৯ এর আক্রমণে অস্বাভাবিক পরিবর্তন শুরু হয়েছে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায়। চলমান এ পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে আমাদের পথচলা। আমরা যে মহান লক্ষ্যকে সামনে রেখে কণ্টকাকীর্ণ দুর্গম পথ পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন দেখছি, সে সংকল্প বাস্তবায়ন করতে প্রয়োজন ঈমান, জ্ঞান, লক্ষ্য, বিবেক, কল্যাণ কামনা, মধ্যপন্থা, প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তা। লক্ষ্যপানে চলতে গিয়ে বাধাগ্রস্ত হয়ে যায় যদি মনোরথ, তবে বদলে নাও তোমার কর্মপদ্ধতি আর কর্মকৌশল; কিন্তু শিথিল করো না লক্ষ্যপানে চলার গতি। ভবিষ্যৎ সফলতার প্রথম সিঁড়ি হচ্ছে সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার। সময়ের প্রয়োজনে বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে ব্যতিক্রম উপস্থাপনায় পরিকল্পনার সকল অংশ সূক্ষ্মভাবে বাস্তবায়ন করতে ব্যাপক ঢাকঢোল পিটিয়ে আমূল পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই। একটি শব্দ অথবা একটি কাজের পরিবর্তন এই অসম্ভব রকম সাফল্য এনে দিতে পারে আমাদের চলার পথে। একদা এক অন্ধ ছেলে একটি বড় প্রতিষ্ঠানের সামনে বসে ভিক্ষা করছিলো। তার সামনে ছিল একটি থালা আর হাতে ছিল একটি মাঝারি সাইজের কাগজ। যাতে বড় বড় অক্ষরে লেখা ছিলো- ‘আমি একজন অন্ধ মানুষ, অনুগ্রহ করে আমাকে সাহায্য করুন।’ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তার থালায় মাত্র কয়েকটি পয়সাই জমা হয়। অর্থাৎ খুব কম মানুষই তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। প্রতিষ্ঠানের এক সিনিয়র অফিসার অফিসে প্রবেশ করার সময় সেই ছেলেটিকে দেখতে পেলেন। তিনি তার পকেট থেকে বের করে ছেলেটিকে কিছু টাকা দিলেন আর তার সামনে থাকা কাগজটি তুলে নিয়ে এর পেছনের অংশে কিছু একটা লিখে দিলেন। এরপর ছেলেটির হাতে কাগজটি এমনভাবে ধরিয়ে দিলেন যাতে সবাই পুরাতন লেখার পরিবর্তে নতুন লেখাটি দেখতে পান। কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর আশ্চর্যজনকভাবে সবার সাহায্য বেড়ে গেল। আগের তুলনায় অনেক বেশি লোক ছেলেটিকে সাহায্য করতে শুরু করলো। তার থালা খুব দ্রুতই পয়সায় ভরে উঠলো। বিকেল বেলা সেই ভদ্রলোক তার অফিস থেকে বেরিয়ে যখন অন্ধ বালকের কাছে আসলো, তখন অন্ধ ছেলেটি কণ্ঠস্বর শুনে লোকটিকে চিনতে পেরে জিজ্ঞেস করলো- আপনি কি সেই লোক যে সকাল বেলা আমার কাগজের লেখাটি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন? আমি কি জানতে পারি আমার কাগজটিতে কী লিখেছিলেন আপনি। ছেলেটির এমন প্রশ্নের জবাবে লোকটি বললেন- আমি তেমন কিছুই লিখিনি সত্যটাই লিখেছিলাম মাত্র। তবে একটি ভিন্ন উপায়ে ভিন্ন আঙ্গিকে। আমি তোমার কাগজে লিখে দিয়েছিলাম- আজ বেশ চমৎকার একটি দিন, কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য আপনাদের মতো আমি দেখতে পাই না। দুটো লেখাই মানুষকে বলে যে এই ছেলেটি অন্ধ। কিন্তু প্রথমটি শুধু বলে সে অন্ধ। কিন্তু দ্বিতীয় লেখাটি মানুষকে বলে তারা অনেক ভাগ্যবান যে তারা অন্ধ হয়ে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেননি। আমরা অনেক পরিশ্রম করে স্বাভাবিক যে কাজগুলো চালিয়ে যাই, প্রতিটি কাজ একটু ভিন্ন আঙ্গিকে সময়ের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন মাত্রায় করতে পারলে কোন পরিকল্পনাই অবাস্তবায়িত থাকবে না ইনশাআল্লাহ। এক সময় যে কাজ আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় করে করতে হতো, অনলাইনের সুবাদে সে কাজ কয়েক মিনিটে করা সম্ভব হচ্ছে। অনলাইন নামক এই নেয়ামতকে কাজে লাগিয়ে আমরা পথ চলতে পারি খুব সহজেই। অনলাইনকে কাজে লাগাতে হলে পরিবর্তন করতে হবে আমাদের মনোভাবের। অনলাইনকে কাজে লাগিয়ে জ্যাক মারমালি কানায় পরিচালিত হচ্ছে হাজার কোটি ডলারের আলি বাবা নামক প্রতিষ্ঠান। পৃথিবীতে এক ধরনের রাজত্ব করছে অ্যামাজন। সুতরাং আমি যদি মনে করতে পারি আমিও পারবো, তবেই আমার দ্বারা সম্ভব। আমার জীবন আমার মনোভাবের আয়না। আমি যখন মনে করব আমি ক্লান্ত, তখন অবশ্যই ক্লান্তি আসবে আমার দিকে। আমি যখন মনে করব আমি অসুস্থ, তখন অবশ্যই অসুস্থতা দৌড়ে আসবে আমার দিকে। আমি যখন মনে করব আমার ঘুম পাচ্ছে, তখন ঘুম আমাকে তাড়িয়ে বেড়াবে। আর আমি যখন মনে করব আমি ক্লান্ত নই, তখন অবশ্যই ক্লান্তি পালিয়ে যাবে বহুদূরে। আমি যখন মনে করব আমি সুস্থ, অসুস্থতা আমার থেকে দূরে রবে সব সময়। আমি যখন মনে করব আমাকে ঘুম কাবু করতে পারবে না, তখন ঘুম আমার কাছে আসতে পারবে না। সুতরাং মনের ঘোড়ার নাকের ডগায় লাগাম লাগিয়ে পৌঁছে যাওয়া যায় বহুদূর। লেখক : সম্পাদক, ছাত্র সংবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির