post

সিন্ডিকেট হলুদ সাংবাদিকতা ও কয়েকটি ঘটনার পোস্টমর্টেম

০১ মার্চ ২০১৪

আবু সালেহ মো. ইয়াহইয়া

(পর্ব ৫) 1চাঞ্চল্যকর ত্বকী হত্যাকাণ্ড ঘটনা : নারায়ণগঞ্জে নাগরিক কমিটির সহসভাপতি ও গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম উদ্যোক্তা রফিউর রাব্বির বড় ছেলে তানভীর মোহাম্মদ ত্বকী খুন হয় দুর্বৃত্তদের হাতে। ৬ মার্চ নিখোঁজ হওয়ার পর ত্বকীর লাশ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার  ট্রাস্টের খাল থেকে ৮ মার্চ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ৯ মার্চ নারায়ণগঞ্জে ১৪ দলের ডাকে পালিত হয় হরতাল। ত্বকীরা দুই ভাই। ছোট ভাই সাকী মাউন্ড রয়েল একাডেমির ৫ম শ্রেণীর ছাত্র। তবে দু-একদিন পরেই ঘটনার জট খুলতে শুরু করে যখন খোদ ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বিই বলেন, হত্যাকাণ্ডের পেছনে জড়িত ওসমান পরিবার; জামায়াত- শিবির নয়। মিডিয়া কী বলে : ৯ মার্চ ২০১৩ দৈনিক জনকণ্ঠে ‘জামায়াতের কিলিং মিশনের টার্গেট- ত্বকী রাজিব সানিরা’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘জামায়াত-শিবির মাসব্যাপী নানা চত্রান্ত, ষড়যন্ত্র করে পরাস্ত হয়ে এবার অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যার মিশনে নেমেছে।’ ৯ মার্চ ২০১৩  দৈনিক সমকাল এর প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘নিহতের বাবা রফিউর রাব্বি নিজেই বাদি হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় আসামিদের বিরদ্ধে মামলায় উল্লেখ করেন, তার অতীত ও বর্তমান বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও চলমান যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে সারাদেশের মতো নারায়ণগঞ্জে গড়ে ওঠা আন্দোলনে তার ভূমিকার পরিপ্রেক্ষিতে কোনো কোনো মহল তার ওপর আক্রোশবশত তার ছেলেকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।’ একই তারিখে দৈনিক কালের কণ্ঠে নারায়ণগঞ্জের গণজাগরণ মঞ্চের স্লোগানকন্যা খ্যাত  মৈত্রী ঘোষের বরাত দিয়ে বলা হয়, ‘ত্বকীর বাবা প্রগতিশীল সংগঠন করেন। গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক তিনি। প্রতিক্রিয়াশীল চক্র আমাদের আন্দোলন থামাতে এ হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে।’ ঘটনার জন্য প্রজন্ম চত্বর থেকে এবং আওয়ামী ঘরানার বুদ্ধিজীবীরা শুরুতেই জামায়াত- শিবিরকে দোষারোপ করে বক্তব্য দিতে থাকেন। ছাত্রশিবিরের বক্তব্য : ত্বকী হত্যাকাণ্ডের পর বিভিন্ন মিডিয়ায় শিবিরকে জড়িয়ে প্রকাশিত সংবাদ এবং বিভিন্ন মহল থেকে শিবিরকে দোষারোপ করে দেয়া বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ১০ মার্চ ২০১৩ ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে একটি প্রতিবাদবার্তা পাঠানো হয়। প্রতিবাদবার্তায় বলা হয়, ‘ত্বকী হত্যাকাণ্ডের পর ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে যেসব সংবাদ প্রচার ও প্রকাশ করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। দেশবাসী অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ করছে, যেকোনো ঘটনার সাথে ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে সংবাদ প্রচার করা এক শ্রেণীর গণমাধ্যমের দুরারোগ্য ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। আমরা অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, শুধু ত্বকী হত্যা কেন, বাংলাদেশের মাটিতে সংঘটিত কোন হত্যাকাণ্ডের সাথে ছাত্রশিবিরের দূরতম সম্পর্ক নেই।’ ত্বকী হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে প্রতিবাদবার্তায় আরো বলা হয়, ‘মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে এবং বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিয়ে হত্যাকাণ্ডের তদন্তেকার্যে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করা হচ্ছে। অবিলম্বে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে প্রশাসনের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য ও ত্বকীর বাবাকে হুমকি  : ১৫ মার্চ ২০১৩ অনলাইন পত্রিকা বাংলা নিউজ উল্লেখ করে ‘ত্বকী হত্যা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিন ভাইয়ের এক ভাইয়ের প্রশ্রয়ে ও একটি সংস্থার সহায়তায় খুনিদের বাইরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেই এক ভাইকে ডেকে নিয়ে বলেছেন, নারায়ণগঞ্জে ত্বকী হত্যা নিয়ে বাড়াবাড়ি যেন না হয়। সেই ভাই বলেছেন, দুই-চারদিন হইচই হবে তারপর বন্ধ হয়ে যাবে।’ এ দিকে ত্বকীর বাবাকে বাড়াবাড়ি না করার হুমকি দিয়ে  কথিত আওলাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তি চিঠি পাঠিয়েছেন। তার কাছে রোববার দুপুরে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের একটি উড়ো চিঠি পাঠিয়ে এ হুমকি দেয়া হয়। চিঠিতে রফিউর রাব্বিকে উদ্দেশ করে বলা হয়, আপনার ছেলের মৃত্যুর ব্যাপারে বেশি বাড়াবাড়ি করবেন না। যেহেতু আপনার আরেক ছেলে আছে, তার প্রতি যদি মায়া থাকে তবে বেশি বাড়াবাড়ি করবেন না। আমাদের হাত অনেক বড়। অনেক বেশি কিছু করতে পারি। (সূত্র : ১ এপ্রিল ২০১৩, বাংলা নিউজ) ত্বকীর বাবার বক্তব্য : ওসমান পরিবার জড়িত : ১৫ মার্চ ২০১৩  বাংলা নিউজের এক প্রতিবেদনে হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে ত্বকীর বাবার বক্তব্য তুলে ধরে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ত্বকী হত্যার বিচার চেয়ে আয়োজিত এক সমাবেশ ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি বলেন, ‘আমরা কোনোভাবেই মনে করি না ত্বকীকে জামায়াত-শিবির হত্যা করেছে।  তাকে আমাদের সেই প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি হত্যা করেছে, যাদের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করেছি। বাস ভাড়া বাড়ার ব্যাপারে যখন আমি আন্দোলন করি, তখন বাস মালিকরা র‌্যাবের কাছে একটি তালিকা দিয়েছিল তারা মাসে কতো টাকা নাসিম ওসমান ও শামীম ওসমানকে চাঁদা দেয়। আমি সেই তালিকা দেখিয়ে ডিসি অফিসে বলেছিলাম, এই চাঁদা যদি বন্ধ করা হয় তাহলে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ বাস ভাড়া ২২ টাকারও কম হবে। রাব্বি আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জে একটি টর্চার সেল আছে। সেই টর্চার সেলের আশপাশে যারা থাকে তারা রাতে চিৎকারের শব্দ শুনতে পায়, গুলির শব্দ পায়। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের পুলিশ গোয়েন্দা জানে না সেই টর্চার সেলের কথা, শোনে না গুলি আর চিৎকারের শব্দ। রাব্বি শামীম ওসমানকে  উদ্দেশ করে বলেন, সিটি নির্বাচনের সময় আপনি হিন্দু মন্দিরে হামলা করে সংখ্যালঘুদের বুঝাতে চেয়েছেন আপনাকে ভোট না দিলে নারায়ণগঞ্জে হিন্দুরা থাকতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, আপনারা আপনাদের আধিপত্য বজায় রাখতে সন্ত্রাসী চাঁদাবাজি করিয়ে থাকেন। খুন করিয়ে থাকেন। আপনাদের তৈরি টর্চার সেলে আমাদের সন্তানদের টর্চার করে থাকেন।’ মেয়র আইভীর বক্তব্য : শামীম ওসমানকে উদ্দেশ করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী বলেন, ‘আপনি কাপুরুষ বিধায় ত্বকীকে হত্যা করেছেন। আপনি যদি বীরপুরুষ হয়ে থাকেন তাহলে আমাকে হত্যা করুন। এর আগে আইভী যখন বক্তব্য শুরু করেন তখন শ্লোগান ওঠে, গডফাদারের আস্তানা, নারায়ণগঞ্জে রাখবো না। তিনি সবাইকে প্রতিহতের আহবান জানিয়ে বলেন, এই শহরে অনেক সিরিজ হত্যা হয়েছে, নারায়ণগঞ্জের মানুষকে স্তব্ধ করে দিতে অনেক খুন হয়েছে। কিন্তু আর মেনে নেয়া যায় না। নারায়ণগঞ্জের মানুষ এখন মুক্তি চায়। (সূত্র : ১৫ মার্চ ২০১৩, বাংলা নিউজ) এমপি কবরীর বক্তব্য : রফিউর রাব্বির বাসায় এসে সংসদ সদস্য কবরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘গার্মেন্ট ব্যবসায়ী আশিকুর রহমান আশিক হত্যাকাণ্ডের পর বিষয়টি আমি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উত্থাপন করেছিলাম। তখন এমপি নাসিম ওসমান বলেছিলেন, দুই চারটা খুন হতেই পারে। ওই সভায় সে সময়ের জেলা প্রশাসক সামছুর রহমান, পুলিশ সুপার শেখ নাজমুল আলম আমার কথাকে গুরুত্ব দেয়নি। আশিক হত্যার জট খুললে এমনটা হতো না।’ (সূত্র : প্রথম আলো ১১ মার্চ ২০১৩) ধীরে ধীরে প্রকৃত ঘটনার প্রকাশ : ১১ মার্চের প্রথম আলোতে ‘সন্দেহের তীর একটি বিশেষ পরিবারের দিকে’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, মেধাবী ছাত্র তানভীর রহমান ত্বকী হত্যায় সন্দেহের তীর  একটি বিশেষ  পরিবারের দিকে। নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক, ব্যবসায়ী মহল সে অভিযোগ তুললেও পুলিশ, র‌্যাব সে পথে হাঁটছে না কেন? জানতে চাইলে তারা বলে, ওপরের নির্দেশ না আসা পর্যন্ত ঐ পরিবারকে সন্দেহের তালিকায় আনা যাবে না।  তানভীরের বাবা রফিউর রাব্বি, নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা আসনের সংসদ সদস্য কবরী এবং জেলার কয়েকজন আওয়ামী নেতার ধারণা, এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে জড়িত একটি বিশেষ পরিবার। বিষয়টি তারা পুলিশ র‌্যাবকে জানিয়েছেন। জেলা পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্তা বলেন, ‘এ হত্যাকাণ্ডের কোনো সূত্র মেলেনি। কোনো প্রত্যক্ষদর্শী নেই। এ জন্য অনেকেই একটি পরিবারকে দায়ী করেছেন। কিন্তু এই পরিবারের কর্তারা সরকারি দলের অনেক প্রভাবশালী রাজনীতিক। ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে এদের ওঠাবসা। ফলে কোনো সূত্র না পেলে সরকারের ওপরের মহলের ইশারা ছাড়া এ পরিবারকে সন্দেহের তালিকায় আনা যাবে না।’ (সূত্র : ১১ মার্চ ২০১৩ দৈনিক প্রথম আলো) ১১ মার্চের যায়যায়দিনে ‘নারায়ণগঞ্জে ত্বকীসহ আলোচিত তিন হত্যাকাণ্ড একই সূত্রে গাঁথা’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, গার্মেন্টস ব্যবসায়ী আশিকুর রহমান, নাট্যকার দিদারুল ইসলাম চঞ্চল এবং তানভীর হত্যাকাণ্ড একই সূত্রে গাঁথা বলে মনে করছে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। তিনজনের মৃত্যুর ধরনও একই রকম। হত্যাকাণ্ড কারা করছে সে নিয়ে গুঞ্জন থাকলেও প্রমাণের অভাবে পুলিশ কিছুই করতে পারছে না।’ তবুও গ্রেফতার করা হলো জামায়াত নেতাকে : খোদ আওয়ামী লীগের নেতাদের অভিযোগ ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে থাকলেও পুলিশ তৎপর হয়ে ওঠে স্থানীয় জামায়াত নেতাদের গ্রেফতার করতে। খবরে প্রকাশ, ১০ মার্চ ত্বকী হত্যার বিষয় খতিয়ে দেখতে নারায়ণগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমিরসহ পাঁচ নেতাকে গ্রেফতার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। মিশনপাড়া এলাকায় জামায়াতের কার্যালয় থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।  (সূত্র :  ১১ মার্চ দৈনিক কালের কণ্ঠ) ত্বকীর বাবার অবগতিপত্র প্রদান : এ দিকে ১৮ মার্চ রাতে ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শামীম ওসমান, তার ছেলে অয়ন ওসমান, যুবলীগ নেতা পারভেজ, জেলা ছাত্রলীগ সহসভাপতি রাজীব দাস, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, সালেহ রহমান সীমান্ত ও রিফাতকে দায়ী করে তাদের বিরদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সুপারের কাছে অবগতিপত্র দেন। (সূত্র : বাংলানিউজ ৬ এপ্রিল ২০১৩) তবুও চলে ওসমান পরিবারকে বাঁচানোর চেষ্টা : এ দিকে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ প্রশাসনের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি টিম সীমান্তকে আটক করেছে। অন্য দিকে, ত্বকী হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মঞ্জুর কাদের জানান, তারা এর আগে ২০ মার্চ রিফাত বিন ওসমানকে গ্রেফতার করেছে। এ ছাড়া আরো পাঁচজনকে গ্রেফতার করে ত্বকী হত্যা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ৫৪ ধারায় আদালতে পাঠানো হয়। এ সময়  সীমান্তকে পুলিশ আটক করেনি দাবি করেন ওসি মঞ্জুর কাদের। (সূত্র : বাংলানিউজ  ৭ আগস্ট ২০১৩) এরপর ত্বকী হত্যা মামলায় নতুন নাটক র‌্যাবের তদন্ত নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ১২ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে আদালতের কাছে জবানবন্দী দেয় শওকত নামে এক যুবক। ঐ জবানবন্দীতে সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ত্বকীকে হত্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এর আগে চাঞ্চল্যকর এই মামলায় গত ২৯ জুলাই র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয় ইউসুফ হোসেন লিটন নামে অপর একজন। আসামি ত্বকী হত্যাকাণ্ডে নিজের সক্রিয় অংশ গ্রহণের কথা উল্লেখ করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছিল। কিন্তু ঐ জবানবন্দীতে সালেহ রহমান সীমান্তের বাড়িতে ত্বকীতে হত্যা করা হয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয় এবং সেখানে কোথাও ওসমান পরিবারের কোন সদস্যের নাম ছিল না। তাই এ ধরনের জবানবন্দী র‌্যাবের পুরো তদন্তকে দারুণভাবে প্রশ্নবিদ্ধ  করেছে। কারণ রহস্যজনকভাবে একই হত্যাকাণ্ড নিয়ে দু’জনের জবানবন্দী দু’রকম হওয়াতে তদন্তকারী সংস্থার নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। শিবিরকে জড়ানোর চেষ্টা ব্যর্থ হলো : হত্যাকাণ্ডের পর পর একশ্রেণীর মিডিয়া জামায়াত-শিবির জড়িত বলে হইচই শুরু করে দেয়। গণজাগরণ মঞ্চ এবং একশ্রেণীর বাম বুদ্ধিজীবীরা জামায়াত-শিবিরকে দোষারোপ করে  প্রতিদিন মুখে খৈ ফোটাতে থাকেন। পুলিশও  কম চেষ্টা করেনি। কিন্তু ত্বকীর বাবার সাহসী পদক্ষেপ, মেয়র আইভী, সংসদ সদস্য কবরীসহ  নারায়ণগঞ্জের মুক্তিকামী মানুষের সোচ্চার ভূমিকার ফলে বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। তারপরও খুনিদের লম্বা হাতে এতটুকু আঁচড় দিতে পারেনি প্রশাসন। বিনা কারণে জামায়াত নেতাদের গ্রেফতার করে ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের মানুষ তা হতে দেয়নি। আর এভাবে আবারো প্রমাণিত হলো জামায়াত-শিবির হত্যার রাজনীতি করে না। যুগে যুগে বরং তারাই হত্যার রাজনীতির নির্মম শিকার হয়েছে। লেখক : প্রচার সম্পাদক, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির