post

স্বপ্ন যখন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক

২৯ অক্টোবর ২০১৮
শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। ঐতিহাসিক স্যার জন অ্যাডামস-এর মতে “শিক্ষকতা হলো মানুষ গড়ার কারিগর”। সাধারণত ঞবধপযবৎ শব্দটিকে বিশ্লেষণ করলে পাই -T- Trust worthy, E – Emphatic, A- Able, C – Creative, H – Humble, E – Ethical, R - Researcher। ঈমাম গাজ্জালী (রহ:) বলেন- “Teacher are not king but they know how to make kings” জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি গঠনই এ পেশার মূল বিষয়। মানুষকে পাশবিক থেকে মানবিক পর্যায়ে উন্নীত এবং অসভ্য থেকে সভ্যতার আলোয় আলোকিত করার পেছনে যে পেশার অবদান শতভাগ তা হচ্ছে শিক্ষকতা। এ পেশার মাধ্যমে একজন শিক্ষক তার উপর অর্পিত সামাজিক, মানবিক ও নৈতিক দায়িত্বগুলো অত্যন্ত সূচারুরূপে পালন করতে পারেন। এ পেশায় কাদের আসা উচিত পঠন-পাঠন এবং অনুশীলনের জীবনে যারা বিশ্বাসী, বিত্তের চেয়ে চিত্তের বৈভবে যাদের পক্ষপাতিত্ব, সৃজনশীল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যারা অন্যের মানোজগতের গুপ্তধন আবিষ্কারের নেশায় মত্ত, মোট কথা স্রষ্টার রহস্যময় অপর সৃষ্টি যাদেরকে কৌতূহলী করে তাদের জন্য শিক্ষকতা আরামের, আনন্দের। এছাড়া শিক্ষার্থীর প্রতি মমত্ববোধ, প্রখর ধৈর্য, বহির্মুখী স্বভাব এবং অনুসন্ধিৎসু মন থাকলে এ পেশায় ভালো করা সম্ভব। স্বপ্ন যাদের শিক্ষকতা করার তাদের স্বপ্ন পূরণের সময় এসেছে এবার। সম্প্রতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের সার্কুলার ঘোষণা করেছে পিএসসি। এরই মধ্যে এর আবেদনপ্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। ১২টি বিষয়ে ১৩৭৮ জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। নিয়োগ পরীক্ষা হবে দুইধাপে-লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা। লিখিত পরীক্ষা হবে এমসিকিউ বা বহু নির্বাচনী পদ্ধতিতে। পরীক্ষার পূর্ণমান ২০০ নম্বর, সময় ২ ঘণ্টা। এর মধ্যে বাংলা বিষয়ে ৫০টি, ইংরেজি ৫০টি, সাধারণ জ্ঞানে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি থেকে ৪০টি এবং গণিত ও মানসিক দক্ষতায় ৬০টি প্রশ্ন থাকবে। প্রতিটি প্রশ্নের সঠিক উত্তরের জন্য ১ নম্বর পাওয়া যাবে। প্রত্যেক ভুল উত্তরের জন্য কাটা যাবে ০.৫০ নম্বর। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে ডাকা হবে মৌখিক পরীক্ষায়। এ অংশে বরাদ্দ ৫০ নম্বর। মৌখিক পরীক্ষায় পাস করতে হলে কমপক্ষে ২০ নম্বর পেতে হবে। মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরা যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্তভাবে নিয়োগ পাবেন। প্রস্তুতি কখন কিভাবে নেয়া উচিত একজন ব্যক্তির জন্য শিক্ষকতা তখনই ক্যারিয়ার হিসেবে নেয়া উচিত যখন এ পেশার প্রতি তার অগাধ প্রেম এবং শ্রদ্ধাবোধ থাকবে। আমরা জানি, বাংলাদেশের পেশা নির্বাচনের প্রক্রিয়াটি এখন অনেক বেশি জটিল এবং প্রতিযোগিতাপূর্ণ। শিক্ষক নিয়োগপ্রক্রিয়া ও এই প্রতিযোগিতার বাইরে নয়। যার ফলে সেই তীব্র প্রতিযোগিতায় নিজের অবস্থান নিশ্চিত করতে হলে দীর্ঘমেয়াদি একটি পরিকল্পনা থাকা আবশ্যক। শুরুতে ২০০১ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত যতগুলো মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা হয়েছে সেই প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে দেখে নিন। আবার ২০১১ থেকে ২০১৮ (সর্বশেষ) পিএসসির সবগুলো প্রশ্ন সমাধান করুন। এতে আপনার প্রস্তুতির পাশাপাশি পিএসসির প্রশ্ন সম্পর্কে একটা ধারণা হবে। পরীক্ষায় এসব প্রশ্ন থেকে বেশ কিছু প্রশ্ন কমনও পাবেন। এবার আসা যাক বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতিতে: বাংলা: বাংলা অংশে ব্যাকরণ পাঠের ওপর বেশি জোর দিতে হবে। নবম-দশম শ্রেণির বোর্ড প্রণীত ব্যাকরণ বইয়ের সব অধ্যায় উদাহরণসহ ভালোভাবে পড়তে হবে। ব্যাকরণে ভাষা, বর্ণ, শব্দ, সন্ধি, কারক, বিভক্তি, উপসর্গ, অনুসর্গ, ধাতু, সমাস, বানানশুদ্ধি, পারিভাষিকশব্দ, সমার্থক শব্দ, বিপরীতশব্দ, বাগধারা, এককথায় প্রকাশসহ প্রায় সব অধ্যায় থেকেই প্রশ্ন আসতে পারে। সাহিত্য অংশের জন্য পড়তে হবে কবি সাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্ম ও জীবনী সম্পর্কে। নবম-দশম শ্রেণি ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ড প্রণীত সাহিত্য অংশের লেখক পরিচিতি ও কবি পরিচিতি অংশটুকু ভালোভাবে পড়তে হবে। পিএসসি নির্ধারিত এগোরো জন সাহিত্যিক সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ে রাখা ভালো। সাহিত্যের যুগ বিভাগ, গল্প, কবিতা, উপন্যাস ও কাব্যের রচয়িতা, ছদ্মনাম, বিভিন্ন সাহিত্যকর্ম, বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক, সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ লাইন উল্লেখ করে কবির নাম থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। মোটকথা বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে আপনার খুব ভাল ধারণা থাকতে হবে। ইংরেজি: ইংরেজি গ্রামারের Right forms of verb, Tense, Number, Gender, Preposition, Parts of Speech, Voice, Narration, Spelling, Sentence Correction- থেকে প্রশ্ন আসে। যে কোন ভাল গ্রামার বই থেকে গ্রামারের এই বিষয়গুলো উদাহরণসহ পড়ুন। মুখস্থ করতে হবে Phrase and Idioms, Synonyms, Antonyms. ইংরেজি থেকে বাংলা,বাংলা থেকে ইংরেজি অনুবাদও পড়তে হবে। ইংরেজি সাহিত্য থেকে লেখকদের নাম, তাদের যুগ, তাদের বিভিন্ন সাহিত্যকর্ম, কিছু লিটারেরি টার্মস, কে কে নোবেল জয়ী, কে কোন নাটক, উপন্যাস বা কবিতা লিখেছেন এবং এসব নাটক বা উপন্যাসের বিখ্যাত লাইন ও বিভিন্ন চরিত্র থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। মোটকথা ইংরেজি সাহিত্য সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা নিবেন। গণিত: গণিতে মার্কস পাওয়া তুলনামূলক সহজ। প্রতিদিন কমপক্ষে তিন থেকে চার ঘণ্টা গণিত প্র্যাকটিস করা দরকার। পাটিগণিতের পরিমাপ ও একক, ঐকিক নিয়ম, অনুপাত, শতকরা, সুদকষা, লাভ-ক্ষতি, ভগ্নাংশ থেকে প্রশ্ন আসে। বীজগণিতের সাধারণ সূত্রাবলি থেকে প্রশ্ন থাকে। মুখে মুখে ও সূত্র প্রয়োগ করে সংক্ষেপে উত্তর বের করার প্র্যাকটিস করতে হবে, যাতে প্রশ্ন দেখা মাত্রই সূত্র প্রয়োগ করে উত্তর বের করা যায়। জ্যামিতির জন্য ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, বর্গক্ষেত্র, রম্বস, বৃত্ত ইত্যাদির সাধারণ সূত্র ও সূত্রের প্রয়োগ প্র্যাকটিস করবেন। মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যবই যেমন ষষ্ঠ,সপ্তম, অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণির গণিত বই অনুসরণ করলে ভালো হবে। এছাড়া বাজারে প্রচলিত একটি ভালো মানের গণিত বই সমাধান করলে আশা করি আপনার গণিতের সমস্যা কেটে যাবে। মানসিক দক্ষতা: মানসিক দক্ষতা থেকে ভাষাগত যৌক্তিক বিচার, সমস্যা সমাধান, বানান ও ভাষা, যান্ত্রিক দক্ষতা, স্থানাঙ্ক সম্পর্ক, সংখ্যাগত ক্ষমতা এবং সম্পর্ক (রক্ত, সময়) ও দিক নির্ণয় ক্ষমতা থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। মানসিক দক্ষতার একটি বই নিয়ে বিগত বছরে বিসিএস প্রিলি ও লিখিত পরীক্ষায় আশা প্রশ্নগুলো ভালোভাবে অনুশীলন করলে আশা করি ভাল মার্কস পাবেন। এছাড়া বাজারে প্রচলিত একটি ভালো মানের মানসিক দক্ষতার বই সমাধান করলে আশা করি পরীক্ষায় ভালো করবেন। সাধারণ জ্ঞান: বাংলাদেশ বিষয়াবলির জন্য বাংলাদেশের শিক্ষা, ইতিহাস, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ, ভূ-প্রকৃতি ও জলবায়ু, সভ্যতা ও সংস্কৃতি, বিখ্যাত স্থান, বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা, অর্থনীতি, বিভিন্ন সম্পদ, জাতীয় দিবস, বিখ্যাত ব্যক্তির জীবনী থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। আর আন্তর্জাতিক অংশে বৈশ্বিক ইতিহাস, ভূ-রাজনীতি, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, দেশ, মুদ্রা, রাজধানী, আন্তর্জাতিক দিবস, পুরস্কার ও সম্মাননা, খেলাধুলা ও বিশ্বের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ থেকে প্রশ্ন থাকে। সাধারণ জ্ঞানের জন্য ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বই অনুসরণ করলে ভালো হবে এবং পাশাপাশি একটি ভালো গাইড বই (যেমন: ক্যারিয়ার এইড সাধারণ জ্ঞান) থেকে সাধারণ জ্ঞান পড়তে পারেন। সাম্প্রতিক বিষয়ের জন্য মাসিক কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স ও মাসিক জ্ঞানপত্র পড়তে পারেন। মানুষের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক এবং প্রযুক্তিগত উন্নতি ‘শিক্ষকতা’কেও প্রভাবিত করেছে নানা মাত্রায়। যার অনিবার্যতায় শিক্ষকতা এখন আর নিছক ঐতিহাসিক সেবা নয়, চ্যালেঞ্জিং ক্যারিয়ারও বটে। নানা অবক্ষয়ের এদেশে এখন ক্রান্তিকাল চলছে। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে কাণ্ডারির বড় দরকার। একমাত্র আদর্শ দেশপ্রেমিক শিক্ষকরাই পারেন সেই কাণ্ডারির ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির