১.
আমাদের সবচেয়ে বড়ো পরিচয় আমরা মুসলিম। আমরা আজাদ দাস, তথা আমরা কেবল এক আল্লাহর দাস। আমাদের কাজই শুধু তাঁর দাসত্ব করা। তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে চলা। আমরা এক আল্লাহ ছাড়া কারো হুকুম পালন করতে কিংবা কারো আনুগত্য করতে বাধ্য নই। হ্যাঁ, কেউ যদি আল্লাহর বিধান অনুযায়ী আমাদেরকে পরিচালিত করেন, আমাদেরকে পথনির্দেশ করেন, আমাদেরকে নেতৃত্ব দেন, আদেশ প্রদান করেন, আমরা সেই আদেশের, সেই নির্দেশের আনুগত্য করি। সেই আনুগত্য করতেও বাধ্য আমরা। আল-কুরআন আমাদেরকে বলে যে, ‘হে বিশ্বাসীরা! তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহর এবং আনুগত্য করো রাসূলের ও তোমাদের নেতৃবৃন্দের।’ (সূরা : নিসা : ৫৯) তবে রাসূলে আকরাম সা. এও বলে দিয়েছেন যে, স্রষ্টার অবাধ্য হয়ে সৃষ্টির আনুগত্য নেই। (বুখারি-৭২৫৭; মুসলিম-১৮৪০)
আমাদের “আজাদ দাস” এই পরিচয় ছাড়াও আরেকটা পরিচয় হচ্ছে আমরা তথা মুসলিম উম্মাহ হলাম মিশনারি উম্মাহ। আমাদের রাসূল, আমাদের প্রিয় নবী-প্রিয় নেতা মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল্লাহ সা. বলেছেন যে, আমার পক্ষ থেকে যদি একটা বাণীও তুমি জানো, তবে তা অপরের নিকট পৌঁছে দাও। (বুখারি-৩৪৬১) সাহাবায়ে কেরাম অক্ষরে অক্ষরে রাসূল সা.-এর এই নির্দেশের বাস্তবায়ন করে গেছেন তাঁদের সারাটি জীবন।
তাঁরা দ্বীন প্রচারের মিশনে সুদূর আরব থেকে চীন অবধি পৌঁছে গিয়েছেন। যেমন, রাসূল সা.-এর সাহাবি আবু ওয়াক্কাস মালিক ইবনু ওয়াহাইব রা. নবুওয়াতের পঞ্চম বছর তথা ৬১৫ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন হাবশায় (বর্তমান ইথিওপিয়া) ইসলাম প্রচারের মিশন নিয়ে হিজরত করেন। নবুওয়াতের সপ্তম বছর অর্থাৎ ৬১৭ খ্রিষ্টাব্দে কয়েকজন সাহাবি এবং তাবেয়িকে নিয়ে দুটি জাহাজ ভর্তি করে চীনের উদ্দেশ্যে সাগর পাড়ি দেন। চীনে যাবার সময় তাঁকে আজকের বাংলাদেশের বন্দরগুলোতেও নোঙর করতে হয়েছে। যার কারণে আমাদের এই ভূখণ্ডের মানুষও ইসলামের সুবাস পেয়েছে। আমরা শামিল হতে পেরেছি দ্বীনে মুবিন আল-ইসলামের ছায়াতলে। ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, আল্লাহর রাসূলের এই সাহাবি এবং তাঁর সঙ্গী-সাথীগণ একটানা নয় বছর সফরে ছিলেন। (বাংলাদেশে ইসলামের আগমন, একে এম নাজির আহমেদ, পৃষ্ঠা-২০-২১) কী জন্য এতো দূর ও দুর্গম পথের সফরে ছিলেন টানা এতটা বছর, তা তো বুঝতেই পারছেন। অজানা-অচেনা কিছু জনপদে তিনি বা তাঁরা স্রেফ আল্লাহর দ্বীনের প্রচার-প্রসার-প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যেই সকল প্রকার ভয়-জড়তাকে পেছনে ফেলে ছুটে এসেছেন। দ্বীনের জ্যোতির্ময় আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন।
তাঁরা যে সময় যে পরিস্থিতিতে দ্বীন প্রচার করেছেন, তাঁদের সেই সময়কার বা তখনকার তুলনায় আজকের দুনিয়াটা কতো সহজ হয়ে গিয়েছে আমাদের জন্যে। পৃথিবী এখন কবি নজরুলের ভাষায় “আপন হাতের মুঠোয়” রয়েছে। তাই তো আমাদের জন্য দ্বীন প্রচারের মাধ্যমগুলোও এখন অনেক বেশি সহজ। আমরা এখন বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসেই আটলান্টিকের ওপারে বা গ্রেটওয়ালের ওপাশে দ্বীনকে পৌঁছে দিতে পারি।
২.
দ্বীন প্রচারের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে লেখালেখি। এই লেখালেখিটাও আজকে কত সহজেই করা যায়। ইন্টারনেট-সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে নিজ আদর্শ ও চিন্তাধারা অতি-সহজেই অন্যের নিকট পৌঁছে দেওয়া যায়। আর সেটাকে পুঁজি করেই যারা আল্লাহর দেওয়া বিধানের বিনাশ চায়, দ্বীনের ক্ষয়-ক্ষতি চায়, তারা তাবৎ দুনিয়ার সকল মাধ্যমকেই কাজে লাগিয়ে দ্বীন-ইসলামের বিরুদ্ধে, ইসলামি তাহজিব-তমদ্দুন, কৃষ্টি-সভ্যতার বিরুদ্ধে হরদম লিখে যাচ্ছে। চালিয়ে যাচ্ছে প্রপাগান্ডা। অথচ আমাদের দ্বীন শ্রেষ্ঠ দ্বীন, আমাদের সভ্যতা শ্রেষ্ঠ সভ্যতা, আমাদের উম্মাহ শ্রেষ্ঠ উম্মাহ। এই কথাটি মহাগ্রন্থ আল-কুরআনই আমাদেরকে জানান দেয়, “তোমরাই সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মাহ, মানুষের কল্যাণেই তোমাদের আবির্ভূত করা হয়েছে।” (সূরা আলে-ইমরান : ১১০) আমরা সেই শ্রেষ্ঠ দ্বীনের অনুসারী ও শ্রেষ্ঠ উম্মাহর একজন গর্বিত সদস্য হয়েও কেন তাহলে লেখবো না? আমরা কালজয়ী এক আদর্শের উত্তরসূরি হওয়ার পরেও কেন আমরা আমাদের আদর্শের পক্ষে কলম ধরবো না? আমরা কেন থেমে থাকবো? আবু ওয়াক্কাস মালিক ইবনু ওয়াহাইব রা. যদি সেই সুদূর আরব থেকে ইসলামের সেই দিগি¦জয়ী চেতনা নিয়ে দিনের পর দিন সমুদ্রের নোনা জলে ভেসে ভেসে চীনে আসতে পারেন, তাহলে আরাম কেদারায় বসে বসেও আল্লাহর দ্বীনের বিজয়ের জন্য, তাঁর দ্বীনের পথে আহ্বান করে দু’কলম লিখতে পারবো না কেন? আমাদের কি উচিত নয় নিজেদের সামর্থ্যরে আলোকে সর্বোচ্চটুকু ঢেলে দিয়ে লেখালেখির এই ময়দানে অবতীর্ণ হওয়া?
লেখালেখি স্রেফ একটি নান্দনিক শিল্পই নয় শুধু, লেখালেখি একটি ইবাদাতও বটে। স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা নিজেই সর্বপ্রথম লেখার প্রথা প্রবর্তন করেন। তিনি এ জগৎকে সৃষ্টি করার ৫০ হাজার বছর আগেই সমগ্র সৃষ্টিজীবের ‘তাকদির’ লিখে রেখেছিলেন। (মুসলিম-২৬৫৩) লেখালেখির অন্যতম মাধ্যম যে ‘কলম’ সেই কলমের শপথ করে তিনি তাকে এক অনন্য মর্যাদার আসনে সমাসীন করলেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা পবিত্র কুরআনে কলমের শপথ করে বলেছেন, ‘নুন ও কলমের শপথ এবং ওই বস্তুর শপথ! যা তারা লিপিবদ্ধ করে।’ (সূরা কলম : ১)
এই কলমের কালি দিয়ে লিখিত একটি বই, একটি প্রবন্ধ-নিবন্ধ, একটি লেখা লক্ষ-কোটি মানুষের জীবনের চিন্তা-দর্শন, বোধ-বিশ্বাস, নীতি-আদর্শ নিমেষেই বদলে দিতে পারে। দিতে পারে সারাটা পৃথিবীর গতিপথকেই বদলে দিতে। দিতে পারে সমকালীন বিশ্বকেও দারুণভাবে নাড়িয়ে!
অগণিত মানুষকে অঢেল অর্থের চাইতেও বেশি লাভবান করে একটি লেখা। একটি লেখা সমকালীন যুগ থেকে শুরু করে অনাগতকাল পর্যন্ত লাভবান করে মানুষ এবং মানুষের সমাজকে। একজন লেখকের একটা লেখা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আদর্শ সমাজ গঠনের আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করে। সেই ইমাম আবু হানিফা, আবু ইউসুফ, ইবনে তাইমিয়া, ইবনুল কায়্যিম, ইবনে কাসির, ইমাম গাজালি থেকে শুরু করে গত শতাব্দীর উম্মাহর শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ ইমাম সাঈয়েদ মওদূদী উস্তায সাঈয়েদ কুতুবগণের (রাহিমাহুমুল্লাহ) লেখা আমাদেরকে কী দারুণভাবেই না উপকার করে যাচ্ছে। সমাজকে কী তীব্রভাবেই না নাড়া দিয়ে যাচ্ছে! তাঁদের লেখার ওপর ভর করেই তো আমরা একটি সোনালি সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে আজো কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের আন্দোলনের ভিত্তি তো তারাই বিনির্মাণ করে দিয়ে গেছেন। সাইয়্যেদ মওদূদী একটি বই লেখার অপরাধে (!) ফাঁসির মঞ্চ পর্যন্ত যেতে হয়েছে। সাইয়্যেদ কুতুবকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে শহীদ পর্যন্ত করা হয়েছে। জীবনের বিশাল একটা অংশ কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে কাটাতে হয়েছে ইমাম ইবনে তাইমিয়াকে। এরও পূর্বের ইমাম নাসাঈ-কে তো মসজিদের মধ্যেই মেরে রক্তাক্ত করে শাহাদাতের দরজা পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের লেখালেখি, তাঁদের এই সুবিশাল ত্যাগের বদৌলতেই তো মানবসমাজে জেঁকে বসা ভ্রান্তিগুলো ভেঙেছে। এখন অবধি তাঁদের সাহায্য ছাড়া জ্ঞানের দুনিয়ায় পা ফেলানো মুশকিল, বলতে গেলে অসম্ভবই বটে!
আমরা যদি ইসলামি আদর্শের বাইরেও তাকাই, তাহলেও এর অনন্ত উদাহরণ আছে আমাদের সামনে। কার্লমার্ক্সর দাস ক্যাপিটাল গ্রন্থটির কথায়ই ধরুন না, বিশ্বব্যাপী সেই গ্রন্থটি কী তুমুল কাণ্ডই না ঘটিয়েছিলো। বিশেষত চীন-রাশিয়ার মানুষদেরকে কমিউনিজমের খোদাদ্রোহী নাস্তিকতার অতলান্তে কেমন করে নিক্ষিপ্ত করেছিলো, তা তো সকলেরই জানা কথা। গ্রিক ফিলোসোফার সক্রেটিস, প্লেটো, অ্যারিস্টটল বা তারও পূর্বের হেরোডোটাস, পিথাগোরাসরা কী মজবুতভাবেই না পৃথিবীর মানুষকে এবং এই মানুষের চিন্তাভাবনাকে নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছে। গ্রিক ফিলোসফির আঘাতে তো পরবর্তীতে প্রাচ্যবিদরা ইসলামের দর্শনকে একপ্রকার ছিন্নভিন্নই করে ফেলেছে। পাশ্চাত্যের লেখক-চিন্তকদের দাঁতের দাগে তো ইসলাম আজো ক্ষতবিক্ষত ও জরাগ্রস্ত। যার কারণেই তো আমাদের ইমাম ইবনে তাইমিয়া-গাজালি থেকে শুরু করে ইমাম মওদূদী-কুতুব ও আলি নদভীদের উত্থান। পাশ্চাত্য সভ্যতার চিন্তা ও দর্শনের মূলে আঘাতের পর আঘাত করে তাঁরাও তাদের নগ্ন স্বরূপ উন্মোচন করে ইসলামের কালজয়ী আদর্শের অনন্যতা ফুটিয়ে তুলেছেন। ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব ফুটিয়ে তোলার কাজ করে লেখালেখি করে গেছেন।
তাঁরা যে লিখতেন, এর পেছনে আল্লাহ প্রদত্ত প্রতিভার পাশাপাশি রয়েছে নিজেদের বিরাম-বিরতিহীন অধ্যয়ন-অধ্যবসায় এবং নিñিদ্র জ্ঞান সাধনা! মানুষের সবচেয়ে সেরা সম্পদ হিসেবে গণ্য করা হয় তাঁর জ্ঞান। তাঁরা সেই অধ্যয়ন-অধ্যবসায় করে জ্ঞান নামক সেই সম্পদের সুষম ব্যবহার করে গেছেন। তাঁরা জ্ঞান নামক সেই সম্পদের সুষম ব্যবহার না করলে কিংবা অব্যবহৃত অবস্থায় রেখে দিলে তা অর্থহীন অকার্যকর এক বস্তুতে পরিণত হয়ে পড়তো। হয়তো ব্যক্তি হিসেবে নিজেরাই বেঁচে থাকাবস্থায় কিছু ফায়দা হাসিল করতো কেবল। উম্মাহ আজকে তাঁদের থেকে উপকৃত হতো না।
এখানে দুটো বিষয়, প্রথমত হচ্ছে যারা জ্ঞান নামক সম্পদের চর্চা করেন, জ্ঞানের জগতে বিচরণ করেন, তাদের উচিত নিয়ম করে লেখালেখি করা। কারণ, যারা লেখেন না, তাদের ভেতরের জ্ঞান অকেজো আর অর্থহীন হয়ে পড়ে। আর যাঁরা লেখেন তাঁদের নিজেদের জ্ঞান যেমন শাণিত ও শক্তিশালী হয়, তদ্রƒপ অন্যরাও তা পড়ে জ্ঞানের অনুশীলন করতে পারে। যাচাই করতে পারে নিজেদেরকে। দিকনির্দেশনা পেয়ে সঠিক পথে চলতে পারে। দ্বিতীয়ত হচ্ছে, যাঁরা লেখালেখি করেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যাঁদেরকে লেখালেখির শক্তি দিয়েছেন, বা যাঁদের কলমকে শাণিত ও শক্তিশালী করেছেন, তাঁদের উচিত হচ্ছে নিয়মিত অধ্যয়ন করা। পরিকল্পনা মাফিক জ্ঞানের চর্চা করে যাওয়া।
এই বিষয়টির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে গত শতাব্দীর আরেকজন শক্তিশালী চিন্তাবিদ আলিম, সাইয়িদ আবুল হাসান আলি নদভী (রহ.) বলেছিলেন, ‘আজ রক্তের জিহাদের যতোটা প্রয়োজন, চিন্তার জিহাদের প্রয়োজন তারচেয়ে বেশি। ধারালো তলোয়ারের যতটা প্রয়োজন, শাণিত কলমের প্রয়োজন তারচেয়ে বেশি। বাতিলের বিরুদ্ধে তোমাদের আজ শিক্ষা-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ময়দানে এবং চিন্তা-মতবাদ ও দর্শনের জগতে লড়তে হবে। কেননা নবুয়তে মুহাম্মাদির ওপর এখন তলোয়ারের হামলা যতটা না চলছে, তার চেয়ে বেশি চলছে যুক্তি-দর্শনের আক্রমণ। সুতরাং নতুন যুগের নতুন জিহাদের জন্য তোমরা এক দল মুজাহিদ তৈরি হও।’
৩.
লেখককে হয়তো উপেক্ষা বা অবমূল্যায়ন কেউ না কেউ কোনো না কোনো কারণে করতেই পারে, এবং করেনও বটে। কিন্তু একজন লেখককে ব্যক্তি হিসেবে উপেক্ষা করলেও লেখকের লেখক সত্তাটিকে কেউ উপেক্ষা করতে পারে না। লেখককে কেউ ফেলতে পারে না। পারে না কেউ লেখককে বাদ দিতে। কবি আল মাহমুদ বলেছেন, ‘কয়দিন আগেও তোমরা বাংলাদেশের তিনজন পাঁচজন কবির নাম নেওয়ার পর অনুগ্রহ করে আমার নাম নিতে, আবার কখনও নিতে না কিন্তু এখন তোমরাইতো বলছো ‘আল মাহমুদ শামসুল হক, শামসুল হক আল মাহমুদ।’ এর অর্থ হলো আমি আমার কলম দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। যদি তোমাদের কাঁধের ওপর ভর করে আমি দাঁড়িয়ে থাকতাম, তাহলে তো বহু আগেই তোমরা আমাকে ফেলে দিতে। আমি যেহেতু আমার কলমের ওপর দাঁড়ানো, তাই আমাকে কেউ ফেলতে পারেনি। সবাই উপেক্ষা করেছে, কিন্তু কেউ ফেলতে পারেনি। এখন তোমরা বাধ্য হচ্ছো স্বীকার করে নিতে, এই স্বীকার করাটা আমাকে না, তোমরা তোমাদের স্বার্থে আমাকে স্বীকার করে নিচ্ছো,’ এটা হলো মানুষের কলমের শক্তি।
কোনো একদিন লেখকের যবনিকাপাত ঘটবে। ঘটবে তাঁর জীবনের অবসান। কিন্তু তাঁর কর্মগুলো রয়ে যাবে অনন্তকাল। রয়ে যাবে তিনি যা লিখেছেন সেগুলো। সে হিসেবে লেখালেখি এক সর্বোত্তম সদাকায়ে জারিয়াও বটে। রাসূল সা. ইরশাদ করেন, ‘যখন কোনো মানুষ মারা যায়, তখন তাঁর সমস্ত আমলের সওয়াব বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমলের সওয়াব বন্ধ হয় না। সেগুলো হলো- এক. তার সদকায়ে জারিয়া, দুই. তার প্রবর্তিত এমন কোনো জ্ঞান-বিজ্ঞান, যা দ্বারা মানুষ উপকৃত হয়, তিন. তার রেখে যাওয়া এমন সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে।’ (মুসলিম-১৬৩১)
লেখকের যেসব লেখার জন্য মানুষ হিদায়াতের পথে আসবে, যেসব লেখার মাধ্যমে মানুষ তার রব মহান আল্লাহকে চিনবে, ভালো কাজ করবে, একজন লেখক সেসব লেখার জন্য পরপারে প্রণোদনা পেতেই থাকবেন। সাওয়াবের অংশীদার হতেই থাকবেন, ইনশাআল্লাহ। হাদিসে রাসূল সা. থেকে জানতে পারি যে, ‘নিশ্চয়ই সৎকাজের পথপ্রদর্শক তা সম্পাদনকারীর অনুরূপ।’ (তিরমিজি-২৬৭০)
আমরা যাঁরা ইসলামি আদর্শ প্রতিষ্ঠার উদগ্র আকাক্সক্ষা পোষণ করি আমাদের সামনে কতো প্রতিবন্ধকতা, কতো বাধার বিন্ধ্যাচল আমাদের সামনে রয়েছে হিমাদ্রিসম অটল আর অনড় হয়ে দাঁড়িয়ে। আমাদের দ্বীন কায়েমের এই সংগ্রামের মধ্যেও কতোজন কতোভাবেই না চিন্তাগত ভেজাল আর ভ্রান্তি ঢুকিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত। লিপ্ত রয়েছে কতোজন আবার দ্বীনকে কাটছাঁট আর পশ্চিমাদের উপযোগী করে এক ভেজাল মিশ্রিত দ্বীন আমাদের সামনে হাজির করার প্রচেষ্টায়। সেসব ভ্রান্তি ভাঙাতে, মানুষের মগজকে সত্য গ্রহণের জন্য জাগাতে, দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে বেগবান করতে, আল্লাহর দ্বীনকে তাঁর জমিনে বিজয়ী আদর্শ হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত আর সমুন্নত করতে, সর্বোপরি নিজেদের পরকালীন সাফল্য আর মুক্তি সুনিশ্চিত করতে চলুন আমরা যাঁরা ইসলামী আদর্শের প্রচার ও প্রতিষ্ঠা চাই, আমরাও কলম হাতে তুলে নিই। শুরু করি কলমের সংগ্রাম। আহ্বান করি মানুষকে আলোর পথে। হিদায়াতের দিকে। পারতপক্ষে সেটার লক্ষ্যে প্রস্তুতিটা তো শুরু করি!
লেখক : ব্লগার, গবেষক ও কলামিস্ট
আপনার মন্তব্য লিখুন