[তৃতীয় কিস্তি]
নির্দিষ্ট কক্ষপথে আবর্তিত নক্ষত্র
ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকবে। প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রেই সেই লক্ষ্যকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হবে; যেন নির্দিষ্ট কক্ষপথে আবর্তিত একটি নক্ষত্র। মানবজীবন সংক্ষিপ্ত। এ সময়ের মধ্যেই তাকে বিস্তৃত কাজ শেষ করতে হবে এবং অসংখ্য দায়িত্ব পালন করতে হবে। কাজেই এলোমেলো ছুটে চলার মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা পরিকল্পিতভাবে খাবে, পরিকল্পিতভাবে বিশ্রাম নেবে, পরিকল্পিতভাবে নিদ্রায় যাবে। পরিকল্পনার বাইরে তারা কিছুই করবে না। কারণ জীবনের সবুজ উদ্যানকে সুন্দররূপে সাজাতে পরিকল্পার কোনো বিকল্প নেই। এভাবে কেবল ব্যষ্টিক নয়, সামষ্টিক জীবনেও পরিকল্পনা থাকতে হবে। সংগঠনকে যাবতীয় কাজের পরিকল্পনা নিতে হবে। আসলে পরিকল্পিতভাবে জীবনের সকল কাজ আঞ্জাম দেওয়াই মূলত ইসলামী আন্দোলনের মৌলিক কাজ। কেবল পরিকল্পিতভাবে কাজ করলেই হবে না; একইসাথে জালের মতো একে অপরের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত হয়ে কাজ করতে হবে। বিক্ষিপ্ত ও বিচ্ছিন্ন জীবন ইসলামের কাম্য নয়। এজন্য ইসলামে সঙ্ঘবদ্ধভাবে বসবাস করতে বলা হয়েছে। তবে এর মানে এই নয় যে জীবনের বৈচিত্র্যকে বিসর্জন দিয়ে পথ চলতে হবে। বৈচিত্র্য থাকবে, থাকবে না কেবল বৈপরীত্য।
মৌমাছির রাষ্ট্রব্যবস্থা
মৌমাছিদেরও স্বতন্ত্র রাষ্ট্রব্যবস্থা রয়েছে। তারা একটি রানির অধীনে জীবনযাপন করে এবং সকল কর্মতৎপরতা চালায়। যেভাবে মৌমাছিদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি মৌচাক গড়ে তোলা হয় সেভাবেই ইসলামী সংগঠন, আন্দোলন, রাষ্ট্র ও সভ্যতাকে গড়ে তুলতে হবে এবং মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে। মৌমাছিরা খুবই পরিশ্রমী, আনুগত্যশীল ও লক্ষ্য বাস্তবায়নে তৎপর। বস্তুগত উপায়-উপকরণ সংগ্রহে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের মৌমাছির মতো ভূমিকা পালন করতে হবে।
ইসলামী পুনর্জাগরণ আন্দোলনের কর্মীদের ইস্তিকামাত
ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের হতে হবে হিমাচলের মতো সুদৃঢ়। জাহেলিয়াতের সকল তুফান ও জলোচ্ছ্বাসকে মাড়িয়ে তারা ন্যায়ের পথে দৃঢ়তার সাথে দাঁড়িয়ে থাকবে। এটাই মূলত সিরাতুল মুস্তাকিমে চলার দাবি। মুস্তাকিম শব্দের অর্থই হলো সুদৃঢ়, অবিচল। এ আন্দোলনের কর্মীরা তৃণলতার ন্যায় জীর্ণ-শীর্ণ হবে না, যারা সামান্য বাতাসের ধাক্কায় ধরাশায়ী হয়ে পড়ে। তারা তাদের লক্ষ্য বাস্তবায়নে হবে অটল ও অবিচল। মাওলানা সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী (রহ.) লেখেন, ‘‘আল্লাহর বিধান ভীরু কাপুরুষদের জন্য অবতীর্ণ হয়নি। নফসের দাস ও গোলামদের জন্য নাযিল হয়নি। বাতাসের বেগে উড়ে চলা খড়কুটো, পানির স্রোতে ভেসে চলা কীটপতঙ্গ এবং প্রতিটি রঙে রঙিন হওয়া রঙহীনদের জন্য জন্য অবতীর্ণ হয়নি। এমন দুঃসাহসী নরশার্দুলদের জন্য অবতীর্ণ হয়েছে, যারা বাতাসের গতি বদলে দেয়ার দৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করে, যারা নদীর তরঙ্গের সাথে লড়তে এবং স্রোতধারা ঘুরিয়ে দেবার মতো সৎসাহস রাখে।’’ (ইসলাম ও পাশ্চাত্য সভ্যতার দ্বন্দ্ব, সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী, পৃ. ১৬৫)। কাজেই ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের ঈমান ও ইস্তিকামাত থাকতে হবে উচ্চমানের।
দ্বীনকে জীবনোদ্দেশ্য হিসেবে গ্রহণ করতে হবে
ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের দ্বীনকে জীবনের উদ্দেশ্য হিসেবে গ্রহণ করতে হবে এবং এরই আলোকে জীবনের সকল কাজ আবর্তিত হবে। কেবল ব্যক্তিগত জীবন ও কতিপয় ইবাদত নয়, গোটা জিন্দেগিকে দ্বীনি উদ্দেশ্যে গড়ে তুলতে হবে। এ আন্দোলনের কর্মীদের পেশা, ক্যারিয়ার, বুদ্ধিবৃত্তি, উচ্চশিক্ষা ও যাবতীয় অর্জনের মূল মাকসাদ হবে দ্বীনের বিজয়। মাওলানা সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী এ বিষয়ে অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বলেছেন, সমাজ সংস্কার ও পরিগঠনে ব্রতী কর্মীদের মধ্যে এ তিনটি গুণাবলির সাথে সাথে আর একটি গুণ থাকতে হবে। তা হলো খোদার বাণী বুলন্দ করা এবং দ্বীনের প্রতিষ্ঠা নিছক তাদের জীবনের একটি আকাক্সক্ষার পর্যায়ভুক্ত হবে না বরং এটিকে তাদের জীবনোদ্দেশ্যে পরিণত করতে হবে। এক ধরনের লোক দ্বীন সম্পর্কে অবগত হয়, তার ওপর ঈমান রাখে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করে কিন্তু তার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম তাদের জীবনের লক্ষ্য বিবেচিত হয় না বরং সততা ও সৎকর্ম করে এবং এই সঙ্গে নিজেদের দুনিয়ার কাজ কারবারে লিপ্ত থাকে। নিঃসন্দেহে এরা সৎ লোক। ইসলামী জীবন ব্যবস্থা কার্যত প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকলে তারা ভালো নাগরিকও হতে পারে। কিন্তু যেখানে জাহেলি জীবনব্যবস্থা চতুর্দিক আচ্ছন্ন করে রাখে এবং তাকে সরিয়ে তদস্থলে ইসলামী জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করার প্রশ্ন দেখা দেয় সেখানে নিছক এ ধরনের সৎলোকদের উপস্থিতি কোনো কাজে আসে না বরং সেখানে এমন সব লোকের প্রয়োজন হয় যাদের জীবনোদ্দেশ্যরূপে এ কাজ বিবেচিত হয়। দুনিয়ার অন্যান্য কাজ তারা অবশ্যই করবে কিন্তু তাদের জীবন একমাত্র এ উদ্দেশ্যের চারিদিকে আবর্তন করবে। এ উদ্দেশ্য সম্পাদনের জন্য তারা হবে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। এ জন্য নিজেদের সময়-সামর্থ্য, ধন-সম্পদ ও দেহ-প্রাণের সকল শক্তি এবং মন-মস্তিষ্কের পরিপূর্ণ যোগ্যতা ব্যয় করতে তারা প্রস্তুত হবে। এমনকি যদি জীবন উৎসর্গ করার প্রয়োজন দেখা দেয় তাহলে তাতেও তারা পিছপা হবে না। এ ধরনের লোকেরাই জাহেলিয়াতের আগাছা কেটে ইসলামের পথ পরিষ্কার করতে পারে। (ইসলামী আন্দোলন : সাফল্যের শর্তাবলী, সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী, পৃ. ১৪)
দ্বীনকে জীবনের উদ্দেশ্য হিসেবে মেনে নিলে সকল ক্ষেত্রে দ্বীনের পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা অনুসরণ আবশ্যক। বিশেষ করে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের দ্বারা পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইসলামের বাস্তব অনুশীলন জারি রাখা জরুরি। তাছাড়া দুনিয়াতে যেমন কল্যাণ সম্ভব নয়, আখিরাতেও পেতে হবে লাঞ্ছনা ও কঠিন শাস্তি।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইসলামী নীতিমালা অনুসরণ
শিক্ষা কী? মানুষকে তার রবের ব্যাপারে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার নামই হলো শিক্ষা। আরবিতে যাকে বলা হয় তালীম, তাদরীস ও তারবীয়ত। এর মাধ্যমে মানুষ ও তার ¯্রষ্টার মধ্যকার সম্পর্ক কী তা জানতে পারা যায়। একইসাথে জানা যায় বিশ^জগতের সাথে এবং সমাজের সাথে ইনসানের সম্পর্কের বিষয়ে। কাজেই শিক্ষার বিষয়ে সিরিয়াস ভূমিকা পালন করা জরুরি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় ইসলামের বিধান মেনে চলার গুরুত্ব অপরিসীম। শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হলে একটি জাতির আর কিছুই থাকে না। তাই এ বিষয়ে কতিপয় দিকে নজর রাখা চাই।
শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ নয় : আজকাল যেভাবে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ হচ্ছে তা দেখে শঙ্কিত হওয়া ছাড়া উপায় নেই। শিক্ষার মাঝে রূহানিয়াত নেই, আধ্যাত্মিকতা নেই, নৈতিকতা ও আখলাক নেই, রহমত ও ইহসান নেই। মনে হচ্ছে টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থীরা তথ্য কিনে গিলে খাচ্ছে। সবাই যেন এ শিক্ষাবাণিজ্যের স্রােতের সাথে ভেসে যাচ্ছে। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরাও যদি এ স্রােতে ভেসে যায় তাহলে বিশ^টাকে সাজানোর দায়িত্বে আর কারা থেকে যাবে? কাজেই স্রােতের সাথে গা ভাসানো যাবে না; বরং স্রােতের বিপরীতে অবস্থান নিয়ে এ আন্দোলনের কর্মীদের কাজ করতে হবে। বিশ^াসীরা কখনো হতাশ নয়, আশার আলো ছড়িয়ে দেওয়াই তাদের কাজ। শিক্ষা নিয়ে তাদের কাজ হবে সবার চেয়ে আলাদা। তারা এমনভাবে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবে যেখান থেকে বেরিয়ে আসবে আগামীর নির্মাতারা। তাই শিক্ষাবাণিজ্যের সাথে তারা নিজেদের মিশিয়ে নেবে না; তারা জাহেলিয়াতের নিগূঢ় অন্ধকারের ভেতর নূরের পরশ ছড়িয়ে দিতে কাজ করবে।
শিক্ষার সামাজিকীকরণ জরুরি : শিক্ষার ইসলামীকরণ আন্দোলনের ক্ষেত্রে সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী, সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী, সাইয়েদ কুতুব, মুহাম্মদ কুতুব, ড. ইসমাঈল রাজী আল-ফারুকী, আব্দুল হামীদ আহমদ আবু সুলাইমান, ড. সৈয়দ আলী আশরাফ, ড. ওসমান বকর, প্রফেসর গোলাম আযম ও শাহ আব্দুল হান্নানসহ আরো অসংখ্য মনীষীর বিরাট অবদান রয়েছে। কিন্তু কেবল শিক্ষার ইসলামীকরণই যথেষ্ট নয়, সামাজিকীকরণও জরুরি। সমাজের সকল মানুষের জন্য শিক্ষাকে আবশ্যক করতে হবে এবং শিক্ষাগ্রহণকে সহজ করতে হবে। অর্থের অভাবে কেউ যাতে শিক্ষাগ্রহণ থেকে মাহরুম না হয়, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর এ কাজে ইসলামী আন্দোলনকেই এগিয়ে আসতে হবে। এ কাজে কিছুতেই অবহেলা প্রদর্শন করা যাবে না। প্রতিটি মসজিদে মক্তব গড়ে তুলতে হবে, সরকারি ও বেসরকারি সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচর্যা করতে হবে। দুর্গম অঞ্চলে যাতায়াতের পথ সহজ করতে উদ্যোগ নিতে হবে। এতে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা যেমন বাস্তব উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসবে, তেমনি পত্রপত্রিকায় লেখালেখি, লিফলেট বিতরণ ও বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারের মাধ্যমে সমাজকে সচেতন করে তুলবে।
সুন্দর পরিবেশ : শিক্ষার জন্য পরিবেশ সুন্দর হওয়া জরুরি। পরিবেশ যেমন হবে সেখানকার শিক্ষাও তেমন হবে; এর কম-বেশি হবে না। পরিবেশ সুন্দর হলে মনও সুন্দর হয়ে গড়ে ওঠে। আর পরিবেশ মন্দ হলে তার একটি প্রভাব হৃদয়ে থেকে যায়, যা থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন হয়ে পড়ে। এজন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবাসন ব্যবস্থা সুন্দর হতে হবে। ক্লাসরুম হতে হবে পরিপাটি ও চিত্তাকর্ষক। খিলার মাঠ ও শরীরচর্চার পর্যাপ্ত জায়গা ও অবকাশ থাকা চাই। স্বাস্থ্যকর জায়গায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে- যেখানে থাকবে পর্যাপ্ত আলো ও বাতাস।
জ্ঞান ও আখলাকের সমন্বয় : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভিত্তি হবে মূলত জ্ঞান। জ্ঞান যতটা বিস্তৃত ও শক্তিশালী হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও হবে ততটা বিস্তৃত ও শক্তিশালী। তথ্য মুখস্থ করানোর নাম জ্ঞান নয়। জ্ঞান হচ্ছে শিক্ষকের কাছে থাকা তথ্য ও তথ্যের নির্যাস দ্বারা তৈরি প্রদীপ (মাসাবীহ) যা শিক্ষার্থীর হৃদয়ের অন্ধকারকে দূরীভূত করে এবং আলোয় পূর্ণ করে দেয়। এজন্য ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের দ্বারা পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভালো শিক্ষকের সমাবেশ থাকতে হবে। যারা হবে ব্যক্তিত্ববান, ন্যায়নীতিসম্পন্ন, জ্ঞানপিপাসু, অনুসন্ধানী দৃষ্টি-সম্পন্ন এবং স্বপ্নদ্রষ্টা। জ্ঞানের সাথে যাতে আখলাকের সমন্বয় ঘটে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। আখলাক হলো সেই জিনিস যা সৃষ্টির স্বভাবজাত (ইসলামী) গুণাবলির বিকাশ ঘটায়। আখলাকবিহীন শিক্ষার কোনো অস্তিত্ব নেই। অর্থাৎ যেখানে আখলাক নেই সেখানে শিক্ষাও নেই।
ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ইসলামী নীতিমালার অনুসরণ
এজন্য হালাল হারামের সীমারেখা মেনে চলা, উত্তম কাজের প্রতিষ্ঠা ও মন্দ কাজের উৎখাত, মজুদদারি না করা, শ্রমিকদের বেতন সঠিকভাবে সময়মতো প্রদান করা এবং নৈতিক পরিবেশ সুন্দর রাখাও সমীচীন।
হালাল ও হারামের সীমারেখা : ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ইসলামের নীতিমালা যথাযথভাবে পরিপালন করবে। এক্ষেত্রে হালাল ও হারামের সীমারেখা অবশ্যই মেনে চলবে। হালাল হচ্ছে অনেক বিস্তৃত এবং এরই মাঝে জীবন ও জগতের সৌন্দর্য। ইসলামের প্রাথমিক যুগে মুসলিম ব্যবসায়ীরা সারা দুনিয়ায় যে শক্তির মাধ্যমে ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটিয়েছেন সেটি হলো ‘হালাল’। তারা প্রথমে ঈমান আনার দাওয়াত না দিয়ে হালাল ও আখলাকের সৌন্দর্য উপস্থাপন করেছেন। এরপর তারা ঈমান আনার দাওয়াত দিয়েছেন। কাজেই ব্যবসার ভিত্তি হবে হালাল। যেকোনো প্রকার হারাম থেকে বিরত থাকতে হবে। শুধু হারাম পণ্য নয়, একইসাথে হারাম পদ্ধতি থেকেও বিরত থাকতে হবে।
উত্তম কাজের প্রতিষ্ঠা ও মন্দ কাজের উৎখাত : ব্যবসার পরিধি অনেক বিস্তৃত। যেকোনো ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান- হোক সেটা ব্যাংক কিংবা কোনো কোম্পানি- সকল ধরনের প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য হবে সৎকর্ম প্রতিষ্ঠা এবং মন্দ কাজের উৎখাত। কোনোভাবেই অন্যায় ও মন্দকে ঠাঁই দেওয়া যাবে না। ঈমানদারের অন্যতম বৈশিষ্ট্যই তো আমলে সালেহ করা, সৎকর্মে আদেশ প্রদান করা এবং অন্যায় কাজে বাধা দেওয়া। সেখানে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অন্যায় ও মন্দকে গেঁথে রাখার অবকাশ কোথায়?
মজুদদারি না করা : কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির উদ্দেশ্যে খাদ্যশস্যে মজুদদারি করা যাবে না। ইসলামী আইনশাস্ত্রবিদদের মতে, ইসলামী পরিভাষায় মজুদদারি হচ্ছে, খাদ্যশস্য মজুদ করে কৃত্রিম অভাব সৃষ্টি করা। অতঃপর মূল্য বৃদ্ধি পেলে তা বিক্রি করে অধিক পরিমাণে লাভবান হওয়া। আল-হিদায়া প্রণেতার ভাষায়-ইহতিকার বা মজুদদারি হচ্ছে, খাদ্যসামগ্রী ক্রয় করে মূল্য বৃদ্ধির আশায় গুদামজাত করা। ইহতিকার হচ্ছে, খাদ্যসামগ্রী বা নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী ক্রয় করে উচ্চ মূল্যের জন্য চল্লিশ দিন পর্যন্ত আটক রাখা। ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.)-এর মতে, “যে সকল জিনিস আটকে রাখলে সর্বসাধারণের কষ্ট হয়, তাকে ইহতিকার বা মজুদদারি বলে।’’ ইমাম গাযালী রহ. বলেন, “মজুদদারি হলো, খাদ্যশস্য ক্রয় করে মূল্যবৃদ্ধি পেলে বিক্রয় করার উদ্দেশ্যে মজুদ করে রাখা।’’ ফাতওয়ায়ে রাহমানিয়ার বর্ণনামতে, মজুদদারি হলো মানুষ বা প্রাণীর প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী ও জিনিসপত্র সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে ক্রয় করে এমনভাবে জমা করে রাখা যে, বিশেষ প্রয়োজনের মুহূর্তেও আরো বেশি মুনাফার আশায় বিক্রয় না করা। রাসূল সা. বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি মুসলমানদের খাদ্যশস্য মজুদ রাখে, আল্লাহপাক তার ওপর দারিদ্র্য চাপিয়ে দেন।’’ (আবু দাউদ, হাদীস নং : ৫৫)।
রাসূল সা. আরো বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি ৪০ দিনের খাবার মজুদ রাখে, সে আল্লাহর জিম্মা থেকে বেরিয়ে যায়।’’ (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা : ২০৩৯৬)। অন্য হাদীসে এসেছে : ‘‘যে ব্যক্তি খাদ্যশস্য গুদামজাত করে সে অপরাধী।’’ (আল মু’জামুল কাবীর : ১০৮৬)
রাসূলুলাহ সা. বলেছেন, “বাজারে পণ্য আমদানিকারক রিযিকপ্রাপ্ত হয়। আর পণ্য মজুদকারী অভিশপ্ত হয়।” ড. ইউসুফ আল-কারযাভী এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন, “ব্যবসায়ী দুইভাবে মুনাফা লাভ করে। একটি হচ্ছে, সে পণ্যদ্রব্য মজুদ করে অধিক মূল্যে বিক্রয় করার আশায় অর্থাৎ পণ্য আটক করে রাখলে বাজারে তার তীব্র সঙ্কট দেখা দেবে তখন যত চড়া মূল্যই দাবি করা হোক না কেন, তাই দিয়েই তা ক্রয় করতে বাধ্য হবে। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, ব্যবসায়ী পণ্য বাজারে নিয়ে আসবে এবং অল্প অল্প মুনাফা নিয়েই তা বিক্রয় করে দেবে। পরে এ মূলধন দিয়ে সে আরো পণ্য নিয়ে আসবে এবং তাতেও সে মুনাফা পাবে। এভাবে তার ব্যবসায় চলতে থাকবে ও পণ্যদ্রব্য বেশি কাটতি ও বিক্রয় হওয়ার ফলে অল্প অল্প করে মুনাফা হতে থাকবে। মুনাফা লাভের এ নীতি ও পদ্ধতিই সমাজ সমষ্টির পক্ষে কল্যাণকর।”
খলিফা উমর রা. ব্যবসায়ীদের পণ্য মজুদকরণ সম্পর্কে ঘোষণা করেছিলেন, “আমাদের বাজারে কেউ যেন পণ্য মজুদ করে না রাখে। যাদের হাতে অতিরিক্ত অর্থ আছে তারা যেন বহিরাগত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তামাম খাদ্যশস্য কিনে তা মজুদ করে না রাখে। যে ব্যক্তি শীত-গ্রীষ্মের কষ্ট সহ্য করে আমাদের দেশে খাদ্যশস্য নিয়ে আসে সে উমরের মেহমান। অতএব সে তার আমদানির খাদ্যশস্য যে পরিমাণে ইচ্ছা বিক্রি করতে পারবে, আর যে পরিমাণে ইচ্ছা রেখে দিতে পারবে।’’ উসমান রা. তার খিলাফতকালে পণ্য মজুদ নিষিদ্ধ করেছিলেন। হযরত আলী রা. মজুদদারির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন।
ইহতিকারের উদ্দেশ্য যদি হয় মাল আটক রেখে মূল্য অনেক বৃদ্ধি পেলে তা বিক্রি করা এবং অন্যান্য প্রাণীর কষ্ট দুর্ভোগ বিবেচনা না করে সম্পদ আটক রাখা- তবে তা শরিয়তে জায়েয নয়। কিন্তু যে ব্যক্তি নিজের উৎপাদিত প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী জমা করে বা দূরবর্তী এলাকা যেখান থেকে সাধারণত সংশ্লিষ্ট এলাকায় খাদ্যসামগ্রী ও জরুরি জিনিসপত্র আসে না, সেখান থেকে ক্রয় করে এনে জমা করে রাখে বা নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী ও জিনিসপত্র ছাড়া অন্য জিনিসপত্র যা মৌলিক প্রয়োজনে পড়ে না এমন জিনিস জমা রাখে, তাহলে সে ব্যক্তি শরিয়তের দৃষ্টিতে মজুদদার গণ্য হবে না। তবে উল্লিখিত অবস্থায় যদি মানুষ কিংবা প্রাণীর বিশেষ প্রয়োজন দেখা দেয়, তাহলে সম্পদ আটক না রেখে ন্যায্যমূল্যে বিক্রয় করা নৈতিক দাবি।
মালেকি, শাফেয়ি ও হাম্বলি মাযহাবের অধিকাংশ আলেমের মতে মজুদদারি সম্পূর্ণ হারাম। কিন্তু হানাফি আলেমগণের মতে মজুদদারি মাকরূহ। রাদ্দুল মুহতার গ্রন্থাকার বলেছেন, মানুষ ও পশুর খাদ্যদ্রব্য মজুদ করার কারণে যদি সেখানকার অধিবাসীদের কষ্ট বা ক্ষতির আশঙ্কা না থাকে তাহলে মজুদ করা মাকরূহ। আর যদি ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা না থাকে তাহলে মাকরূহ হবে না। ইমাম গাযালী (রহ.)-এর মতে, মজুদদারি হারাম। তিনি এর কারণ উল্লেখ করে বলেন, এতে আল্লাহর বান্দাগণের কষ্ট ও অনিষ্ট সাধিত হয়ে থাকে। কোনো ব্যক্তি সমস্ত শস্য ক্রয়পূর্বক আটক করে রাখলে অবশিষ্ট সকলেই এ থেকে বঞ্চিত থাকবে। এ উদ্দেশ্যে খাদ্যশস্য খরিদ ও মজুদ করে রাখা পাপ।
ড. ইউসুফ আল-কারযাভী বলেন, মজুদদারি দু’টি শর্তে হারাম। যথা- ১. এমন এক স্থানে ও এমন সময় পণ্য মজুদ করা হবে যার কারণে জনগণের তীব্র অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে। ২. মজুদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হবে অধিক মূল্য হরণ। যার ফলে মুনাফার পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে। আল-মুগনী ওয়াশ মারহুল কাবীর আলা মাতানিল মুকনি ফি ফিকহিল ইমাম আহমাদ গ্রন্থকারের মতে তিনটি শর্তে মজুদদারি হারাম। যথা- ১. পণ্যক্রয়কৃত হতে হবে। যদি পণ্য আমদানীকৃত হয় বা নিজস্ব উৎপাদিত হয়, আর তা মজুদ করে রাখে তাহলে ইহতিকার হিসেবে গণ্য হবে না। ২. পণ্য একান্ত প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য হতে হবে। সুতরাং মসলা, হালুয়া, মধু, যায়তুন, গবাদি পশুর শুকনো খাদ্য ইত্যাদি মজুদ করে রাখলে তা হারাম হবে না। ৩. পণ্য ক্রয়ে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগে নিপতিত হওয়া। এর আবার দু’টি পর্যায় রয়েছে- ক. ছোট শহর, যেখানে পণ্য মজুদ করলে মানুষের কষ্ট হবে এবং মূল্য বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমতাবস্থায় ইহতিকার হারাম। খ. পণ্য সামগ্রীর সঙ্কট বা অভাবের সময় যদি কোনো ব্যবসায়ী দল দ্রব্যসামগ্রী নিয়ে শহরে প্রবেশ করে আর ধনী লোকেরা দ্রুত তাদের কাছ থেকে তা কিনে নেয়, এর ফলে মানুষের মাঝে পণ্যের সঙ্কট দেখা দেয়, তাহলে ইহতিকার হারাম হবে। আর যদি খাদ্যসামগ্রী বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুদ থাকে এবং কম মূল্যে ক্রয় করা যায়, আর এতে মানুষের কষ্ট না হয় তাহলে ইহতিকার হারাম হবে না। আল-হিদায়া গ্রন্থকারের মতে, পণ্য মানুষ ও চতুষ্পদ জন্তুর খাদ্য হতে হবে এবং মজুদদারির কারণে মানুষ ও জীবজন্তুর কষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকতে হবে। আর যদি কষ্ট হওয়ার আশঙ্কা না থাকে তাহলে ইহতিকার করা নিষিদ্ধ নয়।
ইসলামী আইনবিদদের মতে মজুদদারি হলো, সঙ্কটকালে বাজার থেকে পণ্য ক্রয় করে এ উদ্দেশে মজুদ করা যে চাহিদা আরো বাড়লে বেশি দামে বিক্রি করা হবে। অতএব নিম্নোক্ত অবস্থাগুলো মজুদদারির অন্তর্ভুক্ত নয় : ১. আমদানিকারকের সংগ্রহ- যারা বাজার থেকে পণ্য ক্রয় না করে বিদেশ থেকে আমদানি করেন। ২. পণ্য সস্তা থাকতে তা ক্রয় করা যখন বাজারে সরবরাহে কোনো ঘাটতি না থাকে। ৩. পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সময় ক্রয় করা যখন লক্ষ্য থাকে মজুদ না করে তখনই বিক্রি করা। ৪. রাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষ নাগরিকদের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা ও আপৎকালীন সময়ের জন্য যে খাদ্য মজুদ করে তাও মজুদদারি নয়। ৫. তাছাড়া একজন মানুষ তার নিজস্ব উৎপাদিত সম্পদ দাম বাড়লে বিক্রি করবে এ আশায় রেখে দিলে সেটাও মজুদদারি হবে না। ইসলামী আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্যই হলো মানুষকে যুলুম থেকে মুক্ত করা এবং ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা। কাজেই ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা ইহতিকার তথা মজুদদারি থেকে বিরত থাকবে। মজুদদারি থেকে বিরত থাকাই মূলত মুসলিম ব্যবসায়ীদের আখলাক। যার মধ্যে আখলাকের সৌন্দর্য হাজির নেই তার মতো দরিদ্র আর কেউ নেই।
শ্রমিকদের বেতন সঠিকভাবে সময়মতো প্রদান করা : ইসলামী আন্দোলনের দায়িত্বশীল ও কর্মীরা কখনোই শ্রমিকদের বেতন নিয়ে ঝক্কি-ঝামেলা সৃষ্টি করবে না। তাদের ওপর আদল ও ইনসাফ করবে। কেবল ইনসাফ ও আদলই নয়, ইহসানও করতে হবে। শ্রমিকদের প্রতি রহমদিল হতে হবে। বেতন-ভাতা যথাসময়ে দিতে হবে এবং তা ন্যায্য হতে হবে। রাসূল সা. বলেন, শ্রমিকের দেহের ঘাম শুকাবার পূর্বে তোমরা তার মজুরি দাও। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ২৪৪৩)। একজন শ্রমিকের মৌলিক অধিকার হচ্ছে তার ন্যায্য মজুরি প্রাপ্তি। আর শ্রমিককে তার প্রাপ্য মজুরি প্রদান করা প্রতিটি মানুষের জন্য অবশ্য কর্তব্য এবং প্রকৃত ঈমানদারির বৈশিষ্ট্য। কেননা যারা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে অর্থাৎ শ্রমিককে তার ন্যায্যমূল্য প্রদান করে, তারা প্রকৃত ঈমানদার।
নৈতিক পরিবেশ : ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সকল স্তরে নৈতিক পরিবেশ কায়েম রাখবে। কখনোই এর ব্যতিক্রম করবে না। নৈতিক শক্তি লোপ পেলে সেখানে ইহসান ও রহমত বলতে কোনো কিছুর অস্তিত্ব থাকে না। নৈতিক পরিবেশ ঠিক রাখতে হলে সমগ্র ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করতে হবে। যেখানে উত্তম ব্যবস্থাপনা নেই সেখানে নৈতিক পরিবেশ গড়ে ওঠে না। কারণ অনৈতিকতা হলো অব্যবস্থাপনার ফল।
সাংগঠনিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা
ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের অবশ্যই ব্যক্তিগত জীবনসহ জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামের পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ করতে হবে। আর এরই অংশ হিসেবে আন্দোলনের কর্মীদের দ্বারা পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ইসলামী নীতির বাস্তবায়ন জরুরি। ইসলামে পূর্ণাঙ্গরূপে দাখিল হওয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালা নিজে আদেশ করেছেন। কাজেই এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র গাফিলতি প্রদর্শন করার অবকাশ নেই। অন্যথায় এটা কিরূপে হতে পারে যে যারা ইসলামের বিজয়ের জন্য কাজ করছে তারা নিজেরাই নিজেদের যাবতীয় ব্যবস্থাপনায় ইসলামের অনুশীলন করবে না। আজকাল আমরা আমাদের জীবনকে দুই ভাগে ভাগ করে নিয়েছি। একভাগে আমরা আমাদের ইসলামী সাংগঠনিক নীতিমালার অনুসরণ করছি। আর অন্যভাগে তথা আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও পেশাগত কাজে জাহেলি নীতিমালা অনুসরণ করছি। এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়ার মতো বিষয় নয়। আর এটি এখন বড় একটি সঙ্কটে পরিণত হয়েছে। এ সঙ্কট থেকে উত্তরণের উপায় কী? উপায় হচ্ছে- সাংগঠনিকভাবেই জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামী নীতিমালা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিতে হবে। এজন্য কেন্দ্রীয় সংগঠনে শিক্ষা সম্পাদক ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক, কমিটি ও উপ-কমিটি থাকতে হবে। তারা দেশের প্রতিটি অঞ্চল, বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে নির্দিষ্ট সংখ্যক সদস্য মনোনয়ন দেবে এবং যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সকল তথ্য ও পরিসংখ্যান তাদের ফাইলে জমা থাকবে। এছাড়া অঞ্চল ও বিভাগীয় প্রধানদের তত্ত্বাবধানে সকল প্রকার অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করবে। তারা এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবাসনব্যবস্থা, পরিবেশ, শিক্ষার মান, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা, এমনকি বেতন-ভাতাসহ যাবতীয় বিষয়ে তদারকি করবে এবং প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। একইভাবে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তথা ব্যাংক, অর্থনৈতিক সমিতি, কোম্পানি এবং ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠাসহ সকল পর্যায়ে অডিট পরিচালনা করবে। এক্ষেত্রে খাদ্যশস্যের মজুদদারি, শ্রমিকদের বেতন, বৈধ পণ্য, হালাল ও হারাম এবং যাবতীয় বিষয়ে অনুসন্ধান চালাবে, পরামর্শ দেবে, নীতিমালা প্রয়োগ করবে এবং মারূফ কাজে উৎসাহিত করবে। কেন্দ্রীয় সংগঠন এ বিষয়ে আইন ও এথিক্সের ওপর বই প্রকাশ করবে এবং এগুলো সারা দেশে সকল প্রতিষ্ঠানে পৌঁছাবে। এভাবে আন্দোলনের কর্মীদের দ্বারা পরিচালিত সকল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাংগঠনিকভাবে নিয়ন্ত্রণে থাকবে। নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় ছেড়ে দিলে সকল প্রতিষ্ঠান অব্যবস্থাপনা ও অনৈতিকতার অভয়ারণ্যে পরিণত হবে। যার অপনাম ও অপযশ সংগঠন ও আন্দোলনের ঘাড়েই এসে সওয়ার হবে।
লেখক : সহকারী সম্পাদক, ছাত্র সংবাদ
আপনার মন্তব্য লিখুন