মহান রাব্বুল আলামীন ইনসান তথা মানুষ নামক সৃষ্টি জীবকেই পৃথিবীর খিলাফাতের দায়িত্বে নিয়োজিত করেছেন। মানুষকে জ্ঞান, বুদ্ধি, বিবেক ও চিন্তা-ভাবনার যে যোগ্যতা দান করেছেন শ্রেষ্ঠত্বের বিচারে তা মানুষের জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা মানুষকে শ্রেষ্ঠত্ব দান প্রসঙ্গে কুরআনুল কারীমে ঘোষণা করেন- ‘আমি আদম সন্তানকে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দান করেছি, তাদেরকে স্থল ও জলপথে যানবাহন দান করেছি, তাদেরকে পবিত্র জিনিস দ্বারা রিজিক দিয়েছি এবং আমি বহুসংখ্যক সৃষ্টির ওপর সুস্পষ্ট প্রাধান্য দান করেছি। এসব আমারই একান্ত দয়া ও অনুগ্রহ।’ (সূরা বনী ইসরাঈল ১৭ : ৭০)
পৃথিবীতে মানুষ তাঁর চির দূশমন শয়তানের প্ররোচনা, নিজের কু-প্রবৃত্তি চরিতার্থ ও দাম্ভিকতা, আল্লাহদ্রোহী কর্তৃত্বের আনুগত্য এবং সামাজিক কুসংস্কারের খপ্পরে পড়ে আল্লাহ প্রদত্ত বিধান ভুলে গিয়ে জাহেলিয়াতের গহীন গহ্বরে নিমজ্জিত হয়। এ সমস্ত বিপর্যয় থেকে মানুষকে উদ্ধার তথা সঠিক পথ প্রদর্শনের নিমিত্তেই মহান রাব্বুল আলামীন যুগে যুগে নবী ও রাসূলগণকে প্রেরণ করে থাকেন। আম্বিয়ায়ে কেরামগণ পথভ্রান্ত মানুষকে আল্লাহর দেওয়া বিধান ও সঠিক দায়িত্ব পালনের প্রতি আহ্বান জানায়। এ ব্যাপারে মানুষ ভ্রুক্ষেপ না করায় সে মর্মে আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা ঘোষণা করেন- ‘আর যে আল্লাহর দিকে আহ্বানকারীর আহ্বানে সাড়া দিবে না, দুনিয়াতে সে আল্লাহকে ব্যর্থ করতে পারবে না আর আল্লাহ ব্যতিত তার কোনো সাহায্যকারী ও পৃষ্ঠপোষক নেই। তারা সুস্পষ্ট গুমরাহীতে লিপ্ত।’ (সূরা আল আহকাফ ৪৬ : ৩২)। বর্ণিত আয়াতে যে বিষয়টা উল্লেখ করা হয়েছে তাহলো- যারা আল্লাহর রাসূলগণের আহ্বানে সাড়া দেবে না তারা আল্লাহদ্রোহী জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকবে।
আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা মানুষের পথপ্রদর্শক হিসেবে মানুষকেই নবী-রাসূল করে পাঠিয়েছেন। এ মর্মে পবিত্র কুরআনুল কারীমে আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা ঘোষণা করেন- ‘তাদের রাসূলগণ তাদেরকে বলেছিল যদিও আমরা তোমাদের মতোই মানুষ ব্যতীত কিছু নই, কিন্তু আল্লাহ তাঁর বান্দাহদের মধ্যে যার ওপর ইচ্ছে অনুগ্রহ করেন।’ (সূরা ইব্রাহীম ১৪ : ১১)। এতে আমরা সুস্পষ্টভাবে বুঝতে পারছি যে, আম্বিয়ায়ে কেরামগণ মানব সমাজভুক্তই ছিলেন। কিন্তু মহান রাব্বুল আলামীন তাদেরকে মানুষের পথপ্রদর্শক হিসেবে মনোনীত করেছেন। আল্লাহ প্রেরীত নবী-রাসূলগণের মধ্যে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ মানব ছিলেন বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মাদ সা.। বিশ্বনবী মুহাম্মাদ সা.-এর জীবনাদর্শই বিশ্ববাসীর জন্য একমাত্র মুক্তিসনদ তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। এ মর্মে আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা ঘোষণা করেন- ‘তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূল সা.-এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ, যারা আল্লাহ ও শেষদিনের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।’ (সূরা আহজাব ৩৩ : ২১)। মহানবী সা. সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও ঘোষণা করেন- ‘এতে সন্দেহ নেই যে, তুমি নৈতিকতার অতি উচ্চ মর্যাদায় সমাসীন।’ (সূরা আল কলম ৬৮ : ৪)। আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা যথার্থই ঘোষণা করেছেন- ‘অমা আরসালনাকা ইল্লা রাহমাতুললিল আলামীন’ অর্থাৎ আমি অবশ্যই তোমাকে বিশ্বের রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি। (সূরা আম্বিয়া ২১ : ১০৭)।
এবার আমি মহানবী সা.-এর কর্মজীবনের বিশেষ একটি দিক তুলে ধরতে চাই। আল্লাহর রাসূল সা. ছিলেন মূলত- জীবন্ত কুরআনের প্রতিচ্ছবি। কুরআনুল কারীমে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেসব বিষয়ের বর্ণনা দিয়েছেন বা আদেশ-নিষেধ জারী করেছেন, রাসূল সা. তাঁর সামগ্রিক জীবনে তা বাস্তবায়ন করে দেখিয়ে গিয়েছেন। রাসূল সা. কোনো স্বৈরাচার বা কঠোর মেজাজের মানুষ ছিলেন না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা ঘোষণা করেন- ‘হে রাসূল! এটা আল্লাহর বড়ো অনুগ্রহের বিষয় যে, তুমি এসব (সহকর্মী) লোকের জন্য খুবই নম্র স্বভাবের ব্যক্তিত্ব হয়েছ, অন্যথায় তুমি যদি উগ্র (কঠোর) স্বভাব ও পাষান হৃদয়ের অধিকারী হতে, তবে এসব লোক তোমার চতুর্দিক হতে দূরে সরে যেত। অতএব, তাদের অপরাধ ক্ষমা করে দাও। তাদের জন্য মাগফিরাতের দুআ কর এবং দ্বীনে ব্যাপারে বিভিন্ন পরামর্শে তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত কর.....।’ (সূরা আলে ইমরান ৩ : ১৫৯)। রাসূল সা. তৃতীয় হিজরীতে মক্কার দুর্ধর্ষ মুশরিক (কুরাইশ) বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখসমরে অবতীর্ণ হন। রাসূল সা. তাঁর গোয়েন্দা বিভাগের মাধ্যমে মক্কার কুরাইশ বাহিনীর যুদ্ধের প্রস্তুতির খরব জানতে পেরেছিলেন। কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে ৩০০০ (তিন হাজার) সৈন্যবাহিনী যখন মদীনা উপকণ্ঠে (উহুদ প্রান্তরের কাছাকাছি) পৌঁছে যায়, তখন রাসূল সা. সাহাবীদের নিয়ে একটি পরামর্শ সভার আয়োজন করেন। এ সভায় মহানবী সা. মদীনায় অবস্থান করেই দুশমনদের মোকাবিলা করার ইচ্ছা পোষণ করেন। কিন্তু বিশিষ্ট্য সাহাবীগণ এ প্রস্তাবে অসম্মতি জানিয়ে শত্রুপক্ষকে শহরে প্রবেশের পূর্বেই প্রতিহত করার পক্ষে মত প্রকাশ করেন। এক্ষেত্রে রাসূল সা. অধিকাংশের এ মতের সামনে নিজের মত প্রত্যাহার করে নেন এবং মদীনার বাইরে গিয়েই শত্রুবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করার সিদ্ধান্তে উপনিত হন। (আর রাহীকুল মাখতুম, সীরাতে ইবনে হিশাম)। অবশ্য পরক্ষণেই সাহাবীগণ রাসূল সা.-এর মতকে সমর্থন করলেও তিনি পরামর্শের ভিত্তিতে গৃহীত মত অনুসারেই সিদ্ধান্ত নেন। কারণ, সবার সম্মতিতে গৃহীত সিদ্ধান্তই আল্লাহর দরবারে মঞ্জুর হয়ে গিয়েছিল। আমরা যদি ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধের ঘটনাবলী পর্যালোচনা করি তাহলে দেখতে পাই- মহানবী সা. তাঁর বাহিনী নিয়ে বদরের নিকট অবতরণ করেন। এ সময় অভিজ্ঞ সামরিক ব্যক্তিত্ব হুবাব ইবনে মুনজির রা. প্রশ্ন করলেন- ‘হে আল্লাহর রাসূল! এ স্থানে আপনি আল্লাহর নির্দেশক্রমে অবতরণ করেছেন? না শুধু যুদ্ধের কৌশল হিসেবেই আপনি এ ব্যবস্থা অবলম্বন করেছেন? আল্লাহর রাসূল সা. বললেন- যুদ্ধের কৌশল হিসেবেই আমি এ ব্যবস্থা অবলম্বন করেছি। হুবাব বললেন- এটা উপযুক্ত স্থান নয়, আরও সামনের দিকে এগিয়ে চলুন এবং কুরাইশ বাহিনীর সবচেয়ে নিকটে যে ঝরণা রয়ছে সেখানে শিবির স্থাপন করুন। এরপর কুরাইশদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হলে আমরা পানি পাব কিন্তু তারা তা পাবে না। বিশ্বনবী সা. বললেন- তুমি উত্তম পরামর্শ দিয়েছ। এরপর মহানবী সা. সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন।
৫ম হিজরীতে মদীনা থেকে বিতারিত ইহুদী সম্প্রদায় মক্কার (কুরাইশ) বনি সাতফান, কিনানাহ, বনু সুলাইম, ফাযারা মুররাহ, আশজাসহ অন্যান্য মুশরিক গোত্রসমূহকে মদীনায় আক্রমণ করে মুসলমানদেরকে নির্মূল করতে উদ্বুদ্ধ করল। এ সংবাদ অবগত হওয়া মাত্রই রাসূলুল্লাহ সা. নেতৃস্থানীয় সাহাবাগণের পরামর্শ বৈঠক আহ্বান করেন এবং প্রতিরোধ সংক্রান্ত পরিকল্পনার ব্যাপারে সলা-পরামর্শ করেন। শুরার প্রতিনিধিগণ অনেক চিন্তা-ভাবনার পর সর্বসম্মতভাবে হজরত সালমান ফারসী রা.-এর একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেন। সালমান ফারসী রা. বলেন- হে আল্লাহর রাসূল! পারস্যে যখন আমাদেরকে অবরোধ করা হত তখন আমরা পার্শ্ববর্তী স্থানে পরিখা খনন করে নিতাম। (আর রাহীকুল মাখতুম)। মহানবী সা. তার এ হেকমতপূর্ণ প্রস্তাব অনুযায়ী মদীনা শহরের উন্মুক্ত সীমান্তে পরিখা খননের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। প্রতি ১০ জনের ওপর ৪০ হাত করে পরিখা খননের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। পরিখা খনন সমাপ্তির পরপরই মক্কার ১০ হাজার যৌথ মুশরিক বাহিনীর আগমণ ঘটে। বিশ্বনবী সা. তাঁর হেকমতপূর্ণ রণকৌশল দ্বারা বিশাল মুশরিক বাহিনীর আক্রমণ ব্যর্থ করে দেন।
মহানবী সা. ৭ম হিজরীতে খায়বার অভিযানে বের হন। খায়বারে ইহুদীদের প্রায় ১২টি দুর্ভেদ্য দুর্গ ছিল। এ দূর্গগুলো খায়বার, ফাদাক, তাইমা, ওয়াদিল কুরারসহ বিভিন্ন এলাকায় ছিল। মহানবী সা. সৈন্যদের শিবির স্থাপনের জন্য স্থান নির্বাচন করলেন। এ প্রেক্ষিতে হুবাব বিন মুনজির আরজ করলেন- হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ তাআলা আপনাকে এ স্থানে শিবির স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন, না যুদ্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা হিসেবে আপনি এটা করছেন? নবী করীম সা. বললেন- যুদ্ধের জন্য সুবিধাজনক মনে করেই এটা করা হচ্ছে। হুবাব বিন মুনযির বললেন- হে আল্লাহর রাসূল! এ স্থানটি নাত্বাত দূর্গের সন্নিকটে অবস্থিত এবং খায়বারের যুদ্ধের অভিজ্ঞ সৈনিকগণ এ দূর্গে অবস্থান করছে। সেখান থেকে তারা আমাদের সকল অবস্থা ও অবস্থানের খবর জানবে কিন্তু আমাদের পক্ষে তাদের অবস্থার খবর সংগ্রহ করা সম্ভব হবে না। আমরা তাদের নৈশকালীন আক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকব না। তাদের তীর আমাদের নিকট পৌঁছে যাবে কিন্তু আমাদের তীর তাদের নিকট পৌঁছাবে না। তাছাড়া এ স্থানটি খেজুর বাগানের মধ্যে নিম্নভূমিতে অবস্থিত, এ স্থানে রোগব্যাধি সংক্রমণের আশঙ্কা থাকবে। আপনি অন্য স্থানে শিবির স্থাপন করুন, যাতে আমরা এ সকল ক্ষতিকর অবস্থা থেকে মুক্ত থাকতে পারি। নবী সা. বললেন- তুমি যে পরামর্শ দিলে তা যথাযথ। অত:পর তিনি স্থান পরিবর্তন করে সুবিধাজনক স্থানে শিবির স্থাপনের নির্দেশ দিলেন। (আর রাহীকুল মাখতুম)।
হুনাইন যুদ্ধে পরাজিত হাওয়াজিন সম্প্রদায় ইসলাম গ্রহণ করার পর, মহানবী সা.-এর নিকট যুদ্ধে বন্দী হওয়া আত্মীয়-পরিজনদের মুক্তি দাবী করলে রাসূল সা. তাঁর নিজের অংশের সবাইকে মুক্ত করে দিলেন। অন্যান্য মুসলিম মুজাহিদগণকে এ ব্যাপারটি তাদের ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দিলেন। উপস্থিত মুজাহিদগণ রাসূল সা.-এর সাথে একমত হয়ে তাদের অংশের যুদ্ধবন্দীদেরকে ছেড়ে দিতে সম্মত হলেন। এতে মহানবী সা. বললেন- আমরা ঠিক বুঝতে পারছি না যে, তোমাদের মধ্যে কে রাজি আছে এবং কে রাজি নেই। অতএব তোমরা ফিরে যাও, তোমাদের প্রধানগণ তোমাদের ব্যাপারে আমাদের সামনে (পরামর্শের পর বিষয়টি) উপস্থাপন করবেন। এরপর সবাই মহানবী সা.-এর প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলেন।
মহানবী সা. ৮ম হিজরীতে হজরত জায়িদ বিন হারিসার পরিচালনায় ৩০০০ (তিন হাজার) সৈন্যের এক বাহিনীকে রোম স¤্রাটের বিরুদ্ধে অভিযানে প্রেরণ করেন। মুসলিম বাহিনী উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে মা‘আন নামক স্থানে পৌঁছে তার সন্নিকটে শিবির স্থাপন করেন। মুসলিম বাহিনীর গোয়েন্দাগণ সংবাদ পরিবেশন করেন যে, রোম স¤্রাট হিরাকল এক লক্ষ রোমান সৈন্যসহ মুতাহর অদূরে অবস্থান করছে। তার সাথে আরও লক্ষাধিক সৈন্য যোগদানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। মুসলিম সেনানায়কগণ পরামর্শ সভায় মিলিত হয়ে চিন্তা করতে লাগলেন যে, মাত্র তিন হাজার সৈন্য নিয়ে এ বিশাল শত্রুবাহিনীর মোকাবিলা করবেন কিনা? তারা বিষয়টি পত্র দ্বারা আল্লাহর রাসূল সা. কে অবহিত করবেন নাকি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বেন। শেষ পর্যন্ত মুসলিম মুজাহিদগণ মূতাহ প্রান্তরে এ অসম সমরে ঝাঁপিয়ে পড়েন। বিশ্বনবী সা. কর্তৃক মনোনীত সেনাপতি জায়িদ ইবনে হারিসা, জাফর বিন আবি তালিব ও আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা রা. শাহাদতবরণ করলে সাবিত বিন আকরাম দৌঁড়ে গিয়ে ঝান্ডা উঁচিয়ে ধরে বললেন- হে মুসলিম মুজাহিদগণ আপনারা পরামর্শক্রমে নতুন সেনাপতি মনোনীত করুন। তখন সবার সম্মিলিত সিদ্ধান্ত মোতাবেক হজরত খালিদ বিন ওয়ালিদ সেনাপতির দায়িত্ব হাতে নিয়ে মহান আল্লাহর কৃপায় স্বীয় অভূতপূর্ব রণকৌশলে রোম বাহিনীকে পিছু হঠতে বাধ্য করে অবশিষ্ট মুসলিম যোদ্ধাদেরকে নিয়ে মদীনায় পৌঁছেন।
এরপূর্বে আমি ৫ম হিজরীর খন্দক বা পরিখার যুদ্ধের কথা বলে এসেছি। ঐ যুদ্ধে মক্কার সম্মিলিত মুশরিক বাহিনী কর্তৃক মদীনা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল, তখন মহানবী সা. যৌথ কাফির বাহিনীর মধ্যে ফাটল ধরানোর জন্য কুরাইশদের সহযোগী বনি গাতফান গোত্রকে আলাদা করার জন্য তাদের দুই নেতাকে ডেকে মদীনায় উৎপাদিত শস্যের অর্ধেক দেওয়ার শর্তে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে চলে যাবার জন্য রাজি করাতে চাচ্ছিলেন। এ ব্যাপারে আনসার সাহাবীদের দুইজন নেতা হজরত সাদ বিন মায়াজ ও হজরত উসাইদ বিন হুজাইর রা.-কে পরামর্শের জন্য আহ্বান করলেন। প্রখ্যাত দুইজন আনসার সাহাবী সুস্পষ্টভাবে আল্লাহর রাসূল সা.-কে জানিয়ে দিলেন যে, যদি এক্ষেত্রে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নির্দেশ না থাকে তাহলে শত্রুদেরকে তরবারীর আঘাত ছাড়া আমরা কিছুই দেব না। মহানবী সা. সাহাবীগণের এ মতই গ্রহণ করেছিলেন। (সূত্র : রাহীকুল মাখতুম, ইবনে হিশাম ও সহীহুল বুখারি)।
আসুন আমরা সকল ক্ষেত্রে পারস্পারিক পরামর্শ ও মতামতকে উপেক্ষা না করে আল্লাহর দ্বীনের আন্দোলনকে গতিশীল করতে এগিয়ে যাই।
লেখক : সদস্য, দারুল ইসলাম ট্রাষ্ট,
দরগাহ রোড, সিরাজগঞ্জ
আপনার মন্তব্য লিখুন