post

গাজায় মানবতার মৃত্যু

জালাল উদ্দিন ওমর

০৫ এপ্রিল ২০২৪

প্রত্যেক মানুষেরই কতকগুলো মৌলিক অধিকার থাকে, যা জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে যেকোনো দেশের, যেকোনো ধর্মের এবং যেকোনো মানুষের  বেলায় সমভাবে প্রযোজ্য। বিশ্বব্যাপী মানুষের এই মৌলিক অধিকারসমূহ নিশ্চিত করার মাধ্যমে মানবসমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৪৮ সালের ১০ই ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ সার্বজনীন মানবাধিকারের নীতিমালা গ্রহণ করে। সেই থেকে ১০ই ডিসেম্বর প্রতিটি বছর বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে আর মানুষের মৌলিক মানবাধিকারকে নিশ্চিত করাই এই দিবসের মূল লক্ষ্য। জাতিসংঘ ঘোষিত সার্বজনীন মানবাধিকারের এই ঘোষণাপত্রে বিভিন্ন উপধারাসহ মোট ৩০টি মূলধারা সংযুক্ত করা হয়। এই ঘোষণাপত্রে আইনের দৃষ্টিতে সকলের সমান অধিকার, জাতীয়তা লাভের অধিকার, চিন্তা-বিবেক ও ধর্মের স্বাধীনতার অধিকার, স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার, সভা-সমাবেশ করার অধিকার, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নিজ দেশে সরকারে অংশগ্রহণের অধিকার, সামাজিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের অধিকার, সকলের আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার এবং সর্বোপরি শাসনতন্ত্র বা আইন কর্তৃক প্রদত্ত মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হলে বিচার বা আদালতের মাধ্যমে তার কার্যকর প্রতিকার লাভের অধিকারের কথা বলা হয়েছে। জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকারের এসব মূলনীতি বিশ্বের দেশসমূহ গ্রহণ করেছে। স্বাভাবিকভাবেই পৃথিবীর প্রতিটি দেশে বসবাসরত প্রতিটি জনগোষ্ঠীর এবং প্রতিটি নাগরিকেরই স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার, মত প্রকাশের এবং রাজনীতি করার অধিকার রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই একজন মানুষ হিসেবে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার সকল অধিকার ফিলিস্তিনিদেরও রয়েছে। এখানে ধর্ম, বর্ণ এবং গোত্রীয়ভাবে কাউকে চিহ্নিত করে তাদেরকে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার অধিকার কারোর নেই। যদি করা হয়, তাহলে সেটা গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং আইনের শাসনের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন।

ইসরাইলি হামলায় ফিলিস্তিনের গাজা এখন এক বিধ্বস্ত জনপদ। ২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর গাজা থেকে ফিলিস্তিনিরা ইসরাইলে রকেট হামলা চালায়। এতে কিছু ইসরাইলি নাগরিক মারা যায় এবং কিছু ইসরাইলিকে বন্দি করা হয়। এরপর থেকেই ইসরাইল নির্বিচারে গাজায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব হামলায় নিহত হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার  নিরপরাধ মানুষ আর আহত হয়েছে ৭৫ হাজার আবালবৃদ্ধবনিতা। নারী-পুরুষ-শিশু-বৃদ্ধ কেউই এই হামলা থেকে রেহাই পায়নি। ইসরাইলি বোমায় গাজার মানুষেরা আজ অকাতরে মরছে। ইসরাইলি বোমা ও ক্ষেপনাস্ত্রের আঘাতে ধুলোয় মিশে গেছে হাজারো বাড়ি-ঘর, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-গির্জা ও হাসপাতাল। গাজার বেশিরভাগ মানুষই আজ উদ্বাস্তু। সেখানকার মানুষদের আজ অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা কিছুই নেই। চাকুরি, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং আয়ের কোনো পথ খোলা নেই। খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। অনেকেই  খাবারের  অভাবে না খেয়েই মারা যাচ্ছে। ইসরাইলের হামলা অব্যাহত থাকায় সর্বহারা এসব মানুষের কাছে ত্রানের খাবার এবং চিকিৎসা-সামগ্রীও ঠিকমতো পৌঁছানো যাচ্ছে না। 

গাজায় আজ নেমে এসেছে মানবতার চরম বিপর্যয়। ত্রাণের জন্য অপেক্ষারত ক্ষুধার্ত মানুষদের ওপরও ইসরাইল হামলা চালিয়ে অনেক মানুষকে হত্যা করেছে। রোজা এবং ঈদের দিনেও ইসরাইল হামলা চালিয়ে অসংখ্য ফিলিস্তিনিদেরকে হত্যা করেছে। ইসরাইল যেভাবে নিরপরাধ ও নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের নির্বিচারে হত্যা করছে, তা কোনো সভ্য সমাজে কল্পনাও করা যায় না। কোনো বিবেকবান মানুষ এ অবস্থায় নীরব থাকতে পারে না । ইসরাইলের এই বর্বরতা ও নিষ্ঠুরতা চলছেই আর ফিলিস্তিনিরাও অকাতরে মারা যাচ্ছে। এসব হামলার সময় ইসরাইল কোনো ধরনের আইনকানুন, আন্তর্জাতিক বিধিবিধান ও যুদ্ধের নিয়ম মানছে না । ইসরাইল সেখানে পোড়ামাটি নীতি গ্রহণ করেছে এবং গণহত্যা চালাচ্ছে । যখন যেখানে ইচ্ছা ইসরাইল বোমা হামলা চালাচ্ছে। ইসরাইল যা ইচ্ছা তা-ই করেই যাচ্ছে। এক্ষেত্রে ইসরাইলকে বাধা দেওয়ার মতো কেউ নেই। ফলে ইসরাইল হয়ে ওঠেছে বেপরোয়া। ইসরাইল আজ জাতিসংঘের সিদ্ধান্তকেও মানছে না। ইসরাইলের নির্যাতন থেকে ফিলিস্তিনের নিরপরাধ জনগণকে বাঁচাতে পশ্চিমা বিশ্ব এগিয়ে আসেনি। ইসরাইল মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালালেও যুক্তরাষ্ট্রের  নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্ব  যেমন বৃটেন, ফ্রান্স, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া বরাবরই ইসরাইলকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামরিক সাহায্য দিয়ে যাচ্ছে । যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ সারা দুনিয়ার সাধারণ মানুষেরা ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এবং ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বিক্ষোভ করলেও এসবের কোনো আবেদন এসব দেশের নেতাদের কাছে নেই। জাতিসংঘে যখনই ইসরাইলের এসব অন্যায় ও অপকর্মের বিরুদ্ধে কোনো প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে, তখনই যুক্তরাষ্ট্র ভেটো প্রয়োগ করে সেই প্রস্তাবকে নাকচ করে দিয়েছে।

ফিলিস্তিন বর্তমানে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক সদস্য। ফিলিস্তিন ২০১২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পেয়েছিল। গত ১৮ই এপ্রিল জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ পেতে নিরাপত্তা পরিষদে ভোট হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র  সেই প্রস্তাবেও ভেটো দিয়েছে। ফলে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হিসেবে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ অর্জন করতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্রের এসব ভুমিকায় ইসরাইল আজ বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে। কারণ ইসরাইল ভালো করেই জানে, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা বিশ্ব শেষ পর্যন্ত তার পাশেই থাকবে। নিরপরাধ মানুষের আর্তচিৎকারে সেখানকার আকাশ-বাতাস কাঁদছে। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্বের নেতৃত্ব  কথায় কথায় মানবতার কথা বললেও তাদের সেই মানবতা আজ গাজায় মারা গেছে। গাজায় আজ মানবতার মৃত্যু হয়েছে। একই সাথে পশ্চিমাদের সুনাম, আস্থা, বিশ্বাসযোগ্যতা এবং গ্রহণযোগ্যতাও মারা গেছে। জাতিসংঘ ঘোষিত সার্বজনীন মানবাধিকারের কিছুই আজ গাজায় বিদ্যমান নেই। সেখানে নেমে এসেছে মানবতার চরম বিপর্যয়।

যুুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের নেতৃত্ব সব সময়  বিশ্বব্যাপী মানুষের বাকস্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার  প্রতিষ্ঠার কথা বলে। মানুষের মানবাধিকার  প্রতিষ্ঠার জন্য  তারা সব সময় উপদেশ ও নির্দেশ দেয়। তাদের শত্রু দেশে কিছু হলেই গণতন্ত্র গেল, মানবাধিকার গেল বলে চিৎকার শুরু করে  এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্টার জন্য কথা বলতে থাকে; এমনকি গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলে তারা বিভিন্ন সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্বাধীন দেশে আক্রমণ করেছে, যুদ্ধ করেছে এবং সেখানে সরকার পরিবর্তনও করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র ২০০১ সালে আফগানিস্তানে হামলা করে তালেবান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে এবং অনেক মানুষকে গুয়ানতানামোর কারাগারে বছরের পর বছর ধরে আটকে রেখেছিল। তারা ২০০৩ সালে ইরাকে হামলা করে প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতাচ্যুত করে। তারপর তারা  সাদ্দামকে ফাঁসি দিয়েছে এবং সাদ্দামের দুই পুত্র উদয় ও কুশে হোসেন এবং তার নাতি মোস্তফাকে হত্যা করেছে। তারা ২০১১ সালে  লিবিয়ায় হামলা করে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ গাদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে এবং এক পুত্রসহ গাদ্দাফিকে হত্যা করেছে। তারা ২০১১ সালে সিরিয়ার হামলা করেছে এবং সিরিয়ার হাজারো মানুষকে হত্যা করেছে। তারা সিরিয়ার ক্ষমতা থেকে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত  করতে ব্যর্থ হলেও সিরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করেছে এবং সেখানে ঘাঁটি করেছে। 

তালেবানদের প্রতিরোধে আমেরিকা আফগানিস্তান থেকে ২০২১ সালে চলে গেলেও ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়ায় এখনও সেনা ঘাঁটি গড়ে দখলদারিত্ব  অব্যাহত রেখেছে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলে এরা এসব দেশের হাজারো মানুষকে হত্যা করেছে। অথচ  ফিলিস্তিনিদের  রক্ষায়  পশ্চিমা বিশ্বের এসব দেশ কখনোই ইসরাইলে হামলা করে না এবং ইসরাইলের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে না। পশ্চিমারা ইরান, ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা দিলেও ইসরাইলের বিরুদ্ধে কখনোই অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা দেয় না; বরং এরা ইসরাইলকে সব সময় সাহায্য করে। তারা সব সময় বলে, ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে এবং ইসরাইলকে রক্ষায় সব সময় পাশে থাকার ঘোষণা দেয়। কিন্তু ইসরাইলের মতো ফিলিস্তিনিদেরও আত্মরক্ষার অধিকার আছে- সেই কথাটি পশ্চিমারা কখনো বলে না।

পশ্চিমা বিশ্ব জাতিসংঘকে ব্যবহার করে পৃথিবীর অনেক অঞ্চলকে স্বাধীন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের  নেতৃত্বে পশ্চিমা বিশ্ব  জাতিসংঘের মাধ্যমে  ১৯৯৯ সালের ৩০শে আগস্ট গণভোট আয়োজন করে মুসলিমপ্রধান  ইন্দোনেশিয়া থেকে  খ্রিষ্টানপ্রধান পূর্ব-তিমুরকে স্বাধীন করেছে। এরা একইভাবে  ২০১১ সালের ৯-১৫ জানুয়ারি গণভোট আয়োজন করে মুসলিমপ্রধান সুদান খেকে খ্রিষ্টানপ্রধান দক্ষিণ-সুদানকে স্বাধীন করেছে। কিন্তু ইসরাইলের  আগ্রাসন এবং দখলদারিত্ব  থেকে  ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পশ্চিমা বিশ্ব এবং জাতিসংঘ আজ পর্যন্ত ফিলিস্তিনে কোনো গণভোটের আয়োজন করেনি; বরং  ফিলিস্তিনে আগ্রাসন এবং দখলদারিত্ব  প্রতিষ্ঠার জন্য এরা ইসরাইলকে সার্বিক সহযোগিতা করে। পশ্চিমাদের দ্বিমুখী নীতির কারণে জাতিসংঘও আজ অকার্যকর হয়ে পড়েছে ।

গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার  জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্রদের নেতাদের  প্রতিশ্রুতির কোনো আবেদন এখন আর মানুষের কাছে নেই। তাদের এসব কথাবার্তা এখন আর লোকজন বিশ্বাস করে না। কারণ তাদের এসব প্রতিশ্রুতি সার্বজনীন এবং বিশ্বজনীন নয়। পশ্চিমাদের গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের প্রতিশ্রুতি আজ তাদের আগ্রাসন এবং আধিপত্য বিস্তারের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। বিষয়টি গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে পরিষ্কার হবে। 

গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলে পশ্চিমারা ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া এবং সিরিয়ায় হামলা চালিয়েছে। এরা এসব দেশে লক্ষাধিক মানুষকে হত্যা করেছে, অনেক অবকাঠামো ধ্বংস করেছে। এখানে আগ্রাসনের শিকার হওয়া সবগুলো দেশই কিন্তু মুসলিম দেশ। এভাবে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্টার নামে এরা এসব মুসলিম দেশকে ধ্বংস করেছে। একইভাবে তারা জাতিসংঘকে ব্যবহার করে গণভোটের আয়োজন করে ইন্দোনেশিয়া থেকে পূর্ব-তিমুর এবং সুদান থেকে দক্ষিণ-সুদানকে স্বাধীন করেছে। এখানে ইন্দোনেশিয়া এবং সুদান হচ্ছে মুসলিমপ্রধান দেশ এবং তাদের অন্তর্ভুক্ত পূর্ব-তিমুর এবং দক্ষিণ-সুদান ছিল খ্রিষ্টান সংখ্যাগরিষ্ট এলাকা। তাই তারা  মুসলিমপ্রধান ইন্দোনেশিয়া এবং সুদানকে দুর্বল করেছে এবং খ্রিষ্টান সংখ্যাগরিষ্ট এলাকা পূর্ব-তিমুর ও  দক্ষিণ-সুদানকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্টা করেছে। অথচ  ইসরাইলের  আগ্রাসন ও দখলদারিত্ব থেকে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন এবং মুক্ত করার কোনো কর্মসূচি পশ্চিমা দেশগুলোর নেই। ৭৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে ইসরাইল ফিলিস্তিনি ভূমিকে দখল করে রেখেছে আর প্রতিনিয়তই ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের হত্যা করেছে, আটক করছে, বাড়ি-ঘর ধ্বংস করছে। কিন্তু  ফিলিস্তিনিদের গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার কোানে উদ্যোগ ও কর্মসূচি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র বৃটেনসহ পশ্চিমা দেশগুলো কখনো গ্রহণ করেনি; বরং ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকারের কথা বলে পশ্চিমা বিশ্ব সব সময় নিঃশর্তভাবে ইসরাইলকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামরিকভাবে সাহায্য-সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। কারণ এখানে ফিলিস্তিনিরা মুসলমান এবং ইসরাইল একটি ইহুদি রাষ্ট্র। আমি নিশ্চিত করেই বলছি, আজ যদি কোনো মুসলিম দেশ কোনো খ্রিষ্টান অথবা ইহুদি রাষ্ট্র দখল করত এবং মুসলমানরা কোনো খ্রিষ্টান অথবা ইহুদি  জনগোষ্টীর বিরুদ্ধে আগ্রাসন এবং হত্যাযজ্ঞ চালাত, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্ব কখনোই চুপ করে থাকত না। সাথে সাথে মুসলিম দেশটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করত এবং মুসলমানদের নির্যাতন থেকে খ্রিষ্টান অথবা ইহুদি জনগোষ্টীকে রক্ষায় এগিয়ে আসত। ফিলিস্তিন স্বাধীন হলে নতুন একটি মুসলিম দেশের অভ্যুদয় হবে এবং ইসরাইল দুর্বল হবে- যা পশ্চিমা বিশ্ব মানতে একেবারেই নারাজ। তাই ফিলিস্তিনিদের  বিরুদ্ধে  ইসরাইলের  বর্বরতা, নিষ্ঠুরতা এবং হত্যাযজ্ঞে ও পশ্চিমা বিশ্ব নীরব থাকে এবং ফিলিস্তিনে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসে না। পশ্চিমাদের এই দ্বৈতনীতি কিন্তু পশ্চিমাদের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে। কারণ প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান এবং বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। ফিলিস্তিনে  ইসরাইলের বর্বরতা এবং এই ইস্যুতে পশ্চিমাদের দ্বিমুখী নীতিরও একটা প্রতিক্রিয়া আছে এবং থাকবেই। আর সে প্রতিক্রিয়ায় মুসলমানরা অধিকহারে পাশ্চাত্যবিরোধী এবং শক্তিশালী হবে। পশ্চিমাদের দ্বৈত নীতির কারণে বিশ্বজুড়ে পশ্চিমাদের ওপর মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে এবং আস্থাহীনতা সৃষ্টি হচ্ছে আর এই আস্থাহীনতা পশ্চিমাদেরকে জনবিচ্ছিন্ন করবে এবং তাদের প্রতিপক্ষ রাশিয়া, চীন, উত্তর কোরিয়া, সিরিয়া এবং ইরানকে শক্তিশালী করবে। মনে রাখতে হবে, ক্ষমতার দাপট আর সামরিক শক্তির জোরে পৃথিবীকে বেশি দিন শাসন করা যায় না। যদি  সম্ভব হতো, তাহলে গ্রিক, রোমান আর  বৃটিশরা চিরদিনই পৃথিবীকে শাসন করত। জার্মান  আর সোভিয়েত সাম্রাজ্যের কোনোদিনই পতন হতো না।  ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্রও অপরাজেয় কোনো শক্তি নয়। তাই ইসরাইলের উচিত তার আগ্রাসন, দখলদারিত্ব ও বর্বরতা চিরতরে বন্ধ করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা এবং পাশাপাশি শান্তিতে বসবাস করা। আর পশ্চিমাদের উচিত তাদের এই পক্ষপাতিত্ব ও দ্বিমুখী নীতি এখনই পরিহার করা এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা । আবারও বলছি, ফিলিস্তিনিদেরকে তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দিন। তা না হলে বিশ্বব্যাপী ইসরাইলের প্রতি যে ঘৃনা এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের প্রতি যে আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে, তা তাদের জন্য বিপর্যয় বয়ে নিয়ে আসবে। অধিকন্তু ফিলিস্তিনের নির্যাতিত নিপীড়িত হাজারো মানুষের বুকফাটা আর্তনাদ আর কান্নায় প্রকৃতিও কিন্তু অধৈর্য হয়ে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠতে পারে, আর প্রকৃতির প্রতিশোধকে প্রতিহত করার শক্তি কোনো পরাশক্তিরই নেই।

লেখক : প্রকৌশলী এবং উন্নয়ন গবেষক

ইমেইল : [email protected]

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির