তাহাজ্জুদের সালাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ একটি মহান ইবাদত। মহানবী সা. এ সালাত নিয়মিত আদায় করতেন এবং সাহাবায়ে কিরাম (রা.)-কেও তা নিয়মিত আদায় করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতেন। ফরজ সালাতের পর আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় সালাত হচ্ছে তাহাজ্জুদেও সালাত। পুরো পৃথিবী যখন নীরবতার কোলে হারিয়ে যায়, মহান আল্লাহ তখন নেমে আসেন নিকটবর্তী আসমানে, বান্দার খুব কাছাকাছি। কার কী প্রয়োজন, কী আকাঙ্ক্ষা, কী ফরিয়াদ, বারবার জানতে চান তিনি। মধ্যরাতে যখন লোকেরা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, আল্লাহর প্রিয় বান্দারা তখন ঘুম থেকে জেগে ইবাদত-বন্দেগি করেন। সুবহি সাদিকের আগ পর্যন্ত তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করেন। যদি রাত দ্বিপ্রহরের পর ঘুম থেকে জেগে ওঠার সম্ভাবনা না থাকে, তাহলে ইশার সালাতের পর তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করতে হয়। তবে রাতের শেষাংশে তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করলে তাতে সওয়াব বেশি হয়। তাহাজ্জুদের মাধ্যমে বান্দার সাথে আল্লাহর সরাসরি সম্পর্ক স্থাপিত হয়। রাতের শেষ প্রহরে আল্লাহ বান্দাদের প্রতি তাদের কাজের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বান জানান। তাহাজ্জুদের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও নৈকট্য লাভ করেন। এতে মু’মিনের আধ্যাত্মিক শক্তি বৃদ্ধি পায়।
তাহাজ্জুদের ফজিলত
তাহাজ্জুদ ইসলামের প্রথমদিকে ফরজ ছিল। অনেক দিন পর্যন্ত তা ফরজই ছিল। মহান আল্লাহর বাণী:
يَا أَيُّهَا الْمُزَّمِّلُ. قُمِ اللَّيْلَ إِلَّا قَلِيلًا . نِصْفَهُ أَوِ انْقُصْ مِنْهُ قَلِيلًا . أَوْ زِدْ عَلَيْهِ وَرَتِّلِ الْقُرْآَنَ تَرْتِيلًا. إِنَّا سَنُلْقِي عَلَيْكَ قَوْلًا ثَقِيلًا . إِنَّ نَاشِئَةَ اللَّيْلِ هِيَ أَشَدُّ وَطْئًا وَأَقْوَمُ قِيلًا.
“হে বস্ত্র মুড়ি দিয়ে শয়নকারী! রাতের বেলা সালাতে রত থাকো। অর্ধেক রাত, কিংবা তার চেয়ে কিছু কম করো। তবে কিছু সময় ছাড়া অথবা তার ওপর কিছু বাড়িয়ে নাও। আর কুরআন থেমে থেমে পাঠ করো। আমি অতি শিগগির তোমার ওপর একটি গুরুভার বাণী নাজিল করবো। নিশ্চয়ই রাতের বেলা জেগে ওঠা প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে অনেক বেশি কার্যকর এবং যথাযথভাবে কুরআন পড়ার জন্য উপযুক্ত সময়।” (সূরা: মুজজাম্মিল, আয়াত: ১-৬)। তারপর তার ফরজিয়্যাত রহিত হয়ে নফল হয়ে যায়। মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় রাসূলকে বলেন- “আর রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করবে। এটি তোমার জন্য অতিরিক্ত। নিঃসন্দেহে তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রশংসিত স্থানে ওঠাবেন।” (সূরা ইসরা, আয়াত: ৭৯)। সহিহ হাদিসে এসেছে, “সাদ ইবন হিশাম (র) বলেন, আমি বললাম! হে উম্মুল মু’মিনীন! আপনি আমাকে রাসূলুল্লাহ সা.-এর চরিত্র বিষয়ে কিছু বলুন। আয়িশা রা. বলেন, তুমি কি কুরআন পড়ো না? রাসূল সা.-এর চরিত্র কুরআনে যা আছে তাই। তারপর সাদ বলেন, আপনি আমাকে রাসূলুল্লাহ সা.-এর রাতের সালাতের ব্যাপারে বলুন। তখন আয়িশা রা. বলেন, তুমি কি “ইয়া আইয়্যুহাল মুজজাম্মিল” পড়ো না? সাদ বলেন, আমি বললাম, হ্যাঁ আমি পড়ি তো। আয়িশা রা. বলেন, এ সূরার যখন প্রথমাংশ নাজিল হয়, (যাতে তাহাজ্জুদ ফরজ হয়) তখন সাহাবায়ে কিরাম এত দীর্ঘ তাহাজ্জুদ পড়তেন যে, তাদের পা ফুলে যেতো। আর এ সূরার শেষাংশ বারো মাস পর্যন্ত আসমানে আটকে থাকে। বারো মাস পর যখন এর শেষাংশ নাজিল হয়, তখন যে তাহাজ্জুদ ফরজ ছিল তা নফল হয়ে যায়।” (মুসলিম : ১৭৭৩; সুনানু আবু দাউদ : ১৩৪৪)। উক্ত আয়াত ও হাদিস দ্বারা তিনটি বিষয় পরিষ্কার বুঝে আসছে। যথা-
১. তাহাজ্জুদের মাশরূয়িয়্যাত কুরআন দ্বারা হয়েছে।
২. তাহাজ্জুদের মাশরুয়িয়্যাত মক্কায় হয়েছে। কারণ সূরা মুজজাম্মিল মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে।
৩. তাহাজ্জুদ প্রথমে ফরজ ছিল। এক বছর পর্যন্ত ফরজ থাকার পর তা নফল হয়েছে।
আল্লাহর অগণিত নিয়ামতের জান্নাত লাভ
তাহাজ্জুদগুজার বান্দাদের জন্য আল্লাহ জান্নাত প্রস্তুত করে রেখেছেন। রাসূলুল্লাহ সা. বলেন-
إِنَّ فِي الْجَنَّةِ غُرَفًا تُرَى بُطُونُهَا مِنْ ظُهُورِهَا وَظُهُورُهَا مِنْ بُطُونِهَا فَقَالَ أَعْرَابِيٌّ يَا رَسُولَ اللَّهِ لِمَنْ هِيَ قَالَ لِمَنْ أَطَابَ الْكَلَامَ وَأَطْعَمَ الطَّعَامَ وَأَدَامَ الصِّيَامَ، وَصَلَّى لِلَّهِ بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ نِيَامٌ .
নিশ্চয়ই জান্নাতের মধ্যে এমন কতিপয় সুন্দর প্রাসাদ রয়েছে, যার বাইরের দৃশ্যগুলো ভেতর থেকে দেখা যায় এবং ভেতরের দৃশ্যগুলো বাহির থেকে দেখা যায়। এক বেদুইন দাঁড়িয়ে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! এ প্রাসাদগুলো কার জন্য?’ তিনি বললেন, যার কথা নরম। ক্ষুধার্তকে খাদ্য প্রদান করে। নিয়মিত নফল সিয়াম পালন করে এবং রাতের বেলা মানুষ যখন ঘুমিয়ে পড়ে, তখন সে সালাত আদায় করে।” (তিরমিজি: ১৯৮৪, ২৫২৭)। জান্নাতের নি‘আমাত সম্পর্কে মহান আল্লাহ হাদিসে কুদসিতে বলেছেন- “আমি আমার সৎকর্মশীল বান্দাদের জন্য এমন সব বস্তু প্রস্তুত করে রেখেছি, যা কোনো চোখ কখনো দেখেনি, কোনো কান কখনো শোনেনি এবং মানুষের হৃদয় কখনো কল্পনা করেনি। যদি তোমরা চাও তবে পাঠ করো, ‘কেউ জানে না তাদের কৃতকর্মের পুরস্কার স্বরূপ চক্ষুশীতলকারী কত বস্তু তাদের জন্য লুক্কায়িত আছে’ (সূরা আস সাজদাহ, আয়াত: ১৭)।” (বুখারি : ৩০৭২, তিরমিজি : ৩১৯৭)।
রাতের দীর্ঘ সালাতে নবীজির পা ফুলে যেত
মানবতার বন্ধু মুহাম্মাদ সা.-এর পূর্বাপর সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন- لِيَغْفِرَ لَكَ اللَّهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِكَ وَمَا تَأَخَّرَ وَيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكَ وَيَهْدِيَكَ صِرَاطًا مُسْتَقِيمًا
“আল্লাহ তোমার আগের ও পরের যাবতীয় ত্রুটি-বিচ্যুতি মাফ করে দেন। তোমার ওপর তাঁর অনুগ্রহ ও অনুদানও পুরোপুরি দেবেন এবং সরল-সঠিক পথে পরিচালিত করেন।” (সূরা আল-ফাতহ : ২)। এরপরও তিনি রাত জেগে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে করতে তাঁর পা মোবারক ফুলে যেত। সহিহ সনদে এসেছে-“আয়িশা রা. ও মুগীরা ইবন শো’বা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, (মহানবী) রাতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এত বেশি সালাত আদায় করতেন যে, তাঁর পা মোবারক ফুলে যেত। এ দেখে তিনি (আয়িশা রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি এত কষ্ট করছেন, অথচ আপনার পূর্বাপর সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে! রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, ‘আমার কি উচিত নয় যে, (এ মহা অনুগ্রহের জন্য আল্লাহর ইবাদতের মাধ্যমে) আমি একজন পূর্ণ কৃতজ্ঞতা আদায়কারী বান্দা হবো?” (বুখারি : ১০৭৮, মুসলিম : ৭৩০২)। তাহাজ্জুদ সালাতের কিরাআত হলো সবচেয়ে দীর্ঘ। বর্ণিত আছে রাসূলুল্লাহ সা. দুই রাকাত সালাতে পুরো সূরা বাকারা তিলাওয়াত করতেন। সাহাবিরাও অনুরূপ দীর্ঘ তিলাওয়াত করতেন। এ সালাতে যত ইচ্ছা ততটা দীর্ঘ কিরাআত পাঠ করা যায়। এতে রাকাত দীর্ঘ করার জন্য এবং তিলাওয়াতের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য একই রাকাতে বিভিন্ন সূরা ও বিভিন্ন আয়াত পড়া যায় এবং একই রাকাতে একই সূরা অনেকবার পড়া যায়। নফল সালাতে রুকু, সিজদাসহ প্রতিটি রুকন বা পর্ব দীর্ঘায়িত করা সুন্নত ও মুস্তাহাব। এ জন্য রুকু ও সিজদায় তাসবিহ অনেক অনেকবার পড়া যায় এবং অন্যান্য পর্বে বেশি পরিমাণে বিভিন্ন মাসনুন দুআ (যা কুরআন ও হাদিসে আছে) পাঠ করা যায়।
ইসলাম বিরোধী শক্তির মোকাবেলায় তাহাজ্জুদের শক্তি
ইসলামের প্রাথমিক যুগে কুফর ও ইসলামবিরোধী শক্তি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে মুসলমানদের বিজিত হওয়ার পেছনে মূল ভূমিকা ছিল তাহাজ্জুদ সালাত। কেননা গভীর রাতে তাঁরা আল্লাহ তায়ালার দরবারে চোখের পানি ফেলে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কুরআনে আল্লাহ বলেন- “তারা ছিল কঠিন পরীক্ষায় পরম ধৈর্যশীল, অটল-অবিচল, সত্যের অনুসারী, পরম অনুগত। আল্লাহর পথে সম্পদ উৎসর্গকারী এবং রাতের শেষ অংশে আল্লাহর কাছে ভুলত্রুটির ক্ষমাপ্রার্থী ” (সূরা আলে ইমরান: ১৭)। গভীর রাতে সবাই যখন আরামের নিদ্রায়। মু’মিন বান্দা আরামের নিদ্রা ত্যাগ করে শুধুমাত্র মহান রবের সান্নিধ্য লাভের জন্য সালাতে দ-ায়মান হয় তখন স্বয়ং আল্লাহ তাঁর বান্দার নিকটবর্তী হন। এ সময় রবের সান্নিধ্য লাভ ও রূহানি শক্তি অর্জন করা সহজ হয়। রাসূলুল্লাহ সা. বলেন-
أَقْرَبُ مَا يَكُونُ الرّبّ مِنَ العَبْدِ فِي جَوْفِ اللّيْلِ الآخِرِ، فَإِنْ اسْتَطَعْتَ أَنْ تَكُونَ مِمّنْ يَذْكُرُ اللهَ فِي تِلْكَ السّاعَةِ فَكُنْ.
“রাতের শেষভাগে রব তাঁর বান্দার খুব নিকটবর্তী হন। যদি পারো, ওই সময় আল্লাহর জিকিরকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও!” (তিরমিজি : ৩৫৭৯)।
ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠাকামীদের তাহাজ্জুদে অভ্যস্ত হওয়া
মহান আল্লাহর জমিনে তাঁর বিধান কায়েমের আন্দোলনরত সকল মুজাহিদকে বেশি বেশি তাহাজ্জুদের সালাতের পাবন্দ হতে হবে। কারণ, তাহাজ্জুদের মাধ্যমে মুজাহিদদের ঈমানি ও রূহানি শক্তি বৃদ্ধি হয়। এ সময় কাতরকণ্ঠে ফরিয়াদে আল্লাহর মদদ ও নুসরতে দ্বীন কায়েম হবে। তাই তাঁর সাথে নিবিড় ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপনে রাতের সালাতে বেশি অগ্রসর হতে হবে। সাহাবায়ে কিরাম দিনের বেলা ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য ঘোড়সওয়ার আবার রাতের বেলা আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকতেন। বর্ণিত হয়েছে,
كانوا رهباناً بالليل وفرساناً بالنهار،
“তারা দিনের বেলা ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য ঘোড়সওয়ার আবার রাতের বেলা আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকতেন।” সে আলোকে দ্বীনের মুজাহিদদেরকে তাহাজ্জুদের ইবাদতে অধিক যত্নবান হতে হবে। এতে জান্নাতের ঘোষণাও এসেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
اُولٰٓىِٕكَ یُجْزَوْنَ الْغُرْفَةَ بِمَا صَبَرُوْا وَ یُلَقَّوْنَ فِیْهَا تَحِیَّةً وَّ سَلٰمًا، خٰلِدِیْنَ فِیْهَا حَسُنَتْ مُسْتَقَرًّا وَّ مُقَامًا.
“তাদের প্রতিদান দেওয়া হবে জান্নাতের সুউচ্চ কক্ষ। কারণ তারা ছিল ধৈর্যশীল। তাদেরকে সেখানে অভ্যর্থনা করা হবে অভিবাদন ও সালাম সহকারে। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আশ্রয়স্থল ও বসতি হিসেবে তা কত উৎকৃষ্ট!” (সূরা ফুরকান : ৭৫-৭৬)। যারা রাতের সালাতে অভ্যস্ত তারা আচার-আচরণে উন্নত ও আল্লাহর রহমাতের প্রত্যাশী। মহান আল্লাহ বলেন-
أَمَّنْ هُوَ قَانِتٌ آنَاءَ اللَّيْلِ سَاجِدًا وَقَائِمًا يَحْذَرُ الآخِرَةَ وَيَرْجُو رَحْمَةَ رَبِّهِ.“(এ ব্যক্তির আচরণ সুন্দর না সে ব্যক্তির আচরণ সুন্দর) যে অনুগত, রাতের বেলা সালাতে দাঁড়ায় ও সাজদা করে। আখিরাতকে ভয় করে এবং নিজের রবের রহমাতের আশা করে?” (সূরা জুমার : ৯)
নিয়্যাত পোক্ত করলে কোনো কারণে বাদ পড়লেও সাওয়াব হবে
প্রথম কাজই হলো রাতের সালাতের পোক্ত নিয়্যাত করা। দিল থেকে নিয়ত করতে পারলে আমল সহজ হয়ে যায়। বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমলসমূহেরই যে শুদ্ধাশুদ্ধির বিচার হয়, কেবল তা নয়; অনেক সময় ওজরবশত উক্ত আমল করতে না পারলেও আমলের সওয়াবও পেয়ে যায় মু’মিন। সালাতুল লাইলের ক্ষেত্রেও বিষয়টি সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সা. বলেন- “যে ব্যক্তি রাতে আদায় করার নিয়্যাত করে বিছানায় গেল, কিন্তু ঘুম তাকে পরাস্ত করলো, সে উঠতে পারলো না, এমনকি সকাল হয়ে গেল, তাহলে নিয়্যাতের কারণে তার আমলনামায় আমলের সওয়াব লেখা হবে। আর এই ঘুম রবের পক্ষ থেকে তার জন্য সদাকা বলে বিবেচিত হবে।” (নাসাঈ : ১৭৮৭)। অব্যাহতভাবে তাহাজ্জুদ, চাশত, ইশরাক ও আওয়াবিন সহ নফল সালাতের আমল অব্যাহত রাখতে সচেষ্ট হতে সর্বাত্মক চেষ্টা করা দরকার। পাশাপাশি মহান আল্লাহর দরবারে কাতর কণ্ঠে দুআ অব্যাহত রাখার চেষ্টা করা দরকার। নিজ ও পারিবারিক সমস্যার সমাধানের জন্য, ইসলামী সমাজ বিনির্মাণের আন্দোলনের সফলতা, ইসলামী আন্দোলনের মজলুম নেতৃবৃন্দ ও তামাম বিশে^র নির্যাতিত মুসলিম উম্মাহর জন্য দুআ অব্যাহত রাখা। নিজের আপনজনের মধ্যে যারা ইন্তিকাল করেছেন, তাদের মাগফিরাত কামনাসহ দুআ নিয়মিত আমলের অনুষঙ্গ হিসেবে জারি রাখা।
পরিশেষে বলা যায়, প্রত্যেক মু’মিন ব্যক্তি কামনা করেন, আল্লাহ তায়ালা যেন তার প্রয়োজন মিটিয়ে দেন, তার ইবাদত-বন্দেগি কবুল করেন এবং তার ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দেন। এসব চাওয়া-পাওয়ার প্রধান অবলম্বন হলো তাহাজ্জুদ সালাত। তাহাজ্জুদ সালাত আল্লাহর সাথে বান্দার একান্ত কথোপকথনের এক মহান অবলম্বন। আল্লাহ ও বান্দার মাঝে সেতুবন্ধ তৈরি করে। তাহাজ্জুদের বদৌলতে মানুষ মহান মর্যাদার অধিকারী হয়। এটা আল্লাহ তায়ালার মাহবুব বান্দাগণের নিয়মিত অভ্যেস। আর আল্লাহর সাথে বান্দার গভীর সম্পর্ক স্থাপন তথা তাঁর নৈকট্য ও সন্তোষ অর্জন এবং ঈমানি শক্তি অর্জনের অন্যতম পন্থা। আল্লাহ তাআলা আমাদের আমলের তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : প্রধান মুহাদ্দিস, বিজুল দারুল হুদা কামিল মাদরাসা, বিরামপুর, দিনাজপুর
আপনার মন্তব্য লিখুন