post

ধোঁকা দিয়ে বোকা বানানো প্রতারণা

মুহাম্মদ ইয়াছিন আরাফাত

২৬ মার্চ ২০২২

ধোঁকাবাজি, প্রতারণা মানুষের নিকৃষ্টতম আচরণগুলোর অন্যতম। প্রতারণা কিংবা ধোঁকাবাজি সমাজের অসৎ মানুষের হাতিয়ার। সত্যপন্থী মানুষেরা কখনো ধোঁকা বা প্রতারণার আশ্রয় নেয় না। কিন্তু ইদানীং ধোঁকা দিয়ে বোকা বানানো রসিকতার এক ধরনের উপাদানে পরিণত হয়েছে। কে কাকে কতটুকু বোকা বানাতে পারে তা নিয়ে সমাজের শিক্ষিতদের মাঝে প্রতিযোগিতাও হতে দেখা যায়। তরুণদের কারো কারো মাঝে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানানো এক ধরনের আধুনিকতাও বটে। ধরনটা এমন যে, বোকা বানাতে পারাটা এক বিশাল সফলতা। অন্যকে বোকা বানিয়ে বিজয়ের হাসি হাসতেও কাউকে দেখা যায়। অথচ ধোঁকায় পড়ে বোকা বনে যাওয়া মানুষটি কতটা ব্যথিত হন, কতটা কষ্ট পান, কতটা হেয়প্রতিপন্ন হন তা অনেকেই অনুভব করেন না বরং উল্লাস করেন। ইসলামে এ ধরনের কাজ রসিকতা নয় বরং প্রতারণার শামিল।

সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে ইউটিউবে ইদানীং ট্রল ভিডিও তৈরির প্রবণতা বেশি করে লক্ষ্য করা যায়। যার হাতে ভালো মানের একটি মোবাইল সেট আছে, যিনি ভিডিও এডিটিংয়ের কলাকৌশল জানেন তিনিই ট্রল ভিডিও বানাতে নেমে পড়ছেন। ধোঁকা দিয়ে বোকা বানিয়ে সেটা আবার ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছেড়ে দিচ্ছেন। রাস্তা ঘাটে পার্কে চলতে ফিরতে উঠতি বয়সের তরুণদের এমন ট্রল ভিডিও বানাতে হর হামেশা দেখা যাচ্ছে। অথচ যাদেরকে ট্রলের শিকার বানানো হচ্ছে তাদের সাথে রসিকতার নামে ভয় দেখানো, সামাজিক মর্যাদাহানি এবং অপদস্থের ঘটনাই বেশি ঘটছে। যাকে কেন্দ্র করে ট্রলের আয়োজন করা হচ্ছে তিনি আদৌ বিষয়টি পছন্দ করছেন কিনা তার তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। মাঝে মাঝে দুর্ঘটনাও ঘটতে দেখা যায়।

বর্তমান সময়ে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানানোর এক আধুনিক সংস্করণ ‘এপ্রিল ফুল ডে’! এ দিনটিকে বোকা বানানোর দিবস হিসেবে পালন করছে একশ্রেণীর তরুণ যুবকেরা। বাংলাদেশের মুসলিম যুবকদেরও কেউ কেউ ‘এপ্রিল ফুল ডে’! পালন করে থাকে। এটা কেউ জেনে পালন করে কেউ না জেনে পালন করে। অথচ এপ্রিল ফুলের প্রকৃত ইতিহাস যদি মুসলমানরা জানতো তাহলে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানানোর পরিবর্তে ব্যথিত হয়ে চোখের পানি ফেলতো। বিশ্বব্যাপী ইংরেজি বছরের ১ এপ্রিল ‘মানুষকে বোকা বানানোর দিন’ হিসেবে ‘এপ্রিল ফুল’ নামে পালন করা হয়। এদিন একে অন্যকে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানিয়ে মজা করে। পশ্চিমা সমাজে প্রচলিত এ ‘এপ্রিল ফুল’ কালচার বা সংস্কৃতি ইসলামে বিবেক বিবর্জিত ঘৃণিত এক অসুস্থ চর্চা।

এপ্রিল ফুলের ইতিহাস এক হৃদয়বিদারক লোমহর্ষক ইতিহাস। ৭১১ সালের অক্টোবরে মুসলিম সেনাপতি তারিক বিন যিয়াদের নেতৃত্বে মুসলমানরা কর্ডোভা জয় করেন। এর পর থেকে পযার্য়ক্রমে বৃহত্তর স্পেন মুসলমানদের নেতৃত্বে চলে আসে। এ সময় হাজার হাজার মানুষ ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে। সাথে সাথে জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য-সংস্কৃতি ও শিল্প-সভ্যতার ক্ষেত্রে বিস্ময়কর উন্নতি সাধিত হতে থাকে। কিন্তু ইউরোপীয় খ্রিস্টান রাজাদের চক্ষুশূলের কারণ হয় মুসলমানদের এই অগ্রগতি। ফলে স্পেনের মাটি থেকে মুসলমানদের উচ্ছেদ করার ঘোষণা দিয়ে পর্তুগিজ রানী ইসাবেলা চরম মুসলিমবিদ্বেষী পার্শ্ববর্তী খ্রিষ্টান রাজা ফার্ডিন্যান্ডকে পরিণয়সূত্রে বিয়ে করে। বিয়ের পর দু’জন মিলে সম্মিলিত বাহিনী গড়ে তুলে মুসলমানদের হাত থেকে কর্ডোভাসহ অন্যান্য অঞ্চল দখল করে নেয়। কিন্তু চূড়ান্ত বিজয় অর্জন হয়নি তখনো, বাকি ছিল শুধু গ্রানাডা। রাজা ফার্ডিন্যান্ড যখন সম্মুখ সমরে মুসলমানদের পরাজিত করে গ্রানাডা দখল করতে বারবার ব্যর্থ হয় তখন সে ভিন্ন পথে পা বাড়ায়। তার নির্দেশে গ্রানাডার আশপাশের সকল শস্যক্ষেত্র জ্বালিয়ে দেয়া হয়। অচিরেই দুর্ভিক্ষ নেমে আসে গ্রানাডা শহরে। দুর্ভিক্ষ যখন প্রকট আকার ধারণ করে তখন রাজা ফার্ডিন্যান্ড ঘোষণা করে মুসলমানরা যদি শহরের প্রধান ফটক খুলে দেয় এবং নিরস্ত্র হয়ে মসজিদে আশ্রয় নেয় তাহলে বিনা রক্তপাতে তাদের মুক্তি দেয়া হবে।

দুর্ভিক্ষ পীড়িত গ্রানাডার অসহায় মুসলিমরা নারী-পুরুষ আর শিশুদের করুণ মুখের দিকে তাকিয়ে খ্রিষ্টানদের অশ্বাসে বিশ্বাস করে শহরের প্রধান গেট খুলে দেয় আর মুসলিমরা আল্লাহর ঘর মসজিদে আশ্রয় নেয়। খ্রিষ্টান বাহিনী শহরে প্রবেশ করে প্রতিটি মসজিদে তালা লাগিয়ে দেয়। তারপর একযোগে সব মসজিদে আগুন লাগিয়ে বর্বর উল্লাসে মেতে ওঠে। সেই দিন লক্ষ লক্ষ নারী-পুরুষ আর শিশু অসহায় আর্তনাদ করতে করতে জীবন্ত পুড়ে মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারায় মসজিদের ভিতর। বিশ্বাসঘাতক খ্রিষ্টানদের প্রজ্বলিত অগ্নিশিখায় দগ্ধীভূত অসহায় মুসলিম নারী-পুরুষ ও শিশুদের আর্তচিৎকারে ফার্ডিন্যান্ড আনন্দের আতিশয্যে স্ত্রী ইসাবেলাকে জড়িয়ে ধরে ক্রূর হাসি হেসে বলতে থাকে, Oh! Muslim! How fool you are! যেদিন এই হৃদয়বিদারক, মর্মান্তিক ও লোমহর্ষক ঘটনা ঘটেছিল, সে দিনটি ছিল ১৪৯২ সালের ১ এপ্রিল। সেদিন থেকেই খ্রিষ্টানরা প্রতি বছর ১ এপ্রিল সাড়ম্বরে পালন করে আসছে April Fools Day ‘এপ্রিলের বোকা দিবস’ হিসাবে। মুসলমানদের বোকা বানানোর এই নিষ্ঠুর ধোঁকাবাজিকে স্মরণীয় করে রাখার উদ্দেশ্যে সমগ্র ইউরোপে প্রতিবছর পহেলা এপ্রিল ‘এপ্রিল ফুল’ দিবস হিসাবে পালিত হয়।

প্রকৃত সত্য হচ্ছে বিকৃত বিনোদনের অপর নাম ‘এপ্রিল ফুল’। মিথ্যা ও প্রতারণা ছাড়া যে বিনোদন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কারণ এপ্রিল ফুল উদযাপনের মূল বিষয়ই হলো ‘মানুষকে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানানো’। এ কাজে মিথ্যা এবং প্রতারণামূলক আচরণই মুখ্য ভূমিকা পালন করে। শুধু এপ্রিল ফুল ডে পালনই নয় বরং মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে কোনো কথা এবং কাজ ইসলামে ঘৃণিত অপরাধ। মিথ্যা হলো সকল পাপের মূল। তাছাড়া মিথ্যা শুধু ইসলামেই ঘৃণিত অপরাধ নয় বরং দুনিয়ার সব ধর্ম এবং সভ্যতায় এটি ঘৃণিত এবং জঘন্য অপরাধ। মানবতার বন্ধু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘তোমরা মিথ্যা থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ এ মিথ্যা মানুষকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়।’ (বুখারি)। যিনি মজা করার জন্য মিথ্যা গল্প সাজান তখন তার মনে রাখা উচিত অল্প সময়ের জন্য হলেও তিনি মিথ্যাবাদী হয়ে যান। অন্য একটি হাদিসে রাসূল সা. বলেন, ‘এ মিথ্যায় লিপ্ত হওয়ার কারণে একটা সময় মানুষের কথা, কাজই নয় বরং তার অন্তরে মিথ্যার ভিত মজবুত হয়। মিথ্যা ছাড়া কোনো কিছুই তখন সে কল্পনা করতে পারে না। এমনকি সে ব্যক্তির অন্তরে একটি সুঁইয়ের জায়গা পরিমাণ ভালো কাজও আর প্রবেশ করতে পারে না।’

মহাগ্রন্থ আল কুরআনে মিথ্যাবাদী সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- মিথ্যাবাদীর ওপর আল্লাহর লানত তথা অভিশাপ (সূরা আলে ইমরান : ৬১)। মহান আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, ‘মিথ্যা তো তারাই বানায়, যারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের ওপর ঈমান রাখে না। বস্তুত তারাই মিথ্যুক।’ (সূরা নাহাল : ১০৫)। রাসূল সা.-এর স্বপ্নের বৃত্তান্ত বর্ণনা সংক্রান্ত দীর্ঘ একটি হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, রাসূল সা. বলেন, ‘এক শায়িত ব্যক্তির কাছে আমরা উপস্থিত হলাম। দেখলাম, এক ব্যক্তি তার পাশে দাঁড়িয়ে লোহার একটি অস্ত্র দিয়ে একবার তার ডানপাশের চোয়াল ও চোখ একেবারে পেছন পর্যন্ত ফেড়ে দিচ্ছে। তারপর যখনই বাম দিকে অনুরূপ ফেড়ে দিচ্ছে, তখন ডান দিকটা আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে। আবার ডান দিকে পুনরায় চোয়াল ফেড়ে দিলে বাম দিক স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম : এই ব্যক্তি কে? আমার সঙ্গী ফেরেশতাদ্বয় বললেন, সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে একটা মিথ্যা গুজব রটিয়ে ছেড়ে দিতো এবং তা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ত। (বুখারি)।

সুতরাং মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে যারা আনন্দ উপভোগ করেন তাদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ নিপতিত হয়। যে এপ্রিল ফুল অনুষ্ঠান মিথ্যা ছাড়া কোনোভাবেই উদযাপন করা সম্ভব নয়, একজন সচেতন মুসলিম কিভাবে সে এপ্রিল ফুল উদযাপন করতে পারে! একজন মুসলিম যুবক কিভাবে বারবার বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে মিথ্যা বলতে পারে, কিভাবে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানানোর মত গর্হিত কাজ করতে পারে! কেউ কেউ বলে থাকেন, আমরা সত্যিকারভাবে মিথ্যা বলি না বরং মজা করার জন্য এপ্রিল ফুলে একটু মিছে মিছি মিথ্যা বলি, একটু মজা নিই আনন্দ করি। এ প্রসঙ্গে মানবতার বিশ^স্ত বন্ধু রাসূল সা. বলেছেন, ‘ধ্বংস তার জন্য যে লোকহাসানোর জন্য কথা বলে এবং এতে সে মিথ্যার আশ্রয় নেয়। ধ্বংস তার জন্য, ধ্বংস তার জন্য (তিরমিজি ও আবু দাউদ)। রাসূল সা. উক্ত হাদিসে অনিবার্য ধ্বংসের কথা গুরুত্ব দিয়ে বুঝানোর জন্য তিনবার উল্লেখ করেছেন। রাসূল সা. মিথ্যা পরিহার করা ও সত্য বলার বিষয়ে অনেক বেশি সতর্ক করেছেন। একটি হাদিসে তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা সত্যকে অবলম্বন করো। কারণ সত্যবাদিতা ভালো কাজে উপনীত করে। আর ভালো কাজ উপনীত করে জান্নাতে। মানুষ সত্য বলে ও সত্যবাদিতার অন্বেষায় থাকে। একপর্যায়ে সে আল্লাহর কাছে সত্যবাদী হিসেবে লিখিত হয়ে যায়। আর মিথ্যা থেকে দূরে থাকো। কারণ মিথ্যা উপনীত করে পাপাচারে। আর পাপাচার উপনীত করে জাহান্নামে। যে ব্যক্তি মিথ্যা বলে ও মিথ্যার অন্বেষায় থাকে, এভাবে একসময় আল্লাহর কাছে সে চরম মিথ্যুক হিসেবে লিখিত হয়ে যায় (মুসলিম)।

মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে কিংবা ধোঁকা দিয়ে বোকা বানানো এক ধরনের জঘন্য প্রতারণা। সেটা মজা করার জন্য হউক কিংবা আনন্দ নেয়ার জন্য হোক না কেন। সবকিছুরই একটি নির্দিষ্ট সময় ও সীমা রয়েছে। নির্দোষ রসিকতা এবং নির্লজ্জ উপহাসের মধ্যে বিশাল পার্থক্য রয়েছে। মানুষকে আনন্দ দেওয়ার জন্য রসিকতা এবং মানুষকে কষ্ট দিয়ে মজা নেওয়া দুটির মধ্যেই পর্বতসমান ব্যবধান বিদ্যমান। এপ্রিল ফুল পালন কিংবা মজা করতে গিয়ে একজন অন্যজনের সঙ্গে মিথ্যার সঙ্গে ধোঁকা বা প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড করে থাকেন। ইসলামে প্রতারণামূলক এসব কাজ চরমভাবে ঘৃণিত ও দোষণীয়। সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী রাসূল সা. বলেছেন- ‘যে ব্যক্তি কারো সঙ্গে প্রতারণা করল সে আমার উম্মত হতে পারে না।’ (মুসলিম)

মানবতার মহান শিক্ষক মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা. কঠিন হৃদয়ের মানুষ ছিলেন না। তিনি তাঁর সাহাবাদের সাথে হাসিমুখে কথা বলতেন, খোশ গল্প করতেন এমনকি হালকা রসিকতাও করতেন। তবে রাসূল সা.-এর রসিকতায় হাস্যরসের চাইতে শিক্ষাই ছিল মূল প্রতিপাদ্য। তিনি ধোঁকা দিয়ে বোকা বানিয়ে রসিকতা নয় বরং সত্যাসত্য বিষয় দিয়েই হাসি ও রসবোধের চর্চা করতেন, সাহাবাদের প্রফুল্ল রাখতেন। এমনই একটি রসিকতা আমাদের যেমন আনন্দ দেয় তেমনি শিক্ষাও দেয়। আমরা সকলেই জানি রাসূল সা. তাঁর বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের সাথে কেমন করে রসিকতা করতেন। একবার রাসূল সা. হযরত আলী রা.-এর সাথে বসে খেজুর খাচ্ছিলেন। খাওয়ার শেষ পর্যায়ে আলী রা. দেখলেন, রাসূল সা.-এর সাথে দেখা করতে অনেকেই আসছেন। তখন তিনি দ্রুত তাঁর খাওয়া খেজুরের বিচিগুলো রাসূল সা. এর সামনে রেখে মজা করে বলতে লাগলেন, রাসূল সা. কতই না খেজুর খেয়েছেন। রাসূল সা.ও রসিকতায় কম যাননি, রাসূল সা. সাথে সাথে উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আলীও এতো খেয়েছে যে সে খেজুরের বিচিসহ খেয়ে নিয়েছে।’ হাদিসের বর্ণনাকারী বলেন, আমি যেনো রাসূলের সাহাবাদের হাসির আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। আল্লাহ তাদের সবার উপরে রহমত বর্ষণ করুন। রাসূল সা. ছিলেন সর্বদা হাসিখুশি থাকা একজন ব্যক্তিত্ব। তার কথা বলার ফাঁকেও তিনি তার সাহাবাদের সাথে খোশ গল্প করতেন। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে রাসূল সা.-এর এমন হাসিখুশিপূর্ণ জীবনাচরণ সম্পর্কে মহান আল্লহ তায়ালা বলেন, আল্লাহর রহমতেই আপনি তাদের জন্য কোমল হৃদয়ের অধিকারী হয়েছেন পক্ষান্তরে আপনি যদি রাগী ও কঠিন হৃদয়ের অধিকারী হতেন তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতো (সূরা আলে ইমরান : ১৫৯)।

রাসূল সা. ব্যঙ্গ করেছেন কিংবা কোনো সাহাবাকে হেয় করে মজা করেছেন এরকম কোনো ঘটনার বিবরণ হাদিসে পাওয়া যায় না। তাইতো তিনি সবার বিশ^স্ত বন্ধু ছিলেন। সাহাবারা সবাই মন খুলেই আপনজনের মতো রাসূলের সাথে কথা বলতেন, তাঁর সংস্পর্শে আসতেন এবং স্বাভাবিকভাবেই তাঁর সাথে মিশতে পারতেন। কিন্তু সমাজে যে সকল যুবক বন্ধুত্বের দোহাই দিয়ে ধোঁকা দিয়ে তারই অপর বন্ধুকে বোকা বানিয়ে অট্টহাসিতে হাসেন, তাদের জন্য মহাগ্রন্থ আল কুরআন ও রাসূল সা.-এর জিন্দেগি থেকে শিক্ষা রয়েছে। কুরআনে এসেছে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন- (সত্য কথা এই যে) তারা নিজেদের ছাড়া অন্য কাউকে ধোঁকা দেয় না। এবং তাদের এই বিষয়ে কোনো উপলব্ধিও নেই।’ (সূরা বাকারা : ৯)। আসুন আমরা সদা হাস্যোজ্জ্বল থেকে পারস্পরিক আচরণে আরো যত্নশীল হই, একে অপরের আন্তরিক হই। ধোঁকা দিয়ে বোকা বানানো কিংবা মজা করার জন্য হেয় করার মতো প্রতারণা নয় বরং হাস্যোজ্জ্বল আচরণ দিয়ে একে অপরের হৃদয়কে জয় করি।

লেখক : গবেষক ও কলামিস্ট

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির