প্রশ্ন-১ : আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বিভিন্ন জায়গায় মুসলমানদেরকে বিচ্ছিন্ন হতে নিষেধ করেছেন। ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য বলেছেন। ইসলামী আদর্শিক সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য বলছে অপরদিকে আরো অনেক ইসলামী সংগঠন ঐক্যের কথা বলছে। আসলে কি আমরা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছি? নাকি আমরা মুসলিমরা বিক্ষিপ্ত/বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছি, একে অপরের বিরুদ্ধে ছুটছি। সেক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ কিভাবে হবো? - এম সাজিদুল ইসলাম, হাতিয়া, নোয়াখালী
উত্তর : ঐক্যবদ্ধ হওয়া বলতে পুরো মুসলিম উম্মাহের ঐক্যবদ্ধ হওয়াকে বোঝানো হয়ে থাকে। ইসলামী ছাত্রশিবির সেই ঐক্যের দিকেই আহবান করে এবং সমস্ত মুসলিম উম্মাহর প্রতি ভালোবাসা পোষণের কথা বলে, নিজেদের জামায়াতকে একমাত্র সহীহ জামায়াত বলেও মনে করে, অন্যরা বাতিল; এমন নয়। কেবলমাত্র দ্বীনকে যথার্থভাবে অনুসরণ করা এবং সামাজিক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আহবান করে ছাত্রশিবির। এক্ষেত্রে অন্যান্য ইসলামী ছাত্রসংগঠনগুলোকে ইসলামী ছাত্রশিবির প্রতিপক্ষ মনে করে না, বরং তাদের সহায়ক শক্তি বলে মনে করে। ছাত্রশিবির ছাত্রদের কাছে কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী ইকামতে দ্বীনের কাজে যে সংগঠনকে অধিকতর অগ্রগামী মনে হবে সেই সংগঠনের সাথে থেকেই ইসলামের খিদমত করার অনুরোধ জানায়। অন্যান্য ছাত্রসংগঠনগুলোও যদি এমন মানসিকতা লালন করতে পারে এবং সবাই মিলে কাজ করার মানসিকতা তৈরি করতে পারে তাহলেই আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া সম্ভব। এভাবেই ইসলামের সামাজিক বিপ্লবকে ত্বরান্বিত করবে বলে আশা মনে করছি, ইনশাআল্লাহ।
প্রশ্ন-২ : ইসলাম কায়েম করা বা ইসলামের বিজয় বলতে কি বুঝায়? সংসদে সর্বোচ্চ আসন পেলে, সকলে নামাজ, কুরবানি, জাকাত ইত্যাদি আদায় করলে বা কুরআনের আইন কার্যকর করলেই কি ইসলাম কায়েম হয়ে যাবে? পৃথিবীতে কোন কোন দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত আছে? - মোঃ আবু ছায়েদ রায়হান, মদন মোহন কলেজ, সিলেট
উত্তর : আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় ভাই আবু সায়েদ রায়হান, আপনি খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেছেন। আমরা যেহেতু দ্বীন কায়েমের সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছি সেহেতু দ্বীন কায়েম বলতে কী বুঝায় সেটা উপলব্ধি করা আমাদের জন্য একান্ত অপরিহার্য। দেখুন, এক অর্থে দ্বীন তো কায়েম হয়েই আছে। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের উপর সম্পূর্ণ কুরআন নাজিল হওয়া এবং তার পুরো জিন্দেগির মাধ্যমে ইসলাম পূর্ণাঙ্গতা পেয়েছে। কুরআন ও হাদিসের ব্যাখ্যা করার থেকে বেশি কিছু আমাদের দ্বীনে প্রবেশ করানোর সুযোগ নেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো আমাদের অধিক্ষেত্রের মধ্যে দ্বীন কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে? একজন মু’মিনের জীবনকে যদি আমরা স্তরবিন্যাস করি তাহলে আমরা ৪টি পরিধি দেখতে পাবো-
১. ব্যক্তিগত জীবন, ২. পারিবারিক জীবন, ৩. সামাজিক জীবন, ৪. রাষ্ট্রীয় জীবন
ইকামাতে দ্বীন বা ইসলাম কায়েম হলো ইসলামের বিধানসমূহ পূর্ণাঙ্গভাবে প্রতিপালন। তবে সাধারণভাবে আমরা ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করা বুঝাতে ইকামাতে দ্বীন শব্দটি ব্যবহার করে থাকি। শুধু ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম হয়ে গিয়েছে আর কেউ একজন সে রাষ্ট্রের নাগরিক শুধুমাত্র এজন্যই কী তাকে সফল বলা যাবে? অবশ্যই না। তার ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনেও তো ইসলাম কায়েম করতে হবে। তবে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের মাধ্যমেই অন্যান্য বিষয়গুলো যথাযথভাবে কায়েমের পথ তৈরি হয়। অন্যথায় তা সম্ভব না। ফর এক্সাম্পল, ইসলামে অপরাধের শাস্তির যে বিধানগুলো আছে বা সম্পত্তি সংক্রান্ত যে অধিকারগুলো আছে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম ব্যতীত কি সেগুলো বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা দেওয়া যায়? এজন্য ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে চূড়ান্তভাবে ইসলাম কায়েম মনে করা হয়। কিন্তু তা না হওয়া পর্যন্ত এমনকি তা হয়ে গেলেও ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে ইসলাম প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই।
সংসদে সর্বোচ্চ আসন পাওয়া আসলে ইসলাম কায়েম নিশ্চিত করে না। দেখতে হবে রাষ্ট্রে আল্লাহ তায়ালার সার্বভৌমত্ব ও ইসলামের মূলনীতি অনুযায়ী আইন চালু হয়েছে কিনা এবং শাসকসহ রাষ্ট্রের প্রত্যেকটি নাগরিক ইসলামের আইন দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে কিনা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তারা এমন লোক যাদেরকে আমি পৃথিবীতে শক্তি-সামর্থ দান করলে তারা নামাজ কায়েম করবে, জাকাত দেবে এবং সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করবে। প্রত্যেক কর্মের পরিণাম আল্লাহর এখতিয়ারভূক্ত।” (সূরা হজ : ৪১)। আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, “নিশ্চয় আমি আপনার প্রতি সত্য কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি মানুষের মধ্যে ফয়সালা করেন, যা আল্লাহ আপনাকে হৃদয়ঙ্গম করান। আপনি বিশ্বাসঘাতকদের পক্ষ থেকে বিতর্ককারী হবেন না।” (সূরা নিসা : ১০৫)
ইসলামিক স্কলার ও ইসলামী ইতিহাসবিদগণের মতে ১৯০৮ সালে উসমানীয় সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ নির্বাসিত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত পরিপূর্ণ কোনো ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তবে সৌদি আরব, ইরান, কাতার, লিবিয়া, মিশর, আফগানিস্তানসহ বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রে সময়ে সময়ে ইসলামের বিধান বাস্তবায়নের চেষ্টা করতে দেখা গিয়েছে। পর্যাপ্ত দক্ষতার সাথে জাহেলিয়াতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারলে এবং দ্বীনের পথে সীসা ঢালা প্রাচীরের মত ঐক্যবদ্ধ হলে এখনও ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম অবশ্যম্ভাবী।
আপনার মন্তব্য লিখুন