মানুষ আল্লাহপাকের সেরা সৃষ্টি। তাকে জ্ঞান ও বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে সকল সৃষ্টির উপরে শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে। গোলাম হওয়ার পাশাপাশি তাকে করা হয়েছে মহান আল্লাহ তায়ালার প্রতিনিধি। ফলে মানুষের মর্যাদা নির্ধারিত হয়েছে ফেরেশতারও উপরে। যথার্থ প্রতিনিধিত্ব করার জন্য আল্লাহ তায়ালা মানুষকে হিদায়াত দান করেছেন যা আর কাউকে দেয়া হয়নি। সকল সৃষ্টির ধর্ম ইসলাম এবং সেটি তার প্রকৃতিতেই রয়েছে। সমগ্র সৃষ্টির পরিচয় হলো মুসলিম (অনুগত) এবং আল্লাহর আনুগত্য না করার কোনো সুযোগ তার নেই। কিন্তু মানুষ ব্যতিক্রম। তাকে যেমন ভালো-মন্দ উপলব্ধি করার মতো জ্ঞান ও বিবেক দান করা হয়েছে, পাশাপাশি ভালো বা মন্দ করার মতো স্বাধীনতাও দেয়া হয়েছে। মানুষের জীবনের দুটি দিক। প্রথমত, প্রাকৃতিক (চোখ দিয়ে দেখা, হাত দ্বারা ধরা, পায়ে হাঁটা, ক্ষুধা লাগলে খাদ্য গ্রহণ ইত্যাদি) নিয়ম-বিধান যা মানতে সে বাধ্য এবং এই দৃষ্টিকোণ থেকে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সবই মুসলিম। দ্বিতীয়ত, নৈতিক বিধান (মানুষের আচার-আচরণ, সামাজিক সুবিচার, সত্য কথা বলা ইত্যাদি) মানার ক্ষেত্রে মানুষ স্বাধীন। বিবেক-বুদ্ধি দ্বারা মানুষ ভালো-মন্দ উপলব্ধি করতে পারে। তদুপরি আল্লাহপাক নবী-রাসূলদের মাধ্যমে মানুষকে হিদায়াত দান করেছেন। অমান্য করার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও যারা বিবেকের দাবি ও আল্লাহর বিধান মান্য করে চলে তারা মুসলিম। পক্ষান্তরে যারা অমান্য করে তারা কাফের।
আদম (আ)-এর মাধ্যমে মানবজাতির সূচনা। তাঁকে সৃষ্টি করার পর জান্নাতেই তাঁর পরীক্ষা নেয়া হয়। একটি গাছ দেখিয়ে বলা হয়, ‘তুমি ঐ গাছের নিকটেও যাবে না।’ আদম (আ)-এর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শনের জন্য সকল ফেরেশতা ও আজাজিলকে বলা হয় সিজদা করার জন্য। আজাজিল ছাড়া সকলেই সিজদা করেন এবং সে অস্বীকার করে অভিশপ্ত হয়ে পড়ে। তখন থেকেই মানবজাতির সাথে তার শত্রুতা শুরু এবং কিয়ামত পর্যন্ত তার শত্রুতা অব্যাহত থাকবে। আদম (আ) শয়তানের প্ররোচনায় আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রাথমিকভাবে জালেম হিসেবে পরিগণিত হলেও দ্রুত নিজেকে সংশোধন করে নেন। তিনি আল্লাহ তায়ালার দরবারে নিজের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান। আদম (আ)-এর এই ক্ষমা চাওয়াকে আল্লাহ খুবই পছন্দ করেন এবং দিকভ্রান্ত আদমকে ক্ষমা চাওয়ার ভাষা তিনি শিখিয়ে দিয়েছেন (সূরা আ’রাফ : ২৩)। এখান থেকে জানা যায়, মানুষের দ্বারা ভুল হবে না বা মানুষ কোনো অন্যায় করবে না, এটি মানব প্রকৃতি নয় বরং মানুষের দ্বারা অন্যায় হবে কিন্তু সে সেই অন্যায়ের উপর অবিচল থাকবে না, দ্রুত ফিরে আসবে। আর শয়তানের প্রকৃতি হলো সে অন্যায়কে স্বীকার করবে না বরং নানা যুক্তি দিয়ে তার উপর অনড় হয়ে থাকবে যা মানব সৃষ্টির সূচনায় সে করেছিল। মানব সমাজে যারা অন্যায় করে ফিরে আসে না মূলত তারাই শয়তানের অনুচর।
ভুল স্বীকার করার কারণে আল্লাহপাক আদম (আ)-কে কেবল ক্ষমাই করেননি বরং নবুওয়াতি দিয়ে তাঁকে সম্মানিত করেছেন। আদম (আ) যেমন প্রথম মানুষ, পাশাপাশি তিনি প্রথম নবী। তারপর আল্লাহপাক আদম (আ) ও শয়তানকে পৃথিবীতে চলে আসতে বলেন এবং ভীত-সন্ত্রস্ত আদম (আ)-কে অভয়বাণী শোনান, ‘আমার পক্ষ থেকে যে হিদায়াত যাবে যারা তা অনুসরণ করবে তাদের কোনো ভয় নেই।’ (সূরা বাকারা : ৩৮) সেই প্রতিশ্রুতি মোতাবেক যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসূল আল্লাহপাক দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। প্রকৃত সংখ্যা আল্লাহই ভালো জানেন। মাত্র ২৫-২৬ জনের নাম কুরআনে উল্লেখ পাওয়া যায়। কুরআনের বাণী, ‘আমি তো প্রত্যেক জাতির মধ্যে এ মর্মে রাসূল পাঠিয়েছি যে তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো ও তাগুতকে বর্জন করো।’ (সূরা নাহল : ৩৬) আল্লাহপাক কোনো কোনো জনপদে একাধিক নবী/রাসূলও পাঠিয়েছেন। সূরা ইয়াসিনে উল্লেখ রয়েছে একটি জনপদে তিন তিনজন রাসূল প্রেরণ করেছেন (সূরা ইয়াসিন : ১৪)। আবার ইব্রাহিম (আ) ও তাঁর ছেলে ইসমাইল (আ) এবং ভাইপো লুত (আ)-কে একই সময়ে পাঠিয়েছেন। ইয়াকুব (আ) ও ইউসুফ (আ)-কেও একই সময়ে পাঠিয়েছেন। অতীতের সকল নবী-রাসূলকে একটি নির্দিষ্ট জনপদ ও সময়ে পাঠিয়েছেন এবং নবীর ইন্তেকাল বা পরবর্তী নবীর আগমনে তাঁর শরিয়ত বাতিল হয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের প্রিয়তম নবী মুহাম্মদ সা. কোনো নির্দিষ্ট সময় বা জনপদের নবী নন; তিনি বিশ^নবী এবং সকল মানুষের নবী ও কিয়ামত পর্যন্ত সময়ের নবী। তাঁর পরে আর কোনো নবী আসবে না, তিনি ‘খাতামুন্নবী’। (সূরা আহযাব : ৪০)
সকল রাসূলের প্রতি আমরা ভক্তি-শ্রদ্ধা পোষণ করি এবং কারো প্রতি কোনো বিদ্বেষ নেই। এটা আমাদের ঈমানেরই দাবি। আল্লাহই আমাদের শিখিয়েছেন, ‘আমরা রাসূলদের মধ্যে কোনো পার্থক্য করি না।’ (সূরা বাকারা : ২৮৫) আল্লাহ তায়ালা সকলের পরিচয় আমাদের সম্মুখে প্রকাশ করেননি। নবীদের ইন্তেকালের পরে তাঁদের অনুসারীরা যেহেতু বিকৃতি ঘটিয়েছেন সেহেতু বর্তমানে বিভিন্ন ধর্মীয়গোষ্ঠী যাঁদেরকে মান্য করে চলে তাঁদের ব্যাপারে আমরা নীরব। যেমন, গৌতম বুদ্ধ নবী বা নবী নন কোনটিই আমরা বলবো না। সবার প্রতি আমরা শ্রদ্ধা পোষণ করি। এমনকি দার্শনিক, কবি, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, রাজনীতিক কাউকেই আমরা ঘৃণা বা নিন্দার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করবো না। আমাদের নবী সা.-এর শিক্ষা- যারা দুনিয়া থেকে চলে গেছেন তাদের দোষচর্চা করো না এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর উপাস্যদের নিন্দা জানাতেও তিনি নিষেধ করেছেন।
আল্লাহপাক মুহাম্মদ সা.-এর জীবনে রেখেছেন আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। (সূরা আহযাব : ২১) তাঁর জীবনে গোপন ও প্রকাশ্য বলে কিছু নেই। একজন পুরুষকে সবচেয়ে ভালো জানেন তার স্ত্রী। মুহাম্মদ সা. তাঁর দাম্পত্য জীবনকেও উন্মুক্ত রাখার জন্য তাঁর স্ত্রীদের নির্দেশ দেন। শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন সততার মূর্ত প্রতীক। তাঁর চরিত্রে কোনো কালিমা ছিল না। যে কেউ অনুসরণ করে দুনিয়া ও আখেরাতে সাফল্য অর্জন করতে পারে। এমনই মহামানব ছিলেন আমাদের প্রিয়তম নবী মুহাম্মদ সা.। তিনি ছিলেন তাঁর অনুসারীদের নিকট সবকিছু থেকে এমনকি নিজেদের জীবন অপেক্ষাও প্রিয় এবং তাঁকে ভালোবাসা আমাদের ঈমানেরই শর্ত। আনাস রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘তোমাদের কেহই ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সকল মানুষ থেকে অধিক প্রিয় হই।’ (বুখারি ও মুসলিম) আল্লাহর ভালোবাসা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সা.-এর অনুসরণ অপরিহার্য। আল্লাহর বাণী, ‘হে রাসূল! আপনি বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ করো, আল্লাহও তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেবেন, আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।’ (সূরা আলে ইমরান : ৩১)
ঈমানদারদের কাছে রাসূলুল্লাহ সা.-এর মর্যাদা প্রসঙ্গে সূরা হুজুরাতে বলা হয়েছে- ‘হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের চেয়ে অগ্রগামী হয়ো না। আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাহ সবকিছু শোনেন ও জানেন। হে ঈমানদারগণ! নিজেদের আওয়াজ রাসূলের আওয়াজের চেয়ে উঁচু করো না এবং উচ্চস্বরে নবীর সাথে কথা বলো না, যেমন তোমরা নিজেরা পরস্পর বলে থাকো। এমন যেন না হয়, তোমাদের অজান্তেই তোমাদের সব কাজ-কর্ম বরবাদ হয়ে যাবে।’ (সূরা হুজুরাত ১, ২) ঈমানদারগণ সর্বদাই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সা. অনুগামী হয়ে থাকবে, কখনই অগ্রগামী হবে না। ব্যক্তি যেমন অনুগামী হবে তেমনি দেশের পার্লামেন্ট ও আদালতও অনুগামী হবে। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের যে কোনো বিধান বা নির্দেশনা বিষয়ে একজন মুমিন বলবে- ‘শুনলাম ও মেনে নিলাম’। পরবর্তী আয়াতে বলা হয়েছে নিজেদের মধ্যে পরস্পর যেভাবে কথাবার্তা বলা হয় রাসূল সা.-এর সাথে কথা বলাটা তেমন হবে না বরং আওয়াজ রাসূলের আওয়াজের চেয়ে কম হবে (অনুচ্চস্বরে) এবং বলা হয়েছে এমনটি হলে বা ভক্তি ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনে অবহেলা হলে সকল আমল বরবাদ হয়ে যাবে অর্থাৎ আমলশূন্য হয়ে যাবে। রাসূলের সা. অনুপস্থিতিতে এখনো তাঁর সেই মর্যাদা অটুট রয়েছে। অর্থাৎ যেখানে কুরআন ও হাদিসের আলোচনা হয় সেখানে মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। কখনই অসম্মান না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। কুরআনের মাহফিল পণ্ড করা কোনো সাধারণ ব্যাপার নয়, নিরেট কাফের-মুশরিকদের পক্ষেই কেবল সম্ভব এবং পরিণতি জাহান্নাম। (সূরা হা-মীম সাজদা : ২৬-২৮)
নবীদের মাঝে মর্যাদাগত পার্থক্য থাকলে মুহাম্মদ সা. হলেন সর্বশেষ ও শ্রেষ্ঠ নবী (সাইয়েদুল মুরসালিন)। আল্লাহর বাণী, ‘মুহাম্মদ তোমাদের পুরুষদের মধ্যে কারো পিতা নন। বরং তিনি হলেন আল্লাহর রাসূল ও শেষ নবী।’ (সূরা আহযাব : ৪০) তিনি বিশ^বাসীর নবী। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর বাণী, ‘হে নবী! আপনি বলুন- হে মানবজাতি, আমি তোমাদের সকলের প্রতি আল্লাহর প্রেরিত রাসূল।’ (সূরা আ’রাফ : ১৫৮) আল্লাহ আরো বলেছেন, ‘(হে নবী) আমি তোমাকে সারা বিশে^র জন্য রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছি।’ (সূরা আম্বিয়া : ১০৭) রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, মুসা (আ)-এর যদি আগমন হতো তবে আমার উম্মত হয়েই আসতেন। মুহাম্মদ সা.-এর মর্যাদা ও সম্মান এতো উচ্চে যে তাঁর প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার বিনিময়ে রয়েছে জান্নাত এবং সামান্য অশ্রদ্ধা ও নিন্দার বিনিময়ে রয়েছে চিরস্থায়ী জাহান্নাম। কোনো মুসলিম যদি সামান্যতম অশ্রদ্ধা প্রকাশ করে তাহলে সে আর মুসলিম থাকে না হয়ে যায় মুরতাদ। আল্লাহ, আল্লাহর রাসূল ও কুরআনের প্রতি আবেগ কখনই পরিমাপযোগ্য নয়। তাই যখনই কোনো মুসলিম নামধারী বা অমুসলিম আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও কুরআনের প্রতি বিরূপ মন্তব্য করেছে তখনই সমগ্র মুসলিমবিশ^ তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। ইতঃপূর্বে দাউদ হায়দার নবীর প্রতি কটূক্তি করার কারণে দেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে এখনো ফিরতে পারেনি।
সম্প্রতি ভারতের বিজেপি সরকারের দুইজন নেতা মহানবী সা. ও হজরত আয়েশা রা.-কে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করায় সমগ্র মুসলিম বিশ^ ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং অনেক দেশে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেওয়া হয়েছে। আমাদের দেশেও নানাভাবে প্রতিবাদ জ্ঞাপন করা হচ্ছে। সরকারি পর্যায়ে অবশ্য এখনো কোনো প্রতিবাদ শোনা যায়নি। বিজেপি সরকার চরম ইসলাম ও মুসলিমবিদ্বেষী। কাফের ও মুশরিকরা কখনই মুসলমানদের বন্ধু হতে পারে না। আল্লাহপাকের বাণী, ‘তোমরা তোমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে পাবে প্রথমত ইহুদিদেরকে, অতঃপর মুশরিকদেরকে।’ (সূরা মায়েদা : ৮২) ‘নিশ্চয়ই মুশরিকরা নাপাক বা অপবিত্র।’ (সূরা তওবা : ২৮) ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের লোক ছাড়া অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, তারা তোমাদের ক্ষতিসাধনে কোনো ত্রুটি করে না।’ (সূরা আলে ইমরান : ১১৮) ‘হে মুমিনগণ! ইহুদি ও নাসারাদেরকে তোমরা বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। আর তোমাদের মধ্যে যে তাদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে, সে নিশ্চয়ই তাদেরই একজন হবে। আর আল্লাহ জালিম সম্প্রদায়কে হিদায়াত দেন না।’ (সূরা মায়েদা : ৫১) ধর্ম, বর্ণ, ভাষা নির্বিশেষে সকল মানুষ সদাচরণ পাওয়ার হকদার। এমনকি আল্লাহর সৃষ্ট সকল কিছুর সাথে সদাচরণ করতে হবে। পশু-পাখি-জন্তু-জানোয়ার ও উদ্ভিদের সাথেও অন্যায় আচরণ করা যাবে না। অপ্রয়োজনে গাছের একটি পাতাও ছেঁড়া যাবে না। ভারবাহী পশুর উপর অতিরিক্ত বোঝা চাপানো যাবে না।
সদাচরণ ও অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব এক নয়। প্রতিবেশী অমুসলিমের বিপদাপদে সাহায্য করা এবং তাকে কোনোভাবেই দুঃখ না দেওয়া আমাদের ধর্মেরই বিধান কিন্তু আল্লাহর বিধান মানার ক্ষেত্রে তারা যদি বাধা হয়ে দাঁড়ায় বা তাদের কৃষ্টি-কালচার যা আমাদের দ্বীনের সাথে সাংঘর্ষিক তা কোনোভাবেই মানা যাবে না। ভারতে মুসলিম নির্যাতন, মিয়ানমারে মুসলিম নির্যাতন ও দেশত্যাগে বাধ্য করা, ফিলিস্তিনে মুসলিম গণহত্যা এবং ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়ায় মুসলিম গণহত্যায় জড়িত আছে মুশরিক, ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা। ইসলামের বিরুদ্ধে সকল কুফরি শক্তি একাট্টা। ইসলাম ও মুসলমানের বিরুদ্ধাচরণকারী শক্তির সাথে যারা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষা করে চলে তারা মূলত মুনাফিক এবং এই মুনাফিক শক্তি ইসলাম ও মুশলমানদের সাথে শত্রুতায় ইহুদি-নাসারা ও মুশরিকদেরকে অনেক সময় ছাড়িয়ে যায়। দেশে দেশে ইসলামের উত্থান ঠেকাতে এই মুনাফিক শক্তি অত্যন্ত কঠোরভাবে দমন-পীড়ন চালায়। মুনাফিকরা মূলত মুসলিম জনগোষ্ঠীর মনোতুষ্টি নয় ইহুদি, নাসারা ও মুশরিকদেরকেই তুষ্ট করে চলে এবং আখেরাত অপেক্ষা দুনিয়াকেই তারা অগ্রাধিকার দান করে।
আমরা অবশ্যই নিজেদেরকে, নিজেদের পিতা-মাতাকে ও দেশকে ভালোবাসি। ফলে কেউ যদি আমাদেরকে বা আমাদের পিতা-মাতাকে বা দেশের সম্মান হানিকর কিছু বলে তাহলে আমরা তাৎক্ষণিক ক্ষুব্ধ হই ও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করি। আমাদের নবীর মর্যাদা তো সবার উপরে। নবীর প্রতি ভালোবাসার কিছু বহিঃপ্রকাশ হতেই হবে। আমরা হাঙ্গামা পছন্দ করি না এবং এর প্রতিক্রিয়া নিতান্ত সাময়িক। মুসলিম বিশে^র দেশে দেশে ভারতীয় পণ্য বর্জনের যে ডাক উঠেছে তার সাথে একাত্ম হয়ে আমাদের উচিত তাদের পণ্য বর্জন করা। আমার বিশ্বাস, এটাই হবে সবচেয়ে কার্যকর পন্থা। মসজিদের মিম্বর থেকে আওয়াজ ওঠা দরকার। মধ্যপ্রাচ্যে পণ্য বর্জনের আহবান এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ভারতীয় পণ্য সরিয়ে ফেলায় মোদি সরকারের টনক নড়ে উঠেছে। পণ্য বর্জনে আমাদের এই আহবান কিছু না হলেও নবী মুহাম্মদ সা.-এর প্রতি দরদ ও ভালোবাসা ফুটে উঠবে ইনশা-আল্লাহ। আল্লাহপাক কাজেকর্মে সর্বাবস্থায় নবীকে অনুসরণ ও তাঁর প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শনের তৌফিক আমাদের দান করুন।
লেখক : উপাধ্যক্ষ (অব:), কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ
আপনার মন্তব্য লিখুন