post

বেদনাবহ আটাশে অক্টোবর

ছাত্রসংবাদ ডেস্ক

০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

২৮শে অক্টোবর ২০০৬। দিনটি ছিল চারদলীয় জোট সরকারের ক্ষমতা হস্তান্তরের দিন। শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের নিমিত্তে জোটভুক্ত সকল দল আয়োজন করেছিল আলাদা আলাদা সমাবেশের। বিএনপি নয়াপল্টনে তাদের অফিসের সামনে আর জামায়াতে ইসলামী বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেইটে সমাবেশের আয়োজন করে। চারদলীয় জোট যখন সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তখন আওয়ামী লীগ সেদিন তাদের দলের ও জোটভুক্ত ১৪ দলের নেতাকর্মীদের লগি-বৈঠা নিয়ে রাজপথে উপস্থিত হওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়। ২০০৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর প্রকাশ্য এক জনসভায় লগি-বৈঠা নিয়ে ঢাকা অবরোধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। এরপরই আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের নেতাকর্মীরা লগি-বৈঠা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ২৭ অক্টোবর বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভাষণের পর থেকেই সারাদেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। বিভিন্ন স্থানে বিএনপি-জামায়াতের অফিসসহ নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে যেমন চালানো হয় পৈশাচিক হামলা, তেমনি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয় অনেক অফিস, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত। পুরো দেশব্যাপী চলে লগি-বৈঠার এক নৃশংস তাণ্ডবলীলা।

রাতভর চলতে থাকা লগি-বৈঠার এই তাণ্ডবলীলা চলতে থাকে পরদিন ২৮ অক্টোবরেও। বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেইটে জামায়াতের পূর্বনির্ধারিত সমাবেশ ছিল বিকাল ৩:০০টায়। সকাল থেকেই মঞ্চ তৈরির কাজ চলছিল। হঠাৎ করেই বেলা ১১টায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলের নেতাকর্মীরা লগি-বৈঠা ও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জামায়াতের সমাবেশস্থলের মঞ্চ ও পুরানা পল্টনে অবস্থিত জামায়াতের মহানগরী ও ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা চালানোর লক্ষ্যে পল্টন মোড়, পুরানা পল্টন মসজিদ গলিসহ চতুর্দিক দিয়ে আক্রমণ করে। তাদের টার্গেট সভামঞ্চ গুঁড়িয়ে দেওয়া এবং পূর্ব থেকেই কার্যালয়ে অবস্থান করা জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের ওপর হামলা চালানো। তারা শিবির নেতা মুজাহিদুল ইসলাম, হাফেজ শিপন, রুহুল আমিন ও ফয়সালকে লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তারা লাশের ওপর উঠে নৃত্য-উল্লাস করতে থাকে। এ যেন মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়!

দফায় দফায় চালানো হয় হামলা। বিকেল ৩:৩০টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেইটে জামায়াতের সমাবেশ শুরু হয়। এ সময় বিজয়নগরসহ অন্যান্য এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে চোরাগোপ্তা হামলা চালাতে থাকে লগি-বৈঠা বাহিনী। তবে সমাবেশ চলতে থাকে স্বাভাবিকভাবে। যথারীতি আসর নামাযের বিরতি হয়। বিরতির পর বক্তব্য রাখেন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মাওলানা আবদুস সুবহান, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ। সভাপতি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগরী আমীর মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান। এরপরই বক্তব্য দিতে দাঁড়ান জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী। মাওলানা নিজামীর বক্তব্য শুরু হওয়ার ৪/৫ মিনিট পর ৪টা ৪৩ মিনিটে পল্টন মোড়ে দেখা দেয় চরম উত্তেজনা। এ সময় নির্মাণাধীন র‌্যাংগ্স টাওয়ারের ছাদ থেকে সমাবেশ লক্ষ্য করে ছোঁড়া হয় ১০/১২টি হাতবোমা ও প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে দফায় দফায় গুলি ছুঁড়ে সন্ত্রাসীরা। এ সময় পুলিশ নিজেদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়। একদিকে ভবনের ছাদ থেকে বৃষ্টির মতো বোমা বর্ষণ করতে থাকে, অপরদিকে পল্টন মোড় থেকে গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে তারা সমাবেশের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এসময় জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীরা তৈরী করে মানবঢাল। আওয়ামী অস্ত্রধারীদের ছোঁড়া গুলি মাথায় বিদ্ধ হয়ে রাজপথে লুটিয়ে পড়েন জামায়াত কর্মী হাবিবুর রহমান ও জসিম উদ্দিন। এ ঘটনায় জামায়াত ও শিবিরের ৬ জন নেতাকর্মী শহীদ হন এবং আহত হন সহস্রাধিক।

লগি-বৈঠার সেই ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে ২০০৯ সালে ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনের কাঁধে চড়ে ক্ষমতা দখল করে বিগত ১৫ বছরে আমাদের শত শত ভাইকে শহীদ করে এই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ও তাদের দলীয় ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ। সর্বশেষ গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে খুনি হাসিনার পলায়নের মধ্য দিয়ে পতন হয় এই আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের। কিন্তু রক্তপিপাসু এই খুনির স্বভাবজাতই হলো হায়েনার মতো জনতার রক্ত পান করা। তাইতো পতনের পূর্ব মুহূর্তেও নির্বিচারে শহীদ করেছে ১৫৮১ জন মুক্তিকামী ছাত্র-জনতাকে। আটাশে অক্টোবর, স্বাধীনতা-২ আন্দোলন এবং বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হওয়া সকল ভাইয়ের শাহাদাত কবুলের জন্য আমরা মহান রবের নিকট দোয়া করছি, মহান রব তাঁদের শাহাদাত কবুল করুন। আমিন। হ

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির