post

সমাজে ফিতনা ও দাঙ্গা

প্রফেসর তোহুর আহমদ হিলালী

০৪ মে ২০২৩

আল্লাহপাক ও তাঁর রাসূল সা. মুসলমানদের যেভাবে উপস্থাপন করেছেন তাতে বোঝা যায় মানবজাতি নয়, সৃষ্টির কোনো অকল্যাণ হয় বা সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা ব্যাহত হয় এমন কোনো কাজই মুসলমানদের দ্বারা সম্ভব নয়। সমাজের জন্য ক্ষতিকর এমন সকল কর্মকাণ্ড ইসলামে হারাম। মিথ্যা-শঠতা-ধোঁকা-প্রতারণা, চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই, সুদ-ঘুষ-দুর্নীতি, ওয়াদা-প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ, আমানতে খেয়ানত সবই নিষিদ্ধ এবং কেহ যদি এসব অনৈতিক ও জনস্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত হয় তাহলে সে শাস্তির সম্মুখীন হবে। এ হলো ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি। কেহ যদি নিজেকে মুসলিম বলে পরিচয় দিতে চায় এবং জান্নাতের প্রত্যাশী হয়, তাহলে তাকে অবশ্যই জনস্বার্থবিরোধী সকল অন্যায়-অপকর্ম থেকে দূরে থাকতে হবে। কুরআনের বাণী, নিশ্চিত ধ্বংস তাদের জন্য যারা মানুষকে সামনা-সামনি গালাগাল ও পেছনে দোষ প্রচার করে। রাসূলুল্লাহ সা.-এর উক্তি, ঐ ব্যক্তি মুমিন নয়, মুমিন নয়, মুমিন নয় যার হাত ও মুখের অনিষ্ট থেকে অন্যরা নিরাপদ নয়। একটু চিন্তা করুন! একটু গালি দিলে বা অসাক্ষাতে নিন্দা করলে যদি নিশ্চিত ধ্বংস হয় তাহলে কাউকে হত্যা করা, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া কি কখনো একজন মুসলিমের পক্ষে সম্ভব? সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা ব্যাহত হয় এবং জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কোনো তৎপরতা কোনো মুসলমান করতে পারে না।

যে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী বা জঙ্গি তৎপরতা ইসলাম সমর্থন করে না। যদি কেহ করে তাহলে বুঝতে হবে তারা বিভ্রান্ত বা ইসলামের দুশমনদের ভাড়াটে ক্রীড়নক। এরা ফিতনা সৃষ্টিকারী এবং এদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। সম্প্রতি কাদিয়ানিদের ওপর হামলা ও একজন আলেমের জিহবা কেটে ফেলা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডেরই অংশ। কাদিয়ানিদের প্রসঙ্গে বলতে চাই, তারা বিশ্বসগতভাবে মুসলিম নয়। মুহাম্মদ সা. আল্লাহর রাসূল এতটুকু নয়, তিনি সর্বশেষ নবী ও রাসূল। এই বিশ্বাসের ভিত্তিতেই একজন ব্যক্তি নিজেকে মুসলিম দাবি করতে পারে। তাদেরকে অমুসলিম ঘোষণার দাবিও সমর্থন করি। রাষ্ট্রীয় ঘোষণা ছাড়াই তারা নিজেদের আলাদা করে নিয়েছে এবং তাদের উপাসনালয় আলাদা। তারা নিজেদের আহমাদিয়া (মির্জা গোলাম আহমাদের অনুসারী) বলে দাবি করে। বিশ্বাসগত বিষয় ছাড়াও আমলগত অনেক বিষয় রয়েছে যা পালিত না হলে একজন ব্যক্তি নিজেকে মুসলিম দাবি করতে পারে না। যেমন, নামাজের প্রসঙ্গেই আসা যায়। নামাজ না পড়াকে হাদিসের ভাষায় কুফরি বলা হয়েছে। চার ইমামই নামাজের ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর। একটু নরম নীতি অবলম্বন করেছেন ইমাম আবু হানিফা রহ.। তিনি বলেছেন, বেনামাজিকে কারারুদ্ধ করে রাখা হবে যতক্ষণ না তার মৃত্যু হয় বা তওবা না করে।

ইসলামে যে কাজটিকে ফরজ করা হয়েছে সেটি শক্তি প্রয়োগ করে কার্যকর করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। যেমন রাষ্ট্রীয় বিধান সরকার শক্তিপ্রয়োগ করে কার্যকর করেন। ট্রাফিক আইন কেহ ভঙ্গ করলে সে শাস্তির সম্মুখীন হয়। ইসলাম রাষ্ট্রীয় দ্বীন এবং রাষ্ট্রীয় দ্বীন সমাজ ও রাষ্ট্রে কার্যকর করা সকল নবী-রাসূলের দায়িত্ব ছিল। এ ব্যাপারে আল্লাহ স্পষ্ট করে বলেছেন- ‘দ্বীন কায়েম করো এবং এ ব্যাপারে মতপার্থক্য করো না’- (আশ শূরা : ১৩)। মুহাম্মদ সা.-কেও একই মিশন দিয়ে পাঠানো হয়েছে। আল্লাহর বাণী, ‘তিনি তাঁর আপন রাসূলকে হেদায়েত ও সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন যাতে সকল দ্বীন বা ব্যবস্থাপনার ওপর তাঁর দ্বীনকে বিজয়ী করতে পারেন, মুশরিকরা যতই অপছন্দ করুক না কেন।’ (সূরা সফ : ৯)। একই কথা সূরা তওবার ৩৩ ও ফাতহের ২৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে। দ্বীন কায়েমের প্রক্রিয়াও আল্লাহ তাঁর রাসূল সা.-এর মাধ্যমে শিখিয়ে দিয়েছেন। মক্কাভূমিতে হাজারো সমস্যাকে উপেক্ষা করে মুহাম্মদ সা. নবুয়ত লাভের পর প্রথমে গোপনে এবং কিছু পরে লোকদেরকে একত্রিত করে ঘোষণা দেন : তোমরা বলো, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তাহলেই তোমরা সফলকাম হবে। সকল নবীর দাওয়াত একই ছিল- আল্লাহর আনুগত্য করো এবং তাগুতকে অস্বীকার করো (আনিই বুদুল্লাহ ওয়াজতানিবুত তাগুত)। মুশরিকরা কখনই এই আহবান মেনে নেয়নি এবং নেবে না। নবী মুহাম্মদ সা. দীর্ঘ তেরোটা বছর মানুষকে এই কালেমারই দাওয়াত দিয়েছেন এবং যারা মেনে নিয়ে তাঁর সাথে যোগ দিয়েছেন তিনি তাঁদেরকে নৈতিক দিক দিয়ে প্রশিক্ষিত করেছেন। তাঁর প্রশিক্ষণের গাইডবুক ছিল আল কুরআন এবং গাইডবুক অনুসারে তিনি মানুষকে আখেরাতের ভয় দেখিয়েছেন। আখেরাতে শাস্তির ভয়ে তাঁর সাহাবিরা সকল অনৈতিক কর্মকাণ্ড যা মানবসমাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এমন সকল কর্ম ও আচরণ বর্জন করে সমাজে সেরা মানুষে পরিণত হন। দুর্ভাগ্য, মুহাম্মদ সা. ও তাঁকে অনুসরণকারী সেরা মানুষগুলো নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছেন এবং পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিশোধ নয় বা গোপনে শত্রুকে আক্রমণ বা হত্যা নয়, কেবলই কল্যাণ কামনা করে তাদেরকে দ্বীনের দিকে আহবান জানিয়েছেন।

মুহাম্মদ সা. কেবল নন, সকল নবী-রাসূলের কর্মতৎপরতা একই ছিল। আল্লাহপাক তাঁর কোনো নবী-রাসূলকে সন্ত্রাসী হিসেবে উপস্থাপন করেননি বরং সন্ত্রাসের শিকার হিসেবে আমাদের সামনে পেশ করেছেন। ব্যক্তি বা দলের পক্ষ থেকে যুদ্ধ ঘোষণার অধিকার কারো নেই। আল্লাহর কুরআন ও রাসূলুল্লাহ সা.-এর সুন্নাহ তাই বলে। যুদ্ধ-বিগ্রহ যা তা সবই মদিনায় ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা লাভের পরে সংঘটিত হয়েছে। প্রশ্ন উঠতে পারে- তাহলে কি শুধুই মার খাবে? হ্যাঁ, আল্লাহ তো তাই বলেন। দাওয়াত দেবেন কৌশলে, গোপনে আর যখন টের পেয়ে ধাওয়া দেবে দৌড় দেবেন, ধরা পড়লে জেল খাটবেন, প্রয়োজনে ফাঁসিতে ঝুলবেন। আল্লাহপাক তো তাঁর একান্ত প্রিয়ভাজন নবী-রাসূলদের এভাবেই উপস্থাপন করেছেন। নবী-রাসূলদের কাহিনী তো ¯্রফে গল্প শোনানো নয় বরং তা থেকে শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে। মুসা (আ) ফেরাউনের ভয়ে মিসর থেকে পালিয়ে যাচ্ছিলেন। শেষে আল্লাহর পরিকল্পনায় সাগর পার করে দিয়ে তাঁকে ও তাঁর সাথীদের রক্ষা করেছেন এবং ফেরাউনকে দলবলসহ ধ্বংস করে দিয়েছেন। নমরুদের ধ্বংসও আল্লাহই করেছেন। দ্বীন কায়েমের দায়িত্ব আল্লাহর। আমাদের প্রয়োজন ইমানের পাশাপাশি আমলে সালেহায় সমৃদ্ধ হওয়া এবং সেটা সম্ভব হলে আল্লাহপাক খেলাফত দান করবেন (সূরা নুর : ৫৫) এবং এটি তাঁর ওয়াদা।

পঞ্চগড়ে কাদিয়ানিদের ওপর হামলা ও বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনায় মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী ও রেলমন্ত্রী সরাসরি বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করেছেন। মাননীয় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপির আন্দোলনে ভাটা নেমেছে। সে কারণে তারা নাশকতার দিকে যাচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে হবে। পঞ্চগড়ের আক্রান্তরা বললেন, হামলাকারীরা মন্ত্রীর পাশে। এলাকাটি রেলমন্ত্রী জনাব নূরুল ইসলাম সুজনের। তিনি সেখানকার এমপি। ঘটনার পরের সোমবার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে আক্রান্ত আহমদিয়া সম্প্রদায়ের তোপের মুখে পড়েন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। তারা মন্ত্রীকে বলেছেন, হামলা ও অগ্নিসংযোগে যারা জড়িত তারা আপনার আশপাশেই আছে। তাদেরও গ্রেফতার করতে হবে। ঘটনায় সাতটি মামলা হয়েছে। এসব তথ্য সরকারঘেঁষা পত্রিকা সমকালের ৭ই মার্চ সংখ্যার ২য় পৃষ্ঠার। পত্রিকাটির প্রকাশক শিল্পপতি আবুল কালাম আজাদ। একই পত্রিকার ১৩ পৃষ্ঠায় পঞ্চম কলামের লেখা হুবুহু তুলে ধরা হলো- গত শুক্রবার সকালে তিন দিনব্যাপী বার্ষিক সালানা জলসা শুরু হয় পঞ্চগড় জেলা সদরের আহমদনগরে। কিন্তু এতে বাদ সাধে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (চরমোনাই), ঈমান-আকিদা রক্ষা কমিটি, ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ সমিতি, পঞ্চগড় কওমি ওলামা পরিষদ ও জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ সমর্থক মুসল্লিরা। এই পাঁচটি সংগঠনের নেতৃত্ব দেয় সম্মিলিত খতমে নবুয়ত সংরক্ষণ পরিষদ। জলসা বন্ধের দাবিতে বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছিলেন তারা। ওই দিন পঞ্চগড়ে মহাসড়ক অবরোধসহ বিক্ষোভ করে এসব সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বাড়িতে প্রথম হামলার ঘটনাও ঘটে সেদিন।

পুলিশকে তদন্ত করার সুযোগ না দিয়ে সরাসরি বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করে মাননীয় মন্ত্রীদের বক্তব্য প্রদান নিঃসন্দেহে তদন্তকে বাধাগ্রস্ত করে। মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ মন্ত্রীদের প্রকাশ্য ঘোষণার পর ভিন্নতর রিপোর্ট প্রদান কি পুলিশের পক্ষে সম্ভব? এমনিতেই পুলিশের অনেক কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান করা হয়েছে। এমতাবস্থায় পুলিশের রিপোর্ট কি গ্রহণযোগ্যতা পাবে? আমাদের পুলিশের যোগ্যতা ও দক্ষতার কোনো ঘাটতি নেই। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ও পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দান করা হলে আমরাও আমাদের পুলিশ নিয়ে ব্রিটিশ পুলিশ বা জার্মান পুলিশের মতো গর্ব করতে পারি। আলেম-উলামাদের উদ্যোগে আন্দোলন শুরু হলেও খুব দ্রুত মতলববাজরা নেতৃত্ব গ্রহণ করে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনকে সহিংস করে তুলে। মাননীয় রেলমন্ত্রীকে ঘিরে আক্রান্তদের ক্ষোভ সেটিই প্রমাণ করে।

পৃথিবীর ইতিহাসে নানা ইস্যুতে (ভাষা আন্দোলন, শ্রমিক আন্দোলন ইত্যাদি) আন্দোলন হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। কিন্তু ইসলামী আন্দোলন সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। কুরআনে বর্ণিত অতীতের নবী-রাসূলদের ইতিহাস এবং শেষ নবী মুহাম্মদ সা.-এর পক্ষ থেকে দ্বীন কায়েমের আন্দোলন কোনো ইস্যুভিত্তিক ছিল না। মানবজীবনে নানাবিধ সমস্যার মূলে রয়েছে মহান আল্লাহপাকের আনুগত্যহীনতা। ইসলামী আন্দোলন সম্পূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন এবং সেটি আল্লাহপাকের পরিপূর্ণ আনুগত্য মেনে নেওয়ার আহবান। আল্লাহর আনুগত্যের ভিত্তিতে দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হলে মানবসমাজ সকল সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে। এই আন্দোলনের দাবি হলো, মানুষের কাছে ব্যাপকভাবে দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে এবং তাদের পরিশুদ্ধ অর্থাৎ নেক আমলে সমৃদ্ধ করতে হবে। একটি সংঘবদ্ধ দল যদি জমিনে ঈমান ও নেক আমলে নিজেদের সমৃদ্ধ করতে পারে এবং সেই জনপদের মানুষ যদি সক্রিয় বিরোধিতা না করে তাহলে আল্লাহপাকের দায়িত্ব হয়ে যায় জমিনে তাদের খেলাফত দান করা (সূরা নূর : ৫৫)।

বাংলাদেশের জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের জন্য বিভিন্ন দল সক্রিয় রয়েছে। সকলের উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি হলে সহজেই তারা ঐক্যবদ্ধ হতে পারেন। আল্লাহপাক চান তাঁর ঈমানদার বান্দারা ঐক্যবদ্ধ জীবন যাপন করুক। তাঁর বাণী, তোমরা আল্লাহর রজ্জু শক্তভাবে ধারণ করো, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না.... (সূরা আলে ইমরান : ১০৩)। বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া ও দলাদলি করার বিরুদ্ধে আল্লাহপাক কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তাঁর বাণী, ‘তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা দলে দলে বিভক্ত হয়ে গেছে এবং সুস্পষ্ট ও প্রকাশ্য হেদায়াত পাওয়ার পরও মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছে। যারা এ নীতি অবলম্বন করেছে তারা সেদিন কঠিন শাস্তি পাবে। যেদিন কিছু লোকের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠবে এবং কিছু লোকের মুখ কালো হয়ে যাবে। তাদেরকে বলা হবে, ঈমানের নেয়ামত লাভ করার পরও তোমরা কুফরি নীতি অবলম্বন করলে? ঠিক আছে, তাহলে এখন এই অস্বীকৃতির বিনিময়ে আজাবের স্বাদ গ্রহণ করো।’ (সূরা আলে ইমরান : ১০৫-১০৬)। ঈমানের হেফাজত ও মর্যাদা নিয়ে বাঁচার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। ঈমানদারদের মাঝে যারা পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করে ও সমাজে একে অপরের প্রতি ঘৃণা ছড়ায় এবং দলাদলি সৃষ্টি করে তারা মূলত এই আচরণের মধ্য দিয়ে ইসলাম থেকেই দূরে সরে যায় অর্থাৎ কুফরি করে।

গণতান্ত্রিক সমাজে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা স্বীকৃত তবে সেটি অবশ্যই অপরকে আহত না করে। এখানে কাদিয়ানিদের বিষয়টি একটু ভিন্ন। যে মৌল বিশ্বাসের ভিত্তিতে একজন ব্যক্তি নিজেকে মুসলিম দাবি করে সেটা থেকে তারা সম্পূর্ণ পৃথক। সৌদি আরবসহ পৃথিবীর ৪২টি মুসলিম দেশ কাদিয়ানিদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করেছে। ১৯৯৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের রায়েও তারা অমুসলিম। রাবেতা আলমে ইসলামি এবং ও.আই.সি কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা করেছে। তাদের জন্য হজ নিষিদ্ধ এবং মক্কা-মদিনায় প্রবেশাধিকার নেই। আলেম-উলামাদের দাবি, সরকার কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা করুক। তাদের প্রতি অন্য কোনো বিদ্বেষ নেই। অন্যান্য অমুসলিমদের মতো তারা তাদের ধর্মমত নিয়ে শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করুক। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, কাউকে হত্যা করা বা বাড়িঘরে আগুন দেওয়া আলেম-উলামা বা ঈমানদার জনগোষ্ঠীর কাজ নয়। পরকালে অবিশ্বাসী নিরেট নাস্তিক ছাড়া আর কেউ করতে পারে না। আলেম-উলামাদের বিষয়টি ভাবতে হবে এবং কর্মসূচি দেওয়ার সময় সতর্ক হতে হবে। মসজিদের মিম্বর আলেমদের জন্য প্রতিবাদ করার বড়ো সুযোগ। ইসলামের শত্রুরা আলেম-উলামা ও ধর্মপ্রাণ মানুষগুলোর বিরুদ্ধে জঙ্গি তকমা লাগাতে চান এবং বহির্বিশ্বে মুসলমানদের সুনাম-সুখ্যাতি নষ্ট করতে চায়। সাথে সাথে ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধ বাধিয়ে মুসলিম জাতিসত্তার ধ্বংসসাধন করতে চায়। আমাদের সম্মুখে উদাহরণ হয়ে আছে আফগানিস্তান, লিবিয়া, ইরাক, সিরিয়া, মিসর (মিসরে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে সিসির ক্ষমতারোহণকে চ্যালেঞ্জ করলেই লিবিয়া-ইরাকের মতো অবস্থার সৃষ্টি হতো)।

আমাদের অবশ্যই বুঝতে হবে- মুশরিক, ইহুদি ও খ্রিষ্টান কেহই মুসলমানদের বন্ধু নয়। মুসলমানদের বন্ধু কেবল আল্লাহ, আল্লাহর রাসূল ও ঈমানদার জনগোষ্ঠী- এটি আল্লাহরই কথা। দ্বীন কায়েমের প্রশ্নে সকল কুফরি শক্তি এবং তাদের অনুসারীরা একাট্টা। ওরা চায় আলেম-উলামাদের মাঝে অনৈক্য সৃষ্টি এবং নানা ইস্যুতে তাদেরকে ব্যস্ত করে মৌলিক কাজ দ্বীন কায়েমকে বাধাগ্রস্ত করতে। আল্লাহপাক আমাদের উপলব্ধি দান করুন এবং শয়তানের চতুর্মুখী ষড়যন্ত্র থেকে হেফাজত করুন।

লেখক : উপাধ্যক্ষ (অব:), কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির