post

সম্পাদকীয়

ছাত্রসংবাদ ডেস্ক

স্বাধীনতার চুয়ান্ন বছর পূর্তির দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। এখন দেশের রাজনীতিতে চলছে নতুন এক বন্দোবস্তের হাওয়া। বৈষম্যহীন একটি সমাজ দেখার প্রত্যয়ে যারা জীবন দিয়েছেন, আহত হয়েছেন; তাঁদের প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। ১৯৭১ সালে আমরা স্বাধীনতা পেলেও মুক্তির নেশায় বাঙ্গালী জাতিকে বারবার রাস্তায় নামতে হয়েছে, নেতৃত্ব দিতে হয়েছে স্বৈরাচার-বিরোধী ফ্যাসিবাদ-বিরোধী আন্দোলনে। ৩৬ জুলাইয়ের বিপ্লবের মাধ্যমে পাওয়া নতুন স্বাধীনতার পর মুক্তির খোঁজে মানুষ এখনও উন্মুখ হয়ে আছে। আর কোনো রক্তচক্ষু, দখলদার, চাঁদাবাজ, ধর্ষক, লুটেরাকে তারা এ দেশের মসনদে দেখতে চায় না।

আফসোসের বিষয় হলো— স্বাধীনতার অর্ধশতক পেরিয়ে গেলেও এখনও থামেনি নিরন্ন মানুষের হাহাকার, কমেনি বঞ্চনা আর বৈষম্য। জনসম্পদে রুপান্তর করতে পারিনি আমাদের যুবসমাজকে। মাদক আর অনৈতিকতার করালগ্রাসে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে জাতি। যে ঈপ্সিত স্বপ্ন নিয়ে আমাদের পূর্বপুরুষরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন, সে স্বপ্ন আজও অধরা। ফ্যাসিবাদ আর স্বৈরাচারের কবলে পড়ে বহুবার ধাক্কা খেয়েছে এদেশের গণতন্ত্র। ভূলুণ্ঠিত হয়েছে মানুষের ভোটাধিকার আর মানবিক মর্যাদা।

সর্বশেষ ফ্যাসিবাদী শাসনের পনেরো বছরে বাংলাদেশকে দেউলিয়া করা হয়েছে। ভেঙে দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রের জুডিশিয়ারি, এডমিনিস্ট্রেশন এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির স্বাভাবিক কাঠামো। ফ্যাসিবাদী আমলে ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার শুধুমাত্র পাচার করা হয়েছে। অন্যান্য খাতের দুর্নীতির কথা বাদই দিলাম! অনিয়মের এক আখড়ায় পরিণত করা হয়েছিল আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশকে।

চব্বিশে দাঁড়িয়ে আবু সাঈদ, মুগ্ধদের পবিত্র রক্তে ভেসে আমরা ফ্যাসিবাদের করাল গ্রাস থেকে মুক্তি লাভ করেছি। জগদ্দল এক পাথর নেমে গেছে বাংলাদেশের মানুষের বুক থেকে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্বভার গ্রহণ করেছে। ন্যূনতম সংস্কার কার্যক্রম শেষ করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়ার প্রত্যয় নিয়েই রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে এ সরকার। রাজনৈতিক দলগুলোর নানামুখী নির্বাচনী প্রস্তুতি কার্যক্রম অব্যাহত আছে। ছাত্রদের নতুন দল কেমন হয়, সেদিকেও কৌতূহলী দৃষ্টি আছে জনতার। সবমিলিয়ে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ। 

রাজনৈতিক এসকল মেরুকরণের মধ্যেই রহমের সওগাত নিয়ে হাজির হয়েছে পবিত্র মাস মাহে রমাদান। মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে চারিত্রিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধনই হবে মুমিনের একমাত্র লক্ষ্য। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমান এবং এহতেসাবের সাথে মাহে রমাদানের রোজা রাখবে, তার পূর্বের এবং পরের সকল গুণাহ মাফ করে দেওয়া হবে।

তবে অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার হলো- এই সিয়াম সাধনার মাসেও কতিপয় মুসলিম ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে দেয়। এ থেকে সকলকে বিরত থাকার অনুরোধ। কারণ, মূল্যবৃদ্ধির ধকল রমাদানে মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের অর্থনৈতিক জীবনকে প্রভাবিত করে। ব্যবসায়িক সিন্ডিকেটদের দৌরাত্ম্য থামিয়ে দ্রব্যমূল্যের লাগাম নাগালের মধ্যে রাখতে সরকারকে অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে, এগিয়ে আসতে হবে সৎ ব্যবসায়ী মহলকেও। জনজীবনে যেন দুর্ভোগ না হয়, মানুষ যেন নির্ভাবনায় সিয়াম সাধনা করতে পারে; সেদিকে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। 

এদিকে গাজায় ইসরাইল যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে। এটি মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি স্বস্তির সংবাদ। বিগত বছরগুলোতে আমাদের অসংখ্য ভাই-বোন সেখানে ইসরাইলী দখলদারদের হামলায় শাহাদাতবরণ করেছেন। এমনকি হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া, ইয়াহইয়া সিনওয়ারও পেশ করে গেছেন শাহাদাতের অনুপম নজরানা। লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনি পঙ্গুত্ব বরণ করে লড়ছে জীবনের সাথে। সেখাকার আকাশ-বাতাস মজলুমের আর্তনাদে ভারি হয়ে আছে। অথচ বিশ্ব মোড়লরা নির্বিকার! গাজাসহ সারাবিশ্বে নেমে আসুক শান্তির বারতা। অবারিত আনন্দের ফল্গুধারা বয়ে যাক পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির