post

দীপ্তমান সত্যের পতাকাবাহী ‘মাওলানা আবদুস সোবহান’

আশিক রাব্বি নুরী

১১ মার্চ ২০২০

জুলুম শব্দটির সাথে মুসলমানদের নতুন করে পরিচয় করানোর প্রয়োজন নেই। ইসলামের সূচনালগ্ন থেকে যারাই মহান আল্লাহর একত্ববাদের প্রচার প্রসারে কাজ করে গেছেন সবার জন্যই অত্যাচারীদের মাধ্যমে আল্লাহ ঈমানের পরীক্ষা নিয়েছেন। ইসলামী হুকুমতকে সহ্য করতে না পারা জালেমদের অত্যাচারের মাত্রা ও ধরন খুব বেশি ভিন্ন ছিল না। ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যুগ যুগ ধরে তাওহিদের ঝাণ্ডাবাহী নবী-রাসূল ও তাঁদের অনুসারীদের আগুনে পুড়িয়ে, করাত দিয়ে বা তরবারির আঘাতে খণ্ডিত করে হত্যা করা হয়েছে। হযরত ইবরাহিম (আ)কে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছে, ইউসুফ (আ)কে কারাগারে বন্দী থাকতে হয়েছে; দেয়া হয়েছে অপবাদ। নবী-রাসূলদের তাওহিদের পথচলার সেই শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থাতে যখন জাহেলি শাসনব্যবস্থা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তখনও তারা তাগুতদের এই শাসনব্যবস্থার ও শাসকদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে গিয়েছেন। আল্লাহ্ ছাড়া অন্য সমস্ত ইলাহ্ ও মা’বুদকে প্রত্যাখ্যান করা মানে মানুষকে দুর্বল করে রাখার চেষ্টায় যারা মানুষকে বাধ্য করে বা বোকা বানিয়ে রাখে তাদের ঘাড়ে সাওয়ার হয়ে স্বীয় খোদাদ্রোহী ও পাপাচারী চাপিয়ে দেয় তাদের সেই নীতিকে প্রত্যাখ্যান করাও ঈমানের অন্যতম দাবি। হযরত মূসা (আ) তাওহিদের এই বাণী নিয়ে ফিরআউনের দরবারে উপস্থিত হলে “ফিরআউনী প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা (ফিরআউনকে উপদেশের ছলে) বলল, জমিনের বুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং তোমাকে ও তোমার দেবদেবীদের প্রত্যাখ্যান করার জন্য মূসা ও তার অনুসারীদের তুমি কি স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেবে?” (সূরা আ’রাফ : ১২৭) কারণ ফিরআউন ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা জানত যে, এইসব দেবদেবী (অর্থাৎ প্রাণহীন মূর্তিগুলো) তার পারিষদবর্গের খোদায়ীর তথা শাসনব্যবস্থার জন্য হুমকি নয়। কিন্তু হযরত মূসা (আ) যখন গোটা পৃথিবীর স্রষ্টা, সকল সৃষ্টির একচ্ছত্র মালিক এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের ক্ষমতা ও ইখতিয়ারের একক ও অদ্বিতীয় খোদার প্রতি দাওয়াত দিলেন সেই দাওয়াতকে ফিরআউন হুমকি মনে করেছিল। ফলে তাঁর কথার জবাবে ফিরআউন তাঁকে ও তাঁর অনুসারীদের কারাগারে নিক্ষেপ, হত্যা এবং কঠিন নিপীড়নের হুমকি প্রদান করে। “(ফিরআউন) বলল, তুমি যদি আমাকে ছাড়া অন্য কোন ইলাহ্ গ্রহণ কর তাহলে অবশ্যই আমি তোমাকে কারাবাসীদের (যারা আমার কারাগারে রয়েছে এবং যাদের অবস্থা তোমার জানা আছে তাদের) অন্তর্ভুক্ত করব।” (সূরা আশ্ শুআ’রা : ২৯) বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর বর্বর নির্যাতন চালাতেও দ্বিধাবোধ করেনি মুশরিকরা। তায়েফের প্রান্তর রঞ্জিত হয়েছিল এই মহামানবের রক্ত দিয়ে। বারবার তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল মক্কার কাফেরেরা। আজো তাঁর অনুসারীদের বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে আল্লাহর কালিমাকে স্তব্ধ করে দিতে চায় জালেমরা। আজো মজলুমদের আর্তনাদে আকাশ বাতাস ভারী হয়। ডা: আফিয়া ও ফাতেমাদের মতো আমাদের শত শত মা-বোনের আর্তনাদমাখা চিঠি মহাকালের প্রাচীরে খোদাই হয়ে একাকার হয়ে যায় আল্লাহর আরশ। আজো পৃথিবীর বিভিন্ন জেলখানাগুলো পরিপূর্ণ হয়ে আছে আল্লাহর পথে মুজাহিদদের কারাবরণে, হকপন্থী আলেম ওলামাদের অবরুদ্ধ জীবনের অব্যক্ত পাণ্ডুলিপিগুলো পড়ে শেষ করা যাবে না কখনো। ইসলামের ঝাণ্ডাবাহীদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো দুর্ভাগা জালেমদের থেকে নিজেদের বিরত রাখতে পারেনি মুসলিম নামধারী শাসকরাও। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের গন্ধ ওরা শুধু ইসলামের রাহবারদের মাঝেই খুঁজে বেড়ায়। ফলে তা নির্মূল ও সন্ত্রাস দমনের নামে তাওহিদের দাওয়াত বহনকারী মুসলিম ভাই-বোনদের ওপর তারাও চালায় অকথ্য নির্যাতন। আজ এতদিন পার হলেও আমাদের চতুর্দিকে দেখতে পাই তাওহিদের পতাকাবাহীদের জীবনের গল্পগুলোও অসংখ্য অত্যাচার ও নিপীড়নের অবিশ্বাস্য সব ঘটনায় ভরপুর। মানবতার সেবকদের তারা মানবতাবিরোধী অপরাধের অপবাদে দাঁড় করিয়েছে। করেছে বিচারের নামে নির্যাতনের মুখোমুখি। দীর্ঘদিন থেকে কারাবন্দী হয়ে বাংলাদেশের গণমানুষের ভালোবাসায় সিক্ত পাঁচবারের নির্বাচিত সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন, সমাজসেবক, প্রবীণ জননেতা মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুস সোবহান গত ১৪ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে অন্তরীণ অবস্থায় ইন্তিকাল করলেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আল্লাহর একজন গোলাম পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন এভাবে মজলুম অবস্থাতেই। ২০১২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার পথে বঙ্গবন্ধু টোল প্লাজার কাছে তাঁকে আটক করা হয়। কথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের সাজানো অভিযোগে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ ট্রাইব্যুনালে পাঁচবারের নির্বাচিত এই সংসদ সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। তারপর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তিনি জেলখানাতেই ছিলেন। কারা কর্তৃপক্ষের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে যখন মাওলানা আবদুস সোবহানের লাশ নিয়ে পরিবারের সদস্যগণ পাবনার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন তখন হাজার হাজার উৎসুক জনতা এক নজর দেখার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। রাত ৩টায় লাশ নিয়ে তার পরিবারের সদস্যগণ নিজ বাড়িতে পৌঁছেন। পরদিন শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মাওলানার লাশ নিয়ে যাওয়া হয় তার প্রতিষ্ঠিত দারুল আমান ট্রাস্ট ময়দানে। হাজার হাজার মানুষ পায়ে হেঁটে দারুল আমান ট্রাস্টে লাশের সাথে যায়। সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষমাণ লাখো মানুষ লাশকে ঘিরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। চতুর্দিক থেকে বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো মানুষের আগমন ঘটতে থাকে দারুল আমান ট্রাস্ট ময়দানে। জানাযা পরিণত হয় জনসমুদ্রে। জানাযা শুরু হয় বেলা আড়াইটায়। সালাতে জানাযায় ইমামতি করেন মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুস সোবহানের ছোট ছেলে হাফিজ মুজাহিদুল ইসলাম। জানাযা-পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুস সোবহান শুধু পাবনাবাসীর নয়; সমগ্র বাংলাদেশের নেতা ছিলেন। আপনারা তাঁকে সবচাইতে ভালোভাবে জানেন ও চিনেন। আমরা মাওলানার মৃত্যুতে শোকাহত। কিন্তু এ শোককে পরিণত করতে হবে শক্তিতে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছিল; সাক্ষ্য পেশ করা হয়েছিল। কিন্তু আপনারা আসল সাক্ষী। তার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করা হয়। বিচারে মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুস সোবহানকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। তিনি এই রায়ের বিরুদ্ধে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন। তার আপিল নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে। এ অবস্থায় মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি চলে গেলেন। আজ আমি পাবনার সর্বস্তরের জনতার সামনে তার লাশ দাফনের পূর্বে জিজ্ঞাসা করতে চাই, তিনি কি দোষী নাকি নির্দোষ? আমিরে জামায়াতের এ প্রশ্নে লাখো জনতা সমস্বরে জবাব দেন, তিনি নির্দোষ। এ সময় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। অনেকেই হু-হু করে কেঁদে ওঠেন। আমিরে জামায়াত তার বক্তব্যে বলেন, হে আরশের মালিক! তুমি জনতার এ রায় কবুল করে নাও। আমিরে জামায়াত বলেন, মাওলানা আবদুস সোবহান আমাদের নেতা ও শিক্ষক। তিনি আজীবন হকের জন্য লড়াই করেছেন। তিনি কোনো দিন অন্যায় অসত্যের কাছে মাথা নত করেননি। তাঁর লাশ সামনে রেখে আমরা আল্লাহকে সাক্ষী করে শপথ করছি আমরা শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত কোনো দিন বাতিলের সাথে আপস করব না। আমিরে জামায়াতের এ ঘোষণায় লাখো জনতা সমস্বরে চিৎকার করে স্বীকৃতি দেন। দারুল আমান ট্রাস্ট ময়দান জনতার আবেগ-অনুভূতিতে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে সেদিন। এরপর তিনি বলেন, আমরা আমাদের বন্ধু, শিক্ষক, সহকর্মী মাওলানা আবদুস সোবহানকে বলতে চাই- বন্ধু তোমার জীবন, কর্ম ও আজীবনের সাধনা সার্থক। আমরা তোমার দায়িত্বের ভার আমাদের দুর্বল কাঁধে তুলে নিলাম। তিনি আরও বলেন, আজীবন তিনি হকের পক্ষে লড়াই করেছেন। বাতিলের সাথে আপস করেননি। আল্লাহর জাতের কসম করে ঘোষণা দিচ্ছি, আমরাও শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত বাতিলের সাথে আপস করব না, ইনশাআল্লাহ। আমরা মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি, প্রিয় বাংলাদেশ কষ্টে আছে; ইসলামের আলোর প্লাবনের মাধ্যমে তুমি কষ্টের রজনী শেষ করে মুক্তির সূর্য উদিত করে দাও। আমরা পাবনাবাসীর সাথে আছি, মহান আল্লাহ পাবনাবাসীর সাথে থাকুন। এসময় তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে মাওলানা আবদুস সোবহানের রুহের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করেন। এই জানাযাপূর্ব সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, পাবনা জেলা আমির আবু তালেব মণ্ডলসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। সেক্রেটারি অধ্যক্ষ ইকবাল হুসাইন, মরহুমের বড় ছেলে আব্দুল হালিম লাল, জেলা জামায়াতের সাবেক আমির মাওলানা আব্দুর রহীম, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে শামীম সাঈদী, মরহুমের ছেলে নেছার আহমেদ নান্নু, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল হালিম, সাবেক এমপি হামিদুর রহমান আযাদ, নির্বাহী পরিষদ সদস্য শাহাবুদ্দিন, মোবারক হোসাইন, কর্মপরিষদ সদস্য প্রফেসর আবুল হাশেম, কেরামত আলী, ড. রেজাউল করিম, মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, আবুল কালাম আজাদ, ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো: সিরাজুল ইসলাম ও অফিস সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম। এ ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এবং লাখো মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন এবং অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকে বিদায় জানান। জানাযা শেষে আরিফপুর কবরস্থানে তাঁর দাফন সম্পন্ন করা হয়।

সংক্ষিপ্ত জীবনী জন্ম ও শৈশব : মাওলানা আবদুস সোবহান ১৯২৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পাবনা জেলার সুজানগর থানাধীন তৈলকুন্ডু (বর্তমান মমিনপারা) গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম মৌলভী নাঈম উদ্দিন আহমেদ একজন দ্বীনদার পরহেজগার আলেম ছিলেন। ১৯৬৫ সাল থেকে পাবনা শহরের গোপালপুর (পাথরতলা) স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন তারা। বর্তমানে তাঁর পরিবার-পরিজন সেখানেই বসবাস করছে। শিক্ষাজীবন : তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় সুজানগরের রামচন্দ্রপুর মক্তবে। পরে তিনি মানিকহাট ও মাছপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। ১৯৪১ সালে তিনি উলাট মাদরাসায় ভর্তি হন এবং প্রায় সাত বছর মাদরাসায় পড়াশোনা করে ১৯৪৭ সালে জুনিয়র দাখিল করে ও পরে তিনি শিবপুর মাদরাসা থেকে দাখিল পাস করেন। তিনি সিরাজগঞ্জ আলিয়া মাদরাসা থেকে ১৯৫০ সালে আলিম পাস করেন, ১৯৫৩ সালে ফাজিল, ১৯৫৪ সালে কামিল পাস করেন। মাওলানা আবদুস সোবহান অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তিনি জুনিয়র মেট্রিকুলেশন আলিম ও ফাজিল পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। কামিল পরীক্ষায় মাদরাসা বোর্ড থেকে হাদিস গ্রুপে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। শিক্ষকতা : মাদরাসা বোর্ড থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি ১৯৫২ সালে হেড মাওলানা হিসাবে পাবনা আলিয়া মাদরাসায় যোগদান করেন অতঃপর তিনি গোপাল চন্দ্র ইনস্টিটিউট আরিফপুর সিনিয়র মাদরাসায় সুপারিনটেনডেন্ট ও মাগুরা জেলার বররিয়া ফাজিল মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন। সর্বশেষে তিনি আরিফপুর ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে শিক্ষকতা জীবনের সমাপ্তি টেনে সক্রিয় রাজনীতিতে মনোনিবেশ করেন। তিনি ১৯৫২ থেকে ১৯৬২ পর্যন্ত দীর্ঘ ১০ বছর সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। রাজনৈতিক জীবন : মাওলানা আবদুস সোবহান ছাত্রজীবন থেকেই সক্রিয়ভাবে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন। তিনি পূর্ব পাকিস্তান জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়ার পাবনা জেলার সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫১ সালে তিনি জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন এবং পর্যায়ক্রমে বহু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দীর্ঘদিন পাবনা জেলা আমিরের দায়িত্ব পালন করেন। পরে কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য নির্বাচিত হন তিনি ১৯৬১ সালে গয়েশপুর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার নির্বাচিত হন ১৯৬২ সালে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন, ১৯৬৫ সালে তিনি পুনরায় প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে বিরোধী দলের সিনিয়র ডেপুটি লিডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মাওলানা আবদুস সোবহান ২০০১-০৬ মেয়াদে সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির এবং কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা কর্মপরিষদ নির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৯১ সালে বিপুল ভোটে পাবনা সদর আসনের এমপি নির্বাচিত হন। তিনি প্রথম সর্বোচ্চ ভোটে জয়লাভ করেন এবং সংসদে জামায়াতে ইসলামের উপনেতা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ২০০১ সালে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে আবারো এমপি নির্বাচিত হন। ছাত্রজীবন থেকেই মাওলানা আবদুস সোবহান সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন। শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৫৬ সালে তিনি আঞ্জুমানে রফিকুল ইসলাম নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন ১৯৬৮ সালে তিনি জালালপুর জুনিয়র হাইস্কুল ও বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠ নামের প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। তিনি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন। মাওলানা আবদুস সোবহানের আরো একটি বড় অবদান হচ্ছে পাবনা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল। ১৯৬৭ সালে পাবনার জালালপুরে তিনি এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন বর্তমানে স্কুলটি পাবনা ক্যাডেট কলেজে উন্নীত হয়েছে। তিনি পাবনা দারুল আমান ট্রাস্ট-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন। এই ট্রাস্ট কর্তৃক পরিচালিত পাবনা ইসলামিয়া মাদরাসা, ইসলামিয়া এতিমখানা, ইসলামিয়া ডিগ্রি কলেজ, ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার, হেফজখানার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। ইমাম গাজ্জালী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কিন্ডারগার্টেন স্কুল-কলেজ, আল-কোরআন ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ছিলেন, তিনি পাবনা সদর গোরস্থান কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি পাবনা হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সহ-সভাপতি ছিলেন। উল্লেখ্য, তিনি নিজের জমি লিখে দিয়ে পাবনার সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজ, প্রাক্তন (ইসলামিয়া কলেজ) প্রতিষ্ঠা করেন। এ ছাড়া সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ সরকারি মহিলা কলেজ এবং ঈশ্বরদী সরকারি কলেজ (প্রাক্তন জিন্নাহ কলেজ)সহ অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ছিলেন। জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে পাবনার অসংখ্য রাস্তা-ঘাট ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করে তিনি পাবনার মানুষের কষ্ট লাঘব করেছেন। তার গড়া দারুল আমান ট্রাস্ট বর্তমান শিক্ষা নগরী হিসেবে পরিচিত, সেখানে তাঁর ব্যক্তিগত ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে মসজিদের তাকওয়া নামে একটি অত্যাধুনিক মসজিদ নির্মাণ করা আরো এক অর্জন। পাবনা ক্যালিকো কটন মিল তাঁর প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এসব প্রতিষ্ঠান ছাড়াও তিনি বহু মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছেন। তিনি এলাকার রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়নের কাজ করেছেন। পাবনা ক্যাডেট কলেজ হতে গয়েশপুরের রাস্তা, কালিদহ হতে ভাঁড়ারা রাস্তা, কুচিয়ামোড়ার তেমাথা হতে সাদুল্লাপুর রাস্তা, ৮ মাইল হয়ে টিকরী-দাপুনিয়া রাস্তা তাঁর কর্মতৎপরতার স্বাক্ষর বহন করে। মাওলানা আবদুস সোবহান পুরাতন পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে কোমরপুর পদ্মা নদীর তীর পর্যন্ত রাস্তা পাকা করেছেন, যা পাবনার চর এলাকার মানুষের কাছে একসময় ছিল কল্পনাতীত। বাংলাদেশ চাষিকল্যাণ সমিতি ও বাংলাদেশ তাঁতি কল্যাণ সমিতির তিনি বর্তমান সহসভাপতি। তিনি দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন। তিনি পাবনা মহিলা মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা। মাওলানা আবদুস সোবহান ঢাকাস্থ পাবনা সমিতির আজীবন সদস্য, ইত্তেহাদুল উম্মাহর প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। তিনি মুসলিম এইড লন্ডন এর বাংলাদেশ শাখার চেয়ারম্যান ছিলেন এবং ইসলামিক ‘ল’ রিসার্চ সেন্টার এবং লিগ্যাল এইড বাংলাদেশেরও চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি জাতীয় শরিয়াহ কাউন্সিলের সদস্য এবং আল আমান ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, ত্রৈমাসিক গবেষণা পত্রিকা ইসলামী আইন ও প্রচার পত্রিকার তিনি উপদেষ্টা সম্পাদক।

লেখক, বহুভাষাবিদ ও সংস্কৃতিসেবী মাওলানা আবদুস সোবহান একজন সুলেখক হিসেবেও মাওলানা আবদুস সোবহানের পরিচিতি রয়েছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তিনি চিন্তাশীল প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখেছেন। একসময় তিনি সাংবাদিকতার সাথেও জড়িত ছিলেন। মাওলানা আবদুস সোবহান বাংলা ছাড়াও আরবি, উর্দু, ফার্সি, ইংরেজিসহ বেশ কয়েকটি ভাষা জানতেন। একজন সংস্কৃতিপ্রেমী ও সংস্কৃতিসেবী হিসেবেও মাওলানা আবদুস সোবহানের সুনাম রয়েছে। ছাত্রজীবনে তিনি সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন। গান ও বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় পুরস্কারও পেয়েছেন বহুবার। মাওলানা আবদুস সোবহানের কৃতিত্ব বলে শেষ করার মতো নয়। তথাকথিত মানবতাবিরোধী মামলায় ফাঁসির রায়ে দণ্ডিত হয়ে দীর্ঘদিন কারাগারে আবদ্ধ থেকেও তিনি কল্যাণময় কাজে পিছিয়ে ছিলেন না। তিনি তার সমুদয় সম্পত্তির অংশবিশেষ বিক্রয় করে পাবনার প্রাণ কেন্দ্র দারুল আমান ট্রাস্ট তথা ইসলামিয়া মাদ্রারাসা সংলগ্ন ৩ কোটি ৮২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে আধুনিক সাজে সজ্জিত একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। যে মসজিদের নাম নিজের নামে নামকরণ না করে নাম দিয়েছেন মসজিদে তাকওয়া। মসজিদটিতে একই জামায়াতে একসাথে ৩ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। শুধু তাই নয়, মাওলানা সাহেবকে কারাগারের মধ্যে যে ভাইটি সেবা যত্ন করতেন তার ব্যাপারে তিনি সন্তানদের কাছে অসিয়ত করে গেছেন- মামুন নামের ছেলেটি কারাগার থেকে বের হলে আমি জীবিত থাকি আর মারা যাই তোমরা আমার সম্পত্তি বিক্রি করে ছেলেটিকে ওমরাহ হজ্জ পালন করার ব্যবস্থা করে দিবে।

বিদেশ সফর একজন জাতীয় নেতা এবং বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনের প্রথম কাতারের নেতা হিসেবে জাতীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনে এবং ইসলামের দাওয়াত ও রাষ্ট্রীয় কাজে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সফর করেছেন মাওলানা আবদুস সোবহান। তিনি এ পর্যন্ত আটবার পবিত্র হজব্রত পালন করেছেন। তাঁর কয়েকটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ভ্রমণ নিম্নরূপ- ১. বিশ্ব পার্লামেন্ট অ্যাসোসিয়েশনে প্রতিনিধি হিসেবে চীন সফর করেন। ২. আঞ্চলিক পার্লামেন্টের সদস্য হিসেবে শ্রীলঙ্কা সফর করেন। ৩. স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়া গমন করেন। ৪. সরকারি প্রতিশ্রুতি কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে লন্ডনের হাউজ-অব-কমন্স ও হাউজ-অব-লর্ডস-এ যোগদান। ৫. মুসলিম এইডের চেয়ারম্যান হিসেবে মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান সফর করেন। ৬. পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত রাবেতার সম্মেলনে যোগদান। ৭. নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব হজ্ব সম্মেলনে যোগদান। ৮. বসনিয়ার মুসলিম হত্যার প্রতিবাদে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন পার্লামেন্টে যোগদান উপলক্ষে ব্রাসেলস গমন এবং ভাষণ দান। ৯. ১৯৭৩ সালে লিবিয়ার বেনগাজিতে অনুষ্ঠিত ওআইসি সম্মেলনে যোগদান করেন। ১০. স্পিকার ডেলিগেশনে জার্মানিতে যান। এ ছাড়াও তিনি ইসলামী দাওয়াত ও রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে চারবার যুক্তরাজ্য, দু’বার যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স, সৌদি আরব, ইরাক, আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, লেবানন, লিবিয়া, হংকং, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, পাকিস্তান, নেপাল ও ভারত সফর করেছেন। মাওলানা আবদুস সোবহান এক অনন্য ব্যক্তিত্ব, একটি প্রতিষ্ঠান, একটি ইতিহাস। ১৯৬২ সাল থেকে এ জনপদের জনগণ তাঁর কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে বারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত করেছেন, যা পাবনার অন্য কোন নেতার ক্ষেত্রে হয়নি। তাঁর জীবনের মিশনই হচ্ছে জনকল্যাণমূলক কাজ। শিক্ষা, সেবা ও বৃত্তিমূলক কাজের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে এলাকার জনসাধারণকে শিক্ষিত করে তোলা এবং বেকারত্ব দূর করা। এ কাজ করার মাধ্যমে তিনি যেমন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিচিতি লাভ করেছেন, তেমনি পাবনার জনগণের মন জয় করেছেন। আজ তিনি সারা বাংলাদেশ নয় সারা পৃথিবীর ইসলামপ্রিয় মানুষগুলোকে কাঁদিয়ে তথাকথিত মানবতাবিরোধী মামলায় দীর্ঘদিন জালেম সরকারের মিথ্যা রায়ে কারাগারে আবদ্ধ থেকে হাজারও ঈমানী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মহান রবের মন জয় করে সেই মাবুদের সাথে সাক্ষাতের জন্য দুনিয়া থেকে বিদায় নিলেন। এলাকাবাসী জানান, মাওলানা মুহাম্মদ আবদুস সোবহান সৎ ও জনদরদি ব্যক্তিত্ব হিসেবে পাবনার সর্বস্তরের মানুষের কাছে পরিচিত। তিনি পাবনাবাসীর সুখে-দুঃখে, সুদিনে-দুর্দিনে সব সময় সাথে ছিলেন। পাবনার উন্নয়নে তাঁর অবদান বলে শেষ করা যাবে না। তাঁর বিরুদ্ধে সাজানো অভিযোগ জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে, যার প্রমাণ জানাযায় লক্ষ লক্ষ জনতার অংশগ্রহণ ও আহাজারি। তিনি শুধু পাবনারই নেতা নন। তিনি একজন প্রবীণ জাতীয় নেতা। জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমিরের দায়িত্ব পালন করেছেন। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে তিনি বরাবরই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর রূহের মাগফিরাত কামনায় দেশের বিভিন্ন স্থানে দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে দলের সিনিয়র নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, মরহুম মাওলানা আবদুস সোবহান ছিলেন প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন এবং জাতীয় নেতা। তিনি ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে দেশে ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের অন্যতম সিপাহসালার ছিলেন। মরহুম মাওলানার মাগফিরাত কামনা ও জান্নাতে আ’লা মাকাম দানের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে দোয়া ও মুনাজাত পরিচালনা করেন তিনি। উক্ত অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির আব্দুর রহমান মুসা, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহা: রেজাউল করিম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি লস্কর মোহাম্মদ তসলিম ও মাহফুজুর রহমান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন, নাজিম উদ্দীন মোল্লা, হেমায়াতে হোসাইন, ডা: ফখরুদ্দীন মানিক, অধ্যাপক আব্দুল করিম ও মোস্তাফিজুর রহমান। জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা আ ন ম শামছুল ইসলাম বলেছেন, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও নায়েবে আমির মাওলানা আবদুস সোবহানের মৃত্যুতে আমরা ইসলামী আন্দোলনের একজন অগ্রসৈনিককে হারিয়েছি। তার ইন্তেকালে আমাদের জাতীয় জীবনের এবং ইসলামী আন্দোলনের যে ক্ষতি হয়েছে তা কখনই পূরণ হওয়ার নয়। ইসলামী আন্দোলনের নেতা ও সমাজসেবক হিসেবে মাওলানা আব্দুস সোবহান ছিলেন এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। তিনি মরহুমের জীবনের নেক আমলগুলোকে কবুল ও তাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা প্রদানের জন্য মহান আল্লাহ তা’য়ালার দরবারে দোয়া করেন। উক্ত অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির মঞ্জুরুল ইসলাম ভুঁইয়া, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে দেলওয়ার হোসাইন ও আব্দুল জব্বার, কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুস সবুর ফকির। সকল অপবাদ, অপপ্রচার, জুলুম-নিপীড়নের মাঝেও মাওলানা আবদুস সোবহানের উত্তরসূরিরা আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে কাজ করে যাবেন। আল্লাহর দ্বীন বিজয়ের জন্য তাদের ত্যাগ-কোরবানি, সময়-সামর্থ্য, জান-মাল ও যোগ্যতাসহ সকল শক্তি এবং মন-মস্তিষ্কের পরিপূর্ণ দক্ষতা ব্যয় করার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। সকল পরিস্থিতিতে আমাদের দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে হবে। আল্লাহর উপর ভরসা করে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় ধৈর্যের সাথে সকল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। সময়ের ব্যবধানে জুলুমের অমানিশা ভেদ করে প্রজ্বলিত হবে আলোকময় সূর্য। যার আলোতে খোলাফায়ে রাশেদার স্বপ্নিল সমাজগঠনের মধ্য দিয়ে আসবে আমাদের আন্দোলনের সফলতা। লেখক : কলামিস্ট ও গবেষক

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির