post

আপসহীন দ্বীনি চেতনা প্রয়োজন

মোহাম্মদ কলিম উল্লাহ

১৯ অক্টোবর ২০২৩

ইসলামী আন্দোলন করা ঈমানেরই অপরিহার্য দাবি, যা ঈমানের পরিপূর্ণতা সাধন করে। ঈমানের দাবির পরিপূর্ণতার সাথে জান্নাত পাওয়ার দিকটি সম্পৃক্ত। পক্ষান্তরে ঈমানের দাবির অপরিপূর্ণতার সাথে জাহান্নামের ফয়সালা হওয়ার দিকটি সম্পৃক্ত। কুরআন ও হাদিস শরিফের অনেক জায়গায় ঈমানদার হওয়ার শর্তের সাথে আল্লাহর পথে জিহাদ করার কথাটি সুস্পষ্ট উল্লেখ আছে। অতএব ঈমানের দাবি পূরণ করার চেষ্টা মানেই, জানমালের সামর্থ্যের সর্বোচ্চটুকু জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর কাজে ব্যয় করা। এ পথ অত্যন্ত কষ্টকর ও ঝুঁকিপূর্ণ। এ পথের যাত্রীদের কষ্টকর ও ঝুঁকিপূর্ণ এ দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হবে। এছাড়া অন্য কোনো সহজ রাস্তা নেই কিংবা বিকল্প রাস্তাও। আপসহীনভাবে এই চেতনাই একজন ইসলামী আন্দোলনের কর্মীর থাকা প্রয়োজন। এই চেতনা যদি আপসহীন না হয়, তাহলে একজন ইসলামী আন্দোলনের কর্মী বিরূপ পরিস্থিতিতে সঠিক বিশ্বাসের উপর টিকে থাকতে পারবে না। যেহেতু আন্দোলনের অনিবার্য পরিণতিই হচ্ছে বিরোধী শক্তির পক্ষ থেকে সেই আন্দোলনের কর্মীদের চরম হঠকারী আচরণের মুখোমুখি হতে হবে, সেহেতু চরম হঠকারী আচরণের সে কঠিন মুহূর্তেও ইসলামী আন্দোলনের জন্য নিষ্ক্রিয় না হয়ে কাজ করা, এবং এই চেতনায় আপসহীন হওয়ার শিক্ষা নেওয়াটা একান্ত অপরিহার্য। 

ইসলামী আন্দোলনের প্রতিদান দুনিয়াতে কিছুই পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। সব পুরস্কার-প্রতিদান আখেরাতেই পাওয়া যাবে। বরং এই আন্দোলনে শামিল হলে পার্থিব এ জীবনে নিরাপত্তা লাভের পরিবর্তে নিরাপত্তাহীনতা, অর্থনৈতিক অগ্রগতি-সমৃদ্ধির পরিবর্তে অবনতি, ব্যবসা-বাণিজ্যে অগ্রগতি-উৎকর্ষতার পরিবর্তে পশ্চাৎপদতা, দুনিয়াবি যশ, খ্যাতি, উপাধি ও সম্মান পাওয়ার পরিবর্তে নিন্দা-ঘৃণা আর তাচ্ছিল্য, নিশ্চিত নিরাপদ ও শান্তিময় জীবনের পরিবর্তে হুমকি, অনিশ্চয়তা ও হতাশা, উন্নত ও পরিকল্পিত জীবন গড়ার পরিবর্তে গতিহীন-অপরিকল্পিত, অনিশ্চিত ও অন্ধকার জীবন গড়তে হতে পারে। ইসলামী আন্দোলনে শরিক হওয়ার অনিবার্য এই পরিণতিগুলোকে জীবন চলার পথে হাসিমুখে মেনে নেওয়ার মানসিকতা রাখতে হবে। ইসলামী সমাজ বিপ্লবের আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী একজন মুমিনকে অকৃত্রিমভাবে এই চেতনার অধিকারী হতে হবে। তবেই সে সফল হতে পারে। একজন মানুষের প্রকৃত সফলতা পরিপূর্ণ মুমিন হওয়ার পথে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার মাধ্যমেই নিহিত। ব্যক্তিজীবনের সফলতা দুনিয়াবি মানদণ্ডের সংজ্ঞার অনেক দিক রয়েছে। কিন্তু দুনিয়াবি প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য যাবতীয় প্রচেষ্টার সবটুকুই যদি ঈমানের দাবি পূরণের চেতনায় হয়; তবেই সে ব্যক্তি মুমিন হিসেবে সফল। আল্লাহর দ্বীনকে জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হিসেবে গ্রহণ করার মধ্যেই আসল সফলতা। দুনিয়াবি প্রতিষ্ঠালাভ করা কোনো অবস্থাতেই জীবনের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়। দুনিয়াবি জীবন ধারণের জন্য যা অবলম্বন দরকার, তা কেবল দ্বীনের দায়িত্ব পালনের জন্য হওয়া চাই। দ্বীনের প্রয়োজনেই দুনিয়ার অভাব পূরণের প্রচেষ্টা থাকবে। সর্বাত্মকভাবে যাবতীয় প্রচেষ্টার সবটুকুই হবে ইসলামী আন্দোলনের জন্য। সর্বোপরি দ্বীনই হবে একজন কর্মীর প্রকৃত জীবন উদ্দেশ্য। এই চেতনা হবে নিখুঁত ও নিখাদ। এই বিশ্বাস হবে অকৃত্রিম ও অপরিবর্তনীয়। দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তৎপরতা হবে অবিরাম-বিরতিহীন ও অবিশ্রান্ত। জীবনের কোনো অধ্যায়ে এ চেতনা থেকে দূরে থাকা কিংবা পিছপা হওয়ার কোনোই সুযোগ নেই।

ছাত্রজীবন-কর্মজীবন কিংবা জীবনের যে কোনো পর্যায়েই ইসলামী আন্দোলনের আবশ্যকতার বিশ্বাসের পরিপন্থী কোনো আচরণ করা যাবে না। তবে হ্যাঁ ছাত্রজীবন ভবিষ্যতে বৃহত্তর আন্দোলনে ভূমিকা রাখার মূল প্রস্তুতির সময়। এ প্রস্তুতিও ভালোভাবে নিতে হবে। ছাত্রজীবনে ভালো প্রস্তুতি নিতে পারলে কর্মজীবনের বহুমাত্রিক পরিসরে যথাযোগ্য ভূমিকা রাখা যাবে। ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের একজন কর্মীর কাছ থেকে এটাই মৌলিক প্রত্যাশা যে, সে ছাত্র আন্দোলনে ভালো ভূমিকা রাখার পাশাপাশি ভালো প্রস্তুতিও নিবে এবং সেই সাথে কর্মজীবনে তার পূর্ণ প্রতিফলন ঘটাবে। জীবনটাকে একটু গুছিয়ে নিই, এরপর ইসলামী আন্দোলনে ভালোভাবে কাজ করা হবে- এই চেতনা প্রকৃত দ্বীনি চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক। জীবনটাকে সাজানো কিংবা তৈরি করা সবটুকুই হবে ইসলামী আন্দোলনের প্রয়োজনে। জীবনের যাবতীয় প্রচেষ্টা কেবল এ পথেই ব্যয় হবে। জীবনের সামগ্রিক কিছুর একটা অংশ নিজের জন্য, বাকি অংশ দ্বীনের জন্য কিংবা সুবিধাজনক সময়ে ইসলামী আন্দোলনের কাজ করলাম। আবার আশঙ্কাজনক সময়ে সাময়িক নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলাম। এমনটির কোনটিই করার সুযোগ নেই। দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজকে জীবন সংগ্রামের মূল অংশ হিসেবেই গ্রহণ করতে হবে। তবেই হক আদায় হতে পারে। কুরআনুল কারিমে বলা হয়েছে- “নিখুঁত একনিষ্ঠভাবে ঈমান আনো এবং আনুগত্যকে আল্লাহর জন্য নিরঙ্কুশ করো।” (সূরা বাইয়্যেনাহ : ৫)।

আল্লাহর ইবাদত এবং আনুগত্যের একমুখিতা কোনো সময়ে হেরফের করা যাবে না। একান্ত নিবিষ্টমনে সবসময় আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের চেতনা প্রবল রাখতে হবে। অতএব ইসলামী আন্দোলনে শরিক হওয়ার পর কোনো বিরূপ পরিস্থিতিতে পিছপা কিংবা নিষ্ক্রিয় হওয়া যাবে না এই বিশ্বাসের ওপর আপসহীন চেতনা লালন করতে হবে। ইসলামী আন্দোলনে কোনোদিন দুনিয়াবি সফলতা নাও আসতে পারে। আল্লাহর অনেক নবী শত শত বছর বিরতিহীনভাবে মানুষকে কেবল দ্বীনের দাওয়াত দিয়েই গিয়েছেন। দুনিয়াবি সফলতা ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের কাছে হবে গৌণ, আখেরাতের সফলতাই হবে মুখ্য। সূরা সফে বলা হয়েছে- “আল্লাহ তোমাদের গুনাহসমূহ মাফ করে দিবেন এবং এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার তলদেশ দিয়ে নহর প্রবাহিত। সেখানে তোমরা চিরকাল থাকবে, এটিই হবে বড় সফলতা। আর সর্বশেষ দুনিয়াবি বিজয় ও আল্লাহর সাহায্য, যা তোমরা পছন্দ করো।” (সূরা সফ: ১২-১৩)।

ইসলামী আন্দোলনের মৌলিক পুরস্কার দুনিয়াতে নেই বরং আখেরাতে। যাবতীয় গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হবে এবং জান্নাত দেওয়া হবে। সেই সাথে বলা হয়েছে, এটিই বড় সফলতা। কোনো অবস্থাতেই দুনিয়াবি বিজয় বড় সফলতা নয়। দুনিয়ার এই জমিনে ইসলামী আন্দোলন সফলতা অর্জন করলো কিন্তু সেই আন্দোলনের কর্মী বিশ্বাস-চেতনায় ও কর্মে শেষ পর্যন্ত ময়দানে তার আদর্শিক বিশ্বাসের বিপরীত আচরণ করলো বা অটল থাকতে পারলো না। তাহলে সেই কর্মী মুমিন হিসেবে ব্যর্থ। ইসলামী আন্দোলনের জনশক্তির সঠিক চেতনায় টিকে থাকা ও ময়দানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করার জন্য দুনিয়াবি বিজয় বা বিজয়ের সম্ভাবনাময় পরিবেশ মোটেই বিবেচ্য বিষয় নয়। তার ঈমানের দাবিই হলো কেবল দ্বীনের জন্য কাজ করে যাওয়া। কুরআন ইসলামী আন্দোলনের দুনিয়াবি বিজয়কে মুখ্য নয়, গৌণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। বরং বলা হয়েছে আখেরাতের প্রাপ্তিই মূলত বড় সফলতা। সেই বড় প্রাপ্তিই ব্যক্তি জীবনে মনে প্রাণে চাওয়া পাওয়ার মূল লক্ষ্য হবে। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের মূল চেতনা যা অনুকূল-প্রতিকূল ও হতাশা-আশা সকল পরিস্থিতিতে একজন জনশক্তিকে মাঠে সক্রিয় রাখবে আপসহীনভাবে। ইসলামী আন্দোলনের কাজে সাড়া দিবে নিঃসংকোচে-নির্ভয়ে। ইসলামী আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে এ আন্দোলনের নেতৃত্বের ওপর ইসলাম বিরোধীদের পক্ষ থেকে চরম হঠকারিতামূলক আচরণ আসতে পারে। কর্মীদের ওপর আঘাতের পাশাপাশি নেতৃবৃন্দের উপরও আঘাত আসতে পারে, যা খুবই অস্বাভাবিক মনে হতে পারে। এ অবস্থায় হতাশা একটু বেশি আসতে পরে। ইসলামী আন্দোলন সত্য কী মিথ্যা; এ জাতীয় সংশয় তৈরি হতে পারে। নেতৃবৃন্দের ওপর আঘাত আসলে আন্দোলনের অস্তিত্ব থাকবে কী থাকবে না; প্রশ্ন আসতে পারে। নেমে আসতে পারে গভীর ভয়-সন্ত্রস্ততা। মনে হতে পারে- এবার সব নিঃশ্বেষ হয়ে যাবে, আর কোনোদিন হয়তো ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব না। পৃথিবীর যেকোনো আন্দোলনের চালিকা শক্তিরূপে একজন কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব বর্তমান থাকে। যাকে চক্র করে সেই আন্দোলনের জনশক্তিরা আবর্তিত হতে থাকে। কিন্তু আদর্শিক আন্দোলনের অগ্রগতি ও স্থায়িত্ব কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যক্তির ওপর নির্ভরশীল নয়, বরং যে আদর্শিক চেতনা ও বিশ্বাস এবং নীতিবোধের ভিত্তিতে আন্দোলন দানা বাঁধে, তার প্রতি অবিচলতা ও দৃঢ়তার ওপর আন্দোলনের অস্তিত্ব নির্ভরশীল। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের আদর্শিক চেতনাই মূলত সেই আন্দোলনকে গতিশীল রাখতে পারে।

ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাসে ওহুদ যুদ্ধে মুসলমানদের সাময়িক পরাজয়ে সাহাবিদের অনেকে কিছুটা হতাশাগ্রস্ততার মধ্যে পড়ে গিয়েছিল। মুসলমান দলের কিছু ভুলের কারণে তাদের পরাজয় হয়েছিল। মুসলমানদের কিছু সাধারণ মানবীয় দুর্বলতার কারণে আল্লাহ তাআলা এ পরাজয় তাদের ভাগ্যে নির্ধারণ করে দিয়েছিল। যা ভবিষ্যতে মুসলমানদের জন্য শিক্ষা হতে পারে- আর যাতে ভুলের পুনরাবৃত্তি না ঘটে। এখানে উল্লেখযোগ্য দিক হলো, ওহুদ যুদ্ধে স্বয়ং রাসূল সা. শহীদ হওয়ার গুজব ছড়িয়ে পড়ে মুসলমান শিবিরে। আন্দোলনের প্রধান নেতা, তিনিই যখন আর বেঁচে রইলো না তাহলে আমরা আর কার জন্য যুদ্ধ করব! এমনি ধারণা মুসলমানদের কারো কারো মনে তৈরি হয়েছিল। অনেকেই একেবারে মনোবল ভাঙা হয়ে গিয়েছিল। রাসূল সা. শহীদ হয়েছেন, এই খবরে মুসলমানদের মানসিক অবস্থাকে সামনে রেখে সূরা আলে ইমরানে আল্লাহর তাআলার এই হেদায়াতটি সর্বযুগের ইসলামী আন্দোলনের জনশক্তিদের জন্য খুবই অর্থবহ এবং শিক্ষাপ্রদ। যেখানে বলা হয়েছে-

“মুহাম্মদ সা. আল্লাহর রাসূল ছাড়া আর কেউ নন। তাঁর আগেও অনেক রাসূল অতীত হয়েছেন। এখন তিনি যদি মারা যান বা নিহত হন, তাহলে তোমরা পশ্চাৎপসারণ করবে? মনে রেখ, যে পশ্চাৎপসারণ করবে সে আল্লাহর কোনোই ক্ষতি করতে পারবে না। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হিসেবে জীবন যাপন করবে তাকে তিনি পুরস্কৃত করবেন।” (সূরা আলে ইমরান : ১৪৪)। 

জিহাদের ময়দানে কিংবা ইসলাম বিরোধীদের ষড়যন্ত্রের কারণে ইসলামী আন্দোলনের প্রাণপুরুষ স্বয়ং রাসূল সা. শহীদ হতে পারেন, এটা সাময়িকভাবে সাহাবিদের কারো কারো মাঝে অস্বাভাবিক মনে হয়েছিল। তাদেরকে রাসূলের সা. শহীদ হওয়ার খবর অত্যধিক মাত্রায় হতবিহ্বল করেছিল। তারা অনেকটা ইসলামী আন্দোলনের ব্যাপারে নিরাশ হয়ে পড়েছিল। বলা যায়, তাদের একটি অংশ কর্তব্যজ্ঞান হারানোর পর্যায়ে পৌঁছেছিল রাসূলের সা. শাহাদাতের খবরে। রাসূলের সা. অনুপম সান্নিধ্য ও প্রত্যক্ষ নেতৃত্বের অভাববোধের আশঙ্কাই মূলত সাহাবিদের ভেতর এমন দ্বিধাগ্রস্ত মানসিকতা সৃষ্টি করেছিল। তাদের আশঙ্কা এই আন্দোলন কার হাত ধরে এগোবে, কে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাবে কিংবা ষড়যন্ত্র প্রতিবন্ধকতা কে মোকাবেলা করবে। আন্দোলনের প্রধান নেতাই যখন শহীদ হয়ে গেলেন তখন আন্দোলন আর টিকে থাকবে বা স্থায়িত্ব লাভ করবে কি-না, এমন সংশয় তৈরি হওয়ার আগেই আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন। সতর্ক করা হলো এই বলে- “মুহাম্মদ সা. মানুষ হিসেবে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করতেই পারেন। অতীতেও আরো অনেক নবীগণ এভাবে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেছেন। তদুপরি মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা. ইসলামী আন্দোলনের প্রধান নেতা হিসেবে তাঁকে নিয়ে বড় বড় ষড়যন্ত্র হতে পারে কিংবা জিহাদের ময়দানে তাঁর শাহাদাত বরণ করাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। তাই বলে কি তোমরা জাহেলিয়াতের দিকে অর্থাৎ পিছনে ফিরে যাবে? অথচ তোমাদের বিশ্বাস ছিল তাঁর আনীত জীবনব্যবস্থার ওপর। সাথে তাঁর উপস্থিতি থাকলে ভালো ও মঙ্গল। যদি কোনো কারণে নাও থাকে তিনি, তাহলে তোমাদের ইসলামের ওপর যে বিশ্বাস, তার ওপর অবিচল থাকবে। রাসূল সা. জীবিত থাকা তোমাদের ঈমানের অবিচলতার দিকটা নির্ভর করে না। রাসূল সা. যদি তোমাদের মাঝে আল্লাহর হুকুমে বর্তমান নাও থাকেন, তোমরা রাসূলের অনুপস্থিতিতে ঈমানের ওপর অটল থাকবে এবং ইসলামী আন্দোলনে ভূমিকা পালন করে যাবে। তোমরা জেনে বুঝেই ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে এসেছ। অতএব রাসূল সা. এর অবর্তমানেও তোমরা ইসলামের ওপর সুদৃঢ় থাকবে। এটাই হবে তোমাদের জন্য কৃতজ্ঞতার বিষয়। কারণ তোমরা ইসলামপূর্ব জীবনে চরম বিভ্রান্তি ও পথভ্রষ্টতার মধ্যে ছিলে। দুনিয়ার এই জীবনে জয়-পরাজয় একান্ত সাময়িক। মুহাম্মদ সা. যদি নাও থাকে, তোমরা ইসলামের ওপর দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে শেষ পর্যন্ত অঁল-অবিচল থাকতে পারো, তবে সত্বর আল্লাহই তোমাদেরকে তার যথার্থ প্রতিদান দেবেন।

সর্বযুগে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের চেতনা যদি ব্যক্তিগত পর্যায়ে এই ভিত্তিতে শাণিত ও স্বচ্ছ হয় যে- জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর কাজ করতে গিয়ে কে আছে কিংবা কে নেই, তার চেয়ে মুখ্য বিবেচনার বিষয় হলো এ কাজ করা এবং এর দায়িত্ব সঠিকভাবে সর্বোচ্চ সামর্থ্যের আলোকে পালন করা ফরজ; তাহলে আমাদের চূড়ান্ত সফলতা সুনিশ্চিত। আসলে ইসলামী আন্দোলনের সকল কর্মীদের উচিৎ এ চেতনা লালনের ক্ষেত্রে আপসহীন হওয়া। আন্দোলনের কর্মী হিসেবে ইসলাম বিরোধীদের কোনো রকম হঠকারিতামূলক দমন নিপীড়নের কারণে আপসহীন চেতনার এই মানদণ্ড থেকে মোটেও পিছপা হওয়ার সুযোগ নেই।

লেখক: কলামিস্ট

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির