ইতিহাস এবং ইসলামের ইতিহাস এমন একটি বিষয়; যা একজন ব্যক্তির সামাজিক সংগঠন, মানবিক মৌলিক ভাবনা এবং বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ উন্নত করতে সাহায্য করে। কৌশলগত সাক্ষাৎকার, সমালোচনা করা, তথ্য সংগ্রহ এবং লিখন-ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ভালো প্রস্তুতি দেয় এটি। এই দক্ষতাগুলো প্রতিটি পেশায় মৌলিক এবং গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাস এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে দেশ-বিদেশে বিভিন্ন সুযোগ রয়েছে। যেমন-
স্নাতক ও স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম : বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামটি চালু আছে। এই প্রোগ্রামগুলো ইতিহাস বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ প্রদান করে।
এম.ফিল. ও ডক্টরেট প্রোগ্রাম : গবেষণাভিত্তিক প্রোগ্রামের জন্য এম.ফিল. ও ডক্টরেট (Ph.D.) প্রোগ্রাম চালু আছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই প্রোগ্রামগুলো ইতিহাস এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতির ওপরে উচ্চতর গবেষণা করতে সাহায্য করে।
প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম : ইতিহাস সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম চালু আছে বিভিন্ন ইনস্টিটিউটে, যা পেশাজীবনে সাহায্য করে।
বিদেশে উচ্চশিক্ষা : বাংলাদেশের বাইরেও ইতিহাস বিষয়ে উচ্চশিক্ষা প্রাপ্তির জন্য অনেক সুযোগ রয়েছে। পশ্চিমের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোসহ গোটা পৃথিবীতেই উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে ব্যাপকভাবে।
ইতিহাস এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে পড়াশুনা শেষ করার পর বিভিন্ন দিকে ক্যারিয়ার গঠনের সুযোগ রয়েছে। নিচে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো-
শিক্ষকতা : শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। পড়াশুনা শেষ করে আপনি সরকারি বা বেসরকারি স্কুল, কলেজ অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিতে পারেন। শিক্ষণে আপনার জ্ঞান এবং পেশাদার দক্ষতা ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব এবং এটি সমাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
গবেষণা : ইতিহাস এবং ইসলামের ইতিহাসে গবেষণা করার সুযোগ ব্যাপক। বাংলাদেশেই বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে গবেষক হিসেবে যোগ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। যেমন : বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদ, জাতীয় সংগ্রহশালা ইত্যাদি। এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আপনি গবেষণা প্রকল্প চালাতে এবং ইতিহাসের নতুন নতুন বিষয় আবিষ্কার করতে পারেন। এছাড়াও ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং বিভিন্ন প্রকল্পে গবেষণার কাজ চালাতে পারেন আপনি।
বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠন : বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং সংগঠনে যোগ দিতে পারেন আপনি। এই সংগঠনগুলোতে ইতিহাস এবং ইসলামের ইতিহাস সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রজেক্টের কাজ করা হয়ে থাকে।
সিভিল সার্ভিস : বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়া সম্ভব। এই পেশাটি মানুষের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সর্বাধিক প্রতিষ্ঠিত পেশা হিসেবে পরিচিত।
সাংবাদিকতা : ইতিহাস এবং ইসলামের ইতিহাস বিষয়ে পড়ে সাংবাদিকতায় যোগ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে; যেখানে ইতিহাসের ঘটনা বোঝা, তার ইতিহাস জানা ও প্রতিবেদন লেখা গুরুত্বপূর্ণ। তথ্য ও সংবাদ সংস্থা, টেলিভিশন ও রেডিও স্টেশনে সাংবাদিক হিসেবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
কন্টেন্ট ক্রিয়েটর : এখন অনেকেই সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে নিজের একটা অবস্থান তৈরি করতে চেষ্টা করছে। পৃথিবীর ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বাঁকগুলো সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তুলে ধরতে পারেন আপনিও।
লেখালেখি : ইতিহাস এবং ইসলামের ইতিহাস বিষয়ে লেখা, প্রবন্ধ প্রকাশ ও স্বাধীন গবেষণা করার জন্য অবারিত সুযোগ রয়েছে। আপনি বই লেখার সুযোগ পেতে পারেন এবং আপনার প্রতিবেদন ও লেখাগুলো প্রকাশের মাধ্যমে সমাজের সাথে জ্ঞান ভাগ করে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে যে বিষয়ে আগে কাজ হয়নি, পছন্দের তালিকায় ওপরে রাখতে পারেন সে বিষয়টি।
কনসালট্যান্সি সেবা : এটি একটি আইডিয়া হতে পারে, যেটি আপনি কাজে লাগাতে পারেন। এই সময়ে বিভিন্ন ঐতিহ্য, সাংস্কৃতিক ও প্রাচীনত্ব সম্পর্কিত প্রকল্পে কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। আপনি এই ধরনের প্রকল্পে যোগ দিতে পারেন এবং আপনার বিশেষজ্ঞতা এবং আবিষ্কারগুলো ব্যবহার করে সাহায্য করতে পারেন।
সামগ্রিকভাবে দেখলে ইতিহাস এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে পড়াশুনা করার পর দেশে-বিদেশে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থাকে, যা একজন ইতিহাস শিক্ষার্থী লুফে নিতে পারে সহজেই।
সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বিশেষ সুবিধা
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা অনেকেরই বহুল আরাধ্যের। ইতিহাস এবং ইসলামের ইতিহাস বিষয়ের শিক্ষার্থীরা কিছুটা হলেও এগিয়ে থাকতে পারে। এখন বিসিএসের যে তিনটি (প্রিলি, রিটেন, ভাইভা) ধাপ রয়েছে, এর প্রত্যেকটি ধাপেই ইতিহাস বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। সেই দিক থেকে বিবেচনা করলে এই বিষয়ের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে থাকে। নিচে সংক্ষেপে কিছু বিশেষ বিসিএস ক্যাডারের আলোচনা করছি, ইতিহাসের শিক্ষার্থী হিসেবে যেখানে আপনার নিজেকে মেলে ধরার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে-
প্রশাসন ক্যাডার : প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দিলে ইতিহাসের অধ্যয়ন থেকে অর্জিত কৌশলগত সাক্ষাৎকার, তথ্য বিশ্লেষণ এবং সমালোচনা করার দক্ষতা সহায়ক হতে পারে।
শিক্ষা ক্যাডার : ইতিহাস এবং ইসলামের ইতিহাস বিষয়ের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা ক্যাডারে যোগ দিতে পারেন। এই বিষয়গুলোতে প্রতি বছরই ৫০ জনের ওপরে শিক্ষক নেওয়া হয়।
তথ্য ক্যাডার : ইতিহাস এবং ইসলামের ইতিহাস পড়ে তথ্য ক্যাডারে যোগ দিলে বিভিন্ন সময়ে লব্ধ জ্ঞান কাজে লাগানোর সুযোগ আসতে পারে।
সাংস্কৃতিক ক্যাডার : ইতিহাস এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতির জ্ঞান এই ক্যাডারে কাজে লাগানোর বিভিন্ন সুযোগ রয়েছে।
বিদেশে উচ্চশিক্ষার অবারিত দ্বার
অনেকেরই ধারণা- ইতিহাস বা ইসলামের ইতিহাস থেকে পড়ে বাইরে উচ্চশিক্ষার সুযোগ কম। এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা। আপনার জন্য এক বিস্তৃত পৃথিবী রয়েছে। আপনি কোথায় যেতে চান, তা আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে। আমেরিকা, ইউরোপ, কানাডা, তুরস্ক, মিডলইস্ট, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়াসহ সকল উন্নত দেশে পড়ার সুযোগ রয়েছে। তবে একটা জিনিস মনে রাখতে হবে- বাইরের দেশে উচ্চতর শিক্ষাটা হচ্ছে মূলত গবেষণা করা। তাই গবেষণা সম্পর্কে একটা পরিপূর্ণ ধারণা থাকতে হবে। গবেষণাটা অবশ্যই প্রত্যেকের একান্ত নিজের বিষয়।
আপনাকে প্রাথমিক পর্যায়ে খুঁজে বের করতে হবে- নিজের আগ্রহ কোনদিকে। উচ্চশিক্ষার সকল গবেষণাতেই ফান্ড আছে। আপনাকে খুঁজে নিতে হবে- মূলত কোন জায়গায় ফান্ড আছে। অনেক গবেষণার বিষয়ের ওপরই আপনি উচ্চশিক্ষা নিতে পারেন। যেমন : Bangladesh History, Ancient History, Medieval History, Contemporary History, South Asian History, Southeast Asian History, American History, Ottoman History, European History, Oriental Studies, Development Studies, Middle Eastern Studies, Religious Studies, Environmental History, Science History, Geovgraphical History, Gender History, Cold War History, Liberation History, Genocide History, Indigenous History, Migration History. এমন অনেক শাখা আছে গবেষণার। উচ্চশিক্ষার জন্য সবচেয়ে জরুরি যেটা, সেটা হচ্ছে- লেগে থাকা এবং ধৈর্যধারণ করা। আপনি যদি লেগে থাকেন এর পেছনে, তাহলে সফল হবেনই।
সর্বোপরি, আমাদের মনে রাখতে হবে- ক্যারিয়ারটাই আমাদের একমাত্র জীবন নয়। আমাদের জীবনের একটা বড়ো লক্ষ্য-উদ্দেশ্য আছে। আদর্শিক দিক থেকে নিজেকে সফলতার চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতে পারলেই কেবল আমরা সত্যিকার সফল হতে পারব। আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য তো জান্নাত! আল্লাহ আমাদের সকলের কর্মপ্রচেষ্টাকে কবুল করুন।
তথ্যসূত্র :
1. Greenhaus, J. H., Callanan, G. A., & Godshalk, V. M. (2009). Career management (4th ed.) Sage.
2. Super, D. E. (1980). A life-span, life-space approach to career development Journal of Vocational Behavior, 16(3), 282-298
3. Arthur, M. B., Hall, D. T., & Lawrence, B. S. (Eds.). (1989). Handbook of Career The‡ovry, Cambridge University Press
4. Oxford English Dictionary, 2nd ed., 1989. Oxford, UK: Oxford University Press.
লেখক : পিএইচডি গবেষক, যুক্তরাষ্ট্র
আপনার মন্তব্য লিখুন