post

ফিলিস্তিন মুক্তি আন্দোলন ইসলাম বিজয়ের গাণিতিক সংকেত

অধ্যক্ষ ডা. মিজানুর রহমান

৩০ অক্টোবর ২০২৩

আজ থেকে ৭৫ বছর আগে ১৯৪৮ সালে ইসরাইল সেনাবাহিনী কর্তৃক ফিলিস্তিনের ২২ হাজার নাগরির হত্যাকাণ্ড, ৫ শতাধিক গ্রামের ৭ লাখ অধিবাসীকে বাস্তুভিটা ছাড়া করার করুণ কাহিনী সে দেশের মুসলমানরা আজও ভোলেনি। যে কারণে সে দিবসটি স্মরণ করার জন্য প্রতি বছর ‘নাকবা’ বা বিপর্যয় দিবস হিসেবে প্রতিপালন করে আসছে ফিলিস্তিনিরা। সম্প্রতি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে খাদ্য ও অন্যান্য সংকটে রেষ কাটতে না কাটতেই গত অক্টোবর ২০২৩-এর মাঝামাঝি থেকে দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী ইসলামপন্থী সংগঠন হামাসের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।

বক্ষ্যমাণ প্রতিবেদনটি লেখা পর্যন্ত পশ্চিমা মদদপুষ্ট ইসরাইলি সন্ত্রাসী বাহিনীর চলমান আগ্রাসনে ৭,৩২৬ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। তার মধ্যে শুধু শিশুই ৩,০৩৮ জন এবং নারী ১,৭২৬ জন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৮,৯৬৭ জন। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে নিখোঁজ হয়েছে কমপক্ষে ১,৭০০ জন; তন্মধ্যে ৯৪০ জনই শিশু। গণহত্যা চালানো হয়েছে ৭৭২টি ফিলিস্তিনি পরিবারের ওপর। ১০৪ জন স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হয়েছেন এবং বিভিন্নভাবে আঘাতপ্রাপ্ত ও আহত হয়েছেন ১০০ জন। চলমান আগ্রাসনে এ পর্যন্ত ২৪ সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। 

লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত এবং জ্বালানি সংকটের কারণে ১২টি হাসপাতাল এবং ৩২টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র সেবার বাইরে চলে গিয়েছে। ইসরাইল জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ অব্যাহত রাখায় ইনকিউবেটরে থাকা ১৩০-এর অধিক ফিলিস্তিনি শিশুর জীবন চরম ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

মূলত ভূখন্ডটা ফিলিস্তিনের। আগ্রাসী দখলদার হলো ইসরাইল। এ নিয়ে ইতঃপূর্বে অনেক দুঃখজনক, হৃদয়বিদারক ও লোমহর্ষক ঘটনা ঘটেছে। প্রাণ হারাতে হয়েছে বহু বনি আদমকে। ফিলিস্তিনিরা নিজদেশে বহু বছর হলো পরবাসীর মতো বসবাস করছে। শোষণ,  বৈষম্য আর বঞ্চনার শিকার হতে হতে  যখন তাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে, ঠিক তখনই সময়-সুযোগ বুঝে নিজদেশ ও পুণ্যস্থান আল আকসা মসজিদ উদ্ধারে স্বাধীনতাকামী ইসলামী সশস্ত্র বাহিনী হামাস ইসরাইলের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা করতে বাধ্য হয়েছে। এতেই বেধে গেছে সশস্ত্র যুদ্ধ। প্রতিদিন সেখানে পানি, খাদ্য ও চিকিৎসার অভাবে বেড়েই চলেছে মৃত্যুর মিছিল।

এরই মধ্যে ইসরাইলের পক্ষথেকে গাজা শহর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খালি করে নিরাপদে চলে যাওয়ার আল্টিমেটাম বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। এতে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মন্তব্য করেছেন, ‘এটি একটি অবাস্তব ঘোষণা। ১১ লাখ বেসামরিক মানুষকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এলাকা ছাড়ার ঘোষণা এক নজিরবিহীন দৃশ্যের অবতারণা করবে। ঘোষণার পরপরই হাজার হাজার বেসামরিক গাজা অধিবাসীরা গাধা, ঘোড়া, ব্যক্তিগত গাড়ি অথবা পদব্রজে দক্ষিণাঞ্চলের দিকে রওনা হয়। নিজ এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার পথেও নিরীহ মানুষদের বোমা হামলাসহ নানা বিড়োম্বনার শিকার হতে হচ্ছে বলে জানা যায়।

বর্তমানে গাজা সীমান্তের সন্নিকটে ইসরাইলের লাখ লাখ সশস্ত্র সৈন্যবাহিনী ট্যাংকসহ নানা ধরনের  সাঁজোয়া সরঞ্জাম নিয়ে জড়ো হয়েছে। রয়টার জানায়- কিছু অংশে ইতোমধ্যেই  ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান নিয়ে গাজায় প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে। ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র রিয়াল অ্যাডমিরাল দানিয়েল হ্যাগারি দাবি করে- হামাসের আকস্মিক হামলায় অন্তত ১৩শ মানুষ নিহত হয়েছে তাদের। অপরদিকে ইসরাইলের অব্যাহত বিমান হামলায় গাজায় প্রাণ হারিয়েছে ৩ হাজারের অধিক মানুষ। এখনও যুদ্ধ ও হত্যাকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে। ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে- শীঘ্রই গাজা সিটিতে বড়ো ধরনের সামরিক অভিযান চালাবে তারা। এদিকে ফিলিস্তিনিদের জন্য সুখের খবর হলো- গাজাভিত্তিক প্রতিরোধ সংগঠন হামাসের সাথে চলমান সংঘাতের মধ্যে আকস্মিকভাবে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন খোদ ইসরাইলের তথ্যমন্ত্রী গ্যালিট ডিস্টেল অ্যাটকরিয়ান। 

ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে ইসরাইলের সাথে সৌদি আরবের সংলাপ ফলপ্রসূ না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত সংলাপ স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘ইসরাইল তাদের অপরাধযজ্ঞ না থামালে যেকোনো সময় আঞ্চলিক পরিস্থিতি পালটে যেতে পারে।’ ইতোমধ্যে ইরান, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, সৌদি আরব, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান ও লেবাননসহ অন্তত ৭০টি রাষ্ট্র ফিলিস্তিনের সমর্থনে সংহতি প্রকাশ করেছে বলে জানা যায়।

চলমান সংঘাত নিরসনে ন্যায়ের পক্ষে মৌন সমর্থন জানিয়েছে চীন ও রাশিয়া। তবে এশিয়া মহাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সাধারণ তৌহিদি জনতা ইতোমধ্যে আল-আকসা মসজিদের পুণ্যভূমি অধ্যুষিত ফিলিস্তিনিদের স্বপক্ষে ইসরাইলি আগ্রাসান ও হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল, বক্তৃতা-বিবৃতি অব্যাহত রেখে চলেছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র পূর্ব মধ্যসাগরে যুদ্ধবিমান বহনকারী রণতরী ইউএসএস আইজেন হাওয়ার পাঠিয়েছে জেনে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আল খামেনি যুক্তরাষ্ট্রকে  হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘আগ্রাসন বন্ধ না হলে মুসলিমদের কেউ রুখতে পারবে না।’

উল্লেখ্য, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব কখনই ইসরাইলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। লেবাননের তত্ত্বাবয়ায়ক সরকারের তথ্যমন্ত্রী জিহাদ মার্কারী ফিলিস্তিনিদের সহায়তায় ভূমিকা রেখে চলেছেন। মালয়েশিয়াতে ফিলিস্তিনিদের স্বপক্ষে গণমিছিলে যোগদান করেছেন সে দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ, মুহিউদ্দিন ইয়াসিন। ফিলিস্তিনের স্বপক্ষে সমর্থন, তাদের দুর্দিনে অর্থ সমৃদ্ধ করার জন্য মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইবরাহিম তহবিল সংগ্রহের অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।

সম্প্রতি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকের পর সংবাদকর্মীদের জানানো হয় অঞ্চলটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ এবং নজিরবিহীন মানবিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। তারা স্পষ্টভাবে জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের দায় অনেকাংশে যুক্তরাষ্ট্রের ওপরই বর্তায়। অপরদিকে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে হামাসের রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রধান বাসেম নাইম বলেন, ‘আমাদের নিকট দু’টি অপশন আছে। একটি হলো-দখলদারদের পরাজিত করা, আর না হয় বাড়িতে থেকে মৃত্যুবরণ করা। ১৯৪৮ সালের মতো আমরা আর একটি নাকাবা (বিপর্যয় দিবস) হতে দেবো না।’

অপরদিকে আমেরিকা, ভারতসহ বেশকিছু দেশ ইসরাইলের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়। ইতোমধ্যে বিভিন্ন রাষ্ট্র শুধু সংহতি, বিবৃতি ও সমর্থন দিয়েই ক্ষান্ত নেই, প্রয়োজনীয় সমরাস্ত্র সহায়তাসহ নানাবিধ সহায়তা করতে এগিয়ে আসছে। চলমান বাস্তবতার নিরিখে এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না-দিনে দিনে বিশ্ব আজ দুই মেরুতে বিভক্ত হচ্ছে। সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্বে জড়িত হওয়ার ফলে হক আর বাতিলের বিশ্বযুদ্ধ বাধতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা।

পরিশেষে বলা যায়, গাজায় ইসরাইলের সৃষ্ট গজওয়া (যুদ্ধ) মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের জন্য গজবের (শাস্তির) দামামা ইসলাম গালিবের (বিজয়ের) গাণিতিক সংকেত নয় তো, যা ৫ থেকে ৯শ বছরের ইসলামী সালতানাত পুনরুদ্ধার অতঃপর মাগরিব, মাশরিক, শিমাল, জুনুব; দুনিয়ার সর্বস্তরে হুকুমতে ইলাহিয়াত কায়েমের পূর্বাভাস? মহান আল্লাহ তায়ালার মহাপরিকল্পনা বোঝার সাধ্য কার!

লেখক : জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রাবন্ধিক গবেষক ও সাংবাদিক
Email : [email protected]

আপনার মন্তব্য লিখুন

Fahad Hossen Piyal

- 5 months ago

Many kinds of information I will gather form here .

Fahad Hossen Piyal

- 5 months ago

Many kinds of information I will gather form here .

Md Al amin

- 4 months ago

Insahallah Islam will win,,, palestin jindda bad

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির