মানব ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সবদিক থেকে পূর্ণাঙ্গ ব্যক্তি হচ্ছেন মুহাম্মদ সা.। আমরা সবচেয়ে বেশি সম্মানিত এইজন্য যে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে শেষ নবী মুহাম্মদ সা.- এর উম্মত হওয়ার তাওফিক দিয়েছেন। তিনি মানবজাতির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে রাহমাতুল্লিল আলামিন। আর স্বয়ং আল্লাহ তাআলা হচ্ছেন রাব্বুল আলামিন। তাঁর এই সর্বজনীন পরিচিতি তাঁর জীবনের সকল কর্মকাণ্ডের মধ্যে আমরা দেখতে পাই। তাঁর গোটা জীবনকে একটি মহাসাগরের সাথে তুলনা করা যায়। আর দুনিয়ার যত জ্ঞানী-গুণী আছে তাদেরকে সেই মহাসাগরের এক বিন্দু পানির সাথে তুলনা করা যায়। সারা জীবন তাঁর জীবনের আলোচনা করলেও শেষ করার কোনো সুযোগ নেই। এত বিশাল বিস্তৃত তাঁর জীবন। এজন্য একজন কবি বলেছিলেন- রাসূলে পাক সা. হচ্ছেন জ্ঞানসমুদ্র। সমুদ্রের মধ্যে সারাজীবন যদি কোনো মানুষ কোনো কাঠ ভাসিয়ে দেয় তাহলে এই কাঠগুলো কখনো কিনারের খোঁজ পাবে না। কোথায় কোন তরঙ্গমালায় যে হারিয়ে যাবে তার কোনো অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যাবে না। সে ধরনেরই হচ্ছেন রাসূল সা.। বহু জ্ঞানী-গুণী, দার্শনিক এ পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। তাদের সকলের জ্ঞান একত্র করলেও মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জ্ঞানের সাথে সামান্যটুকু তুলনা করার সুযোগ নেই।
তাঁর জীবনের অগণিত দিক এবং বিভাগের মাঝে তাঁর প্রশিক্ষণপদ্ধতিটা আজকে এখানে সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনার জন্য শিবির নেতৃবৃন্দ বলেছেন। আমি সেদিকেই দৃষ্টিপাত করতে চাই। এ জন্য প্রথমে যে জিনিসটি আমি বলতে চাই সেটি হচ্ছে- আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআনে হাকিমের নবী-রাসূলগণের আগমনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেছেন। বিশেষ করে শেষ নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের উদ্দেশ্য নিয়ে সূরা সফের ৯, সূরা আল ফাতহের ২৮, সূরা তাওবার ৩৩ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন: সকল বাতিল মতাদর্শের ওপরে, মানুষের মনগড়া মন্ত্র-তন্ত্রের ওপরে, মানুষের যত মতবাদ, যত মত এবং পন্থা আছে সব কিছুর ওপরে ইসলামকে বিজয়ী করার জন্য মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন। সাথে দিয়েছেন দুটি জিনিস। হিদায়াত এবং সত্য জীবনব্যবস্থা। আর এই দুটোরই টার্গেট হবে দুনিয়ায় আল্লাহর দ্বীনকে তাত্ত্বিকভাবে এবং বাস্তবিকভাবে বাস্তবায়িত করা। আল্লাহর নবী তাঁর জীবদ্দশায় অত্যন্ত সফলভাবে এই দুটো কাজ করেছেন।
সূরা শুরার ১৩ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা শেষ নবীসহ আরো কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নবীকে উল্লেখ করে বলেছেন- এখানেও নবীগণের আগমনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেছেন আল্লাহর দ্বীনকে আল্লাহর জমিনে প্রতিষ্ঠিত করা, ইসলামকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা। এটাই ছিল নবীগণকে দুনিয়ায় প্রেরণের উদ্দেশ্য। আল্লাহর নবীগণ দুনিয়ায় থাকবেন আর গাইরুল্লাহ সমাজের কর্তৃত্ব করবে তার অধীনে নবীরা বসবাস করবে এটা কোনো অবস্থাতেই নবীদের জন্য ইসলামের জন্য মানানসই নয়। এজন্য নবী-রাসূলগণকে দুনিয়ায় পাঠিয়ে আল্লাহ তাআলা নবীদের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করেছেন। দ্বীন বিজয়ী শক্তি হিসেবে থাকবে আর বাতিল তার অধীনে যতটুকু অনুমোদন পায় ততটুকু থাকবে। এটাই নবী- রাসূলগণের জীবনে আমরা দেখতে পাই তারা এটা সার্বিকভাবে বাস্তবায়ন করেছেন। কিন্তু আজকে তার উল্টোটা দেখা যায় বাতিলের অধীনেই দ্বীন! বাতিল যতটুকু অনুমোদন করে ততটুকু আমরা দ্বীন পালন করতে পারি। এর থেকে বড় লজ্জাজনক এবং অপমানজনক ঘটনা মুসলমানদের জন্য আর কিছুই হতে পারে না। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাকে আরো একটি দায়িত্ব দিয়েছেন। সে দায়িত্বটি হচ্ছে সূরা বাকারায় ১২৯, ১৫১; সূরা আলে ইমরানের ১৬৪, সূরা জুমায় ২ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলেছেন- এই আয়াতগুলো আল্লাহ ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে ভিন্ন ভিন্ন মানুষের জন্য নাযিল করেছেন কিন্তু আয়াতগুলোতে একটি অভিন্ন কর্মনীতি পেশ করা হয়েছে। সব রোগ সব স্বভাব চরিত্রের প্রতিবিধানে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যে কর্মনীতি পেশ করেছেন সেটি হলো- তোমাদের কাছে আমার আয়াতগুলো তিনি তেলাওয়াত করবেন, তোমাদেরকে পবিত্র করবেন, তোমাদেরকে কিতাব এবং হিকমতের শিক্ষা দান করবেন এবং অনাগত ভবিষ্যতে অনেক বিষয়ে তোমাদের সামনে আসবে যেগুলো প্রকৃত জ্ঞান তোমাদের কাছে নেই সেগুলো সম্পর্কেও শিক্ষা দেবেন।
এ কর্মনীতি অনুযায়ী অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে ভূমিকা পালনের দায়িত্ব আল্লাহ তাআলা স্বয়ং তাঁর নবীর ওপরেই দিয়েছেন। একজন জীবনবিধান নিয়ে আসবে এবং আরেক চিন্তার আর একজন লোক সেই জীবনবিধান সম্পর্কে শিক্ষা দান করবে এটা কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহ তাআলা যে দ্বীন নিয়ে নবীকে পাঠিয়েছেন সেদিনের আলোকে মানুষকে গড়ে তোলার জন্য আল্লাহ তাআলা নবীকেই দায়িত্ব দিয়েছেন।
যারা ইসলাম মানে না, কুরআন জানে না, কুরআনের চরিত্র যাদের কাছে নেই তাদের কাছেই স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আমরা শিক্ষা গ্রহণ করছি। এটা শিক্ষার সুন্নত তরিকা নয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা এটার পরিবর্তন করতে পারছি না। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শিক্ষক এবং প্রশিক্ষক হিসেবে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই বলেছেন ‘আমি তোমাদের কাছে শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।’ বিপ্লবের উপযোগী লোক তৈরি করা এবং কল্যাণরাষ্ট্র পরিচালনায় যোগ্যতাসম্পন্ন লোক গড়ার জন্য আল্লাহর নবীর আনীত এই কর্মনীতির কোনো বিকল্প নেই। বিশ্ব আজকে উন্নতি করতে করতে গ্রহ নক্ষত্র পর্যন্ত চষে বেড়াচ্ছে। কিন্তু যতই আমরা উন্নতি করি না কেন রাসূলুল্লাহর কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে যে শিক্ষানীতি-কর্মনীতি ও মানুষ গড়ার কর্মসূচি নাজিল হয়েছে তার বিকল্প কোনো কর্মসূচি নেই। একে বাদ দিয়ে যদি কেউ কিছু করতে চায় তাহলে তার পক্ষে তা সম্ভব না; সফলতা আসবে না। দিন দিন সঙ্কট বৃদ্ধি পেতে থাকবে। সেজন্য আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এই কর্মনীতির সবক দিয়েছেন। এই কর্মনীতি অনুযায়ী মানুষ গড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এই আয়াতগুলোতে সেই চারটি কর্মনীতিই আমরা দেখতে পাই।
এই কর্মনীতিগুলো উল্লেখ করে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলে দিয়েছেন যে তুমি নিজেই এই কর্মনীতির আলোকে মানুষদেরকে গড়ে তুলবে। তাদের মানুষ গড়ার কর্মনীতির মাঝে প্রথম দুটি হচ্ছে নিজেকে গড়ার জন্য এবং পরবর্তী দুটি হচ্ছে অন্যকে গড়ার জন্য। তাফসিরে বলা হয়েছে তুমি মানুষকে দ্বীনের যাবতীয় বিষয় আশয় সম্পর্কে জানাবে, দুনিয়ার যাবতীয় বিষয়ে আশয় সম্পর্কে জানাবে, শিক্ষিত করবে। এভাবে কুরআনে হাকিমের বিভিন্ন জায়গায় জ্ঞান এবং জ্ঞান অর্জনের ফজিলত, এর প্রয়োজনীয়তা, এর কল্যাণকারিতা আল্লাহ তাআলা তুলে ধরেছেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জীবনে সেগুলো কার্যে পরিণত করেছেন।
তিনি তার এই কর্মনীতির ভিত্তিতে প্রথমে মানুষের চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করেন এরপর চরিত্র ও অভ্যাসের পরিবর্তন করেন। অতঃপর সমাজ পরিবর্তনেও সচেতনতাবোধ জাগ্রত করার চেষ্টা করেন। মাক্কি জীবনে যে সূরাগুলো আমরা দেখতে পাই সেগুলোতে মূলত মানবতার মহান শিক্ষক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি শিক্ষার মূল বিষয়গুলো আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নাযিল করেছেন। সেই নীতির ভিত্তিতে তাওহিদ রিসালাত ও আখিরাতের ভিত্তিতে তিনি তার যাবতীয় শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালিত করেন। এবং অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া মানবতাকে এই নীতির ভিত্তিতেই তিনি আদর্শের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সা. তার শিক্ষার মূল উৎস বানিয়েছেন কুরআনকে। আর কুরআন হচ্ছে এমন একটি গ্রন্থ যেখানে দ্বীনি বিষয়ে যেমন ভাবে আছে তেমনি ভাবে দুনিয়াবি জীবনের সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের ফর্মুলা ও আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোথাও বিস্তারিতভাবে কোথাও সংক্ষিপ্ত আকারে আল্লাহ তাআলা তুলে ধরেছেন। আল্লাহর নবী সেই কুরআনের ভিত্তিতে তার সঙ্গী সাথিদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন দুনিয়াবাসীকে সে শিক্ষা গ্রহণের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি যেসব পদ্ধতি অবলম্বন করে শিক্ষাদান করেছেন তার মধ্যে আমরা দেখতে পাই যে যখনই আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তার কাছে ওহি নাযিল হতো তখন তিনি সেই ওহির বাণীগুলোকে নিজে আগে আত্মস্থ করতেন। খুবই তাড়াহুড়া করতেন যাতে ওহি নাজিলের সাথে সাথেই তিনি মুখস্থ করে ফেলতে পারেন। অত্যন্ত পেরেশান থাকতেন না জানি কোনো শব্দ তার থেকে ভুলে ছুটে যায়। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এজন্য তাকে বলছেন, আপনি তাড়াহুড়া করবেন না আপনি ধীরস্থির ভাবে শুনুন। কুরআনকে আপনার মানসপটে প্রোথিত করে দেওয়ার দায়িত্ব আমার। এভাবে তিনি অজানাকে জানার জন্য পেরেশান থাকতেন আর আল্লাহ তাআলা তাকে সাহায্য করতেন। আর ঠিক তেমনি ভাবেই সাহাবায়ে কেরামকে তিনি গড়ে তুলেছেন। সাহাবিগণের জ্ঞান অর্জনের যে পিপাসা, জানার যে আগ্রহ, এটা সাহাবায়ে কেরামের জীবনী থেকে আমরা দেখতে পাই। আল্লাহর রাসূলের মজলিসে, মসজিদে নববীতে সাহাবায়ে কেরাম দুনিয়ার সব কিছুকে ত্যাগ করে শুধুমাত্র রাসূলের মুখনিঃসৃত বাণী শোনার জন্য, জানার জন্য যেভাবে পড়ে থাকতেন এটা পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোনো মানবগোষ্ঠী দেখাতে পারবে না।
তিনি কয়েকজন কাতিবকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে দেন। এই কমিটি ওহি যখনই নাযিল হতো তখনই সেগুলোকে লিখে রাখতেন। অর্থাৎ প্রশিক্ষণের যাবতীয় উপায়-উপকরণ তার জীবন থেকেই আমরা দেখতে পাই। আজকের লেখা, আজকের কাগজ, আজকের যে বইপুস্তক, আজকের যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আজকের যে নতুন নতুন অনেক শিক্ষাপদ্ধতি আমরা দেখতে পাচ্ছি এই সবগুলোরই আবিষ্কারক হচ্ছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। সুতরাং বিশ্ব তাকে বাদ দিয়ে নিজেদের গৌরব প্রকাশ করলে এটা সম্পূর্ণভাবে অজ্ঞতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববীকে শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। প্রায় দুই শতাধিক সাহাবা আল্লাহর রাসূলের মসজিদে সব সময় থাকতেন। তাদেরকে আসহাবে সুফফা বলা হতো। তাদের বৈশিষ্ট্য ছিল কোনো সাহাবা যদি আয় রোজগারের জন্য বাইরে যেতেন তাহলে অন্য কাউকে দায়িত্ব দিয়ে যেতেন যে আমি যতক্ষণ অনুপস্থিত থাকবো ততক্ষণ তোমরা শুনবে যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী বলেছেন এবং ফিরে এসে সেটুকু সময়ের মধ্যে আল্লাহর রাসূল কী বলেছেন তা জেনে নিতেন। এভাবে আসহাবে সুফফার লোকদের জ্ঞান অর্জনে, আল্লাহর রাসূল থেকে শিক্ষা গ্রহণে, তাদের পেরেশানি আমরা দেখতে পাই। সাহাবাগণ কুরআন ছাড়াও রাসূলের সকল বাণী মুখস্থ করে রাখতেন। যারা লেখাপড়া জানতেন তারা গোপনে লিখে রাখতেন। কারণ, আল্লাহর রাসূল বলেছিলেন যে ওহি ছাড়া অন্য কিছু লেখা যাবে না। এজন্য প্রকাশ্যে ওহি লেখা হতো এবং সাহাবাগণ ব্যক্তিগতভাবে রাসূলের বাণীগুলোকে মুখস্থ করে এবং লিখে রাখতেন।
রাসূল সা.-এর ছাত্রদের প্রথম ব্যাচ ই হচ্ছে আসহাবে সুফফা। আল্লাহর রাসূল তাদেরকে সরাসরি শিক্ষা দিতেন। পরোক্ষভাবে নয়। আল্লাহর রাসূল বদর যুদ্ধে বন্দিদেরকে মুক্ত করার শর্ত হিসেবে শিক্ষাকে নির্ধারণ করেছিলেন। যে বন্দিরা যদি মুসলিমদেরকে অক্ষরজ্ঞান দান করে তাহলে তাদেরকে মুক্ত করে দেওয়া হবে। এটা তার শিক্ষার একটা পদ্ধতি ছিল। তিনি ইলমে দ্বীনের কোনো কিছুকেই গোপন করেননি। কারণ ইলমে দ্বীনের কোনো কিছু গোপন করা পাপ এবং সাহাবায়ে কেরামকেও তিনি কোনো কিছু গোপন করতে দেননি। কোন সময়ে হেকমতের কারণে আল্লাহর রাসূল সাহাবাদেরকে বলেছেন যে এটা এখন প্রকাশ করবে না। সেই সাহাবা দেখা গেছে যে মৃত্যুর প্রাক্কালে অপরাধে অপরাধী হওয়ার ভয়ে সেই বাণীটি প্রকাশ করে দিয়েছেন। এভাবে রাসূল সা. কোনো ইলম গোপন করেননি এবং তার সাহাবিগণও করেননি। যা সত্য আল্লাহর কাছে থেকে যা এসেছে হুবহু সেটাই অন্যদের কাছে পৌঁছিয়ে দেওয়াই ছিল তাদের দায়িত্ব।
“আজকে যারা উপস্থিত আছো দ্বীনকে ধারণ করছো, অনাগত ভবিষ্যতের লোকদের কাছে সেটাকে হুবহু পৌঁছে দেবে।” (সহিহ বুখারি ১৬২৩, ১৬২৬)।
তিনি যা শিক্ষা দিতেন সেটা আগে নিজে আমল করতেন এটা ছিল তার জীবনের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দিক। মিষ্টি খাওয়ার গল্প আমাদের সকলেরই জানা আছে। একটা শিশুকে নিয়ে তার পিতা এসেছিল রাসূলের দরবারে- ইয়া রাসূলাল্লাহ আমার সন্তান বেশি মিষ্টি খায়, কী করব। আল্লাহর রাসূল বললেন কয়েক দিন পরে এসো। তিনি এই কয়েকদিন মিষ্টি খাওয়া কমিয়ে দিয়েছিলেন, একেবারেই কমিয়ে দিয়েছিলেন। এরপরে বাচ্চাকে যখন নিয়ে আসা হলো তখন তিনি তাকে মিষ্টি কম খাওয়ার উপদেশ দিলেন। আর আমরা তো আজকে আমল না করেই উপদেশ দিতে দিতে আমাদের মুখে ফেনা উঠে যায়। সুতরাং, কথা এবং কাজে মিল এখান থেকে খুঁজে নিতে হবে।
“কেন তোমরা ঐ সমস্ত কথা বল যেটা নিজেরা কার্যে পরিণত করো না।” (সূরা : সফ-২)। কুরআনে পাকের এই আয়াতের মধ্যেই সবকিছু নিহিত আছে। আজকের সাধারণ একটা জুম বা অনলাইন সম্মেলনে আমরা যদি যুক্ত হতে চাই সেজন্য একটা পাসওয়ার্ড আছে পিন নাম্বার আছে। এটাই হচ্ছে জ্ঞান। আমি যদি সম্মেলনে যুক্ত হতে চাই তাহলে হুবহু এটাই আমাকে ব্যবহার করতে হবে এর ভেতরে কোনো কিছু বাদ দেওয়া যাবে না। তাহলে জ্ঞান এবং সেই অনুযায়ী আমল এ বিষয়টি আজকের বিজ্ঞানও শতভাগ সত্য বলে তুলে ধরেছে। এটাই আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগে আল্লাহ তাআলার রাসূলকে জানিয়ে দিয়েছেন।
যেভাবে পাসওয়ার্ডের একটা অক্ষর ভুল হলে আমি মিটিংয়ে যুক্ত হতে পারবো না ঠিক সেভাবে কুরআনের একটা শিক্ষা যদি কেউ তার জীবন থেকে বাদ দিয়ে দেয় তাহলে সে কখনোই কাক্সিক্ষত ফলাফল পাবে না। সে অন্য চরিত্র ধারণ করবে। কথা ও কাজের মিল না থাকলে যাকে বলা হয় মুনাফিক; এ ধরনের ব্যক্তির চরিত্র ধারণ করবে। এ জাতীয় লোকদের দুনিয়াতেও সফলতা নেই পরকালেও সফলতা নেই। হাসান রা. বলেছেন, ইলম দুই ধরনের। একটি ইলম হচ্ছে অন্তরের ভেতরের- এটাই হচ্ছে উপকারী জ্ঞান। যে জ্ঞান মানুষের হৃদয়ে একবার স্থান করে নেয় এবং তার হৃদয় থেকে শুরু করে পুরো সত্তাকে যে জ্ঞান আলোকিত করে, সেটাই তার কর্মময় জীবনকে আলোকিত করতে পারে। আর একটি জ্ঞান হচ্ছে মুখের জ্ঞান- এটি হচ্ছে বনি আদমের বিরুদ্ধে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে একটি দলিল, যে এটা তার মুখ পর্যন্ত থাকে হৃদয় পৌঁছে না। মুখে আমরা অনেক কথা বলি অনেক বক্তব্য দেই কিন্তু এটা নিজের জন্য নয়। অন্যের জন্য উপদেশ দিই নিজেকে ভুলে গিয়ে। এটা রাসূল সা.-এর শিক্ষার বৈশিষ্ট্য নয়।
এজন্য আমরা যারা আল্লাহর দ্বীনকে জমিনে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই, আমাদের গোটা চরিত্রকে আল্লাহর দ্বীনের বাস্তব প্রতিচ্ছবি করতে হবে। আসলে এটাই হচ্ছে ইসলামের মূল টার্গেট। রাসূলুল্লাহ রাসূল সা. যে মানুষগুলো তৈরি করেছিলেন তাদের দিকে তাকালে সে রকমই মনে হতো। রাসূলুল্লাহর শিক্ষার একটি পদ্ধতি ছিল তিনি সহজ সরল ভাষায় শিক্ষা দিতেন। পাণ্ডিত্য প্রকাশের জন্য খুব কঠিন ভাষা ব্যবহার করে মানুষকে নসিহত করতেন না। সাধারণ মানুষ যাতে বুঝতে পারে সেভাবেই তিনি তাদেরকে শিক্ষা দিতেন। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মানুষকে শিক্ষা দাও এবং সহজ করো। এ কথাটি তিনি তিনবার বলেছেন। শিক্ষা দিতে দিতে, বারবার বলতে বলতে যদি তোমার রাগ চলে আসে তাহলে তুমি চুপ হয়ে যাও। এ কথাটি তিনি দুইবার বলেছেন। আদাবুল মুফরাদ গ্রন্থে এই হাদিসটি বর্ণিত আছে। রাসূল সা. যখন কোনো বক্তব্য দিতেন তখন তিনি তিনবার করে বলতেন, যেন মজলিসে উপস্থিত সকল মানুষ সেটি বুঝতে পারে। (সহিহ বুখারি : ৯৪)। তিনি উপমার মাধ্যমে মানুষকে শিক্ষা দিতেন। এটা কুরআনেরও একটি শিখনপদ্ধতি। ঐতিহাসিক ঘটনাবলি দিয়ে মানুষকে শিক্ষা দিতেন। কুরআনেও এ ধরনের বিভিন্ন বর্ণনা আছে। ছাত্ররা এর মাধ্যমে অনায়াসে বিভিন্ন জিনিস বুঝতে পারে। তার শিক্ষাপদ্ধতির মধ্যে আরেকটি ছিল ব্যক্তির মধ্যে সুন্দর ও গঠনমূলক অভ্যাসের লালন এবং সে অভ্যাসের লালনের সহযোগিতা করা। তিনি শিক্ষা দিয়েই চলে আসতেন না। আজকে তো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষকরা শিক্ষা দেয় এরপরে আর কোনো খোঁজ রাখে না। আল্লাহর রাসূল নিজেই বসে থাকতেন একটা কালিমা শিক্ষা দেওয়ার পরে। তিনি বসে থেকে দেখতেন যে লোকটি এটি আসলেই বুঝেছে কিনা। ভুল করলে নিজ হাতে তিনি ধরিয়ে দিতেন। এটি ছিল রাসূলের প্রশিক্ষণের একটি পদ্ধতি। তিনি প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে শিক্ষা দিতেন। তিনি প্রশ্ন করতেন, সাহাবায়ে কেরাম বলতেন আল্লাহ এবং তার রাসূল সবচেয়ে ভালো জানেন এরপর তিনি সেটির উত্তর দিয়ে দিতেন। এভাবে যারা শিক্ষা গ্রহণ করতে এসেছে তাদের সে বিষয়টির প্রতি আগ্রহ জাগ্রত করতেন। তিনি নিষিদ্ধ বস্তু সবার সঙ্গে তুলে ধরে শিক্ষা দিতেন। যেমন আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন যে, তিনি তার ডান হাতে রেশম এবং বাম হাতে স্বর্ণ ধরে দুই হাত উঁচু করে বললেন যে এই দুটো জিনিস আমার উম্মতের পুরুষদের জন্য হারাম তবে নারীদের জন্য হালাল। (আবু দাউদ : ৪০৫৭)।
আজকের বিজ্ঞানগারে ছাত্রদেরকে সবকিছু দেখিয়ে দেখিয়ে শিক্ষা দেওয়া হয় এ পদ্ধতিটিও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক আগেই প্রয়োগ করেছেন। এটা তাঁর কাছে থেকেই আমরা পাই। তিনি কোনো বিষয়ে বা ঘটনায় চুপ থেকে শিক্ষাদান করতেন। তাঁর সামনে কোনো একটি ঘটনা ঘটলো এবং তিনি চুপ থাকলেন, সাহাবায়ে কেরাম এটাকে তার সম্মতি মনে করতেন। এটা হাদিসেরও একটা প্রকার।
কঠোরতা এবং বিপদ-আপদে সবর অবলম্বনের উপদেশ দিয়ে মানুষের চিন্তা লাঘব করে তিনি মানুষকে শিক্ষা দিতেন। এটাও তার প্রশিক্ষণের একটা দিক ছিল। শিশুদের পরিণত বয়সে পৌঁছার পূর্বেই বন্দেগির অভ্যাস গড়ে তোলার প্রতি অভিভাবকদের নির্দেশ দিতেন। তাদের সাথে ওয়াদা ভঙ্গ না করতে সতর্ক করতেন। বাচ্চাদের কাছে মুরব্বিরা যে ওয়াদা করবে সেগুলো যেন কোনো অবস্থাতেই খেলাফ না করে, কারণ খেলাফ করা হলে বাচ্চারা আমাদের কাছ থেকে ওয়াদা খেলাফ করাই শিখবে। এভাবে আল্লাহর নবী শিক্ষার মডেল রেখে গিয়েছেন।
মানুষের মধ্যে তাকওয়া সৃষ্টি তাঁর প্রশিক্ষণের মূল লক্ষ্য ছিল। কারণ তাকওয়াবিহীন কোনো ইবাদত আল্লাহতালা কবুল করবেন না এবং এতে কোনো সওয়াব পাওয়া যাবে না। প্রত্যেকটি জিনিস যেন আল্লাহর ভয়ে মানুষ করতে পারে সেজন্য তিনি শিক্ষা দিতেন। বেশি বেশি কুরআন-হাদিস মুখস্থ করা জ্ঞান নয়। জ্ঞান হচ্ছে বেশি বেশি আল্লাহকে ভয় করা, তাঁর কাছে জবাবদিহির অনুভূতি নিয়ে জীবন যাপন করা। তিনি মানুষকে গড়ে তোলার জন্য তাঁর সহবত দিয়েছেন, স্পর্শ দিয়েছেন, সাহচর্য দিয়েছেন। এটা প্রশিক্ষণের একটা অন্যতম পদ্ধতি। যার কারণে তাঁর জীবদ্দশায় লক্ষ লক্ষ সাহাবি আল্লাহর রাসূলের সহবত পেয়েই সাহাবি হয়েছেন। সাহাবিদের মধ্যে এমন একজন লোকও পাওয়া যাবে না যিনি আল্লাহর রাসূলের সহবত পাননি। শুধু আল্লাহর রাসূলের হাদিসই বর্ণনা করেছেন লক্ষাধিক সাহাবা। আর যারা হাদিস বর্ণনা করেনি এমন সাহাবা তো আরো লক্ষ লক্ষ ছিল। তাঁদের সকলেই রাসূলের সাহচর্য পেয়েছেন, তাঁর সাথে কিছু সময় হলেও থাকার সুযোগ পেয়েছেন। সুতরাং মানুষ গড়ার একটা অন্যতম পদ্ধতি সহবত দেওয়া। কর্মীরা নেতৃবৃন্দের যত বেশি সহবত পাবে তত বেশি তারা অনুপ্রাণিত হবে। আমাদের ছাত্রজীবনে অনেক নেতৃবৃন্দের সহবত আমরা পেয়েছি। আজও আমরা সেগুলো ভুলতে পারিনি। আজও সেগুলো আমাদেরকে আন্দোলিত করে।
ভ্রাতৃত্ব, সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য, ভালোবাসা এগুলোর তালিম তিনি দিতেন এবং আল্লাহ তাআলা তাঁকে এই তালিম দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেছেন-“নবী পাঠিয়ে কুরআন পাঠিয়ে আমি তোমাদেরকে এমন অবস্থায় শিক্ষা দিলাম যখন তোমরা পরস্পরের শত্রু ছিলে অতঃপর এই দুই আদর্শের মাধ্যমে তোমরা আল্লাহতালার অনুগ্রহ করে পরস্পর ভাই ভাই হয়ে গেলে।” (সূরা আলে ইমরান : ১০৩)। আজকের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায় সেখানে অস্ত্রের ঝনঝনানি, সন্ত্রাস, পরস্পরকে অপদস্থ করা, একে অপরকে আক্রমণ করা, ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে মারামারি, বিভিন্ন ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। এগুলো রাসূলের শিক্ষায় ছিল না। রাসূলের শিক্ষাই ছিল দুশমনি এবং দূরত্ব দূর করা। আর মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ভ্রাতৃত্ব সৌহার্দ্য ভালোবাসা এগুলো মজবুত করা। এই শিক্ষা আজকে নাই বিধায় আজ গোটা দুনিয়াটা যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। রাসূলের শিক্ষা যারা পেয়েছেন, রাসূলের কাছে থেকে যারা শিক্ষিত হয়েছেন, তাঁর সহবত যারা পেয়েছেন তাঁদেরকে কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “তারা মানবজাতির ইতিহাসে সর্বোত্তম মানুষ, সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ।” (সূরা আলে ইমরান : ১১০)। তাঁরা ছিলেন মানবতার দিশারি মানবতার পথপ্রদর্শক। এজন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই বলে গিয়েছেন আমার পরে উত্তম যুগ হচ্ছে সাহাবায়ে কেরামের যুগ। এরপরে তাবেঈনদের যুগ এবং অতঃপর তাবে তাবেঈনদের যুগ। (মুসলিম : ২৫৩৩)। অর্থাৎ সেই যুগে যে সোনার মানুষ তিনি তৈরি করেছিলেন মানবজাতির ইতিহাসে সেরকম মানুষ হয়তো নাও আসতে পারে। অবশ্য যদি আমরা কুরআন সুন্নাহ এবং রাসূলের তরিকা অনুযায়ী চলতে পারি তাহলে সেই যুগ আসার সম্ভাবনা আছে। সেটা আমাদের ওপরে নির্ভর করছে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসুদ রাদিআল্লাহু আনহু তাঁর শেষ বয়সে বলেছিলেন, যদি সফল জীবন-যাপন করতে চাও তাহলে যারা ইতোমধ্যে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে তাদের জীবনযাপন পদ্ধতি অনুসরণ করো। কারণ যারা এখন জীবিত আছে তারা ফিতনা থেকে নিরাপদ নয়, তারা দুর্বলতা থেকে নিরাপদ নয়। এরপর তিনি বললেন আর দুনিয়া থেকে ইতোমধ্যে যারা বিদায় নিয়েছে তাদের মধ্যে আছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাহাবি তারা ছিলেন এই উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদের অন্তরগুলো ছিল নেক এবং তাদের জ্ঞান ছিল গভীর। (মাজমাউজ জাওয়াদে : ৮৫০)।
আসলে তাদের মধ্যে কোনো কৃত্রিমতা ছিলই না। আল্লাহর রাসূলের সহবতের মাধ্যমে আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদাবান করেছেন। এবং দ্বীনের জন্য আল্লাহ তাআলা তাদেরকে বাছাই করেছেন। তাই আসুন, তাদের পরিচয় সম্পর্কে জানি, তাদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানি। তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করি। আর সাধ্য অনুযায়ী আমরা সাহাবায়ে কেরামের চরিত্র এবং জীবনকে মজবুতভাবে অনুসরণ করি। কারণ তাঁরা পরিপূর্ণভাবে সিরাতে মুস্তাকিমের ওপরে অবিচল ছিলেন। রাসূল সা. এরকম মানবগোষ্ঠী দুনিয়ার বুকে তৈরি করেছিলেন তাঁর সহবতের দ্বারা, তাঁর বিজ্ঞানসম্মত প্রশিক্ষণপদ্ধতি দ্বারা। আজকে যদি সে প্রশিক্ষণপদ্ধতি অনুসরণ করে আমরা আমাদের কর্মীদেরকে, এদেশের জনগণকে গড়ে তুলতে পারি তাহলে আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে আবার সে খেলাফতে রাশেদার আদলে একটি আদর্শ ইসলামী রাষ্ট্র দান করবেন। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সেই শক্তি দান করুন, সেই সাহস দান করুন, সেই যোগ্যতা দান করুন। এই কামনা করে আজকে এখানেই শেষ করছি। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
লেখক : বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব
আপনার মন্তব্য লিখুন